Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

সূত্রধার: প্রথম পর্ব

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মার্চ ২৬, ২০২৫

Mahua Sen Mukhopadhyay_Bengali Novel_Sutradhar_EP1_26.3.2025_AG
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

(Bengali Novel)

হাইওয়ে থেকে বাঁক নিয়ে রাস্তা যেখানে রামসাগরের দিকে ঘুরেছে, সেখানে বাইকটা থামাল মলয়। রাস্তায় প্রায় ঝাঁপ ফেলা কয়েকটা ঝিমন্ত দোকান। একটা সিগারেটের দোকান থেকে সিগারেট কিনে ধরালো সে, এখনও দশ মিনিট সময় আছে। এখান থেকে মনোরমা কেবিনে পৌঁছতে। এই রেস্তরাঁতে সে কখনও আসেনি, তিন চারমাসে বেশ নাম করেছে, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ভিড় হয় শুনেছে। অনেক রকমের কলকাতার ধরণের  স্ন্যাক্স পাওয়া যায়। ওই মনোরমা কেবিন নামের একটা থ্রিলার সিনেমা এসেছিল নাকি- সে দেখেনি যদিও। সিনেমার নামে নাম দেওয়াটা বোধহয় একটা গিমিক। তবে লালিকে নিয়ে একদিন এলে হত… ওর ভাল লাগত। সোমদত্তা সরকারের আকস্মিক ফোন কল, সংক্ষিপ্ত কথা আর মিটিং এর সময়টা তৎক্ষণাৎ ঠিক হওয়ার পর থেকেই সে এত আকাশ পাতাল ভাবছে, কিন্তু তলকূল করতে পারছে না। সত্যি বলতে কী কলকাতার শিক্ষিত, জিন্স, ড্রেস পরা, কানে ব্লু’টুথ আর মাথায় সানগ্লাস তোলা ভদ্রমহিলাদের সে বেশ ভয় পায়। সমীহ মিশ্রিত ভয়। তাই মনোরোমা কেবিনের মিটিংটার থেকে পাঁচ মিনিট দূরত্বে দাঁড়িয়ে এই মিটিংটা ছাড়া অন্য সব বিষয়ে ভাবছে- সিগারেটটাতে শেষ টান দিয়ে সে নিজের মনেই হেসে ফেলল। (Bengali Novel)

Bengali Novel_Sutradhar_26.03.2025

বাইরের চোখ ধাঁধানো রোদ্দুর থেকে ভেতরে এসে দৃষ্টি ধাতস্থ হওয়ার পরেই মলয় ডানদিকের দ্বিতীয় সারিতে দেখতে পেল ভদ্রমহিলাকে। বাইরে থেকে বোঝা যায় না কিন্তু রেস্তোরাঁর ভেতরটা ছড়ানো, বড় আর সুদৃশ্য টেবিল চেয়ার পাতা। ভদ্রমহিলা হাত নেড়ে কাছে ডাকলেন।
‘মলয়?’
সামনের টেবিলে একটা জলের বোতল, একটা কাপে চা- কালো।
সে একটু হেসে সামনের চেয়ারটা টেনে বসল।
ভদ্রমহিলার মুখেও হাসি। চেয়ার থেকে একটু উঠে হাত বাড়িয়ে দিলেন-
‘আমি সোমদত্তা সরকার। আসতে অসুবিধা হল?’
‘আরে না না আমি তো লোকাল, বরঞ্চ আপনারই…’
ভদ্রমহিলা এবার সুন্দর করে হাসলেন, ভারী সুন্দর হাসি, সহজ, শান্ত-যেন কোথাও কোনও তাড়া নেই। (Bengali Novel)

আরও পড়ুন: গল্প: কুহকজাল

সোমদত্তার পরণে সাদার ওপর বেগুনি বুটি শাড়ি, তার সাথে প্রিন্টেড ব্লাউজ, চুল ক্লাচ দিয়ে পেছনে আটকানো। কান, গলা হাত সব খালি, শুধু চোখে খুব সুন্দর ফ্রেমের একটা চশমা আর হাতে একটা স্মার্ট ওয়াচ। শান্ত খুব বুদ্ধিদীপ্ত মুখ।
না, যেরকম ভেবেছিল তেমন নয়- খুব আধুনিক পোশাক আশাক ভেবেছিল। কিন্তু চশমার মধ্যে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকা চোখ দুটোর মধ্যে কী যেন আছে, ভেতর পর্যন্ত পড়ে নেয়, কেমন একটু অস্বস্তি হয়।

‘কী খাবেন মলয়? এদের চমৎকার আমপোড়া সরবত আছে, সঙ্গে ফিশ পকোড়া বলি?’
ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার করে দিলেন সোমদত্তা।
ওয়েটার এক বোতল ঠান্ডা জল আর গ্লাস দিয়ে যেতে এক গ্লাস জল ঢকঢক করে খেয়ে নিল সে।
সোমদত্তা ধীরে সুস্থে কথা শুরু করলেন-
‘মলয় মিটিউব এর ভিডিও পোস্ট করার পরিকল্পনা আপনার কতদিনের?’
‘বছর তিনেক আগে আমার এক বন্ধু হাই স্কুলের টিচার, ওর কাছে কলকাতার কয়েকজন বন্ধু এসেছিল, ওরাই দেখায় প্রথমে। ওই তারপর আমার বেশ লাগল। সে সময় এদিক, সেদিক টিউশনি করতাম, কোচিং, চাষ বাস দেখাশোনা করছিলাম।’
সোমদত্তা তাকিয়ে আছেন তার দিকে। মলয় একটু থেমে গেল। কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেলল। (Bengali Novel)

কলকাতা যাওয়া আসা মলয়ের সত্যি কম। গত বছর সাউথ সিটি মলে গেছিল বন্ধু সন্তুর সাথে।
যাদবপুরে সন্তুর কাজ হয়ে যাওয়ার পর হাতে কিছুক্ষণ সময় ছিল।

‘অনেকজন বেশ সাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে করছে তো… মেয়ে, লোক… ইটিং শো আরও কত কী -মানে তেমন কিছুই না’।
মলয়ের কথা বন্ধ হয়ে গেল। সোমদত্তা একইভাবে তাকিয়ে আছেন তার দিকে।
ওয়েটার এসে ফিশ পকোড়া, আম পোড়া শরবত দিয়ে গেল।
‘খেয়ে নি চলুন।’

ওঁকে গ্লাসটা তুলে নিতে দেখে মলয়ও তুলে নিল। আঃ কী সুন্দর বানিয়েছে। টক মিষ্টি, একটু বিটনুন আর অনেখানি বরফকুচি। নাঃ, লালিকে এখানে আনতে হবে একদিন।
‘তিনমাস হল আপনি ভিডিও পোস্ট করছেন। রাইট?’
‘হ্যাঁ প্রায়।’ ভেতরের অস্বস্তির ভাবটা একটু থিতিয়ে গেছে।
‘প্রথম প্রথম খুব কম ভিউ হত, এখন বেশ খানিকটা বেড়েছে?’
‘হ্যাঁ, কোনও কোনও দিন পাঁচশো হয়েছে। একবার তো হাজারও’।
‘আচ্ছা মলয়, আপনার কেন মনে হয়, এই ওঠানামাটা হচ্ছে?’
‘তা বলতে পারব না। আমি তো নানারকম জিনিস চেষ্টা করি। একবার তো বিষ্ণুপুরের মন্দিরের ইতিহাস, দীঘি এসবও দেখিয়েছিলাম।’
(Bengali Novel)

হঠাৎ করে কেমন যেন ম্যাজিক হয়ে গেল। এতক্ষণের আড়ষ্ট ভাব, চাপা টেনশন সব ওই হাসিটার সাথে উধাও। চারদিকটা ফুরফুরে হয়ে গেল।

‘হুমমম -লেটস গেট টু ওয়ার্ক।’ বলতে বলতে উনি উঠে দাঁড়ালেন। ব্যাগ থেকে ছোটো একটা ন্যাপকিন এর প্যাকেট থেকে ন্যাপকিন বের করে পরিষ্কার করে হাত মুছলেন তারপর একে একে টেবিলের ওপর থেকে প্লেট, গ্লাস সব সরিয়ে দিলেন।
কীরকম যেন একটা নাটকীয়তা ঘনিয়ে এল চারদিকে। সোমদত্তা তার পাশের চেয়ারে রাখা একটা বড় ব্যাগ থেকে বার করে আনলেন একটা ঝকঝকে রুপোলি ল্যাপটপ। (Bengali Novel)

হঠাৎ করে কেমন যেন মঞ্চের পর্দা উঠে গেল মলয়ের সামনে থেকে। ছবি ফুটে উঠতে শুরু করল ল্যাপটপের ওপর। কী জীবন্ত ছবি-
‘আপনার প্রথম ভিডিও আপনার গ্রামের। চল্লিশটা ভিউ। আর এই আপনার মা ঠাকুমার রান্নার দুটো ভিডিও… হুম ছ’শো আর প্রায় সাড়ে সাতশো ভিউ। এটাতে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক কমেন্ট। আপনার বিষ্ণুপুর মন্দিরের ভিডিও- সাতান্নটা ভিউ, পাঁচটা কমেন্ট। বন্ধুদের?’
মলয় স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এত সুন্দর ল্যাপটপ সে কাছ থেকে দেখেনি কখনও। কী মসৃণ প্রত্যেকটা স্ক্রিনের পরিবর্তন। কেমন ঘোরের মতো লাগছে। (Bengali Novel)

ব্যাগ থেকে ছোটো একটা ন্যাপকিন এর প্যাকেট থেকে ন্যাপকিন বের করে পরিষ্কার করে হাত মুছলেন তারপর একে একে টেবিলের ওপর থেকে প্লেট, গ্লাস সব সরিয়ে দিলেন।

‘হ্যাঁ আমার কলেজের ইতিহাসের প্রফেসর আর দু’চারজন বন্ধুর।’ মলয়ের লজ্জা করল।
‘এবার আমি আপনার ঠাকুমার সংক্রান্তির ভিডিও দেখাই। এক হাজারের ওপর ভিউ, দু’শো বাহান্নটা লাইক আর নব্বইটা কমেন্ট, সব পজিটিভ।’ সোমদত্তার আঙুলের ছোঁয়ায় সরে যাচ্ছে এক একটি ভিডিও।

কেমন যেন বোকা বোকা লাগছে তার, মুখে পান নিয়ে এবড়োখেবড়ো দাঁত আর ভাঙা গালের ঠাকুমা, লজ্জামেশানো বোকা বোকা হাসি, পাশে ধামায় একগাদা পটল, উঠোনের দড়িতে গামছা, সস্তা শাড়ি, গোয়াল থেকে বুল্টির ডাক –
‘মলয়?’
ঘোরের মধ্যে থেকে বেরিয়ে মুখ তুলে তাকাল সে।
‘এই দেখো-বাবার মাছ ধরতে যাওয়া নিয়ে তোমার ভিডিওটা। তুমি তো ভারী মজার ছেলে!’
বলে একগাল হাসলেন সোমদত্তা। (Bengali Novel)

খেতে খেতে অনেক কথা হল দুজনের। মলয় কত সালে পাশ করেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কোথায় থাকত, বন্ধুদের কথা, বাবা কাকাদের কথা।

হঠাৎ করে কেমন যেন ম্যাজিক হয়ে গেল। এতক্ষণের আড়ষ্ট ভাব, চাপা টেনশন সব ওই হাসিটার সাথে উধাও। চারদিকটা ফুরফুরে হয়ে গেল।’
‘তুমি কি একটু ভয়ে ভয়ে ছিলে’?
মন পড়তে পারেন নাকি?
‘ইয়ে..হ্যাঁ’
‘আরে দূর, একটু রিল্যাক্স করো তো- তুমি কী ভাবলে? কলকাতা থেকে আসা এই ভদ্রমহিলা… ভগবান জানেন কী বলবে-তাই না?’
(Bengali Novel)

Bengali Novel_Sutradhar_AG_26.03.2025

কলকাতা যাওয়া আসা মলয়ের সত্যি কম। গত বছর সাউথ সিটি মলে গেছিল বন্ধু সন্তুর সাথে।
যাদবপুরে সন্তুর কাজ হয়ে যাওয়ার পর হাতে কিছুক্ষণ সময় ছিল। রোববার। চারপাশের দোকান, আলো, সিলিং থেকে ঝোলানো ডেকরেশন এসব দেখে আর শেষ করতে পারছিল না। ফুডকোর্টে অল্পবয়সী মেয়ে আর মহিলাদের জামাকাপড়, সাজ, খাবারের গন্ধ, পাশ দিয়ে ভাজা মুরগি কোকোকোলার ট্রে নিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েরা, নাম জানা, না-জানা খাবারের সাইনবোর্ড আর তাদের অবিশ্বাস্য দাম। এসবের মাঝখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দুই বন্ধু নেমে এল নীচে, মলের বাইরে -একটা দোকান থেকে দুপ্লেট চাউমিন খেল। (Bengali Novel)

ওই দু এক ঝলক শহর দেখা তার।
আর ভিডিওতে।
‘ধুস এই ফিশ পকোড়া দিয়ে কী হবে? ডাকো তো ওয়েটারকে জমিয়ে লাঞ্চ অর্ডার করি’।
হাতের ইশারায় ওয়েটারকে ডাকল মলয়- মেনু খুলে সোমদত্তা ওয়েটার ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলেন
‘বলতো ভাই কি অর্ডার দিই ?’
(Bengali Novel)

খেতে খেতে অনেক কথা হল দুজনের। মলয় কত সালে পাশ করেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কোথায় থাকত, বন্ধুদের কথা, বাবা কাকাদের কথা।
‘তুমি আমাকে তুমিও বলতে পারো আমার ছেলের বয়স বারো। কিন্তু তার ভাবভঙ্গি কিন্তু কখনও চল্লিশ, কখনও পাঁচ। কখন কীরকম হবে বুঝে পাই না। এখন ছেলে পড়েছে ক্যারাম খেলা নিয়ে। বোর্ড কিনে এনে ছুটির দিন ওর বাবাকে পাগল করে দিচ্ছে। কোনও কাজ করতে দেবে না, সকালে একটু পড়তে বসছে, তারপরেই…।’
(Bengali Novel)

আমি অনেক বলে কয়ে আমাদের গ্রামের ফটিককাকাদের বারান্দায় ক্যারাম বোর্ড বসাই। এখন তো আমরা সোলারে রাত্তির অব্দি ক্যারাম খেলি, এখন গ্রামে তিনটে বড়দের আর একটা ছোটদের টিম’।

‘আরে কী বলছেন দিদি আমি তো কলেজে ক্যারাম চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। আমি অনেক বলে কয়ে আমাদের গ্রামের ফটিককাকাদের বারান্দায় ক্যারাম বোর্ড বসাই। এখন তো আমরা সোলারে রাত্তির অব্দি ক্যারাম খেলি, এখন গ্রামে তিনটে বড়দের আর একটা ছোটদের টিম’।
‘বাহ্ দারুণ! আমার ছেলেকে অবশ্যই বলব তোমার কথা! খুব খুশি হবে শুনলে’
(Bengali Novel)

প্রায় আধগ্লাস জল এক নিঃশ্বাসে শেষ করে ব্যাগ থেকে একটা ন্যাপকিন বার করে মুখ মুছলেন সোমদত্তা।
‘আচ্ছা বলো তো মলয়, বিষ্ণুপুরের এত সুন্দর টেরাকোটার মন্দির, তোমার ভিডিওটা বেশ সুন্দর হয়েছিল, সুন্দর বর্ণনা, ভালো তথ্য- কিন্তু তেমন ভিউ ছিল না। কিন্তু ঠাকুমা মা-কাকীমার চাপড় ষষ্টীর ভিডিও এত লাইক কমেন্ট পেল…’
(Bengali Novel)

Bengali Novel_Sutradhar_AG_26.03.2025

এত আকস্মিক প্রসঙ্গ পরিবর্তনে মলয় ঘাবড়ে গেছে। একটু আমতা আমতা করে বলল-
‘জানি না, এ তো বলা মুশকিল। দিদি আপনি হিয়া পালের ইটিং শো দেখেছেন? সুরভীর শো? ওগুলো তো কত লাইক কমেন্ট পায়..আর আমারটা…’
(Bengali Novel)

ফুডকোর্টে অল্পবয়সী মেয়ে আর মহিলাদের জামাকাপড়, সাজ, খাবারের গন্ধ, পাশ দিয়ে ভাজা মুরগি কোকোকোলার ট্রে নিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েরা, নাম জানা, না-জানা খাবারের সাইনবোর্ড আর তাদের অবিশ্বাস্য দাম।

‘মলয় এটাই তোমাকে বুঝতে হবে ভাই।
ওঁদের কমেন্টস দেখেছো? এসব বেশিদিন টিকবে না। অনেকগুলো ডিম্ আর চিকেনের ঠ্যাং খাওয়া আর ছোট জামা পরে ভিডিও করলে একটা সাময়িক জনপ্রিয়তা আসে, কিন্তু তাতে কী যায় আসে বলো’?
(Bengali Novel)

এরপর ল্যাপটপে কয়েকটা বোতাম টেপার পর নতুন স্ক্রিন- তাতে নানারকম গ্রাফ। আঙুল দিয়ে স্ক্রিনের একটা দিক দেখালেন।
‘এগুলো খুঁটিয়ে দেখলে বুঝতে পারবে। এগুলো তোমার মিটিউবের দর্শকদের ডাটা। তোমার দর্শকরা বেশিরভাগ কোথা থেকে বুঝতে পারবে। তারা কোথা থেকে জানো?’

‘কোথা থেকে?’
‘শহর। সিক্সটি পার্সেন্টের ওপরে।’
আজ মলয়ের অবাক হওয়ার দিন।
‘কলকাতা?’
‘শুধু কলকাতা নয়। দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর এমনকি বিদেশেও’।
মলয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
একটু দম নিলেন সোমদত্তা, তার মুখে হাসি।
‘আশ্চর্য লাগছে’?
‘খুবই’।
‘সেটাই তো। এই মিটিউব ভিডিও রিসার্চ করে দর্শকদের চাহিদা, মনস্তত্ব রিসার্চ করা আমাদের কোম্পানির একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। (Bengali Novel)

Mahua Sen Mukhopadhyay_Bengali Novel_Sutradhar_EP1_26.3.2025_AG

কী চায় মানুষ? কী ভাল লাগে বা লাগতে শুরু করে? কোথায় থাকে তারা? কেন ওই জায়গার মানুষদের এই জিনিস ভাল লাগছে? তাদের আর্থিক অবস্থা কেমন? তাদের লাইফস্টাইল কেমন… এই সব আর কী…’
মলয় একদম চুপ। ভেতরে অস্বস্তিটা ফিরে আসছে। অনেক প্রশ্নের ঠেলাঠেলি কিন্তু পূর্ণরূপ পাচ্ছে না, বেরিয়ে আসতে।
(Bengali Novel)

‘কিছু মিটিউবারদের মধ্যে পোটেনশিয়াল দেখতে পাচ্ছি, যাদের সাহায্য করলে তারা অনেক বেশি সাফল্য পেতে পারে।’
একটু থামলেন তিনি, একটু লক্ষ্য করলেন মলয়কে।
‘আমরা এই কাজটা শুরু করেছি। তুমি পাইলট প্রজেক্টের কয়েকজনের মধ্যে একজন। কংগ্রাচুলেশন্স।’
মলয় এখনও তাকিয়ে আছে তার দিকে। একইভাবে। তারপর সম্বিৎ ফিরে পেল।
‘থ্যাংক ইউ‘।
সোমদত্তা একটু হেলান দিয়ে বসলেন।
‘এবার বলো তোমার কী কী প্রশ্ন।’
(Bengali Novel)

আগামী সপ্তাহে আমি তোমাদের বাড়ি আসব। চারদিক দেখব। আমার সাথে হয়তো একজন আসতে পারে, ছবি তুলবে, তোমার বাড়ির, আসেপাশের। আমি তোমার বাড়ির সকলের সাথে আলাপ করব। ঠিক আছে?

‘ইয়ে মানে আমার একচুয়ালি কী করতে হবে… মানে বুঝতে পারছি না।’
এবার এক ভীষণ সুন্দর হাসিতে ভরে উঠল সোমদত্তার বুদ্ধিদীপ্ত শান্ত সুন্দর মুখটা।
‘কোনও চিন্তা নেই। সমস্ত কিছু আমরা আলোচনা করে স্টেপ বাই স্টেপ করব। আগামী সপ্তাহে আমি তোমাদের বাড়ি আসব। চারদিক দেখব। আমার সাথে হয়তো একজন আসতে পারে, ছবি তুলবে, তোমার বাড়ির, আসেপাশের। আমি তোমার বাড়ির সকলের সাথে আলাপ করব। ঠিক আছে?’

আবার হাসলেন তিনি। ওয়েটারকে বিল আনতে বললেন।
কিছুক্ষণ বাদে রেস্টুরেন্টের বিশাল গেট দিয়ে বাইরে এসে সানগ্লাস চোখে পরে নিলেন সোমদত্তা, হাতের ইশারায় কাউকে ডাকলেন। গাড়িটা এগিয়ে এল, এই প্রথম চোখ পড়ল মলয়ের রেস্টুরেন্টের একটু সাইডে পার্ক করে রাখা গাড়িটার ওপর। কীরকম একটা গা ছমছমে বিপুল শক্তি নিয়ে যেন অপেক্ষা করছিল ধুসর-রুপোলী গাড়িটা। একটা সম্পূর্ণ অন্য পৃথিবীর প্রতিনিধি যেন।

Mahua Sen Mukhopadhyay_Bengali Novel_Sutradhar_EP1_26.3.2025_AG

গাড়িতে ওঠার ঠিক আগে একটু অন্যমনস্ক স্বরে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন সোমদত্তা-
‘মলয় তোমার কাকা তোমাদের সাথে থাকেন না, তাই না’?
‘হ্যাঁ..কাকা তো অনেকদিনই, তবে পাশেই থাকেন।’
‘…হুম আলাদা রান্না’?
‘হ্যাঁ অনেক দিনই’।

‘ঠিক আছে। রান্নাবান্নাটা একসাথে করতে হবে। ওটা দেখে নেব। আমি আগে যাই।’
মলয় সোমদত্তার প্রশ্নের বা কথার কোনও তল খুঁজে পাচ্ছিল না।
গাড়িতে উঠে বিদায়ের ভঙ্গীতে হাতটা তুলে বললেন-
‘আমি শিগগিরই টেক্সট পাঠিয়ে তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি কবে যাব। সেদিন সব কথা হবে। কীভাবে সবকিছু হবে। ভাল থেকো।’
(Bengali Novel)

ফেরার পথে কালভার্টে দাঁড়াল মলয়। বহুবার আসা যাওয়ার পথে দাঁড়িয়েছে সে এখানে। নদী থেকে বেড়িয়ে আসা একটি খাল-তিরতির স্রোতে বয়ে চলেছে।

ফেরার পথে কালভার্টে দাঁড়াল মলয়। বহুবার আসা যাওয়ার পথে দাঁড়িয়েছে সে এখানে। নদী থেকে বেড়িয়ে আসা একটি খাল-তিরতির স্রোতে বয়ে চলেছে। অনেক জায়গায় কচুরিপানা ভেসে রয়েছে তাতে ভর্তি ফুল। বাঁদিকে বিস্তৃত কলাবাগান যতদূর চোখ যায়। তার সবুজে, রোদে, ছায়ায়, নিকষ কালো জলের রূপোলি স্রোতে কী মায়াময় লাগছে চারপাশ। পেছন থেকে ভেসে আসছে গাড়ির শব্দ। আসতে যেতে কতবার দাঁড়িয়েছে সে এখানে-এমন তো লাগেনি কখনও।

কী হল এগুলো? আকাশ থেকে হঠাৎ কোথা থেকে নেমে এলেন সোমদত্তা সরকার। ভেতরে গরম বুদ্বুদ যেন একটা ফুটছে। কী একটা সম্ভাবনা, একটা আনন্দ ঘনিয়ে এসেছে… ওই জলে, ওই ভেসে যাওয়া ফুলগুলোতে, আনন্দেও বুকটা এরকম দমচাপা লাগে? তার ভিডিওতে পোটেনশিয়াল আছে? এত মিটিউবারদের মধ্যে? উফ! লালিকে ফোন করবে একটা? না, থাক। নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়া দরকার। কী অদ্ভুত দিনটা। বুকের মধ্যে কুলকুলানি, পেটে কীরকম খালি খালি ভাব। আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে রওনা হল। (Bengali Novel)

কী হল এগুলো? আকাশ থেকে হঠাৎ কোথা থেকে নেমে এলেন সোমদত্তা সরকার। ভেতরে গরম বুদ্বুদ যেন একটা ফুটছে।

গ্রামে তারকদার মুদির দোকানের মোড় থেকে বাঁ দিকে ঘোরার সময় কথাটা মনে এল- কাকার একসাথে না থাকার কথাটা জানলেন কী করে সোমদত্তা? ওই অদ্ভুত প্রশ্নটার মানে কী?
রাত্রে খাবার পর অন্ধকার উঠোনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ ধোবার সময় বিদ্যুতের মতো চমকে উঠল মাথার মধ্যে-আচ্ছা উনি হঠাৎ ছেলের ক্যারাম খেলার কথাটা তুললেন কেন? উনি কি জানতেন মলয় ক্যারাম খেলতে এত ভালোবাসে? সেটা হতে পারে? কিন্তু এত কথা উনি জানবেন কী করে?
উঠোন পেরিয়ে ঘন অন্ধকার, তার মধ্যে ঝিঁঝিঁ ডেকে চলেছে অনবরত।

(ক্রমশ)

mahua sen mukherjee

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।

Picture of মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।
Picture of মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com