banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

চর্ব্যচূষ্যলেহ্যপেয়: পর্ব ৩- মাছের মাংসের কারি

মে ২, ২০২২

The art of cooking
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

ভূতনাথবাবুর বৈঠকখানায় পাঁচভূতের সভা বসেছিল। সে সভার সদস্যদের মধ্যে পুরুষদেরই প্রাধান্য – ভূতনাথবাবুকে বাদ দিলে সে-সভায় পুরুষেরা রমণীদের চাইতে তিন দুই অনুপাতে এগিয়ে। একদিন তাঁদের আলাপ-আলোচনা দানা বেঁধেছিল নরনারী বিষয়ে। সভার অন্যতম সদস্য ব্যোম মোক্ষম একটি কথা বললেন। 

যদি গভীরভাবে চিন্তা করিয়া দেখ, তবে দেখিবে কার্যই স্ত্রীলোকের। কার্যক্ষেত্র ব্যতীত স্ত্রীলোকের অন্যত্র স্থান নাই। যথার্থ পুরুষ যোগী, উদাসীন, নির্জনবাসী। ক্যালডিয়ার মরুক্ষেত্রের মধ্যে পড়িয়া পড়িয়া মেষপাল পুরুষ যখন একাকী ঊর্ধ্বনেত্রে নিশীথগগনের গ্রহতারকার গতিবিধি নির্ণয় করিত, তখন সে কী সুখ পাইত! কোন্‌ নারী এমন অকাজে কালক্ষেপ করিতে পারে? যে জ্ঞান কোনো কার্যে লাগিবে না কোন নারী তাহার জন্য জীবন ব্যয় করে? যে ধ্যান কেবলমাত্র সংসারনির্মুক্ত আত্মার বিশুদ্ধ আনন্দজনক, কোন রমণীর কাছে তাহার মূল্য আছে? 

অনেকে বলেন রবীন্দ্রনাথের ‘পঞ্চভূত’ বইয়ের ব্যোম চরিত্রটি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদলে গড়া। অন্যমনস্ক, উদাসীন, দার্শনিক প্রকৃতির ব্যোম অকাজের চিন্তায় আনন্দময়। তার অভিমত, এই অকাজের অকারণ চিন্তা মেয়েরা করে না, করতে পারে না, করতে চায়ও না। তাদের জগৎ ছোট কাজের জগৎ। কথাটা অবশ্য একবাক্যে মেনে নেওয়া কঠিন, কারণ এর পালটা উদাহরণ ভারতীয় সংস্কৃতি থেকেই দেওয়া চলে। ঋষিপত্নী মৈত্রেয়ীর কথা তো অনেকেরই মুখে মুখে ফেরে। যা আমাকে অমৃত দেবে না, তা নিয়ে আমি কী করব! এই যে অমৃত-সন্ধানী মৈত্রীর মন, তা তো কেজো মন নয়। সে মন সংসারনির্মুক্ত। তবে একথা ঠিকই, প্রতিদিনের রান্নাবান্নায় অন্দরে মেয়েরা সফল কারণ তাঁদের আছে গৃহিণীপনা, সংসারীপনা। সেই গৃহিণীপনা নির্ভর করে কাণ্ডজ্ঞান আর কাজকর্মের প্রতি মনোনিবেশের ওপর। সেই কেজোত্বের বলেই কিন্তু উদাসীন পুরুষের সংসার চলে, অথচ সেই কেজোত্বের ক্ষুদ্রতার প্রতিই পুরুষেরা বিরক্ত। সংসারনির্মুক্তির সুখ তাঁরা গৃহিণীদের কাঁধে বসেই ভোগ করেন। 

Dwijendranath and Rabindranath, cooking
বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ

রাজনারায়ণ বসু তাঁর ‘সেকাল আর একাল’ নামের পুস্তিকায় পণ্ডিত বুনো রামনাথের রান্নাঘরে নাকাল হওয়ার গল্প লিখেছিলেন। উনুনে ডাল বসিয়ে রামনাথ-পত্নী পুকুর থেকে জল আনতে গিয়েছেন। রামনাথকে বলে গিয়েছেন ডালের দিকে নজর রাখতে। ডাল উথলে উঠেছে। সেই উথলে ওঠা ডাল দেখে রামনাথের অবস্থা বেসামাল। রাজনারায়ণ লিখেছেন, 

ডাইল উথলাইয়া পড়া কি প্রকারে নিবারণ করিবেন কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া হাতে পইতা জড়াইয়া পতনোন্মুখ ডাইলের অব্যবহিত উপরিস্থ শূন্যে তাহা স্থাপন করিয়া চণ্ডীপাঠ করিতে লাগলেন কিন্তু তাহাতেও তাহা নিবারিত হইল না।  

চণ্ডীপাঠে উথলে ওঠা ডাল নিবারিত হওয়ার কথাও নয়। রামনাথ গিন্নি ফিরে এসে কাণ্ড দেখে তাড়াতাড়ি ঘরোয়া টোটকা প্রয়োগ করলেন। সামান্য তেল দিতেই উথলে ওঠা ডাল শান্ত হল। রামনাথ গিন্নির যে কাণ্ডজ্ঞান ছিল, উদাসীন পণ্ডিত রামনাথের তা ছিল না। তিনি অবশ্য পাঞ্চভৌতিক সভার ব্যোমের মতো নারীদের এই কাণ্ডজ্ঞানপূর্ণ কাজের জগৎকে খাটো করেননি। নিজেকে সংসারনির্মুক্ত পরমপুরুষ বলে দাবিও করেননি। বরং গললগ্নীকৃতবাস ইংরেজি-শিক্ষাশূন্য ভট্টাচার্য করজোড়ে গৃহিণীকে দেবীজ্ঞানে সম্বোধন করলেন। রামনাথ সেকালের লোক। গিন্নির কাণ্ডজ্ঞানের প্রতি তাঁর অগাধ ভরসা, নিজের পড়াশোনা ও চিন্তার জগৎকে বড়ো করে দেখানোর অহমিকা তাঁর ছিল না। রামনাথপত্নী যেভাবে সংসার চালাতেন তাতেই তিনি খুশি।

Rajnarayan Basu on men cooking
রাজনারায়ণ বসু তাঁর ‘সেকাল আর একাল’ নামের পুস্তিকায় পণ্ডিত বুনো রামনাথের রান্নাঘরে নাকাল হওয়ার গল্প লিখেছিলেন

হিন্দুকলেজ প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি শিখে, রোমান্টিক কবিতা পড়ে যাঁরা বড়ো হলেন, তাঁরা গৃহিণীপনার সুখ ও কাণ্ডজ্ঞান উপভোগ করলেন বটে, কিন্তু সেই গৃহিণীপনা আর কাণ্ডজ্ঞানকে নিতান্ত মেয়েলিপনা বলে খাটো করতে দ্বিধা করলেন না। তাঁদের চাহিদা কিছু বেশি– গৃহিণীকে সখাতুল্য হয়ে উঠতে হবে, তাঁদের চিন্তার সহচরী হয়ে উঠতে হবে। ফলে মেয়েদের কাণ্ডজ্ঞানের ‘ক্ষুদ্র’ জগতে মেয়েরা আটকে থাকুন, তা তাঁরা চাইতেন না। তাঁরা নিজেরাও সংসার ক্ষেত্রে সৃষ্টিময় কল্পনার প্রয়োগ ঘটাতে চাইতেন, ভাবতেন এতে যদি স্ত্রীদের জীবনের পরিসর খানিক সম্প্রসারিত হয়। 

রবীন্দ্রনাথ মেয়েদের কাণ্ডজ্ঞানপ্রসূত ক্ষুদ্রতার জগতের বিড়ম্বনায় বিব্রত হতেন। স্ত্রী মৃণালিনীকে এক আত্মীয়-পুরুষের কথা জানাতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘তার সমস্ত গোনাগাঁথা, হিসেব করা– মেয়েমানুষের মতো ছোটখাটোর প্রতি দৃষ্টি …।’ যে পুরুষেরা এই ছোটখাটোর প্রতি নজর দেন, তাঁদের নিয়ে ঠাট্টা রামকৃষ্ণকথামৃতেও চোখে পড়ে। রামকৃষ্ণ অন্তঃপুরমুখী এই পুরুষদের লোকায়ত ভাষায় ঠাট্টা করে বলেছেন, কুমড়ো কাটা বটঠাকুর। রামকৃষ্ণ ইংরেজি-পড়া রোম্যান্টিক ভদ্রলোক নন, তিনি অন্তঃপুরমুখী মেয়েলি পুরুষদের ঠাট্টা করেছেন ভিন্ন কারণে। গ্রাম সমাজে সদর-অন্দরের ভাগ ছিল। অন্দরের কাজে, রান্নাবান্নায় মেয়ে-মহলে পড়ে থাকা পুরুষরা মেয়েলোলুপ বলেই পরিগণিত হতেন।

ঠাকুরবাড়ির পুরুষেরা রান্নাবান্না গেরস্থালিতে বৈচিত্র সৃষ্টিতে যখন উৎসাহিত হয়েছিলেন, তখন তাঁদের সেই উৎসাহের মধ্যে নব্য-ভদ্রলোকের রুচিবোধ প্রকাশিত। পাশ্চাত্যের আদলে ঘরের মেয়েদের তাঁরা শৌখিন করে তুলতে চান। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘স্ত্রীলোক জীবন-উদ্যানের পুষ্প– তাহাদের বায়ু ও আলোক হইতে লইয়া কেবল ঘরের মধ্যে শীর্ণ বিশীর্ণ করিয়া রাখিলে কি মঙ্গলের সম্ভাবনা!’ ঘরের মধ্যে স্ত্রীলোকের জীবন যাতে শীর্ণ-বিশীর্ণ হয়ে না থাকে, সে-জন্যই ঠাকুরবাড়ির পুরুষেরা সচেষ্ট। 

Rabindranath and Mrinalini cooking
কবি ও কবিপত্নী

উৎসাহ ভরে ঘর-গেরস্থালিতে কেজোত্বের বদলে সৃষ্টিময়তার ছোঁয়া লাগিয়ে ঘরের মধ্যে আলো-হাওয়া প্রবেশ করাতে চান। যা চলে আসছে, সেই হিসেবের বাইরে সংসার আর রান্নাবান্নাকে নিয়ে গিয়ে আনন্দের সঞ্চার ঘটাতে চান। গেরস্থালির সাজসজ্জায় তাঁদের কল্পনাশক্তির ভূমিকা ইতিবাচক হয়েছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু বিপদ বাঁধল রান্নাবান্নার ক্ষেত্রে। এক্সপেরিমেন্টাল রান্নাবান্নায় রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের বিশেষ ভাবনা-পারদর্শিতা ছিল। রথীন্দ্রপত্নী প্রতিমা দেবী রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে লিখেছিলেন, 

বাবামশায় বরাবরই নতুন রান্না উদ্ভাবন-প্রিয় ছিলেন। নিজের রান্নার তালিকা তিনি অনেকসময় নিজেই করে দিতেন। … বাবামশায়ের রুচি অনুসারে রন্ধন বিষয়ে উমাচরণ সুদক্ষ। কোনদিন উমাচরণের অসুখবিসুখ হলে বাড়ির যাঁদের উপর ভার পড়ত, তাঁদের সকলকেই ভয়ে ভয়ে রাঁধতে হত। পুরাতন পাকা বামুনও ভয় পেত তাঁর রান্না করতে। 

পাকা বামুনের ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কারণ রবীন্দ্রনাথ যে রান্না-উদ্ভাবন করছেন, তা পাকা বামুনের ব্যাকরণের বাইরে। একমাত্র রবীন্দ্রনাথের পুরাতন ভৃত্য উমাচরণই কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর মৃত্যুর পর তাঁর বায়না-মাফিক রান্না সামাল দিতে পারত। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিকথায় রবি ঠাকুরের রান্নামগ্নতার কৌতুক স্নিগ্ধ ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, 

পত্নীর ন্যায় কবিরও নূতন নূতন খাদ্য আবিষ্কারের শখ ছিল নিতান্ত কম না। পত্নীর রন্ধনকুশলতা বোধহয় তাঁহার এই শখ বেশ একটু বাড়াইয়া দিয়াছিল। রন্ধনরত পত্নীর পার্শ্বে মোড়ায় বসিয়া তিনি নূতন রকমের রান্নার ফরমাস করিতেন, মাল-মশলা দিয়া নূতন প্রণালীতে পত্নীকে রান্না শিখাইয়া শখ মিটাইতেন এবং শিখানোর জন্য গৌরব করিয়া বলিতেন – “দেখলে, তোমাদেরই কাজ, তোমাদের কেমন এই একটা শিখিয়ে দিলুম।” কবিপত্নী হার মানার ভাষায় মৃদু স্বরে বলিতেন – “তোমাদের সঙ্গে পারবে কে! জিতেই আছ সকল বিষয়ে!”

কবির ঘরে মৃণালিনী হার মানলেও জানতেন কবির রেসিপি বাহির-মহলে চলবে না। মৃণালিনীর হাতের চিঁড়ের পুলি, দইয়ের মালপো, পাকা আমের মেঠাইয়ের স্বাদ যাঁর জিভে একবার লেগেছে তিনি আর ভুলতে পারেননি। তবে এই মিষ্টি-সৃষ্টিতেও রবীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে কল্পনার জাল বুনতেন। রবীন্দ্রনাথ জাল বুনতেন মনে মনে আর বাস্তবে সেই রান্নাকে রূপ দিতেন মৃণালিনী। পুত্র রথীন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিকথায় জানিয়েছেন, শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমে জালের আলমারিতে মায়ের তৈরি মিষ্টি জমা থাকত। সময়ে-অসময়ে রথীন্দ্রনাথ ও তাঁর সহপাঠীরা সেই অক্ষয় ভাণ্ডারে হামলা করতেন। রবীন্দ্রনাথের ফরমাশ মতো সাধারণ গজার নতুন সংস্করণ তৈরি হল, তার নাম পড়ল পরিবন্ধ। তবে রবীন্দ্র-নির্দেশিত সেরা মিষ্টি ‘মানকচুর জিলিপি’। মৃণালিনী প্রথমে করতে চাননি, হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ‘কিন্তু তৈরি করে দেখেন এটাও উৎরে গেল। সাধারণ জিলিপির চেয়ে খেতে আরো ভালো হল।’

Mankachur Jilipi
রবীন্দ্র-নির্দেশিত সেরা মিষ্টি মৃণালিনীর হাতে তৈরি ‘মানকচুর জিলিপি’

রবীন্দ্রনাথ নতুন রান্নার নির্দেশক। কারিগর নন। রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ অবশ্য একবার পায়েস রান্না করেছিলেন। সেই পায়েসের গল্প রাণী চন্দের কাছে করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। ‘ঘরোয়া’-তে সে কথা আছে। চাঁপদানির বাগানে ব্রাহ্মসমাজের উপাসনার আয়োজন হয়েছিল। দেবেন্দ্রনাথের শখ হল পায়েস রান্না করবেন। ঘড়া ঘড়া দুধ আর সন্দেশ দিয়ে পায়েস রান্না করলেন মহর্ষি। অকারণ আধ্যাত্মিক আবেগে উদ্দীপিত মহর্ষির পায়েসটি যেমন-তেমন হলে চলে! পায়েসে গৃহিণীপনার চাইতে ঔদাসীন্য একটু বেশিই দেখানো হয়েছিল। হাতে হাতে তার ফল মিলল। কেউ পায়েস খেয়ে কিছু বলছেন না। শেষে একজন বললেন, ‘ভালোই হয়েছে, তবে একটু ধোঁয়ার গন্ধ।’ শোনামাত্রই উদাসীন মহর্ষির দুরন্ত জবাব, ‘ঐটিই আমি চাইছিলুম, আমি আবার পায়েসে একটু ধোঁয়াটে গন্ধ পছন্দ করি কিনা।’ মহর্ষির ধোঁয়াটে-পায়েসের গল্প যিনি বলেছিলেন, সেই অবনীন্দ্রনাথ তাঁর রবিকার মতো কেবল রান্নার নির্দেশক ছিলেন না। তিনি হাতে-কলমে বিচিত্র উদ্ভাবিত রান্না পাতে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। 

অবনীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের মতো কোনও মৃণালিনীর উপস্থিতি ছিল না। তাছাড়া তখন বাঙালি ভদ্রলোকদের আদিপর্ব অতিক্রান্ত। ঠাকুরবাড়ির আদি পুরুষদের যুগ কেটে গেছে, সংসারে নারীর অধিকার খানিকটা প্রতিষ্ঠিত। মেয়েদের শীর্ণ-দীর্ণ গার্হস্থ্যজীবন অনেকটাই সহনীয় হয়েছে। মেয়েরা ঘরসংসারের কেজো জগৎ থেকে নানা ক্ষেত্রে বাইরে আসছেন। সেই বাইরের জগতে স্বাধীন কল্পনার অবকাশ কিছু ছিল। ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা নান্দনিকতা ও জ্ঞানের অহতুক জগতে প্রবেশ করেছেন। অবনীন্দ্রনাথ মেয়েদের ঘর-সংসার ইত্যাদির কথা ভুলে অহেতুক আনন্দে রান্নার ক্লাব খুললেন। মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় সেই রান্নার ক্লাবের বিবরণ দিতে গিয়ে লিখলেন, 

আমগাছের মাথা ছাড়িয়ে জোড়াসাঁকোর পশ্চিম আকাশ যখন অস্তরাগে লাল হয়ে আসছে ঠিক সেই সময়ে স্টোভ জ্বেলে সোঁ সোঁ শব্দের মধ্যে শুরু হল আমাদের প্রথম পাঠ। দাদামশায় বললেন প্রথম দিন হবে শুধু আলু-ভাজা। যে যেমন চায় আলু কেটে ফেলুক। 

Aban Thakur
দক্ষিণের বারান্দায় অবন ঠাকুর

রান্নার সঙ্গে কুটনো কোটার সম্পর্ক যে গভীর, রান্নার ক্লাবের প্রধান ও তাঁর সহকারীরা তা জানতেন না। নানারকম মাপের আলু নানারকম করে ভাজা হল। তাতে পেট গেল ভরে। রাতের বরাদ্দ খাবার ফেলা গেল। ফলে রান্নার ক্লাব বেশিদিন চলল না। এদিকে অবনীন্দ্রনাথের এক্সপেরিমেন্ট বাসনা তখন তুঙ্গে। বাবুর্চিখানায় ঢুকে পড়লেন অবনীন্দ্রনাথ। তারপর যা করলেন তার বিবরণ পুনশ্চ ‘দক্ষিণের বারান্দা’ থেকে। 

যেখানে প্রথমে পেঁয়াজ ভাজবার কথা সেখানে ভাজতেন শেষে। যেখানে সাঁতলাবার কথা শেষে সেখানে রান্না শুরু করতেন মাছ-তরকারি সাঁতলে নিয়ে। যেখানে সিদ্ধ করবার কথা সেখানে ভেজে ফেলতেন। যেখানে ভাজবার কথা সেখানে সিদ্ধ করতেন। তারপর এইসব উল্টো প্রক্রিয়ার বিপরীত ফলগুলো সামলাতেন নতুন নতুন উপায় আবিষ্কার করে। আরো কত কি সব করতেন। এইভাবে মুর্গির মাছের ঝোল আর মাছের মাংসের-কারি বার করেছিলেন।  

এই সব রান্না-বান্নার ইতিহাস শুনলে আর অবনীন্দ্রনাথের ‘মুর্গির মাছের ঝোল’ আর ‘মাছের মাংসের-কারি’ খেলে কী করতেন ভূতনাথবাবুর পাঞ্চভৌতিক সভার ব্যোম! বলা কঠিন, তবে মনে হয় স্বীকার করতেন উদাসীনতার সঙ্গে কেজোত্বের পাঁচফোড়নেই জীবন সুগম ও সুবহ হয়। কেবল অ্যাবস্ট্রাক্ট আর ক্রিয়েটিভ রান্নার ঠেলা সামলানো সহজ নয়।

 

*ছবি সৌজন্য: Lokogandhar, The business standard, Bongodorshon

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com