banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ছায়াপথ পেরিয়ে (ছোটগল্প)

রাজেশ ধর

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

আমায় হৈমন্তী বলল, ‘এবার তো ভুলে যেতে হবে! দু’জন আর দু’জনকে মনে রাখব না, কেমন!’ 

আমরা সেদিন চেতলা পার্কের বেঞ্চে। বিকেল হয়েছে, অথচ নেই কমলা-হলদে রোদের গুঁড়ো ওর কোঁকড়া চুলের গোছার ওপরে। তবুও ওর চোখদু’টো, ছোট্ট কপাল আর তিরতির করে কাঁপা অল্প মোটা মোটা ঠোঁট বেশ দেখতে পাচ্ছিলাম। এটা ভরা জুলাই, আকাশলেপা মেঘ। কালো নয়, ফ্যাকাশে ছাই রঙের। আমি ভাবছিলাম এই রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে ওর একটা প্যাস্টেল করলে কেমন লাগবে! কিন্তু ও বড় অধৈর্য! ওর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে!

আসলে সিদ্ধান্তটা আমাদের দু’জনের। আমরা দু’জনেই তো ঠিক করেছিলাম। ভালবেসেছি, তাই ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখব দু’জনে মিলে। সবাই যা করে, সেই বিয়ে বাচ্চা সংসার বাচ্চাকে ডাক্তার বানানো… না, এসব আমরা করব না। তাহলে সেই শেষ পর্যন্ত দু’টো কথাই থাকবে— অ্যাডজাস্টমেন্ট আর কম্প্রোমাইস… ভালোবাসা থাকবে না। খোলা ছাদে পাশাপাশি শুয়ে দু’জনে একসঙ্গে সন্ধেতারা ফুটে উঠতে দেখব না তখন। অনেক পুরনো রেডিওটা চালিয়ে ‘মনের মতো গান’ শুনতে ইচ্ছা করবে না দু’জনের। তাহলে… তাহলে? 

ওর চোখদু’টো, ছোট্ট কপাল আর তিরতির করে কাঁপা অল্প মোটা মোটা ঠোঁট বেশ দেখতে পাচ্ছিলাম। এটা ভরা জুলাই, আকাশলেপা মেঘ। কালো নয়, ফ্যাকাশে ছাই রঙের। আমি ভাবছিলাম এই রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে ওর একটা প্যাস্টেল করলে কেমন লাগবে!

কুচো, ঝুরো, কখনও চটরপটর বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি আমরা। ওর নরম বাঁ হাতের পাতার ওপর একটু একটু করে জমে উঠছে বর্ষাজলের আড়াল। আমার ডান হাত দিয়ে ধরে আছি ওর বাম করতল, তবুও  ওর শরীরের ওম অনুভব করতে পারছি না। এই জোলো হাওয়ায় ওর লিপস্টিক-গলে যাওয়া ঠোঁটদু’টো খুব শুষে নিতে ইচ্ছে করছে আমার। কিন্তু উপায় নেই! তবে কি হৈমন্তী শ্রাবণের জলে ভেসে হারিয়ে যাবে আমার জীবন থেকে! আর খুঁজে পাব না? চোখ নামিয়ে আনলাম ওর দু’চোখের ঘন বাদামি তারা দু’টোর ভেতর থেকে। সামনের বড় গাছগুলোর কোনওটাতেই কোনও পাখি নেই। তবুও কেন জানি না সেই কাকটাকে দেখতে ইচ্ছা করছিল। ফুটবল খেলার শেষে… সেই ছোট্টবেলায় একদিন! বর্ষাশেষের বিকেলে আকাশে ওঠা রামধনু খুঁজতে গিয়ে আটকে গেল চোখ। রামধনু একসময় মিলিয়ে গেল। তবুও নিষ্পত্র গাছের ডালে বসে চুপ করে যেন আমারই দিকে তাকিয়েছিল কাকটা। 

নাহ… ইচ্ছে হয় বলেই তো মেটে না! আমি তাকাই ওর দিকে। আকাশের দিকে ওর চোখ। এখন  সেই আকাশে মেঘের পরত জমছে। যেন আকাশকেই ও বলল
দেখো, ভালোবাসতে ভালোবাসতে আমরা তো কিছুই বাকি রাখিনি, তাই না!
— কী বলছ, কত কিছুই তো হল না… তোমার ধোঁয়া-হলুদ প্যাস্টেল আঁকা হল না। সেই যে বলেছিলে মিলেনিয়াম পার্কে ‘ক্যালক্যাটা আই’ হলে তিরিশ তলা নাগরদোলার মাথায় দুলতে দুলতে কুয়াশা ঢাকা কলকাতার গন্ধ নেব আমরা একসঙ্গে, তা হল কই!
বলতে পারলাম না । কিছুই বলতে পারলাম না! তার বদলে ও আমার দিকে ফিরল।
— তাহলে উঠি, আমরা আর একসঙ্গে নেই কেমন, মনে আছে তো!
— সত্যিই আমরা আর দেখা করব না… দেখা হবে না?
— নিশ্চয়ই হবে। যখন আমরা দু’জনেই চাইব তখন ঠিক কোথাও দেখা হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ! আমরা দু’জন কে কী ভাবে আছি জানার জন্য কেউ কিন্তু গোয়েন্দাগিরি করব না কেমন, তাই তো!
কথা শেষ করে ফেলল ও। আকাশটা ধরে এসেছিল। আবার শুরু হল শ্রাবণের ধারাপাত। আমি গুণে শেষ করতে পারছিলাম না।

আবার দেখা হল। পশ্চিমে গমগমে অথচ মুখভার করা গঙ্গা আর পোর্টের ছোট বড় গোডাউন। পেরিয়ে রিমাউন্ট রোড স্টেশন। বকেয়া পেমেন্টের জন্য একটা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিতে এসেছিলাম। কিন্তু হল না! পাকা, বাঁধানো, লম্বা একটা বসার জায়গায় বসে আছি। এখানে কেউ থাকে না… কোনও চা-ওলা কিম্বা ভিখারি। কোনও টিকিটঘরও নেই। কতক্ষণ বসে আছি জানি না। এখন আর কেউ হাতঘড়ি পরে না মনে হয়! আমার একটা ছিল। দুধওলার বাকি মেটাতে শেয়ালদায় একশোটাকায় বেচে দিয়েছিলাম!   

বড়োবাজারের দিকে দু’টো ট্রেন চলে গেছে। তার মানে প্রায় দু’ঘণ্টা বসে আছি। পাখা নেই মাথার ওপরে। তবু কষ্ট হচ্ছে না! গোডাউনগুলোর জয়েস, শেড, ট্রাক-ড্রাইভারদের মা-তোলা গালাগাল টপকে মাঝ-ফাল্গুনের হাওয়া মাঝেমাঝেই ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার কপাল, দুই কানের লতি। রাত কত হল! লাস্ট-ট্রেন কি এখনও আছে?… পেছনে মাঝেরহাটের দিকে তাকাই। নাহ্‌… কোনও ট্রেন নেই! ওদিকে যাব না, তাও অভ্যাসে ভুলে বড়বাজারের দিকে তাকাই। সেদিকেও আবছা অন্ধকারে ট্রেন লাইনের রেখা আর একটা নিঃসঙ্গ লাল সিগন্যাল। কী হবে তাহলে! ক্যান্টনমেন্টের মাঠ পেরিয়ে সরু সিঁড়ি বেয়ে তারপর তুমি উঠে এলে প্ল্যাটফর্মে। আর কী আশ্চর্য, আমায় চিনতেও পারলে! সেই ভোরের কাকলি তোমার গলায়। তুমি কি সবসময় গান গাও?…
এই সম্রাট, কী ভাবছ? আমি, আমি তোমার হৈমন্তী…’

আমরা কোত্থাও গেলাম না। রাতের দ্বিতীয় প্রহর হয়তো এগিয়ে আসছিল। স্টেশনের আলোগুলো জ্বলছিল। আমরা পাশাপাশি বসেছিলাম সেই সিমেন্টের বেঞ্চিটাতে। আমাদের পায়ের কাছে একটা মাদী কুকুর ছানাপোনা নিয়ে ঘুরঘুর করছিল। কিন্তু না… একটা বিস্কুটও আমরা  খাইনি। তাই কিছুই জোটেনি ওদের। 

রাত কত হল! লাস্ট-ট্রেন কি এখনও আছে?… পেছনে মাঝেরহাটের দিকে তাকাই। নাহ্‌… কোনও ট্রেন নেই! ওদিকে যাব না, তাও অভ্যাসে ভুলে বড়বাজারের দিকে তাকাই। সেদিকেও আবছা অন্ধকারে ট্রেন লাইনের রেখা আর একটা নিঃসঙ্গ লাল সিগন্যাল। কী হবে তাহলে!

আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কতদিন পর হৈমন্তী গেয়েছিল, ‘একা মোর গানের তরী…।’ কয়েক লহমায় গঙ্গার ছলাৎ ছলাৎ জল উঠে এল রেললাইনের গায়ে। কী আরাম হাওয়ায়… জলে… সুরে। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কুকুরটাও কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল আমার পায়ের কাছে! হৈমন্তীর গানের তরীর পাল ছুঁয়ে যাচ্ছিল আমায়। তুমি পাশে এলে কী শান্তি, হৈমন্তী! কেন আসো না আমার কাছে, কেন থাক না… কেন, কেন! আমি কত বছর ঘুমোইনি তুমি জান? অন্ধকার আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়। আমি আলো জ্বালিয়ে চোখ খুলে শুয়ে থাকি রাতভর।  তুমি চলে গেলে কেন… কেন?

— সম্রাট তুমি কিন্তু সত্যি সত্যি এবার ঘুমিয়ে পড়বে। বসে বসে ঢুলছো… ওঠো, বাড়ি যাবে না!
বাড়ি… বাড়ি, যেতে হবে কেন? তুমি যেখানে আছো সেটাই তো বাড়ি আমার… হৈমন্তী!
— কী হাঁ করে তাকিয়ে আছো? চল ওঠো, অনেকটা হেঁটে যেতে হবে… অনেকটা! বাসরাস্তা অনেক দূর।
— তাহলে তুমিও চল না… সেই অনেক বছর আগে যেমন যেতে, চল না!
ওঠো সম্রাট, আমাকেও তো যেতে হবে! এই তো দেখা হয়ে গেল। আবার দেখা হয়ে যাবে কোনও একদিন।
— না তুমি আর আসবে না আমি জানি, অনেক ডেকেছি তোমায় তুমি আসনি।
— সম্রাট, ওঠো, ওঠো…  

আমায় হাত ধরে টেনে তুলল ও। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম।
হৈমন্তী তুমি আজ না এলে, না এলে…
— কী করতে তুমি সম্রাট?
— আমি এই লাইনে ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়তাম!
— কিন্তু ট্রেন যে আজ আর আসবে না সম্রাট!
— তার মানে আমি মিথ্যে বলছি?
— না সম্রাট, আমি কি তাই বললাম? আমি তো বারণ করে দিলাম ট্রেনকে। বললাম, সম্রাট আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে ট্রেন, তোমার জন্য নয়।’
— তুমি ঠাট্টা করছ?
— আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করব কেন? 

কেন আসো না আমার কাছে, কেন থাক না… কেন, কেন! আমি কত বছর ঘুমোইনি তুমি জান? অন্ধকার আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়। আমি আলো জ্বালিয়ে চোখ খুলে শুয়ে থাকি রাতভর।  তুমি চলে গেলে কেন… কেন?

ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে আমার দিকে তাকাল। সেই ঘন বাদামি দুই তারা। আমি অসহায় হয়ে ডুবে যাব, তখনই মাথার ওপরের চড়া সাদাটে আলোয় ভালো করে দেখলাম। ওর কপালে কেমন একটা চকচকে টিপ। এখন মিলিয়ে গেছে, কিন্তু যখন বেরিয়েছিল তখন নিশ্চই চড়া মেকাপ করেছিল। যখন আমরা এক সঙ্গে থাকতাম তখন তো ও এমন সাজত না! তবে? আমি নামলাম না সেই বাদামি সমুদ্রে। পেছনে ঘুরে গেল ও। তারপর হাঁটতে শুরু করল।
তুমি কিছু ভাবছ সম্রাট? আমার আর সময় নেই। আমি যাই…
দাঁড়াও হৈমন্তী, দাঁড়াও… 

পেছনে পেছনে আমি ছুটতে লাগলাম। ওর পায়ে এত জোর এল কোত্থেকে! ক্যাম্পের মাঠ, কোয়ার্টার ছাড়িয়ে বড় রাস্তায় চলে এলাম। একটা অটো যেন ওর জন্যই দাঁড়িয়েছিল। ও উঠে পড়ল। 

— হৈমন্তী যেও না। আমার অনেক দোষ, তবু যেও না…
মন খারাপে রাস্তার দুধারের গাছেরা মুখভার করেছিল। ছায়া-অন্ধকার আর হলদে আলোর বিবর্ণ জামা গায়ে চড়িয়ে একমাত্র রাস্তাটাই দেখছিল আমার সঙ্গে। নির্বিকার কিছু গাড়ি, লরি যাচ্ছে, আসছে। অটোটা হারিয়ে যাচ্ছে দূরে।
— হৈমন্তী…যেও না…
আমি ভুলিনি সম্রাট। দেখা হবে আমাদের। ঠিক হবে… 

আমি ডজ করতে শুরু করলাম। ডাইনে, বাঁয়ে, সামনে, পিছনে… ট্রাক, বোলেরো, ইন্ডিকাদের কাটিয়ে একটা একটা করে শব্দগুলো রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিলাম। 

আসেনি হৈমন্তী। আর দেখা হয়নি। বহু বহুদিন। আমি বড়লোক হয়েছি। কমিশনের একটা পুঁচকে এজেন্ট থেকে এখন আমার কত বড় ব্যবসা। কত টাকা! তুমি কী গো হৈমন্তী! এতটা রাস্তা হাঁটতে কত ভাঙচুর হল আমার! হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে কতবার ডাকলাম তোমায়, তুমি একবারও এলে না! ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যাবে বলে একসঙ্গে থাকব না ঠিক করেছিলাম। তেমনই এটাও তো ঠিক করেছিলাম, যখনই প্রাণ দিয়ে চাইব তখনই দু’জন দু’জনের কাছে চলে আসব। …সব ভুলে গেলে তুমি! চামড়া ঝুলে গেছে আমার। কুজো হয়ে হাঁটি। দিনদিন চোখের আলো কমে আসছে। বুঝে গেছি; তুমি আর আসবে না। বুঝে গেছি সত্যি বুঝে গেছি…।

এসেছিলাম একটা পার্টিতে। কলকাতার সব থেকে উঁচু বহুতলের রুফটপ পার্টি। কাউকে বুঝতে না দিয়ে নিচে নেমে এলাম। তারপর আবার লিফটে উঠলাম। চলে এসেছি অন্য একটা টাওয়ারের ছাদে। ‘সিকিউরিটি’কে ম্যানিব্যাগ থেকে বেশ কটা গোলাপি নোট দিলাম। প্রকৃতির আসল ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া দরকার আমার। স্যুট আর বয়স দেখে নাকি টাকা, জানি না… শেষ পর্যন্ত আমায় বিশ্বাস করে ফেলল ছেলেটা।

খোলা আকাশের নিচে এসে কতদিন পর দাঁড়ালাম? মনে পড়ে না। চারিদিকে শুধু বাক্সবাড়ির মাথা। তাদের কোনওটার মাথায় লাল-নীল আলো। কোথাও স্থির, কোথাও মিটমিট করছে, আবার কোথাও জ্বলে-নিভে কিছু লেখা ফুটে উঠছে, মুছে যাচ্ছে। খুলে ফেললাম সামার ব্লেজার, টাই, ওয়েস্ট কোট। ঝরঝরে হাওয়ায় আমার একমাত্র জামাটা ফুলে তাঁবু হয়ে উঠছে। আচ্ছা… একটু দেরি করলে হয় না? এতদিন যে শহরে থাকলাম, যে শহরের মাটি ছুঁলে বিশ্বাস হয়, এই মানুষটা নাকি অমানুষটা আমি… হ্যাঁ আমি। সেই শহরটাকে দেখি… আরও একবার ভালো করে দেখি। একটা রেলিংয়ের ওপর বসে পড়লাম। 

তারপর… তারপর নজরে পড়ল; হাত দশেক দূরে কে একজন দাড়িয়ে! কে… হৈমন্তী না! হ্যাঁ পেছন থেকে তার মতোই দেখতে… হৈমন্তী, হৈমন্তী। আমি ডাকছিলাম হৈমন্তীকে। যেন শেষ খেয়া বেয়ে চলে যাচ্ছে ও। বৈতরণীর পারে দাঁড়িয়ে আকুল ডেকে চলেছি আমি। ও শুনতেই পাচ্ছে না। সাড়াও দিল না। হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম; তাও আমি দৌড়েই গেলাম… সময় একটুও নষ্ট করা যাবে না। দু’টো কাঁধ ধরে ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে এলাম আমার চোখের সামনে।

এসেছিলাম একটা পার্টিতে। কলকাতার সব থেকে উঁচু বহুতলের রুফটপ পার্টি। কাউকে বুঝতে না দিয়ে নিচে নেমে এলাম। তারপর আবার লিফটে উঠলাম। চলে এসেছি অন্য একটা টাওয়ারের ছাদে। ‘সিকিউরিটি’কে ম্যানিব্যাগ থেকে বেশ কটা গোলাপি নোট দিলাম। প্রকৃতির আসল ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া দরকার আমার।

ছাদে মানুষের তৈরি কোনও আলো নেই। চাঁদবিহীন ধোঁয়াটে রাতের আকাশ। ম্রিয়মান লাখ-কোটি তারার ম্লান আলো। তাতেই স্পষ্ট দেখলাম। ওর গাল… ওর কপালেও ভাঁজ। কোঁকড়া চুলের গোছা আগের থেকে অনেক পাতলা। আর সেই ঘন বাদামি চোখের দুই তারা! অনেক অনেকদিন পর আবার ডুব দিলাম বাদামি সমুদ্রে। হারিয়ে যাচ্ছিলাম। সব চেতনা খসে পড়ছিল আমার। কিন্তু কে যেন আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে আনল উপরে। আমি কি অবাক হলাম! জানি না।
হৈমন্তী… ওর পরনে নীল-কালো পোশাক। ক্যাবারে নাচার সময় মেয়েরা এমনই পোশাক পরে। একি!… আমার হৈমন্তী… তুমি এমন হলে? এ কী হল তোমার?

— কেন সম্রাট…কী হয়েছি আমি?
তুমি… তুমি… নিজেকে বিক্রি করছ হৈমন্তী! ইস্‌…
— কী করে জানলে তুমি?
— তোমায় দেখে মনে হচ্ছে।
— আজ বুঝলে সম্রাট?
— না, সেই রিমাউন্ট রোডে যেদিন দেখা হয়েছিল। সেদিন তোমার চড়া মেক-আপ… সন্দেহ হয়েছিল!

হেসে উঠল হৈমন্তী… সারা কলকাতার জল-মাটি-আকাশ-বাতাসও হেসে উঠল ওর সঙ্গে। ওর বুকের ভেতর থেকে, ওর চোখের ঘন বাদামি তারার কোন অতল থেকে সেই হাসি উঠে আসছিল। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার বুক ধড়ফড় করে উঠল। আমি দু’কান চেপে বলে উঠলাম। ‘আর পারছি না…থামো!’

হাসি থেমে গেছে অনেকক্ষন। অস্বস্তিকর নীরবতা ভাঙল ও।
তুমি কী করতে এখানে এসেছিলে সম্রাট?
— নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য…
— তাই!
ওর চোখের দুই তারা থেকে কিছু উল্কা-রঙ মিলিয়ে গেল ফ্যাকাশে আকাশটাতে।
— কেন? বিশ্বাস হচ্ছে না?
তুমি চলে গেলে, তোমার  অত টাকা, অতগুলো ‘কেপ্ট’ তাদের কী হবে! এসব ছেড়ে কেউ যায়!
আমি এসব চাইনি…চাই না!
— ওহ্‌! আচ্ছা…তুমি আসলে অনেক বুড়ো হয়ে গেছ…
— না…

আমাদের দু’জনের যে শুধু আমাদের দু’জনকেই ভালবাসার কথা ছিল, সম্রাট! অথচ তুমি এক স্ত্রীতে থামনি। আরও কত নারী শরীর লাগল তোমার! তোমার ভালবাসা শরীরেই শুরু, শরীরেই শেষ। একবার বুকে হাত দিয়ে বল তো, তুমি শুধু আমাকেই ভালবেসেছ।

আমার ইচ্ছে হল একটি চড়ে ওর এই চুরচুরে বদনটিকে ভেঙেচুরে দিই। ও কি সেকথা বুঝল? জানি না। কিন্তু বলল,
— তবে নিজেকে শেষ করবে কেন?
— সে তুমি বুঝবে না।
— কে
ন বুঝব না…বল, বল।
তুমি আর আমার জীবনে আসবে না, আমি বুঝে গেছি। আর কী হবে আমার বেঁচে থেকে…আমি যে…আমি যে তোমায় ভালবাসি হৈমন্তী!
— ওই একই কথা, তুমি তোমার স্ত্রী সুদেষ্ণাকেও বলেছিলে সম্রাট… ওভারি ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে… মনে পড়ে… মাথা নিচু করে আছ কেন? মনে পড়ে ?
প্রশ্নগুলো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল আমায়।
আমার তো আর কিছু জবাব দেওয়ার ছিল না। তবু একসময়  চুপ করে থাকতে পারলাম না।
— কী করব! নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসব না? তুমি তো আর এলে না? কী ভাবে থাকব?
— আমাদের দু’জনের যে শুধু আমাদের দু’জনকেই ভালবাসার কথা ছিল, সম্রাট! অথচ তুমি এক স্ত্রীতে থামনি। আরও কত নারী শরীর লাগল তোমার! তোমার ভালবাসা শরীরেই শুরু, শরীরেই শেষ। একবার বুকে হাত দিয়ে বল তো, তুমি শুধু আমাকেই ভালবেসেছ।
— আমি সবসময় তোমায় খুঁজেছি হৈমন্তী, পাইনি… তাই… তাই হয়তো এত অপরাধ আমার। কিন্তু আমি যে এখনও তোমায় খুঁজছি!  

ম্রিয়মান লাখ-কোটি তারার ম্লান আলো। তাতেই স্পষ্ট দেখলাম। ওর গাল… ওর কপালেও ভাঁজ। কোঁকড়া চুলের গোছা আগের থেকে অনেক পাতলা। আর সেই ঘন বাদামি চোখের দুই তারা! অনেক অনেকদিন পর আবার ডুব দিলাম বাদামি সমুদ্রে।

ওর ছোট্ট মুখটা আমার দুই হাতের পাতার মাঝে নেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলাম। সেই রিমাউন্ট রোড স্টেশনে যেমন ঘুরেছিল তেমনভাবেই ও ঘুরল। তারপর আমার দিকে পেছন ফিরে কলকাতার ফ্যাকাশে-কালো আকাশে কী যেন খুঁজতে শুরু করল। আরও আরও কত যে নৈঃশব্দের মুহূর্ত পেরিয়ে গেল জানি না। আলো-আঁধারির আকাশপটে ওর শরীরের ব্যাকসাইড স্কেচ আমায় মগ্ন করে রেখেছিল। আবার একময় চেতনা ফিরল আমার। ওর গলা শুনতে পেলাম;
একটু আগে, নিজেকে বিক্রি করার জন্য তুমি আমায় ঘেন্না করছিলে সম্রাট। তাহলে এখন কী ভাবে আবার ভালবাসছ? তুমি আমাদের প্রতিজ্ঞা ভেঙেছ। আমার ওপর গোয়েন্দাগিরি করেছ সম্রাট!
— অন্যায় হয়ে গেছে। কিন্তু কিছুতেই তোমার খোঁজ পাইনি… বিশ্বাস কর।
— কিন্তু আজ তো বুঝলে আমি নিজেকে বিক্রি করেছি। হ্যাঁ, পেটের জন্য ছুঁয়েছি অনেক মানুষ। তুমি কি তোমার ব্যবসায় তার থেকে অনেক বেশি মানুষকে ঠকাওনি? না ঠকিয়ে কি ব্যবসা করা যায়?
— আর তুমি যাদের কাছে গেছ, তাদের কি ভালবাসনি হৈমন্তী?
— মিথ্যে বলি কী করে! কাউকে কাউকে যে মাঝেমাঝে মনে পড়ে!
— তুমিও তো প্রতিজ্ঞা ভেঙেছ হৈমন্তী… অন্যকে ভালবেসেছ আবার দেখছি খবরও রেখেছ আমার!
নিশ্চল হয়ে ও আমার কথাগুলো শুনছিল। আমি প্রায় ওর গা ঘেঁষে দাঁড়ালাম। আমার নিশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছিল ওকে।
— চল, সব ভুলে যাই…  জীবনের প্রান্তসীমায় এসে গেছি। এই শেষ কটাদিন সেই প্রথমদিনগুলোর মতো কাটাই… একসঙ্গে। আমরা তো দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি!
এ কী! ওর দুই গালে কী চিকচিক করছে? অশ্রু… নাকি গলে যাওয়া মেকাপের গুঁড়ো গুঁড়ো অভ্র?
— তুমি না এই একটু আগে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলে সম্রাট!
— তখনও যে তুমি আসনি হৈমন্তী!

কলকাতার সব কুল ভাসিয়ে হঠাৎ অন্ধকার। জ্যালজেলে জোছনা সেই নিরেট অন্ধকারের কাছে মুখ লুকোল। এমন লোডশেডিং এর আগে হয়নি। আর কোনওদিন হবে কি? জানি না! ওদিকে সময়ের অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে সেই পার্টি যেখানে আমি এসেছিলাম। এই ব্লকের সিকিউরিটি ছেলেটাও আর খুঁজতে আসেনি। আমি আর হৈমন্তী দু’জন দু’জনের আলিঙ্গনে মিশে আছি অগুন্তি সেকেন্ড।     কিন্তু আমার আর তর সইছে না। ওকে নিয়ে ফিরে যাব। একটা পরিপূর্ণ ঘর বাঁধা হয়নি আমাদের। খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবে আয়ু। দেরি করা যাবে না, আর দেরি করা যাবে না।
–চল হৈমন্তী, ঘরে যাই…  চল।
মার ভেতরের কথাগুলো হয়তো এই প্রথম ও বুঝতে পারল না। আমায় ছেড়ে ও সোজা রেলিং-এর দিকে হাঁটতে লাগল। আমি এগিয়ে গিয়ে ওর একটা কব্জি চেপে ধরলাম।
— কোথায় যাচ্ছ, আমাদের বাড়ি যেতে হবে!
— কে যাবে, কারা যাবে, বাড়ি কোথায়?
— আমার হৃৎপিন্ড থেমে যাবে মনে হচ্ছে, কী বলছে ও?
— আমরা কে? আমরা কি সত্যি হৈমন্তী আর সম্রাট? আমাদের বাড়ি কি ওই … ওই কোনও একটা খোপে? পুব-পশ্চিম, ডান-বাঁ, সবদিকেই আঙুল ঘুরিয়ে ও বলতে লাগল।
— কী পাগলের মত বলছ? আমি সম্রাট আর তুমি হৈমন্তী। বুঝতে পারছ না, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি!
— না… তুমি সম্রাট না আর আমিও হৈমন্তী না। তারা ভালবাসার জন্য দেওয়া কথা ভাঙতে পারে না… যাই হোক, মরে গেলেও ভাঙবে না। ওহে পুরুষ, আমরা দু’জনে মিলে বৃত্তটাকে মুছে দিয়েছি। হয়তো তুমি বেশি আমি কম বা আমি বেশি আর তুমি…!
— কিন্তু ভালোবাসা তো অপরাধ না! যাকে, যখন বেসেছি তা পাপ নয়।… কিন্তু অসীম সময়রেখার এই যে আকাশ! আমার সেই আকাশে একটাই তো নক্ষত্র। সেটা তুমি হৈমন্তী… তুমি। আমি একটা ধুমকেতু । তোমার কক্ষপথে ঘুরছি আর ঘুরছি… এখন আমার সব শক্তি শেষ। আর পারছি না। তোমার মাধ্যাকর্ষণ টানছে আমায়। আর কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা কর; তারপর তোমার আগুনে মিশে যাব। ছাই হয়ে যাব। দেখে নিও।
— পৃথিবীর মায়াকাজল দু’চোখ থেকে মোছ সম্রাট! তুমি ভুলে গেছ আমাদের ভাগ্য। বারবার এভাবেই নিজেদের চারিদিকে আমাদের ঘুরতে হবে। নতুন নতুন চেহারায় নিজেদের চিনতে হবে। তারপর ঘুরতে, ঘুরতে, খুঁজতে, খুঁজতে কোনও এক সময়-স্থানাঙ্কে হৈমন্তী শুধু সম্রাটকেই খুঁজে পাবে আর সম্রাট হৈমন্তীকে। আর কেউ থাকবে না সেখানে। তারপর নতুন দুই নক্ষত্র হয়ে পাশাপাশি মহাকাশে ভেসে থাকব আমরা দুজন… সৃষ্টি থেকে ধ্বংস। ধ্বংস থেকে সৃষ্টি।  চলতে থাকবে; আমরাও বয়ে চলব। কোনও কিছুই আর আলাদা করতে পারবে না আমাদের… ভুলে গেছ সম্রাট। সব ভুলে গেছ? তাই  তো যেতে হবে… এবার ছাড়। ছাড় আমায়।

ওর ছোট্ট মুখটা আমার দুই হাতের পাতার মাঝে নেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলাম। সেই রিমাউন্ট রোড স্টেশনে যেমন ঘুরেছিল তেমনভাবেই ও ঘুরল। তারপর আমার দিকে পেছন ফিরে কলকাতার ফ্যাকাশে-কালো আকাশে কী যেন খুঁজতে শুরু করল। আরও আরও কত যে নৈঃশব্দের মুহূর্ত পেরিয়ে গেল জানি না। আলো-আঁধারির আকাশপটে ওর শরীরের ব্যাকসাইড স্কেচ আমায় মগ্ন করে রেখেছিল। আবার একময় চেতনা ফিরল আমার।

গায়ের সবটুকু জোর দিয়ে ও নিজের কব্জি ছাড়িয়ে নিল। 

 ও হাঁটছে। খুব ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে রেলিংয়ের একেবারে কাছে চলে গেল। এবার যেন আমি আগের জীবনে ফিরে এলাম। ওর নেশা নেশা কথাগুলো, যা আমায় অচেতন করে দিচ্ছিল, সব ভুলে যেতে চাইলাম। ওকে ঘরে নিয়ে যাব। কাছে পেতে হবে ওকে। আমি চিৎকার করে উঠলাম;
হৈমন্তী… কী করছ? দাঁড়াও দাঁড়াও। দাঁড়িয়ে থাক ওখানে আমি আসছি।
— ওগো… এই গ্রহে তো দেখলে ভালোবাসা কী! কিন্তু সেটা তো শেষ না! আমি যাচ্ছি সম্রাট! উপায় নেই…যাচ্ছি!
— না, না…থামো। তাহলে আমিও যাব… দাঁড়াও!
— তোমার আমার ছায়াপথ এখনও আলাদা সম্রাট! 

ও উঠে পড়ল রেলিংয়ের ওপর। ওর গায়ের সেই কিম্ভূত পোশাকটা মিলিয়ে গেছে। তারাদের আলোয় ঝকমক করছে ও। আমার দিকে ঘুরে একটা চু্মু ছুড়ে দিল। তারপর আবার পেছনে ঘুরে হাত দু’টো ডানা মেলার ভঙ্গিতে দু’দিকে মেলে দিল। আমার দুই চোখের মণি স্থির হয়ে গেল। দেখলাম ওর দুই হাত বরাবর একটা নক্ষত্রখচিত রাস্তা নেমে এল। হাঁটতে হাঁটতে একসময় ও মিলিয়ে গেল মহাকাশে।

আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত উঠে দাড়ালাম সামনের রেলিংটাতে। তারায় ভরা অন্য একটা ছায়াপথ নেমে আসছে আমার দিকে। আমাকেও আবার হাঁটতে হবে।          

রাজেশ ধরের জন্ম ১৯৭১ সালে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। পেশায় স্কুলশিক্ষক। গল্প লেখার শুরু কৈশোর থেকে। এপার ও ওপার বাংলার বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ওয়েব ম্যাগাজিনে বহু গল্প প্রকাশিত। গল্পের জন্য 'ইচ্ছেকথা ২০১৮' সম্মান পেয়েছেন। গল্পে বাস্তবের পর্দা পেরিয়ে আর এক জীবনের খোঁজ... এইই একমাত্র নেশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com