banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

রূপের আড়ালে

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Illustration for Short Story Beauty Face ছোটগল্প রূপ

“এখানেও তুই না বলে দিলি?”

মা’র করুণ মুখটার দিকে তাকিয়ে আদিত্যর এত অসহায় লাগে যে হেসে ব্যাপারটাকে হালকা করে দিতে চায়। “চিনুদির পছন্দ বিশ্বাস কোরও না। সেই লেকটাউনের মেয়েটার জন্য অত তদ্বির করল। তাকে বিয়ে করলে তোমাকে এত দিনে ভিটে ছাড়া হতে হত।”

-অত অলুক্ষুনে চিন্তা করে কেউ বিয়ে করতে যায় না।

 -ওটাই তো ভুল করে। 

মার সঙ্গে আদিত্যর এমন চাপান উতোর চলে প্রায় প্রতিদিন। চল্লিশ ছাড়িয়ে যাবার পরও যখন আরো কয়েকটি শীত বসন্ত গড়িয়ে গেল, চারপাশে বিবাহযোগ্যাদের সংখ্যাটা ক্ষীণ হতে হতে ক্ষীণতর হল, শুভার্থীদের উৎসাহেও ভাঁটা পড়ল। বাদে মা ও চিনুদি।আদিত্যর নিজের কোনও ভাইবোন নেই। মাসতুতো দিদি চিনুদিই মা’র পরে তার গার্জেন।

একটি সোমত্থ মেয়ে বা ছেলে বিয়ে না করে ফুরফুর করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা খুব কম লোকেরই সহ্য হয়। যতক্ষণ না তাদের ধরে বেঁধে সংসারের যাঁতাকলে ফেলা যায় ততক্ষণ একটা মহৎ সামাজিক কর্ম হচ্ছে না বলে সবাই বেশ অস্বস্তিতে থাকে। চিনুদিকে চটাবার জন্য আদিত্য বলে, “তুই যদি দিদি না হয়ে বৌদি হতিস, আমার বিয়ের জন্য মোটেই ব্যস্ত হতিস না। বৌদিরা রোজগেরে ব্যাচেলর দেওর সহজে হাতছাড়া করে না।” 

-সেরকম বউদি জুটেছে নাকি? তাই বিয়ে করছিস না? 

চিনুদিকে একটা যুতসই উত্তর দেওয়া যেত কিন্তু মার মুখ দেখে সে কথা ঘোরায়। “পছন্দসই মেয়ে পেলেই করব। তোর এলেম তো দেখলাম। এবার আমি নিজেই যোগাড় করব।”

এখনকার মত চিনুদি আর মাকে থামিয়ে আদিত্য নিশ্চিন্ত হয়।সে বিয়ের বিরোধী নয় এটা সে কিছুতেই অমলাকে বোঝাতে পারে না। বিয়ের সুফল বোঝানোর জন্য অমলা এক একদিন এক রকম চাল চালেন। কোনও দিন বলেন, “অনিমেষের বাবার হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হল। অনিমেষ তো অফিসে। ভাগ্যিস বউ ছিল। ডাক্তার বদ্যি হাসপাতাল সবই করল সে। অনিমেষ তো এল কত পরে।” কোনও দিন বলেন, “বাবলুর বোনের সাধে গেছিলাম। বউ কী কাজের! অত লোকের রান্নাবান্না সব একা হাতে। কী হাসিখুশি! সবাই কত সুখ্যাতি করল।”

আদিত্য পেশায় ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর। সে মন দিয়ে একটা বসার ঘরের অঙ্গসজ্জার ড্রয়িং করতে করতে বলল, “ভগবান বাবলুর বউকে তৈরি করে ছাঁচটা ফেলে দিয়েছেন।” হঠাৎ আদিত্যর খেয়াল হয় অমলা অনেকক্ষন নীরব হয়ে আছেন। সে ড্রয়িংটা নামিয়ে অমলার থুতনি নেড়ে বলে, “কেন গো মা তোর মলিন বদন?” তা সত্ত্বেও অমলার মুখে হাসি ফোটে না। আদিত্যর অবশ্য কখনওই মার ওপর রাগ অভিমান হয় না। বাবা চলে যাবার পর থেকে মাকে আগলে রাখাই তার অভ্যেস হয়ে গেছে। অমলাও তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। সংসারের প্রতিটা খুঁটিনাটি ব্যাপারে আদিকে জিজ্ঞেস করে না নিলে তিনি শান্তি পান না। আর আদিত্যও অনুচিত ভাবে এইসব মেয়েলি কাজে প্রচণ্ড রস খুঁজে পায়। সেইজন্য আত্মীয় বন্ধু মহলের কোনও উড়ো মন্ত্যব্যের কারণেই বোধহয় মা একবার তাকে বলেছিল, “আচ্ছা তুই এসব মেয়েলি কাজ ছেড়ে কোনও  অফিসে কাজ নিতে পারিস না?” আদিত্য অবাক হয়ে বলেছিল, “কেন? আমার কাজটা কী দোষ করল? তাছাড়া কাজের আবার পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ আছে নাকি?”

অমলা ওমনি নিজের ভাবনাটাকে বাঁকাচোরা করে ফেলেন। “এইসব রান্নাঘর বসার ঘর সাজানো গুছনো তো মেয়েদের কাজ। তুই করবি কেন?” আদিত্যর প্রচণ্ড হাসি পায়। বেচারা মা। ছেলেকে পুরুষোচিত করার জন্য আর কোনও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। সে ছোট মেয়েকে বোঝানোর মত করে বলল, “দেখো, চারপাশে কত ফ্ল্যাট গজাচ্ছে। এরাই আমার লক্ষী। আর এই মেয়েলি কাজের জন্যই এত চমৎকার একটা বাড়িতে আমরা মায়েপোয়ে কেমন চমৎকার আছি। এটা শত্রুপক্ষের সহ্য হচ্ছেনা। দুর্গে ফাটল ধরাতে চাইছে বুঝলে?”

-তোর যত উদ্ভুট্টি কথা। কবে কী হয়েছিল ভুলে যা। তাতে তোরই ভাল হবে।

মনে মনে কুলকুল করে হাসলেও মুখে দেবদাস মার্কা কষ্ট ফুটিয়ে তোলে আদিত্য। শুভ্রারা এসেছিল কানাডা থেকে ওর বাবার ফ্ল্যাটটা সাজাবে বলে। আদিত্য তখন ব্যবসাটা সবে শুরু করেছে। সুশ্রী সপ্রতিভ শুভ্রার সঙ্গে দিনের পর দিন প্রাণমন ঢেলে কাজটা করতে তার দারুণ ভাল লেগেছিল।একসঙ্গে নানারকম শৌখিন জিনিস কেনা, তার জন্য ঘুরে বেড়ানো, এসবের মধ্যে দিয়ে অন্তরঙ্গতাটা যে কখন ব্যবসার নীরস বাতাবরণ ছাড়িয়ে আরও গভীর হয়ে উঠেছিল, আদিত্য টেরই পায়নি। আদিত্যর সবার সঙ্গে সদ্ভাব থাকলেও অন্তরঙ্গতা হয় না। এক্ষেত্রে শুভ্রার দিক থেকে আগ্রহটাই তাকে বেশি কাবু করে ফেলেছিল। শুভ্রাকে তার কেন অন্যরকম মনে হয়েছিল, আজ আর মনেও পড়ে না। শুধু মনে আছে শুভ্রা টানা ছ’মাস ছিল। সেই ছ’মাসে শুভ্রার জীবনে সে-ই প্রথম পুরুষ কিনা এটা জানা ছাড়া যতটা শরীরী ঘনিষ্ঠতা হওয়া সম্ভব তাই হয়েছিল। শুভ্রা বলেছিল আবার আসব। সে আজ দশ বছর আগের কথা। শুভ্রার সঙ্গে আর তার দেখা হয়নি। সুন্দরীরা আসব বলে কি কখনো ফিরে আসে? তারা তো প্রতিজ্ঞা করেই ভাঙার জন্য। আদিত্য সৌন্দর্য বড় ভালবাসে। সেটুকু ছাড়া মা যাই ভাবুক সে কিন্তু মনে মনে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। তখনই আদিত্য বুঝেছিল বিয়ে তার কাছে শুধুই পরের ধাপে পৌঁছবার সিঁড়ি নয়। তার একান্ত নিজস্ব গোপন জগতটি কতটা সরল কতটা জটিল সে নিজেই জানে না ভাল করে। শুধু জানে তার ভেতরের ঘুমিয়ে থাকা আগুনটাকে জ্বালিয়ে দেবে যে নারী, এ জীবন তার।

কিছুদিন নিরুপদ্রবে কাটার পর হঠাৎ অমলা একদিন আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। “এই মেয়েটার ছবি দেখ। সবদিক থেকে আমাদের উপযুক্ত। না বলতে পারবি না।” 

আদিত্য হতাশ হয়ে বলে, “তোমার দেখছি সুখে থাকা কপালে নেই। এই যে ছেলের সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাচ্ছ দাচ্ছ গুলতানি করছ, সেটা পছন্দ হচ্ছে না বুঝি?”

-বৌ এলে কি খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে নাকি? 

-একসঙ্গে খাওয়া তো বন্ধ হবেই। বৌয়ের হয়তো তোমার প্রেজেন্সটাই সহ্য হবে না। তখন কী করবে?

-সে তখন দেখা যাবে?তাহলে কবে যাবি বল। আমি চিনুকে ফোন করি। 

আদিত্যর উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে নিজের মনেই ছবিটা নাড়াচাড়া করতে করতে অমলা বলেন, “আমাদের বাড়ির একদম কাছে যাদবপুর ব্রাঞ্চে বদলি হয়ে এসেছে মেয়েটা। দেখতে শুনতেও মন্দ নয়। সবদিক দিয়েই ভাল হবে, তাই না?” মায়ের আশায় উজ্জ্বল মুখটা দেখতে দেখতে আদিত্য ভাবে, আহারে! একটার বদলে দুটো ভাতের থালা সাজাবে, অফিসগামিনীর টিফিন বাক্স গুছিয়ে দেবে, তবু কী শখ। মায়ের কল্পনায় লাগাম পরানোর জন্য আদিত্য ছবিটা হাতে তুলে নেয়। স্টুডিওর চড়া আলোয় নাক চোখ মুখ সব লেপা পোঁছা। তার সঙ্গে মেয়েটির ব্যাক্তিত্বও। 

তবু গেল সে নন্দন চত্বরে। চিনুদি আর সেই মেয়েটি, যার নাম অপর্ণা, তাদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আদিত্যর মনটা গোলাপি হয়ে উঠছিল। চারদিকের প্রেম, অকারণ হাসি দেখতে দেখতে মনে হল তার কল্পনার নারীটিকে দেখতে পেলে এখনই তাকে বরণ করে নেবে। আদিত্য নিজের ভেতরে গোপন উত্তেজনা বোধ করে। আজই কি সেই দিন?

 চিনুদির সঙ্গে যে মেয়েটি আসছে তাকে এক ঝলক দেখে সুশ্রী বলেই মনে হয়। চিনুদি পরিচয় করিয়ে বিদায় নেবার আগে বলল, “আমার একটু কাজ আছে। আটটা হবে। মেট্রো স্টেশনে অপেক্ষা করব।”

এর পর কয়েকটা অস্বস্তিকর মূহুর্ত কাটিয়ে আদিত্য বলল, “চলুন কফি খাওয়া যাক।” 

কফি খেতে খেতে আদিত্য অপর্ণাকে ভাল করে লক্ষ করছিল। রঙটা পরিষ্কার কিন্তু বিবর্ণ । মধ্যমগ্রাম-যাদবপুর প্রতিদিন যাতায়াত করা, চল্লিশের কাছে বয়স একটি মেয়ের অবশ্য এমনটাই হবার কথা। না চাইলেও আদিত্যর তীক্ষ্ণ চোখ আরও অনেককিছু লক্ষ্য করে ক্রমশ উদাস হয়ে ওঠে। অপর্ণার সিঁথিটা দু’পাশের পাতলা চুলের জন্য চওড়া দেখাচ্ছে। চোখের কোল বসা। জুতোর হিলটা টলমল করছে। হাতের ঢাউস ব্যাগটা থেকে ঘাম আর ক্লান্তির গন্ধ উঠে আসছে। তারা দুজনেই একসঙ্গে ঘড়ি দেখল। চিনুদির কাণ্ড। প্রথম দিনই তিনঘণ্টা বাধ্যতামূলক করে দু’জনকেই বিপদে ফেলেছে। পারলে ও আজই ফুলশয্যে করিয়ে দিত। বাতাসে শব্দ খোঁজার থেকে আদিত্য প্রস্তাব দিল, “চলুন নন্দনে কী হচ্ছে দেখে আসি।” অপর্ণাও যেন বেঁচে গেল। খানিক বাদে সিনেমা থেকে চোখ সরিয়ে অপর্ণার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আদিত্য দেখল হাত দিয়ে হাই আড়াল করছে সে। হাতের পাঞ্জার ওপর দুটো তিনটে শিরা জট পাকিয়ে আছে। এই কি তার মানসপ্রতিমা? আদিত্য চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজল। 

 চিনুদিকে দূর থেকে দেখতে পাওয়া মাত্র অপর্ণা প্রশ্ন করল, “আচ্ছা আপনাদের বাড়ি থেকে আমাদের অফিসটা নাকি মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটা রাস্তা? সত্যি?” তার বলার ধরনে তাড়াহুড়ো ছিল। যেন অনেক্ষন ধরে প্রশ্নটার মহড়া দিচ্ছিল। আদিত্যর মনে হল এতক্ষণে অপর্ণা সত্যিকার আগ্রহ নিয়ে তাকে একটা প্রশ্ন করল। মেয়েটি বোধহয় ভিড় ট্রেনে বাসে যাতায়াত করে করে ক্লান্ত। আদিত্যর বাড়ি তার কর্মক্ষেত্রের কাছে, এটাই আদিত্যর সবথেকে বড় যোগ্যতা। আদিত্যর মতো দিনের শেষে বিছানায় উপুড় হতে পারলেই সে সবথেকে বেশি স্বস্তি বোধ করে। সেখানে আর একজনের উপস্থিতি বিড়ম্বনা ছাড়া আর কিছু নয়। হয়তো তার মত করে এতক্ষণ অপর্ণাও তাকে মাপজোক করেছে। ওদের বিদায় জানিয়ে আদিত্যর মনে হল, বিয়ের মত স্পর্শকাতর বিষয়টা না থাকলে অপর্ণার সঙ্গে তার হয়তো ভালই বন্ধুত্ব হত।

তারপর বহুদিন চাপা ছিল আদিত্যর বিয়ের প্রসঙ্গ। চিনুদিও রাগ করে আর বলবে না বলায় হাঁপ ছেড়েছিল আদিত্য। সে জানে চিনুদির হাত ধরে আসবে না তার মানসপ্রতিমা। তার আবির্ভাব ঘটবে আচমকা। মেট্রোরেলের বন্ধ দরজার ওপারে কিম্বা কাদাজল বাঁচিয়ে শাড়িটা সামান্য তুলে নিটোল গোড়ালি দেখিয়ে ওই যে মেয়েটি পার হল বৃষ্টিভেজা রাস্তা, সে নয়তো? একটা নিশ্বাস ফেলে সে চিনুকে বলে, “আমার ওপর রাগটাকে কিন্তু তেলেজলে ভাল করে পুষে রেখে দিস। একটুও তরল হতে দিস না।” চিনু আরও চটে যায়। “সারা বাংলাদেশে তোর মনের মতো একটাও মেয়ে নেই এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলিস?”

-পছন্দসইরা আমাকে পছন্দ করছে না এটাও তো হতে পারে।

-অত কথার খেলা বুঝি না। আসলে তুই দায়িত্ব নিতেই ভয় পাস। 

এবার অমলার গায়ে লাগে। তিনি বলেন, “নারে। আদি তেমন নয়। আমি তো শিখন্ডীমাত্র। দায়িত্ব কর্তব্য সবই ওর ঘাড়ে। আসলে মেয়েই পছন্দ হচ্ছে না। তুই আর একটু ভাল মেয়ে দেখ।” চিনু একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। “আর পছন্দ করে কাজ নেই। থাকো তোমরা মায়েপোয়ে। তোমাদের সংসারে নতুন লোক ঢুকিয়ে আর কাজ নেই।” 

বন্ধুরাও ঠাট্টা করে… একি এখনও পর্যন্ত একটাও বিয়ে করলি না পরেরগুলো কবে করবি? কেউ স্মরণ করায় মহাপুরুষের উক্তি, এ ব্যাচেলর লিভস লাইক এ প্রিন্স বাট ডাইস লাইক এ ডগ। বাকপটু আদিত্য বলে, “এ আদ্যিকালের বচন। এখন ভরা সংসারেও কুকুর মরণ হয়। আগে তো প্রিন্সের মত বাঁচি। তারপর না হয় ঠিক মরার আগে বিয়ে করে দুকূল রক্ষা করব।” 

এর মাঝে অমলার শরীর খারাপ হল। শরীর যদি বা কোনও রকমে ঠিক হল মন আর ঠিক হয় না। চিনু বলে, “বলো না তোমার আদরের ছেলেকে। ও-ই যদি না বোঝে কী করবে?” 

আদিত্য অশনি সংকেত টের পেয়ে বলে, “আচ্ছা চিনুদি, আমি বিয়ে করলেই মার নিঃসঙ্গতা দূর হবে?”

চিনু নিজে যেটা বিশ্বাস করে সেটা এত জোরের সঙ্গে বলে, যে প্রতিপক্ষ হালে পানি পায় না। সে বলল, “নিশ্চয়ই। তোর বিয়েটাই এখন একমাত্র সলিউশন।” 

-আমার বউও যদি চাকরি করে তাহলে কী করে মার নিঃসঙ্গতা দূর করবে? 

-সেরকম মেয়ে দেখতে হবে যে বাড়িতে থাকবে। 

-আর সারাদিন একজন অচেনা অসুস্থ বৃদ্ধা মহিলার তদারকি করবে, এমন মেয়ে আছে নাকি? 

-আছে বলেই তো বলছি। তোর অলকেন্দুদার পিসতুতো ভাইয়ের মেয়ে। একই বোন। দাদার বিয়ে হয়ে গেছে। 

-অত ভাল, লাখো মে এক পড়ে আছে এত বয়স পর্যন্ত, আমার মায়ের দেখাশোনা করবে বলে?

চিনুদি রাগ করে বলে, “তোর সঙ্গে কথা বলা বৃথা। বয়স এমন কিছু না। সবে তেত্তিরিশ পুরেছে। তোর থেকে অনেকটাই ছোট। তবে তা নিয়ে ওদের আপত্তি নেই।” 

-ও বাবা তোমরা তো তবে অনেকদূর এগিয়ে গেছ। 

চিনুরা থাকতে থাকতেই অমলা আদিত্যর থেকে শনিবার মেয়ে দেখতে যাবার কথা আদায় করে নিলেন। মানিকতলায় অলকেন্দুদার সঙ্গে সাদা পাথরের মেঝের গায়ে কালো চৌখুপি নকশা করা টানা বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই আদিত্যর বিরাগ অনেকটা দূর হয়ে গেল। বাড়িটার মধ্যে বনেদীয়ানার সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা ও রুচি দুইই মিশে আছে। বসার ঘরটিতে বাড়াবাড়ি নেই কিন্তু প্রতিটা ইঞ্চি ব্যবহারের সুবিধে ভেবে সাজানো হয়েছে। অন্য কেউ লক্ষ্য না করলেও আদিত্যর কাছে এর মূল্য অনেক। সমরুচির সান্নিধ্যে যে আরাম হয়, আদিত্যের শরীরে ও মনে আস্তে আস্তে সেই স্বাছন্দ্য ছড়িয়ে পড়ছিল। 

মেয়েটির নাম সুদর্শনা শুনে আদিত্য মনে মনে হেসেছিল। এরকম কত দেখলাম। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। কিন্তু আজ সুদর্শনা চায়ের কাপ হাতে ঘরে ঢোকামাত্র আদিত্যর বুকের মধ্যে কী যেন একটা গড়িয়ে গেল। নরম পেলব ভঙ্গুর কাঠের তৈরি, কিন্তু ডগায় এক বিন্দু বারুদ আর অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে সে যেন একটি তাজা দেশলাই কাঠি। যা ছিল শুধুই আদিত্যর নিজস্ব কল্পনা তা শরীরী হয়ে উঠে আসবে তার ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে। সত্যি সত্যি এমন হয়? 

চা-পর্ব শেষ হলে পর তাদের দুজনকে একান্তে রেখে সবাই উঠে গেল। সবাই চলে গেলে ঘরটা আশ্চর্য রকমের শান্ত হয়ে গেল। আদিত্য ভেবে এসেছিল জিজ্ঞেস করবে, “এতদিন বিয়ে করেননি কেন?” গোলমাল ধরে ফেলতে তার এক মুহূর্তও লাগবে না। তারপর চিনুদিকে বেশ একহাত নেওয়া যাবে। ভবিষ্যতে রদ্দিমাল গছানোর আগে দু’বার ভাববে এরপর। কিন্তু সুদর্শনাকে দেখার পর থেকেই  আদিত্য নীরব। কল্পনার মানবীর সঙ্গে দেখা হবে না ভেবে যে আরাম আর নিশ্চিন্ততা ছিল, সেটা টাল খেল জীবনে প্রথমবার। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত ব্যাকুলতা কই? তার ভেতরটা একসঙ্গে আলো আর অন্ধকারের আলপনায় শব্দহীন হয়ে উঠছিল।   

সুদর্শনার মুখ নিচু। শুধু দীর্ঘ আঁখিপল্লব থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। সেদিকে তাকিয়ে আদিত্য নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে একসঙ্গে শব্দ আর প্রার্থিত উষ্ণতা দুইই খুঁজে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ বাইরের দিকে সতর্ক চাউনি রেখে সুদর্শনা প্রথম কথাটি বলল, “আপনি প্লিজ এই বিয়েতে রাজী হবেন না।” 

হতভম্ব আদিত্যর মুখ দিয়ে প্রশ্নটা ছিটকে বেরিয়ে এল, “কেন?” 

-আমি বিয়ে করতে পারব না। 

মুখ নিচু। গলাটা মৃদু কিন্তু কঠিন। কিছুক্ষণ আগের সুস্বাদু খাবারের বুক জ্বালা করা ঢেঁকুর উঠল আদিত্যর। সে তো প্রত্যাখ্যান করবে মনস্থ করেই এসেছিল। চিনুদির শ্বশুরবাড়ি বলে যেটা তার পক্ষে শক্ত হত মেয়েটি তো নিজেই সেটা সহজ করে দিয়েছে। কোন বারুদকণাই তার ভেতরে জমে থাকা শৈত্যের জন্য যথেষ্ট নয়, সুদর্শনা সেটা পরিষ্কার করে দিল বলে আদিত্যর তীব্র একটা রাগ হতে থাকে। আর তখনই হঠাৎ মনে হল মেয়েটিও তার মত উষ্ণতা খুঁজে বেড়াচ্ছে না তো? তাই অর্থহীন জেনেও প্রশ্নটা করে বসে, “আপনার কি আমার সঙ্গে আপত্তি নাকি বিয়েতেই অনিচ্ছা?”

এবার সুদর্শনা মুখ তোলে।

-আমার অসুবিধেটা কেউ বুঝতে পারছে না। ধরে নিন আমার কোনও গোপন অসুখ আছে। 

-আর আমি যদি বলে দিই সবাইকে আপনি যা যা বললেন ?

বারুদের তলার নরম কাঠিটা যেন সামান্য চাপ দিলেই ভেঙে যাবে। 

-জানি না কী করব। তবে আপত্তিটা আপনার তরফ থেকে এলে আমি অন্তত কিছুদিনের জন্য রেহাই পাব। 

বাড়ি এসে নিজের ঘরটাতে ঢুকে পোশাক না বদলিয়েই বিছানায় গড়িয়ে পড়ল আদিত্য। হাত বাড়িয়ে দিল পাশের ফাঁকা জায়গাটায়। সে যে ভেবেছিল এই জায়গাটা একদিন ভরে উঠবে তার মানসীর উষ্ণতায় আর সুগন্ধে। একদিন তার সঙ্গে দেখা হবে ওই মোহানার ধারে। আর আদিত্যর যত না-পারার হতাশা যন্ত্রণায় সে রাখবে তার বরাভয় হাতখানি। এতদিন সেই ভাবনাটাই ওম ছড়াত তার চৈতন্যে। আজ দেখল তাকে, কিন্তু হিমবাহের দু’প্রান্তে দাঁড়িয়ে রইল তারা দুজন। ভাল লাগল কিন্তু ইচ্ছে জাগল না। অভিমানে আদিত্যর বুকটা টনটন করে ওঠে। প্রত্যাখ্যানের থেকেও এই যন্ত্রণাটা তাকে ছিঁড়েখুঁড়ে একাকার করছিল। ও মেয়ে, কেন দেখা হল তোমার সঙ্গে? আমার আড়ালটুকুও কেড়ে নিয়ে একেবারে নিঃস্ব করে দিলে আমাকে। অমলার পায়ের শব্দে আদিত্য আরও বেশি করে বালিশে মাথা গুঁজে দেয়। 

 

7 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com