banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আইঢাই: ‘হাড় ভাঙা বিশ্রাম’

মন্দার মুখোপাধ্যায়

এপ্রিল ১৭, ২০২০

Illustration by Mandar Mukherjee
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

না, এমনটা ভাবতেও পারতেন না সেই সেকালের গিন্নিরা, যা করে দেখাল এই বারফট্টাই এবং হট্ট চট্ট করে বেড়ানো এ যুগের মেয়েরা। এ তো শুধু ঘরে বা পাড়ায় নয়, সারা বিশ্ব জুড়ে। চিরচেনা শব্দ – বনধ বা হরতাল বা লক আউট নয়। ‘Lock Down’। প্রথম কয়েকটা দিন বেশ চুপি চুপি ছুটি উপভোগ। এটা ওটা রান্না করেই ফেসবুক আপডেট। দড়াদ্দম ইউটিউব দেখে দেখে কখনও ফ্রেঞ্চ, কখনও গোয়ানিজ আবার কখনও বাটি চচ্চড়ি। বিরিয়ানি, পাস্তা, কাবাব তো বাঁ হাতে বানিয়ে ফেলার মতো অনায়াস। তো ১৭ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত যাঁরা যে কাজই করুন, মূলত ওয়র্ক ফ্রম হোম-এর সঙ্গে হোম-ওয়র্ক, বেশ একটা জমজমাট তালগোল পাকানো অবস্থা। আকালের গন্ধ গিন্নিরা একটু আগেই পায়। তাই রসদ জমানো কিছুটা শুরুও করে দিয়েছিলেন। আবার নিয়মিত বেরনো না থাকায় এবং কাজের মাসিদের আসা যাওয়া বজায় থাকায় বেশ একটু ফুরফুরে ভাবও।

২২ মার্চ সারা ভারত জুড়ে লকডাউন-এর সরকারি আবেদন ওঠায় রবিবারটা বেশ অভিনব মনে হল। বড়দের আড্ডা, বাচ্চাদের খেলা সব বাড়িতে। Stay Safe – Stay Home। সকাল থেকে পর্বে পর্বে খেয়ে, গড়িয়ে, কাঁসি বাজিয়ে সবাই যখন ভাবছে, যাক – এবারের মতো, “করোনা”ও গত – তখনই মোক্ষম ঘোষণা! এ মাস তো বটেই, আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব বন্ধ এবং গৃহ-বন্দিত্ব একেবারে বাধ্যতামূলক। এইবার কোমর বেঁধে যুদ্ধে নামল মেয়েরা। মানে মেয়েরাই। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও বোধহয় মেয়ে বলেই একেবারে সরাসরি পথে নেমে পড়ে, ঘেঁষাঘেঁষি রুখতে, নিজে হাতে লক্ষ্মণরেখা আঁকলেন। আর আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম, তপন কী করে এমন নিমেষে বাথরুম সাফ করে! একঘণ্টার মধ্যে পুতুলই বা কী করে ঝপাঝপ টবের গাছে জল দেওয়া সমেত, মেজে, ধুয়ে, মুছে – ‘মাসিমা যাচ্ছি!’ আর মঙ্গলাই বা কী করে দু’বেলার রান্না, জলখাবার, ফলকাটা, গ্যাস মোছা ঝটপট দেড় ঘণ্টায় সেরে, প্রতিদিন – ‘চলে গেলাম গো!’

এই করোনার শুরুতেই ঘটকবাড়ি আলো করে জন্ম নিল ফুটফুটে একরত্তি এক মেয়ে। তখনও আমাদের অভ্যেস হয়নি করোনা-কানুন মেনে বাড়িতে থাকা বা এক হাত দূরত্ব বা মাস্ক-গ্লাভসের আয়োজন। দিন সাতেক পরে বাচ্চা যখন বাড়ি এল সে এক কঠিন দম-ফাঁস। দিনরাতের আয়া তো দূরস্থান, রোজকার কাজেরই কোনও লোক নেই। ভাগ্যিস ওই বাড়িতে কোনও অসুস্থ বা শয্যাশায়ী মানুষ নেই। যতদূর সম্ভব দরকারি জিনিসপত্র মজুত করে দোর দিল সকলে। ষাট বছরের ঠাকুরদা হাল ধরলেন হেঁশেলের, কারণ তিনি রান্না ভালোবাসেন। চুয়ান্ন বছরের আহ্লাদি ঠাকমা, নিজেকে অক্লান্ত সঁপে দিলেন কাচাকুচি ধোয়াধুয়িতে। সদ্য বাবা হওয়া গদগদ যুবক ঝাঁড়মোছ এবং আরও যাবতীয় যা যা দৌড়ঝাঁপ, হেঁকা-দমকা ছোটাছুটি। আর সাবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ব্যথা, সেলাই, ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে রই রই করে উঠে পড়ল নতুন মা। হাত লাগাল, রয়ে বসে যেটুকু যা করা যায়। একটা বাচ্চার জন্মলগ্নেই আলস্য মুছে গিয়ে শুরু হয়ে গেল সক্রিয় সহযোগ। যা যা প্রতিদিনের আক্ষেপ ছিল – রান্নার স্বাদ এবং তার নিয়ে, সাফসুতরো নিয়ে, ব্যস্ততায় পরস্পরকে কাছে না-পাওয়া নিয়ে, লম্বা সময় আর কাটে না বলে হ্যাজানো আড্ডায় অযথা সময় খরচ করে – সব যথাযথ করে দিল বাধ্যতমূলক ঘরে থাকায়, ঘিরে থাকায়। এক অভিনব ‘হাড় ভাঙা বিশ্রামের’ ঠেলায়। 

আর লাহিড়ি বাড়ির সঙ্কটেও দেখলাম, আর এক গিন্নির ভূমিকা। অবসরপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রীর সাজানো সংসার। একমাত্র ছেলে তার বউ নিয়ে আপাতত প্রবাস থেকে বিদেশে। তিনজন কাজের লোকই সব সামলে দেয়। তবে, কর্তাটির ডায়ালিসিস চলে সপ্তাহে তিনদিন। বাড়ি থেকে সামান্য দূরেই হাসপাতাল। করোনা বন্ধে ড্রাইভার সমেত সব কাজের লোকেরই আসা বন্ধ হয়ে গেল। গিন্নিটি শান্ত ভাবে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার, বাজার দোকান – এসব করেই নিয়ম করে ডায়ালিসিসে নিয়ে যাচ্ছেন স্বামীকে। হাসিমুখে আট ন’ঘণ্টা হাসপাতালে বসে থেকে অসুস্থ মানুষটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন, কখনও মধ্যরাতেও। হাসপাতাল ডিউটি শুনে বেশির ভাগ ড্রাইভারই আসতে চাইছে না। পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা এগিয়ে এসে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে আসছেন সহৃদয় প্রতিবেশী বন্ধুটিও। আর চরম সহনশীল গিন্নিটি শান্ত থেকে ভাবছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। মজা করে মেসেজ পাঠাচ্ছেন – এখন আমার নাম ‘সু-আ-রা’ ( সুজাতা, আরতি, রাজেশ)। সুস্থতা আর অসুস্থতার এক অদ্ভুত সমাবেশ।   

বটব্যাল বাড়ির গিন্নিকেও দমানো মুস্কিল। তাঁর বর অবশ্য নিজেই ড্রাইভ করে ডায়ালিসিস করে আসেন। ডাক্তারি পড়া ছোট মেয়ে কাছে আছে। বড় মেয়ে বিদেশে। পাশেই থাকেন নব্বই-পার বাবা এবং মা। বাবা ক্যানসার রোগী। তাই ক্রমাগত দু’জন ভারি রোগীর জন্য লাইন দিয়ে এবং দোকানে দোকানে ঘুরে ওষুধ জোগাড় এবং সব কাজ সামলে এই অনিশ্চয়তায় ভরসার বন্দোবস্ত করা। তার মধ্যেই সে খোঁজ পাঠাচ্ছে কোথায় কোথায় সরকারি মাছ পাওয়া যাচ্ছে, বা তার কোন কোন গাছে কী কী ফুল ফুটল। কখনও আবার আমার পছন্দের কোনও গানও দু’লাইন ভয়েস রেকর্ডে গেয়ে। এই কিছুদিন আগেও তার মনে হচ্ছিল, সব কিছু ঠিকঠাক চালিয়েও হাতে অঢেল সময়, তাই একটা গিফট বুটিক শুরু করলে কেমন হয়! এখন নিজেকে সামলে, অন্যদের সামলে সে নিজেই এক সময় এবং অসময়ের যোগফল এবং একাই একশো। এই অসময়ে বাকি সকলের ভরসাস্থল।

আর, চৌষট্টি পার করা অবসরপ্রাপ্ত ধর গিন্নি! মেয়ে বিদেশে, আবিবাহিত ছেলে সঙ্গে থাকে। বাতের ব্যাথায় জবজবে। জানলায় দাঁড়িয়ে দু’দণ্ড কথা বলতেও ত্রাহি ত্রাহি। মালি এসে টবে জল দেয়। বাজার, রান্না, ঘরের কাজ সবই, ট্রেনে করে আসা দু’টি তোলা লোক নির্ভর। আর সে লোকেরা না এলেই, হোম ডেলিভারি। বারান্দায় মেলা কাপড়ও অন্তত তিন দিন শুকিয়েও ঝুলতে থাকে। বেলা করে ঘুম থেকে উঠে, টি.ভি সিরিয়াল রিপিট-সহ দেখে দেখে, গুছিয়ে গড়িয়ে কাল কাটানো এক ঝামেলার শরীর। লকডাউন তো আর একদিনের বন্ধ নয়! এখন ছেলেই বাজার দোকান সব করছে, আর ঘরে বসে অন লাইন কাজ করতে করতেই সে শুনছে, নানা টুং টাং আর খুট খুট – মা  কাজ করছে। ঝন ঝন শুনলেই ছুটে যাচ্ছে। না, মা নয় বাসন পড়েছে। মাথা ঘামিয়ে, একদিকে সেই ছেঁচকি, বাটি চচ্চড়ি, ঘন্ট, ছ্যাঁচড়া, অম্বল, পায়েস; আর অন্যদিকে কেক, পুডিং, ফ্রুট স্যালাড, রোল,‌ আর নানা রকম বেকড পদ। ছেলে ভাবছে, ঠিক যেন তাদের সেই ছোটবেলার মা। অফিস করেও রোজ তাদের দু’ভাই-বোনের পছন্দের এটা সেটা। পুরো ফ্ল্যাট জুড়ে ঘুরঘুর করছে না মেলা হিসেব। ভুলে যাওয়া আর মনে পড়ে যাওয়ার এক অদ্ভুত লুকোচুরি। 

তবে সাহা বাড়ির ছবিটা একটু আলাদা। ছ’জনের যৌথ পরিবার এবং একজন রাতদিনের কাজের মাসি-সহ সবাই সিনিয়র সিটিজেন। এ বাড়ির দুই ছেলেই সপরিবার বিদেশে। রান্না এবং ঝাড়া মোছার তোলা কাজের লোক আসছে না। পাঁচটি বাথরুম-সহ ওই তিনতলা বাড়ির ঘর, বারান্দা, ছাদ, সিঁড়ি পরিষ্কার রাখা কি মুখের কথা! তবে, সে বিষয়ে আলোচনায় খুব উৎসাহ দেখলাম না তাদের। গর্ব এই যে, বাড়ির দুই কত্তাই প্রতিদিন জ্যান্ত মাছ এবং শাকসবজি বাজার করে আনছেন। করোনা-পূর্ব সময়ের মতোই এবেলা ওবেলা পাঁচ পদ রান্নাও হচ্ছে, এক তরকারি দু’বেলা রিপিট খাওয়ার অভ্যেস নেই বলে। না মাস্ক, না গ্লাভস। তেলাপিয়া, বাটা, চারাপোনা, কই এবং পুকুরের মাগুর সবই গলে যাচ্ছে নাকের তলা দিয়ে। ঠাকুমার বলা সেই শ্লোক মনে পড়ছে – “খাওয়া ধ্যান, খাওয়া জ্ঞান, খাওয়া চিন্তামণি!”

তবে, একেবারে বদল ঘটে গেছে আমার ঠিক পাশের ফ্ল্যাটটিতে। ভাড়া থাকেন, তাও সব সময়ের জন্যে নয়। মুম্বই থেকে মাঝে মাঝে থাকতে আসেন, সম্পত্তি নিয়ে কলকাতায় কী একটা মামলা লড়তে। কত্তাটি হাসি মুখ, ছিপছিপে এবং সচল হলেও গিন্নিটি গোমড়া এবং হাঁটা চলায় আরথ্রাইটিসে বেশ কাবু। ঘর-বসতের সামান্য আয়োজনটুকুও নেই, কাজের মেয়ে তো দূরস্থান। জল থেকে শুরু করে সারাদিনের খাবার, প্রস্থে প্রস্থে হোম ডেলিভারি। আর কাক চিল বসতে পারে না, দু’জনের ঝগড়া এবং চিৎকারে। আর তা প্রায় প্রতি ঘণ্টার ইন্টারভ্যালে। এমনও হয়েছে যে চিৎকার থামাতে, চুপি চুপি বেরিয়ে ওই ফ্ল্যাটে বেল দিয়ে, আবার সুড়ুৎ করে নিজের গর্তে ঢুকে পড়েছি। এ বার এই আকালে আশ্চর্যজনক ভাবে ঝগড়া স্তব্ধ, কারণ বাড়িতে রান্না হচ্ছে। বাইরে থেকে কেনা জল ছাড়া আর কোনও মনিষ্যিই তাদের দুয়োরে আসছে না। কত্তা মাঝে মাঝেই ব্যাগ ভরে বাজার করছেন আর একটুও ব্যাজার না হয়ে, হাসি মুখে দরজা খুলছেন গিন্নি। এমনকি আমারও কুশল জানছেন। সবচেয়ে মজার এই যে, চোখ গোল গোল করে দেখা হলেই বলছেন, এখন থেকে এখানেই থাকব, আর বাবা মুম্বই যাচ্ছি না। কাজেই করোনা প্রকোপে বেতো গিন্নিও উঠে দাঁড়িয়ে সবলে হাল ধরলেন এবং ঝগড়া ভুলে হাসিমুখ অভ্যর্থনায় ভরেও দিলেন শুধু নিজের কত্তাটিকেই নয়, ফ্রি গিফট হিসেবে প্রতিবেশীদেরও। 

যে হাউজিং এস্টেটে থাকি, সেখানে দু’দিকের দু’টো গেটই বন্ধ। একমাত্র আওয়াজ – মাঝে মাঝে ঘণ্টি নেড়ে সাইকেল ভ্যানে, গ্যাস দিতে রঞ্জন। ঝাড়ু দেওয়ার সুবলদা আর সিকিউরিটি ছাড়া সব সুনসান। সুবলদার সাহায্যকারী ছেলেরা কেউ আসছে না। এই ছড়ানো ক্যাম্পাসটা একা একাই ঝাড়ু দিয়ে আবার বাড়ি বাড়ি ময়লা নিতেও সে একাই আসছে। যে রাস্তা জুড়ে সকাল থেকে বিকেল অবধি শুধু গাড়ির হুশ, জোরালো হর্ন আর বাচ্চাদের খেলে বেড়ানোর শোরগোল, সেখানে ফাঁকা পেয়ে, নিশ্চিন্তে হেঁটে বেড়াচ্ছে শালিখ, চড়ুই, ঘুঘু। লুটোপুটি খাওয়া ছুটে বেড়ানো বেজির দল আর কাঠবিড়ালি, গাড়ি বন্ধ হয়ে প্রাণ যাওয়ার ভয় নেই বুঝতে পেরে, ছানাপোনা সমেত অগাধ আনন্দে। কাক আর গুচ্ছের পায়রার গুলতানি ছাপিয়ে বারান্দার গ্রিলেও টুনটুনি, দোয়েল, বুলবুলি। এমনকি ফুড়ুৎ করে ক্বচিৎ, একজোড়া হাঁড়িচাচাও। আর কোকিল-ডাকের সঙ্গতে কত অজানা পাখির শিসে, সূর্য উঠবার আগেই, কার্নিশে ঠিকরে পড়া, একফালি ভোরের আলো। যেখানে প্রায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা এম্বুলেন্স আসতই, আর ফুল মালায় সাজানো কাচের গাড়ি বেরত, সেখানেও চরম ভাঁটা পড়েছে। যে সব বয়স্ক আর বিছানা-নেওয়া মানুষদের কত কাল আর বারান্দার ধারে-পাড়ে দেখিনি, তাদেরও দেখতে পাচ্ছি, কেমন ইজি চেয়ার বা হুইল চেয়ারে এনে বসানো। টিভির উচ্চকিত আওয়াজের বদলে, ঘরে ঘরে প্রেশার কুকারের হুইসিল, ছাদে মাদুর পেতে বিকেলের গপ্পো। সূর্যাস্তের ছবি তুলে ফেসবুক পোস্ট। বারান্দার গাছে জল দেওয়া। না হোক ভাদ্র, চৈত্রের রোদেই হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে, তোলা শাড়িতে রোদ খাওয়ানো। বারান্দায় গুছিয়ে বসে বই পড়া। ছেলে মেয়ের ভেদ নেই। মায়েদের সঙ্গে বাচ্চা এবং বরেরাও। তারই মধ্যে কোনও কোনও জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, ল্যাপটপের সামনে বসে গিন্নির ঘড়ি ধরে চুটিয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম এবং এক কাপ চা এনে বর পাশে রেখে গেল। আয়ামাসিদের বদলে এ বারান্দা থেকে ও বারান্দায় কর্তা গিন্নিদের গপ্পো। বারান্দা, ঘর সব আলো ঝলমল, একসঙ্গে বসে খাওয়া, হাতে হাতে ভাগ করে কাজ আর ঘরে থাকা। কাজের মাসি, আয়া মাসি, ড্রাইভার ভাই, সব লকডাউন, তবু বয়স্কদের দেখভাল, বাচ্চাদের ভুলিয়ে রাখা এবং সংসার সামলে আবার ওয়ার্ক ফ্রম হোমও। সুস্থ  শরীরে বাড়িতে থাকার অভ্যেস কতকাল চলে গেছে! অভ্যেসে নেই এত রকমারি ঘরের কাজ প্রতিদিন করা। কিন্তু হয়েও যাচ্ছে, চলেও যাচ্ছে। আর না-খেয়েও কেউ বসে নেই। তার ওপর, স্নান সেরে গিন্নি কাপড় মেলছেন আর কত্তা সেগুলি ঘরে তুলছেন। হাতে হাতে, একসঙ্গে!

এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম ব্যাপারটা একেবারে ম্যাজিক হয়ে এল আমার কলেজ সহকর্মীদের কাছে। কেটে, বেছে, রেঁধে, বেড়ে, বাসন মেজে, বাচ্চা সামলে প্রথম সপ্তাহেই সবাই যখন ‘মরে গেলাম, মরে গেলাম’ আর্তনাদে আকাশ  ফাটাচ্ছে, সেই সময় প্রিন্সিপালের অনুরোধ এল, স্টাডি মেটেরিয়াল আপলোড করবার। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম যে, সবাই একেবারে ঝঁপিয়ে পড়ল আনন্দে। ঝপাঝপ আপডেটে ছেয়ে যেতে লাগল, কার কতটা এগলো। বাড়ির লোকের খাই খাই আবদার কমল, বাচ্চারাও দেখল, যে মা পড়াশোনা করছে। আর গুরুজনেরা দেখলেন যে, সেই জপের মালার মতো মোবাইল যন্ত্রটাও আর যখন তখন মেয়ে বউদের হাতে নেই। এটা যে একটা যুদ্ধকালীন সময় এবং তা কখনই যে নেয়ে খেয়ে আরাম করে বইয়ে দেবার নয়, বাড়ির লোকেদের তা বোঝানোর সুযোগ এনে দিল, কলেজ ওয়েবসাইটের গ্রিন ক্যাম্পাস পোর্টালে ডিজিটাল লেকচার। চাকরি করা দিদিমণিরা যে বাড়ি বসে পড়া তৈরি করছে তাই নয়, ঘরও সামলাচ্ছে এক কঠিন পরিস্থিতিতে। অনলাইন পেমেন্ট, জরুরি পরিষেবার খোঁজ ছাড়াও চলছে, একটা আবশ্যিক রুটিন মাফিক কাজ – ঘরে এবং বাইরে। আর আমাদের অধ্যক্ষ, তাঁর সঙ্কট! নিজের পরিবারের সঙ্গে এই এতবড় কর্মস্থলের এতগুলি মানুষের কথা ভাবা! মাথা ঠান্ডা রেখে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে, একের পর এক ধাপ, কত সাবধানে পার হতে হচ্ছে তাঁকে। মার্চ মাস – ইয়ার এন্ডিং, সকলের আর্থিক নিরাপত্তা যা তাঁর একার দায়িত্বে। তিনি এসব সামলাচ্ছেন বলেই আমরা নিশ্চিন্ত বোধ করছি। আনুষ্ঠানিক পদে থেকে নিয়মমাফিক এক সার্বিক দৃষ্টি নিয়ে এই লড়াই যে কত কঠিন! সত্যি সত্যিই ব্যক্তিগত নাওয়া খাওয়ার চিন্তা মাথায় ওঠার অবস্থা। চাকরি করা মেয়েদের এই বিপুল দায়িত্বজ্ঞান দেখে বলতে ইচ্ছে করছে যে, যারা চুল বাঁধে, তারা তাহলে রাঁধেও। আসলে মেয়েরা বোধহয় সত্যিই পারে এবং সবটাই পারে, একেবারে সাপটে ধরে – আদরে, সোহাগে, কিলিয়ে গাঁতিয়ে।

ফোনে খবর নিচ্ছিল আমার মালিশের মেয়ে রানি। গত কুড়ি বছর, সপ্তাহে একবার, একটা নির্দিষ্ট দিনে সে আসে। এই ওড়িয়া মেয়েটি আক্ষরিক অর্থেই দু’টি ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা। কঠিন পরিশ্রমে সবে দাঁড়িয়েছে। এখন তার ছেলেটি এম.এস.সি পড়ছে, আর মেয়েটি সবে এম.এস.সি পাশ করে, চাকরি খুঁজছে। উদয়াস্ত খেটে সে তিনজনের সংসার চালায় এবং অতি কষ্টে কেনা একটি ফ্লাটের ই.এম.আই দেয়। মাইনে করা কাজ নয়। কাজ ভিত্তিক পারিশ্রমিক। এবার সব বন্ধ মানে তার কাজও বন্ধ। ঘরের সব কাজ সে তো এমনিই প্রতিদিন করে, ফলে এটা তার কাছে নতুন কোনও খাটুনি নয়। কিন্তু দিনে বারো ঘণ্টা খেটে যার রোজগার খুব বেশি হলে মাসে তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ, সে কী করে চালাবে? তার তো সবেতন ছুটি নয় এবং ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এও তো ওর চলবে না। আমারই যেন মাথায় হাত। কেমন আছিস, এ আর জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না। বলল, ‘এখনও খাবার আছে, আর কেজি খানেক মুড়ি কিনে রেখেছি, কারণ ওটা জল চিনি দিয়ে খেলেও পেট ভরে।’ রানি আমার মেয়ের থেকে কত আর বড়! 

আর আমার মেয়ে, সম্প্রতি ছেলে নিয়ে মুম্বইবাসি। তাদের লকডাউন আমাদের এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়ে গেছে। তার রাতদিনের মেয়েটি-সহ তাদের তিনজনের জন্য ক্রমাগত খাবার সংস্থান। সেই সঙ্গে ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুধু তারই নয়, ছেলেরও। তার ইস্কুল পড়া, ম্যামের পড়া, পিয়ানো এবং আঁকার ক্লাসও ঘরে বসে, ঘড়ি ধরে। মা ছেলের তাই ল্যাপটপ ভাগাভাগি করে সময় নিয়ে এক চরম টানাটানি। মেয়ে বলছে, চাল-ডাল–ডিম-মাখনের সঙ্গে আর একটা বাড়তি ল্যাপটপও মজুত রাখা উচিৎ ছিল। প্রথম দিন থেকেই রান্না ঘরের হাল সে নিজে ধরেছে বলেই, কাজের মেয়ে গীতা বাসন মাজা, ঘর ঝাড়ামোছা একটু বিশ্রাম নিয়েও করতে পারছে। মন ভাল রাখতে কত যুগ পর আবার মেয়ে ছবি আঁকছে আর রান্না করছে! এই বদলে যাওয়া এবং সবসময় বাড়িতে থাকা মা-কে কাছে পেয়ে, ছেলে ঠিক বুঝতে পারছে না, এটা ভাল না খারাপ! 

আর আমার এক বছর আগে ছেড়ে যাওয়া ড্রাইভার সুদীপ, যে এখন স্বাধীন ভাবে ট্রাভেলের গাড়ি চালায়, তারও তো রোজগার সম্পূর্ণ বন্ধ। তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে প্রথম দু’জনের এই একই পেশা, ভাড়ায় গাড়ি চালানো। তাই তাদের রোজগারও ভাল। তাদের ছেলে এবং মেয়ে দু’জনেই বেশি মাইনের ইংলিশ মিডিয়মে পড়ে। দু’জনের দুটো বাইকও আছে। তবে, ছোট ভাই তুলনায় গরিব, পাড়াতেই কিছু একটা করে। তার সামান্য রোজগারে, সে তাই বাবা মায়ের সঙ্গেই বউ মেয়ে নিয়ে থাকে। বড় দুই ভাই, একই বাড়িতে ঘরে ঘরে, যে যার মতো আলাদা। মা, চম্পাহাটি থেকে রোজ ট্রেনে করে এসে কলকাতায় দু’বাড়ি রান্না করে, তা আজ প্রায় তিরিশ বছর। আর তার বরও এক সঙ্গেই এসে খান দশেক গাড়ি ধোয়। এভাবেই তারা একটুকরো জমি কিনে ঘর বেঁধে, কলকাতার বস্তি ছেড়ে, তিন ছেলেকে সংসারে থিতু করেছিল। বাড়িও তারই নামে। কিন্তু এক হাঁড়ির সংসার ধরে রাখতে পারেনি। আজ এই সঙ্কটে, তিন ছেলেই বসে গেছে। তাদের বউরাও মায়ের মতো রোজগেরে নয় কেউই। ফলে, আলাদা করে দেওয়া ওই বয়স্ক বাবা এবং মা, ওই দু’জনেরই এখন শুধু সবেতন ছুটি। কলকাতার যে যে বাড়িতে তারা কাজ করে, সে সব বাড়িগুলো থেকে আগাম টাকাও পেয়েছে চাল ডাল কেনার। আর ওই গরিব ছোট ভাইয়ের মেয়ে, সরকারি ইস্কুলে পড়ে বলে, চাল-ডাল-আলু পেয়েছে মিড-ডে মিল বাবদ। রোজগেরে দুই ছেলেদের কাছে বোকা, ঠকে যাওয়া মা আরতিই কিন্তু, সব ভুলে আবার হাল ধরেছে সংসারের। বড় হাঁড়ি, বড় কড়া সব টেনে নামিয়েছে মাচা থেকে। একবেলা গরম, আর একবেলা জল ঢালা ভাত – দুর্দিনে তার এই বাঁটোয়ারা মেনেও নিয়েছে সবাই। আর তিনজন নাতি, নাতনি বাবা-মায়েদের নিষেধ পেরিয়ে আবার দাদুর কোলে পিঠে। আরতির মতো এমন দুর্গতিনাশিনী মাকে চিনতেও এত বড় একটা বিপদে পড়ার দরকার হল ছেলেদের! 

আর আমার পরিচারিকা পুতুল ফোন করে প্রায়ই আমার খোঁজ নিচ্ছে এবং হাউজিং লাগোয়া থাকে বলে, নানা ছুতোয় কাজেও আসতে চাইছে। একদিন টুক করে এসেও পড়ল, গেঞ্জি কাপড়ের একটা মাস্ক মুখে না লাগিয়ে, রুমালের মতো কোমরে ঝুলিয়ে। ওকে দেখে, আমিই তড়িঘড়ি একটা বড় ওড়নায় নিজেকে ঢেকে ব্যান্ডেজ ভূত সাজলাম। জোর করে ঝাড়ুমোছাও করে গেল। ঝকঝকে মাজা বাসন আর তকতকে রান্নাঘর দেখে, শুকনো মুখে জানতে চাইল, নতুন কাকে রেখেছি! আমি ঘোমটার আড়াল থেকে, দেয়ালে টাঙানো আমার একটা ছবির দিকে আঙুল তুলে, ইশারায় দেখালাম। যাই হোক, তার ওয়র্ক ফ্রম হোম মানে আপাতত এক ব্যাপক ছুটোছুটি। খবর পেলেই নানা জায়গায় লাইন দিয়ে দিয়ে কখনও রেশন, কখনও সরকারি দামে ডিম বা সবজি, কখনও আবার অন্য কিছু সংগ্রহ সে করেই চলেছে। ছেলেকে বেরোতে দিচ্ছে না। যদি মারধোর খায়! আর বউকেও রাঁধতে দিচ্ছে না, যদি বেশি খরচ করে বসে! আশপাশের ঘরে যখন জমিয়ে বিরিয়ানি, রোল, ডিমের ঘুগনি বা পেঁয়াজি – পুতুলের ঘরে তখন হয় মাছভাজা-ডাল-ভাত, না হয়তো ডালের বড়া দিয়ে জলঢালা ভাত, বা গরম গরম খিচুড়ি। অথচ পুতুল এবং তার ছেলে দু’জনেই কিন্তু সবেতন ছুটিতে আছে। তবু, পুতুলের গৃহিণীপনায় কুড়িয়ে কাঁচিয়ে চলার সাবধানতা। আরও খারাপ সময় যদি আসে! এই সংযমই ওর প্রকৃত বুদ্ধি আর এটাই ওর গিন্নিপনা। 

আমার কথা কী আর বলার! বিষণ্ণতা, উদ্বেগ আর কায়িক পরিশ্রম মিলেজুলে সে এক খিচুড়ি। সম্পন্ন আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু, ছাত্রী, পরিচিত – যারা ধনীতম দেশে বিলাস ব্যসনে থেকেও চিকিৎসা সঙ্কটে আজ বিপন্ন এবং এই পৃথিবীজোড়া লকডাউনে আটকা পড়ে গেছে নানা প্রান্তে, তাদের কথা মন থেকে সরাব কী খেয়ে, আর কোন লেখা লিখে বা কিসের ছবি এঁকে! তার ওপর, যখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, তখনই ফোন বাজছে। যখনই নতুন কিছু লিখব ভাবছি, কোর্স টাইপে সময় যাচ্ছে। দুধ বসিয়ে ভুলে গিয়ে কনডেন্সড মিল্ক বানানো শিখছি। আর প্রায়ই ভাবছি, সেই ‘জিলিপি আনলে বেশ হয়, তবু জিলিপি আনতে যাব না।’ পুতুল আর আরতির ধরনটা রপ্ত করে, একবেলা গরম আর একবেলা ঠান্ডা। আর জলখাবারে চিঁড়ে, ছাতু বা মুড়ির ফলার। থেকে থেকে টানা চায়ের মাঝখানে এক গ্লাস লেবুর জল। তাতে পরিশ্রম কম এবং পাঁজা পাঁজা বাসন মাজার হাত থেকে মুক্তি এবং পেট বিগড়োবার ভয়ও কম। বাবার শেখানো মনে করে সাবান জলে জল ধোয়া এঁটো বাসন ডুবিয়ে রেখে, স্পঞ্জ দিয়ে পরিষ্কার। মায়ের কথা মনে করে রোজ একটা ডিম এবং নভেল পড়া। জামাইয়ের এনে দেওয়া, এক কোণে পড়ে থাকা বিদেশি মাড ক্রিম বের করে নিয়মিত আঙুল পালিশ। তবে বহুদিন পর রাঙালু ভাতেতে, ঘিয়ে ভাজা নিমপাতা মাখা খেতে খেতে ঠাকুমার বলা একটা গল্প মনে পড়ছে।

এক বুড়ো-বুড়ির দুই ছেলে, একজন ধনী বিলাসি আর অন্যজন সাদামাটা ছা-পোষা। মরবার আগে দুই ছেলেকেই ডেকে তিনটে কথা সেই বুড়ো বলে গেল। এক হল, ‘কম খেলে বেশি খাবে।’ দুই হল, ‘উঠোনে বাজার বসাবে।’ আর তিন হল, ‘তিন মাথা যার বুদ্ধি নেবে তার।’ তাদের বড় ছেলেটি বুঝল যে, বাড়ি থেকে ওই বাড়তি আশ্রিত লোকগুলোকে তাড়িয়ে দিলেই তো খাবারে আর টান পড়বে না! পেটের সংখ্যা কমলে, সে তার বউ ছেলেদের নিয়ে বেশি বেশি খাবার খেতে পাবে। আর উঠোনে বাজার বসাতে, সে তার ভাগের অংশে বাকি ঘরগুলো রাজ্যের দোকানিকে ভাড়া দিয়ে দিল। আর শেষে, বাবার বলে যাওয়া সেই ‘তিন মাথার’ খোঁজে বেরিয়ে পড়ল পৃথিবী ভ্রমণে। ছোট ছেলে কী আর করে! তার কম বুদ্ধিতে সে শুধু ভাবছে আর ভাবছে। হঠাৎ একদিন তার চোখ পড়ল, শীতের সকালে জবুথবু বুড়ি মায়ের দিকে। নিজেরই রোগা রোগা দু’টো হাঁটুর মধ্যে মাথাটা গুঁজে বসে আছে। ছোট ছেলে বুঝতে পারল যে, এই হল তিন মাথা। তার মানে বুড়ো বুড়ির পরামর্শ নেওয়া। মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই মা বলল, এই টানাটানির সংসারে একটু অল্প করে মেপে খেলে, বেশি দিনের রসদ ঘরে জমা থাকবে। আর উঠোনে বাজার বসানো মানে, নিজের উঠোনে যা হোক কিছু সবজি চাষ করলেই রোজকার কিছুটা খাবার অন্তত আর কিনে খেতে হবে না। ব্যস, সেই ছোট ছেলে, তার নিজের ছেলে, মেয়ে, বউ আর তার ভাগে পড়া আশ্রিত-আতুর মানুষগুলিকে নিয়ে, রই রই করে লেগে পড়ল সবজি ফলাতে। বুড়ি মায়ের বুদ্ধিতে, ঘরেও আর তখন কেউ অভুক্ত রইল না।

হালের রাজনীতি আর ক্রমাগত উদবৃত্তায়ন দেখে সমানেই সেই বুড়ো নেতা গান্ধীজির কথাই মনে পড়ছে। সভ্যতা বলতে যিনি বুঝেছিলেন, সচেতন সিদ্ধান্তে সর্বোদয়। অর্থাৎ, গ্রাম ভিত্তিক-কৃষি ভিত্তিক-সমবায় ভিত্তিক এক আটপৌরে স্বাধীন সমাজ এবং যৌথতা। এই আর কী! এই ‘হাড় ভাঙা বিশ্রামে’ এসবই আবার একটু নতুন করে ভাবা প্র্যাকটিস করছি! বলা তো যায় না, যদি ‘চৈতন্য’ হয়!    

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

10 Responses

  1. একদমে পুরোটা পড়ে ফেললাম।
    উঠোনে বাজার বসানো প্রসঙ্গে মনে হলো আমাদের বারির এক চিলতে ফাঁকা জমিতে শাশুড়ি মায়ের লাগানো ডাঁটা আর টম্যাটো গাছের কথা।এই দুর্দিনে ডাঁটা দিয়ে আলু পোস্ত আর বাচ্চাদের জন্য টম্যাটোর চাটনি খুব কাজে আসছে।এই গল্পের আরো খানদুয়েক পার্শ্বচরিত্র আছেন,তারা হলেন পাশের বাড়ির আম গাছে থেকে ঝড়ে পড়া কাঁচা আম আর পাকা বেল?

  2. তোমার এই লেখা তিনবারে পড়লাম। একবার করে উঠছি একটা কাজ সারছি তারপর আবার পড়ছি। খুব ভালো লাগলো এই ভেবে সবার কথা ভেবে তোমার লেখা। সুখ দুঃখ হাসি কান্না মেশানো। এই নিভৃতবাসে হাঁপিয়ে উঠেছি। লেখাটা খোলা আকাশের কাজ করলো। ভালো থেকো

  3. কি ভালো লাগলো লেখাটা।তুমি যে কিকরে এরম ছবির মতো লিখতে পারো।আমার কথা কিছু লিখছি —
    আমি রুটি গোল করা শিখে গেছি এই lockdown এ ,আগে ভূগোলের ম্যাপ এর মত হত তাই যেচে কখনোই রুটি বানাতে যেতাম না,chowmein pasta সহজতর মনে হতো।সবজি কাটা ,সবজি ফ্রিজ এ রাখা হল আরেকটা কাজ যা খুব যত্ন নিয়ে করতে হচ্ছে একেবারে delicately ,কারণ চট করে বাজার দৌড়োবার সুযোগ নেই।বাজার থেকে প্রথম প্রথম একদিন ফেলে রাখতাম,দেখলাম তাতেই খানিক শুকিয়ে যাচ্ছে, তবে lockdown এর শুরুতে যতটা বাড়াবাড়ি করছিলাম এই কাজটা নিয়ে,আস্তে আস্তে ঢিমে দিয়েছি ,বুঝেছি রান্নার পর কোনো virus ই কিছু করতে পারবেনা।কত কি শেখার আছে বাকি।

  4. শব্দ দিয়ে ছবি আঁকা,কি প্রাঞ্জল।সবার কথাই কেমন লিখে ফেলেছেন অনায়াসে সহজ করে,তাই এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com