Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

শূন্য

অম্লানকুসুম চক্রবর্তী

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫

Short Story
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Short Story)

ফোনটা বাজছে। একটু আগেও বাজছিল। অন্য ঘরে ছিলেন সুশোভন। পাশের ঘরে ফোনটা চার্জে বসানো ছিল। আসতে আসতে কেটে যায়। ফের বাজছে। ফোন তোলেন সুশোভন। নম্বরটা অচেনা। আননোন। ফোন এলে স্ক্রিনের উপরে সবুজ রঙের বোতামটা আঙুলের ছোঁয়ার ঠেলে বাঁ দিক থেকে ডান দিকে আনতে হয়। তিনবারের চেষ্টায় তা করতে পারলেন সুশোভন। ইদানীং কেন এমন হচ্ছে জানেন না তিনি। আঙুলগুলো কাঁপে। সর্বাঙ্গ কাঁপে। দেওয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো কাঁপে। ফ্যানের হাওয়ার পাতাগুলো যখন ওড়ে, কর্কশধ্বনি হয়। (Short Story)

আরও পড়ুন: ভাঙাগানের ভেলা

ফোনটা স্পিকারে দিলেন তিনি। কানে ফোন চেপে বেশিক্ষণ কথা বললেই মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে।
-আমি কি সুশোভন সান্যাল স্যারের সঙ্গে কথা বলছি?
-বলছি। কী দরকার ভাই?
-আমি আপনাব্যাঙ্ক থেকে বিক্রম অধিকারী কথা বলছি স্যার।
-আমার তো এই ব্যাঙ্কে কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। কী দরকার? আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
-আমি আপনার অমূল্য সময় থেকে বেশিক্ষণ নেব না স্যার। জানি আপনি ব্যস্ত মানুষ। মাত্র কয়েক মিনিটের বিষয় স্যার।
-কী দরকার বলুন।
-আপনার নাম কনফার্ম করার জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ। কথা শুরু করার আগে জানাই, কোনওভাবেই নিজের ডেবিট কার্ডের নম্বর বা পিন, ওটিপি, নেটব্যাঙ্কিংয়ের ইউজার আইডি কিংবা পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। সাইবার প্রতারণার শিকার হবেন না। ব্যাঙ্ক কখনও এমন তথ্য তাঁদের উপভোক্তাদের থেকে জানতে চায় না। (Short Story)

Short Story
একটি পরিবারের দৃশ্য

-আমার তো আপনাদের ব্যাঙ্কে কোনও অ্যাকাউন্টই নেই। আমি তো একটু আগেই বললাম।
-এই কথাগুলো বলা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আরও একটা কথা জানাই, ট্রেনিং ও কোয়ালিটি পারপাসের জন্য আমাদের এই কথোপকথন রেকর্ড করা হচ্ছে।
-কী প্রয়োজন সংক্ষেপে বলুন ভাই। আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
-নিশ্চয়ই স্যার। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাই, একটি প্রি-অ্যাপ্রুভড পার্সোনাল লোনের জন্য আপনা ব্যাঙ্ক আপনাকে মনোনীত করেছে। দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনি লোন পেয়ে যেতে পারেন, কোনওরকমের ডকুমেন্টেশন ছাড়াই। অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক মানুষদের জন্য এই অসাধারণ অফারটি নিয়ে এসেছে আপনা ব্যাঙ্ক। আপনি তাঁদেরই একজন। ইন্টারেস্ট অত্যন্ত কম। মাত্র টেন পয়েন্ট থ্রি পার্সেন্ট স্যার। বাজারে যা রেট চলছে, তার থেকে এটি আশ্চর্যজনকভাবে কম। (Short Story)

-আমার এই মুহূর্তে লোনের কোনও প্রয়োজন নেই। ধন্যবাদ। আমি ফোনটা রাখছি।
-প্লিজ স্যার, প্লিজ। রিকোয়্যারমেন্ট নেই কথাটা ভুল বলা হল। আমাদের পরিসংখ্যান বলছে, বহু মানুষ ফোন কেটে দেওয়ার জন্য কিংবা কল সংক্ষিপ্ত করার জন্য আমার প্রয়োজন নেই কিংবা আমার লাগবে না, এই ধরনের কথা বলে থাকেন। কিন্তু আসলে রিকোয়্যারমেন্ট থাকে স্যার। থাকেই। প্রয়োজন নেই বলাটা কোনও কাজের কথা নয়। ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স একটু ভারী দেখতে কার না ভাল লাগে বলুন? (Short Story)

“এ দেশের শিল্পপতিদের দেখুন। কেউ দেড় হাজার কোটি টাকার মালিক, কেউ দু হাজার। কিন্তু বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখুন, তিনশ কোটি টাকা ধার। এর থেকে কী প্রমাণিত হয়? ধার সবাইকেই নিতে হয়।”

-আমার আর কথা বাড়াতে ভাল লাগছে না।
-এ দেশের শিল্পপতিদের দেখুন। কেউ দেড় হাজার কোটি টাকার মালিক, কেউ দু হাজার। কিন্তু বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখুন, তিনশ কোটি টাকা ধার। এর থেকে কী প্রমাণিত হয়? ধার সবাইকেই নিতে হয়। যদি শিল্পপতিদেরই ধার নিতে হয়, আমরা তো সামান্য মানুষ। আমাদের সবসময় টাকার প্রয়োজন থাকে। এই জন্যই দেশের জনগনের পাশে রয়েছে আপনা ব্যাঙ্ক। তা হলে কত লাখের জন্য প্রসেস করব স্যার? দশ লাখই করে দিই? (Short Story)

-আপনি কি আমার সঙ্গে জোরজবস্তি করছেন নাকি? এ তো মহা মুশকিলে পড়া গেল দেখছি।
-দীর্ঘ পাঁচ বছর এই লাইনে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অধিকাংশ মানুষই প্রথমে লোন নেওয়ার জন্য সঙ্কোচে ভোগেন। আমরা জানি, তাঁদের চাহিদা লুকিয়ে রয়েছে মনের গভীরে। কিন্তু তাঁরা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। শচীন দেববর্মনের একটা গানের লাইন ছিল না, মুক্তা যেমন শুক্তির বুকে? অতিরিক্ত অর্থের চাহিদাও আমাদের মনে ওইভাবেই লুকিয়ে থাকে। এতে কোনও দোষ নেই। ওই চাহিদাটা মুক্তোর মতো পবিত্র, শুদ্ধ, অম্লান। জীবন তো একটাই। অতৃপ্তি নিয়ে কেন দিন কাটাব আমরা? (Short Story)

-আপনি কি কবিতা টবিতা লেখেন নাকি মশাই? কাব্যের খই ফুটছে তো কথায়।
-আপনার প্রশংসা আমি মাথা পেতে নিলাম স্যার। এই কলের ঠিক পরেই আপনার কাছে একটা কল আসবে, আমার সঙ্গে কথা বলে আপনার কেমন লেগেছে তা জানার জন্য। অনুগ্রহ করে আমার রেটিং পাঁচে পাঁচ দিয়ে দেবেন। অগ্রিম ধন্যবাদ। তা হলে দশ লাখই তো?
-আপনি তো আমাকে কথাই বলতে দিচ্ছেন না। আমি অলরেডি বলে দিয়েছি আমার কোনও প্রয়োজন নেই। জীবন আমাকে অনেক শিক্ষা দিয়েছে ভাই। অনেক পুড়িয়েছে। টাকা আমাকে অতিরিক্ত সুখ এনে দেবে না কিছু। (Short Story)

“সুদ ছাড়া আজকের দিনে কী পাওয়া যায় স্যার? এই যে আমরা এসির ঠান্ডা হাওয়ায় আরাম করি, ইএমআই মেটানোর সময় কি একটু হলেও ঘেমে যাই না? ওই এক মিনিটের ঘাম আমাদের সারা মাসের শীতল আরামের সুদ।”

-আপনি আমার উপরে মিছিমিছি রাগ করছেন স্যার। তবে এই রাগটা হওয়া স্বাভাবিক। হয়তো কোনও কাজে আপনি অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন। আমি আপনার মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটালাম। আপনার জায়গায় থাকলে আমি হয়তো আরও বেশি রাগ করতাম। তবে সামান্য কয়েক মিনিট কথাবার্তার বিনিময়ে আপনা ব্যাঙ্ক আপনার মতো কিছু অত্যন্ত সীমিত মানুষকে যে অফারটি করছে, সেটাও ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। এ সুযোগ বারবার আসে না। (Short Story)

-আপনারা যেন ধন্য করছেন আমায় দশ লক্ষ টাকা দিয়ে! সেটা তো গুণে গুণে ফেরতও নেবেন, সুদসমেত। কি, নেবেন না?
-সুদ ছাড়া আজকের দিনে কী পাওয়া যায় স্যার? এই যে আমরা এসির ঠান্ডা হাওয়ায় আরাম করি, ইএমআই মেটানোর সময় কি একটু হলেও ঘেমে যাই না? ওই এক মিনিটের ঘাম আমাদের সারা মাসের শীতল আরামের সুদ। (Short Story)

-ঘামটা সত্যি তো তাহলে?
-ওটা যেমন সত্যি, সারা মাসের আরামটাও তো সত্যি স্যার। শ্রান্ত দেহের চারপাশে খেলা করে এক টুকরো কাশ্মীর।
-আপনি তো কথায় লোককে জব্দ করতে পারেন দেখছি। সন্ধেবেলা টিভি চ্যানেলগুলোতে বসুন। ভোটে দাঁড়ান। এখন তো কথাবলিয়েদেরই যুগ, সে সত্যি মিথ্যে যাই হোক না কেন। (Short Story)

“জীবন তার ডালি সাজিয়ে বসে রয়েছে আগামী দিনের জন্য। বলছে, উপভোগ করো আমায়। ভোগ করো। আরও, আরও, আরও।”

-অফুরান ধন্যবাদ। ঠিক সময়ে ঠিক ফোনে ঠিক লোন নিয়ে যদি জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে পারি, তাহলে বৃদ্ধ বয়সে আক্ষেপ করার জায়গা থাকে না। জীবন তার ডালি সাজিয়ে বসে রয়েছে আগামী দিনের জন্য। বলছে, উপভোগ করো আমায়। ভোগ করো। আরও, আরও, আরও। কিছু অতিরিক্ত অর্থ না হলে তো এসব শখ অধরাই থেকে যায়। স্যার, বলছি কিছু যদি মনে না করেন, আপনি কি বিবাহিত? (Short Story)

সুশোভন সান্যালের বাড়ির জানালার কার্নিশে কোথা থেকে যেন হঠাৎ বসে পড়ল দুটো চড়াই। প্রবল কিচিরমিচির করছে। মনে হচ্ছে গল্প জুড়েছে খুব। ঠোঁট দিয়ে একে অন্যের গায়ে আদর করে দিচ্ছে। জানালায় পাখির আনাগোনা তিনি দেখেন না সচরাচর। (Short Story)

-নাঃ। বিয়ে করিনি এখনও।
-পাত্রী খুঁজছেন?
-খুঁজছি তো। পাচ্ছি কই?
-পেয়ে যাবেন স্যার। আপনা ব্যাঙ্কের সমগ্র পরিবারের তরফ থেকে আপনার নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল। দেখেছেন, একটা কথাই এখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি। আপনার বয়সটা ঠিক কত? (Short Story)

“নাকের নীচে যে তিলটা ইদানীং দেখতে ভাল লাগছে না আর, সেটাকে উড়িয়ে দেবেন। আধুনিক মেয়েদের এসব শখ আজকাল খুব হচ্ছে। সব সমস্যারই সমাধান আছে।”

-এই তো সাতাশে পা দিলাম সদ্য।
-লোন নেওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এটাই। নতুন জীবনে প্রবেশ করবেন নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নিয়ে, নতুন ঐশ্বর্য্য নিয়ে। আমি কথা বলে দেখছি আপনার লোন অ্যামাউন্টটা দশ থেকে বাড়িয়ে পনেরো করা যায় কী না। কী স্যার? খুশি তো?
-আপনি তো এসব কাজ ছেড়ে সিনেমায় সংলাপ লেখার কাজও শুরু করতে পারেন। ভালই কামাবেন। (Short Story)

Short Story
আপনার প্রয়োজনটা ঠিক কত, এখনও বুঝতে পারলাম না। তবে এটাই কিন্তু জীবন শুরুর বয়স স্যার।

-বড্ড বাড়িয়ে বলছেন স্যার। বলছি, আজকের জীবন তো অত্যন্ত আনসার্টেন। তাই না?
-আমার থেকে এ কথা ভাল আর কে বোঝে?
-স্যার?
-না না, ঠিক আছে, বলুন।
-আশা করি স্বাস্থ্যবীমা করিয়ে রেখেছেন আপনি। বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসার আজকাল যা খরচ!
-না করা হয়নি এখনও। করব। (Short Story)

-এখনই করিয়ে নিন স্যার। তবে জানেন তো, অনেক চিকিৎসার খরচ আবার ইনসিওরেন্সে পাওয়া যায় না। হয়তো আপনার হবু মিসেসের শখ হল, কপালে হাল্কা উঁকি দেওয়া একটা বলিরেখা দূর করবেন। কিংবা, নাকের নীচে যে তিলটা ইদানীং দেখতে ভাল লাগছে না আর, সেটাকে উড়িয়ে দেবেন। আধুনিক মেয়েদের এসব শখ আজকাল খুব হচ্ছে। সব সমস্যারই সমাধান আছে। আজকালকার প্লাস্টিক সার্জেনরাও সব জাদুকর। জানেন তো, এর অনেক কিছুই আবার ইনসিওরেন্সে আসে না। তাই একটা আপৎকালীন ফান্ডের ভীষণ প্রয়োজন। বোঝাতে পারলাম? (Short Story)

“যে কোনও মানুষের জীবনেই সন্তান বিধাতার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। ওদের মুখ চেয়েই তো আমরা বাঁচি। আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।”

-সমস্ত বলিরেখা, কুঁচকে যাওয়া চামড়া কি দূর করা যায়? করা সম্ভব নাকি?
-আজকের যুগে সব কিছু সম্ভব। আপনি এত খবর রাখেন, এটুকু রাখেন না?
-আচ্ছা। আপনি বলতে থাকুন। আমার কান চালু আছে।
চড়াইগুলোর আদর আর থামছেই না। যেভাবে কিচিরমিচির করে চলেছে, তাতে মিনিট দশেকে একটা উপন্যাস হয়ে যাবে। (Short Story)

-কয়েক বছর পরেই ঘর আলো করে কে আসবে স্যার, বলুন? আপনার উত্তরাধিকারী। আপনার সন্তান। যে কোনও মানুষের জীবনেই সন্তান বিধাতার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। ওদের মুখ চেয়েই তো আমরা বাঁচি। আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। আঃ। এই কথাগুলো ভেবেও সুখ। যেন মহাষ্টমীর অঞ্জলি দিচ্ছি দুচোখ বুজে। একদম শেষ পর্যায়ে পুরোহিত বলেন, এবারে মায়ের কাছে যে যার মনস্কামনা ব্যক্ত করুন। সবার প্রথমে আমরা কী চাই? সন্তানের সুখ। তাই না?
-তাই তো। (Short Story)

আরও পড়ুন: অর্থ কোনও খুঁজে নাহি পাই রে

-ওদের সুখ নিশ্চিন্ত করার জন্য জড়িয়ে থাকে অনেক টাকাও। প্রথমেই বড় খরচা অন্নপ্রাশন। তারপরে স্কুলে ভর্তি। একটু পদের স্কুল হলে এখন তো নার্সারিতেও বছরে এক লক্ষ টাকা ফি হয়ে গিয়েছে, মিনিমাম। (Short Story)

-একেবারে ঠিক কথা।
-তারপরে শুরু হয় আসল খরচ। মানে, বারো ক্লাসের পরীক্ষা দেওয়ার পর আর কী। দেশের সেরা কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এখনই কুড়ি লক্ষ টাকার উপরে খরচ হয়ে যায়। আজ থেকে সতেরো আঠারো বছর পরে সেই অ্যামাউন্ট কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাবতে পারছেন? গা শিরশির করছে না স্যার? (Short Story)

-হ্যাঁ করছে।
-আমার তো ভাবলেই গা শিরশির করে। শিরদাঁড়া দিয়ে নেমে যায় গ্লেসিয়ার গলা বরফ ঠান্ডা জল। চোখ খুলে থাকলেই খরচ। অথচ, এই পৃথিবীটা কী অদ্ভুতরকমের সুন্দর। পয়সা থাকলে আরও অনেক বেশি সুন্দর। (Short Story)

-কী সুন্দর বলছেন আপনি।
-এত কথা বলে ফেললাম একটাই কারণে। ফোনের শুরুতে আপনি বলেছিলেন, কোনও রিকোয়্যারমেন্ট নেই। সবাই প্রথমে তাই বলে। মিথ্যে বলে। আসলে সবারই প্রয়োজন থাকে। এই দুনিয়া যে বন বন করে ঘুরছে, ছন্দে ছন্দে কত রং বদলাচ্ছে, তা আমাদের প্রয়োজন আছে বলেই। বুঝলেন? (Short Story)

“ইচ্ছে করে, সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াই। খবরের কাগজে কত বড় বড় করে আজকাল ট্যুর কোম্পানির বিজ্ঞাপনগুলো ছাপে দেখেছো? কী সুন্দর ছবি দেয়।”

-একেবারে জলের মতো পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিলেন আপনি। চোখে ছিল গান্ধারীর আবরণ। ঘুচিয়ে দিলেন। আমার খুব বেড়ানোর শখ, জানেন?
-অসাধারণ। বেড়াতে কার না ভাল লাগে স্যার?
-ইচ্ছে করে, সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াই। খবরের কাগজে কত বড় বড় করে আজকাল ট্যুর কোম্পানির বিজ্ঞাপনগুলো ছাপে দেখেছো? কী সুন্দর ছবি দেয়। সেদিন দেখলাম, নায়াগ্রার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা ইয়ং কাপল। মা বাবাকে দেখে দূর থেকে হাত বাড়িয়ে ছুটে আসছে একটা ফুটফুটে বাচ্চা। কী সুন্দর না? (Short Story)

-এক্সিলেন্ট বলেছেন স্যার।
-নায়াগ্রা বদলে গিয়ে কোনও সপ্তাহে ক্যালিফর্নিয়া হয়। কোনও সপ্তাহে আবার মরিশাস।
-হ্যাঁ। আমিও দেখেছি বিজ্ঞাপনগুলো।
-একটা বিরাট টাওয়ারের টপ ফ্লোরে, এই ধরো চব্বিশ কিংবা পঁচিশ তলায় একটা ফ্ল্যাট কিনতে ইচ্ছে হয় খুব।
-এই ইচ্ছেগুলোই তো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে স্যার। আপনা ব্যাঙ্ক হোমলোনও দেয় কিন্তু।
-এখনও একটা গাড়ি কেনা হল না আমার।
-কার লোন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিই? (Short Story)

“আমি চাই, আমার বউ যাক শহরের সবচেয়ে দামী বিউটি পার্লারে। এক একটা সেশনে কম করে পাঁচ হাজার টাকা যেন খরচ হয়। আবার বলছি, কম করে।”

-আমার উত্তরাধিকারীকে একটা স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতেও ভর্তি করার বড় শখ জানো আমার। শুধু পড়লেই হবে? ফুটবল খেলতে হবে। ভাল সাঁতারু হতে হবে। সেখানেও বেশ বড়মাপের খরচ। (Short Story)

-বুঝতে পারছি।
-আমি চাই, আমার বউ যাক শহরের সবচেয়ে দামী বিউটি পার্লারে। এক একটা সেশনে কম করে পাঁচ হাজার টাকা যেন খরচ হয়। আবার বলছি, কম করে।
-এই দেখুন, নিজের থেকেই কত কথা আপনি বলছেন এখন। ইচ্ছেগুলো মুক্ত হয়ে লুকিয়ে ছিল মনের গভীরে। আমি জানতাম স্যার। (Short Story)

-পনেরো লাখে কি হবে আমার?
-আমি আমার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে সেটা ম্যাক্সিমাম কুড়ি পর্যন্ত করতে পারি।
-কুড়িতে কি হবে আমার?
-আপনার প্রয়োজনটা ঠিক কত মিস্টার সান্যাল?
-তোমার কত মনে হয়?
-আপনার প্রয়োজন তো আপনি জানবেন।
-তুমিই বলো না। এত কথা তো বললাম। আমি একশ বছর বাঁচতে চাই বিক্রম।
-মানে.. (Short Story)

সুশোভন তখন চেয়েছিলেন বিবর্ণ দেওয়ালের পেরেক থেকে ঝুলতে থাকা হাসপাতালের নাম লেখা প্লাস্টিকের ব্যাগগুলোর দিকে। ব্যাগের মধ্যে ফাইল আছে। ফাইলে কাগজ। কাগজে সই। ডাক্তার। প্রেসক্রিপশন। “ইউ ডোন্ট হ্যাভ মাচ টাইম, সুশোভনবাবু।”

-আপনা ব্যাঙ্ক কি ভয় পেয়ে গেল নাকি? তুমি কি ভয় পেয়ে গেলে বিক্রম? একের পরে কটা শূন্য লাগাতে পারো তুমি? কটা অবধি লাগাতে শিখেছ?
-আপনি চিৎকার করবেন না স্যার। প্লিজ। এতক্ষণ তো কী সুন্দরভাবে, শান্তভাবে কথা বলছিলেন আমার সঙ্গে।
চড়াইগুলো উড়ে গিয়েছিল কখন যেন। (Short Story)

Short Story
আশা করি স্বাস্থ্যবীমা করিয়ে রেখেছেন আপনি। বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসার আজকাল যা খরচ!

দরজার পাশে, পর্দার আড়ালে ছায়ামূর্তির মতো হাজির হয়েছিল দুটো মানুষ। ছেলের ক্রাচের শব্দ তো কখনও কান এড়িয়ে যায় না সুশোভনের। শ্যামলী অবাক হচ্ছিলেন। মানুষটার শরীর কি আজ একটু বেশিই খারাপ? (Short Story)

সাড়ে চার বছরের ঋদ্ধিমানের ডান পায়ের উপর দিয়ে যখন বাসের চাকাটা চলে গিয়েছিল, সঙ্গী হয়েছিল ক্রাচ। বাইশ বছর হল। ছেলেটা স্কুলে যেতে চায়নি আর কোনওদিন।
বিধ্বস্ত শ্যামলী গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহননের চেষ্টা করেছিলেন। কোনওমতে প্রাণে বেঁচে যান। চাননি। তাও বেঁচে যান। সেই দগ্ধ স্মৃতি শরীর বয়ে চলেছে আজও। বাইশ বছর হল।
পর্দার আড়ালে দুটো মানুষ, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন। সুশোভনের কাছে যাচ্ছিলেন না। সবসময় কাছে যাওয়া যায় না। (Short Story)

আরও পড়ুন: সিঙাড়া

বলুক। লোকটা বলুক। বলে চলুক। বাঁচুক।
সুশোভন তখন চেয়েছিলেন বিবর্ণ দেওয়ালের পেরেক থেকে ঝুলতে থাকা হাসপাতালের নাম লেখা প্লাস্টিকের ব্যাগগুলোর দিকে। ব্যাগের মধ্যে ফাইল আছে। ফাইলে কাগজ। কাগজে সই। ডাক্তার। প্রেসক্রিপশন। “ইউ ডোন্ট হ্যাভ মাচ টাইম, সুশোভনবাবু।” (Short Story)

শ্যামলী বলেছিল, “একষট্টি একটা বয়স হল নাকি!”
-স্যার? আপনি আছেন তো? আপনি লাইনে আছেন তো স্যার? গলার আওয়াজ পাচ্ছি না। বলছি, আপনার প্রয়োজনটা ঠিক কত, এখনও বুঝতে পারলাম না। তবে এটাই কিন্তু জীবন শুরুর বয়স স্যার। স্যার, ও স্যার? (Short Story)  

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

Author Amlan Kusum Chakraborty

অম্লানকুসুমের জন্ম‚ কর্ম‚ ধর্ম সবই এই শহরে। একেবারেই উচ্চাকাঙ্খী নয়‚ অল্প লইয়া সুখী। সাংবাদিকতা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও পরে জীবিকার খাতবদল। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিস্ট পদে কর্মরত। বহু পোর্টাল ও পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত হয়েছে গল্প সংকলন 'আদম ইভ আর্কিমিডিস' ও কয়েকটি অন্য রকম লেখা নিয়ে 'শব্দের সার্কাস'।

Picture of অম্লানকুসুম চক্রবর্তী

অম্লানকুসুম চক্রবর্তী

অম্লানকুসুমের জন্ম‚ কর্ম‚ ধর্ম সবই এই শহরে। একেবারেই উচ্চাকাঙ্খী নয়‚ অল্প লইয়া সুখী। সাংবাদিকতা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও পরে জীবিকার খাতবদল। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিস্ট পদে কর্মরত। বহু পোর্টাল ও পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত হয়েছে গল্প সংকলন 'আদম ইভ আর্কিমিডিস' ও কয়েকটি অন্য রকম লেখা নিয়ে 'শব্দের সার্কাস'।
Picture of অম্লানকুসুম চক্রবর্তী

অম্লানকুসুম চক্রবর্তী

অম্লানকুসুমের জন্ম‚ কর্ম‚ ধর্ম সবই এই শহরে। একেবারেই উচ্চাকাঙ্খী নয়‚ অল্প লইয়া সুখী। সাংবাদিকতা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও পরে জীবিকার খাতবদল। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিস্ট পদে কর্মরত। বহু পোর্টাল ও পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত হয়েছে গল্প সংকলন 'আদম ইভ আর্কিমিডিস' ও কয়েকটি অন্য রকম লেখা নিয়ে 'শব্দের সার্কাস'।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
সপ্তর্ষি রায় বর্ধন
বিতস্তা ঘোষাল

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

কলমকারী

রূপায়ণ ভট্টাচার্য
রূপায়ণ ভট্টাচার্য
অরিজিৎ মৈত্র

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com