ভাল সুরকার তো তিনি বটেই, কিন্তু এত ভাল কথা বলতে পারেন, জানা ছিল না কলকাতার মানুষজনদের। কৃতির উদ্যোগে আয়োজিত গত ৮ সেপ্টেম্বর শান্তনু মৈত্র’র একশ দিন হিমালয় ভ্রমণের যে অভিজ্ঞতায় শামিল হতে পারল কলকাতা, তা এক কথায় অভূতপূর্ব।
শান্তনু প্রথমে আরম্ভ করেছিলেন তাঁর নানা জায়গায় বেড়ানো ও জীবনের নানা টুকরো অভিজ্ঞতা দিয়ে লেখা বই “ফেরারী মন” নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে। সেই আলোচনায় সুরকার শান্তনুর বড় হয়ে ওঠা, সংগীতের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়া, বোহেমিয়ান জীবনের সূত্রপাত, বেড়ানো আর অভিজ্ঞতা কোড়ানোর হরেক গল্প জানা যায়। আবিষ্কার করা যায় এমন এক মানুষকে যে আমবাঙালির মনের সুপ্ত বাসনাগুলোকে আসলে বেঁচেছে জীবনের প্রতিটি কণা দিয়ে, কেবল মাত্র মনে জমিয়ে রাখেনি। সাহসে ভর করে আর প্রতিকূলতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এমন একটা জীবন নিজের জন্য তৈরি করেছে, য়েমন করে বাঁচার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। শান্তনুর সে সফর খুব মোলায়েম ছিল না। কিন্তু জীবনকে চেনার আগ্রহ এত বেশি শান্তনুর মধ্যে যে জীবনের উঁচু-নীচু ঢালকে সে নিজের মতো গড়েপিটে নিয়েছে।
এ অনুষ্ঠানে কেবল শান্তনুর অভিজ্ঞতাই একমাত্র চমক ছিল না। ছিল বিখ্যাত ফটোগ্রাফার ধৃতিমান মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা। ধৃতিমান লাদাখ অঞ্চলে বরফ-চিতা বা স্নো-লেপার্ডের ছবি কয়েক ফুট দূরত্বে তুলে জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক, বিবিসি এবং এ রকম হরেক নামজাদা সংস্থার আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তিনি কেবল শোনালেন না, দেখালেন সেই সব ছবি আর মোহিত করলেন সাহসিকতা আর প্রকৃতিকে নিবিড় ভাবে ভালবাসার গল্পে।
এর পর সত্যিকারের অভিজ্ঞতার ময়দানে নামলেন শান্তনু। অবশ করলেন তাঁর একশ দিনের হিমালয় চসে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা শুনিয়ে। আর দর্শকরা ঠায় চেয়ে রইল বিরাট এলসিডি স্ক্রিনের দিকে আর আবেশিত হয়ে রইল হিমালয়ের জীবনের গল্পে। চাংপা জনজাতির সব হারানোর শূন্যতাকে প্রকৃতি তার শিক্ষা দিয়ে কী ভাবে মলম লাগিয়ে দিতে পারে, এ সবাই জানল শান্তনুর অভিজ্ঞতা থেকে, তাঁর শব্দ থেকে, তাঁর বিশ্বাস থেকে। অরুণাচল প্রদেশের নিঃসন্তান নানি কী ভাবে হয়ে উঠল ৯২টি বাচ্চার মা আর কেমন করে বড় করে তুলল এই সব অনাথ শিশুদের, তা কেবল হিমালয় শেখাতে পারে। আর মাসারটপ ট্রেক করার সময় যে কুলিটি পঁচিশ টাকার জুতো পরে শান্তনুর দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকত, শান্তনু বিরক্তি উদ্রেক করত, সেই কুলিই শান্তনুর সবচেয়ে বিপদের সময় তাকে কী ভাবে সাহস জুগিয়ে, শান্তনুকে সাহচর্য দিয়ে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করল, সে গল্প না শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন। শান্তনুর প্রকৃতির প্রতি এই ভালবাসা, বেড়ানোর প্রতি আকর্ষণ আর মানুষের প্রতি গভীর টান ও বিশ্বাস, ওঁকে এক জন অন্য রকম, ভিড় থেকে আলাদা মানুষ করে গড়ে তুলেছে। এ তাড়ণা যার থাকে, সে-ই মানুষ চিনতে পারে, তাঁর কাছেই এই সব অলৌকিক ধরা দেয়। তাঁর ঝুলিতেই থাকে এমন সব অভিজ্ঞতা, যার জন্য ফের আর এক বার শান্তনুর সান্নিধ্যের অপেক্ষা করতে হয়।
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।