দিন কয়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছিলেন অভিনেত্রী তুহিনা দাস। একলা মেয়ে এবং পেশায় অভিনেত্রী হওয়ায় কলকাতা শহরে একটাও থাকার জায়গা পাচ্ছিলেন না তিনি। তাই নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়, যা আর শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি।
এখন কোন অবস্থায় আছেন অভিনেত্রী? আর সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর ছবি ‘ঘরে বাইরে আজ’, যা পরিচালনা করেছেন স্বয়ং অপর্ণা সেন। প্রকাশ পেয়েছে ছবির টিজারও। এই সব নিয়ে বাংলালাইভ ডটকম-এর সঙ্গে কথা বললেন তুহিনা।
প্র: এখন কী পরিস্থিতি? শেষ পর্যন্ত বাড়ি পেলেন?
উ: সবার কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ, কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর ইন্ডাস্ট্রি এবং মিডিয়ার বন্ধুরা যে ভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, তা আমি ভাবতেও পারিনি। আমাকে অনেকেই মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করে গাইড করেছেন। আমার এত শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন জেনে খুবই ভাল লাগছে। বাড়ি খোঁজার সময় সব জায়গাতেই কথা বলে রেখেছিলাম। এমনকি চায়ের দোকানেও বলে রেখেছিলাম। সেই সব সূত্রে গল্ফ গ্রিনে একটা ফ্ল্যাটের হদিশ পাই। এখন আপাতত সেখানেই আছি। বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল আমার পেশা বা আমার একা থাকা নিয়ে তাঁর কোনওরকম সমস্যা নেই।
প্র: তখন ঠিক কী অবস্থা ছিল? যে সময়টায় আপনি বাড়ি পাচ্ছিলেন না…
উ: বাড়ি খোঁজার সময় যাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছিল, তাঁদের সবারই হয় আমার পেশা নয় আমার একা থাকা নিয়ে আপত্তি ছিল। অবশ্য তাঁরা কেউই আমাকে এই সমস্ত কথা সরাসরি বলেননি। ব্রোকারের মাধ্যমে খবর পেতাম। এমনও হয়েছে জানেন, ঘর পছন্দ হয়েছে, সমস্ত কথা বলা হয়ে গেছে, আগাম টাকাও দিয়ে দিয়েছি, কিন্তু চার দিন পর ব্রোকার এসে বলছেন, বাড়িওয়ালার কোনও আত্মীয় সেখানে থাকবেন বলে আমাকে ফ্ল্যাট দেওয়া যাবে না। ভাবুন একবার! আর এর মধ্যে তো আমি যেখানে থাকতাম, সেই বাড়ির মালিককে বলে দিয়েছিলাম যে অগস্টের প্রথম সপ্তাহে বাড়ি ছেড়ে দেব। এই পরিস্থিতি হওয়ায় আমার মাথা পুরো ঘেঁটে যায়।
প্র: গোটা ঘটনাটা দেখে কী মনে হচ্ছে, একা মেয়েদের পক্ষে বাড়ি পাওয়া কি সত্যি বড় সমস্যা?
উ: আমার মনে হয়, এই সমস্যাগুলো অনেকটাই এলাকাভিত্তিক। না হলে আমি কলকাতায় এতগুলো বছর একা থাকতে পারতাম না। আমি জানি না, একা মেয়ে দেখলে মানুষের চিন্তাভাবনায় এত পরিবর্তন কেন হয়। সমস্যাটা যে সঙ্কীর্ণ মানসিকতার তা বুঝতে পারি।
প্র: ‘ঘরে বাইরে আজ নিয়ে কী বলবেন? কেমন অনুভূতি হচ্ছে? কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় রিলিজ সামনে…আশঙ্কা রয়েছে কোনও?
উ: টিজার বেরনোর পর সব দিক থেকেই পজিটিভ প্রতিক্রিয়া পেয়েছি।ফেসবুক, ইউটিউবে বেশিরভাগ মানুষই ভাল লেগেছেন বলে জানিয়েছেন। অনেকে আমার চেহারা ও সিনেমায় আমার লুক নিয়ে কথা বলছেন। রিনাদি (অপর্ণা সেন, পরিচালক) সব সময় চেষ্টা করেন যেন তাঁর সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পর্দায় সুন্দর লাগে। তবে যেটা বললেন, আমার কেরিয়ারে এই সিনেমাটি একটা মাইলফলক, প্রথম বড় রিলিজ, তাও অপর্ণা সেনের পরিচালনায়। বিমলার মতো একটি চরিত্রে (ছবিতে চরিত্রের নাম বৃন্দা) অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি, এটাই বিশাল পাওনা। সত্যি বলতে কিছুটা নার্ভাসনেস তো আছেই। সব মিলিয়ে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলতে পারেন।
প্র: বিমলা ওরফে বৃন্দার চরিত্রে আপনার লুকটা কি অপর্ণা সেনের ডিজাইন করা?
উ: শুরুর দিনের কথাটা বলি তা হলে। রিনাদির সঙ্গে যে দিন প্রথম আলাপ হয়, উনি আমার চুল বেঁধে দিয়েছিলেন। উনি প্রথম মানুষ যিনি আমার চুল বেঁধে দিয়েছিলেন। রীতিমতো চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে চুল বেঁধে দিয়েছিলেন। আসলে দেখতে চাইছিলেন ওঁর কল্পনায় বৃন্দার যে চেহারাটা রয়েছে, তাকে কেমন দেখতে লাগছে। মেক-আপ বা চুলের লোক তো ছিলই, কিন্তু মেক-আপ কেমন হবে, চুলের স্টাইল কেমন হবে, গয়নাগাটি, পোশাকআশাক সমস্ত কিছু নিয়ে রিনাদি ভাবতেন এবং সিদ্ধান্ত নিতেন। ভারী মেক-আপ একদম পছন্দ করেন না বলে সিনেমায় আমাকে খুব হালকা সাজেই দেখতে পাবেন।
প্র: ‘আসছে আবার শবর’-এ বোল্ড চরিত্র করে আপনি নজরে আসেন সকলের। সে ভাবে দেখতে গেলে আপনি নবাগতা, কিন্তু আপনার মধ্যে কোনও জড়তা নেই, বরং বেশ আত্মবিশ্বাসী আপনি।
উ: আমি ছোটবেলা থেকেই আসলে এ রকম। ছোট বয়স থেকেই নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার স্বাধীনতা পেয়েছি। সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আমার বাবা-মাও খুব উদারমনস্ক। অরিন্দম শীল ‘আসছে আবার শবর’-এ যে চরিত্রটা আমায় করতে দিয়েছিলেন, তাতে মনের মধ্যে কোনওরকম জড়তা থাকলে অভিনয়ই করতে পারতাম না।ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, শিল্পী হিসেবে লজ্জা-ঘৃণা-ভয় কোনওটাই মনের মধ্যে থাকা উচিত নয়।
প্র: যিশু সেনগুপ্ত এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: খুব ভাল। পুরো ইউনিটের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাই দারুণ। সেটা রিনাদি, যিশুদা, অনিবার্ণদা, সোহাগদি, সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এঁরা সকলেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ। মনে হত একটা প্রতিষ্ঠানে এসেছি। প্রত্যেকের কাছ থেকেই অনেক কিছু শিখেছি । যিশুদা, অনিবার্ণদার সঙ্গে আগে কাজ করেছি। অনির্বাণদার সঙ্গে ‘ভূমিকন্যা’য় কাজ করেছিলাম। যিশুদার সঙ্গে ‘এক যে ছিল রাজা’-এ একটা ছোট দৃশ্য ছিল। সে বার তেমন ভাবে আলাপ হয়নি। কিন্তু এ বারের আলাপে বুঝলাম উনি দারুণ সহ অভিনেতা। এত বড় স্টার হওয়া সত্ত্বেও উল্টো দিকের মানুষটাকে অনায়াসে স্বচ্ছন্দবোধ করাতে পারেন। দু’জনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাই ভাল।
প্র: ‘ঘরে বাইরে আজ’-এ আপনি নিজের গলায় গেয়েছেন?
উ: হ্যাঁ একটা আউটডোর দৃশ্যে খালি গলায় একটু গেয়েছি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। আশা করি দর্শকের ভাল লাগবে। ছোটবেলা থেকেই গান শিখেছি, তবে সে ভাবে চর্চাটা নেই।
প্র: নতুন কোনও ছবির কাজ পেয়েছেন?
উ: কয়েকটা প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু সেগুলো দেখে শুনে খুব একটা কাজ করার আগ্রহ হয়নি। চরিত্রগুলোয় আমার সেভাবে কিছু করার আছে বলে মনে হয়নি। তাই না করে দিয়েছি। কিছু ঠিক হলে অবশ্যই জানাব।