Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

মনের মৌচাক– কাগে

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

আগস্ট ২, ২০২৩

Travel story KAGEY
Travel story KAGEY
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

তুলোয় ঢাকা তিস্তা। এমন কখনও দেখিনি ওকে। করোনেশন ব্রিজ ডান হাতে ফেলে গাড়ি যত এগোচ্ছে তিস্তা ততই নিজেকে তুলোয় মুড়ে নিয়েছে। ওগুলো মেঘ! এত নীচে? কী বিস্ময়! তবু এটাই সত্যি। দেবাশিসদা মোবাইলে ভিডিও-ই করে ফেলল। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্লে ব্যাক করে কিছুই খুঁজে পেল না। আসলে দেবাশিসদা অতি রোমাঞ্চিত হয়ে ক্যামেরায় ফ্রেম ধরেছে ঠিকই, কিন্তু রেকর্ডিং অন করেনি। তিস্তার গা ঘেঁষেই ওপারের পাহাড় উঠেছে। তার বুক চিরে সর্পিল পাকদণ্ডি। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে কেউ যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পুঞ্জীভুত ধোঁয়ার মতো বর্ষারঙের মেঘ দল পাকিয়ে গোল বাধাবার তাল করছে। বৃষ্টি হচ্ছে, থামছে। কখনও ঝিরঝির, কখনও ঝমঝম। ছুটন্ত গাড়ির জানলায় মেঘ-পিয়নের চিঠি। অঝোর বৃষ্টি মাথায় করেই সেবক কালীবাড়িতে পুজো দিলাম আমি, রামা আর পলাশ। আসার আগে কম লোকের নজর তো ছিল না আমাদের ট্রিপটার ওপর! মা গো, রক্ষে কোরো।
এগিয়ে চলেছি তিস্তা বাজারের দিকে। বোলেরোর মধ্যে আমরা সাতজন। চলেছি কাগের (KAGEY) উদ্দেশে। কালিম্পং পেরিয়ে পেডং, তার পরে আরও দুটো পাহাড় টপকে এই স্বল্প-পরিচিত পাহাড়ি গ্রাম। আন্তর্জালে ছবি দেখেই প্রেম জেগেছিল। খুঁজে বের করেছিল প্রবুদ্ধ। ও সময় পেলেই গুগলে মানচিত্র খুলে বসে। কৈলাস থেকে মাউন্ট এভারেস্ট, এর মধ্যেই জয় করে ফেলেছে। শুধু শরীরটা ঈষৎ ভারী হবার জন্য সশরীরে পৌঁছোতে পারেনি এই যা। অবিশ্যি ইদানীং গুঁতোয় পড়ে ঘোর বর্ষার বৃষ্টির মতো শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদগুলোকে ঝরিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। আশা রাখছি, আর বছরখানেকের মধ্যেই মাকালু-টাকালু কোথাও একটা পতাকা পুঁতে আসবে।

UPPER ECHHEY
মেঘের তুলোয় মোড়া চরাচর

তিস্তাবাজার পেরিয়ে কালিম্পংয়ের আপার ইচ্ছে গ্রাম। এখানে দ্বিপ্রাহরিক আহারের বিরতি। আহা রে! কী অপূর্ব জায়গাখানা। রাস্তার একপাশে ঝকঝকে পরিষ্কার খোলামেলা খাবার জায়গা। উল্টোদিকে সবুজ বাঁধানো স্থানে থরে থরে সাজানো প্রার্থনা পতাকা। তারই মাঝে সোনালি রঙের ধ্যানরত পদ্মসম্ভবার বিশাল মূর্তি। টুপটাপ বৃষ্টি আর ঘন মেঘ-কুয়াশার আদরে পদ্মসম্ভবা বিলীয়মান। গোর্খা থালির ফরমাশ করে দলবেঁধে কয়েকটা সিঁড়ি পেরিয়ে আমরা সকলেই পদ্মসম্ভবার থানে। ধীরে ধীরে মেঘ সরে গেল। আবছা অবয়ব থেকে প্রকটিত হলেন পদ্মসম্ভবা। দুপাশের আকাশ ছোঁয়া লাল-নীল-সবুজ ধর্মীয় পতাকাগুলো আলবেলা বাতাসে পতপত করে উড়ছে। শীর্ষেন্দু মোবাইল হাতে ফ্রেম খুঁজছে। ও মোবাইলেই যা ছবি তোলে অনেকে ক্যামেরা নিয়েও তা তুলতে পারে না। আসলে ছবি তুলতে ক্যামেরার প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু সবথেকে বেশি যেটা দরকার, সেটা হল অন্তর্দৃষ্টি। দেয়ালে সাঁটানো একটা সাধারণ পোস্টারের ছবিও শীর্ষ এমনভাবে তোলে মনে হয় ছবিটা যেন একটা গল্প বলছে। আমরাও যে যেরকম পারলাম পোজ দিলাম। ছবি তোলালাম ও তুললাম।

PADMASAMBHABA_UPPER ECHHEY
আবছা অবয়ব থেকে প্রকটিত হলেন পদ্মসম্ভবা

আরও কিছু সিঁড়ি ভেঙে একটা ছোট্ট ভিউপয়েন্ট। দাঁড়াতেই মনে হল একটা বিরাট ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়েছি। এক্ষুনি মেঘে-বৃষ্টিতে নেতিয়ে ছিল প্রকৃতি। মুহূর্তের মধ্যে রোদের ফালি ঝিকিয়ে উঠে পাল্টে ফেলেছে নিজেকে। খাদের কিনারা থেকে সবুজের গেরস্থালি মাথা উঁচু করে আমাদের দেখছে। তাকে টপকালেই পাহাড় ক্রমশ ঘন সবুজ থেকে দূরে হারাতে হারাতে নীলবর্ণ নিয়েছে। একটু আগের মনমরা মেঘগুলো স্নান সেরে ধবধবে সাদা তুলোর জামা গায়ে পরেছে। তারও পারে নীল-সাদা আকাশ। অনন্তকাল ভাসছে যেন ওরা। পলক পড়ছে না। হঠাৎ কোথা থেকে যেন একরাশ ধোঁয়া এসে জড়ো হল আমার দৃষ্টিপথে। আবার মেঘ এল কোথা থেকে! মাথা ঘোরাতেই ভুরুতে আমার ধনুষ্টংকার। ‘আবার সিগারেট ধরিয়েছ?’ খানিক খিঁচিয়েই উঠলাম। এই পাহাড়ে যত না মেঘ, তার চেয়ে বেশি প্রশান্তর সিগারেটের ধোঁয়া। সে ব্যাটা ভসভস করে ধোঁয়া ছেড়ে কাঁধ নাচিয়ে হেসে উঠল। 

-বিড়ি না ধরিয়ে একটা গান তো ধরতে পারতে। 

গাড়িতে আসতে আসতেই প্রশান্তর গলা শুনেছি। চমৎকার স্বরক্ষেপণ। ‘বেশ তো হোক…’ বলেই গান ধরল। রিমঝিম গিরে সাওন, সুলগ সুলগ যায়ে মন। প্রকৃতিও শুনল প্রশান্তর গান। আবার মেঘ করল। টিপটিপ শুরু হল। আর মনমরা মনে হল না তাকে। এবার যেন চির প্রেমের ধারায় সিক্ত করতে ঝরে পড়ছে সে। গান শেষ হতেই নীচ থেকে রামার ডাক শোনা গেল। গোর্খা থালি রেডি।

GORKHA THALI_UPPER ECHHEY
সেই গোর্খা থালি

বাপ রে বাপ! এ কী থালি? এ যেন সাত জন্মের জামাই আদর একজন্মেই সেরে ফেলবে এই পাহাড়ি মানুষগুলো। কাচের প্লেটের ওপর একটা জাম বাটিভর্তি ভাত। পাশে তার সাজানো আরও এগারোটা বাটি ভর্তি নানান পদ। ডাল, চিকেন, পকোড়া, ডাস্ট আচার, আলুর দম, দই, পিঁয়াজের আচার, পাহাড়ি সোয়াবিনের তরকারি… এছাড়া বাকিগুলোর নাম মনে নেই। সব যে ভালো লাগল তা বলব না। তবে বেশিরভাগটাই চমৎকার। শীর্ষ নিরামিষ খেল হাত চেটেপুটে। ঢ্যাঁড়সের তরকারি আর পনিরটা নাকি চূড়ান্ত হয়েছিল। পেট আর মন দুটো ভরিয়েই গাড়ি ছুটল আলগাড়ার দিকে। আলগাড়া থেকে পেডংয়ের দিকে গাড়ি বেঁকে গেছে। এরপর শুধুই চড়াই আর উৎরাই। চলতে চলতে কতবার যে পাহাড়িয়া সৌন্দর্য আমাদের পথ আটকে দাঁড়িয়েছে তার হিসেব নেই। কিন্তু আমাদের দাঁড়াবার সুযোগ ছিল না খুব বেশি। হোম স্টে থেকে বলে দিয়েছে বিকেল চারটের মধ্যে ঢুকতেই হবে। বর্ষাকাল। যেখানে সেখানে ধস নামছে। আসার পথে তার বেশ কিছু নমুনাও পেয়েছি। পুলিশ নাকি বিকেল থেকে অনেক জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: গ্রামের নাম মিম

শৈল বনানী ঘেরা পাকদণ্ডি পেরিয়ে বিকেলে সাড়ে চারটের মধ্যে হানিকম্বের সামনে। কাগের হোম স্টে। সাইমন নামের এক অল্পবয়সী ফরসা ছিপছিপে ছেলে এই মৌচাকের মালিক। পাহাড়ের ঢালে এই আস্তানা। নীচে পাশাপাশি তিন-চারটি ঘর। এগুলো পুরনো। ঘরগুলোকে পাশ কাটিয়ে নতুন দোতলা বাড়ি। আমাদের জন্য বরাদ্দ দোতলায় দুইখানা ঘর। প্রতিটাতেই ঘর লাগোয়া লম্বা বারান্দা। সিঁড়িগুলো বড্ড ছোট। পূর্ণ বয়স্ক মানুষের পায়ের পাতা পুরোটা ধরে না। তাই ওঠানামা করতে হবে সাবধানী হয়ে।

HONEYCOMB HOMESTAY
কাগের 'মৌচাক' হানিকম্ব

গাড়ি থেকে নামতেই দুটি অল্পবয়স্ক ছেলে এসে আমাদের মালপত্র নিয়ে ঘরে পৌঁছে দিল। দোতলার বারান্দায় পৌঁছেই মনে হল আর কোত্থাও যাব না। দুটো দিন আলসেমি করে এই ব্যালকনিতেই কাটিয়ে দেব। আমাদের হোমস্টে ঘিরে মধুর চাষ। তাই এর নাম ‘হানিকম্ব’। সঙ্গে এলাচ আর ভুট্টাও আছে। উঠোনের মতো কিছুটা অংশ ঘাসে ঢাকা। তারপরেই নেমে গেছে জঙ্গলে মোড়া খাদ। দূরে নীল-সবুজ পাহাড়ে তুলো-তুলো মেঘের ভিড়। খানিকবাদেই তুলোমেঘগুলো আবার ধোঁয়ার মতো হয়ে গেল। যেন কোনও পাহাড়ি অগোচরে দাবানল লেগেছে। পাশে চোখ পড়তেই দেখলাম এক রাশ মেঘ ঘন কুয়াশার ছদ্মবেশে গাছেদের মাথাগুলোকে সিঁড়ি করে ওপরের দিকে উঠে চলেছে। ভেজা বাতাসের ঝাপটায় ভুলেই গিয়েছিলাম পোশাক পাল্টাতে হবে। ঘরে ব্যাগপত্তর খুলতেই মাথায় হাত। হায় হায়! এ কী অবস্থা! লেদারের ব্যাগ। অথচ জামাকাপড় ভিজে সপসপ করছে। আসলে আমাদের দলে একটি ছেলে বড্ড গরিব। অভাবে নয়, স্বভাবে। ওই ফোটোগ্রাফার শীর্ষেন্দু। একে ভ্যাপসা গরম, তার ওপর বাথরুমের ধারে স্লিপার ক্লাসে আমাদের ঠাঁই হয়েছিল। পইপই করে সবাই বলেছিলাম এসি কোচের টিকিটের জন্য। কিন্তু ওই চিরগরিব, নাক শুকোনো হাড়-হাভাতেটার জন্য কিছুতেই এসি কোচে চড়া হল না। অবিশ্যি শুধু শীর্ষ নয়, সাপকে ধুনোর গন্ধ দিয়েছে পলাশ। স্লিপার ক্লাসে আমরাও যাই। কিন্তু এই বর্ষাকালে স্লিপারে যাওয়াটা সত্যিই চাপের। যথারীতি যা সব্বোনাশ হবার হল। বৃষ্টি আর বাথরুমের জল জোট বেঁধে মধ্যরাতে তস্করের মতো আমাদের সিটের নীচে সেঁধিয়ে ব্যাগগুলোকে ভিজিয়ে দিয়ে গেল। ভাগ্যিস রামা দেখতে পেয়ে তুলে দিয়েছিল তাই অন্তত লজ্জা নিবারণের মতো পোশাকটুকু গায়ে চড়ানো গেছে।

KAGEY
দূরে নীল-সবুজ পাহাড়ে তুলো-তুলো মেঘের ভিড়

পিঁয়াজের পকোড়ার সঙ্গে চা চলে এল। প্রকৃতির নিসর্গে বসে ধূমায়িত চায়ের কাপে সুড়ুৎ সুড়ুৎ চুমুক, সঙ্গে পকোড়ায় মুচমুচে কামড়। আহা! এ স্বাদের ভাগ হবে না। চোখের ওপরেই অনবরত পাহাড়ে মেঘে আলোছায়ার অনন্ত লীলাখেলা। ভেজা জামাকাপড়গুলো বারান্দার দড়িতে হাত-পা ছড়িয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলছে। একটানা ঝিঁঝিঁর ডাক দুটো কানের পর্দায় খোলকরতাল বাজিয়েই চলেছে। গরম জামাকাপড় বেকার বইলাম। ঠান্ডার লেশমাত্র নেই। কতক্ষণ যে প্রকৃতির শোভায় বুঁদ হয়ে রইলাম খেয়াল নেই। হঠাৎ মনে হল আশপাশটা বেশ চুপচাপ। সবকটা গেল কই? কারও গলা পাই না পাই, বকতিয়ারউদ্দিন পলাশ তো চুপ থাকার ছেলে নয়। সর্ব ব্যাপারে জীবনের নানান অভিজ্ঞতা তার। সেগুলো না উগড়ে চুপ থাকার ছেলে সে নয়। একমাত্র রামাই দেখলাম ঘরের জানলায় মুখ পেতে স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে বসে চুপচাপ ঢুকুঢুকু করছে। তবে ব্যাটার লিমিটজ্ঞান আছে। মাতাল হয় না কখনও। শুধু নেশা চড়লে রামাবাবাজির ব্রহ্মজ্ঞানের দরজাটা খুলে যায়। ‘এই রামা সবাই কই?’

-ছাদে।
পড়ন্ত বিকেলের মতো শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল রামা।

‘ছাদে? এই হোমস্টেতে আবার ছাদ কই?’ আমি খানিক ইতিউতি চোখ চালিয়ে দেখে নিলাম। রামা বলল, ‘ওই যে সিঁড়ি। ওপাশে একটা, এপাশে একটা।’ বারান্দায় এসে চোখ চালালাম বাইরে। সেই যেখানে রাস্তার পাশে আমরা গাড়ি থেকে নেমেছি সেখান থেকে একটা সিঁড়ি উঠে গেছে বটে। তবে সেটা মোটেও এই হোমস্টের ছাদ নয়। যেহেতু এটা পাহাড় তাই সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওটা আরেকটা উঁচু ভিউ পয়েন্ট। ওইটুকু উঠতেই হুশহাশ করে জিভ ঝুলে পড়ল। আসলে এমনিতেই আমি হেঁপো রুগি। তায় এতটা পাহাড়ি পথ লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে আজই পৌঁছেছি। সাড়ে আটত্রিশ বছরের কচি নধর চেহারায় কি আর এত ধকল সয়? যাই হোক, পৌঁছলাম। দূরে খাদের ধারে একটা বেঞ্চে বসে পাহাড় দেখছে দুটো মেয়ে। রামাদের পাশের ঘরে উঠেছে। দোতলায় উঠতেই দেখেছিলাম। কিন্তু যাদের খুঁজতে এলাম তারা নেই। বুঝলাম তেনারা আরেকটি সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেছেন। এ যেন রৌদ্র-মেঘের লুকোচুরি খেলা। নিজের মনেই হাসলাম।

KAGEY GRAM
কাগে গ্রাম

মেয়েদুটো কিছুক্ষণ বাদে নেমে গেল। আমি বসে রইলাম। একই তো পাহাড়, একই মেঘ, একই আকাশ। তবু মনে হল নীচের বারান্দা থেকে দেখা প্রকৃতি এখানে আরও অন্যরকম। সন্ধে নামল। আমিও নামলাম। পাহাড়ের শরীর জুড়ে ফুটে উঠল অজস্র জোনাকি। মাঝেমাঝেই দূরে কিছু আলোর বিন্দু এঁকেবেঁকে চলে যাচ্ছে। ওগুলো গাড়ির আলো। পাহাড়ের পথে ছুটে চলেছে। দেবাশিসদা ক্যামেরা নিয়ে শৈলবাসের নৈশ ছবি তোলার চেষ্টা করছে। এক গ্লাস লাল জল নিয়ে পাশে এসে দাঁড়াল শীর্ষ। বললাম, ‘ব্যস, শুরু হয়ে গেল তো?’ শীর্ষর বাঁধানো সাদা দাঁতগুলো থেকে অন্ধকারে যেন আলো ঠিকরে বেরোল। কিছুক্ষণ বাদেই পাহাড়ে ছড়িয়ে আসর জমানো জোনাকিরা উধাও। অন্ধকারে না দেখা গেলেও বুঝলাম এবার মেঘেদের পালাগান। রাতে মুরগির ঝোল আর ভাত সাঁটিয়ে একটু তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়লাম। চোখ জুড়ে আসছিল। ঘুমোবার আগে শুনলাম পাশের ঘরের একটি মেয়ের নাকি বয়ফ্রেন্ড এসেছে। ঘুমের ভারে ক্লান্ত চোখগুলো আপনা থেকেই কেমন যেন গোল গোল হয়ে গেল। একটাই তো ঘর। দুইখান মাইয়া। একখান পোলা! হে ভগবান! কী হতে চলেছে ক্যা জানে?

মাঝরাত পেরিয়ে ঘুমটা একটু হালকা হয়েছে। দেখলাম জানলার শার্টার সরিয়ে শীর্ষ মুখখানা গলিয়ে দিয়েছে আমাদের ঘরে। এ কী! জানলা বাইরে থেকে খোলা যায় নাকি? পলাশ শুয়ে ছিল জানলার পাশের বিছানায়। শীর্ষ ভীষণ হাসছে। খিলখিল করে হাসছে। পলাশ তাকে কিছু একটা বোঝাবার চেষ্টা করছে। শীর্ষ তবু হাসছে। অবশেষে পলাশ দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। এরপর আমি আবার ঘুমে। মাঝে প্রশান্ত একবার ঘুমচোখ খুলে তাকিয়ে ছিল। একখানাই প্রশ্ন করেছিল, ‘তিনজনে কি একটা ঘরেই আছে?’ খ্যালখেলিয়ে হাসতে হাসতে শীর্ষ বলছিল, ওটা দেখতেই নাকি ও পলাশকে ডাকছে! শুয়ে শুয়ে আধো জাগরুক আমি কান খাড়া করে শুনলাম পলাশ বলছে, ‘এসব ঠিক নয় শীর্ষ। শুয়ে পড়। ছিঃ ছিঃ। ঠিক নয়।’ কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক ভগাই জানে। আমি আবার ঘুমের দেশে।

KAGEY VIEW POINT
সেই ভিউপয়েন্ট, প্রকৃতি এখানে আরও অন্যরকম

পলাশ যত রাতেই ঘুমাক, ঠিক পাঁচটায় উঠে পড়ে। এটা একটা ভালো স্বভাব। তাই ওকেই বলেছিলাম আমায় যেন ডেকে দেয়। ঘুরতে যাব। বেরোবার আগে ডেকেওছিল। কিন্তু যতক্ষণে আমি উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম ততক্ষণে পলাশ ধাঁ। সকালের আলো ফুটেছে। কিন্তু কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। দরজা একটু খোলা পেয়েছে কি অমনি দলবল বেঁধে মেঘের দল ঢুকে পড়ল ঘরে। ঘুমিয়ে থাকা প্রশান্তের শরীরের ওপর নেচেকুঁদে অদৃশ্য হয়ে গেল। শরীরটা ভেজা ভেজা লাগল। মেঘ এসে ছুঁয়ে গেছে আমায়, কথাটা ভাবতেই কেমন একটা শিহরণ খেলে গেল। এ যেন সত্যি নয়। গল্পলোকের কোনও দেশ। মেঘালয় ঘুরে এসেছি আমি। কিন্তু সেখানেও মেঘেরা এমন করে আলিঙ্গন করে যায়নি। রামাদের ঘরে উঁকি মেরে দেখলাম প্রবুদ্ধও নেই। বুঝলাম দুজনেই মেঘ-পাহাড়ের সঙ্গী হয়ে পথ খুঁজতে বেরিয়েছে। কোথায় যাবে জানে না। তবু প্রকৃতির নেশায় মাতাল হতে গেছে ওরা। সবসময় কোনও গন্তব্যে পৌঁছোতে হবে কে বলেছে? বেরোনোটাই আসল।

PAHARI POTHOCHARI
মেঘ-পাহাড়ের সঙ্গী হয়ে পথ খুঁজতে

অত ভোরে না হলেও আমিও বেরোলাম একটু পরে। কাগের পথ ভিজে আছে বৃষ্টিতে। সঙ্গী শীর্ষ আর প্রশান্ত। ছবিতে দেখেছি এখানে দারুণ একটা চার্চ আছে। সেইখানে যাবার ইচ্ছে নিয়েই বেরিয়েছি। তবে কোনও তাড়া নেই। শম্বুকগতিতে এগিয়ে চলেছি তিনমূর্তি। হোমস্টের সামনে থেকেই ডানহাতের পিচরাস্তাটা সোজা উঠে গেছে। প্রথমটায় বেশ বেগ পেতে হল। তবু পোজ দিয়ে ছবি তোলার বিরাম নেই। সকালের মনোরম শীতলতা কুয়াশার মতো জাপটে ধরছে। তবে কিছুটা যেতেই বুঝলাম গায়ের জামাটা ভিজে উঠেছে ঘামে। অনেকটা ক্যালোরি বার্ন হয়েছে।

আমাদের ডানদিকে পাহাড় উঠেছে। বাঁ পাশে নেমেছে খাদ। সবুজের সমারোহে খাদও হারিয়েছে অতলে। ঝিল্লির ডাক এখনও কনসার্ট চালিয়ে যাচ্ছে। কখনও আলো, কখনও মেঘ গায়ে মেখে এগিয়ে চলা মনের খুশিতে। মাঝেমাঝে দাঁড়িয়ে পড়া অচেনা ফুলের টানে। দুয়েকটা রঙিন ছোট ছোট বাড়ি। বাহুল্য নেই। হরেক রঙে ঢাকা দেওয়া অন্দরের দৈন্য। তবু সেই বাড়ির বাইরেও ফুলের নিষ্পাপ বাহার। এদের যা আছে, যতটুকু আছে সেটুকু দিয়েই এরা সাজিয়ে রাখতে জানে। দুটো লোমশ কুকুর তুরতুর করে চলে গেল পাশ কাটিয়ে। একটা সময় মনে হল রাস্তাটা চড়াই উঠে যেন মেঘের মধ্যে মিশেছে। ছাতা খুলে, বন্ধ করে অনেকরকম কায়দা করে ছবি উঠল খচাখচ। চলতে চলতে কাগে বাজার। কয়েকটা দোকান খোলা। আরেকটু নেমে গেলেই কাগের হাট। কাল রবিবার হাটের দিন। আমরাও এঁকেবেঁকে নিজেদের জড়িয়ে ফেললাম সবুজ থেকে ঘন সবুজের আদরপাশে। একটা সময় এক হাত দূরের মানুষটাও অদৃশ্য হয়ে গেল। রোমাঞ্চিত হলাম। আমরা মেঘের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি। পাতার কোলে বৃষ্টি ফোঁটার জমে থাকা। যেন কয়েকটা হিরে সাজানো পাতার গায়ে। কিছু ফুলের অর্ধেক পাপড়ি ঝরে গেছে। তবু তার পরাগের হলুদ রংটা চোখ টেনে ধরছে। পিছনে অসীম কুয়াশা। কী জানি কোন রহস্যে ভুলিয়ে আমাদের টেনে নিয়ে চলেছে। ঘেমে যাচ্ছি। তবু ক্লান্তি নেই। এক পৃথিবী অক্সিজেন বুকে ভরে হেঁটেই চলেছি। কত দূর যে চলে গেলাম খেয়াল রইল না।

KAGEY
মাঝেমাঝে দাঁড়িয়ে পড়া অচেনা ফুলের টানে

আসলে ওটা কাগে থেকে লাভা যাওয়ায় পথ। নাহ! এই পথে চার্চ নয়। তাই ফিরতি পথ ধরে চার্চের চড়াই রাস্তা ধরে আবার এগোলাম। ওরে বাবা! একে তো পাথুরে পথ। তাও এতক্ষণ কিছুটা চড়াইয়ের পর সমতল ছিল। তারপর উৎরাই। এমন করেই চলছিল। কিন্তু এ যে দেখি উঠেই চলেছি তো উঠেই চলেছি। দুজন পাহাড়ি মানুষকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, চার্চ আর কতদূর। ‘ইধার, সামনে’ এমন করে বলল যেন পাঁচ পা গেলেই চার্চের ঘণ্টা বাজাতে পারব। কিন্তু এদের সামনে যে ঠিক কতটা গেলে সেটা বুঝতে বুঝতেই মুখের জিভ বুকের কাছে ঝুলে পড়ল। যাই হোক, পঁচাত্তর কেজি দুবলা-পাতলা শরীরটাকে ঠেলতে ঠেলতে উঠলাম। একটা জায়গায় হরিয়ালি মাটি। দূরের সবুজ পাহাড়ে মিশেছে। প্রায় আধঘণ্টা চড়াই পেরিয়ে একটা সমতল। না রোদ, না মেঘের মাঝে যে রুপোলি আলো বাস করে এখন সেই আলোটাই মুগ্ধতার ফাঁদ পেতেছে সবুজশিখর চরাচরে। দূরের পাহাড়চুড়োয় আরও একদল মেঘ ধেয়ে এসে জানান দিল, এ মায়া প্রপঞ্চময়। খিলখিলে হাসির টানে ঘাড় ঘোরাতেই চোখে পড়ল দুপাশে হাত ছড়িয়ে খ্রিস্টঠাকুর দাঁড়িয়ে আছেন। তার পায়ের কাছ থেকেই ব্যাগ কাঁধে নেমে আসছে কয়েকটি পাহাড়ি ছোট্ট মেয়ে। চার্চের পাশেই স্কুল আছে শুনেছিলাম। ছুটি হয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি?

VIJAY RANI GIRJA
কাগের সেই সেই চার্চ

মনকে প্রবোধ দিলাম, এই তো এসে গেছি। এরপরেও আরও বেশ খানিক সিঁড়ি টপকে মায়াঘেরা নীল রঙের চার্চ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কলকল স্বর। চার্চের ভিতর থেকে হারমোনিয়ামের সুর। ১৮৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিজয়া রানি গির্জা। মারিয়া বাস্টির নামে নামাঙ্কিত। মারিয়া বাস্টি ফ্রান্স থেকে পেডংয়ে এসেছিলেন ১৮৮৩ সালে। গির্জার সামনে সবুজ ঘাসে মোড়া সুন্দর চাতাল। ধারে সার দিয়ে বেঞ্চ পাতা। নিরিবিলি প্রকৃতিকে উপভোগ করতে এখানে দুদণ্ড বসে থাকাই যায়। তবে আমরা ঢুকে গেলাম গির্জার ভিতরে। যেন এক রঙের খেলাঘর। দেয়ালে ম্যুরাল পেন্টিং। নীল রঙের ওপর লাল-নীল-হলুদের কাজ। দুপাশে লম্বা লম্বা বেঞ্চ পাতা। যিশুর সামনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়ালেই মন শান্ত হয়। মানুষ ধর্ম মানে। কিন্তু সব ভুলে যদি মনের কথা শোনে কেউ, তাহলে দেখবে সেখানে সব ধর্মই সমান। কেবল নিরিবিলিতে অন্তরের আরাধ্যকে ডাকার সুযোগ চাই। তবেই বোধ জাগ্রত হবে। আর এই বোধ থেকেই জন্ম নেবে বোধি। আমি, শীর্ষ আর প্রশান্ত বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। তারপর গুটিগুটি পায়ে ফিরে এলাম কাগের মৌচাকে মানে হানিকম্বে। মাঝপথে অসাধারণ পাহাড়ি মোমো আর চায়ের স্বাদ অনবদ্য।

GIRJAR ONDORE
গির্জার অন্দরে

জলখাবারে অর্ডার দেওয়া ছিল কচুরি আর আলুরদম। আলুরদম খাওয়া গেলেও কচুরি ছিঁড়তে হাতের সঙ্গে পা-দুখানা কাজে লাগালেও বোধহয় ভালো হত। এখানে ডিম টোস্ট খাওয়াটাই ভালো। হানিকম্ব হোমস্টে থেকে যে রাস্তাটা বাঁদিকে নেমে গেছে বিকেলে সেই রাস্তা ধরেই হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। মাথায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি। আঁধার নেমে আসছে। সবুজ অরণ্যানী কালোবরণ ধারণ করছে। আমরা কয়েকজন হাঁটছি। আমাদের একপাশে একশোটা মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি আর অন্যপাশে কামারশালায় যেন ধারালো যন্ত্রের সাহায্যে শান দেওয়া চলছে ধাতব কোনও বস্তুতে। এমনই শব্দের ঝংকারে কর্ণকুহর অনবরত ঝঙ্কৃত করে তুলছে। এর মাঝে প্রবুদ্ধ, ‘দেবাশিসদাআআআ, সামনের রাস্তাটা দেখো। বাবা রে! ফিরব কী করে?’ 

-আরে আয় তো। দিব্যি ফিরতে পারবি। 

আবার দু-পা চলতে না চলতেই, ‘এই শীর্ষ, এ তো নেমেই চলেছে। উঠব কী করে? আর যেও না গো। ফিরে চল।’ 

ছিপছিপে পাহাড়দাপানো ছোকরা শীর্ষ। সে কি আর এই রাস্তায় ডরায়? এদিকে আমারও হাঁপরে টান ধরেছে। কিন্তু কিচ্ছুটি বলছি না। যতটা প্রবুদ্ধর ঘাড় দিয়ে যায় আর কী! কিন্তু আরেকটু চলার পর আর থাকতে পারলুমনি। রাস্তার বাঁকে দেঁইড়ে পড়ে হাতদুখানা তুলে দিলুম, ‘আমি আর নেই বাপু। গেলে তোমরা যাও। আমি আর বুদ্ধ ব্যাক টু মৌচাক।’ অগত্যা বাকিরাও পিঠটান দিল। ততক্ষণে পাহাড়ের বুকে জাঁকিয়ে নেমেছে সন্ধের অন্ধকার। আলো নেই। মাঝেমধ্যে দু’একটা গাড়ির হেডলাইট বিদ্যুতের ফলার মতো রাস্তায় আছড়ে পড়ে ছুটে হারিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি ঝিরঝির থেকে ঝমঝমে। পায়ের কাছে বৃষ্টিফোঁটাগুলো পড়ে রানির মুকুটের মতো হয়ে যাচ্ছে। আমরা হাঁটছি। যার মধ্যে প্রেম নেই সেও যদি এমন নির্জন নৈসর্গিক পাহাড়পথে অঝোর শ্রাবণ মাথায় নিয়ে ছাতা খুলে হাঁটে তাহলে তার ভিতরেও প্রেমের জন্ম হবে। যাঁরা শুধুই গন্তব্য খোঁজেন কাগেতে তাঁদের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যাঁরা আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়াতে ভালোবাসেন তাঁদের অবশ্যই কাগে যাওয়া প্রয়োজন। শহরের বৃষ্টিতে পথেঘাটে চলতে গেলেই মনে হয়, দূর বাবা! কখন বাড়ি ফিরব। কিন্তু সেদিন অনেকটা কষ্ট করে চড়াইতে উঠেও, অঝোর বৃষ্টি মাথায় নিয়েও ভেজা পাহাড়ের বুকে পা ফেলে চলতে চলতে একটিবারের জন্যে মনে হয়েছিল, এই নিশ্চিন্ত পথটা যদি হঠাৎ করে হারিয়ে যায় অরণ্যের গহীনে অথবা পাহাড়ের অচেনা কন্দরে! খুব কি ক্ষতি হবে আমাদের?

MEGHKUYASHAR KHELAGHOR KAGEY

 

প্রয়োজনীয় তথ্য: যাতায়াত – ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি। সেখান থেকে গাড়িতে মোটামুটি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা কাগে। 

থাকা – হানিকম্ব হোমস্টে ৯০০২৭৭৪৬৮৫ (সাইমন)। 

 

ছবি – লেখক         

         

Avishek Chattopadhyay

নেশা ও পেশা লেখালিখি। প্রকাশিত উপন্যাস চারটি। বর্তমানে একটি চ্যানেলে সৃজনশীল পদে কর্মরত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অসংখ্য ভ্রমণ ও ছোটো গল্প প্রকাশিত।

Picture of অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

নেশা ও পেশা লেখালিখি। প্রকাশিত উপন্যাস চারটি। বর্তমানে একটি চ্যানেলে সৃজনশীল পদে কর্মরত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অসংখ্য ভ্রমণ ও ছোটো গল্প প্রকাশিত।
Picture of অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

নেশা ও পেশা লেখালিখি। প্রকাশিত উপন্যাস চারটি। বর্তমানে একটি চ্যানেলে সৃজনশীল পদে কর্মরত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অসংখ্য ভ্রমণ ও ছোটো গল্প প্রকাশিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com