Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আনন্দের উৎসব, সুখাদ্যের উৎসব

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

অক্টোবর ২২, ২০২০

Luchi
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

দুর্গাপুজো বাঙালির সেরা উৎসব। আর বাঙালির পালা-পার্বণ মানেই যে নানারকম খাওয়া-দাওয়া এটা এখন আর কারও জানতে বাকি নেই। পুজোর দিনগুলোয় বাঙালির খাওয়াদাওয়ার যে বৈচিত্র্য থাকবে, এ তো খুবই স্বাভাবিক। অফিস-কাছারি বন্ধ না-হলেও দুগ্‌গা ষষ্ঠী থেকেই কিন্তু পুজোর একটা আমেজ শুরু হয়ে যায়।

[the_ad id=”266918″]

বাড়ির মহিলামহল সেদিন সকাল থেকেই নিরামিষ। ছোটোদের কপালে দইয়ের টিপ দিয়ে তাঁরা যে জলখাবার খাবেন, তাতে থাকবে নুন আর আদাকুচি দিয়ে মাখা ফিকে হলুদরঙা মুগডাল ভিজে, চিনি আর নারকেল কুরো দিয়ে মাখা ছোটোদানার সাবু ভিজে, নুন-লেবু দিয়ে মাখা শশা, কাঁঠালি কলা, মিষ্টিদই আর দু’এক রকমের মিষ্টান্ন, যার মধ্যে আবার গুজিয়া মাস্ট। বাড়ির পুরুষদের জন্যে সাধারণ জলখাবার হলেও আমরা পুঁচকেরা চিরকাল মা-জেঠিমাদের এই বিশেষ জলখাবারটিতেই ভাগ বসাতাম আর এখনও সুযোগ পেলেই বসিয়ে থাকি।

Shoshthi
চিঁড়ে, দই, কলা এবং সন্দেশ দিয়ে মাখা ফলার ষষ্ঠীর দিন মায়েদের আহার। ছবি সৌজন্য – cookpad.com

ষষ্ঠীর দিন দুপুরে মায়েরা খেতেন চিঁড়ে, দই, কলা এবং সন্দেশ দিয়ে মাখা ফলার। সন্ধেবেলায় ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে হয় কুলফি, নয় ধোকলা আর তা নইলে কলেজ স্কোয়ারের পাশে বনেদি দোকানের শরবত। রাত্তিরে লুচি, চাকা-চাকা আলুভাজা বা পটলভাজা, লালছোলা আর ডুমোডুমো আলু দিয়ে বানানো মিষ্টি মিষ্টি কুমড়োর ছক্কা কিংবা ধনেপাতাকুচি ছড়ানো গা-মাখা-মাখা আলুদ্দম। আগে শেষপাতের জন্যে একটা চাটনিও হত। হয় টমেটো, নইলে খেজুর-আমসত্ত্ব দিয়ে।

[the_ad id=”266919″]

গুরুজনেরা বলেন, পুজোর ক’দিন নাকি সেঁকা-পোড়া খেতে নেই। সেই জন্যেই তো এ-ক’দিন নুচির এত রমরমা!
দিনে নুচি, রাতে নুচি, সকালে নুচি, সন্ধেয় নুচি। নিরামিষে নুচি, আমিষে নুচি। বিশ্বসংসারে শুধু নুচিই নুচি।
সেই রামকুমারবাবুর একখানি অনবদ্য টপ্পা ছিল না, ‘ওগো লুচি, তোমার মান্য ত্রিভুবনে।’–তার সুরটা এই পাঁচটা দিন যেন মনের মধ্যে মৌমাছির মতো গুনগুন করে ফেরে।

আজকাল পুজো উপলক্ষ্য বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় যে এক্সক্লুসিভ পুজোমেনু, সেটা কিন্তু শুরু হয় সপ্তমী দুপুর থেকে। ষষ্ঠী থেকে নয়। এতে আমিষ ও নিরামিষ দু’রকম ব্যবস্থাই থাকে। সপ্তমীর দিন মা দুগ্‌গাকে ভাতের সঙ্গে মাছ দিতে হয়। মা যে এয়োস্ত্রী। মাছবাজার তাই ভোর থেকেই সরগরম। ধুতি, বারমুডা আর লুঙি-পরা নানা বয়েসের খরিদ্দার এদিন বাজারে মাছেদের পেট টিপে টিপে পেটব্যথা করে দ্যান। খাবিটানা ভেটকি, মাঝারি মাপের রং ছাড়া দেশি পাবদা কিংবা ইঞ্চি পাঁচেকের টাটকা বাগদা চিংড়ি– যখন যেমন পাওয়া যায়। তবে অম্বল বানানোর জন্যে মৌরলামাছটা অবশ্যই আসত। ভেটকি কিন্তু মোটেই ফিলে নয়, চাকা-চাকা পিস করা। এর সঙ্গে দেশি ফুলকপি ডুমো ডুমো করে কেটে একটি ঝোল-ঝোল পদ রান্না করা হয়ে থাকে, যা ফুরফুরে বাঁশকাঠি চালের ভাতে মেখে খাওয়ার জন্যে একেবারে আদর্শ।

Saptami
পাবদাকে খাতির করতে হয় কালোজিরে আর কাঁচালঙ্কা চেরা দিয়ে। ছবি সৌজন্য – dusbus.com

পাবদাকে খাতির করা হত কালোজিরে আর কাঁচালঙ্কা চেরা দিয়ে। ভাজবার সময় যেটুকু নামমাত্র হলুদ– ব্যস্‌, সেইটুকুই। পুরাকালে রাজা-রাজড়াদের অভিষেকের সময় তাঁদের মাথায় যে কায়দায় পুষ্পবৃষ্টি করা হত, রান্না শেষের মুখে পাবদাদের ওপরেও ঠিক সেই কায়দাতেই, টাটকা দেশি ধনেপাতা কুচিয়ে, ছড়িয়ে দেওয়া হত। আর রাইসরষের সঙ্গে সামান্য পোস্তবাটা মিশিয়ে বানানো হত থকথকে সরষে-চিংড়ি। আর তেঁতুলের ক্বাথ আর আখের গুড় দিয়ে বানানো মৌরলামাছের অম্বলে কিছুটা তরলতা রাখা হয়, যাতে শেষপাতে তা চুমুক দিয়ে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায়।

Hilsa
সপ্তমীতে বাঙালদের চাই ইলিশে আপ্যায়ন। ছবি সৌজন্য – bdsongsar.com

যাঁরা পুববাংলার মানুষ, তাঁরা এই দিনটিতে ইলিশমাছের ভাপা, ভাজা, টক এমন নানা রকম পদ রেঁধে দেবীকে উৎসর্গ করেন। আর যাঁরা একটু অফবিট রান্না পছন্দ করেন তাঁরা অসময়ের কাঁচা আম খুঁজে এনে তরিবত করে বানিয়ে ফেলেন বরিশালি আম-ঝোল। কারণ এর দু’দিন পরেই তো বিজয়া দশমী। ঘটিদের সেদিন নিরামিষ হলেও, বাঙালরা সেদিন বাজার থেকে জোড়া ইলিশ কিনে এনে, রান্না করে খেয়ে ইলিশ খাওয়া বন্ধ করে দেন। তাঁরা মনে করেন, এইদিন মা দুগ্‌গা যেমন তাঁর সন্তানদের নিয়ে হিমালয়ে ফিরে যান, ইলিশেরাও তেমনি তাদের খোকাখুকিদের নিয়ে নীল সমুদ্রের দিকে যাত্রা শুরু করে। একজনের আবাস হল আকাশ আর অন্যজনের মহাসাগর। কিন্তু দু’টোরই রং নীল। দু’টোর দিকে তাকালেই আমাদের চোখের শান্তি হয়। দু’টোর বুকেই ঢেউ ওঠে। হতে পারে একটির বেলায় তা জলের আর অন্যটির বেলায় মেঘের। কিন্তু ওঠে। আর সমুদ্র ও মহাকাশ তো একটা জায়গায় গিয়ে মিশেও যায়! কবিরা তো সেই জায়গাটিকেই দিগন্তরেখা বলেন। তাঁরা আবার ইলিশ খেতে শুরু করেন সরস্বতীপুজোর দিনে।

Fish Roll
সপ্তমীর সন্ধে মানেই মণ্ডপের সামনে ফিশ ফ্রাই, ফিশ রোল, প্রন পকোড়ার পালা। ছবি সৌজন্য – cookpad.com

আগে সপ্তমীর সন্ধেবেলায় যদি বাইরে কোথাও খেতে যাওয়ার কথা হত, তবে আমার প্রথম পছন্দ ছিল বালিগঞ্জ কালচারালের মণ্ডপের গা-ঘেঁষে একটি ছোট্ট গ্যারাজে চপ-কাটলেটের দোকান, যা ষষ্ঠীর দিন বিকেলবেলা ধূমকেতুর মতো জেগে উঠত, আবার নবমীর দিন শেষরাতে কোথায় যেন হারিয়ে যেত। দোকানটির পজিশন এমনই ছিল যে, মণ্ডপের মা দুগ্‌গার চোখদু’টি সবসময় যেন দোকানটির দিকেই মেলা থাকত। আহা, সে দোকানের আস্‌লি ভেটকির ফিশফ্রাই, ফিশরোল, ফিশ পকোড়া, প্রন পকোড়া এবং তার সঙ্গে চিকেনের হরেকরকম ডিপ-ফ্রায়েড আইটেম খেতে খেতে একটু আনমনা হয়ে মায়ের অপরূপ মুখটি দেখা, অসুরের বাইসেপস দেখা, গণেশের ইঁদুরের ল্যাজটা দেখা কিংবা ওপরের ঝাড়বাতিটা আগের বারের চেয়ে বেশি ঝিকমিকে কিনা তা-নিয়ে আলোচনা করার মেজাজই আলাদা ছিল। তবে এই দোকানটিকে গত দু’বছর ধরে আর খুঁজে পাচ্ছি না। বসছেন না তাঁরা। কী যে হল কে জানে! তবে এখানে না-গেলে ট্র্যাঙ্গুলার পার্কের উল্টোদিকে ‘রবীন্দ্র’তে গিয়ে চিকেন বা মাটন কাটলেট সেবা করতাম অবশ্যই।

[the_ad id=”270084″]

সপ্তমীর পরের দিন হল মহাষ্টমী। স্নান সেরে, ধুতি-পাঞ্জাবি পরে পাড়ার পুজো মণ্ডপে ভক্তিভরে অঞ্জলি দেওয়া এবং তারপর যে ছেলেটি প্রসাদ বিলি করছে তাকে সামান্য চাপা গলায় বলা, ‘ওরে বাপু, তুই তো আমাদের শুধু শশা আর নাসপাতি দিয়ে যাচ্ছিস, একটু সন্দেশ-টন্দেশগুলোর ওপরেও হাত রাখ! নইলে মা যে কূপিত হবেন!’এদিন সকালে দেবীর জন্য দেওয়া ‘বাল্যভোগ’বা ব্রেকফাস্ট হল ফুলকো ফুলকো লুচি, যার পেটটা টুক করে আঙুল দিয়ে একটু ফুটো করে দিলে, সেখান থেকে নিভে-আসা ধুনুচির মতো একটুখানি ধোঁয়া বেরিয়ে আসবে। তৎসহ আলু এবং ছোট্ট ছোট্ট দিশি ফুলকপির আদা-জিরেবাটা দেওয়া শুকনো রসা। সঙ্গে কোনো নির্ভরযোগ্য দোকানের দু’খানি টাটকা নরমপাকের ফুটফুটে সন্দেশ তো থাকতেই হবে। নইলে লুচির পরে ডায়রেক্ট জল খেলে অম্বল হবে না!

Ashtami Bhog
অষ্টমীর ভোগ মানেই খিচুড়ি, মাখা মাখা বাঁধাকপি, ভাজা আর টমেটো খেজুরের চাটনি। ছবি সৌজন্য – cookpad.com

আগে অষ্টমীর দিন গেরস্ত বাড়ির আতপ চাল এবং সোনামুগডাল সকাল সকাল মায়ের মণ্ডপে পৌঁছে যেত। আবার অঞ্জলির শেষে তা বাড়ি বাড়ি প্রসাদ হয়ে ফিরেও আসত। কোনও কোনও বাড়িতে গুরুজনেরা বাড়ির মধ্যেই মায়ের উদ্দেশে নিবেদন করে প্রসাদি করে দিতেন। তাই দিয়েই তৈরি হত মায়ের ‘রাজভোগ’বা লাঞ্চের খিচুড়ি কিংবা পোলাও। সঙ্গে থাকত গরম গরম লম্বাটে বেগুনভাজা, যা প্রথম তিনটি আঙুল দিয়ে থেঁতলে দেওয়ার সময় তপ্ত মোমের মধ্যে আঙুল রাখার একটা অনুভূতি হত। আর থাকত ছোটো সাইজের দিশি বাঁধাকপির ঝালঝাল গা-মাখা-মাখা তরকারি, ঘি-গরম মশলা দেওয়া একটি অপূর্ব ছানার ডালনা, পাঁপড়ভাজা, খেজুর-আমসত্ত্বের চাটনি ও মিষ্টি।

[the_ad id=”270085″]

মোটামুটি আটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বিভিন্ন পাড়ার পুজোয় অষ্টমীর দিন পাত-পেড়ে ভোগ খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভোগের প্যাকেট চালু হয়েছিল এরও কিছু পরে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর ভোগের প্যাকেজের টিকিট আগাম বিক্রিও করা হত। তিনটি টিকিট কাটলে তিনদিন রান্নাঘর থেকে একবেলা করে ছুটি। আর রাতের জন্যে তো রেস্তোরাঁগুলো তাদের ভালোবাসার হাত বাড়িয়েই রেখেছে। সেখানেও আবার অষ্টমীর জন্যে স্পেশাল ‘ভোগ মেনু’।

[the_ad id=”270086″]

পাড়ার পুজো বা কমপ্লেক্সের পুজোর ভোগ এখন চেনা ক্যাটারিংয়ের হাতে। এতে হ্যাপা হয়তো কমেছে, কিন্তু মেনুর মধ্যে ঘরোয়া ছানার ডালনার বদলে কালচে চিলি পনির, এঁচোড়ের মায়াময় কোপ্তার বদলে রেডিমেড ধোঁকার ডালনা, খিচুড়ি বা দিশি পোলাওয়ের ঝিরিঝিরি উপস্থিতির বদলে পেটের মধ্যে মানববোমার কায়দায় ডালবাটার মোটা পুর গোঁজা চ্যাগড়া রাধাবল্লভীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বেলা পৌনে তিনটেয় থকথকে ছোলারডাল দিয়ে এমন খান চারেক সেবা করে উঠলে পেটটা এমন জয়ঢাকের মতো ব্যোম হয়ে থাকবে যে রাতে কিছু মুখে তোলার কথা মনেই পড়বে না।

অষ্টমীর পরের দিন সকালবেলা শুভ নবমী। শুভ, কেন না এইদিন ভোর থেকেই মনটা কেমন যেন পাঁঠা-পাঁঠা গোছের একটা ভাবের মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকে। কালীঘাটে গিয়ে বলির পাঁঠা কিনে আনা এবং তা শুদ্ধ চিত্তে নিরামিষ স্টাইলে বাড়িতে রান্না হওয়া। মানে পেঁয়াজ-রসুন না-দিয়ে শুধু আদা-জিরে-ধনে-ছোটো এলাচ-দারচিনি দিয়ে কষিয়ে টলটলে ঝোল বানানো, তারপর তাকে একথালা ঝরঝরে ভাতের মধ্যে পাতিলেবুর দু’ফোঁটা স্নিগ্ধ রসের সুবাসের সঙ্গে মেখে ধীরে ধীরে গালে তোলা ও চিবনো। এরপর কিঞ্চিত বিশ্রামের জন্যে খাটে ওঠার আগে পাখার স্পিডটা একটু বাড়িয়ে নেওয়া এবং শেষকালে, আমি এমন এক উপত্যকার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি যেখানে শুধু পালপাল কচি পাঁঠাই চরে বেড়াচ্ছে এবং ম্যা-ম্যা করছে আর মা দুগ্‌গা হাসি হাসি মুখে দূর অন্তরীক্ষ থেকে বলছেন, ‘এগুলো সব তো তোরই রে পাগলা, যেটা খুশি বেছে নে!’এমন একটি অমলিন স্বপ্নের মধ্যে ডুবে যাওয়া… এসব তো শুধু এইদিন দুপুরে ঘুমের মধ্যেই ঘটে।

[the_ad id=”270088″]

আর কচিপাঁঠা সহজে হজম হয়ে যায় বলে মাটন বিরিয়ানি, মাটন রেজালা, চিকেন টিক্কা বা রেশমি কাবাব, এমনতর মন ভালো করা পদগুলিকে সন্ধের দিকে মল্লিকবাজার বা পার্ক সার্কাসের দিকে গিয়ে ঠাকুর দেখার ফাঁকে আপন করে নিতে কোনও বাধাই থাকে না। আর তা না হয়ে যদি সেই যদি বাড়ি ফিরেই খেতে হয়, তবে সকালের ওই মজে থাকা মাংসটির ফ্রিজে তুলে রাখা অংশটা বের করে, ওপরে একটু দারচিনির জল ছড়িয়ে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে, থকথকে অবস্থায় খানকতক ফুটফুটে লুচি দিয়ে একটু কষ্ট করে খেয়ে নেওয়া। মন চাইলে দু’মুঠো ঝিরিঝিরি আলুভাজাও ওই লুচি দিয়ে প্রথম পাতে খাওয়া যেতে পারে।

Bijoya Dashami
ঠাকুর জলে পড়লেই হাতে হাতে নারকোল নাড়ু, কালোজিরে আর জোয়ান ছড়ানো কুচো নিমকি আর ভাজামশলা দেওয়া নিরামিষ ঘুঘনি। 

নবমীর পরের দিন হল বিজয়া দশমী। কিন্তু মা জলে না-পড়লে তো বিজয়া শুরু হবে না। আর সাদা খাতায় লাল কালি দিয়ে ‘শ্রী শ্রী দুর্গা সহায়’লেখা বা কোলাকুলি করাও যাবে না। কিন্তু বিজয়ার সন্ধেবেলার খাওয়াদাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যেত সেদিন সকাল থেকেই। ভবানীপুরের বলরাম বসু ঘাট রোডের পুরনো দোকান ‘গোপীনাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’থেকে ব্রাউন পেপারের ঠোঙা ভর্তি করে নিয়ে আসা হত শুকনো বোঁদে। দুপুরের রান্না হয়ে গেলে, যৌথ পরিবারের মাটির তৈরি বিশাল ডবল উনুনের ঢিমে আঁচে পাক দিয়ে নেওয়া হত আগে থেকে মিহি করে কুরিয়ে রাখা নারকেল, সঙ্গে গুড় কিংবা চিনি আর খোয়াক্ষীর। তৈরি হত একটি স্বর্গীয় নাড়ু, যা চাখবার জন্যে ডাক পড়ত বাড়ির ছোটদের। গাওয়া ঘিয়ে ভেজে ফেলা হত কালোজিরে আর জোয়ান ছড়ানো কুচো নিমকি। বিরাট একটি ডেকচি করে তৈরি করা হত ঘন আর চাপচাপ নিরামিষ ঘুগনি, যার ওপর লাল লঙ্কাকুচি, গাঢ় খয়েরি রঙা জিরেভাজা গুঁড়ো আর তেঁতুলের কালচেটে জল ছড়িয়ে দেওয়া হত।

রাতে, এই ঘুগনিটিকে ছোটো ছোটো লুচির মধ্যে খামচে তুলে মুখে দিলেই, তার মধ্যে মিশে থাকা নরম নারকেলের কুচি টুকটাক মুখে পড়ত। এটা খেতে খেতে, আমাদের ভবানীপুরের স্কুল রোডের বাড়ির দোতলার ঘরে বসে, দক্ষিণ কলকাতার সমস্ত নামকরা পুজোর ভাসান দেখার কোনও তুলনাই ছিল না। দেখতে দেখতে লুচি, ঘুগনি, বোঁদে, কোলাকুলি, প্রণাম, মাইকের ভুলভাল অ্যানাউন্সমেন্ট, লরিতে-চড়া প্রতিমার সন্দেশ মাখানো ঠোঁট– সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত ।

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জন্ম কলকাতায়, পড়াশুনো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, লেখালেখির শুরু নয়ের দশকে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক পত্রপত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনে ছোটগল্প, কবিতা এবং নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। কবিতার বইয়ের সংখ্যা দশ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন তিরিশেরও বেশি বইয়ের। পেশায় চাকরিজীবী।

Picture of রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জন্ম কলকাতায়, পড়াশুনো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, লেখালেখির শুরু নয়ের দশকে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক পত্রপত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনে ছোটগল্প, কবিতা এবং নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। কবিতার বইয়ের সংখ্যা দশ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন তিরিশেরও বেশি বইয়ের। পেশায় চাকরিজীবী।
Picture of রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জন্ম কলকাতায়, পড়াশুনো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, লেখালেখির শুরু নয়ের দশকে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক পত্রপত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনে ছোটগল্প, কবিতা এবং নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। কবিতার বইয়ের সংখ্যা দশ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন তিরিশেরও বেশি বইয়ের। পেশায় চাকরিজীবী।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস