বোর্ডে চকের আওয়াজ আমি মোটে সহ্য করতে পারি না। ঘ্যাসঘ্যাস অবধি ঠিক আছে, কিন্ত ক্যাঁচ করে যখন আওয়াজটা বেরোয়, পুরো মনে হয় কানের পাশে কেউ সাইরেন বাজাচ্ছে। সারা ছোটবেলাটা এর জন্য কম ভুগতে হয়নি। ফলে চকের প্রতি আমার তেমন কোনও ভালবাসা নেই। আর বোর্ডে লেখার তো আর মোটে প্রয়োজন পড়ে না। এখন তো কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আই প্য়াডের জমানা। ফলে রোজনামচার জীবনে চক এখন ব্রাত্যই বটে। তবে চকের উপাকারিতা জানার পর তো আমি হতবাক। শুধু লেখালিখি নয়, ঘরকন্নার নানাবিধ কাজে চক কিন্তু দারুণ কাজে আসতে পারে। ফলে চকের সঙ্গে আবার ভাব স্থাপন করতেই হল। অবাক হচ্ছেন তো? তা হলে আসুন বলে দিই, ঠিক কী কী করতে পারেন চক দিয়ে:
কড়া দাগছোপ দূর করতে পারে
বার্গার বা চপ খেতে দারুণ ভালবাসেন। ফ্রেঞ্চ ফ্রায়েজ দেখলে আর নিজেকে সামলাতে পারেন না। সঙ্গে সস অবশ্যই চাই। কিন্তু যেই না মোটা করে সস মাখিয়েছেন, ওমনি আপনার সাদা জামাটা নষ্ট। কারণ কামড় দিতেই তো সস পড়ল আপনার জামার ঠিক উপর। এবার এই দাগ তুলতে কম মাথাব্যথা হওয়ার তো কথা নয়। তবে মুশকিল আসান করতে পারে এক টুকরো চক। দাগের উপর চক ভাল করে ঘষে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ওয়াশিং মেশিনে কেচে ফেলুন। চক পুরো দাগ একেবারে শুষে নেয়, ফলে স্টেন হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
আলমারির পচা গন্ধ দূর করে
আলমারিতে থাকতে থাকতে জামা কাপড়ে অনেক সময় এটা অদ্ভুত গন্ধ হয়ে যায়। ন্যাপথালিন রাখতেই পারেন, তবে বাড়িতে বাচ্চা থাকলে একটু সাবধান। আর কেম্যিকাল ওয়ার্ড্রব ফ্রেশনার না ব্যবহার করাই তো ভাল। বিশেষ করে হাতের কাছে যদি প্রাকৃতিক উপায় থাকে। আর তার নাম হল চক। চকের গায়ে অসংখ্য ছিদ্র থাকে, ফলে আলমারির ভিতরের স্যাঁতসেঁতে ভাব এবং দুর্গন্ধ দুই টেনে নিতে পারে অনায়াসে।
সাদাকে রাখা সাদা
ছোটবেলায় যাঁরা কেডস পরতেন, তাঁরা চকের এই ব্যবহার সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানবেন। ময়লা কেডস পরে স্কুলে গেলে বেদম বকুনির ভয় থাকত। আর তখন কাজে আসত এই চক। ঘষে নিলেই সাদা জুতো একেবারে চকচক করত। একইভাবে সাদা জামাকাপড়ও ধবধবে রাখতে পারেন। অনেক সময় শার্টের কলার ও কাফ ভীষণ নোংরা হয়ে যায়। ঘাম, তেল, ময়লা জমে জায়গাগুলো কালচে হয়ে যায়। হাত দিয়ে ভাল করে ঘষলেও সব সময় পরিষ্কার হতে চায় না। এবার থেকে আর অত কষ্ট করতে হবে না। ময়লা জায়গায় ভাল করে চক ঘষে নিলেই কেল্লা ফতে!
দেওয়ালের দাগ দূর করে
বাড়িঘর যত পুরনো হয়, তত সাদা দেওয়াল তার জেল্লা হারিয়ে ফেলে। দেখবেন দেওয়ালে উলটোপাল্টা দাগও দেখা দিতে শুরু করে। মনে খারাপ হতেই পারে। কিন্তু মুখে হাসি ফোটাতে চক তো আছেই। দেওয়ালের দাগের উপর একটু চক ঘষে নিন, দেখবেন দাগ আর বোঝা যাচ্ছে না। দেওয়ালে অল্পবিস্তর ফাঁটা থাকলেও চক ঘষে গিতে পারেন। কাজ হবে গ্যারান্টি দিচ্ছি।
রুপোর জিনিস বা বাসন চকচকে রাখে
বাতাসের আর্দ্রতার সঙ্গে রুপোর বাসনের রিঅ্যাকশন হলে বাসন তার জেল্লা হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে যদি বাসন যেখানে থাকে, সেই বাক্সে চক রেখে দিতে পারেন, তা হলে আর এই সমস্যা হবে না। নিয়ম করে চক পাল্টে ফেলতে হবে খালি। স্টিলের চামচের ক্ষেত্রেও এই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।
পিঁপড়ে দূরে রাখুন
বাড়িতে পিঁপড়ের উৎপাত কারই বা ভাল লাগে। দেওয়াল বেয়ে পিঁপড়ে উঠছে বা টেবলের উপর মনের সুখে রাজত্ব করছে, এই দৃশ্য মোটে ভাল লাগে না। এখানেও কাজে আসতে পারে চক। যে জায়গায় আপনি চান না যে পিঁপড়ে আসুক, সেইখানে চক দিয়ে একটা লাইন টেনে দিন। চকের গন্ধ পিঁপড়েদের আসতে বাধা দেবে।
তা হলে এ বার থেকে হাতের কাছে চকের বাক্স রাখুন, আর দেখুন কীভাবে আপনার অনেক সমস্যাই দূর হয়ে যাচ্ছে।