বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় (Holi) মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির দিয়ে পুজো করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।

দোল গোটা দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয়। হোলির (Holi) আগের দিন হোলিকা দহন দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়।
ময়দাতে ময়ান দিয়ে মেখে তার ভেতরে খোওয়া ক্ষীর, ড্রাই ফ্রুটস, গুঁড়ো চিনি ইত্যাদি দিয়ে পুলি পিঠের আকারে গড়ে তাকে ঘি-তে ভেজে, চিনির সিরায় ভিজিয়ে তৈরি হয় গুজিয়া নামের এই বিশেষ মিষ্টি।
আর ঠান্ডাই হল এক অসাধারণ শরবত, যা বানানো হয় দুধ, পেস্তা, বাদাম, মৌরি, গোলাপ পাপড়ি, পোস্ত দানা, এলাচ, চারমগজ ইত্যাদি দিয়ে, অনেক সময় এতে ভাঙও মিশিয়ে দেওয়া হয়।
আমাদের দেশের নানান প্রান্তে হোলির অনেকদিন আগেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়, শুরু হয় নানান খাবার বানানো। উত্তর ভারতে যে দুটি খাবার ছাড়া হোলি অসমাপ্ত তা হল— গুজিয়া আর ঠান্ডাই।
এই দুই খাবার ছাড়াও হোলিতে সমগ্র উত্তর ভারতে তৈরি হয় দহি ভল্লে— তুলোর মতো নরম বিউলি ডালের ভাল্লা মেশে ঘরে পাতানো দই তে, আর তাতে দেওয়া হয় নানান ধরনের চাটনি আর ভাজা মশলা।

এ তো গেল উত্তর ভারতের কথা এইবার বলি মহারাষ্ট্র-এ কী কী হয় হোলির দিন। সেখানে হয় পুরন পোলি। এটা আসলে ঘিতে ভাজা মিষ্টি পরোটা, যাতে থাকে ছোলার ডাল আর গুড়ের পুর। ভারি সুস্বাদু এই খাবার প্রায় সব বাড়িতে ওইদিন হবেই। কর্নাটক, গোয়াতেও হোলিতে এই পদটি বানানো হয়।
আরও পড়ুন- মা-ঠাকুমার হেঁশেলের বৈশাখী রান্না
রাজস্থান জুড়ে হোলিতে (Holi) হয় ক্ষীরের মালপোয়া, মালপোয়া বানিয়ে তার উপর রাবড়ি দিয়ে পরিবেশন করা হয় সেই সুস্বাদু পদ।
ঢুসকা, তৈরি হয় চাল, ডাল বেটে অনান্য মশলা মিক্স করে পাকোরার মতো। বিহার, ঝাড়খণ্ডে হোলিতে অতিথি এলে চায়ের সঙ্গে এই ঢুসকা পরিবেশন করা হয় জলখাবারে। আবার কাঁঠাল বা ইঁচড়ের তরকারি আর লুচি হয় হোলির দিন দুপুরের খাবারে।
সবচেয়ে আশ্চর্য এক খাবার হোলিতে বানানো হয় আসামে, যার নাম ‘রাঙা ডিম’, ডিম সেদ্ধ করে তাতে লংকা গুঁড়ো আর অন্যান্য মশলা মিশিয়ে ভাজা হয়, যা কিনা রঙের উৎসবে আরও রং যোগ করে।

পুরোন পোলি
উপকরণ-
১ কাপ ছোলার ডাল ( ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে)
১/২ চামচ শুকনো আদা গুঁড়ো
১ চিমটি জায়ফল গুঁড়ো
১/২ চামচ মৌরি গুঁড়ো
১/৪ চামচ এলাচ গুঁড়ো
১/২ কাপ গুড়
প্রণালী- ডাল ভিজিয়ে রেখে তা কুকারে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
একটা প্যানে ১ চামচ ঘি গরম করে তাতে আদা গুঁড়ো ও অন্যান্য সব দিয়ে নাড়তে হবে। গুড় একটু পাতলা হলে দিতে হবে সেদ্ধ ডাল, তারপর সব টেনে শুকিয়ে গেলে, ডাল আর মশলা সব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
আটা মাখতে হবে নুন আর ঘি দিয়ে হালকা গরম জলে।
আলু পরোটার পুর ভরার মতো ছোলার ডালের পুর ভরে পরোটা বেলে ঘিতে সেঁকে নিতে হবে।

দহি ভাল্লা
সাদা বিউলির ডাল ২ কাপ (৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা)
এই ডাল ১ ইঞ্চি আদা আর নুন দিয়ে মিক্সারে বেটে নিতে হবে।
তারপর একে ফেটাতে হবে বড়ির ডালের মতো। মেশাতে হবে ১/২ চা চামচ বেকিং সোডা।
কড়াইতে লুচি ভাজার মতো তেল গরম করে এই ফেটানো ডালের রসোগোল্লার সাইজে বড়া ভেজে নিয়ে তা হালকা গরম জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
পরিবেশনের সময় একটা পাত্রে এই বড়া দিয়ে তার উপর ফ্রিজের ঠান্ডা টক দই, চাট মশলা, তেঁতুল খেজুরের মিষ্টি চাটনি, লংকা গুঁড়ো, বেদানা ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। চাইলে ভাজা কাজু, ধনেপাতা পুদিনাপাতার চাটনিও দিতে পারেন।
*ছবি সৌজন্য: লেখক, Freepic
নিবাস গুরগাঁও। পেশায় বাবুর্চি। নিয়মিত রান্না বিষয়ক লেখালেখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এছাড়া স্কুলছুট বাচ্চাদের স্কুলে ফেরানোর কাজ করেন শমীতা।
3 Responses
Samita is a gem of a person, a true social worker. Salute you for who you are! 🫡♥️
Samita is a gem of a ‘human’, a true social worker and a self groomed social reformer! I salute YOU for who you are 🫡♥️
Khub bhalo legeche mam.