ওকে প্রথম দেখেছিলাম, সেদিনটার কথা আমার আজও মনে আছে। ওর চেহারায় যে তেমন কিছু বিশেষত্ব ছিল তা নয়, কথা বলার ভঙ্গিটাও ছিল খুবই বিনীত। বরং একটু বেশি নিরীহ বলে মনে হয়েছিল আমার। অবশ্য ওর ব্যাকগ্রাউন্ড, শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিক পরিবেশ, যার কিছুই আমি না জেনেও কল্পনা করে নিতে পারি, ওকে নিরীহ ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারত? কিন্তু ওর সম্বন্ধে আমার এই সব ভাবনাই তো আসলে পিছিয়ে গিয়ে ভাবা, রেট্রোস্পেকটিভ চিন্তা, কারণ প্রথম দর্শনে এসব কিছুই আমি ভাবিনি। তবে একটা জিনিস আমাকে ধাকা দিয়েছিল। হ্যাঁ, ধাক্কা কথাটাই এখানে সবচেয়ে উপযুক্ত, সেটা হল ওর চোখ। ওর চোখের রং ছিল নীল। নীল চোখ আমি আগেও দেখেছি। টিভিতে সিনেমায় দেখেছি, বিদেশে থাকার সময় এবং পরে সাদা চামড়ার মানুষদের অনেকেরই চোখের তারায় নীলাভ ভাব লক্ষ করেছি, কিন্তু এ নীল একেবারেই আলাদা। যে দুটো নীল আমরা সচরাচর দেখে থাকি, সমুদ্রের নীল আর আকাশের নীল, তার সঙ্গেও এর কোনও মিল নেই। সমুদ্র একটু বেশি গাঢ়, আর আকাশ হালকা এভাবে বললেও সেটা অতি সরলীকরণ হয়ে যাবে। বরং এইটুকু বলা যাক ওর চোখের তারার নীল ছিল নিজস্ব এবং চোখের ভাষা। চোখের ভাষা পড়তে আমি চিরকালই সিদ্ধহস্ত। তাই নিয়ে জয়িতা অল্পবয়েসে কম পেছনে লাগেনি। কিন্তু ওর চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারিনি। সেখানে শোক-দুঃখ-বেদনা-আর্তি -আবেদন কিছুই ছিল না। ছিল একটা অতল ভাষাহীনতা। ওর চোখের সেই নির্ভাষ সঙ্কেত আমি বুঝতে পারিনি। একটা মানুষের চোখ, তার মণির রং ভেতরের ভাষা নিয়ে এতখানি কচকচি নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনাকে চূড়ান্ত বিরক্ত করে তুলেছে। তাহলে প্রথম পরিচয়ের মানুষটাকে দিয়েই শুরু করি।
গেটের ঠিক বাইরে ফুটপাথের ওপর বসে যে মুচি, তার সঙ্গে আমার এক ধরনের হদ্যতা গড়ে উঠেছিল। ক্রমশ সম্পর্কটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেল। গাড়ি ছেড়ে দিয়ে ভেতরে ঢোকার আগে একবার ওর কাছে দাঁড়াতাম। ও দুবার ব্রাশ বুলিয়ে দরকার হলে এক খাবলা রং লাগিয়ে জুতোটা চকচকে করে দিত। রোজ হাত পাতত তাও নয়। যখন যা দিতাম খুশি হয়ে নিত। সেদিন গেটের বাইরে মুচিকে দেখতে পেলাম না। জিনিসপত্র সবই যেমনকার গোছানো, মুচি নেই। একটু ইতস্তত করে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছি, একটা আঠারো-উনিশ বছরের ছেলে এসে দাঁড়াল।
— বাবা, রাস্তার ওপারে গেছে, খৈনি কিনতে । আমাকে বলে গেছে। আসুন স্যার, আমি করে দিচ্ছি।
বাবার মতোই অভ্য- হাতে কালি-ক্রিম-পালিশ করে দিল। দুটো টাকা দিতে গেলাম, হাত সরিয়ে নিল।
— বাবাকেই দেবেন।
ভেতরে ঢুকে গেলাম। ঢুকতেই যে চিন্তাটা সকাল থেকে, তাই বা কেন, বেশ কয়েকদিন আচ্ছন্ন করে রেখেছে, সেটাই আমাকে অধিকার করে নিল। মুচি, তার অনুপস্থিতি এবং ছেলে এ সবই মন থেকে মুছে গেল। অত্রি, হ্যাঁ, ছেলেটার নাম এখনও মনে আছে। সুন্দর বাচ্চা আমরা অনেক দেখেছি, কিন্তু অমন প্রাণবন্ত ছটফটে শিশু সচরাচর নজরে পড়ে না। ভর্তি হয়েছে দিন কয়েক, কিন্তু এর মধ্যেই সবার মন জয় করে নিয়েছে।
সেভাবে ভাবতে গেলে অপারেশনটা জটিল, কয়েক ধাপে করতে হয়। খুব বেশি সার্জেন যে করতে পারে তাও নয়। কিন্তু এই জাতীয় অপারেশনই, যাকে বলে আমার চায়ের কাপ, বিদেশে যে ইউনিটে কাজ করতাম সেখানেও এই অপারেশন-এর পদ্ধতিগুলো সরলীকৃত করা হয়েছে। বছর ছয়েক ওখানে থাকার পর দেশে ফিরেও না হোক চল্লিশটা এই জাতীয় রিপেয়ার আমি করেছি। হার্ট-এর জন্মগত ত্রুটি নিয়ে যে শিশুরা এসেছে তারা ত্রুটিমুক্ত হৃদয় এবং বাবা-মায়েরা চিন্তামুক্ত হাসি নিয়ে ফিরে গেছে। আস্তে আস্তে আমার নাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। অত্রির আজ অপারেশন। ওর বাবা-মা’র সঙ্গে দেখা হল। ঝকঝকে হাসি ছড়িয়ে কালো মেঘ উড়িয়ে দিতে চাইলাম।
অত্রির মা বললেন, ও ভাল হয়ে যাবে তো ডাক্তারবাবু?
— নিশ্চয়ই। সেইজন্যেই তো অপারেশন।
— কোনও রিস্ক নেই তো?
প্রশ্নটা জটিল, উত্তরও আমাদের সাবধানে দিতে হয়।
বললাম, এমন কোনও অপারেশন আছে যেটায় রিস্ক নেই? সামান্য টনসিল কাটতে গিয়েও রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
অত্রির বাবা তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলেন — ওভাবে জিজ্ঞেস করছ কেন? ডক্টর সরকার তো আমাদের রিস্ক বেনিফিট বুঝিয়েই দিয়েছেন।
সরি ডক্টর, কিছু মনে করবেন না, মায়ের মন তো।
— জানি, সেই জন্যেই বলছি, মনকে শক্ত করুন। ভাবুন, আমরা সবাই একটা টিম। খেলতে নামছি। প্রাণপণ চেষ্টা করব, ফলের ওপর আমাদের কোনও হাত নেই।
চোখের জল চাপতে চাপতে অত্রির মা বেরিয়ে গেলেন।
সৌর এসে ডাকল, স্যার, ওরা রেডি হয়ে গেছে, আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছি।
অপারেশনে কোথাও কোনও খুত ছিল না। আমি জানি হৃদযন্ত্রের ত্রুটিগুলো ঠিকই মেরামত করেছিলাম আমি। সব যে ঠিকঠাক হয়েছে তা চেকও করে নিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎই ওর ব্লাড-প্রেসার পড়ে যেতে থাকল। অ্যানাসথেসিয়া দিচ্ছিলেন ডক্টর অধিকারী। আমাকে সতর্ক করলেন। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলাম। শেষে আবার খুলে দেখলাম কোনও অজ্ঞাত জায়গা থেকে রক্তপাত হচ্ছে কিনা। কিছুই পাওয়া গেল না। এক সময় অত্রি আমাদের সমস্ত চেষ্টার বাইরে চলে গেল।
বাইরে অপেক্ষা করছিলেন অত্রির বাবা-মা।
খারাপ খবরটা জানানোর ভার আমারই ওপর। আস্তে আস্তে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মাথা নিচু করলাম। আমার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন। শুধু মা নন, বাবাও কান্নায় ভেঙে পড়লেন। পরাজিত, অবসন্ন আমি ফিরে গেলাম নিজের চেম্বারে।
ভুলেই গিয়েছিলাম। পরদিন সকালে যথারীতি মুচির সামনে পা বাড়িয়ে দিয়েছি, মনটা বিষন্ন, জুতোয় ব্রাশ চালাতে চালাতে মুচি বলল, কাল এলেন না স্যার?
— এসেছিলাম তো! তোমার ছেলে জুতো পালিশ করে দিল। টাকা দিতে গেলাম, নিল না, বলল, বাবাকে দিয়ে দেবেন।
পকেটে হাত দিয়ে পার্স বের করছি, মচির মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলাম। কাজ বন্ধ করে অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে মুচি।
— আমার ছেলে? কী বলছেন স্যার?
— হ্যাঁ, তোমার ছেলে। কাল তোমার ছেলে এখানে বসেনি? যখন তুমি রাস্শর ওপারে খইনি না কি কিনতে গিয়েছিলে?
— খৈনি কিনতে আমি গিয়েছিলাম, ও বাত তো ঠিক আছে। লেকিন আমার তো কোনও ছেলে নেই স্যার। আমার দুই লেড়কি।
তারাও আছে বিহারে, সাসারামে। আমার ছেলে কী বলছেন স্যার।
হাসপাতালে ঢুকে দরজা খুলে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে একটা অন্তুত অস্বস্তিতে ভেতরটা শিরশির করে উঠল।
মিথ্যে পরিচয় দিল, জুতো পালিশ করে দিল, পয়সাও নিতে চাইল না। কে ও?
আড়াইটে বাজল দেখে উঠে বললাম, আর দেরি করা ঠিক হবে না, আমিই গাড়ি বের করছি।
জয়িতা উল্টোদিকের সোফায় বসেছিল, নড়াচড়ার লক্ষণ দেখাল না।
জিজ্ঞেস করলাম, কী হল? যাবে না?
— যাব। তবে তুমি চালালে সেই গাড়িতে চড়ব না। কমল না এলে ট্যাক্সি ডেকে দেবে, আমি একাই যেতে পারব।
গত বছর হঠাৎই অপারেশন করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যে সবাই সঙ্গে ছিল, ধরে করে পেসমেকার বসিয়ে দিল। সেই থেকে আমার গাড়ি চালানো বারণ। তেমন তেমন পরিস্থিতে জয়িতা ট্যাক্সি নিয়ে বেরোবে, তবু আমাকে স্টিয়ারিং-এ বসতে দেবে না।
কমল ছেলেটা এমনিতে ভালই। বছর চারেক হল আছে। কামাই-টামাই বিশেষ করে না। মাস দুয়েক হল বিয়ে হয়েছে। প্রথম দিকে জয়িতা ভয়ে ভয়ে ছিল, সেরেছে, এবারে নিশ্চয়ই বেনিয়ম করবে। জয়িতার আশঙ্কা শেষ অবধি অমূলক প্রমাণ হয়েছে।
আজ যে কী হল?
পইপই করে বলে দিয়েছিলাম, আড়াইটের মধ্যে না বেরোলে ট্রেন পাওয়া মুশকিল। এতখানি রাশ। রাজধানী এক্সপ্রেস তো গেছে লোকাল নয়, আধঘন্টা পরে গেলেও পাওয়া যাবে। খবরদার, লেট না হয়। মিঠুন-ছাঁট মাথা জোরে জোরে নাড়িয়ে বলে গিয়েছিল, আমার কথার কোনওদিন খেলাপ দেখেছেন? দুটোর মধ্যে ঠিক ইন করে যাব। মালপত্র প্যাক করে দুখানা সুটকেস কার্পেটের ওপর সাজিয়ে সোফায় পা ছড়িয়ে বসে জয়িতা হাই তুলল।
— কী আর হবে? বাবুইকে ফোন করে জানিয়ে দেব, যাওয়া হল না, কাল সকালে আর স্টেশনে রিসিভ করতে আসবে না।
— খেপেছ? মেয়েটার অভিমান তো জানো। শেষে আমাদের সঙ্গেই সম্পর্ক চুকিয়ে দেবে।
— সর্বনাশ! আমি না হয় কোনওমতে মানিয়ে নেব, কিন্তু তুমি! মেয়েকে না দেখলে মেয়ের বাবা তো পাগল হয়ে যাবে?
ট্যাক্সি ডাকব বলে দরজার নবে হাত লাগিয়েছি, বেল। দরজা খুলে অবাক। কোথায় অমল?
— আমি কমলের ভাই। দাদার হঠাৎ পেট খারাপ হয়েছে, আসতে পারবে না। আমাকে বলল, শিগগির যা, নইলে ম্যাডামের আজ দিল্লি যাওয়াই হবে না … চাবিটা দিন স্যার।
জয়িতা পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিল।
বলল, দেখেছ, কমলের কি সেন্স অব রেসপনসিবিলিটি? নিজে আসতে পারবে না, তাই ভাইকে পাঠিয়ে দিয়েছে। চলো চলো, সুটকেস দুটো একা নিতে পারবে, না আর কাউকে ডাকব? কথা না বলে অবলীলায় দুখানা সুটকেস দুহাতে ঝুলিয়ে ছেলেটা দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল। কেন কে জানে আমার ভেতরে একটা অস্বস্তি হছিল। ছেলেটাকে পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কী ভাই?
ঘাড় না ঘুরিয়েই ও জবাব দিল, অমল।
— কমলের ভাই অমল, এক গাল হাসল জয়িতা।
জয়িতার দিকে তাকিয়ে বললাম, সাবধানে যেও। ওকে বোলো যেন কম্পার্টমেন্ট-এ তুলে দিয়ে আসে। আর গিয়েই ফোন কোরো।
যেমন যেমন বলে দিয়েছি, সমস্ত ফ্রিজে রাখা আছে। সবিতা রান্না করে দেবে, কোনও অসুবিধা হলে ফোন করবে। আর রাত্তিরের ওযুধটা ভুলো না।
বহু বছর হয়ে গেল আলাদা থাকিনি। আগে হত না, এখন কেমন অসহায় লাগে, লিফটের দরজা দিয়ে আড়াল হয়ে যাওয়া অবধি জয়িতার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই ফোন।
স্বনামধন্য চিকিৎসক | তবে সাহিত্যের জগতেও অতি পরিচিত নাম | লেখা প্রকাশিত হয়েছে বহু অগ্রণী পত্র পত্রিকায় |
43 Responses
I just added this web site to my favorites. I really enjoy reading your posts. Thanks!
quality and beautiful content
quality and beautiful content
I love how practical the tips in this post are. Definitely going to implement them
Very energetic blog, I enjoyed that bit. Will there be a part 2?
Look intto my website :: Almanca yeminli tercüme
Wow, I never thought about it that way before. Great food for thought
Would you look at the beauty of sharing? brother. very useful to me thanx
Hey! This is my first visit to your blog! We
are a group of volunteers and starting a new initiative
in a community in the samee niche. Your blog provided us valuable
information to work on. You have done a wonderful job!
My webpage – web tasarım
fix hyundai sonata problems with p1326 code
auton merkkivalot
I think this is one off the most important information for me.
And i am glad reading your article. But want to redmark
on few general things, Thhe website stylee is wonderful,
the articles is really great : D. Good job, cheers
Also visit my blog: playstation gift card exchange
Hiya very cool blog!! Guy .. Excellent .. Wonderful ..
I’ll bookmark your site and takie the feeds additionally?
I’m happy to seek out so mny helpful informatoon right here in the submit, we’d like work out extra techniques in this regard, thanks for sharing.
. . . . .
My blog … dumanbet
The examples you provided in your content helped me understand the topic much better. Also, I appreciate the fluent writing style. Congratulations
ankara en iyi çocuk doktoru
en iyi sigara bırakma merkezi
This article really resonated with me. I’ve been struggling with the same issue for a while now, and it’s refreshing to see someone else articulate it so well
mobiltuvaletkiralama
great content admin thank you
This article really resonated with me. I’ve been struggling with the same issue for a while now, and it’s refreshing to see someone else articulate it so well
karavanwckiralama
VDS Alma
güvenilir bahis siteleri
What i don’t understood is actually how you’re now not really a
lot more well-preferred than you might be now. You’re very intelligent.
You understand therefore significantly relating to this topic,
produced me for myy part imagine it from so many vvarious
angles. Its like men and women aren’t involved until it’s something to do with Woman gaga!
Your individual stuffs outstanding. Always deal with it up!
My web page branda tente
I really liked your content, thank you. I’m looking forward to more of your articles.
mobiltuvaletkiralama
Would you look at the beauty of sharing? Man. very nice thing mersii mersii
seyyartuvaletkiralama
This article really resonated with me. I’ve been struggling with the same issue for a while now, and it’s refreshing to see someone else articulate it so well
Nice post. I learn omething new and challenging
onn blogs I stumbleupon everyday. It will always
be interesting to read through content from other writers and use
a little something from other websites.
Also visit my blog post; resound işitme cihazı fiyatları
This article really resonated with me. I’ve been struggling with the same issue for a while now, and it’s refreshing to see someone else articulate it so well
İstanbul Tüp Bebek Doktoru
mobiltuvaletkiralama
Hello, I liked your site very much. You can be sure that I will visit again later. Thanks
Thank you for sharing your personal experience. It’s inspiring to see how you overcame such obstacles, and it gives me hope for my own journey
I love how this post breaks down such a complex topic into easily digestible pieces. It’s so helpful for someone like me who’s just getting started in this field
ilkses gazetesi
Bursa Hayat Gazetesi
Yeni Bakış gazetesi
İlk haber gazetesi
geciktirici sprey
If you want to grow your familiarity simply keep visiting this website andd be updated with the most up-to-date news
update posted here.
Also visit my blog stomotoloq
Hi there, constantly i used too check web site posts here early in the daylight, since i lovve to
learn more and more.
Feel free to visit my blog Forma Tasarla
Hello fantastic blog! Does running a blog such as this require a lardge amount of work?
I’ve no knowledge of programming but I was hoping to start my own blog soon. Anyway,if you have
any suggestions oor techniques for new blog owners please share.
I know this is off tlpic however I just had to ask.
Cheers!
Also visit my page … Chauffeur Services Vancouver