নীলমাধব তার বউ নিয়ে নানা তীর্থে যায়। বছরে একবার পুরী যাবেই। কামরূপ-কামাক্ষ্যা যায়, সোমনাথ ঘুরে এসেছে, উজ্জয়িনী দেখে এসেছে। উত্তেজিত হয়ে ফেরে। গজনির সুলতান মামুদ আর ইলতুৎমিসের কথা শুনে এসেছে। শক-হুনদল পাঠান-মোগল এক দেহে মোটেই লীন হয়নি। রবি ঠাকুর ভুল লিখেছেন। এ নিয়ে তর্ক হতে হতে হয় না। কেন হয় না? মাধবের একগুঁয়ে ভাব। সে যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে, ভাবটি এমন। কিন্তু কখনও আমাকে আমন্ত্রণ জানায়নি তীর্থে যেতে। নবদ্বীপ, মায়াপুর, তারাপীঠ কোথাও যেতে বলেনি। আজ হঠাৎ বলল।
কেন বলল? আমি তার সঙ্গে শান্তিনিকেতন যেতে চেয়েছি বলে? নাকি আমি হঠাৎ করে শান্তিনিকেতন ঘুরে এসেছি বলে? মাধব অতি ধূর্ত মানুষ। মাধব কি কিছু আন্দাজ করেছে? আমি জুড়ান রায়ের সঙ্গে রোববার এই পার্কে বসে অনেক কথা জেনেছি, তা কি মাধবের কানে গেছে? মাধব কি আমার সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলা শুরু করেছে? কিন্তু কে বিড়াল, কে ইঁদুর বোঝা যাচ্ছে না। আমি বললাম:
– তীর্থ করতে যাওয়াই যায়, তবে মাধব তীর্থে আমার রুচি নেই তেমন।
– তোমার না থাক, তোমার বউয়ের আছে তো।
– তা আছে। বলতে হল। কিন্তু সত্যি কথা হল, বউয়েরও নেই। আমরা দক্ষিণেশ্বর যাই গঙ্গার তীর আর বটমূলে বসতে। তাও কতদিন যাইনি। বেলুড় মঠে আগের বছর গিয়েছিলাম। মাধব হেসে বলল:
– আমার কিন্তু খুব ভাল লাগে তীর্থ করতে, আমি ভগবানে বিশ্বাস করি।
– সে আমিও করি। তার জন্য এত তীর্থ করার দরকার আছে কি?
– যেতে হয়, গেলে অন্তর শুদ্ধ হয়। মাধব বলল।
– এর পরের ট্রিপে আমাকে নিয়ে যেও শান্তিনিকেতন। আমি বললাম। মাধব হেসে বলল:
– তুমি বুঝবে না। আমি যাই আর আমার গার্লফ্রেন্ড যায়। আর কিছু খুলে বলতে হবে?
না। আমি আর এগোই না। থাক এখানে, থাক। এরপর মাধব যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে শান্তিনিকেতনে আমার কলিগের বাড়ি কোন পল্লিতে, বলতে পারব না।
মাধব, নীলমাধব পাল খুব গোঁয়ার। মানে তার কথাই ধ্রুব সত্য, আর কারও কথা নয়। মানবেই না সে। একদিন সুমিতাভ বলতে গিয়েছিলেন, তাজমহল, লাল কেল্লা, কুতুব মিনার, চারমিনার, গোলকোন্ডা ফোর্ট সব মুসলমানদের তৈরি, আর অজন্তা, ইলোরা, সাঁচী স্তুপ, নালন্দা, তক্ষশীলা সব বৌদ্ধদের তৈরি…। তাদেরও দান আছে এই ভারতে। নীলমাধব মানবে না। সে বলে, বৌদ্ধ ধর্ম আর হিন্দু ধর্ম এক। বৌদ্ধ ধর্ম হিন্দু ধর্মের এক শাখা। ওসব গুহা স্তূপ সব হিন্দু সংস্কৃতি। সুমিতাভ যদি বোঝাতে চান, হিন্দু একটি সংস্কৃতি যদি হয়, তবে ঠিক আছে। মাধব মাথা নাড়ে। অত কথার দরকার কী? ধর্ম,ধর্মই, সংস্কৃতি আবার কী?
আরও পড়ুন: সেবন্তী ঘোষের উপন্যাস: ছাড় বেদয়া পত্র: শেষ পর্ব
সুমিতাভ কথা বাড়ান না। মাধবের সঙ্গে তর্ক করে লাভ কী? মাধব একদিন বলল:
– মাসে মাসে ভাল একটি টাকা এক অনাথ আশ্রমে দান করি আমি। শুনে গুণেন সরকার হেসেছিল।
– কোন অনাথ আশ্রম বলুক। মিথ্যে কথা। জুড়ান শুনলে হাসবে।
নীলমাধব এমনি অনেক কথা বলে, যার কোনও বাস্তবতা নেইই মনে হয়। সে নাকি একটি ইস্কুলের মিড-ডে মিলের সব খরচ দেয়। সে নাকি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এক লক্ষ টাকা দিয়েছে। কিন্তু তার প্রমাণ চাইবে কে? কী দরকার যেচে ঝামেলা বয়ে নিয়ে আসা? বলেইছি তো নীলমাধব ঘুরে এসেছে, ব্যাঙ্কক-পাটায়া সমুদ্র সৈকতে, গোয়ার বালুকাবেলায়। সে ব্যাঙ্কক গিয়েছিল তার কর্পোরেশনের সহকর্মীদের সঙ্গে। সেখানে কী দেখেছে, কী করেছে তার বিবরণ দিয়েছিল একদিন। সঞ্জয়বাবু জিজ্ঞেস করেছিলেন:
– কত খরচ হল?
– লাখ দেড়েক।
চুপ করে ছিলাম আমরা। নীলমাধবের অনেক টাকা। জীবন ভোগ করে নিচ্ছে। তার কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে বাগুইআটি, নিউ টাউনে। কোঅপারেটিভে ঢুকে খুব সস্তায় পেয়েছে। সেই ফ্ল্যাটও ভাড়ায় দিয়েছে। মাসে ভাল টাকা আসে। শান্তিনিকেতনেও বাগানবাড়ি করেছে। একটা মানুষের এত থাকে! নীলমাধবের অনেক টাকা, সুদেও কম পায় না। তাই সে আবার বলল, কাউন্সিলরের কাছে যাবে। পার্কে অসভ্যতা হয়। এ ঠিক না। কাউন্সিলরের কাছে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে গেলে কাজ উদ্ধার হবে। যাবেই নীলমাধব। নীলমাধবকে সঞ্জয়বাবু জিজ্ঞেস করলেন:
– আপনি ব্যাঙ্কক গিয়ে কী করলেন?
– কী করব? নিরীহ মুখে নীলমাধব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।
– শুনেছি যে…। সঞ্জয় বললেন…
– হ্যাঁ, দেখতে গেলাম, দেখলাম ১৭-১৮-র মেয়েরা সত্তর বছরের বুড়োর সঙ্গে বেড শেয়ার করছে, তাদের নিয়ে ঘুরছে, তাদের কোলে বসে শো দেখছে।
– আর আপনি? কার্তিকবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
নীলমাধব এমনি অনেক কথা বলে, যার কোনও বাস্তবতা নেইই মনে হয়। সে নাকি একটি ইস্কুলের মিড-ডে মিলের সব খরচ দেয়। সে নাকি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এক লক্ষ টাকা দিয়েছে। কিন্তু তার প্রমাণ চাইবে কে? কী দরকার যেচে ঝামেলা বয়ে নিয়ে আসা? বলেইছি তো নীলমাধব ঘুরে এসেছে, ব্যাঙ্কক-পাটায়া সমুদ্র সৈকতে, গোয়ার বালুকাবেলায়।
নীলমাধব জবাব না দিলেও, আমাদের মনে হয় খুব ফুর্তি করে এসেছে। টাকা আছে, খরচ না করে করবে কী? শান্তিনিকেতন, টাকি যায় বালিকাপ্রায় মেয়ে নিয়ে। তাদের নিয়ে ডুয়ার্স যায়, দিল্লি, রাজস্থান যায়। কিন্তু নীলমাধব সুবিধে করতে পারেনি চঞ্চলচন্দ্র চন্দ্রের কাছে। জুড়ান রায়ের কাছে। একই আবাসনের বাসিন্দা বলে, নীলমাধব চঞ্চলের সঙ্গে আলাপ করতে গিয়েছিল। দরজা খুলেও চঞ্চলচন্দ্র তাকে ভিতরে ডাকেননি। এসব নীলমাধবই আমাদের বলেছে।
নীলমাধব চায়, চঞ্চলচন্দ্র তার সঙ্গে বন্ধুতায় আসুন। কিন্তু তা হয়নি বলে নীলমাধব ক্ষুব্ধ। তাকে পাত্তাই দেননি চঞ্চলচন্দ্র। ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন, প্রত্যাখ্যান করেছেন চঞ্চলচন্দ্র। অথচ নীলমাধব কত কীর্তিমান। তার নারীসঙ্গ তাকে আমাদের ভিতরে আলাদা করে দিয়েছে। আর ধন-সম্পদ তো আছেই। নীলমাধব প্রত্যাখ্যান জানে না। কখনও প্রত্যাখ্যাত হয়নি। সুতরাং ক্রুদ্ধ হয়েই আছে লোকটার উপর। সুযোগ পেলেই শোধ নেবে।
আমাদের এই যে বৃদ্ধদের জমায়েত, এর ভিতরে সকলেই যেন একরকম। একই রকম সকলের জীবন। শুধু কারও পয়সা বেশি, কেউ নিজের ভিতরে থাকেন, একটু আলাদা, যেমন সুমিতাভ মৈত্র। তিনি একদিন আসেন, আবার একদিন না। আচমকা আসা বন্ধ করেন। কেন জিজ্ঞেস করলে বলেন, না কিছুই হয়নি, লেখার ভিতরে ছিলেন, ভোরে লিখতে বসে গেছেন ক’দিন। নীলমাধব আবার সুমিতাভ মৈত্রকে ঠিক পছন্দ করে না, কিন্তু এড়িয়েও যেতে পারে না। সুমিতাভর অসাক্ষাতে বলে:
– লেখা আবার কী? কে পড়ে ওই সব ছাইপাঁশ? উনি এমন ভাব করেন যেন রবি ঠাকুর, না সুকান্ত, নজরুল, রসুন!
– তা কেন হবে? উনি ভাল লেখক। আমি পড়েছি ওঁর লেখা। আমি মৃদু প্রতিবাদ করলাম।
– কতজনকে জিজ্ঞেস করলাম, কেউ ওঁর নাম জানে না। নীলমাধব বলে।
– তাঁরা কি সাহিত্য পাঠ করেন?
– রাখুন মশায়, শরচ্চন্দ্রের পর আর কোনও লেখক হয়নি।
আরও পড়ুন: সায়নকুমার দে-র কলমে: সাদা কালো রঙিন অ্যালবাম
এসব কথা সুমিতাভ মৈত্র জানেন না। নীলমাধব সামনাসামনি তাঁকে সমীহই করে। একদিন তো বিজ্ঞের মতো জিজ্ঞেস করল:
– আচ্ছা রবি ঠাকুর বড় না শরচ্চন্দ্র বড়?
সুমিতাভ অবাক হননি এই প্রশ্নে। এড়িয়ে গিয়ে বলেছিলেন:
– আপনার যা মত, তাইই আপনার কাছে সত্য।
– কথাটা বুঝতে পারলাম না তো। নীলমাধব বলেছিল।
আসলে সে তার বিদ্যে জাহির করতে চাইছিল। সুমিতাভ যে তাদের থেকে, তার থেকে ব্যতিক্রম কিছু নন, তা বুঝিয়ে দিতে চাইছিল। অর্থ তৈরি করে প্রতিপত্তি, প্রতিপত্তি তৈরি করে অহংকার। সুমিতাভ কোন কারণে নীলমাধবের থেকে আলাদা, তা সুমিতাভকেই প্রমাণ করতে হবে। অথচ সুমিতাভর এসব দায় নেই। এসব নিয়ে তিনি ভাবেনই না। কেন ভাববেন? তিনি আমাকে পছন্দ করেন বলে, আমাদের দলের সঙ্গে হাঁটেন। না হলে চঞ্চলচন্দ্র চন্দ্রের মতো আলাদা হয়ে যেতেন। একা হাঁটতেন। কিন্তু তা না হতেও পারে। লেখককে তো মিশতে হয়। ভাল মানুষের সঙ্গে যেমন মিশতে হয়, চোর জোচ্চোরকেও চিনতে হয়। খারাপ মানুষকে বুঝতে হয়। নীলমাধবকে তিনি চিনে নিচ্ছেন গোপনে। নীলমাধব তা জানেও না।
সুমিতাভ সব কিছুতেই থাকেন, কিন্তু একটু তফাতে। মনে হয় লেখকরা অমনি হন। আমি তাঁকে পছন্দ করি। গোপনে লেখার অভ্যাস ছিল আমার। শ্যামাশ্রীকে নিয়ে দুটি গল্প লিখেছিলাম। তার একটি ছাপাও হয়েছিল বাঁকুড়ার এক পত্রিকায়। দশ কপি কিনে নিতে হয়েছিল। তারপর আর লেখা ছাপা হয়নি। ধীরে ধীরে আমি লেখার স্বপ্ন ত্যাগ করেছিলাম। যা লিখি তার ভিতরে শ্যামাশ্রী এবং কাকলি গানের বাড়ি এসে যাচ্ছিল। সে গল্প কাকে পড়াব? অথচ গল্প যদি কাউকে না-ই পড়াতে পারি, তবে লেখা কেন? সকলের সব হয় না। সুমিতাভ মৈত্র আমাকে বই পড়তে দেন। তাঁর ফ্ল্যাট বইয়ে ভরা। নীলমাধব বলেন, ফালতু ব্যাপার। বই দিয়ে কী হবে? বই ত্যাগ করেছিলেন চাকরি পাওয়ার পরে পরে। সের দরে সব বেচে দিয়েছিলেন। কী বই, না চাকরির জন্য যে যে বই দরকার ছিল। তবে বই কি নেই বাড়িতে? কতবার পড়েছেন ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের ‘চিতা বহ্নিমান’, প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর ‘সন্ধ্যারাগ’। এমন বই লেখার ক্ষমতা আর কারও নেই।
আমি কিছু বলতে গেলাম, নীলমাধব আমাকে থামিয়ে দিল। আসলে আমি আমার মত কারও উপর চাপাতে পারি না। নীলমাধব পারে, কেননা সে অনাত্মীয়া ২৫ বছরের যুবতী মেয়েকে নিয়ে দূর ভ্রমণে যায়। কে পারে তা? সে ব্যাঙ্কক ঘুরে এসেছে, সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছে, আমেরিকা যাবে ভাবছে। হলিউড, লাসভেগাস, জুয়ার স্বর্গ, এক রাতে লোকে রাজা হয়, রাজা ফকির হয়। নীলমাধব এসব বলে, আমরা অবাক হয়ে শুনি। যাক না যাক, যাবে বলে ভাবতে পেরেছে, কে আর ভাবার সাহস পায়?
আরও পড়ুন: অবন্তিকা পালের কলমে: মল্লিকা সেনগুপ্তের সীতায়ন – ফিরে দেখা
নীলমাধব একদিন বলল:
– ঠাকুরের জন্মদিন এসে গেল। এবার বড় করে পালন করব। সকলকে নেমতন্ন করব। নাম গান হবে, নিরিমিষ মধ্যাহ্নভোজ আমার ফ্ল্যাটে, মানে কমিউনিটি হলে হবে।
এই অনুষ্ঠান প্রতি বছরই হয়। বিরাম ঠাকুরের জন্ম তাদের ফরিদপুর জেলাতেই। তারা বংশ পরম্পরায় বিরাম ঠাকুরের সেবা করে। বিরাম ঠাকুর নীলমাধবের গুরু। গুরুর আবির্ভাব দিবস পালন করবে সে। আচ্ছা। সকলেই ঘাড় কাত করল। জন্মদিন এবার ধুমধাম করে হবে। এবার আন্দামান থেকে, ফরিদপুর থেকে কয়েকজন ভক্ত আসবে জন্মোৎসবে। টেলিভিশন, খবরের কাগজ, সব জায়গায় খবর হবে। বিরাম ঠাকুরের একটি জীবনী লিখতে হবে। লেখক সুমিতাভকে বরাতটা দিতে পারেন নীলমাধব। একটি হবে বিরাম দেবতার বাণী সংগ্রহ, অন্যটি জীবনকথা। সুমিতাভ চাইলে পেতে পারেন দায়িত্ব। বিশ হাজার টাকা দেবেন নীলমাধব। কথাটা সুমিতাভকে বলতে আমাকে অনুরোধ করল নীলমাধব। আমি বলতে পারলাম না। জানি সুমিতাভ এসবে নেই। দরকার হলে নীলমাধব নিজে বলুক।
অমর মিত্রের জন্ম ১৯৫১ সালে বসিরহাটে। তবে বহুদিনযাবৎ কলকাতাবাসী। ১৯৭৪ সালে 'মেলার দিকে ঘর' গল্প দিয়ে সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। প্রথম উপন্যাস 'নদীর মানুষ' ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় অমৃত পত্রিকায়। প্রথম গল্পের বই 'মাঠ ভাঙে কালপুরুষ'-ও ১৯৭৮ সালেই। রাজ্য সরকারি চাকরি করেও আজীবন সাহিত্যসাধনায় ব্রতী। ২০০৬ সালে 'ধ্রুবপুত্র' উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। ২০০১ সালে বঙ্কিম পুরস্কার পেয়েছেন 'অশ্বচরিত' উপন্যাসের জন্য। এছাড়াও ২০০৪ সালে শরৎ পুরস্কার ও ২০১০ সালে গজেন্দ্রকুমার মিত্র সম্মান পেয়েছেন তিনি।