‘এখনও বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিস তোরা? ক’টা বাজে খেয়াল আছে? ওদের বাড়ি থেকে কেউ যদি এসে পড়ে?’
‘এখন আবার কে আসবে? কাল মেহেন্দি আর সংগীত না? সবাই ব্যস্ত থাকবে এখন।’
‘ওসব তো আমাদের বাড়ির অনুষ্ঠান। ওদের কী? ওদের টিনা-প্রিয়া-মিকিরা তো এখানেই আসবে। বুবলির ননদও আসবে বলে গেল, সব অ্যারেঞ্জমেন্ট করে রাখতে হবে না? নীনা! আয় তো মা! তুইই আমার ভরসা। আর কেউ তো আমার কষ্ট বুঝবে না।’
ব্যস, হয়ে গেল। একবার যখন ডেকেছে মামী, আর বসতে দেবে না। বুবলির ল্যাপটপে সিরিজ চলছে। কাল মেহেন্দির সময়ের সাজের আইডিয়া সব এই সিরিজ থেকেই। নীলকেও বলে দিয়েছে বুবলি, এই সিরিজের ছেলেটার মতোই শেরওয়ানী পরে আসতে হবে কাল। পিয়া-টুসি-রিঙ্কা, দুই মাসির মেয়েরা, বুবলির সব মামাতো-মাসতুতো ভাইবোনেরা, বুবলির বন্ধুরা সব এভাবেই সাজবে কাল, নাচবে। নীনাকেও তালিম দিয়েছে সবাই মিলে।
ছোটো থেকেই নীনাকে খুব ভালোবাসে বুবলি। বলেছিল, ‘তুই চলে আয় নীনাদি, আমার বিয়ে। আমার একটু একটু ভয় করছে।’
সত্যি বলতে কি, বুবলির জন্যেই মামাবাড়িতে এত আদর নীনার। ছোট থেকেই ‘নীনাদি’ বলতে অজ্ঞান। মামা-মামীও খুবই ভালোবাসে নীনাকে। নীনার তিন ভাইবোনের মধ্যে নীনাকেই মামী সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এই বিয়েবাড়িতেই যেমন। রিয়া-পিয়া, পুপলু-টুসি তো মেজমাসি-ছোটমাসির সঙ্গে সঙ্গে এসেছে। কিন্তু নীনাকে পনেরোদিন আগে আনিয়ে নিয়েছে মামী। বলে দিয়েছিল, ‘তুই না এলে কিছু ঠিক করে হবে না নীনা। আমি তোর ভরসায় থাকি, জানিস তো!’
এখনও যেমন বলল, ‘নীনা মা, সবার জন্যে চা করে নিয়ে আয়। তুই আছিস, তাই আমার শান্তি। আর কেউ তো একটু চেয়েও দেখে না আমার কষ্ট।’
‘এখনই চা কী হবে? এই তো একটু আগে খেয়ে উঠেছে সবাই’, বুবলি ঝাঁঝিয়ে উঠল,’ নীনাদি এখন কোথাও যাবে না। আমার হেয়ার-স্টাইলটা সিলেক্ট করছি না এখন! ওকেই তো দেখে নিতে হবে!’
‘ও হেয়ার-স্টাইলের কী বোঝে?’ মামীর বোন, লুনামাসি বলে উঠল, ‘তুই তিন্নি-পিয়াদের সঙ্গে দেখ না!’
‘সত্যি বুবলি, তুইও যেমন। ও ফ্যাশনেবল হেয়ার-স্টাইল পারবে? বড়দি ওর মেয়েকে একটু যদি স্মার্ট হতে শেখাত!’ ছোটমাসি বলল, ‘বই মুখে নিয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছুই শেখেনি ও!’
‘হ্যাঁ। কাজের মধ্যে রান্নাবান্না, ঘর গুছোনো। বড়দি সত্যি…’ মেজমাসি বলল, ‘রীণা তবু নাচ-গান করছে শুনি। কিন্তু এই মেয়েটা…’
‘নীনাদিও পারে। রবীন্দ্রসঙ্গীত, প্রতুলসঙ্গীত, দিজেন্দরগীত… বল না নীনাদি,’ বুবলি বলে উঠল, ছোটবেলা থেকে নীনাদি আমাকে আর বাবাইকে এসব গান, কবিতা, আবৃত্তি শিখিয়েছে।’
‘প্রতুলসঙ্গীত! সেটা কী? দিজেন্দরগীত!… দ্বিজেন্দ্রগীতি নাকি?’ টুকটুকির মা বলে উঠেছে। মামীর বৌদি তিনি।
‘প্রতুলসঙ্গীত বোধহয় অতুলপ্রসাদের গান…’ হাসির দমকে লুটিয়ে পড়েছে সবাই, ‘বেশ বেশ, খুব ভালো শিখিয়েছে মানতেই হচ্ছে।’
বুবলি অপ্রতিভ মুখে বসে আছে, মামী হাল ধরল, ‘আসলে ওরা অত বাংলা জানে না তো! তবে ছোটবেলায় বোধহয় শিখেছে নীনার কাছে। গরমের ছুটি পড়লেই ওরা আসত তো। স্কুলে আবৃত্তি করেছে নীনা। তবে সেসব যেমনই হোক, সংসারের সব কাজ পারে’, মামী বলল, ‘এই বয়সে এমন গুছিয়ে কাজ, এমন সাব্যস্ত, সবদিকে নজর… বৃন্দা-রমেশদা মেয়েটাকে ভালোই মানুষ করেছে।’

‘না করে উপায় কী?’ কে একজন বলল কথাটা, নীনা চিনতে পারল না। মামীর বাপের বাড়ির দিকের কেউ। ‘তোমার বড় ননদের অবস্থা তো তেমন নয় শুনেছি। ওদের বাড়িতে ছেলেমেয়েরা সহজেই মানুষ হয়ে যায়। অভাব নিয়ে ঘর করলে সাব্যস্ত হবে না? আমার রিঙ্কাকে দেখো, এখনও কিছু বোঝে না। সব করিয়ে দিতে হয়, বুঝিয়ে দিতে হয়।’
রান্নাঘরে চলে এসেছিল নীনা, আর কিছু শুনতে হয়নি। অভাব নিয়ে ঘর করলে সাব্যস্ত হয়ে ওঠা হয়? কে জানে। তবে অভাব নিয়ে ঘর করলে অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয় বোধহয়। যে অনুভূতির কারণে রীণা-পাপাই বিয়েবাড়িতে আসতেই চায়নি। বাবা কোনোদিনই আসেন না। অবশ্য মাকে বাধাও দেন না। কাউকেই কি জোর গলায় বাধা দেয় বাবা? অভাব থাকলে জোর গলায় কথা বলার অনুভূতি তৈরি হয় না। শুধু যখন পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে বাড়ি আসে ছেলেমেয়েরা, বাবা জোরে জোরে হাসে, কথা বলে। ‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে লেখাপড়া খুব ভালো করে করা চাই।’
বাবার কথাটা বীজমন্ত্রের মতো মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছে নীনা।
তাই তো এবাড়ির বুবলি-বাবাই নীনাকে অন্য চোখে দেখেছে। ছোটবেলা থেকেই মামাবাড়িতে এলে মামা বলত, ‘বাবাইয়ের জিওমেট্রি নিয়ে খুব ভয়। সায়েন্স ব্যাপারটাই ওর নাকি ভালো লাগে না। ভালো করে শিখিয়ে দিস তো নীনা।’
বুবলির তো মাথায় কোনও পড়াই ঢুকত না। ইংরেজি বানান মুখস্থ করানো, টেক্সট পড়ানো, ভূগোল-ইতিহাস, সিভিকস থেকে ফিজিক্স… সব। কি করে যে ওকে অঙ্ক শিখিয়েছে নীনা!
মা বলত, ‘তোর বাবা যে কেন বোঝে না, তোদের নিয়ে ওবাড়িতে গেলে আমার কেমন মাথা উঁচু হয়!’
নীনা বছর বছর ফার্স্ট হয়ে ক্লাসে ওঠে, রীণা অপূর্ব গান গায়, ময়ূরের মতো নাচে, পাপাই একাধারে পড়া আর খেলায় জেলাস্তরে নাম করে ফেলেছে… ছেলেমেয়েরা মায়ের গর্ব।
তবু বাবা এবাড়িতে আসতে চায় না। মা বলে, ‘নিম্নবিত্ত হীনমন্যতা’। নীনা জানে, তা নয়। আসলে বাবার প্রখর আত্মসম্মানবোধ।

যে আত্মসম্মানবোধের জন্য মা বুবলির বিয়েতে সোনার হার নিয়ে আসতে পেরেছে। নিজের হাতের আংটি বিক্রি করে, অফিসে কো-অপারেটিভ সোসাইটি থেকে লোন নিয়ে, সংসারের খরচে বাঁধ দিয়ে কত কষ্টে জোগাড় হয়েছে বিয়েবাড়ির উপহার, আসা-যাওয়ার খরচ! তবু তো মামীর বোন, মামীর বৌদিরা কেউ হাতে নিয়ে দেখল না জিনিসটা। মামীও ভালো করে দেখল না।
বলল, ‘তুমি আবার এত খরচ করে সোনার জিনিস আনতে গেলে কেন বৃন্দা?’
মেজমাসি মাকেই বকল, ‘এমন গলার চিক আজকাল পরে নাকি মেয়েরা? কম সোনা দিয়ে আরো নানারকম গয়না হয় তো!’
ছোটমাসি বলল, ‘লুনাদি কেমন বাঁকা হাসল, দেখলি বড়দি? তুই ওদের সামনে গয়না বার করলি কেন?’
মা অবশ্য এসব গায়ে মাখে না, ‘বুঝলি না নীনা? দাদা-বৌদি আমাকে বেশি ভালোবাসে যে, তাই ওদের কটকট কথা! দেখলি তো, বুবলি আমার দেওয়া গয়না কেমন পরে আছে এখন?’
হ্যাঁ, বুবলি গলায় পরেছিল গয়নাটা। এখন ওর ড্রেসিং-টেবিলে পড়ে আছে সেটা। আরো পাঁচটা গয়নার সঙ্গে। জাঙ্ক জুয়েলারি বলে ওগুলোকে। ওর এক-একটা জাঙ্ক জুয়েলারি মায়ের দেওয়া গয়নার চেয়ে বেশি দামি।
তবে সোনার গয়না দেওয়া নিয়ে মায়ের মাথা উঁচু হয়েছে অবশ্যই। নইলে ওই মিতামামীর মতো রান্নাঘরে শুকনো মুখে বসে থাকতে হত। মিতামামী মায়েদের খুড়তুতো বৌদি। মামা তো মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে এলাহী ব্যবস্থা করেছে। কোনও আত্মীয়কে বাদ দেয়নি। বুড়োমামা-মিতামামী সেই সিউড়ি থেকে এসেছে। মামা নাকি ওদের যাতায়াতের ট্রেনভাড়া পর্যন্ত দিয়েছে। গুপ্তিপাড়া থেকে যেমন এসেছে বিশুমামা-সন্ধ্যামামী। বিশুমামা এসে থেকে এবাড়ির বাজারে ব্যস্ত দু’বেলা। বিশুমামার বউয়ের সঙ্গেই তো নীনা রোজ এত লোকের বিছানা পাতা আর গোছানোর কাজ করছে এ ক’দিন।
মিতামামী, সন্ধ্যামামী বুবলির জন্যে কি এনেছে কে জানে। তবে বিয়েবাড়িতে পরার জন্য ওরা দুজনেই বেনারসী শাড়ি এনেছে। আর মাকে দেখো! মামীর দেওয়া শাড়ি, যেটায় এখনও ফলস লাগানো হয়নি, সেটা পরে ঘুরছে। বিয়ে উপলক্ষ্যে সবাইকে নতুন শাড়ি দিয়েছে মামী। সবাই সেসব যার যার স্যুটকেসে, ব্যাগে রেখে দিয়েছে। শুধু মা যে কেন…!
অবশ্য মা বেনারসী শাড়ি পরবে কি করে! মায়ের বিয়ের বেনারসী তো কবেই ছিঁড়ে গেছে। ভাঁজে ভাঁজে ছিঁড়ে গেছে। মা আক্ষেপ করেনি কখনও। স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে রীণা ওই শাড়ি পরেই শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা নেচেছে। মা তাতেই খুশি। আর এই বিয়েবাড়ি আসার সময় ওই ছেঁড়া বেনারসী নিয়ে যা কাণ্ড করেছে। পাড়ায় অদিতি মাসির বুটিকে কাজ করে সোনালী, ওকে ধরে বেনারসী কাটিয়ে সালোয়ার-কামিজ বানিয়েছে নীনার জন্যে। কি যে করে মা! নীনা থাকলে কখনও শাড়ি এভাবে নষ্ট হতে দিত না। নীনা তো তখন এবাড়ি চলে এসেছিল, মা ইচ্ছেমতো এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
তার বদলে একটা শাড়ি আনতে পারত নীনার জন্য, নিজের জন্যেও একটা ভালো শাড়ি। বাবা তো বলেছিল, পাড়ার শিখাদির কাছ থেকে ইনস্টলমেন্টে শাড়ি নেওয়ার কথা।
বেনারসী না হোক, সবাই অন্তত ভালো জরিপাড়ের সিল্কের শাড়ি এনেছে। নিজের জন্যে মা গতবছর পুজোর জামদানিটা নিয়ে এসেছে। বিয়েবাড়িতে কেউ অমন কম দামি তাঁত পরে? যারা তাঁত পরেছে, তাদের কাপড়ের বাহার দেখলেই বোঝা যায় কত দামি। ওই যে বলে না… ইউনিক ডিজাইন।
মামী বলল, ‘বৃন্দা, তুমি বরং আমার দেওয়া শাড়িটাই পরো। ভালো সিল্ক ওটা। আমি আগে বুঝলে তোমার জন্যও একটা বেনারসী কিনে রাখতাম।’
সেই শুনে মাসিরা, মামীর বোন, বৌদিরা হেসে অস্থির। এত হাসির কী হল, বোঝেনি নীনা। মামী তো নিজের বোনের জন্য জারদৌসী শাড়ি, বৌদিদের জন্য কাঞ্জিভরম সিল্ক, নিজের মায়ের জন্য কড়িয়াল বেনারসী কিনেছে। বুবলির দিদা যদি বেনারসী পরতে পারে, মায়ের পরা হবে না কেন? মা সবার বড় বলে? নাকি মা কখনও সাজ-পোশাক নিয়ে মাতামাতি করে না বলে? হ্যাঁ, নীনা-রীণাকেও মা সাজ নিয়ে উত্সাহ দেয় না। বরং ছিমছাম সুরুচিসম্পন্ন সাজে দেখতে পছন্দ করে।
তা বলে ওই পুরোনো বেনারসীর সালোয়ার-কামিজ? জায়গায় জায়গায় সুতো বেরিয়ে আছে, রঙ চটে গেছে। এই জামা পরে বের হলে সবাই কত হাসিঠাট্টা করবে। বিয়ে উপলক্ষ্যে মামী নীনাকেও সালোয়ার-কামিজের কাপড় দিয়েছে। তার বদলে যদি একটা শাড়ি দিত! মনে মনেই জিভ কাটল নীনা। ছি ছি, এ কেমন ভাবনা। মা যা এনেছে, তাই পরবে।
তা বলে ওই পুরোনো বেনারসীর সালোয়ার-কামিজ? জায়গায় জায়গায় সুতো বেরিয়ে আছে, রঙ চটে গেছে। এই জামা পরে বের হলে সবাই কত হাসিঠাট্টা করবে। বিয়ে উপলক্ষ্যে মামী নীনাকেও সালোয়ার-কামিজের কাপড় দিয়েছে। তার বদলে যদি একটা শাড়ি দিত! মনে মনেই জিভ কাটল নীনা। ছি ছি, এ কেমন ভাবনা। মা যা এনেছে, তাই পরবে।
‘তাড়াতাড়ি সেজে নে নীনা, ওদিকে অনেক কাজ।’ মা তাড়া দিয়ে গেল।
হ্যাঁ, কাজ তো আছেই। কেউ শরবৎ খাবে, কেউ লস্যি। কেউ দুধ-চিনি-চা, কেউ চিনি ছাড়া শুধু দুধ দিয়ে চা, কেউ দুধ চিনি কিছুই নেবে না, লাল চা। লুনামাসি আবার গ্রিন’টি। কেউ কফি, কেউ ব্ল্যাক কফি। কেউ চিনি নেবে, কেউ চিনি নেবে না। কোল্ড ড্রিংক্স-এর ছড়াছড়ি, তবু লুনামাসির দুই মেয়ে ট্যাং ছাড়া খাবে না। রসনা আর ট্যাং। রান্নার ঠাকুররা এত করবে না। কে করবে, নীনা ছাড়া? সেইজন্যেই তো মামী পনেরোদিন আগে থেকে নীনাকে আসতে বলেছিল। আর নীনা ভেবেছিল, বুবলি বুঝি জোর করেছে।
আসা মাত্র একগাদা শাড়ি-ব্লাউজ দিয়ে বসিয়ে দিয়েছিল মামী। ফলস্ লাগাতে হবে। দোকানে ফলস-পিকো করাবার সময় নেই। ব্লাউজ কারও সেলাই খুলে বাড়িয়ে দিতে হবে, কারও বা মাপমতন ছোটো করে দিতে হবে। কারও শাড়িতে চুমকি বসিয়ে দিতে হবে, কারও আঁচলে হেম সেলাই দিতে হবে। মেয়েদের কারুর কামিজের হাতা ছোটো করতে হবে, কারুর জামায় বোতাম লাগাতে হবে।
আসলে এই মেহেন্দি-সংগীত অনুষ্ঠানের জন্য সবাই শাড়ি নিয়ে আসেনি তো! বাঙালি বাড়িতে এসবের তেমন চল নেই। এখন তাই তাড়াহুড়ো করে পরিধানের ব্যবস্থা।
কেউ অবশ্য জানতে চায়নি, নীনা আর তার মা কী পরবে। মা বলেছে, ‘আমি তো শ্রী গড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকব, এদিকে আসবই না। নীনা, তুই বরং লাল স্কার্টটা পরে নিস। ওই যেটা তোর বাবা শান্তিনিকেতন থেকে এনে দিয়েছিল।’
নীনা মাথা ঘামায়নি। মেহেন্দি আর সংগীত অনুষ্ঠানের সময় কোনও না কোনও কাজে ব্যস্ত রাখবে মামী। ঠিক যেমন গত সাত-আটদিন ধরে চলছে। এতগুলো কমবয়সি ছেলেমেয়ে এক জায়গায় হলে যা হয়। রোজই কোথাও না কোথাও বেরোন। ফুচকা-আইসক্রিম খেতে যাওয়া, সিনেমা থেকে শপিংমল, ক্লাব, সুইমিং পুল, পার্লার। বাবাই নিজেই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। বুবলির বন্ধু-বান্ধবও গাড়ি নিয়ে আসে। এ-কদিনে ওদের সবার সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেছে নীনার। সবাই জোর করে।
কিন্তু একদিনও যাওয়া হয়নি নীনার। মামী বলবে, ‘ওরা থাকবে না, ফাঁকা বাড়িতে কাজগুলো এগিয়ে রাখব। বুঝলি নীনা?’
‘রাখব’ আবার কী? মামী কি নিজে হাতে কাজ করে? সব নীনা। রান্নার ঠাকুরের বয়ান অনুযায়ী লিস্ট তৈরি করবে নীনা, আর মামী বলবে, ‘দ্যাখো, কেমন মুক্তোর মত হাতের লেখা। সাধে কি আমার ওকে ছাড়া চলে না!’
বুবলির জিনিস যাবে, বড় বড় স্যুটকেসে শাড়ি, জামাকাপড় গুছিয়ে রাখবে নীনা। মামীর আলমারি যে এর মধ্যেই কতবার গোছাতে হচ্ছে। ডেকরেটর দিয়ে গেছে তোশক-বিছানা-বালিশ… সব ব্যবস্থা করে গুছিয়ে রাখবে নীনা। রোজ মামার সঙ্গে বসে খরচের হিসেব লিখবে। কম কাজ বিয়েবাড়িতে!
তারপর আজ বিয়ে। সকাল থেকে ব্যস্ততা। গায়ে হলুদের পর্ব মেটার পর বুবলি বিউটি পার্লার গেছে। সঙ্গে সব মেয়েরা। মা বলেছিল, ‘তুইও যা না নীনা। মামা তো সবাইকে যেতে বলছে।’
নীনা যায়নি। আজ অবশ্য যাওয়ার সুযোগ ছিল। নানা লোকের সঙ্গে কথাবার্তায় ব্যস্ত মামী, বিশেষত নতুন কুটুমদের সঙ্গে ব্যস্ততায় নীনার দিকে মন নেই মামীর।
কিন্তু নীনা যায়নি। পুরোনো বেনারসীর সালোয়ার-কামিজ পরে নিজেই সেজে নিয়েছে। মাকেও শাড়ি পরিয়ে চুলে আলগা খোঁপা করে সাজিয়ে দিয়েছে।
পার্লার থেকে এসে মেয়েরা নীনাকে দেখে খুব আপত্তি করতে লাগল, ‘আজও শাড়ি পরবে না?’
‘আসলে মা আমার ব্লাউজ আনতে ভুলে গেছে। তাছাড়া এত ছুটোছুটি করতে হবে বিয়ের সময়…’
মেয়েরা কেউ রাজি নয়। এ-কদিনে ওরা সবাই নীনাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কেউ শাড়ি দিল, কেউ ম্যাচিং ব্লাউজ, কেউ কান-গলার গয়না দিল। মেক-আপ করিয়ে আই-লাইনার দিয়ে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক পরিয়ে দিল। লম্বা বেণীতে বেলফুলের মালা জড়িয়ে দিল বুবলি নিজে।
মেয়েরা কেউ রাজি নয়। এ-কদিনে ওরা সবাই নীনাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কেউ শাড়ি দিল, কেউ ম্যাচিং ব্লাউজ, কেউ কান-গলার গয়না দিল। মেক-আপ করিয়ে আই-লাইনার দিয়ে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক পরিয়ে দিল। লম্বা বেণীতে বেলফুলের মালা জড়িয়ে দিল বুবলি নিজে।
‘তোকে কী সুন্দর লাগছে নীনাদিদি।’
‘তোকেও।’ নীনা বলল। কী সুন্দর লাগছে বুবলিকে। পরীর মতো সুন্দর।
লুনামাসি বলল, ‘লাগবে না? পনেরো হাজার টাকা নিয়েছে ব্রাইডাল মেক-আপে। তোমাকেও কিন্তু বেশ লাগছে নীনা। তবে দেখো, শাড়ি সামলে কাজ করো।’
পনেরো হাজার টাকা! ভাবনাটা মাথায় নিয়েই বিয়েবাড়ির রোশনাই আর আনন্দে শামিল হয়েছে নীনা। কালচে লাল ধুতি আর অফ-হোয়াইট পাঞ্জাবীতে নীলকেও রাজপুত্রের মতো দেখাচ্ছে। সব কেমন স্বপ্নের মতো। আহা, দেখেও সুখ। ভালো থাকুক ওরা।
ভালোয় ভালোয় মিটেছে সব। বৌভাতে সবার যাওয়া হবে না। পঁচিশজন কন্যাযাত্রী যাবার কথা। ফাইভ-স্টার হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটে রিসেপশন। মা খুব চেয়েছিল, নীনা যাক। নীনা নিজেই যেতে চায়নি। মেজোমাসি-ছোটমাসিকেই যেতে বলেনি মামা, সে নিয়ে মাসিরা গজগজ করছে। অবশ্য ওদের ছেলেমেয়েরা সবাই গেছে। মেয়েরা সবাই জোর করছিল, ‘তুমিও চলো।’
নীনা বলেছে, ‘তত্ত্ব সাজিয়ে ঘরটার কী দশা। তোমরা যাও, আমরা বরং এদিকে সব পরিষ্কার করে রাখব।’
মামী বলেছে, ‘খুব লক্ষ্মী এই মেয়েটা। সব দিকে নজর।’
মা চুপিচুপি বলেছে, ‘বোকা মেয়ে। গেলি না কেন? ব্যাঙ্কোয়েট না কি বলছে, দেখে এলে পারতিস।’
নীনা বলেছে, ‘কাল বাড়ি যাব না? আজ বরং সব গুছিয়ে রাখব। সকালের ট্রেন ধরব।’
সকালে মা-মেয়ে বাড়ি যাবার জন্য তৈরি। মামী বলল, ‘নীনাকে রেখে যাবে না বৃন্দা? কত কাজ, আমি কি একলা পারি?’
আগে থেকেই মাকে জবাবটা শিখিয়ে রেখেছে নীনা। মা তাড়াতাড়ি বলল, ‘ওর বি-এডের অ্যাডমিশন আছে না পরশু? আবার পরে আসবে।’
লুনামাসি বলল, ‘বি-এড পড়বে নীনা? আজকাল কতরকম প্রোফেশনাল কোর্স হয়েছে।’
ছোটমাসি বলে উঠল, ‘ও তো বাংলা মিডিয়াম। ওসব কোর্স করতে পারবে না বোধহয়।’
মামী বলল, ‘খরচের ব্যাপারটাও আছে।’
মা কিছু বলল না। মামা-মামীকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়াল। মামাকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়াল নীনাও। মামা বলল, ‘ভগবান সব ভালো করুক মা।’
মেজোমাসি বলল, ‘ও আবার কেমন আশীর্বাদ? বরং আশীর্বাদ করো, ভালো ঘরে, বরে বিয়েটা হোক এবার।’
বুবলির দিদা বললেন, ‘হ্যাঁ বৃন্দা, এবার মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করো। বুবলি তো ওর চেয়ে অনেক ছোট। কেমন বিয়ে হয়ে গেল।’
মামা বলল, ‘আরে শোনো শোনো। আমি ভুলেই গেছিলাম। তোকে তো একটা কথা বলাই হয়নি বৃন্দা। কাল বৌভাতের রিসেপশনে বুবলির খুড়শ্বশুর নীনার খোঁজ করছিলেন।’

‘সে কি! বলোনি তো!’ মামী ঘনিয়ে এল মামার কাছে, ‘খোঁজ করছিলেন মানে?’
‘জিজ্ঞেস করছিলেন, নীনা আমার কে হয়। নীনা রিসেপশনে আসেনি কেন। আমি তো প্রথমে বুঝতেই পারিনি, কার কথা জিজ্ঞেস করছেন। তারপর টুসি না রিঙ্কা কে যেন বলে দিল। বললাম, আমার বোনের মেয়ে। বললেন, আপনার বোন বা ভগ্নীপতির ফোন নম্বর দিন।’
‘তুমি দিয়ে দিলে?’ মামী উত্সুক।
‘দিলাম। ওঁর স্ত্রী বললেন, খুব লক্ষ্মীমন্ত মেয়েটি। আর খুব কাজের। বিয়েবাড়িতে সব কাজ করছিল। সমীরণও বললেন, আমার ভাইপোর আপনার বোনঝিকে বোধহয় পছন্দ হয়েছে। ছেলেটি নীলের চেয়ে বয়সে বড়। মানে সম্পর্কে বুবলির ভাসুর।’ সমীরণ, মানে বুবলির শ্বশুরমশাই।
‘সমীরণবাবুর ভাইপো! মানে কল্যাণবাবুর ছেলে? ইন্দ্র? নিউজার্সিতে থাকে? কী বলছ?’
‘জানি না। অত কথা হয়নি। তবে শুধু ছেলে নয়, ওঁরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেও নীনাকে পছন্দ করেছেন মনে হল।’
‘তোর তো কপাল খুলে গেল রে বড়দি, ‘মেজোমাসি বলে উঠেছে।’
বাকি সবাই চুপ। প্রতিক্রিয়া জানাতেও ভুলে গেছে।
‘এত বড় খবরটা এখন বলছ?’ মামীর গলাটা এত কড়া হয়ে উঠল কেন কে জানে, ‘চাইল, আর ফোন নম্বর দিয়ে দিলে? ওটা বুবলির শ্বশুরবাড়ি।’
‘তাতে কী হয়েছে?’ মামা অবাক, ‘সমীরণ নিজেও তো বলল। আমার ভাই আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আর ওই ভদ্রলোক তো এটাও বললেন, আগে দেখলে একসঙ্গেই দুই বউ নিয়ে আসতাম। ওঁদের এতটাই পছন্দ হয়েছে নীনাকে।’
‘এ কথা শোনার পরও তুমি…’ মামী কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ল।
‘তুমি বুঝতে পারছ না দাদা,’ ছোটমাসি বলল, ‘বৌদি তো ঠিকই বলছে। ওই সমীরণদার ভাই যদি বড়দি বা জামাইবাবুকে কল করে?’
‘করলেই বা!’ বাবাই বলে উঠল। ও কখন এসে দাঁড়িয়েছে কে জানে। মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল, ‘বড়পিসিরা কি ফোনে কথা বলতে পারে না?’
‘তুই চুপ কর’, খুব রেগে গেছে মামী, ‘তুই এসব বুঝিস? সেজেগুজে ঘুরছে বিয়েবাড়িতে, দেখে ছেলের পছন্দ হয়েছে। হয়েছে তো হয়েছে। তুমি আগ বাড়িয়ে ফোন নম্বর দিয়ে ব্যাপারটা এগোতে দিচ্ছ? বুবলির শ্বশুরবাড়িতে এর পর মান সম্মান থাকবে? নিজের মেয়েটার কথাটা ভাবলে না?’
‘এত রাগ করছ কেন বৌদি?’ মা এতক্ষণে কথা বলেছে, ‘আমাদের সঙ্গে বুবলির শ্বশুরবাড়ির কেউ কথা বললে আমরা কী তাঁদের মান রাখতে পারব না?’
‘তুমি চিরকাল বোকা থেকে গেলে বৃন্দা।’ মামীর গলায় ঝাঁঝ, ‘তুমি কী ভাবছ, পছন্দ হয়েছে বলেই ওরা তোমার মেয়েকে বউ করে নিয়ে যাবে? ওদের স্ট্যাটাস জানো? কোনও ধারণা আছে? মাঝখান থেকে ওরা জানবে আমাদের বাড়ির হাঁড়ির খবর। আমাদের আত্মীয়স্বজনের খবর। এতদিন ওরা জেনেছে, আমরা আর ওরা সোসাইটিতে একই ক্লাসে বিলং করি।’
‘লোভ! বুঝলি দিদিয়া?’ লুনামাসি হেসে হেসে বলল, ‘ভাবছে, এইরকম ভাবেই জিনিস সোনাদানা তত্ত্বতালাশ করে এমন রাজকীয় বিয়ে হবে। তোরা যেমন এলাহী ব্যবস্থা করেছিস, এত জিনিসে ভরে দিয়েছিস মেয়েকে… সেইসঙ্গে এত নমস্কারী, গয়না। ভাবছে ওই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিলেও এসব হবে। মেয়ের বাড়ির হাল তো জানে না। এটাও জানে না, যে সাজ দেখে ছেলে পছন্দ করেছে মেয়ের সেই সাজের জিনিসগুলো পর্যন্ত ধার করা!’
মা তবু অবাক হয়ে চেয়ে আছে। নীনা কিন্তু বুঝতে পেরেছে, লুনামাসি কোথায় খোঁচা দিল। সেদিনের সাজের সব সত্যিই ধার করা। বদান্যতায় পাওয়া। নীনা বা তার পরিবারের সীমারেখাটা জানেন না বুবলির শ্বশুরবাড়ির লোকজন। স্ট্যাটাস নেই। তাই তো মামী মায়ের সঙ্গে বা নীনার সঙ্গে বুবলির শ্বশুরবাড়ির কারুর আলাপ করিয়ে দেয়নি। পরিচয় দেয়নি।
মা তবু অবাক হয়ে চেয়ে আছে। নীনা কিন্তু বুঝতে পেরেছে, লুনামাসি কোথায় খোঁচা দিল। সেদিনের সাজের সব সত্যিই ধার করা। বদান্যতায় পাওয়া। নীনা বা তার পরিবারের সীমারেখাটা জানেন না বুবলির শ্বশুরবাড়ির লোকজন। স্ট্যাটাস নেই। তাই তো মামী মায়ের সঙ্গে বা নীনার সঙ্গে বুবলির শ্বশুরবাড়ির কারুর আলাপ করিয়ে দেয়নি। পরিচয় দেয়নি।
বুবলির খুড়শ্বশুর যদি জানতেন এই ক্লাস-ডিফারেন্সের কথা, নিশ্চয় সম্বন্ধ করার কথা বলতেন না। খুড়শ্বশুরের কৃতী ছেলেটিও নিশ্চয় পছন্দ করতেন না নীনাকে। ওঁরা ভেবেছেন, দুই ভাইবোনের দুই মেয়ে, একই পরিবারের দুই মেয়ের কথা। শ্রেণীগত বৈষম্যের ব্যাপারটা ওঁদের মাথায় আসেনি। দুটি পরিবারের স্ট্যাটাসে কয়েক হাজার যোজন ফারাক। ওঁরা জানেন না।
কিন্তু মামাকে যখন প্রস্তাব দিয়েছেন, মামার এই বিশেষ কথাটা মাথায় রাখা উচিত ছিল। আফটার অল, এঁরা বুবলির শ্বশুরবাড়ির লোক। বিয়েবাড়িতে আসা আত্মীয় মানেই বিবাহ-সম্পর্কিত আত্মীয়তা হয় না। অনেকখানি দূরত্ব।
নীনার মুখে আবছা হাসি ফুটে উঠল। বেচারী মা!
কাপড়ের ব্যাগটা হাতে তুলে নিল, ‘চলো মা।’
গল্পটা এখানেই শেষ হবার কথা ।
বাড়ি ফিরে মা কেঁদে ফেলেছিল, ‘জানিস নীনা,ভাবতাম টাকাপয়সায় তো ওদের সঙ্গে পারব না, আমি বরং খাটুনি দিয়ে সেটা করি। আমারই তো দাদা-বৌদি। গরীব বলে আমার কোনও কমপ্লেক্স নেই । কিন্তু দেখলাম,আসল কমপ্লেক্স ওদের। স্ট্যাটাস-কমপ্লেক্স। তোর বাবা ঠিকই বলে, ওদের দুনিয়াটা আলাদা। অনেক অনেক দূরত্ব।’
কিন্তু মুঠোফোন আর সোশাল মিডিয়ার বিশ্বে আজ দূরত্ব কোনও বাধা নয়। ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল ইন্দ্র। নাম শোনা ছাড়া বুবলির এই ভাসুরকে চেনার কথা ছিল না নীনার। ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্ট তাই অ্যাক্সেপ্ট করে নিয়েছিল। জানার পর আনফ্রেন্ডও করেছিল। কিন্তু হাল ছাড়েনি ইন্দ্র। স্ট্যাটাস (Status) শব্দে বিশ্বাস নেই ওর। শ্রেণীবিন্যাস নিয়েও ভাবনা নেই। বরং প্রথম দেখায় ভালো-লাগা পরিচয়ের পর ভালোবাসা হয়েছে। বারবার বলেছে, ‘সম্পর্ক তো অন্তরের। বাইরের জগতের আড়ম্বর সেখানে বাধা হতে পারে না।’

বলেছিল, ‘আত্মসম্মান। বড্ড গভীর কথা। কিন্তু ভালোবাসা আরও অনেক বেশি গভীর শব্দ।’
‘ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে হয়,’ বাবা বলেছে তারপর, ‘এইরকমই হয় সংসারে। একের অন্যায়ের দায় ভোগ করে অন্য কেউ। একের দেওয়া ক্ষতে প্রলেপ দেয় অন্য কেউ। ভুল করিস না নীনা। ‘বাবা, সবচেয়ে কম কথা বলা মানুষটাও নাকি এতগুলো কথা উচ্চারণ করেছিল।
বিকেলের দিকে, গোধুলির আলোর দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট উচ্চারণ করেছিল ইন্দ্র, ‘মানুষ ভাঙে, আবার মানুষই গড়ে। আমি আছি নীনা।’
অন্যরকম স্ট্যাটাস। ভালোবাসার স্ট্যাটাস। বিশ্বাসের আশ্রয়, নিশ্চয়তার আশ্রয়। দোলাচল কাটিয়ে ওঠার ডাক পাঠায় বুকের ভেতরে। নীনার মন চেয়েছে সাড়া দিতে। অমনি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়েছে আকাশ। ঝলমলে সোনা রোদ্দুরে হেসে উঠেছে চারদিক। সকালের রোদ পড়ে পাতাগুলো থেকে সবুজ আলো, যে আলোয় বুকের মধ্যে টলটল করে। আলো আলো ঘন নীল আকাশ, যে আকাশের কোনো সীমারেখা নেই। যে দিগন্তে কোনও শ্রেণীবিভাজন নেই।
আইভি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৬৩ সালে ইস্পাতনগরী জামশেদপুরে। সে শহরের সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ। পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। ব্যাংকে চাকরি করেছেন। নেশা বই পড়া। সর্বভূক পাঠক। দীর্ঘদিন ধরে লেখালিখির জগতে রয়েছেন। বিভিন্ন নামী পত্রপত্রিকা ও ওয়েবজিনে তাঁর গদ্য প্রকাশিত হয়। বইয়ের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত বারো।
4 Responses
আধুনিক প্রেক্ষাপটে লেখা বাস্তব গল্প
খুব ভালো গল্প। বাস্তব গল্প ।
অসম্ভব মিষ্টি একটা লেখা। সত্যিই রূপকথা। খুব সুন্দর ঝরঝরে লেখা। ভারী ভালো লাগলো।
Amar ektu deri hoe galo comment ta korte kintu golpo ta khub monojog die porar por e likhchi onoboddo apnar lekha ebong uposthapona madam ,poster desgine tao khub sundor laglo.. Apni nije jamon ottonto shanto sovaber akjon manush apnar lekhar moddheo seo shanti ta paoa jay!!