বেরোতেই সে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ। প্রেতাত্মায় ভর্তি নিঝুম শ্মশানে একটা একা মানুষকে রেখে দিলে যেমন হয়, ঠিক তেমনটা। বিকট আওয়াজ, ঝলমলে আলো আর চারিপাশে গিজগিজ করছে মানুষ। বাড়ির ছাদেই দেহটাকে একবার শেষ দেখা দেখে ধাপার মাঠ-টাঠ পেরিয়ে একটা অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে জনমানবশূন্য জায়গার খোঁজে সোজা উড়ে আসছিলাম। আর আওয়াজটা ঠিক তক্ষুনি কানে এল।
– নতুন নাকি?
চারপাশে কাউকে না পেয়ে আমি এগিয়েই যাচ্ছিলাম। কিন্তু কে যেন আবারও বলল,
– কথা কানে যায় না?
– কে? অভ্যাসের বশে জিজ্ঞেস করতেই একেবারে মুখের সামনে একখণ্ড হাওয়ার পিণ্ড ফিসফিস্ করে বলল,
– এই যে আমি।
এই প্রজাতিতে আমি তখন সত্যিই নতুন। তাই সম্মতি জানিয়ে “হ্যাঁ” বলতেই হাওয়ার পিণ্ডটা আবারও বলে উঠল,
– তা কতক্ষণ হল?
– এইতো এইমাত্র।
– তা এতদিন যে দেহে রইলে সেটার সৎকার দেখবে না?
– ধুর ধুর। ও তো ছাড়ার জন্য আমি মুখিয়ে ছিলাম।
বলতেই পিণ্ডটা বিচ্ছিরি আওয়াজে হেসে বলল,
– অ। তা দড়িতে ঝুলেছিলে নাকি জলে ঝাঁপ?
কথাটা শুনেই ভিতরটা যেন ছ্যাঁত করে উঠল। ব্যটা ধরে ফেলল নাকি! তবুও নিজেকে শক্ত রেখেই বললাম,
– না। স্বাভাবিক মৃত্যু।
হাওয়াপিন্ডিটা আবারও সেই এক ভাবে হাসল। আর তারপরেই খেঁকিয়ে উঠে বলল,
– সেটা, তুমি বিচার করার কে হে? তার জন্য তো মর্ধরাজ আছেন।
– মর্ধরাজ! সে আবার কে?
মর্ধরাজ শব্দটাতে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতেই পিণ্ডটা একেবারে গদগদ হয়ে বলতে লাগল,
– দেবতা। আমরা তো আর দেহওয়ালাদের মত তেনাদের নাম নিতে পারি না। আমাদের বলতে হয় মরা, মর্ধরাজ। বুঝলে?
বুঝলাম। আর বুঝতেই পিণ্ডটা বেশ ধড়ফড় করে বলে উঠল,
– তা একা, নাকি সঙ্গে আরও এনেছ?
– মানে?
– মানে ওই বস্তিতে আগুন, ভূমিকম্প, বন্যা-খরা এসব কেস? নাকি তোমার একারই বুকের ধুকপুকানিটা ফুস করে বন্ধ হয়ে গেল?
আমার মৃত্যুটা যে স্বাভাবিক সেটা যেন বিশ্বাসই করাতে পারছিলাম না। ভীষণ রাগ হচ্ছিল। রাগের মাথায় আমিও বেশ খেঁকিয়েই বললাম,
– এক কথা ক’বার বলতে হয়? বললাম তো স্বাভাবিক মৃত্যু।
তবে তারপর আর “কথা কানে যায় না?”-টা বলতে পারলাম না। ব্যাটা আমাকে থামিয়েই বলল,
– আহা রাগ করছ কেন! বুঝেছি। তা ডেরাতে যাবে নাকি একাই ঘুরবে?
ডেরা-টেরা অত বুঝি না। তবে একা একা ঘোরার থেকে ডেরায় যাওয়াই ভালো মনে হল। গেলামও। আর যেতেই চক্ষু চড়কগাছ! ঘন বাঁশঝাড়ে গিজগিজ করছে হাওয়াপিন্ডির দল। কেউ রাগে ফুঁসছে, কেউ যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদছে, কেউ আফসোসে মাটিতে আঁচড় কেটে ধুলো ওড়াচ্ছে, সে এক বিতিকিচ্ছিরি পরিবেশ। চারিপাশে শুধুই অতৃপ্তি। তবে আমি শক্ত ছিলাম। আমার ব্যাপারটা যেন কেউ ঘুণাক্ষরেও টের না পায়! পায়ও-নি। এরই মাঝে কানাঘুষো এর-ওর থেকে শুনে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম। মানুষ যেমন মেসবাড়িতে একসঙ্গে থাকে, এও তেমন। তবে একাও থাকা যায়। যার যার নিজের ইচ্ছে। কেউ কেউ আবার মায়াবশে নিজের জীবদ্দশার জায়গাতেই থেকে যায়।
– কিন্তু মুক্তি?
প্রশ্নটা করতেই পাশ থেকে একটা হাওয়াপিন্ডি একবারে তেড়েমেরে খেঁকিয়ে উঠল,
– সেটোর লেগেই তো এত কষ্ট!
তারপরেই অদ্ভুতভাবে হেসে বলল,
– দ্যাকো পাও কিনে!
মুক্তি আমাকে পেতেই হবে। সে জন্যই তো হাজার কষ্ট হলেও জীবনটা নিজে থেকে শেষ করিনি। অতএব গুরুত্ব না দিয়েই একটু উড়ে বেড়ালাম, যদি আরও কিছু খবর পাই। পেলামও। সাধারণত দেহসৎকারের পরেই রোজ মর্ধরাজের চেলা-চামুণ্ডারা সব আত্মাদের কানে কানে বলে দিয়ে যায়, মুক্তি নাকি ভোগান্তি। ওদের কাছে নাকি সমস্তকিছুর হিসাব থাকে। আমারটা যে কী থাকবে! যাকগে, আগে নাকি মরার সঙ্গে সঙ্গেই বলে দিত। তবে এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে কিছু মড়া বেঁচে গিয়ে বেশ কয়েকবার বেচারাদের মুখে চুনকালি দিয়েছে। এখন তাই আর রিস্ক নেয় না। সৎকার না হওয়া অবধি কিচ্ছুটি বলে না।

ডেরাগুলোতেও ওঁরা রোজ আসেন। কার কত কষ্ট লাঘব হল, কার আরও ভোগান্তি, সেই সঙ্গে নতুন লোকেদের হিসাবও দিয়ে যান। যাইহোক, এটা শুনে একটা গাছের ডালে খানিক জিরোলাম। বেশ লাগছিল। খিদে নেই, ব্যথা নেই, শুধু একটাই চিন্তা। মুক্তি। কিন্তু ধরা পড়ে যাব না তো! কী জানি! আসলে, সকলেই তো আর বাঁচতে বাঁচতে মরে না, কেউ কেউ মরেও বাঁচে। আমি আবার এই দ্বিতীয় শ্রেণীর। ভেবেছিলাম মরে বাঁচব। হাসপাতাল আর ঘর করতে আর ভালো লাগছিল না। রোজই অসুস্থ। শরীরটা যেন আর চলছিলই না। নব্বই পার করতেই যখন চেনা মুখগুলো সব মুছে গেল, তখন থেকেই আর বাঁচতে ইচ্ছে হত না। কিন্তু নিজে নিজে তো আর মরতে পারি না। ভূতে ভয় না থাকলেও ভূত হতে আমার বিস্তর আপত্তি। অপঘাতে মৃত্যুটা তাই আমি কোনওকালেই চাইনি।
প্রথম প্রথম, চার-ছ’মাসে হাসপাতালে গিয়ে বেশ সুস্থ হয়েই ফিরছিলাম। কিন্তু যমে-মানুষে দড়ি টানাটানিটা শুরু হল এই পঁচানব্বইয়ের পর। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই দিন তিনেকের জন্য হাসপাতালে। তাতেও মোটামুটি মানিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু গেল বছর পুজোর আগে আর পারছিলাম না। এবেলা ভালো তো ওবেলা গেল। মাঝে মাঝে নিজের গলাটা নিজেরই টিপে ধরতে ইচ্ছে হত। কিন্তু ওই! মুক্তির আকাঙ্ক্ষা! ভূত আমি হতে পারব না বাপু। তাই বেঁচেই ছিলাম। তবে ছেলে-পুলে, নাতি-নাতনিগুলো হয়রানির একসা হচ্ছিল। আমি বেশ বুঝতাম। অ্যাম্বুলেন্স এলেই ব্যাটারা কপাল ছুঁয়ে বলত, “ঠাকুর, আর যেন না ফেরে।” কিন্তু ফিরতাম। কালীপুজোর দিনও সকলের মুখ ভার করে হাসপাতাল থেকে ফিরলাম।
আমার ছেলেপুলেগুলোও আর এক! একেবারে কুলাঙ্গার! আমার টাকায় ফুর্তি, আমার বাড়িতে ডেরা। কিন্তু বিনিময়ে ভালোবাসা তো দূরের কথা, সামান্য সহানুভূতিটুকুও নেই। সেদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতেই বুকটা কেমন হালকা লাগছিল। ধড়ফড় করছিল ভিতরটা। আর ঠিক তক্ষুনি নাতিগুলো এসে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে গেল বাড়ির ছাদে। মাদুরে শুইয়ে বলল, ‘দাদু, চারপাশে বাজি ফাটছে। ধোঁয়াতে, আওয়াজে কষ্ট হবে। এখানে শুয়ে একটু বিশুদ্ধ হাওয়া খাও।” আমি সরল মনে খাচ্ছিলামও। আর ওমনি ব্যাটা নবার ছোঁড়াটা কোত্থেকে একটা গাছবোমা এনে ঢিপ করে ফাটিয়ে দিল একেবারে মুখের গোড়াতেই। বুকটা এক লহমায় স্থির হয়ে গেল। চোখ মেলতেই দেখি আমি ভাসছি। চারিপাশে নাতিগুলোর তখন কী উল্লাস! আনন্দে আমার ভিতরটাও নেচে উঠেছিল। কিন্তু মাথা খাটাতেই ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠল। এ তো অপঘাত! ইচ্ছে করে বোমটা ফাটিয়েছে। মুক্তি পাব তো? জানি না!
আরও পড়ুন: তুষ্টি ভট্টাচার্যের গল্প: এক্সপ্রেস
তবে বিষয়টাকে আড়াল করেই চলছিলাম। আর ঠিক এসব ভাবতে ভাবতেই অমাবস্যার ঘুটঘুটে মনোরম অন্ধকারে তিনি এলেন। ইয়া মোটা, ইয়া কালো। তবে স্থলে বাতাসে সব জায়গাতেই সাবলীল। সকলেই তখন সেই টিউশনি মাস্টারের কাছে প্রথম দিনে পড়তে যাওয়া সুবোধ বালক। উনি এক এক করে কানে কানে ফল বলতে শুরু করতেই কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ল, কেউ রেগে মাটিতে ধুলো ওড়ালো, কেউ কেউ আবার চুপচাপ বাতাসে মিলিয়ে গেল। বেশ লাগছিল। যেন সেই ইস্কুলের দেওয়ালে পরীক্ষার রেজাল্ট ঝোলানো হয়েছে। এই করে ভদ্রলোক আমাকে বেমালুম অগ্রাহ্য করে উড়েই যাচ্ছিলেন, আমি আটকালাম
– প্রভু, আমারটা?
– তোমার তো এখনও দেহ সৎকার হয়নি। সৎকার হলে…।
প্রভু বললেও আমি নাছোড়বান্দা।
– যদি একটু কৃপা করেন প্রভু। যদি আজকেই…
আমি বলতেই কালো মুখে ধবধবে সাদা দাঁত বের করে প্রভু বললেন,
– সে হয় না। নিয়ম।
আমি আরও একটা চেষ্টা করতে বলেই দিলাম,
– ওই পঁচানব্বই বছরের শরীরে কেউ ফেরে? ফিরব না প্রভু। যদি বলে দেন।
বেশ লাগছিল। খিদে নেই, ব্যথা নেই, শুধু একটাই চিন্তা। মুক্তি। কিন্তু ধরা পড়ে যাব না তো! কী জানি! আসলে, সকলেই তো আর বাঁচতে বাঁচতে মরে না, কেউ কেউ মরেও বাঁচে। আমি আবার এই দ্বিতীয় শ্রেণীর। ভেবেছিলাম মরে বাঁচব। হাসপাতাল আর ঘর করতে আর ভালো লাগছিল না। রোজই অসুস্থ। শরীরটা যেন আর চলছিলই না। নব্বই পার করতেই যখন চেনা মুখগুলো সব মুছে গেল, তখন থেকেই আর বাঁচতে ইচ্ছে হত না। কিন্তু নিজে নিজে তো আর মরতে পারি না। ভূতে ভয় না থাকলেও ভূত হতে আমার বিস্তর আপত্তি।
মরিয়া চেষ্টাটাতে কিছুটা হলেও কাজ হল। প্রভু কিছুক্ষণ ভেবে সেই একইভাবে বললেন,
– সদ্য মানুষ থেকে মুক্ত হয়েছ। মুখের কথা বিশ্বাস করা অনুচিত। তবুও তোমার বয়সের কথা মাথায় রেখে বলেই দিচ্ছি।
প্রভু বলতেই আমার ভিতরটা যেন নেচে উঠল। “মুক্তি” শব্দটা আমি যেন ততক্ষণে শুনেই নিয়েছি। কিন্তু প্রভু বললেন, “ভোগান্তি”। এত করেও এই! ভিতরটা হালকা হয়ে গেল।
– কেন প্রভু? প্রশ্নটা কখন করেছি বুঝতেই পারিনি। তবে প্রভু উত্তর দিলেন।
– তোমার নাতিরা ইচ্ছে করে বোম ফাটিয়ে খুন করেছে। কিছু রাগ তো তোমার উপরে ছিলই। আর সেজন্যই, সামান্য হলেও দোষ আছে। খণ্ডন করো।
– কী করতে হবে?
– তিনটে উপকার। তিনটে উপকার করলেই মুক্তি। তবে মনে রেখো, উপকারটা যেন নিঃস্বার্থ হয়।
আমি আরও বিস্তারিত জানতে চাইলেও প্রভু দাঁড়ালেন না। ভ্যানিশ হয়ে গেলেন। বজ্জাত নাতি সব! ব্যটাদের একবার মাত্র না দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে আইসক্রিম খেয়েছিলাম! আর তো কখনও জ্বালাইনি! রাগে জ্বলে যাচ্ছিল ভিতরটা। তবে নিজেই নিজেকে শান্ত করে কাজের কথায় মন দিলাম। উপকার। তিনটে মাত্র উপকার। কিন্তু কিছু বুঝেই উঠতে পারছিলাম না।
মুক্তি পাওয়াটা যে এতটা কঠিন আমি বাপের জন্মে বুঝিনি। গেল অমাবস্যার পর থেকে কীই না করেছি। পরীক্ষায় কিচ্ছুটি না পারা ছেলের খাতা উত্তরে ভরিয়ে দিলাম, ব্যবসায় ডুবতে থাকা ব্যবসায়ীর ক্যাশবাক্সে বান্ডিল বান্ডিল টাকা গুঁজে দিলাম, চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে গলার নলি ছিঁড়ে ফেলা বাচ্চাকে খেলনা দিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। রোজই শুনি “ভোগান্তি”। সবেতেই নাকি স্বার্থ আছে। তারপর আবার একের ক্ষতি করে অন্যের উপকার! কী জানি। অগত্যা আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আর হল না। রাগে ধুলো উড়িয়ে সেদিন সন্ধ্যেতে বসেছিলাম একটা নিম গাছের ডগায়। গাছে তখন ভর্তি হলদে নিমফল আর নীচে একদল লোক। গাছটাকে কেটে ফ্ল্যাট বানানোর তাল করছিল।
এমনিতেই রেগে ছিলাম তারপর আবার গাছটার একটা উপকারের সুযোগ। নিজের হাওয়াপিন্ডিটাকে পাক খাইয়ে কিছু নিমফল ছুঁড়ে মারলাম। কিন্তু তাতেও ভোগান্তি। একটাও লাগল না। মন দিয়ে টিপ করেও পারলাম না। তবে চেষ্টা ছাড়িনি। কেমন একটা নেশা লেগে গিয়েছিল। আর এই করতে করতেই লোকগুলো চলেও গেল।

চারিপাশ শুনশান, কেউ কোত্থাও নেই। গাছে শুধু আমি আর আমার মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকা একরাশ চিন্তা। আপনমনেই ধুলো উড়িয়ে ফলগুলোকে নিয়ে গেলাম বেশ কিছুটা। ওই ছেলেবেলায় ইস্কুল ফেরত পায়ে পায়ে ছোড়া ঢিলের মতো। অনেক দূরে তখন কিছু ভিনদেশি মেঘ বৃষ্টি ঝরাতে ব্যস্ত। ছুটে গেলাম সেদিকে। চোখ মেলে দেখলাম বৃষ্টি। কিন্তু মনটা কিছুতেই ফুরফুরে হচ্ছিল না।অগত্যা সেই বিষণ্ণ মনেই যখন ডেরাতে ফিরলাম ততক্ষণে সেদিনের মতো খবর দেওয়া শেষ। তবুও কেন জানি না, বাঁশঝাড়ের এক কোণে ভাসছিলেন প্রভু। আমাকে দেখতেই বাতাসপিণ্ডরা সব দৌড়ে এসে “মুক্তিইইইইইই” বলে যে যার মতো রাগ, কান্না, চিৎকারে ব্যস্ত হয়ে পড়তেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম। কিন্তু উপকারটা কী করলাম সেটা বুঝিনি। কৌতূহলে প্রভুকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন,
– নিঃস্বার্থভাবে গাছ লাগিয়েছ তুমি! এই উপকার কোটি কোটি উপকারের সমতুল। যাও তুমি মুক্ত।
যাঃ বাবা! মুক্তি পাওয়াটা এত সোজা! আমি ভাবতেই পারিনি।
প্রভুর কথাটা শেষ হতে না হতেই ডেরাটা নিমেষের মধ্যে গড়ের মাঠ। আমার হাওয়াপিন্ডিটা ততক্ষণে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে। আর ঠিক তক্ষুনি এক এক করে মুক্তিইই-মুক্তিইই করে চিৎকার করতে করতে এলো বাকিরা। সকলেই প্রায় কোথাও না কোথাও গাছের বিজ, চারা পুঁতে ফিরলেও প্রভু খালি একটিই কথা বললেন, “স্বার্থ ছিল যে।” কান্না, রাগ, চিৎকারে ভরে উঠn গোটা ডেরা। আর ঠিক তক্ষুনি আমার মুক্তির আগে আমি প্রভুর গলায় শেষ কথাটা শুনতে পেলাম,
– শোনো সবাই। গাছ আর প্রাণ সমতুল্য। সেখানে স্বার্থ থাকলেও সেটা এই উপকারের কাছে খুবই নগণ্য।
তবে তারপর আর কিছু শুনতে পাইনি। কে জানে বেচারারা মুক্তি পেল কিনা!
*ছবি সৌজন্য: Pixabay
ধ্রুব মুখোপাধ্যায় পেশায় সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। নেশা বইপড়া এবং লেখালিখি। আদি নিবাস বীরভূমের সিউড়ি। বর্তমানে কর্মসূত্রে কলকাতাবাসী। ভাললাগা বলতে, মানুষ দেখা আর আড্ডা দেওয়া। প্রথম কবিতার বই ‘চাঁদ নামার শব্দ’।
One Response
স্টাইলটা নতুন, ভালো লাগলো।