banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

কালিদাসের মেঘপিওন থেকে আজকের ডাকপিওন

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

History of Indian Postal Service

“রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে, খবরের বোঝা হাতে,
……

রানার! রানার!
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে,আরো জোরে, এ রানার দুর্বার দুর্জয়”।
(রানার – সুকান্ত ভট্টাচার্য)

এই কবিতাটি বা গানটি শোনেননি এমন মানুষের সংখ্যা কম। কবিতাটি পড়লেই তার দৃশ্যকল্পে উঠে আসে চিঠি বা সামগ্রী পিঠে বয়ে নিয়ে যাওয়া এক মানুষের চেহারা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে আজকের পিওন বা ডাক হরকরার চেহারা নিয়েছে। কিন্তু এই শব্দ বা ম্যান-পাওয়ার কীভাবে কবে তৈরি হল, কেনই বা চালু হল এই এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে এভাবে চিঠি, টাকা বা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আদানপ্রদানের জন্য ডাক ব্যবস্থা বা পোস্ট অফিস?

বাংলায় ‘ডাক’ শব্দটির অর্থ আহ্বান করা অথবা মনোযোগ আকর্ষণ করা। এ্রর থেকেই এসেছে ডাক হরকরা, ডাকঘর, ডাক মাশুল প্রভৃতি শব্দ। ডাক ব্যবস্থার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ‘রয়্যাল মেইল’ নামে প্রথম ডাক বা পোস্টাল সার্ভিস চালু হয় ১৫১৬ সালে। এটি চালু করেন অষ্টম হেনরি। এরপর ১৬৬০ সালে প্রথম সাধারণ ডাক বা জেনারেল পোস্ট অফিস চালু করেন দ্বিতীয় চার্লস। প্রথম সমুদ্র ডাক চালু করা হয় ১৮৩০ সালে। ১৮৩৫ সালে রোল্যান্ড হিল আধুনিক পোস্ট অফিসের ধারণা দিয়ে ‘পোস্ট অফিস রিফর্ম’ প্রকাশ করেন। এর আগে দূরত্ব অনুযায়ী চিঠি পাঠানোর জন্য কম বা বেশি অর্থ দিতে হত প্রাপক ও প্রেরক দু’পক্ষকেই। রোল্যান্ড হিলের সংস্কারের পরামর্শে ১৮৪০ সালে ব্রিটেনে ‘ইউনিফর্ম পেনি পোস্ট’ চালু হয় যার মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়ে ওঠে আরও সহজ, দ্রুততর এবং নিরাপদ। ব্রিটেনেই প্রথম ডাকটিকিট চালু হয় যার নাম ছিল ‘পেনি ব্ল্যাক’। ১৮৫০ সালে প্রথম চালু হয় ডাকবাক্স। 

অবশ্য এর বহু আগে থেকেই ইউরোপ ছাড়াও মিশর, পারস্য সাম্রাজ্যেও ডাক প্রথার অস্তিত্ব ছিল। চিনে জিয়াং সাং রাজবংশের পর হ্যান রাজবংশের রাজা লি-র সময় এই ডাকব্যবস্থা বৃদ্ধি পায়। তাং রাজবংশে ১৬৩৯টি পোস্ট অফিস ও কুড়ি হাজারেরও বেশি ডাকপিওনের কথা জানা যায়। কুবলাই খানের সময় ডাক পরিষেবা চিন ছেড়ে অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়ে।

British Royal Mailbox
ব্রিটিশ রাজপরিবারের নিজস্ব ডাকবাক্স

অবিভক্ত ভারতেও এই ডাক ব্যবস্থার অস্তিত্ব বহু প্রাচীন। অথর্ব বেদে এর উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সাহিত্য, লোকগাথা, ছড়া, কবিতায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। আদিকালে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আপনজনের কাছে খবর প্রেরণের জন্য দূত এবং কবুতর বা পায়রা ব্যবহার করা হত। প্রেয়সীর কাছে বার্তা পাঠাতে মৌসুমি মেঘ এবং বাতাসকেও দূত হিসেবে ব্যবহার করার কল্পচিত্র এঁকেছেন প্রখ্যাত কবি কালিদাস এবং ধোয়ী তাঁদের গ্রন্থ ‘মেঘদূত’ ও ‘পবন দূত’-এ। পুরাণেও নল দময়ন্তীর কাহিনিতে হাঁস, রামায়ণে হনুমান,আনার-কলিতে হরিণ প্রভৃতি প্রাণি ও পাখিকে দূত হিসেবে ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে।  

ইতিহাস বলছে, প্রাচীনকালে দূতের সামাজিক অবস্থান এতই উচ্চে ছিল যে, দূতকে অন্তরীণ করা, অত্যাচার করা বা হত্যা করা হত না। কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রেও ডাক মাশুলের উল্লেখ রয়েছে। মৌর্য রাজাদের সময় দূত বা বার্তাবহকদের কথা বলা হয়েছে। দিল্লির প্রথম সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবকের শাসনকালে ডাক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। তিনি দিল্লি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত আরবদের অনুকরণে এক ধরনের ডাক ব্যবস্থা (ঘোড়ার ডাক) চালু করেন। কতগুলি নতুন শব্দও তিনি চালু করেছিলেন, যেমন কাসিদ (দূত), ধাওয়া (রানার) এবং উলাগ (ঘোড়ার সাহায্যে বহনকারী)।

এই ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন সুলতান আলাউদ্দিন খলজি, যিনি সর্বপ্রথম ডাকচৌকি স্থাপন করেন। ১২৯৬ সালে ঘোড়ায় চড়া এবং পায়ে হাঁটা ডাকবাহকের সাহায্যে তথ্য পরিবহণের ব্যবস্থা চালু করেন। তাঁর সময়ে ডাক বিভাগকে বলা হতো মাহকামাবারিদ। এই বিভাগে দু’জন ডাক কর্মকর্তা ন্যস্ত করা হয়, এদের একজনকে বলা হত মালিক বারিদমামালিক এবং তাঁর সহযোগী নায়েব বারিদমামালিক। তিনি প্রতিটি শহরে সংবাদ লেখক (মুন্সি) নিয়োগ করতেন।

মোহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে (১৩২৫-১৩৫১) ডাক বিভাগের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সূচিত হয়। ইবন বতুতার ভ্রমণ কাহিনিতে লিপিবদ্ধ আছে যে, তুঘলক সে সময় দুই ধরনের ডাক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন- ঘোড়সওয়ার ডাকবাহক এবং পায়ে হাঁটা সাধারণ ডাকবাহক। ইবন বতুতা লিখেছেন, সিন্ধু থেকে দিল্লি ডাক পরিবহণে অত্যন্ত কম সময় ব্যয় হত। তুঘলকদের শাসনকালে ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা আংশিকভাবে পুলিশের দায়িত্বও পালন করত।

শের শাহ এই ব্যবস্থাকে আরও পরিণত রূপ দিয়েছিলেন। গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করেছিলেন দ্রুত যাতায়াতের জন্য। শুধু তাই নয়, তিনি ১৭০০টি ডাকঘর তৈরি করেন, প্রায় ৩৪০০ বার্তাবাহক নিযুক্ত করেন যাদের কাজ ছিল ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন জায়গায় খবর পৌঁছে দেওয়া ও আনা। এই সময় মির মুন্সি অর্থাৎ রাজকীয় ফরমান, যোগাযোগ ও ডাক বিভাগের সচিব, দারোগাচৌকি পদাধিকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন। বিপুল সংখ্যক কর্মচারীর সমন্বয়ে সম্প্রসারিত ডাক ব্যবস্থাকে বলা হতো দিওয়ানইনসা। তারিখ-নবিশ পদাধিকারী দু’জন করণিকের অধীনে নিম্নবর্ণের গোত্র থেকে নিয়োজিত মৈওয়ার নামক কর্মচারিরা শাহী তথ্য আদানপ্রদান করত।

Dawk_Walas_(Postmen) of Bengal
সুকান্তর কবিতা আর হেমন্তের গানে অমর হয়ে থাকা বাংলার রানার

বাংলা শাসনকালে মুঘলরা দারোগাডাকচৌকি ব্যবস্থা বহাল রাখেন। ডাকচৌকিগুলি মূলত প্রাদেশিক সরকার নিয়ন্ত্রণ করত। সম্রাট জাহাঙ্গিরের শাসনকালে বাংলার রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দিল্লির ডাক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ডাক গ্রহণ ও প্রেরণের জন্য ডাকচৌকির দারোগা নিয়োগ করা হয়। বাংলা থেকে উড়িষ্যা এবং রাজধানী থেকে মুর্শিদাবাদের মধ্যে কবুতরের সাহায্যে ডাক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এরপর ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌল্লা পরাজিত হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে শাসন চলে যায়। নিজেদের স্বার্থে ১৭৬৬ সালে রবার্ট ক্লাইভ ডাকব্যবস্থা সংস্কার করেন। কলকাতায় একজন পোস্টমাস্টার নিয়োগ করা হয়। কলকাতার সঙ্গে পাঁচটি ডাক যোগাযোগ কেন্দ্রের সংযোগস্থাপন করা হয়। তবে প্রধান সংযোগ ছিল ঢাকা ও পটনার সঙ্গে। এই ব্যবস্থাকে বলা হতো ক্লাইভ ডাক।

ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সময় কলকাতায় জিপিও বা জেনারেল পোস্ট অফিস তৈরি হয়। সালটা ১৭৭৪-এর ১৭ মার্চ। প্রথম পোস্টমাস্টার ছিলেন মিস্টার রেডফার্ন। ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটের কাছে কোথাও ছিল সেই ডাকঘর। পরে তা উঠে আসে চার্চ লেন ও হেস্টিংস স্ট্রিটের মাঝামাঝি। এই সময় পালকিতে ডাকের পুঁটুলি বহন করা হত। এ ব্যবস্থা বর্ষাকাল বাদে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই চারমাস বাদে সারা বছর চালু থাকত। বর্তমান জিপিও-র নকশা করেছিলেন মিস্টার ওয়াল্টার বি গ্রেনভিল। নির্মাণে সহযোগিতা করেছিলেন ম্যাকিনটশ বার্ন। খরচ হয়েছিল প্রায় ছ’ লক্ষ টাকা। বাড়িটি দোতলা। থামে করিন্থিয়ান নকশা। মাথায় বিশাল গম্বুজ। দক্ষিণদিক অর্ধচন্দ্রকার। ভেতরে পাক খাওয়া সিঁড়ি। শোনা যায় লর্ড ক্লাইভ সিরাজউদ্দৌলার কাছে পরাজিত হয়ে এর গায়ে লিখে দিয়েছিলেন পুরনো কেল্লার সীমানা। অবশ্য জিপিও-র সঙ্গে এই যোগ এখানে আলোচ্য নয়।

General Post Office Kolkata
কলকাতার জিপিও

ওয়ারেন হেস্টিং-এর পর ডাক যোগাযোগের দায়িত্ব এসে পড়ে সেই অঞ্চলের জমিদারদের ওপর। এছাড়া ব্যবসায়ীরাও নিজেদের প্রয়োজনে নিজস্ব ডাক ব্যবস্থা চালু করেন। একে বলা হত মহাজনী ডাক। রাজ রাজড়াদের বাড়ির ভেতরেই অনেকসময় এই ব্যবস্থা চালু করা হয়। এরপর লর্ড ওয়েলেসলি ডাক বিভাগের আরও নানা সংস্কার সাধন করেন। ১৭৯৮-৯৯ সালে কলকাতা জিপিওর ন’টি শাখা অফিস গড়ে ওঠে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, নাটোর, কুমারখালি, রঘুনাথপুর, সিলেট ও রামুতে।

 ১৮৫৪ সালে সমন্বিত আধুনিক ডাকব্যবস্থার অধীনে দূরত্বভিত্তিক চিঠি পাঠানোর মাশুলের পরিবর্তে ওজনভিত্তিক মাশুল আদায়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়। এ সময়ে প্রথম সর্বভারতীয় ডাকটিকিট প্রবর্তন করা হয়। দ্রুত ডাক পরিবহণের মাধ্যম হিসাবে রেল পরিবহণ ব্যবস্থার সহায়তা গ্রহণ করা হয় এবং রেলওয়ে মেইল সার্ভিস (আরএমএস) চালু হয়। এ সময় প্রথম আধ আনা মূল্যের লালচে কমলা এবং এক আনা মূল্যের উজ্জ্বল নীল রঙের ডাকটিকিট চালু হয়। ১৮৫৬-৫৭ সালে প্রথম চিঠি ফেলার বাক্স বা লেটার বক্স চালু হয় এবং এই বাক্সের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৮৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের শাসনভার রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে সমর্পণ করার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৬১ সাল থেকে ৮৮৯টা ডাকঘর তৈরি হয় যেখানে ৪৩ নিযুত চিঠি এবং ৪.৫ নিযুত খবরের কাগজের আদানপ্রদান হয়েছিল।

এরপর ১৮৬৬ সালে পাশ হওয়া পোস্ট অফিস আইন ১৮৬৭ থেকে কার্যকর হয়। ১৮৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে এক আনা মূল্যের এমবসড খাম চালু হয়। ১৮৭৭ সালের ১ অগস্ট থেকে রেজিস্টার ডাক এবং একই সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ভ্যালু পেয়েবল ডাক চালু হল। ইতিমধ্যে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থাও সকল প্রধান ডাকঘরগুলিতে চালু করা হয় এবং ধীরে ধীরে তা বিস্তার লাভ করতে থাকে। ১৮৭৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বীমাকৃত ডাক চালু করা হয়। ১৮৭৯ সালে সর্বপ্রথম এক পয়সা মূল্যের পোস্টকার্ড চালু করা হয় এবং তৎকালীন বিশ্বে এটাই ছিল ডাক বহনের ন্যূনতম হার।

telegraph machine 1854
প্রাচীন টেলিগ্রাফ প্রেরণ যন্ত্র

১৮৮০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ভারতের সব ডাকঘরে মানিঅর্ডার ব্যবস্থা চালু হয়। ওই বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত রেল মেইল সার্ভিস চালু হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় ডাক বাছাই কাজ শুরু হয়। ১৯০৫ সালে বাংলাকে বিভক্ত করে পূর্ববঙ্গ ও আসামের সমন্বয়ে ঢাকাকে রাজধানী করে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়। ১৯০৭ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম ডাক সার্কেল গঠিত হয় এবং তৎকালীন সার্কেলের যেসব অঞ্চল এই নতুন সার্কেলের এলাকাভুক্ত ছিল ঐসব অঞ্চলই নতুন সার্কেলের অর্ন্তভুক্ত হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হলে এই নতুন সার্কেল আবার আগের পূর্ববঙ্গ ও আসাম সার্কেলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়।

১৯১১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিশ্বের প্রথম উড়ো ডাক (এয়ার মেইল)-এর ঘটনা ঘটে।  হেনরি পেকুয়ে নামের ফরাসি পাইলট এলাহাবাদ থেকে ১৫ কেজি ভার (প্রায় ৬০০০ চিঠি) নিয়ে উড়ে গঙ্গার অন্যপারে অবস্থিত নেইনি-তে পৌঁছে দেন। ১৯২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চিঠিপত্রে মাশুল দেয়ার কাজে দ্রুততা আনার লক্ষ্যে মিটার ফ্র্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে ডাকমাশুল প্রদানের ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৩০-এর দশক ছিল বিমানে ডাক পরিবহণের যুগ। ১৯৩৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে বিমানে ডাক পরিবহণ শুরু হয়। একই দিনে চট্টগ্রাম হয়ে কলকাতা-রেঙ্গুন রুটও চালু করা হয়।

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে ডাক বিভাগের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই সময় নিয়মিত ডাক পরিষেবা বিঘ্নিত হলে বিভিন্ন অঞ্চলের ডাক কর্মীরা ফিল্ড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সহযোগিতা করতেন। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষে ফিল্ড পোস্ট অফিসগুলি গুটিয়ে ফেলে আরও উন্নত স্থানে অবস্থিত ডাকঘরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

India-Independence-stamps
ভারতের স্বাধীনতা উপলক্ষে প্রকাশিত ডাকটিকিট

স্বাধীনতার পর থেকে বিভক্ত ভারতে নতুনভাবে ভারতীয় ডাক দেশজুড়ে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানে অগ্রণী হয়। ১৯৫৯ সালের ভারতীয় ডাক বিভাগ “Service before Self”-কে নিজেদের আদর্শ বাক্য হিসাবে গ্রহণ করে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভারতীয় ডাক বিভাগ আধুনিকীকরণে ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করে। ১৯৯১ সালে বহুমুখী কাউণ্টার যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয় যার প্রধান উদ্দেশ্য হয়- গ্রাহক পরিষেবার উৎকর্ষ সাধন, আয় বৃদ্ধি ও কর্মচারিদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ডাক বিভাগকে সমাজ-নিরাপত্তা প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু করা। এরপর ২০১২ সালের মধ্যে আনুমানিক ১৮৭৭.২ কোটি টাকার  মাধ্যমে ২৫,০০০ ডাক ঘর কম্পিউটারাইজড্ করা হয়।

২০১৩ সালের ২২ মার্চ তারিখে অণুবৈদ্যুতিক (ইলেক্ট্রনিক) ভারতীয় পোস্টাল অর্ডার (e-IPO) আরম্ভ করা হয় কেবল দেশের বাইরে থাকা ভারতীয়দের জন্য। ইতিমধ্যে ইন্টারনেটের গুরুত্ব বাড়ে। ই-মেইল, হোয়াটস্যাপ আসায় চিঠিপত্র বা জরুরি কাগজ স্ক্যান করে বা লিখে পাঠানোর সুবিধা হয়। ফলে ভারতীয় ডাক নিয়ে মানুষের উৎসাহ ক্রমেই নিম্নমুখী হতে থাকে। একাধিক কুরিয়ার সার্ভিস দেশ জুড়ে প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করলে ডাকবিভাগ ক্রমে তার গুরুত্ব হারায়। কিন্তু ২০২০ সালের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সারা দুনিয়া যখন আক্রান্ত করোনা নামক ভাইরাসে, তখন সমস্ত কুরিয়ার সার্ভিসকে পিছনে ফেলে ভারতীয় ডাকবিভাগ নিরলসভাবে সব দায়িত্ব পালন করে। 

কথিত আছে কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গেও জড়িত ছিল এই বহু প্রাচীন ডাক ব্যবস্থা। শোবাবাজারে নবকৃষ্ণ দেবের বাড়ির দুর্গাপুজোর সময় রুপোর তবক এসেছিল জার্মানি থেকে, ডাকযোগে। সেই থেকেই নাকি ‘ডাকের সাজ’ কথাটা চালু হয়। সত্যি মিথ্যে বিচারের ভার অবশ্যই ইতিহাসের। তবে ডাক ব্যবস্থা যে ভারতীয় তথা বাঙালি সংস্কৃতির এক অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ, সে বিষয়ে কোনও দ্বিমত করার জায়গা নেই এই ইন্টারনেটের রমরমার যুগেও।

* তথ্যঋণ: 
দ্য পোস্ট অফিস অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস স্টোরি – বি ক্লার্ক, ফরগটেন বুকস
পিজিয়নস টু পোস্ট বাই স্টার্ভ বোর্জিয়া – ইনডেকো লেজ়ার
দ্য উইন্ডন এম ব্লাইন্ট ডাক ইতিহাস সিম্পোসিয়া- ক্রমিক নাম্বার- ৫৫ – থমাস এড, লেরা
এনশেন্ট হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া, ভলিউম ২

 

বিতস্তার জন্ম ১৯৭৩ সালে। স্কুলের পর স্কটিশ চার্চ কলেজে স্নাতকের পড়াশোনা। লেখালিখি, পত্রিকা সম্পাদনার প্যাশন বরাবরই। বর্তমানে 'অনুবাদ পত্রিকা' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ভাষা সংসদ নামে প্রকাশনা সংস্থা চালান। প্রকাশিত বই - এলোমেলো গদ্যের খসড়া, সনাতনী রিকশার উৎস সন্ধানে, বাঙালি নারীর সার্কাস অভিযান ইত্যাদি।

One Response

  1. তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ। ব্রিটেনের প্রথম যুগের ডাক সংগ্রহের খবর দেওয়া দরকার। তখন গ্রামের সাপ্তাহিক হাটের দিন ডাকপিওন হাজির হয়ে প্রাপকের হাতে চিঠি তুলে দিত। একই সময়ে প্রেরকের কাছ থেকে মাশুল সহ চিঠি সংগ্ৰহ করে ঝোলায় ভরে নিত। অনেক পরে শিল্প বিপ্লবের সময় পাড়ায় পাড়ায় ডাক বাক্স বসানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com