banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

কেন এই অন্ধকার (সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রবন্ধ)

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Sushant Singh Rajput
Abantika Pal
অবন্তিকা পাল

সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, গত ছ’মাস যাবৎ মানসিক অবসাদের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন সুশান্ত, তেমন প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ৩৪ বছরের টগবগে যুবকের এহেন পরিণতিতে নানা প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। বিশেষ ভাবে উঠে আসছে যে বিষয়টি, সেটি হল মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অসচেতনতা, এমনকি সমাজের উচ্চকোটির মানুষের মধ্যেও। মানসিক স্বাস্থ্য যে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই (কখনও কখনও তার চেয়েও বেশি) ভালো থাকার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়, তা নিয়ে লুকোচাপা, ফিসফাস, সঙ্কোচ, দ্বিধা যে তিলে তিলে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে, সেই সচেতনতা গড়ে তোলায় এখনও অনেক পথ চলতে হবে আমাদের। বিশ্বজোড়া অতিমারী, লকডাউন, অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি ‘কোভিড-ডিপ্রেশনও’ যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সম্ভবত তারই মারাত্মক পরিণতি আমরা দেখলাম এই আত্মহননের ঘটনায়। এ ব্যাপারেই সম্প্রতি বাংলালাইভ এক আলোচনায় বসেছিল। সঙ্গে ছিলেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক তথা মনস্তত্ত্ব গবেষক, বিশিষ্ট কবি ও লেখক অবন্তিকা পাল। উত্তর দিলেন মানসিক স্বাস্থ্যের পরিসরে একগুচ্ছ প্রশ্নের।  

পল্লবীসুশান্ত সিং রাজপুত, ফিল্মস্টার আত্মহত্যা করলেন। এখন মানসিক রোগ নিয়ে ফেসবুক জ্ঞানসম্ভারে উপচে পড়বে কদিন। এমতাবস্থায় একটা কথা জানতে চাই, একদম পাঠ্যবইয়ের পরিপ্রেক্ষিত থেকে… ডিপ্রেশন কথাটার এই যে একটা আলগা ব্যবহার, এই যে মনখারাপ লাগলেই বলা “আজ খুব ডিপ্রেসড লাগছে” বা “খবরটা শুনে থেকে খুব ডিপ্রেসড লাগছে”… এইটা যে আসলে ” ডিপ্রেশন” রোগ-টাকে বোঝায় না, বরং কিছুটা খেলো করে দেয়, এটা কি ঠিক? তাই যদি হয়, তাহলে সেই প্রেক্ষিতে বলো, ডিপ্রেশন “রোগ”টা আসলে ঠিক কী… ডাক্তারি পরিভাষায় এই রোগটাকে কী ভাবে ব্যখ্যা করব আমরা।

অবন্তিকা – মনোবিজ্ঞানে ‘ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার’ বা অবসাদজনিত ব্যাধির আওতায় একাধিক রোগ এসে পড়ে। যেমন ধরো- মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার, পারসিসটেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার, প্রিমেন্সট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিজঅর্ডার, সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ ডিজঅর্ডার ও আরও অনেক। নাম শুনে বুঝতেই পারছ, প্রত্যেকটির কারণ-লক্ষণ-প্রেক্ষিত আলাদা আলাদা। সাধারণভাবে, আমার মনখারাপের কারণে ন্যূনতম দু’সপ্তাহ বা তার বেশি সময় যদি আমার দৈনন্দিন কাজকর্ম, স্মৃতিশক্তি, যুক্তিবোধ ইত্যাদি বিঘ্নিত হতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আমার এই পরিস্থিতিটি রোগের পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে বা পৌঁছতে চলেছে। কখনও সেটা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা কাউন্সেলিং-এই সেরে যাবে। আবার কোনও ক্ষেত্রে তার জন্য দরকার পড়বে ওষুধের।

Sushant Singh Rajput
সাধারণ মানুষকে ‘অ-সুখ’ আর ‘অসুখ’-এর তফাৎ করতে শিখতে হবে। ছবি সৌজন্য – jantakareporter.com

এই ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক মাধ্যমের পূর্ববর্তী সময়ে ‘মনখারাপ’কে আমরা ‘মনখারাপ’ নামেই ডাকতাম। ডিপ্রেশন শব্দের সঙ্গে আপামর বাঙালি তখনও পরিচিত হতে শেখেনি। ক্রমশ শব্দগুলো আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ল। বিশেষত, শহুরে বা শহরতলির মধ্যবিত্তের অন্দরমহলে। এই আকস্মিক পরিচিতি যেমন কিছুটা সচেতনতা বাড়াল, সমান্তরালভাবে তার অপপ্রয়োগও ঘটাতে থাকল। একটা বিষয় বুঝতে হবে পল্লবী, আমার ‘ডিপ্রেসড’ লাগছে মানেই কিন্তু আমি ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারের রুগি নই। অচিকিৎসক সাধারণ মানুষ ক্লিনিকাল টার্মিনোলজি বুঝবে না, কিন্তু তাকে ‘অ-সুখ’ আর ‘অসুখ’-এর তফাৎ করতে শিখতে হবে। উন্নয়নের দিকে আমরা যত বেশি এগোব, যত আমাদের আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশাগুলো উত্তরোত্তর বাড়তে থাকবে, ওই হাইফেনের অস্তিত্ব অনুধাবনের দায় তত বেশি বর্তাবে আমাদের ওপর।

পল্লবীদীপিকা পাডুকোণ তাঁর ডিপ্রেশন নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। সেটা নিঃসন্দেহে বিরাট মনের জোরের পরিচয়। কিন্তু তিনি সেটা করেছিলেন সেরে ওঠার পর। অর্থাৎ আমি অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে চলে আলোয় পৌঁছে বললাম, অন্ধকারটা কতটা ভয়াবহ ছিল। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের পক্ষে “সেরে গেছি” কথাটা বলা সম্ভব নয়। এ রোগ অনেকক্ষেত্রেই আমৃত্যুর সঙ্গী। সেক্ষেত্রে, রোগে ভুগতে ভুগতে এ নিয়ে কথা বলা, সত্যিই কি সম্ভব? বিশেষত, ভারতীয় সমাজে, যেখানে মানসিক রোগ এখনও একটি পর্বতপ্রমাণ ট্যাবু?

অবন্তিকা – কথা বলা বা না-বলা অনেকটাই ব্যক্তিস্বাচ্ছন্দ্যের ওপর নির্ভর করে। সাত দিনের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে খেতে বললাম ওষুধ খাচ্ছি, নাকি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ হওয়ার পর জানালাম আমার পেট খারাপ হয়েছিল, তা সত্যিই ইমমেটিরিয়াল। যা জরুরি তা হল সচেতনতা। আমরা যত বেশি এ নিয়ে সুস্থ আলোচনা করব, তত ব্যাপারটা সহজতার দিকে এগোবে। ‘দ্যাখো, আমায় ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারের জন্য গত পাঁচ বছর ওষুধ খেতে হয়’, কিংবা ‘না রে, শুক্রবার বিকেলে তো দেখা করতে পারব না, ওদিন আমার সাইকোলজিস্টের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকে’ – বিষয়গুলো এইরকম সহজ করে ফেললে ট্যাবু ভাঙতে বাধ্য। যে কোনও ব্যক্তিকে যে কোনও কারণে এবং যে কোনও দিন কাউন্সেলিং-এ যেতে হতে পারে। এবং সে মনস্তাত্ত্বিকের কাছে যাচ্ছে বলেই সে পাগলের ডিম কিংবা ভিনগ্রহের জীব এমনটা নয়। একাধিক স্কুলে এখন স্থায়ীভাবে কাউন্সেলর রাখা হয়, বাচ্চাদের মানসিক সহায়তা দেওয়ার জন্য। দেশের সরকারি স্কুলগুলোতেও সপ্তাহে সপ্তাহে সাইকোলজিস্ট বা সোশিওলজিস্ট-রা ভিজিট করেন। বাচ্চার ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। ২০০০-এর সাপেক্ষে ২০২০-তে সচেতনতা তো বেড়েছে বটেই।

Sushant Singh Rajput
‘মেন ডোন্ট ক্রাই’ – এই আপ্তবাক্য ছোটোবেলা থেকেই পিতৃতন্ত্র পুরুষদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়৷ যার জেরে ডিপ্রেশন ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ছবি সৌজন্য – indiatoday.com

পল্লবীআচ্ছা সুশান্ত সিং যদি নারী হতেন, তিনি হয়তো কাউকে, খুব কাছের কাউকে বলতেও পারতেন নিজের কষ্টের কথা! তার মানে একেবারেই এই নয় যে মেয়েরা মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হন না। কিন্তু কোথাও গিয়ে মানসিক রোগ, মানসিক যন্ত্রণা, দুর্বলতা, কান্না, ভেঙে পড়া, ম্যাসকুলিনিটির ধারণার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে বলেই কি পুরুষের এ কথা খুলে বলতে বেশি অসুবিধে হয়? ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’ ধরনের একটা খোঁড়া অজুহাত মেনে চলেন মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত?

অবন্তিকা – খুব ভ্যালিড প্রশ্ন করলে। অবসাদের আলোচনায় জেন্ডারের প্রসঙ্গ অবশ্যম্ভাবী ভাবে এসে পড়ে। ‘মেন ডোন্ট ক্রাই’ – এই আপ্তবাক্য ছোটোবেলা থেকেই পিতৃতন্ত্র আমাদের পুরুষসন্তানদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়৷ ফলত তাকে দুর্বল হতে নেই, তাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে নেই। উপরন্তু কোনও নারী তাকে প্রেমে প্রত্যাখ্যান করলে তার মুখে অ্যাসিড ছোঁড়ার প্রবণতাও কিন্তু এই বৈষম্যমূলক উৎস থেকেই জন্ম নেয়। একটি ছেলেকে শৈশব থেকে যদি বোঝানো যায়, ‘ইটস ওকে টু নট টু বি ওকে’ – তার মধ্যে নিজেকে আহত করার বা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রবণতা – দু’টোই সমান ভাবে কমবে।

পল্লবীডিপ্রেশন বড়লোকদের (অর্থাৎ যাঁদের খাওয়া পরার চিন্তা নেই) অসুখ যাঁরা বলেন, সুশান্তের মৃত্যু তাঁদের ধারণাকে নিঃসন্দেহে মজবুত করবে। এবং হয়তো তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক-মৃত্যুর প্রসঙ্গও টেনে আনবেন এই বলে যে না খেতে পেয়ে, মাথার উপর ছাদ না নিয়ে, পকেটে এক টাকাও না নিয়ে মাইলের পর মাইল ঠাঠা রোদ্দুরে অনন্ত হেঁটে যেতে হলে ডিপ্রেশন নিয়ে মাথা ঘামাবার আর সময় পেতে না চাঁদু! এ ব্যাপারে তোমার মতটা জানতে চাই। অর্থাৎ এই প্রসঙ্গে তোমার কাউন্টার অ্যানালিসিস কী।

অবন্তিকা – তথাকথিত নিম্নবিত্তের বা নিম্নশ্রেণির মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয় না এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। প্রতি বছর কতজন আলু চাষি পণ্যের যথাযথ দাম না পেয়ে আত্মহত্যা করে আমরা তার খবরও রাখি না। কতজন চা শ্রমিক মাইনে না পেয়ে খাদে ঝাঁপ দেয়, কিংবা ফলিডল গলায় ঢালে জানো? কারণ তো সেই অবসাদই। উনিশ শতকের শেষদিকে এমিল দুরখাইম একটা আস্ত বই লিখেছিলেন আত্মহত্যা প্রসঙ্গে। তিনিই প্রথম একাধিক প্রেক্ষিতের ভিত্তিতে আত্মহত্যার বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করেন বলে জানা যায়। প্রসঙ্গত সেখানে পুঁজিবাদ একটি অফ শ্যুট হিসেবে এসে পড়ে। এই যে তথাকথিত উন্নয়নের দিকে আমাদের ক্রমাগত ঝুঁকে পড়া – বাচ্চাকে ফার্স্ট হতে হবে, জয়েন্ট এন্ট্রান্সে একশোর মধ্যে থাকতে হবে, বছরে অন্তত দশ লাখ রোজগার না করলেই সে দুয়ো – এইসব পর্বতপ্রমাণ চাপের মূলে রয়েছে পুঁজিবাদী বিশ্বের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ চাওয়া-পাওয়া। কিশোরটি বা যুবকটি (জেন্ডার নির্বেশেষে) যখনই তার সামনে তৈরি করা সমাজনির্ধারিত লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছতে পারছে না, সে বিষণ্ণ হচ্ছে।

Sushant Singh Rajput
শ্রীদেবী বা সুশান্ত বলিউডের সৌজন্যে আমাদের আত্মীয়প্রতিম। আত্মঘাতী আলু চাষি কিন্তু নন।  ছবি সৌজন্য – bollywoodhungama.com

অন্য দিকে, এই মুনাফা সর্বস্ব দুনিয়াই একজন আলু চাষিকে ঠেলে দিচ্ছে বিষণ্ণতার দিকে৷ ন্যূনতম চাল ডাল কেনার কিংবা গর্ভবতী স্ত্রীকে ভালো চিকিৎসকের নিয়ে যাওয়ার মতো অর্থও যখন তার থাকছে না, তার কাছে মরে বেঁচে যাওয়াই একমাত্র পথ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তাঁর খবর আমরা জানতে পারছি না৷ কেননা, পুঁজিবাদী দুনিয়ায় সে মিডিয়ার কাছে বিক্রয়যোগ্য নয়। বিশ কিংবা একুশ শতকের পৃথিবীতে দারিদ্র একটি নেতিবাচক, ভীতিপ্রদ শব্দ। চলচ্চিত্রেও আমরা দারিদ্র্যকে ততক্ষণই গ্রহণ করি, যতক্ষণ তা স্বপ্নপূরণের গল্প হয়। তুমি অস্কারজয়ী স্লামডগ মিলিয়নেয়ার-এর কথাই ভাবো।

অথচ শ্রীদেবী বা সুশান্ত টেলিভিশন, এমনকি হালফিলে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের হাত ধরে আমাদের অন্দরমহলে ঢুকে পড়েছেন। তাঁরা আমাদের আত্মীয়প্রতিম। কিন্তু ওই আলু চাষি আমাদের কেউ নন৷ আটের পাতায় ছ’লাইনের খবরে আমরা তাঁর উদ্দেশে বড়জোর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারি, তাঁকে নিয়ে বিচলিত কিংবা ব্যথিত হই না। ক্রিকেটার অথবা রূপোলি পর্দার মানুষদের নিয়ে হই। কেননা স্বীকার করি বা না-করি, গ্ল্যামার আমাদের টানে। জ্ঞানত বা অজ্ঞানত অন্ধ পতঙ্গের মতো ওই চোখ ধাঁধানো আলোর দিকে আমরা ক্রমাগত ধাবিত হতে থাকি।

পল্লবীসুশান্তের মা ষোলো বছর বয়সে মারা যান। ইন্সটায় সুশান্তকে আমি ফলো করতাম বলে জানি, মায়ের কথা তাঁর জীবনের কতখানি জুড়ে ছিল। মাকে নিয়ে, মায়ের কথা, ছবি দিয়ে প্রায়ই পোস্ট দিতেন। ঘটনাচক্রে ওঁর শেষ পোস্টও মা-কে নিয়ে। এখন প্রশ্ন, টিনএজে ঘটে যাওয়া কোনও মৃত্যু, কোনও অঘটন, কোনও যৌন বা অযৌন শারীরিক হেনস্থা, বা অপূর্ণ অতৃপ্ত প্রেম… এগুলো কি ঘটনার বহু বছর পরেও মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে?

অবন্তিকা – অবশ্যই পারে। চাইল্ড অ্যাবিউজের ঘটনা প্রায়শই ব্যক্তির জীবনে স্থায়ী ভাবে রেখাপাত করে। এক্ষেত্রে পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার নামে আরেক ধরনের মানসিক সমস্যাও হতে পারে। সেখানে রোগের প্রকাশ হয় মূলত অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে। আবার, পারসিসটেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারে বা ডিসথাইমিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, সাম্প্রতিক কোনো ট্রমা বা লস তার ডিপ্রেশনের প্রাবল্যকে বাড়িয়ে দিল। সুশান্তের প্রোফাইল আমি দেখিনি। ওঁর বেড়ে ওঠার ধাপগুলোও আমার জানা নেই৷ তবে মায়ের মৃত্যু ওঁকে অবশ্যম্ভাবী বিষণ্ণতার দিকে ঠেকে দিয়ে থাকলে, ওঁর নিকটজনের উচিত ছিল, ওই ষোলো সতেরো বছর বয়সেই ওঁকে চিকিৎসক ও মনস্তাত্ত্বিকের কাছে নিয়ে যাওয়ার।

Sushant Singh Rajput
কামু তাঁর বইতে বলেছিলেন শিল্পী যখন অবসাদের মধ্যে দিয়ে আত্মহননের দিকে এগিয়ে যায়, তখন সেই প্রক্রিয়াকে সে একটা শিল্প হিসেবে ধরে নেয় নিজের অজ্ঞাতসারে। ছবি সৌজন্য – andtv.zee5.com

তবে দ্যাখো পল্লবী, সুশান্ত তো একজন শিল্পী। আর অ্যাবস্ট্রাকশন বাদ দিয়ে শিল্প হয় না। তুমি আরও একটা বইয়ের কথা এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিলে – আলবেয়ার কামুর ‘মিথ অফ সিসিফাস’। দার্শনিক কামু দেখিয়েছিলেন, ব্যক্তি যখন অবসাদের মধ্যে দিয়ে আত্মহননের দিকে যেতে থাকে, সে অজ্ঞাতসারে সেই প্রক্রিয়াকে শিল্প হিসাবে নেয়। মনের এইসব অ্যাবস্ট্রাক্ট স্তরবিন্যাস সম্পর্কে সে নিজেই যখন অবহিত নয়, তখন বাইরের লোকের পক্ষে আর কতখানি অবগত হওয়া সম্ভব? বিনয় মজুমদার থেকে ফ্রাঞ্জ কাফকা সকলেই তো ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। ওষুধ খাইয়ে তাঁদের এই পুঁজিবাদী দুনিয়ার সাপেক্ষে ‘সুস্থ’ করে তুললে তাঁদের সৃষ্টিশীলতা ব্যহত হত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ছিল-আছে-থাকবে।

পল্লবীসুশান্তের মৃত্যুতে দু’টি পরস্পরবিরোধী তথ্য সামনে উঠে আসতে দেখছি। প্রথমত তিনি হার্ডকোর নেশা করতেন। অর্থাৎ মাদকাসক্তি ছিল। দ্বিতীয়ত, সুশান্ত সাঙ্ঘাতিক ফিটনেস ফ্রিক ছিলেন। নিয়মিত জিম করতেন। অল্পবয়স থেকে নাচ করতেন। পেটানো চেহারার মালিক। খেলাধুলো করতেন। প্রশ্ন জাগছে, এই দু’টো একসঙ্গে কী করে সম্ভব? আর মনোবিদদের কাছে যতদূর শুনেছি, যে কোনও শারীরিক কসরত শরীরে হ্যাপি হরমোনের ক্ষরণ ঘটায়। সেটা কি তাহলে গভীর ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে কাজ করে না?

অবন্তিকা – ফিটনেস ফ্রিকদের ক্ষেত্রে আবার আর একটি সমস্যা যোগ হয়। সেটা হল ফিটনেস অ্যাডিকশন। শরীরচর্চা তাঁদের কাছে নেশার মতো। আমেরিকার একটা গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছিল, কয়েকজন অ্যাথলেট, যাঁরা প্রত্যেকদিন চার ঘন্টা জিম করেন, তাঁদের মাত্র ৪৮ ঘন্টা শরীরচর্চা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। এবং ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই তাঁদের মধ্যে অবসাদের লক্ষণ শুরু হতে থাকে। এই ফিটনেস অ্যাডিকশনের ক্ষেত্রে কিডনির ওপরে থাকা সুপ্রারেনাল গ্ল্যান্ড বা অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের বড় ভূমিকা আছে। এই গ্রন্থি থেকে ‘কর্টিসল’ নামের একটা হরমোন বের হয়, যা আমাদের শরীরের ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’-কে নিয়ন্ত্রণ করে। এটা আমাদের শরীরের প্রাথমিক সহনশীলতার লক্ষণ।

Sushant Singh Rajput
অ্যাড্রেনাল ফ্যাটিগের কারণে কিন্তু অনেক সময়েই সেল্ফ-হার্মের প্রবণতা জন্মায়। সেরাটোনিনও তার ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। ছবি সৌজন্য – tribuneindia.com

এই যে পায়ের সামনে দিয়ে সাপ চলে যেতে দেখে আমরা ভয়ে সিঁটিয়ে গেলাম, কিংবা সোশাল মিডিয়ায় কেউ তোমায় কটুবাক্য বলল আর তুমি দুম করে তাকে ব্লক করে দিলে, এগুলো মূলত নিয়ন্ত্রণ করে কর্টিসোল। তুমি এই প্রতিক্রিয়াগুলো দেখাচ্ছ মানে, তোমার অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড তার স্বাভাবিক কাজগুলো করছে। ফিটনেস অ্যাডিকটেড মানুষদের ক্ষেত্রে বহু সময় তা করে না। তাঁদের অ্যাড্রেনাল ফ্যাটিগ দেখা দেয়। ফলে তাঁদের মধ্যে ডিপ্রেশন বা সেল্ফ-হার্ম-এর প্রবণতা জন্মায়। তখন কিন্তু হ্যাপি হরমোন বা সেরোটোনিন-ও তার স্বাভাবিক ক্রিয়া করতে অক্ষম হয়। এসব ক্ষেত্রে আমরা আক্রান্ত ব্যক্তিকে বলি বেশ কিছুদিন শরীরচর্চা বন্ধ রাখতে, বিশ্রাম নিতে, কোথাও বেড়াতে যেতে, যাতে তার অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

Sushant Singh Rajput
ভেতরে অবসাদ পুষে বাইরে হাসিঠাট্টা করা মস্তিষ্কের একটা ডিফেন্স মেক্যানিজম। ছবি সৌজন্য – indiatvnews.com

পল্লবীঅনেকক্ষেত্রেই দেখি, খুব হাসিখুশি, দিলদরিয়া, প্রচুর কথা বলেন, ঠাট্টা-তামাশাপ্রিয়, হ্যাপি গো লাকি চেহারার অন্তরালেই থাকে গভীর অবসাদ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা। তাঁদের মৃত্যুর পর লোকে অবাক হয়ে বলে, এত আনন্দময় মানুষটার এমন পরিণতি কী করে হল? সুশান্তের ব্যাপারেও বারবার সে কথা উঠছে। এটা কি নিছকই রোগ চেপে রাখার জন্য জোর করে অভিনয় করা নাকি এর কোনও গভীরতর মনস্তাত্ত্বিক তথা শারীরবৃত্তীয় ব্যাখ্যা আছে?

অবন্তিকা – এ ধরণের অবস্থাকে বলে ‘স্মাইলিং ডিপ্রেশন’। এটা মানুষের মস্তিষ্কের একটা ডিফেন্স মেকানিজম। স্মাইলিং ডিপ্রেশনের মহিলা বা পুরুষ তাদের বিষাদের কথা প্রত্যক্ষে আনতে চায় না। আর পাঁচজনের সামনে সে নিজের বিষণ্ণতাকে ডিফেন্ড করে, আড়াল করতে চায়। সে কিন্তু কনশাসলি ‘অভিনয়’ করছে না মোটেই। তার হরমোন ও নিউরোট্রান্সমিটার তাকে দিয়ে এই কাজটা করাচ্ছে। বন্ধুদের জটলায় সে গান গাইল, হুল্লোড় করল তারপর দেখা গেল রাত্তিরবেলা বাড়ি ফিরে সে অন্ধকার ঘরে বসে কাঁদছে। আর হাসিগুলো যেহেতু প্রকাশ্যে ঘটছে তাই আমরা অ্যাপারেন্টলি ভাবছি, আরে ও তো খুব সুখী মানুষ, ওর আবার ডিপ্রেশন কিসের।

পল্লবীএবার একটা জটিল প্রশ্ন। বেশ কয়েকজনকে দেখলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছেন, নিষ্কৃতি মৃত্যুর মতোই মানুষের আত্মহননের অধিকারও থাকা উচিত। তা নিয়েও আন্দোলন হওয়া উচিত। আমার জীবন, আমি রাখতে না চাইলে, কেউ জোর করে কেন আমাকে বাঁচার রাস্তা দেখাবে, এমনটা কেউ কেউ বলছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ দু’টোকে কি আদৌ এক সারিতে রাখা সম্ভব? নিষ্কৃতি মৃত্যুর প্রশ্ন আসে ‘টার্মিনালি ইল’ মানুষের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ যাঁদের আর ভালো হবার সম্ভাবনা নেই৷ অনেক ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশন-ও তাই। সেরে যায় না। ঢেউয়ের মতো যাওয়া-আসা করে। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুন আইনও পাশ করেছে ২০১৮ সালে। কিন্তু আত্মহননের অধিকার কি সমস্যার অতি-সরলীকরণ হয়ে যাচ্ছে না?

অবন্তিকা – কামু আত্মহত্যাকে অসমর্থনযোগ্য বলেছিলেন। আত্মহত্যাকে যে বেছে নিল, জীবিত থাকলে সে তার সমাজের সেবা করতে পারত। তার প্রোডাক্টিভিটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত। অতএব সে মারা যাওয়া মানে, একটা সম্ভাবনার মৃত্যু হওয়া। আর মৃত্যু যেহেতু অপরিবর্তনীয়, তাই ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে সে নিজে, তার পরিবার, তার বন্ধু, এবং বৃহত্তর সমাজ যা যা লাভ করতে পারত, তার সম্ভাবনা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া। ফলে আত্মহত্যা তো সত্যিই নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। পৃথিবীর যে কোনও সম্ভাবনার মৃত্যুকে আমি কেনই বা সমর্থন করব! শরীরের কোথাও রোগ বাসা বাঁধলে আমি কেন তাকে সারাতে চেষ্টা করি? শেষমেশ মৃত্যুকে বিলম্বিত করার জন্যই তো। মেন্টাল হেলথ বিল অ্যামেন্ডমেন্ট-এর পর, সুপ্রিম কোর্ট ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ বিষয়ে যে আইনি সংশোধন ঘোষণা করে, সেখানে কিন্তু কিন্তু ‘আত্মহত্যা’ নামক সামগ্রিক বিষয়টিকে কোথাও আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। উচ্চতম আদালত শুধুমাত্র বলতে চেয়েছে, যে-মানুষটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে বিফল হল, অর্থাৎ বেঁচে ফিরে এল, তার জায়গা জেলখানা নয়, তার জায়গা চিকিৎসকের চেম্বার, তার প্রিয় ঘর, তার প্রিয়তম মানুষজনদের কাঁধ, কোল। কেন না তার ওষুধ প্রয়োজন, সহানুভূতি প্রয়োজন, কথা বলার পরিসর প্রয়োজন। শাস্তিবিধান তার জন্য প্রয়োজনীয় নয়।

Sushant Singh Rajput
মানসিক কুয়াশাচ্ছন্নতায় জীবন অবসানের সিদ্ধান্তকে নৌতিকতা বা আইন কেউই সমর্থম করে না। ছবি সৌজন্য – jagran.com

নিষ্কৃতিমৃত্যুর আলোচনাটা একেবারে ভিন্ন। বিশ্বের কিছু দেশে কেবলমাত্র ‘টার্মিনালি ইল’ মানুষদের চিকিৎসকের সহায়তায় মৃত্যুর আইনি অধিকার দেওয়া হয়। অর্থাৎ অসুখটি যখন একেবারেই প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে, যেমন ধর টার্মিনাল ক্যান্সার, যখন প্রদত্ত পরিস্থিতিতে চিকিৎসায় নিরাময় হওয়ার আর কোনও সুযোগ নেই, এদিকে অসুস্থ মানুষটি তীব্র যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে, তার ক্ষেত্রে মৃত্যুই হয়ত মুক্তির একমাত্র উপায়। আদালতের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসকেরা তাঁর নিষ্কৃতিমৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেন। এক্ষেত্রে প্রায়শ দেখা যায় অসুস্থ মানুষটি তার শারীরিক কারণে তীব্র অবসাদের শিকার৷ তখন, আগে একমাস-দু’মাস-ছ’মাস ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার থেকে তাকে বার করে আনার প্রক্রিয়া চলে। এবং তারপরই তার ইউথেনেশিয়ার জন্য সম্মতি নেওয়া হয়। অর্থাৎ মানসিক কুয়াশাচ্ছন্নতায় জীবন অবসানের সিদ্ধান্তকে নৈতিকতা ও আইন – কেউই সমর্থন করে না।

পল্লবীঅবসাদ নামক অসুখ থাক বা না-থাক, এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যিনি সারাজীবনে একবারও আত্মহত্যার কথা ভাবেননি। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো বিছানার ওপর পড়ে থাকা সুশান্তের নিথর দেহটা দেখে শিউরে উঠতে উঠতে মনে মনে নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেবেন। ভাববেন, ভাগ্যিস শেষ পর্যন্ত পারিনি। কিন্তু এ সংখ্যাটাও বোধহয় নেহাত কম নয় যারা চুপি চুপি ওই সুন্দর মুখের বেঁকে যাওয়া ভয়াবহতার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাববেন, ‘ও বেঁচে গেল। আমি পারলাম না! আমাকে বয়ে নিয়ে চলতে হবে এই ব্যাধিক্লান্ত মন।’ তোমার শেষ কথাটুকু বলো তাদের কথা ভেবে।

অবন্তিকা – কবির সুমনের একটা গানের লাইন বলি? বহুশ্রুত, তবু বলি…
“ফড়িঙের ডানাতেও এ জীবন দেয় ডাক,
বেঁচে থাক সব্বাই হাতে হাত রাখা থাক,
সাড়া দাও…”
মরে বেঁচে যাওয়াটা কোনো রাস্তা হতে পারে না। বরং বেঁচে থেকে আদ্যন্ত বেঁচে নেওয়াটাই পন্থা। সুশান্তের খবর শুনে যে মানুষটি ভাবল, ‘ও তো পারল, আমি কেন পারলাম না’ – তার অশ্রুত আর্তি, বেদনার ডাক যেন আমাদের কর্ণগোচর হয়। সে ডাকে আমরা যেন উদাসীন না থেকে সাড়া দিতে পারি।

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com