এখনকার মা-বাবারা শুরু থেকেই সন্তানকে অতিরিক্ত আদর-ভালবাসা দিয়ে থাকেন| যখন যা চায় সবই বাচ্চার হাতে তুলে দেন| পারলে আকাশের চাঁদ-তারাও সন্তানের মুঠোয় এনে দিতে তারা দু’বার ভাববেন না| কিন্তু এই অতিরিক্ত আদর কি সন্তানের জন্য ভাল?
অনেক মায়েরাই অনুযোগ করেন তাদের ৮-১৫ বছরের সন্তান জেদি হয়ে উঠেছে| এটা কিন্তু সম্পূর্ণ সন্তানের দোষ নয়| বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে শিশুর জেদি হওয়ার পিছনে কিন্তু বাবা মায়ের হাত অনেকটাই আছে| কারণ আজকালকার বাবা-মায়েরা প্ল্যান মাফিক একটিই সন্তানের জন্ম দেন| ফলে শুরু থেকেই সেই সন্তানকে অতিরিক্ত আদর-ভালবাসা দেওয়া হয়| যখন যা চায় তাই তার হাতে তুলে দেওয়া হয়| ফলে যখনই বাচ্চাদের শাসন করা শুরু করেন বাবা-মায়েরা‚ শিশুরা তা মেনে নেয় না|
তাই শুরু থেকেই বাবা-মায়েদের উচিত বাচ্চাদের শেখানো কোনটা ভাল‚ কোনটা মন্দ‚ কোনটা উচিত‚ কোনটা অনুচিত| বাবা-মা‚ গুরুজনদের কী ভাবে সম্মান করতে হয়‚ তাদের কথা কেমন করে শুনতে হয়‚ না শুনলে কী হতে পারে তা প্রথম থেকেই বাচ্চাকে শেখানো দরকার| সব মিলিয়ে ছোট থেকেই আদর মাখানো শাসন করতে হবে | শুরু থেকেই যদি আদর ভালবাসা আর শাসনের মাঝে সামঞ্জস্য থাকে তা হলে উঠতি বয়স বা কিশোর অবস্থায় সন্তানেরা একটুতেই বিগড়ে যাবে না আর জেদিও হবে না|
কিন্তু শাসনের মাত্রা অতিরিক্ত না হওয়াই ভাল| কারণ বাচ্চার ওই বয়সে শারীরিক আর মানসিক পরিবর্তন ঘটে| ফলে অতিরিক্ত শাসন করলে সন্তানদের মধ্যে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে| যাতে অনেক সময় বাবা-মায়ের ভাল কথাও মন্দ লাগে| বাচ্চা মাত্রই দুষ্টমি করবে‚ অযথা জেদ করবে| কিন্তু সব সময়তেই যদি মায়েরা বাচ্চাকে এর জন্য বকেন বা চড় থাপ্পড় মেরে বসেন তাহলে সেটা কিন্তু বুমেরাং হয়ে যাবে| তাই মাঝে মধ্যে একটু চোখ রাঙানি‚ মাঝে মধ্যে না দেখার ভান করে ওদের অন্য দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করতে হবে| গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কাছে টেনে সুস্থ সুন্দরভাবে বুঝিয়ে কথা বলতে হবে| যাতে সন্তান বুঝতে পারে যে ওরা এমন কিছু বড় হয়ে যায়নি বা মা বাবার কাছে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না‚ আর বাবা-মায়েরা ওদের জন্য যা চান তা ওদের ভালর জন্যই চান|
বাচ্চাকে শাসন করার সময় বাবা-মায়েরা অনেক সময়তেই ভুলে যান তারাও একটা সময় ওই বয়স পেরিয়ে এসেছেন| তারা ভুলে যান ছোট বেলায় তারাও অনেক কিছু করেছেন| সেটা না ভুলে বাচ্চাদের সঙ্গে ধৈর্য ধরে, ভালবাসা‚ আদর স্নেহর মাধ্যমে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল বোঝাতে হবে| সব মিলিয়ে আদর ভালবাসা আর মৃদু শাসনের মধ্যে একটা সমতা আনতে হবে| আমরা যারা বড় হয়ে গেছি আমাদের যদি কেউ কোন বিষয়ে হামেশাই ধমক দেয় তাহলে আমরাও রেগে যাই| আমাদের আচরণেও একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আর ওরা তো বাচ্চা! তাই ওদের সঙ্গে কথায় বার্তায়‚ আচার আচরণে একটু ধৈর্য‚ একটু সতর্কতা সর্বোপরি একটু সহানুভূতি পোষণ করা খুবই দরকার সন্তানের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য|