পেশাগত সূত্রে আমাকে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে হচ্ছে এবং বিভিন্ন জেলার মেডিক্যাল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় অংশ নিতে হয়েছে। জীবাণুর পোশাকি নাম নভেল করোনাভাইরাস-সার্স কভ-২, ২০১৯-এর শেষে প্রথম দেখা পাওয়ায় রোগের নাম ভাইরাস ডিজ়িজ়-২০১৯ বা সংক্ষেপে কোভিড-১৯। এর বাতাসে বাষ্পবিন্দুর সাহায্যে ছড়ানোর সম্ভবনা প্রবল। বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র বিবেচনা করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী সারা দেশে পুরোদমে কর্মকাণ্ড চলছে। শ্বাসনালী ছাড়াও শরীরের অপরাপর অংশের প্রতি ভাইরাসের মারণ আকর্ষণ নেহাত কম নয়। একটি ভাইরাস কণিকা- যাকে খালি চোখে দেখাই যায় না- তার এহেন পরাক্রম বইয়ের পাতায় আগে পড়লেও হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া এই প্রথম। আমরা জেনে তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি যে পৃথিবীর তাবৎ ভাইরাস (সংখ্যাটা আনুমানিক পাওয়া যাবে দশের পিঠে একত্রিশটা শূন্য বসিয়ে) পরপর জুড়ে দিলে দৈর্ঘ্য হবে প্রায় একশো মিলিয়ন আলোকবর্ষ, যেখানে আমাদের নিকটবর্তী ছায়াপথের দূরত্ব মেরে কেটে আড়াই মিলিয়ন আলোকবর্ষ। অণুবীক্ষণে অনেকটা কদমফুলের মতো দেখতে এই করোনার রণরঙ্গ নিয়ে বর্ষশেষে আটশো-হাজার শব্দ লেখার প্রস্তাব পেয়ে কেন যে তুমুল অপরাধবোধে গ্রস্ত হলাম!
[the_ad id=”270088″]
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র তত্ত্বাবধানে পনেরো সদস্যের গ্লোবাল প্রিপেয়ার্ডনেস মনিটরিং বোর্ড (GPMB)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বের ১৭২টি দেশে ১৪৮৩টি মহামারী সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই বোর্ড ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরেই এ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে। ইতিপূর্বে ২০১৬ সালে প্রকাশিত Big farms make big flu: Dispatches on Influenza Agri-business and the Nature of Science বইটিতে রব ওয়ালেস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে কর্পোরেট কোম্পানির দৌলতে বাস্তুতন্ত্রের স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে চিনদেশে এভিয়ান ফ্লু তার করাল থাবা বসিয়েছে। সেই চিনেরই উহান প্রদেশে সম্ভবত বাদুড় থেকে বনরুই নভেল করোনা সামুদ্রিক খাবারের বাজারে মানুষের শরীরে ঢুকে পড়লো, বিদ্যুৎগতিতে মহামারী অতিমারীতে পর্যবসিত হল। ১৭ নভেম্বর ২০১৯-এ প্রথম চিনে রোগটি ধরা পরার পর ভারতে এর খোঁজ মিলল কেরলে ৩০ জানুয়ারি ২০২০, আর ২৪ মার্চ মাত্র চার ঘণ্টার নোটিসে রাত বারোটা (অর্থাৎ ২৫ মার্চ) থেকে প্রথমে তিন সপ্তাহ, তারপরে দফায় দফায় লকডাউন চালু হল। আর নগর পুড়লে কি আর দেবালয় এড়ায়? আমাদের সাধের পশ্চিমবঙ্গও বাদ গেল না। কী উপায়? নিরুপায়!
পাশ্চাত্যের ইতিহাসের পাতায় প্রথম মহামারীর খোঁজ মেলে সুদূর গ্রিসদেশের এথেন্স নগরীতে যিশুখ্রিস্টের জন্মের চারশো বছরেরও আগে। প্লেগরোগের কবলে পড়ে সে শহরের প্রায় পঁচিশ শতাংশ লোক মৃত্যুমুখে পতিত হন। স্বয়ং রাজা পেরিক্লিস আর দুই রাজপুত্রও বাদ যাননি থুকিডাইডিসের বর্ণনা অনুযায়ী।
প্রথমে খানিকটা হকচকিয়ে গেলেও আমরা চিকিৎসকরা দ্রুত কাজে নেমে পড়লাম। সরকারি- বেসরকারি ভেদ না করে একজোটে চিকিৎসকেরা নিজেদের প্রাণ বিপন্ন করে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে লাগলেন– সাধারণ মানুষের চিকিৎসা এবং করোনা আক্রান্ত সহকর্মীদের চিকিৎসাও। অচিরেই দেখা গেল এ রোগে চিকিৎসকের মৃত্যুহার সাধারণ মানুষের মৃত্যুহারের থেকে রীতিমত বেশি হলেও মোটের ওপর প্রায় আশি শতাংশ মানুষেই রোগলক্ষণের তীব্রতা খুবই কম। সেক্ষেত্রে বয়স খুব বেশি না হলে, শরীরে আর দু’চারটে রোগ আগে থেকেই না থাকলে বাড়িতে টেলিমেডিসিনের সাহায্যে বা কোভিড সেফ হোমে রেখেও চিকিৎসা সম্ভব, কিন্তু যেহেতু জীবাণুটি ধরাধামে নয়া আগন্তুক, তাই সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি এবং প্রতিষেধক- দুইই অধরা—দীর্ঘমেয়াদি গবেষণাসাপেক্ষ, এদিকে চিকিৎসা করতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই নতুন তথ্য, তথ্যবিভ্রাট ও তথ্য বিভ্রম এবং সেইসঙ্গে ভুঁইফোঁড় করোনা বিশেষজ্ঞদের চাপ সমানে আসছে। সেসব সামলে- সুমলে চিকিৎসাও চলছে সাধ্যমতো! তাহলে অপরাধবোধ কেন?
[the_ad id=”270086″]
পাশ্চাত্যের ইতিহাসের পাতায় প্রথম মহামারীর খোঁজ মেলে সুদূর গ্রিসদেশের এথেন্স নগরীতে যিশুখ্রিস্টের জন্মের চারশো বছরেরও আগে। প্লেগরোগের কবলে পড়ে সে শহরের প্রায় পঁচিশ শতাংশ লোক মৃত্যুমুখে পতিত হন। স্বয়ং রাজা পেরিক্লিস আর দুই রাজপুত্রও বাদ যাননি থুকিডাইডিসের বর্ণনা অনুযায়ী। আদিম মানুষ পশুপালন শেখার পরপরই জীবাণুদের মধ্যে বাহক পরিবর্তন করে পশু থেকে মানুষের দেহে ঢোকার প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হয়- যার পোশাকী নাম জুনোসিস। প্লেগ ছাড়াও পরবর্তী কালে পক্স, কলেরা, টাইফিয়েড ইত্যাদি মহামারীতে শয়ে শয়ে মানুষ প্রাণ হারান। কিন্তু এই জীবাণুবাহিত রোগের চিকিৎসা ও প্রতিষেধক সম্বন্ধে বিশদ গবেষণা শুরু হয়েছে মাত্র শতাব্দী দেড়েক আগে থেকে, কিছু গবেষণা প্রাচীন ভারতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের দাবি তুললেও আমাদের প্রচলিত পঠনপাঠন অনুযায়ী ১৬৭৬ সালে ডাচ বস্ত্র ব্যবসায়ী জন লিউয়েন হক সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। আরো দু’শতক অতিবাহিত হয়ে ১৮৯২ সালে ইভানোভস্কির হাতে ঘটে যায় টোবাকো মোজাইক ভাইরাসের আবিষ্কার। অবশ্য এর ছবি তোলার জন্য প্রয়োজন যে ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের, তার আবিষ্কারের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ১৯৩১ সাল অবধি। আমাদের অবাক বিস্ময়ে দেখতে হয় পোষক কোষের ভেতর ভাইরাসকণিকার মৌল পরিচয় তার জৈবরাসায়নিক অণুর দানবীয় বংশবিস্তার ও রূপ পরিবর্তনের ঘটনা। ভাইরাসের মোকাবিলায় তাই প্রয়োজন অনাক্রম্যতার জৈবরাসায়নিক স্মৃতি বা immunological memory যা লোপ পেলে বা আদৌ তৈরি না হলে মৃত্যু অনিবার্য। এই স্মৃতিলোপের কথাই ভিন্ন অনুষঙ্গে পেয়ে যাচ্ছি মার্কেজের মহৎ উপন্যাস ‘একশ বছরের নিঃসঙ্গতা’য়। সেখানে তৃতীয় অধ্যায়ে পাই অনিদ্রাজনিত মহামারীর কথা যার অনিবার্য ফল স্মৃতিহীনতা ও তজ্জনিত নিঃসীম নিঃসঙ্গতা। এই পাহাড়প্রমাণ নিঃসঙ্গতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা আমজনতা- করোনার নির্মম আবহে শুনে নিচ্ছি কতিপয় বিদেশি শব্দবন্ধ- মাস্ক, হান্ডস্যানিটাইজার, ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স, কোয়ারান্টাইন, লকডাউন, না পাচ্ছি যথার্থ ওষুধ, না মিলছে অব্যর্থ ভ্যাকসিনের আশ্বাস। কিন্তু থেকে যাচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ জৈবরাজনৈতিক নজরদারি আর প্রচ্ছন্ন খবরদারি। দার্শনিক বায়ুং- চুল- হানের সাফ ঘোষণা-“In view of the pandemic, the radical restriction of fundamental right is unquestionably accepted”. এই গ্রহণযোগ্যতার স্তরবিন্যাস করে রেখেছেন আর এক দার্শনিক স্লাভয জিজেক। প্রথমে আমরা করোনাজনিত লকডাউনকে, দীর্ঘ মৃত্যুমিছিলকে দেখেও দেখছি না। এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে চাইছি নিজের আপাত নিরাপদ ঘরের চৌহদ্দিতে আটকে থেকে। চিন দেশ আর কিছু বহুজাতিক সংস্থার ওপর রাগ-বিরক্তি উগরে দিয়ে পরে সান্ত্বনা পেতে চাইছি যে মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে, কলকারখানা সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখে পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও তো কমাতে পারছি! পরে চূড়ান্ত হতাশাগ্রস্ত হলেও গণআত্মহত্যার পথ কিন্তু বেছে নেওয়া হচ্ছে না, বরং মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতায় মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। মার্কিন দার্শনিক ও ভাষাবিদ নোয়াম চমস্কি করোনা ছাড়াও পরমাণু যুদ্ধ ও বিশ্বজোড়া উষ্ণায়নের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে বলেছেন!
[the_ad id=”266919″]
এসব জানার পরেও কি যথার্থ গবেষণার পালে হাওয়া লাগবে না? আইরিশ পিতা ও আমেরিকান মাতার সন্তান কমিউনিস্ট বিজ্ঞানী জন ডেসমণ্ড বার্ণাল তাঁর জগদ্বিখ্যাত Science in History গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন (১৯৬৮)- যে পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিজ্ঞানের এত অগ্রগতি, সেই শক্তির সান্নিধ্যই তার লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার মূল কারণ। বাস্তবে গবেষণার গতিমুখ ও ওষুধ প্রতিষেধকের বণ্টননীতি নির্ধারণ করে কল্যাণকামী রাষ্ট্র নয়– মুনাফালোভী বহুজাতিক স্ংস্থা!
চিন যদি এই মারণভাইরাসটি গবেষণাগারে সচেতন ভাবে তৈরি না-ও করে থকে তবু সে অন্য দেশগুলিতে ভাইরাস ছড়ানো আটকাতে শুরুর দিকে চরম ঔদাসীন্য দেখিয়েছে; সেই ঔদাসীন্যে সহমত হয়েছে ইটালি, স্পেন, আর আমেরিকা- বাণিজ্যের খাতিরে। কিন্তু ভারতসহ তৃতীয় বিশ্বের তো মুরোদ ছিল না সেইসময়ে তাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এই পুঁজিবাদের নিয়ন্ত্রণে শ্বাসরুদ্ধ। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জেসন সোয়ার্জকে তাই সখেদে বলতে হয়- “Had we not set the SARS vaccine research programme aside(in 2004), we should have had a lot more of this fundamental work that we could apply to this new, closely related virus”. সঙ্গত কারণেই আমেরিকার National Institute of Allergy and Infectious Diseases-এর কর্তাব্যক্তিদের নজরে আসে। যেখনে সার্স (SARS Cov-1)গবেষণাখাতে বরাদ্দ ছিল একান্ন মিলিয়ন মার্কিন ডলার, মহামারী অতিরিক্ত হলে ২০১০ এ তা নেমে আসে…মাত্র কুড়ি মিলিয়ন ডলারে, কারণ ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর কাছে এ জাতীয় প্রাণঘাতী রোগের একটাই বাস্তব পরিচয়- মুনাফা, সাংবাদিক জেরাল্ড পোসনারের ভাষ্যে –“pharmaceutical companies view covid-19 as a once-in-a-lifetime business opportunity”. তবে জীবিকায় সারস্বত সাধনায় লক্ষ্মীদেবীর সান্নিধ্যে আসতে চাওয়ার খুচরো পাপ আমার অপরাধবোধের মুখ্য কারণ নয়।
এই জীবাণুবাহিত রোগের চিকিৎসা ও প্রতিষেধক সম্বন্ধে বিশদ গবেষণা শুরু হয়েছে মাত্র শতাব্দী দেড়েক আগে থেকে, কিছু গবেষণা প্রাচীন ভারতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের দাবি তুললেও আমাদের প্রচলিত পঠনপাঠন অনুযায়ী ১৬৭৬ সালে ডাচ বস্ত্র ব্যবসায়ী জন লিউয়েন হক সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
১৯৫৫ সালে পোলিও ভ্যাক্সিনের (ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে) আবিষ্কর্তা বিজ্ঞানী যোনাস সল্ক ভ্যাক্সিনের সত্ত্বাধিকার ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে অক্লেশে বলতে পেরেছিলেন –“could you patent the sun”? কিন্তু ২০২০ তে করোনা ভ্যাক্সিনের বেলায় আর সেটি হওয়ার যো নেই। প্রায় আশি বছর আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিকের বাণিজ্যিক প্রস্তুতিকরণে ব্যর্থ হওয়ায় সব লাভের গুড় খেয়ে যায় মার্কিন ফার্মা কোম্পানি। তাই এবারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই গাঁটছড়া বেঁধেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রা-জ়েনেকার সঙ্গে, যারা শুরুতে অন্তত তিন বিলিয়ন ভ্যাক্সিন ডোজ় বিনা লাভে বিক্রির প্রতিশ্রুতি এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রগুলিকে দীর্ঘমেয়াদে বিনালাভে ভ্যাক্সিন সরবরাহের সবুজসঙ্কেত দিয়েছে। অতিমারীর পালা সাঙ্গ হলে প্রত্যেক ডোজ় বিক্রির জন্য ছয় শতাংশ হারে রয়্যালটি পাবে- সেই অর্থ ব্যয় করা হবে সম্ভাব্য নতুন মহামারী রুখতে প্রয়োজনীয় গবেষণায়। এসব চুলচেরা মুনাফার হিসেব-নিকেশের তলায় চাপা পড়ে থাকবে একদল চিকিৎসক বিজ্ঞানীর অতন্দ্র পরিশ্রম আর দুর্মর সংরাগ। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ওয়েবসাইট খুললেই ২৬ নভেম্বর ২০২০তে প্রকাশিত করোনার ক্যান্ডিডেটের ভ্যাক্সিনের সংখ্যা দেখি ঊনপঞ্চাশ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাক্তার সারা গিলবার্টের কথায় করোনা ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত গবেষণায় প্রথমে যৎসামান্য মাত্রায় টিকা দিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে ঈষৎ চাঙ্গা করে তোলার চমকপ্রদ সিদ্ধান্তের পেছনে কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই; যা আছে এক কথায় তার নাম serendipity যা ভ্যাক্সিনের কর্মক্ষমতা বা কার্যকারিতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করে তাকে নিরাপদে বাণিজ্যিক সাফল্য দিতে সচেষ্ট হয়!
[the_ad id=”270084″]
কিন্তু এহেন খুশির খবরের বিপ্রতীপে দেখি ইতিমধ্যেই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছে আরো একঝাঁক মানুষ। তারা লকডাউনের বলি– পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে যাদের আমরা সমাজের তথাকথিত উচ্চ কোটির মানুষ দেখেও দেখতে চাই না। দেখার চোখ থাকলেও চোখের দেখা দেখেই প্রসঙ্গ পাল্টাতে স্বস্তিবোধ করি। বিবেকবাবুর মোলায়েম খোঁচা অগ্রাহ্য করে পাশ ফিরে নিদ্রা যেতে চাই। কিন্তু ঘুমের মধ্যে তাড়া করে ফেরে জামলো মাকদাম। বলে- আমায় নিয়ে খ্যাতির লোভে গল্প- কবিতা লিখতে গিয়ে কলম কেঁপে ওঠে না তোমার? তোমার নিজের বছর বারোর মেয়েটা যদি গভীর জঙ্গলের মধ্যে একশো কিলোমিটার পথ হেঁটে শ্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বাড়ি থেকে মাত্র চোদ্দো কিলোমিটার দূরে? তার না দেখা অবোধ শিশু বন্ধুটি প্ল্যাটফর্মের এককোণে পড়ে থাকা পথশ্রান্ত শ্রমিক মায়ের নিথর দেহটিকে নাড়া দিতে দিতে এক জবর মজার খেলা ভেবে খলখলিয়ে হেসে ওঠে আরো একবার! হয়তো আর একটি স্বজন তখন লকডাউনে ট্রেন বন্ধ ভেবে নিশ্চিন্তে শরীর এলিয়ে দিয়েছে রেললাইনের ওপর, আর একটু পরেই তার ঘুমন্ত খোল নলচে কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এগিয়ে যাবে ভোরের মালগাড়ি। আমরা সম্রাট নিরোর মতন বেহালা না বাজালেও শিউরে উঠে খানিক গুনগুনাবো ভাটিয়ার রাগ- এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার! বিসমিল্লায় সাধে কি বলেছিলাম এক নাছোড় অপরাধবোধের কথা………
তথ্যসূত্র:
8 Responses
চমৎকার লেখা। অনেক তথ্য জানলাম। পড়ে ভালো লাগলো, আবার মনটা খারাপও হয়ে গেলো। সত্যিই তো, পাশ ফিরে আর কতোদিন নিদ্রা যাবো…?
খুব সুন্দর। অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাষায় করোনা নামের এক মহামারির একটি সুচিন্তিত বিশ্লেষণ। বৈজ্ঞানিক, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিত থেকে দেখা বলে বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন হলো। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা, তাই লেখাটিতে প্রাণও আছে। ধন্যবাদ জানাই। রামকুমার মুখোপাধ্যায়
খুবই উচ্চমানের লেখা। এটা কাগজে প্রকাশ করলে বহু মানুষ জানার সুযোগ পেত।
Excellent
যুক্তিনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ। এই নিবন্ধের বহুল প্রচার প্রয়োজন।
কথাগুলো তো বাস্তব। অনেক কিছু জানা ছিল না সমৃদ্ধ হলাম। খুব সুন্দর লেখা। অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের মতো শিক্ষক ও ডাক্তারদের আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন।
খুব ভালো লেখা
সময়োচিত এই লেখাটি আমাকে সমৃদ্ধ করলো। একজন ডাক্তার শিক্ষক হলে বোধহয় এমন লেখা সম্ভব। ধন্যবাদ,,