banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাংলার দলিত সাহিত্যের ধারা: পর্ব ২

তুষ্টি ভট্টাচার্য

ডিসেম্বর ৮, ২০২০

Bengali alphabet
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

বাংলার দলিত সাহিত্য আন্দোলনের ক্ষেত্রে পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্রদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল। হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুরের অনুগামী বেশির ভাগ নমঃশূদ্র এবং নিম্নবর্গীয়রা মিলে মতুয়া ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। উচ্চবর্ণ-শাসিত সমাজ ও জমিদারদের নিষ্পেষিত অর্থনীতি এবং ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের নিপীড়নে নমঃশূদ্র সমাজ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে চরম অবহেলার সঙ্গে শাস্ত্রীয় সাহিত্যে চণ্ডাল বলে ঘৃণিত হত। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যেমন চৈতন্য প্রবর্তিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মীয় আন্দোলন বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যে নতুন প্রাণপ্রবাহের সৃষ্টি করেছিল, তার প্রভাব বাংলার নিম্নবর্ণের সম্প্রদায়ের সঙ্গে নমঃশূদ্রদের মধ্যেও প্রবাহিত হয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই। হরি-গুরুচাঁদ প্রবর্তিত মতুয়া ধর্মের প্রভাব তেমনি দলিত, নিপীড়িত মানুষদের মধ্যে সাহিত্য, সংস্কৃতিতে জোয়ার আনতে সক্ষম হয়েছিল। এ সম্পর্কে মতুয়া সাহিত্যিক দেবেন্দ্রলাল বিশ্বাসের বক্তব্য—‘Matua Sahitya is a Dalit Sahitya under Bengali Literatures. Matua sahitya is based on The Matua Religion and Matua Religion is based mainly on the Dalit of East Bengal, now Bangladesh.’ নমঃশূদ্র সমাজ ও সাহিত্য ক্ষেত্রে হরিচাঁদ ঠাকুর (১৮১২-১৮৭৮) এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের (১৮৪৬-১৯৩৭) প্রভাবের ফলে উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে প্রতিবাদী চরিত্রে স্বতন্ত্র ‘মতুয়া সাহিত্য সংস্কৃতি’র নতুন ধারার জন্ম নিয়েছিল। এই ধারা বাংলার দলিত সাহিত্যকে পুষ্ট ও পরিবর্ধিত করেছে অনেকাংশে। 

[the_ad id=”266918″]

যেমন আগেই উল্লেখ করেছি, ১৯০৭ সালে ওড়াকান্দি থেকে ‘নমঃশূদ্র সুহৃদ’ এবং ১৯০৯ সালে খুলনা থেকে ‘নমঃশূদ্র দর্পণ’ পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে নমঃশূদ্র সমাজের আত্মকথন শুরু হয়। যদিও এই দু’টি পত্রিকাকে প্রকৃত অর্থে দলিত সাহিত্য বলা চলে না। মতুয়া ধর্ম ও সমাজ সংস্কারকে কেন্দ্র করে মতুয়া জীবনচরিত সাহিত্য রচিত হয়। যেমন — তারক সরকার রচিত ‘শ্রী শ্রী হরিলীলামৃত’ (১৯১৬), মহানন্দ হালদার রচিত ‘গুরুচাঁদ চরিত’ (১৯০৩), সুরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস রচিত ‘শ্রী শ্রী হরিঠাকুর’ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), নিতাইচাঁদ মণ্ডল রচিত ‘যুগনায়ক গুরুচাঁদ’ (১৩৮২ বঙ্গাব্দ) উল্লেখযোগ্য। সহজ, সরল গ্রাম্য কথ্য ভাষায় এই চরিত সাহিত্যগুলিতে হরি-গুরুচাঁদের প্রদর্শিত মতে ও পথে দলিত গৃহীজনের উন্নতি, কর্মকে শ্রেষ্ঠত্ব দান, চরিত্র পবিত্রকরণের উদ্দেশ্যে নানারকম নীতিকাহিনির অবতারণা করা হয়েছিল। মহীতোষ বিশ্বাসের ‘মাটি এক মায়া জানে’ (১৯৭৪), ‘উচ্ছিন্ন পরবাস’ (১৯৮৩), সুধীররঞ্জন হালদারের দণ্ডকারণ্যবাসীদের নিয়ে রচিত ‘অরণ্যের অন্ধকারে’, কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর রচিত ‘উজানতলীর উপকথা’, মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের নিয়ে রচিত নকুল মল্লিকের ‘ক্ষমা নেই’, প্রভৃতি উপন্যাসে পূর্ব বাংলার নিম্নবর্ণের মানুষদের অবস্থান, লোকজীবন, গ্রাম্য সংস্কৃতি যেমন উঠে এসেছে, তেমনি দেশভাগের পর তাদের উদ্বাস্তু কলোনি জীবনের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টার কথাও বলা হয়েছে। মতুয়া কবিতা, পত্রিকা, প্রবন্ধ ও নাটক বা হরিযাত্রা বাংলার দলিত সাহিত্যের ধারা আরও সুপুষ্ট হয়েছে।  

নমঃশূদ্র সমাজ ও সাহিত্য ক্ষেত্রে হরিচাঁদ ঠাকুর (১৮১২-১৮৭৮) এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের (১৮৪৬-১৯৩৭) প্রভাবের ফলে উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে প্রতিবাদী চরিত্রে স্বতন্ত্র ‘মতুয়া সাহিত্য সংস্কৃতি’র নতুন ধারার জন্ম নিয়েছিল। এই ধারা বাংলার দলিত সাহিত্যকে পুষ্ট ও পরিবর্ধিত করেছে অনেকাংশে। 

হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে বারুণী মেলা প্রকৃত অর্থে মতুয়া ভক্তদের মিলন মেলা। মতুয়াদের রচিত পদগীতি, মতুয়া সঙ্গীত ও কবিগান, মতুয়া সাহিত্য সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য দিক। তারক সরকার রচিত ‘শ্রী শ্রী মহাসংকীর্ত্তন’ (১৯০০), শ্যামচাঁদ পাণ্ডের ‘হরিগুরুচাঁদ গীতাবলী’ (১৯৬৮), ব্রজেন্দ্র মণ্ডলের ‘শান্তি সঙ্গীত’ উল্লেখযোগ্য মতুয়া সঙ্গীত পুস্তক। মতুয়া কবিয়ালদের মধ্যে তারক সরকার, রাজেন্দ্র সরকার, অনাদি সরকার, শ্রীনিবাস সরকার, মহিলা-কবি সন্ধ্যা সরকার, পিপাসা বিশ্বাস, আরতি সরকার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। রামজীবন বালার ‘হরিযাত্রা’ (১৯২০), কুমুদ বিশ্বাসের ‘কামনা সাগরে পুত্র বিসর্জন’ (১৪১৩ বঙ্গাব্দ), রাজু দাসের ‘ঐ আসে মহামানব গুরুচাঁদ ঠাকুর’, মতুয়া ভক্ত এবং সাধকদের নিয়ে রচিত ‘অষ্টক গানের পালা’ গুরুত্বপূর্ণ হরিযাত্রা। মতুয়াদের অন্যান্য অনুষ্ঠান ‘হরিকীর্ত্তন’, ‘হরিলুট’ বা ‘মহাচ্চপ’ উল্লেখযোগ্য। এইসব উৎসবে ভক্তরা দলে দলে শিঙা, ডঙ্কা, নিশান নিয়ে শোভাযাত্রা, ও নৃত্যরত অবস্থায় ‘মাতাম’ বা নামসংকীর্তনে মত্ত হন। বাংলা ও সর্বভারতীয় দলিত সাহিত্য ধর্মীয় চিন্তা বর্জন করে বাস্তববাদী ভাবনা ও ব্রাহ্মণ্যবাদী সাহিত্য সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যদিও মতুয়ারা বিনা বিচারে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রকে খারিজ করেনি। মতুয়া সাহিত্য বর্ণবাদ ও ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যকে অস্বীকার করলেও ভারতীয় ধর্মবোধের ভক্তি ও ভাববাদকে আশ্রয় করেছে। মূলত মতুয়া সাহিত্য আন্দোলন আধুনিক যুক্তিবাদের আলোকে দেশজ সংস্কৃতি বর্জন না করে, পরিমার্জনের মাধ্যমে উত্তরণের বা নবনির্মাণের পথে হেঁটেছে। 

Language
ছবি সৌজন্য – facebook.com

মতুয়াদের প্রসঙ্গে আরও একটি তথ্য বা বলা ভাল, ঘটনার উল্লেখ করি। উনবিংশ শতকে পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ অঞ্চল। শেখ মুজিবেরও বহু আগে এই এলাকার ওড়াকান্দি গ্রামে এক যুগান্তকারী মহামনীষী জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন শিক্ষার গুরুত্ব। তাই সন্তানকে শিক্ষা দিতে গেলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদী পাঠশালায় তাঁর ছেলের ঠাঁই হল না। শেষে মুকুম মিয়াঁর মক্তবে শুরু হল তাঁর পুত্রের শিক্ষা। এবার তিনি বুঝলেন সঙ্ঘবদ্ধ সামাজিক আন্দোলনের গুরুত্ব। গড়ে তুললেন এমন আন্দোলন যার পরিণামে একটি অস্পৃশ্য জাতি হয়ে উঠল এক অনিবার্য শক্তি। হরিচাঁদ ঠাকুর মুকুম মিয়াঁর পাঠশালায় পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দলিত মুসলিম ঐক্যের যে নয়া নজির গড়ে তুলেছিলেন তা চলেছিল বিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আজ মতুয়া আন্দোলন বলতে মূলত নমঃশূদ্রদেরই বোঝায়। কিন্তু হরিচাঁদ-গুরুচাঁদের আন্দোলন ছিল সকলের জন্য,

“নমশুদ্র তেলী মালী আর কুম্ভকার।
কাপালি মাহিষ্য দাস চামার কামার।।
পোদ আসে তাঁতী আসে আসে মালাকার।
কতই মুসলমান ঠিক নাহি তার।।”

মীর সাহেবের সঙ্গে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ পরিবারের হৃদ্যতা তো কিংবদন্তীসম।

[the_ad id=”266919″]

এরপরেও শিক্ষাক্ষেত্রে মতুয়া আন্দোলন আবার ধাক্কা খায় যখন বর্ণহিন্দু গিরীশ বসু নমঃশূদ্রদের জন্য তাঁর পিতার নামে বিদ্যালয় করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েও অস্বীকার করেন। বর্ণহিন্দুদের শিক্ষাক্ষেত্রে মৌরসিপাট্টা ভাঙতে পারে, এই আশঙ্কায় উভয় তরফ থেকে এরকম বহু কিছুর বিরোধ এসেছে, সংগঠিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে মাধ্যমিক বোর্ড প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার মধ্যে দিয়ে। 

মহীতোষ বিশ্বাসের ‘মাটি এক মায়া জানে’ (১৯৭৪), ‘উচ্ছিন্ন পরবাস’ (১৯৮৩), সুধীররঞ্জন হালদারের দণ্ডকারণ্যবাসীদের নিয়ে রচিত ‘অরণ্যের অন্ধকারে’, কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর রচিত ‘উজানতলীর উপকথা’, মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের নিয়ে রচিত নকুল মল্লিকের ‘ক্ষমা নেই’, প্রভৃতি উপন্যাসে পূর্ব বাংলার নিম্নবর্ণের মানুষদের অবস্থান, লোকজীবন, গ্রাম্য সংস্কৃতি যেমন উঠে এসেছে, তেমনি দেশভাগের পর তাদের উদ্বাস্তু কলোনি জীবনের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টার কথাও বলা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটেই জনগণনা রিপোর্টে বাংলার নিম্নবর্গীয় জনগোষ্ঠীর বিরূপ বর্ণণার প্রতিবাদে ডা মীর তাঁর নমঃশূদ্রসঙ্গীদের নিয়ে ছোটলাট হেয়ার সাহেবকে পরিস্থিতির বিবরণ দেন, যার ফলে হেয়ার সাহেবের উদ্যোগে ১৯০৯ সালে মর্লে-মিন্টো সংস্কারে ৩১টি নিম্নবর্গীয় জাতিকে শিক্ষা ও চাকুরিক্ষেত্রে সংরক্ষণ দেওয়া হয়। এর সঙ্গে বাংলার আইনসভায় অনুন্নত শ্রেণির একজন নির্বাচিত ও একজন মনোনীত সদস্য গৃহীত হন। সারা ভারতে সেটাই ছিল প্রথম। তখন ভবিষ্যতের দলিত নেতা ভীমরাও রামজি শাঙ্খপল বা বাবাসাহেব অম্বেডকর সবে ১৮ বছরে পদার্পণ করেছেন। 

এবার আসি রাজবংশীদের কথায়। রাজবংশী বা কামতাপুরী ভাষা মূলত বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহি অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি জেলা— কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলার সমতল, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, ও মালদহ জেলার কিছু অংশে বিদ্যমান। এছাড়া অসমের গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি, মেঘালয় ও বিহারের কিছু অঞ্চল, নেপালের ঝাপা জেলাতেও এই ভাষা গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন। এই ভাষা তিব্বতীয়-বার্মা এবং ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর মিলনে তৈরি। তিন রকম উপভাষা রয়েছে এই ভাষায়। পশ্চিম রাজবংশী, পূর্ব রাজবংশী ও মধ্য রাজবংশী। মধ্য রাজবংশী ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যাই বেশি। আর পার্বত্য অঞ্চলে এক রকম রাজবংশী ভাষা রয়েছে, যাকে কোচ ভাষাও বলে। ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা দেড় কোটি। ভাষা ও জনজাতি গোষ্ঠী হিসেবে রাজবংশীদের প্রতিষ্ঠা লাভের ইতিহাস অনেক পুরনো। রাজবংশী সমাজের প্রতিষ্ঠা লাভের জনক হলেন ‘রায় সাহেব’ ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা (১৮৬৬-১৯৩৫)। তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, তাঁর জীবনী স্থান পেয়েছে পাঠ্যক্রমে। ২০১২ সালে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ আন্দোলনের পরে ২০১৮ সালে এ রাজ্যে রাজবংশী ভাষাকে ‘অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির উদ্যোগে রাজবংশী অভিধানও নির্মিত হচ্ছে। গঠিত হয়েছে রাজবংশী উন্নয়ন বোর্ডও। 

[the_ad id=”270084″]

রাজবংশী ভাষার প্রথম পত্রিকা ‘পোহাতী’। ‘দোতরার ডাং’ নামক রাজবংশী ভাষার পত্রিকাটিও বর্তমানে প্রকাশিত হচ্ছে। পত্রিকাটি ত্রিভাষিক। তবে বেশির ভাগ লেখাই রাজবংশী ভাষায় বাংলা হরফে। দু’টি কবিতা ইংরেজি ভাষায় ইংরেজি হরফে, একটি প্রবন্ধ হিন্দি ভাষায় হিন্দি হরফে — পত্রিকার বর্ণনায় ‘সাগাই ভাষা’ বা আত্মীয় ভাষার লেখা। এছাড়া আছে ন’টি কবিতা, রাজবংশী ভাষায়। রাজবংশী ভাষায় প্রবন্ধগুলির মধ্যে আছে দীপক কুমার রায়ের  ‘বিষুয়া: তেপুরানী সংস্কৃতি’, নিলয় বর্মণের লেখা  ‘ভৌম জলের আদানুটি: মানষি জাতির বিপদ সংকেত’, প্রশান্ত প্রসুনের  ‘কাঁঠালগুড়ি চা বাগান, একনা অনুভূতি’। রাজবংশী ভাষার এই পত্রিকাটির সম্পাদক প্রশান্ত কুমার রায় ও নিলয় বর্মণ। কোচবিহারের নাজিরহাট থেকে অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়।  

উনবিংশ শতকে পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ অঞ্চল। শেখ মুজিবেরও বহু আগে এই এলাকার ওড়াকান্দি গ্রামে এক যুগান্তকারী মহামনীষী জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন শিক্ষার গুরুত্ব। তাই সন্তানকে শিক্ষা দিতে গেলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদী পাঠশালায় তাঁর ছেলের ঠাঁই হল না। শেষে মুকুম মিয়াঁর মক্তবে শুরু হল তাঁর পুত্রের শিক্ষা।

এই পত্রিকার তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যাতে (কার্তিক মাস, ১৪২০) প্রকাশিত একটি কবিতা নীচে দেওয়া হল। গোলাগুলির মধ্যে সীমান্ত এলাকার গ্রামের মানুষের জীবন নিয়ে জয়ন্ত সরকারের লেখা ভুটুস কবিতার অংশ এটি। 

কুত্তি গেছে দাদার শালা, কুত্তি গেইছে বৌদি,
দেখতো বাপই এমন করি ভুটুস করিল কি? …
মেজর সাহেব কয়া গেইল তাও না জানেন
যদি ওঠে ভুটুস করি, খাড়েয়া না থাকেন।
ভুটুস করি যেই উঠিচে কয় মঙ্গলের বাপ,
কেটলী নেরে মঙ্গলের মাও সাথোত দুইটা কাপ।
মঙ্গল নেউক গরু দুইটা আর নেউক চড়াই
মুই নিম অ্যালা হাতা হাড়ি আর এক হাতোত কড়াই। …
অদ্দ রাইতে মুক্তির মাও ফাসার-ফুসুর করে,
মুক্তির ঠাইকমার টান উঠিচে এল্যায় বুঝি মরে।
সগায় করে ইশারা ইশরী কতা না কয়,
বডারীর কান্ড দেইখলে হাসি টানে না সয়। …
ভুটুস-ভুটুস কইরতে কইরতে এমন নেশা ধরে,
কারো যদি হয় টায়ার ব্রাস্ট বডারী শুতি পড়ে।

২০১৬ সালে জলপাইগুড়ির সীমান্তবর্তী এলাকার মানিকগঞ্জের প্রেমানন্দ রায় রবি ঠাকুরের গীতাঞ্জলি, রাজবংশী ভাষায় অনুবাদ করেন। প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর রাজবংশী ভাষা দিবস পালিত হয়। (চলবে)

বাংলায় দলিত সাহিত্যের ধারা: পর্ব ১

তুষ্টি হুগলি জেলার শেওড়াফুলির বাসিন্দা এবং বোটানিতে স্নাতক। গদ্য ও কবিতা লেখায় সমান আগ্রহ। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা তিন - ভিজে যাওয়া গাছ, ব্ল্যাক ফরেস্ট ও এরিসেডের আয়না। গদ্যের বইয়ের নাম পদাবলি।

10 Responses

  1. পড়লাম। তথ্য সমৃদ্। নমঃশূদ্র জীবন নিয়ে নিউইয়র্কবাসী কুলদা রায়ের লেখা অসামান্। তাঁর গল্প শারদীয় অনুষ্টুপ পত্রিকায় গত কয়েক বছর নিয়মিত প্রকাশিত হয়। দুটি গল্পের বই বৃষ্টি চিহ্নিত জল এবং মার্কেজের পুতুল এবং অন্যান্য গল্প কলকাতার সোপান পাবলিশার্স এবং বাংলাদেশের নালন্দা প্রকাশনী প্রকাশ করেছে। লেখাটি তথ্য সমৃদ্ধ। সুলিখিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com