ঝলমলে আলো লুটোপুটি খাচ্ছে রাস্তায়। এমনকী গৃহস্থের দরজাগুলোও হাট করে খোলা। তবে চারদিক শুনশান। আজ রাত্রে শাঁখ ছাড়া আর কিছু বাজানোর নিয়ম নেই। ঘামতেল মাখিয়ে প্রতিমাকে কিছুক্ষণ শুকোতে দিল সজল। পিঁড়ি, ফলমূল, দশকর্মার জিনিস সমস্তই রেডি। বাকি শুধু পুরোহিতের আসাটা। পুরোহিত এসে প্রতিমা পিঁড়িতে তুললেই শুরু। পাশে একই হাল দাদা কাজলের। তবে ওর প্রতিমা আগে থাকতেই পিঁড়িতে। আর ঠিক সেই সময়েই এসে জুটল এই উটকো ঝামেলা। বলা নেই কওয়া নেই, হুট করে কাজলের দোকানে এসে বলে “লক্ষ্মী প্রতিমাটা দিন”।
লক্ষ্মীকে অন্যের ঘরে পাঠালেও হারাধনবাবুর গৃহলক্ষ্মী বরাবরই ওঁর সহায়। বেশ চলছিল ব্যবসাটা। লোকনাথ মৃৎশিল্পালয়। মাটির প্রতিমার ব্যবসা। সজল আর কাজল, দুই ছেলেকেও কাজ শেখানোতে কোনও খামতি রাখেননি হারাধনবাবু। এমনকী লাভের টাকা ভাগও করে দিতেন সমান ভাগে। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলেন, অমাবস্যার মতো পূর্ণিমার চাঁদও দুপাশে দুটো পক্ষ তৈরি করে। আসলে এই ধরনের উটকো ঝামেলা সাধারণত মানুষ চোখ বুজলে শুরু হয়। কিন্তু হারাধনবাবুর ভাগ্যটাই খারাপ। জীবদ্দশাতেই এই উটকো ঝামেলা পোহাতে হবে, হারাধনবাবু স্বপ্নেও ভাবেননি। বয়সের ভারটা মাথায় চড়তেই হাতের মুঠোটা অল্প একটু আলগা হল, কি দুই ছেলে একেবারে দুই পক্ষ হয়ে গেল। লোকনাথের “লোক” আর “নাথ”-এর মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ল বেতের পাঁচিল। মরশুমে, দরজায় বসে শুরু হল কাস্টমার ডাকা। আর এভাবেই হাত পড়ল হারাধনবাবুর পুজোটাতেও। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া লক্ষ্মী পুজোটা বরাবর নিষ্ঠার সঙ্গে করতেন হারাধনবাবু। আর তাঁর চোখের সামনেই সেটুকুও ভাগ হয়ে গেল।
– বড্ড বিপদে পড়েছি দাদা। উদ্ধার করুন।
বলে লোকটা একেবারে পায়ে পড়তে বাকি রেখেছে কাজলের। অর্ডারের প্রতিমা বাদে যে কয়েকটা রেডিমেড বানানো ছিল, সেগুলো দুপুর গড়াতে না গড়াতেই ভ্যানিশ। প্রতিমা বলতে এখন এই একটিই, পিঁড়িতে, যাঁকে বরণ করার জন্য সুগন্ধি ধূপ জ্বেলে, আসন পেতে প্রদীপটা পর্যন্ত জ্বালানো হয়ে গিয়েছে। সোজা সাপটা তাই না-ই বলে দিল কাজল। তবে লোকটা নাছোড়বান্দা। খানিকটা কাকুতিমিনতি করেই বলল,
– এত বড় কারখানা। নিশ্চয়ই থাকবে। দেখুন না যদি একটাও থাকে।
– ধুর মশাই। আমার কারখানা আর আমি জানব না?
কাজল খেঁকিয়ে বললেও লোকটা থামল না। ঘ্যানঘ্যান করেই চলল…
– আপনি তো এক্সপার্ট শিল্পী। একটা ঝট করে বানিয়ে দেওয়া যায় না!
হারাধনবাবু ভুলেই গিয়েছিলেন, অমাবস্যার মতো পূর্ণিমার চাঁদও দুপাশে দুটো পক্ষ তৈরি করে। আসলে এই ধরনের উটকো ঝামেলা সাধারণত মানুষ চোখ বুজলে শুরু হয়। কিন্তু হারাধনবাবুর ভাগ্যটাই খারাপ। জীবদ্দশাতেই এই উটকো ঝামেলা পোহাতে হবে, হারাধনবাবু স্বপ্নেও ভাবেননি। বয়সের ভারটা মাথায় চড়তেই হাতের মুঠোটা অল্প একটু আলগা হল, কি দুই ছেলে একেবারে দুই পক্ষ হয়ে গেল। লোকনাথের “লোক” আর “নাথ”-এর মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ল বেতের পাঁচিল।
সর্বাঙ্গ একেবারে জ্বলে গেল কাজলের। গত কয়েক মাসে নাওয়া খাওয়া এক করে অর্ডার, রেডিমেড প্রতিমা বানিয়ে শরীরটা একেবারে ঝিমিয়ে গিয়েছে। সামনে আবার কালীপুজোর অর্ডারের লিস্টটাও খুব একটা কম লম্বা নয়। সেই বাজারে কিনা ঝট করে বানিয়ে দিন! জ্বলতে জ্বলতে একেবারে তেড়েমেরে বলল কাজল,
– এটা কী জয়নগরের মোয়া নাকি? কথা বুঝতে পারেন না। আপনি এখন আসুন তো।
– যা দাম চান তাই দেব দাদা।
– কেন বিরক্ত করছেন। বললাম তো বিক্রি নেই।
– তাও, কত দাম এই প্রতিমার?
কাজল কথা বাড়াতে না চাইলেও অভ্যাসের বশে বলেই ফেলল,
– তিন’শো টাকা।
– আমি তিন হাজার দেব।
– আচ্ছা জ্বালা তো! আপনি কি বাংলা কথা বোঝেন না? বললাম তো বিক্রি নেই। তিন লাখ পেলেও বিক্রি করব না। এবারে যেন কাজ হল। লোকটা কিছুটা নিরুপায় হয়েই মিথ্যে বলতে শুরু করল,
– কাল ভোর রাত্রে আসলে স্বপ্নে বললেন মা। সেজন্যই এইভাবে হন্যে হয়ে খুঁজছি।
তবে এর বেশি আর কিছু বলতে দেয়নি কাজল। তেড়েমেরে বলেছিল,
– তা এই ঠিকানাটাও কি মা স্বপ্নেই বলে দিয়েছিলেন?
তারপর গলাটা নামিয়ে আপদ বিদেয় করতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বলেছিল,
– পাশের দোকানে একবার দেখুন। থাকলেও থাকতে পারে।
ভাগাভাগির পরে লক্ষ্মী পুজোটা এই প্রথম। পূর্ণিমার চাঁদের মতো দু’পাশে একটা করে পক্ষ নিয়ে বসেছিলেন হারাধনবাবু। দুই পক্ষেই শত ব্যস্ততার মধ্যেও বাবাকে খুশি করতে যথাযথ আয়োজন। এই অস্বস্তির মধ্যে থাকতে মন না চাইলেও হারাধনবাবু সস্ত্রীক বড় ছেলে কাজলের দোকানেই ছিলেন। পুরোহিত আসলে কাজলের দোকানের সময়টাই আগে দিয়েছেন। হারাধনবাবু ভেবেছিলেন কাজলের দোকানের পুজোটা মিটলে সজলের দোকানে গিয়ে বসবেন। চুপচাপ পুরো ঘটনাটা দেখলেন তিনি। তবে কিছু বললেন না। বরঞ্চ কিছুটা যেন কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, এই দোটানায় পড়ে গেলেন। ভদ্রলোকও কাজলের প্রস্তাব শুনে আর দেরি করলেন না। তবে সজল, কাজল নয়। এমনিতেই কিছুটা লাজুক, সেই সঙ্গে খানিক বোকাও বটে। পাশের দোকানের কথাগুলো শুনেও ঘাম তেল মাখানো মা লক্ষ্মীর প্রতিমাটাকে পিঁড়িতে তোলার কথা মাথায় আনতে পারেনি। আর কথাটা যখন মাথায় এল ততক্ষণে লোকটা একেবারে দোকানের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েছে ভিতরে।
– আমি তিন হাজার দেব দাদা। আমার খুব প্রয়োজন। মায়ের স্বপ্নাদেশ আছে। বুঝতেই পারছেন। আপনিই একমাত্র আমাকে উদ্ধার করতে পারেন।
লোকটা এক নিঃশ্বাসে সবটা বলে গেল। কেমন যেন তাজ্জব বনে গেল সজল। ঘামতেল মাখানো মা লক্ষ্মীর প্রতিমা ব্যস্তভাবে পিঁড়িতে তুলতে হাত বাড়ালেও আর পারল না। আমতা আমতা করে জবাব দিল,
– তা কী করে হয় বলুন? এই প্রতিমা আমি পুজো করব বলে বানিয়েছি। মা বলে ডাকব বলে বানিয়েছি।
লোকটাও সজলের কথা শুনেই বুঝে গিয়েছিল, এই কোজাগরীর রাত্রিতে সমস্যার সমাধান যদি হয় তাহলে সেটা এইখানেই হবে। তাই কিছুটা প্রত্যয়ী স্বরে বলল,
– ছেলে কি আর মাকে বানায়? বানাতে পারে? এ আপনি কী বলছেন?

সজল এবার চোয়াল শক্ত করে নিল। পাশের দোকানে দাদা যদি নিজের জোর বজায় রাখতে পারে, তাহলে সেও পারে। লোকটা যেন একরকম চড়ে বসছে ওর উপর। তাই সজলও কিছুটা খেঁকিয়েই বলল,
– দেখুন। আমি মা ডাকি আর বাবা ডাকি, আশা করি, তাতে আপনার কিছু আসে যায় কি? এই প্রতিমা বিক্রির জন্য নয়। আপনি এবার আসুন তো।
সজলের খেঁকানিতে লোকটা যেন আবার কিছুটা অসহায় হয়ে পড়ল। আপন মনেই বিড়বিড় করে,
– ওঃ, বিক্রির জন্য নয়!
আবার বলতে শুরু করল,
– তিন হাজার দিলেও দেবেন না?
– না।
সজল বেশ স্পষ্টভাবে বলল যাতে পাশের দোকান ছাড়িয়েও অনেকটা দূর অবধি কথাটা শোনা যায়।
– আসলে ভীষণ বিপদে পড়েছি। মা লক্ষ্মীকে আজকের রাতটা পেরোনোর আগে ঘরে নিয়ে যেতেই হবে। কী উপায় এখন?
– আপনার সমস্যা আপনিই দেখুন, কী করবেন।
এই বলে নিজেকে কিছুটা সারিয়ে আনতে চাইল সজল। কিন্তু পারল না। লোকটা যেন একপ্রকার কাজ-হয়ে-গেছে টাইপের খুশি নিয়ে বেশ উদাত্ত গলায় বলল,
– আচ্ছা আমি আপনাকে পাঁচ হাজার দিচ্ছি।
গা পিত্তি যেন জ্বলে গেল সজলের।
– আপনাকে এক কথা কতবার বলব বলুন তো? পুজোর সময় বলে ভদ্রতা দেখাচ্ছি। নাহলে একেবারে মেরে তাড়াতাম। যান তো এখন। যতসব উটকো ঝামেলা।
আরও পড়ুন: বাংলালাইভের বিশেষ ক্রোড়পত্র: সুরের সুরধুনী
আর ঠিক সেই সময়ই এলেন পুরোহিতমশাই। সাইকেলটা দোকানের দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে সোজা কাজলের দোকানে। পুজোর অ্যারেঞ্জমেন্ট একেবারে রেডি দেখে বেশ হাসিমুখে এগিয়েই যাচ্ছিলেন আসনের দিকে। কিন্তু সজলের দোকান থেকে “উটকো ঝামেলা” কথাটা কানে আসতেই থেমে গেলেন। কৌতূহলে ভরা “কী ব্যাপার” বলে ঘটনাটা শুনতেই একবার চোখাচোখি হল হারাধনবাবুর এদিক-সেদিক তাকাতে থাকা চোখের সঙ্গে। চোখদুটো বড় অসহায়। যেন বলতে চাইছিল,
– এত দেরি করলে পুরোহিত?
সজল তখনও ঘামতেল মাখানো প্রতিমাকে পিঁড়িতে তোলেনি। লোকটাকে আর কিছু বলে কথাও বাড়ায়নি। তবে পুরোহিত উটকো ঝামেলার পুরোটা শুনে, কাজলের দিকে তাকিয়ে বেশ জোর গলাতেই বললেন,
– যদি কিছু মনে না কর, তাহলে আমিও কিছু বলি?
পুরোহিতের কথায় কাজল বা হারাধনবাবু কেউই আর না করলেন না।
– মা লক্ষ্মী নিজের পায়ে হেঁটে তোমার দোকানে এলেন আর তুমি তাঁকে তাড়িয়ে দিলে কাজল? পুরোহিতের কথাগুলো কাজলের কানে যেতেই কাজল যেন কেমন মিইয়ে গেল। পাশে বউ। সামনেই বাবা, মা। পাশের দোকানে নিজের ভাই। সকলেই আপনজন। ভীষণ আপন, আত্মজ। তবুও কাওকেই কিছু জিজ্ঞাসার নেই।
ওদিকে পুরোহিতের কথাগুলো সজলের কানে ঢুকতেও খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। কাজলের অবস্থাটাও তখন সজলের মতোই। পাশে স্ত্রী, পাশের দোকানেই নিজের দাদা, বাবা, মা। তবুও কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে কেমন যেন বাধল। আর ঠিক তক্ষুনি আরও কিছুটা জোরগলায় পুরুতমশাই আবার বলে বসলেন,
– এ সুযোগ সকলে পায় না কাজল। স্বয়ং নারায়ণ এসেছিলেন। মা লক্ষ্মীকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে।
কাজল তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ওদিকে কথাগুলো কেমন যেন মোচড় দিয়ে ঢুকে পড়ল সজলের ভিতরে। একমুহূর্তে মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব সমস্তকিছু কাটিয়ে উটকো ঝামেলার লোকটাকে ডাকল,
– এই যে দাদা, শুনুন।
তারপর ঘামতেল মাখা মা লক্ষ্মীর প্রতিমা খবরের কাগজে মুড়ে লোকটার হাতে তুলে দিয়ে বলল,
– আমার লক্ষ্মী? পাঁচ হাজার?

লোকটার থেকে টাকা নিয়ে ব্যস্তভাবে সেটা লক্ষ্মীর পিঁড়িতে রেখে, সজল আর বেশি কিছু ভাবেনি। এক ছুটে দৌড়ে গিয়েছিল কাজলের দোকানে।
– আমি তাড়াইনি বাবা।
বলে বাবার দিকে তাকাতেই হারাধনবাবুর ভিতরের জ্বালাগুলো যেন এক লহমায় উধাও। পুরোহিতের দিকে তাকিয়ে হাসলেন তিনি। যেন অশ্বমেধের ঘোড়া বিনা বাধায় ঘরে ফিরে এসেছে। তবে কাজলের ভিতরটা তখনও আপসোসের আগুনে জ্বলছে।
– চলে গেল লোকটা?
কাজল আপনমনেই বললে, সজল আর কিছু বলেনি। তবে পুরুতমশাই বললেন। গলাটা চড়িয়ে বেশ গম্ভীর করে বললেন,
– মা লক্ষ্মী বড় চঞ্চলা, কাজল। সজল তাঁকে ধরতে পেরেছে। আর ভুল কোরো না তোমরা। প্রতিমা যখন একটাই, তখন পুজোটাও এক জায়গাতেই হোক। কী বলেন হারাধনবাবু? পুজোটাকে ভাগ হওয়া থেকে আটকানোর এর থেকে ভালো সুযোগ আর কী-ই বা হতে পারে?
– তুমি পুরোহিত। তুমি যখন বিধান দিচ্ছ তখন আর আমি বলার কে। তবে দ্যাখো তোমার যজমানেরা কী বলে। মা লক্ষ্মী তো এখন আর আমার নন।
বাবার কথাগুলোতে যে শ্লেষ ছিল সেটা বুঝতে দুই ভাইয়ের কারোরই আর বাকি ছিল না।
– এরকম কেন বলছ বাবা?
বলতে গিয়েও বলতে পারল না সজল। কাজলও কিছু বলেনি। খালি নিজের দোকানের সমস্ত পুজোর সামগ্রী কিছুক্ষণের মধ্যেই বয়ে নিয়ে গিয়ে রেখে দিয়েছিল সজলের পিঁড়িটার সামনে। আর পিঁড়িতে রাখা ওই পাঁচহাজার টাকার নোটগুলোর উপর সাবধানে এনে রেখেছিল ওর বানানো মা লক্ষ্মীর প্রতিমা। সেই রাত্রে একটাই পুজো হয়েছিল লোকনাথ মৃৎ শিল্পালয়ে আর সংকল্প হয়েছিল হারাধন পালের নামে।
কাজল আপনমনেই বললে, সজল আর কিছু বলেনি। তবে পুরুতমশাই বললেন। গলাটা চড়িয়ে বেশ গম্ভীর করে বললেন, মা লক্ষ্মী বড় চঞ্চলা, কাজল। সজল তাঁকে ধরতে পেরেছে। আর ভুল কোরো না তোমরা। প্রতিমা যখন একটাই, তখন পুজোটাও এক জায়গাতেই হোক। কী বলেন হারাধনবাবু? পুজোটাকে ভাগ হওয়া থেকে আটকানোর এর থেকে ভালো সুযোগ আর কী-ই বা হতে পারে?
সমস্তকিছু ভাগ হয়ে গেলেও সেবারের মতো নিজের লক্ষ্মী পুজোটাকে ভাগ হতে দেননি হারাধনবাবু। লক্ষ্মীলাভ না হলেও লক্ষ্মীভাগ হয়নি। দুটো পুজো এক হয়ে যাওয়াতে ভিতরে লোকসানের আপসোস থাকলেও পুরোহিত সেই আপশোস মুখে দেখাতে পারেননি। আসলে হারাধনবাবুর মুখের প্রশান্তির কাছে তখন সব আপশোসই একেবারেই নগণ্য। তাছাড়া ওই পাঁচ হাজারের অর্ধেকটা মোটেই কম ছিল না। হারাধনবাবু জানতেন, পূর্ণিমার চাঁদ সামান্য ক্ষয়ে গেলেই দুপাশের পক্ষটা এক হয়ে যায়। পুজোর পরে পূর্ণিমা কাটতেই স্বস্তির শ্বাস ছাড়লেন হারাধনবাবু। দুপাশেই তখন কৃষ্ণপক্ষ। সজলের পিঁড়ি থেকে পাঁচ হাজার, মা লক্ষ্মীর ভাঁড়ে রাখার অজুহাতে নিয়ে নিজে হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন উটকো ঝামেলার লোকটাকে। এছাড়াও নিজের উটকো ঝামেলা মেটাতে কথামতো একেবারে কড়া হাতে সমানভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন নিজের পকেটের পাঁচ হাজার, পুরোহিত আর ওই উটকো ঝামেলার লোকটার মধ্যে। কথা ছিল লক্ষ্মী প্রতিমার দাম যত উঠবে, ঠিক তত টাকাই নিজের পকেট থেকে দেবেন হারাধনবাবু।
*ছবি সৌজন্য: Youtube, Alamy
ধ্রুব মুখোপাধ্যায় পেশায় সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। নেশা বইপড়া এবং লেখালিখি। আদি নিবাস বীরভূমের সিউড়ি। বর্তমানে কর্মসূত্রে কলকাতাবাসী। ভাললাগা বলতে, মানুষ দেখা আর আড্ডা দেওয়া। প্রথম কবিতার বই ‘চাঁদ নামার শব্দ’।