(Ustad Ali Akbar Khan) ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের জগতে স্বরসম্রাট ছিলেন আলী আকবর খান। বাদ্যযন্ত্র হাতে নিয়ে বাজাতে বসলে মনে হত সারা শরীর দিয়েই সংগীত ধ্বনিত হচ্ছে তাঁর। মনে করতেন, সংগীতের একমাত্র কাজ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা, বিনোদনের স্থান তারও পরে। তাঁর জন্মের কথা বলতে গিয়ে বাবা আলাউদ্দিন বলছেন, ‘আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে আলী আকবর। তিন মেয়ের নাম সরোজিনি, অন্নপূর্ণা, জাহানারা। জাহানারা জীবিত নেই। ছেলেকে গুরুর কৃপায় পেয়েছি।’ দীর্ঘ কুড়ি বছর মাইহারের মতো কঠিন আবহাওয়ায় আঠারো ঘণ্টা ধরে রেওয়াজ করেছিলেন তিনি। আলী আকবরের কাছে সংগীত কী জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, সংগীত আমার কাছে ঈশ্বরের মতো, যাকে দ্বিধাবিমুক্ত চিত্তে পূজা করতে হয় আর তার নৈবেদ্য হল চোখের জল। (Ustad Ali Akbar Khan)
১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুরে জন্মান তিনি। পিতার কাছেই সংগীত শিক্ষার হাতেখড়ি তাঁর। সব ধরণের বাদ্যযন্ত্র ও গায়কির শিক্ষা নেন তিনি। তিন বছর বয়সে সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। বাবার কাছে মূলত সরোদ ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই নিবিষ্ট হন তিনি। ১৯৭২ সালে বাবার মারা যাওয়ার পর তাঁর চর্চিত সাংগীতিক ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন তিনি। তাঁর দরবারী কানাড়া আজও অমরত্বের আরেক নাম। (Ustad Ali Akbar Khan)
১৩ বছর বয়সে এলাহাবাদের এক সংগীত সম্মেলনে সংগীত পরিবেশনা করেন তিনি। তিন বছর পর একই অনুষ্ঠানে ১৯৩৯ সালে পন্ডিত রবিশংকরকে সঙ্গত করেন। পরবর্তীতে রবিশংকর তাঁর কথা বলতে গিয়ে বলেন, বাবা যখন বিলেতে তখন কিশোর আলী আকবর মালিকা পোখরাজ, সাইগল, কে সি দের রেকর্ড বাজিয়ে আর খেলাধুলো করে সময় কাটাচ্ছিলেন। ফিরে এসে তাই দেখে মেরেধরে ছেলেকে সুরের শিক্ষা দিলেন, আর তাই না আমরা একজন কিংবদন্তিকে পেলাম। ভগবানদত্ত সুরেলা ওঁর হাত আর বাজনা। ১৯৪০ সাল থেকে লখনৌয়ের এ আই আরে প্রতি মাসে যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৪৪ এ রবিশংকরের সাথেই মাইহার ত্যাগ করেন।
ভিডিও: “বিসমিল্লার পাগলা সানাই” – জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য
কলকাতায় চল্লিশের দশকের গোড়ায় অল বেঙ্গলে প্রথম বাজান তিনি। ১৯৪৩ সালে বাবার সুপারিশে যোধপুরের মহারাজা হনবন্ত সিং-এর দরবারে সংগীত শিল্পী হিসেবে নিয়োজিত হন। সেখানে ‘উস্তাদ’ উপাধিতে ভূষিতও হন। নিজের কথা বলতে গিয়ে জানান, সেই সময়ে গুণীরা সামনে বসে শুনতেন বাজনা। ভুল করলে কাউকে ছাড়তেন না। আবার ভাল বাজালে আশীর্বাদ করতেন, জড়িয়ে ধরতেন। আলী আকবর বিশ্বাস করতেন, সংগীত আসলে একটা বিশাল সমুদ্র। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময়ে যোধপুরে রাজতন্ত্রের সমাপ্তি আর বিমান দুর্ঘটনায় মহারাজা প্রয়াত হলে বম্বেতে চলে আসেন আলী আকবর।
রবিশংকর, নিখিল ব্যানার্জি ও এল সুব্রমনিয়মের সঙ্গে অসংখ্য যুগলবন্দী রয়েছে তাঁর। হিন্দুস্তানি সংগীত বিদেশে ছড়ানোর কাজে তিনি ‘আলী আকবর কলেজ অফ মিউজিক’ প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলিতেও আরেকটি কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন। (Ustad Ali Akbar Khan)
মালকোষ, চন্দ্রকোষ, কৌশি কানাড়া, নন্দকোষ প্রমুখ রাগের ওপর ভিত্তি করে চন্দ্রনন্দন নামের একটি রাগ তিনি রচনা করেন। ১৯৬৫ সালে এই রাগটি ২২ মিনিটের দৈর্ঘ্যে পুনরায় রেকর্ড করা হয়। ১৯৭১ সালের অগস্ট মাসে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সাহায্যার্থে ম্যাডিসন স্কোয়ারে রবিশংকর, আল্লা রাখাদের সঙ্গেও সংগীত পরিবেশনা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার উদযাপনে ‘জয় বাংলা’ নামক একটি ইপি রেকর্ড রিলিজ হয়। জর্জ হ্যারিসনের প্রযোজনায় এই রেকর্ডে রবিশঙ্করজির পরিচালনায় আলী আকবর খাঁ-র বাজনা শোনা যায়। (Ustad Ali Akbar Khan)
ভিডিও: পণ্ডিত যশরাজ— আধুনিক ভারতের তানসেন
লতা মঙ্গেশকর বিনা পারিশ্রমিকে তাঁর সুরে গান গেয়েছিলেন আন্ধিয়াঁ ছবিতে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে সুরারোপ করেন তিনি। তার মধ্যে অন্যতম ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হামসফর এবং ১৯৬২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অরূপ গুহঠাকুরতা পরিচালিত বেনারসি। সত্যজিত রায়ের দেবী, তপন সিনহার ক্ষুধিত পাষাণ, মার্চেন্ট আইভরির ‘দ্য হাউসহোল্ডার’-এ কাজ করে শ্রেষ্ঠ সংগীতকারের সম্মান পান। ১৯৯৩ সালে বার্নাদো বার্তোলুচির লিটল বুদ্ধা শীর্ষক চলচ্চিত্রের জন্যেও তিনি কিছু সুরারোপ করেন। পেয়েছেন অজস্র দেশ বিদেশের খ্যাতি ও সম্মান। আজ তাঁর জন্মদিনে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম! (Ustad Ali Akbar Khan)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।