(Short Story)
রিমিদের বাড়ির সামনে একটা বড় ছাতিম গাছ ছিল। আলাদা করে গাছটা কোনওদিন আমার চোখে পড়ত না। কিন্তু মাঠে-ঘাটে-জলা জমিতে-পাঁচিলের পাশে যখন সাদা কাশফুল ফুটে উঠত, রিমিদের বাড়ির কাছে সন্ধেবেলায় এলেই ছাতিমের ভুরভুরে গন্ধ পেতাম। আর তখনই প্রত্যেক বছর আলাদা করে মনে পড়ে যেত ছাতিম গাছটাকে।
ছাতিমের গন্ধ পেলেই আমার মন খারাপ করত। কী কারণে করত জানি না। আমার জীবনের দারিদ্র্য-তুচ্ছতা-ব্যর্থতা-ফ্যান্টাসি-পাপবোধ সব মিলেমিশে যেন ছাতিম ফুলের গন্ধে মিশে থাকত। গন্ধ নাকে এলেই এমন মন কেমন করত, মনে হত হাউ হাউ করে কাঁদি। (Short Story)
রিমিদের বাড়ির কাছে সন্ধেবেলায় এলেই ছাতিমের ভুরভুরে গন্ধ পেতাম।
রিমি আমার সঙ্গে একক্লাসে পড়ত। মামনিদি ওর দিদি। আমরা যখন ক্লাস ফাইভ, মামনিদি ক্লাস টেন। টিফিনবেলায় মামনিদি প্রত্যেকদিন রিমিকে খাবার দিতে আসত। লালপাড় শাড়ি পরা মামনিদিকে আমি চুপচাপ দেখতাম। এত সুন্দর কোনও কিছু এর আগে কখনও দেখেছি বলে মনে হত না। মামনিদিকে অনেকটা সময় ধরে এইভাবে দেখার কারণে টিফিনে অধিকাংশ দিন বাড়িতে খেতে যেতে আমার দেরি হয়ে যেত। মা বলত, “কী রে, ঘণ্টা তো বেজেছে কখন, আর তুই এখন খেতে আসছিস!” (Short Story)
আরও পড়ুন: ম্যাথিউ ব্লেক এর উপন্যাস ‘অ্যানা ও’: ভাষান্তর- মোহনা মজুমদার
মাকে আমি আর বলে উঠতে পারতাম না, মামনিদিকে দেখলে আমার আর খিদের কথা মনেই থাকে না! উল্টে মনে হয় মামনিদি যেন আমাদের ক্লাসে আর একটু বেশি সময় থাকে। মামনিদি ক্লাস ছেড়ে চলে গেলে কিছুক্ষণ আমার আর কিছু ভাল লাগত না। আমি দরজার সামনে এসে দাঁড়াতাম। দেখতাম মাঠ দিয়ে ধীরে ধীরে নিজের ক্লাসের দিকে হেঁটে চলে যাওয়া মামনিদিকে। যখন আর দেখতে পেতাম না, তখন আমার কেমন চোখ জ্বালা করে উঠত। আস্তে আস্তে পা বাড়াতাম বাড়ির পথে। তারপর আমার মধ্যে কী যেন হত। আমি দৌড়তে থাকতাম বাড়ির দিকে। (Short Story)
লজ্জা-সংকোচ দূরে ঠেলে আমার আর কিছুতেই ওদের বাড়ি যাওয়া হয়ে উঠত না।
একদিন টিফিনের সময় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি দেখে মামনিদি আমার কাছে এসে, একটা লুচি আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এটা নে, খেয়ে ফ্যাল।” আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম। মামনিদি দু-তিনবার বলা সত্ত্বেও আমার মাথা আর উঁচু হল না। তখন মামনিদি আমার থুতনিটা ধরে মুখটা তুলে ধরে আলুভাজা-মোড়া লুচিটা মুখে গুঁজে দিতে দিতে বলল, “কী লাজুক ছেলে রে বাবা!” (Short Story)
ক্লাস সিক্সে উঠে মামনিদিকে আর স্কুলে দেখতে পেলাম না। ইতিমধ্যে কেমন করে জানি না রিমির সঙ্গে আমার বেশ বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রিমির সাথে যতই বন্ধুত্ব হোক, আর মামনিদিকে দেখার জন্য যতই রিমিদের বাড়ি যেতে ইচ্ছা করুক, লজ্জা-সংকোচ দূরে ঠেলে আমার আর কিছুতেই ওদের বাড়ি যাওয়া হয়ে উঠত না। (Short Story)
মামনিদি আমার কথা রিমির কাছ থেকে কখনও জানতে চায় কী না! সে কথা আমি অবশ্য লজ্জার মাথা খেয়ে, ভুলেও কখনও জানতে চাইতাম না।
মাঝে মাঝে আমি বেপরোয়া হয়ে রিমিকে মামনিদির কথা জিজ্ঞেস করতাম। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করত, মামনিদি আমার কথা রিমির কাছ থেকে কখনও জানতে চায় কী না! সে কথা আমি অবশ্য লজ্জার মাথা খেয়ে, ভুলেও কখনও জানতে চাইতাম না। (Short Story)

ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়ই রিমিদের বাড়ির সামনে জীবনে প্রথম ছাতিমের গন্ধ পেলাম। পুজোর কিছুদিন আগে কাশফুল হাতে নিয়ে সন্ধে হওয়ার মুখে পরেশের সাইকেলের সামনে বসে ফিরছিলাম। রিমিদের বাড়ির সামনে এসে, হঠাৎ ওদের রাস্তার ধারের ঘরের বড় জানালার দিকে তাকালাম। পরেশ বলল, “কী রে, রিমিকে খুঁজছিস নাকি?” আমি বললাম, “ধ্যাৎ!” অবশ্য জানালায় আমি যাকে খুঁজছিলাম, তাকে প্রায় তিনমাস পর সত্যি-সত্যিই দেখতে পেলাম। মামনিদিকে আমি শেষ দেখেছিলাম মাধ্যমিকের রেজাল্ট নিতে স্কুলে আসার দিন। তারপর আবার এই দেখা। জানালার ছিটকিনিতে আয়না আটকে মামনিদি চুল আঁচড়াচ্ছিল। সেদিকে তাকিয়ে আমি চোখ ফেরাতে পারলাম না। আর ঠিক সেই সময় আমার নাকে এসে লাগল একটা অদ্ভুত মাদকতাময় গন্ধ। পরেশ বলল, “ছাতিম ফুটেছে। ছাতিমের গন্ধে আমার মাথা ধরে যায়।” আমি আর ওকে বললাম না, তোর মাথা ধরলে কী হবে, এই ছাতিমের গন্ধ কিন্তু আমি আর জীবনে ভুলতে পারব না! (Short Story)
কিছুদিন পর, নবমীর সন্ধেবেলা মনসাতলা বারোয়ারির দুর্গামন্ডপে হঠাৎ আমার চোখ চলে গেল ঠাকুর দেখতে আসা বিশেষ একজনের দিকে। আরে মামনিদি না! মামনিদিকে দেখেই আমার কেমন ঘোর লেগে গেল। আশেপাশে কোনও ছাতিম গাছ না-থাকলেও আমার নাকে ভেসে এল ছাতিমের গন্ধ। নাকে নয়, মনে হয় মস্তিষ্কে। গন্ধটা মাথা থেকে কেমন বুকে নেমে এল। ছাতিমের গন্ধ বুকে ভরে আমি ঘোরের মধ্যে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলাম ছাতিমগন্ধীর দিকে। “দ্যাখ গুলে, সমীর কেমন রিমিকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।” নাড়ুর গলা কানে যেতে আমার ঘোর কেটে গেল। খেয়াল পড়তে অবাক হয়ে গেলাম- আমি প্রায় রিমির কাছে পৌঁছে গেছি! অথচ এতক্ষণ আমার খেয়ালই ছিল না মামনিদির সঙ্গে রিমিও আছে! (Short Story)
আশেপাশে কোনও ছাতিম গাছ না-থাকলেও আমার নাকে ভেসে এল ছাতিমের গন্ধ। নাকে নয়, মনে হয় মস্তিষ্কে।
দশমীর রাতে ঠাকুর বিসর্জনে বেরিয়ে রিমিদের বাড়ির কাছে আসতেই আলোর ঝর্ণাধারা এবং শব্দের জগঝম্প ছাড়িয়ে নাকে এসে লাগল ছাতিমের গন্ধ। আর সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ চলে গেল রিমিদের ঘরের জানালায়। দেখলাম জানালা আলো করে রয়েছে মামনিদি। থেমে গেল আমার নাচ। আমি কেমন ধীর-স্থির হয়ে গেলাম। জানালার দিকে নির্নিমেষ নয়নে তাকিয়ে ধীর পদক্ষেপে পার হয়ে গেলাম রিমিদের বাড়ি। আবার পিছিয়ে এলাম শোভাযাত্রার পিছনে। আবারও অপলক নয়নে শম্বুক গতিতে পার করে এলাম মামনিদিকে। ফেরার পথে ভীষণ আগ্রহ নিয়ে তাকালাম সেই জানালায়। কিন্তু বন্ধ জানালায় ব্যহত হল আমার নয়নপাত। দুর্গাপ্রতিমার আনুষ্ঠানিক নিরঞ্জনের প্রায় ঘণ্টাখানেক আগেই আমার শারদোৎসবের প্রাণপ্রতিমা বিসর্জিত হয়ে গেল! ক্লান্ত-তিক্তচিত্তে, অবসন্ন পায়ে ঘরে ফিরে এলাম। (Short Story)
পরের বছর নবমীর সন্ধে আর দশমীর রাতের জন্য শুরু হল আমার উন্মুখ প্রতীক্ষা। কিন্তু আমাকে হতাশ করে মামনিদি নবমীনিশিতে মনসাতলায় ঠাকুর দেখতে এল না। অথচ সেই বিকেল থেকে আমি কেমন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম! দশমীর রাতে অবশ্য মামনিদি আমাকে ফাঁকি দিল না। দশমীর রাতে ছাতিমের গন্ধের সঙ্গে মামনিদি জানলা থেকে আমাকে ছুঁয়ে গেল। শুধু ছুঁয়ে গেল না, এই প্রথমবার রয়ে গেল আমার সারারাত জুড়ে। আর আমার এই প্রথম মনে হল, আমি আর বাচ্চা নেই, বড় হয়ে গেছি। (Short Story)
এরপর থেকে, বিয়ে হওয়ার আগে পর্যন্ত, আরও পাঁচটা দুর্গাপুজোর দশমীর রাত মামনিদি জানালায় মিনিট তিনেক মুখ দেখিয়ে নিজের শয্যায় কাটালেও, আমার মামনিদিকে সারারাত জুড়ে অনুভব করতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি। এর ফাঁকে প্রয়োজনে কয়েকবার রিমির কাছে গেছি, কিন্তু অপেক্ষা করে থেকেছি মামনিদির। কখনও অপেক্ষা মিটেছে। বেশিরভাগ দিন অবশ্য অপেক্ষা অপেক্ষাই থেকে গেছে। (Short Story)
দশমীর রাতে ছাতিমের গন্ধের সঙ্গে মামনিদি জানলা থেকে আমাকে ছুঁয়ে গেল। শুধু ছুঁয়ে গেল না, এই প্রথমবার রয়ে গেল আমার সারারাত জুড়ে।
কলেজে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস তখনও শুরু হয়নি, রিমির মুখে মামনিদির বিয়ের কথা শুনলাম। জানলাম মামনিদির বিয়ে ইংরেজির প্রফেসর সৌমেন বসুর সঙ্গে। শুনে চমকে উঠলাম! আরে, এই সৌমেনবাবুর কাছেই পড়তে যাব বলে তো দু’দিন আগে দেখা করে এসেছি।

রিমি আরও কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আমাকেও নিমন্ত্রণ করল মামনিদির বিয়েতে। কিন্তু মামনিদির বিয়ের রাতে, সন্ধ্যা থেকে রাত প্রায় বারোটা পর্যন্ত, রেললাইনের ধারে, স্টেশন থেকে বেশ কিছুটা তফাতে আমি একা বসে রইলাম। মাঝখানে শ্রাবণধারা এসে আপাদমস্তক ভিজিয়ে দিয়ে গেল আমাকে। সেই বারিধারায় আমার চোখের জলও বোধহয় মিশে গিয়েছিল। বোধহয় বলছি, কারণ সেইরাতে আমার কী যে হচ্ছিল আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু মনে আছে আগাপাশতলা ভিজে সপসপে জামাপ্যান্ট পরে যখন বারোটার পর বাড়ি ফিরলাম, মা একটাও কথা না-বলে শুধু করুণার চোখে একবার তাকাল আমার দিকে। যাওয়ার সময় মাকে আমি বলে গিয়েছিলাম, রিমির দিদির বিয়েতে যাচ্ছি। (Short Story)
বিয়ের রাতে, সন্ধ্যা থেকে রাত প্রায় বারোটা পর্যন্ত, রেললাইনের ধারে, স্টেশন থেকে বেশ কিছুটা তফাতে আমি একা বসে রইলাম।
মামনিদিকে কেন্দ্র করে আমার এই আকর্ষণ-উন্মাদনা-সুগভীর প্রেমানুভূতি স্বাভাবিক কী না সে প্রশ্ন আমাকে ক্রমশ জর্জরিত করছিল। বিশেষ করে মামনিদির বর সৌমেনবাবুর প্রতি আমার এক অদ্ভুত ঈর্ষা তৈরি হয়েছে দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম।
আমাদের রমেন স্টেফি বলতে পাগল। আগাসির খেলাও ওর ভাল লাগত। কিন্তু স্টেফির আগাসির সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর রমেন আগাসিকে আর দু’চোখে দেখতে পারত না। রমেনের এই আগাসি-বিদ্বেষের কথা জেনে আমি একসময় খুব হাসাহাসি করেছিলাম। কিন্তু এখন নিজের অবস্থা দেখে আমার আর হাসি পেল না। রাগ-কষ্ট-অভিমান তৈরি হল। (Short Story)

একদিন সৌমেনবাবু জেমস জয়েসের ‘দ্য অ্যারাবি’ পড়াচ্ছিলেন। আমি জানতে চাইলাম, “স্যর, অ্যারাবির ছেলেটির ওর থেকে বয়সে বড় দিদির মতো মেয়েটির প্রতি যে অনুভূতি, সেটা কি স্বাভাবিক?” সৌমেনবাবু মুচকি হেসে বললেন, “এ দুনিয়ায় সবই কম-বেশি স্বাভাবিক। বিশেষ করে হৃদয়ানুভূতির ব্যাপারে কোনও কিছুই অস্বাভাবিক নয়। কারণ এই একটা ব্যাপারে মানুষের নিজের হাতে কিছুই থাকে না।” (Short Story)
কিন্তু তাহলে যা স্বাভাবিক, সেই কথাটা আমি একবারও নিজের কাছেই মুখ ফোটে জোরালো দাবির মতো করে কেন তুলে ধরতে পারি না! আর মামনিদির কাছে আমার এই হৃদয়ানুভূতির প্রকাশ তো সাত দরিয়া পারের গল্প বলে মনে হবে! এ জন্ম কেন, সে কথা নিজের মুখে মামনিদিকে জানাতে কত জন্ম যে অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে!
সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় জানতে পারলাম মামনিদির মেয়ে হয়েছে। আমার পক্ষে আর নিজেকে সামলানো সম্ভব হল না। দুম্ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম স্যারের কাছে আর পড়বই না, কারণ ওঁকে আর কোনওভাবেই আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না। (Short Story)
দীর্ঘদিন আমি আর মনসাতলার দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় বেরোই না। কেন বেরোব! ছাতিমের গন্ধ নিয়ে কেউ তো আর আমার বিজয়াদশমীকে আগমনীর ঘ্রাণে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য কোথাও দণ্ডায়মান নেই!
বছর পনেরো পরে এবারে আবার বেরোলাম প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায়। সবুজের সঙ্গে। হঠাৎ খেয়াল করলাম নাচতে নাচতে সবুজ মুখ তুলে একদৃষ্টে রাস্তার ধারে একটু উঁচুতে তাকিয়ে রয়েছে। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে আমিও তাকালাম। আর তাকিয়ে আপাদমস্তক চমকে উঠলাম। এ কী দেখছি আমি! ঠিক দেখছি তো! সময় যেন পঁচিশ বছর আগে পিছিয়ে গেছে। জানলায় এ কাকে দেখছি আমি! এ তো পঁচিশ বছর আগের মামনিদি! কিন্তু এ মামনিদিই বা হয় কী করে? মামনিদি তো এখন চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা! তাহলে এ কিশোরী কে? (Short Story)
ছাতিমের গন্ধ নিয়ে কেউ তো আর আমার বিজয়াদশমীকে আগমনীর ঘ্রাণে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য কোথাও দণ্ডায়মান নেই!
জানলায় মামনিদির প্রতিরূপের পাশে থাকা রিমিকে যথারীতি খেয়াল করিনি। খেয়াল করলাম রিমি আমাকে হাত নেড়ে ডাকছে দেখে। আমি জানলার দিকে এগিয়ে গেলাম। পায়ে পায়ে সবুজও সেদিকেই এগোল। রিমি বলল, “সমীর, এটা তোর ছেলে নিশ্চয়ই! একদম বাবার মুখ বসানো।” আমি হেসে ঘাড় নাড়লাম। জানতে চাইলাম, “কেমন আছিস, রিমি?” রিমি জানাল, “ভাল।” আমি রিমিকে ‘আসছি’ বলে চলে আসতে গিয়ে খেয়াল করলাম সবুজ একভাবে জানলায় রিমির পাশের কিশোরীর দিকে তাকিয়ে আছে। রিমিও দেখলাম সেটা খেয়াল করছে।

অস্বস্তি এড়াতে আমি রিমিকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তোর পাশে এটা কে?” রিমি মজা করে বলল, “তোর ফেভারিটকে তুই চিনতে পারছিস না!” আমি নিজের মনেই উচ্চারণ করলাম, “মামনিদি!” রিমি হেসে বলল, “এ হল মামনি দ্য জুনিয়র- মামনিদির মেয়ে। একদম অবিকল মামনিদি বল!” আমার কিছু বলার আগেই সবুজ বলে উঠল, “বাবা, একটা কী সুন্দর গন্ধ ভেসে আসছে, পাচ্ছ।” আমি প্রাণভরে সেই গন্ধ হৃদয়ে ভরে নিতে নিতে বললাম, “হ্যাঁ, এ হল ছাতিমের গন্ধ।” গলা নামিয়ে বললাম, “এ যাকে একবার ধরে, তার হৃদয়ে দীর্ঘ সময় ধরে মাদকতাময় সুবাস ছড়িয়ে যেতে থাকে।” তারপর সবুজের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলতে গিয়েও না-বলে থেমে গেলাম— প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ থেকে তার আর মুক্তি নেই! (Short Story)
পেশায় শিক্ষক দিলীপকুমার ঘোষের জন্ম হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের দফরপুর গ্রামে। নরসিংহ দত্ত কলেজের স্নাতক, রবীন্দ্রভারতী থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। নেশা ক্রিকেট, সিনেমা, ক্যুইজ, রাজনীতি। নিমগ্ন পাঠক, সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত সৈনিক। কয়েকটি ছোটবড় পত্রিকা এবং ওয়েবজিনে অণুগল্প, ছোটগল্প এবং রম্যরচনা প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে 'সুখপাঠ' এবং 'উদ্ভাস' পত্রিকায় রম্যরচনা এবং দ্বিভাষীয় আন্তর্জালিক 'থার্ড লেন'-এ ছোটগল্প প্রকাশ পেয়েছে।
One Response
Bah osadharon hoyeche