(Durga Puja Recipe)
পুজো…বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডারে এই কদিনের অপেক্ষা। নিজের খুশিতে বাঁচার অপেক্ষা, কাশ ফুল, সাদা মেঘ, ভোরের শিশিরের অপেক্ষা।
পুজোর খুশিগুলো, সে তো রং বদলায় বয়সের সঙ্গে! মনে পড়ে, খুব ছোটবেলায় পুজোর মধ্যে এক দুদিন মা যেত দিদার কাছে। মায়ের কাছে সেটা ছিল একান্নবর্তী পরিবারের হেঁসেল থেকে মুক্তি। আর আমার কাছে চোখ ভরে দেখা, দিদার নিকোনো উঠোন নতুন করে সেজে ওঠা, উনুন সাজিয়ে তোলা, চৌকাঠে আলপনা, নতুন ধানের ছড়াতে বিনুনি, ভাগের পুকুরের টাটকা মাছ ধরা, আর স্বল্প আয়োজনেই নানান রান্না। (Durga Puja Recipe)

একটু বড় হতেই খানিকটা বাধ্য হয়েই অন্য শহরে বসবাস। নানান রাজ্যের মানুষের সাথে, পুজোর খুশি তখন বদলে যায় নাগরদোলায়, ভোরের শিউলি কুড়ানোয়, মায়ের হাতে তৈরি নতুন জামায় প্যান্ডেলে ছুটে বেড়ানোয়। সেই বাঁশ বাঁধার দিন থেকে শুরু বাঁধ ভাঙা খুশি। (Durga Puja Recipe)
পুজোর খুশির মেজাজ বদল হয় বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু একটা ব্যাপার ইউনিভার্সাল কনস্ট্যান্ট থেকেই যায়! পুজো আর পেট পুজো…সে দিদার হাতের রান্না পুকুরের মাছ হোক বা নাড়ু নিমকি, কিংবা প্যান্ডেলের বাইরের ষ্টলে ফুচকা ঘুগনি, অথবা মায়ের হাতের অষ্টমীর লুচি আলুর দম, খাওয়া ছাড়া পুজো যেন অসম্পূর্ণ।
ক্রমে বড় হতে হতে পুজোর খুশি বদলায় চেনা পুজোর মাঠের আড্ডায়, বন্ধুদের সঙ্গে গান বাজনা আর একটু সাজগোজে, আর প্যান্ডেলে অচেনা কোনও সুন্দর চোখের সাথে দৃষ্টি আর হাসি বিনিময়ে কখনও হালকা আলাপেও।
তারপর বয়স বাড়ে আর ভিড় থেকে মন যায় দূরে। পুজোর দিনে মন নির্জনতা খোঁজে, পাহাড়ে বা অন্যত্র। ভাবলে অবাক লাগে কখনও এর মাঝের একটা সময়ে, লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখা আর ভিড় রেস্তরাঁতে পেট পুজোটাও পুজোর সফলতার অংশ ছিল এককালে! (Durga Puja Recipe)

আপাতত পুজো মানে হয়ে দূরে কোথাও। নয়তো সকালে নদীর ধার, কাশবন আর বিকেলে বাড়ির বাগানে কফি হাতে ডেন্ড্রবিয়াম অর্কিডগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে থাকতে সূর্যাস্ত থেকে চন্দ্রোদয় দেখা।
পুজোর খুশির মেজাজ বদল হয় বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু একটা ব্যাপার ইউনিভার্সাল কনস্ট্যান্ট থেকেই যায়! পুজো আর পেট পুজো…সে দিদার হাতের রান্না পুকুরের মাছ হোক বা নাড়ু নিমকি, কিংবা প্যান্ডেলের বাইরের ষ্টলে ফুচকা ঘুগনি, অথবা মায়ের হাতের অষ্টমীর লুচি আলুর দম, খাওয়া ছাড়া পুজো যেন অসম্পূর্ণ। পুজোর সাজগোজ আড্ডার ফাঁকে দিব্যি করে ফেলা যায় এমন কিছু সহজ রান্না রইল এবারে। (Durga Puja Recipe)

আনারসী মালাই পোলাও
উপকরণ: চিনির রসের জন্য চিনি ৩৭৫ গ্রাম, দারচিনি ৪”, লবঙ্গ ৩/৪ টে, মাঝারি লেবু একটা (ছোট হলে দুটো), জাফরান ১ চিমটে। আনারস ১টা ছোট ভালো করে ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো কাটা, পোলাও-এর চাল ৫০০ গ্রাম, নারকেল এর গাঢ় দুধ ৬/৮ টেবিল চামচ, আর হালকা দুধ পৌনে এক লিটার, ঘি ৪ চামচ, তেজপাতা ২ টি, দারচিনি ৪”, লবঙ্গ ৩/৪ টে, এলাচ ২, চালকুমড়োর মেঠাই ১০০ গ্রাম কুচনো, কিসমিস, আমন্ড, ৫০ গ্রাম করে, জাফরান এক চুটকি।
পদ্ধতি: একটি পাত্রে জল দিয়ে তাতে টুকরো আনারস দিয়ে ফোটাতে হবে ১৫/১৬ মিনিট মতো, আনারস সেদ্ধ হয়ে যাবে তাতেই। তারপর জল ফেলে আনারস আলাদা রাখতে হবে। এরপর দেড় কাপ মতো জল দিয়ে তাতে চিনি দারচিনি লবঙ্গ ও আনারস দিয়ে ঢাকা দিয়ে ফোটাতে হবে মিনিট পাঁচ, তারপর ঢাকা খুলে জাফরান দিয়ে ফুটিয়ে একটু গাঢ় হলে লেবুর রস দিয়ে নামাতে হবে। (Durga Puja Recipe)

এরপর হাঁড়িতে ঘি গরম করে তাতে গোটা এলাচ দারচিনি ইত্যাদি দিয়ে ফুটলে চাল দিয়ে নাড়াচারা করতে হবে একটু কম আঁচে। নাড়তে নাড়তে দুই চামচ করে গাঢ় নারকেল দুধ দিতে হবে দুই তিন বারে। এর মিনিট পাঁচ সাত পর, সাড়ে চার কাপ পাতলা নারকেল দুধ আর কুচি করা বাদাম কিসমিস এবং জাফরান দিয়ে ফুটতে দিতে হবে মিনিট ১৫, হাঁড়ি ঢাকা দিয়ে। তারপর আনারসের শিরার জলটুকু ওই ভাতে দিয়ে ভালো করে নেড়ে হাঁড়ি নামিয়ে রাখতে হবে, ঢাকা থাকবে ২৫ মিনিট। (Durga Puja Recipe)
তারপর একটা গভীর পাত্রে প্রথমে ঝরঝরে পোলাও-এর ভাত, একটু গোলাপ জল ছড়িয়ে, তারপর আনারসের লেয়ার, তার ওপরে ভাতের লেয়ার তার ওপর রূপোর তবক দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। নারকেল দুধ আর আনারসের পিনা কোলাডার স্বাদ যাঁরা জানেন, তাঁরা বুঝবেন এই পোলাও কীরকম অমৃত সমান হতে পারে ! (Durga Puja Recipe)
মিষ্টি মুগ ডাল আম আদা দিয়ে
উপকরণ: ভাজা মুগ ডাল ২০০ গ্রাম, নতুন তেঁতুল অল্প দু তিনটে গুলির মতো, চিনি, নুন, স্বাদমতো, তেজপাতা দুটি, শুকনো লঙ্কা তিনটি, আম আদা কুচি দেড় ইঞ্চি, ঘি এক বড় চামচ।

পদ্ধতি: ভাজা মুগ ডাল নুন দিয়ে সেদ্ধ করে তাতে কাঁচা তেঁতুল এর মাড়ি আর তেঁতুল পাকা হলে ভিজিয়ে রেখে ঘন মাড়ি দিতে হবে। এতে একটু বেশি মিষ্টি উপকরণ, বেশ টক মিষ্টি ডাল হবে। মিষ্টি নুন স্বাদ মতো দিয়ে, কড়াই তে ঘি গরম করে তাতে জিরে তেজপাতা টুকরো শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ডালে দিতে হবে। নামানোর সময় মিহি বাটা আম আদা মিশিয়ে গরম ভাতে পরিবেশন করো। (Durga Puja Recipe)
ফুলকপির পোরে ভাজার কোরমা
উপকরণ: লম্বা ডাঁটা বাদ দিয়ে কপির ফুল ১৫/১৬ টা মাঝারি মাপের, বেসন ৫০ গ্রাম, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, লঙ্কা বাটা ১/২ চামচ, হলুদ বাটা, জিরে বাটা ১ বড় চামচ, হিং মোটর দানার সাইজের, লাল টমেটো একটা বড়, চিনি নুন স্বাদমতো, কিসমিস, ঘি আর তেল।

পদ্ধতি: ফুলকপির বোঁটা বেশি লম্বা হবে না, ফুল আস্ত থাকবে এমন করে কেটে ফুটন্ত নুন জলে কয়েক মিনিট রেখে আঁচ থেকে নামিয়ে রাখতে হবে। তারপর বেসন গোলায় একটু আদা বাটা, জিরে বাটা, লঙ্কা বাটা, হিং, নুন দিয়ে গুলে ফুলকপি ডুবিয়ে ভেজে রাখতে হবে।
ওদিকে কড়াইতে ঘি গরম করে, তাতে চিনি দিয়ে নেড়ে বাকি বাটা মশলা দিতে হবে। মশলা কষা হলে, তেল ছাড়লে অল্প জল দিয়ে ফুটতে দিতে হবে। তারপর ধনেপাতা আর কিসমিস দিয়ে নাড়াচারা করে কপিভাজা দিয়ে মিনিট দুই ফুটিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। শেষে গরম ঘিয়ে গরমমশলা বাটা দিয়ে সেটা কোরমার ওপর দিয়ে ঢেকে রাখলেই পরিবেশনের জন্য তৈরি। (Durga Puja Recipe)
মালাই মইলু
বড় রুই বা কাতলা পেটি ৪০০ গ্রাম, পেয়াঁজ ১০০ গ্রাম কুচানো, রসুন এক কোয়া কুচি, ঘি দেড় বড় চামচ, ভিনিগার ১ টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা, আদা অল্প।

পদ্ধতি: আদা মিহি কুচি করে রাখতে হবে। পেয়াঁজ আর রসুন কুচি করতে হবে। মাছ পরিষ্কার করে পেটির মাছ গরম ঘিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। সেই ঘিয়েই, চেরা লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে আদা কুচি ভেজে, তারপর পেঁয়াজ রসুন কুচি ভালো করে নেড়ে রাখতে হবে। ওতেই প্রথমে পাতলা নারকেলের দুধ দিয়ে ফুটলে মাছ আর স্বাদমতো নুন দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। মাছ সেদ্ধ হলে গাঢ় দুধ আর ভিনিগার মিশিয়েই নামিয়ে রাখতে হবে। ব্যাস রেডি! (Durga Puja Recipe)
মাংসের আলু মেখেলা
উপকরণ: বড় আলু ৬ টা, হলুদ বাটা আড়াই ইঞ্চি, নুন স্বাদমতো, মটন ৫০০ গ্রাম, দই ১২৫ গ্রাম, আদা ৩০ গ্রাম, ঘি ৩ মাঝারি চামচ, পেয়াঁজ ৫ টা কুচানো, শুকনো লঙ্কা ৪ টে, জল এক লিটার।
পদ্ধতি: আলুর খোসা ছাড়িয়ে আর্দ্ধেক করে কাটতে হবে। এতে একটু হলুদ বাটা আর নুন মাখিয়ে রাখতে হবে। মাংসে দই, নুন, শুকনো লঙ্কা বাটা আর আদার রস মাখিয়ে ম্যারিনেট করতে হবে।

ঘি গরম করে তাতে পেয়াঁজ কুচি ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই ঘিতেই আলু ভেজে তুলে রাখতে হবে। এবার মাংস দিয়ে কষতে হবে, বারবার জল শুকিয়ে গেলে জলের ছিটে দিয়ে কষতে থাকতে হবে। প্রায় আধঘণ্টা কষে আলু দিতে হবে দু-একবার নাড়াচারা করে দেড় কাপ জল দিয়ে দমে দিতে হবে মিনিট পনেরো। জল শুকনো শুকনো প্রায় হয়ে এলে, আর সব কিছু সুসিদ্ধ হলে একটা ডিশে গোল করে সাজাতে হবে, চারদিকে আলু থাকবে আর মাঝে পেঁয়াজভাজা বা বেরেস্তা ছড়ানো। রেডি আলু মেখেলা! (Durga Puja Recipe)
মিহিদানার পায়েস
উপকরণ: মিহিদানা ১০০ গ্রাম, ১ লিটার দুধ, চিনি ৭৫ গ্রাম, ছোট এলাচ ২/৩ টে গুঁড়ো করা, কর্নফ্লাওয়ার ১ চামচ।

পদ্ধতি: দুধ ক্রমাগত নেড়ে অর্ধেক করতে হবে। তারপর তাতে যাবে চিনি আর কর্নফ্লাওয়ার গোলা। খেয়াল রাখতে হবে যাতে ড্যালা না বাঁধে। তাতে মিহিদানা দিয়ে ভালো করে মিনিট তিনেক ফুটিয়ে নামাতে হবে। এই পায়েস গাঢ় হবে।
বর্ধমানের মানুষ, তাই মিহিদানার মিষ্টত্ব রইল শেষ পাতে। পুজো আর পেট পুজোর আনন্দ নিয়ে সুস্বাস্থ্যে কাটুক এবারের শারদীয়া। (Durga Puja Recipe)
রেসিপির ছবি, সৌজন্য: লেখক
শ্রুতি অনেকদিন ধরে চক ডাস্টার নিয়ে স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে ফিজিক্স লিখতেই স্বচ্ছন্দ। সামান্য ও এত ক্ষুদ্র মানুষ, যে জীবনেও কখন হাইজে়নবার্গস আনসার্টেনটি প্রিন্সিপল কাজে লেগে গেছে অজান্তে। বর্ধমানে থাকার অবস্থানটি এতটাই সুনিশ্চিত, যে পিএইচডি উত্তর, উচ্চশিক্ষার মোমেন্টাম সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলেও বাকি থাকে নিশ্চিন্তে আকাশ নদী পাখি আর প্রজাপতির গল্প শোনা।