হেঁশেলের একদিকের ভর যদি হয় গিন্নিদের দামামা, তো অন্য দিকের ঝুল বাটখারা হল বাসন কোসন। এই হাঁড়িপাতিল, থালা-গেলাস-বাটির ঠোকাঠুকিতেই তো রান্না ঘরের আবহ! গলা উঁচনো কত ঝগড়া চাপা পড়ে যেত বাসনের এই ঝনঝনানিতেই। আবার কত উগ্র রাগের ইতি টানা হত এক থাপ্পড়ে বা এক লাথিতে বাসনের তাগাড় ফেলে দিয়ে। তৈজসের আয়োজনে সে এক বর্ণময় ঘনঘটা, যা তখনও ছিল, আজও আছে। তবে এখন যেমন সবটা মিলিয়ে কিচেন অ্যাক্সেসারিজ়, তখন তা ঘটাপটাহীন শুধুই বাসন। ভালোলাগা, মন্দলাগা বা দেখতে বিচ্ছিরির থেকেও বেশি জোর দিয়ে দেখা হত, কতটা দরকারি এবং বেশ মজবুত কিনা।

ফলে এখন যেমন অতি শৌখিন এবং দামি নতুন থালা-গেলাস-বাটিও চোরে নেয় না, তখন কিন্তু সুযোগ পেলেই এঁটো বাসনও গামছায় বেঁধে চোরে নিয়ে পালাত। কারণ তামা, কাঁসা, পেতল তো চিরকালই বিক্রয়যোগ্য। আর যজ্ঞির রান্না মানেই তো পেল্লায় পেল্লায় সব বাসন! এক হেঁশেলের বাসন অন্য হেঁশেলেও ধার করা যেত। কিছু বাসন হারালেও, বেশির ভাগই ফেরত আসত ঠিকঠাক। আর ইচ্ছে করে হারানো বাসনের খেয়াল হতেই সে এক বিপুল মন কষাকষি এবং চালাচালি বন্ধ। বাসন দিয়ে দেমাক দেখানো, সে এক বড় আগ্রহের জায়গা ছিল সংসারে। তাই কথায় কথায় ভাড়া বাসনের চল ছিল না মোটে। সেটা হয়েছে অনেক পরে।

হারিয়ে পাওয়া বাসন-ধন!
আর একটা মজা ছিল হারানো বাসন খুঁজে পাওয়া। পুকুরে মাজতে গিয়ে প্রায়ই হাত ফসকে বাসন তলিয়ে যেত জলে। তখন গপ্পো ফাঁদা হত যে, জলের ভেতর থেকে ‘যখ’ (যক্ষ) এসে নিয়ে গেছে। পুকুরের জল শুকিয়ে এলে বছরে একবার যখন জল ছেঁচে পাঁক তোলা হত, তখন সেই সব বাসনও পাঁক মেখে উঠে আসত। আর কুয়োয় বালতি পড়ে গেলে কাঁটা দিয়ে পাঁক-সমেত বালতি তোলা হলে পাওয়াই যেত টুকটাক এটা সেটা। যেমন হাত ফসকে পড়ে যাওয়া খুকুর ঝিনুক বা জল খাওয়ার ঘটি বা পেতলের মগ। আর পাওয়া যেত এর ওর বাগান থেকে। কেন? না, প্রবল ঝড় উঠলে থামাবার রীতি ছিল অন্যের বাগানে কাঁসা বা পেতলের একটা বাটি পুঁতে দিয়ে আসা। ঝড় থেমে যাওয়ার পর সে সব আর কারই বা মনে থাকে? পরে বাগানে খেলতে গিয়ে বা মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে হঠাৎ পেয়ে সে কী মজা! চোরেরাও অনেক সময় তাড়া খেয়ে পালাবার সময় ধরা পড়বার ভয়ে মাটিতে গর্ত করে বাসনের পাঁজা লুকিয়ে রেখে পালাত। সুবিধেমতো পরে এসে আর নিতে না পারলে সে সবও না জেনেই কখনও কখনও উঠে আসত শাবলের ডগায়। তবে বাসা বানাবার জন্যে কাকে নিয়ে পালানো ঝকঝকে চামচ বা ঝিনুকের হদিশ কমই মিলত। শহর জীবনে এ সব রোমাঞ্চ কোনওদিনই ছিল না। কারণ ভিড়ে মিশে গেলে কে আর কাকে চেনে? কী বা চোর, কী বা কাক!
কোথায় থাকে বাসন কোসন?
বেশিরভাগ বাড়িতেই তোলা বাসন রাখার জন্যে থাকত ফুলছাপ, ভারি সুন্দর দেখতে বড় বড় পোর্টম্যান্টো বা তোরঙ্গ। আরও একটু সম্পন্ন বাড়িতে থাকত পেতলের, লোহার বা সেগুন কাঠের ভারী সিন্দুক। আমরা অনেক সময় টিংটিঙে চেহারা নিয়ে দুই বোনে তার ওপর জড়িমড়ি বসে লুডো খেলতাম। বানর স্বভাবে আয়েস হত ফুট চারেক উঁচুতে বসতে পেরে। ঠাকুমা এসে তাড়া না করলে নামা নেই। তাড়ার কারণ, এর মধ্যে ধান দিয়ে পাতা লক্ষ্মীর ঝাঁপি ও অন্যান্য পুজোর জিনিসও থাকত। ডালা খোলা হলে ইচ্ছে হত আধো অন্ধকারে নেমে গিয়ে দেখি ওইখানেই সেঁধিয়ে কিনা পাতালকন্যা মণিমালার কুঠুরির পথটি! পাশের তরফে, বড়মাদের সিন্দুক থাকত ভেতর দালানের এককোণে, পুজোর ঘরের পাশেই। তার ওপর থাকত বড়মার আসন, সেলাইয়ের চট, পাড়ের সুতো আর কাঁচি। মামার বাড়ির সিন্দুকের ওপর দিদিমার পানের ডাবর, যাঁতি এই সব ছড়ানো থাকত। আর থাকত ঝুড়ি করে রাখা, বাগান থেকে কুড়নো খোসাশুদ্ধ সুপুরি। সিন্দুক বা তোরঙ্গের অভাবে চটের বস্তায় পুরে মুখ বেঁধেও বাসন রাখা হত।

তবে জমিদার বাড়ি বা বেনেবাড়ি ছাড়া, গেরস্ত বাড়িতে বাসন তো কোন ছার, মানুষজন ছাড়া কোনও জিনিসই গাদা গাদা থাকত না। গিন্নিদের মর্জি অনুসারে ‘তোলা বাসন’ আর ‘চলা বাসনের’ ভাগ ছিল। কোনও কোনও গিন্নির কঞ্জুসি ইচ্ছেতে, ‘ব্যাটাছেলে’দের জন্যে কিছু থালা-বাটি-গেলাস বাদ দিলে, বাকিদের মানে মেয়ে-বউদের খাওয়া ছিল ‘যাতে তাতে’। মানে হাঁড়ির ঢাকায়, শেষ হওয়া তরকারির গামলায় বা ছোট কোনও সানকিতে। পুরনো গিন্নিরা তো খেতেন যে যাঁর কর্তাদেরই এঁটো পাতে। তাঁদের জন্যে আলাদা ‘থালে’র দরকার কী! কিছু গিন্নি আবার ভালবাসতেন বাটি গেলাস সাজাবার নানা ছাঁদ। তাই ব্যবহার না করে সাজিয়ে রাখতেই ছিল বেশি আগ্রহ। গড়পড়তা সংসারে রোজকার ব্যবহারে বাসন একটু বেশিই থাকত, আর অত গুনেগেঁথে রাখাও হত না।
ব্র্যান্ডেড বাসন এল কোত্থেকে?
বাসনের ছিরিছাঁদ নির্ভর করতো নানা সূত্রের ওপর। প্রায় সব বাসনই সেই দিদি শাশুড়ির আমল থেকে হালের নতুন বউদিটি – চলছে তো চলছেই। বাড়ির বেশিরভাগ বাসনই আসলে বিয়েতে যৌতুক হিসেবে আমদানি। তখন সোনার গয়নার সঙ্গে কাঁসা পেতল দেওয়াটাও রেওয়াজ ছিল। আর জামাইকে রুপোর দানে থালা-গেলাস-বাটি ছাড়াও আরও একটি রুপোর জামবাটি। ফলে যে বাড়িতে ছেলের সংখ্যা বেশি সেখানে বাসনের আমদানিও বেশি। আর বাসন মানে এরই সঙ্গে পুজোর বাসন, জলের ঘড়া এবং শৌচের বদনাটিও। ফলে মজা এই যে, নানা অঞ্চল থেকে বউ এলে, সেই সব অঞ্চলের ঘটি বাটিই আসবে। ব্র্যান্ডেড বাসনের চল তো হয়নি!

শিবনিবাস, রানাঘাট, বহরমপুর, যশোর, কুষ্ঠিয়া, টাঙ্গাইল, জলপাইগুড়ি, ভবানীপুর, কলেজস্ট্রিট, বেহালা, বড়িষা বা শ্রীরামপুর… সবই তখন অঞ্চল। বাঙালি হেঁশেলে প্রথম ব্র্যান্ডেড তৈজস সম্ভবত ইন্দুভূষণ মল্লিকের ‘ইকমিক কুকার’ — পেতল এবং লোহার। আর তার অনেক পরে ‘প্রেস্টিজ’ প্রেশার কুকার। ফলে তার আগে বাসনের ব্র্যান্ড মানে, হয় কোনও নাম করা কাঁসারি, নাহয় কাঁসা পেতলের জন্য বিখ্যাত সব জায়গা। এপার বাংলায় যেমন ঘাটাল, খাড়া, হুগলি বা বহরমপুর। আর ওপার বাংলায় টাঙ্গাইলের বাগমারি, মগরা, বগুড়া, সাঁকরাইল। তবে বাসন তৈরিতে কাঁসা পেতলের মান এবং গড়ন অনেকটাই নির্ভর করত কর্তাদের সক্ষমতার ওপর। বলা হত ‘যত গুড় তত মধু’ (মিষ্টি)। কোনওটা তাই ভারিভুরি, কোনওটা আবার ফঙফঙে। সে সব নিয়ে আলোচনাও হত; কম বেশি হত, যৌতুকে বাসন আনা বউ–আদরেও।
এখনকার মতো থালা, বাটি, গেলাস সব যেমন এক ছাঁদের– সেট মেলানো, সেটা হত না। সার দিয়ে পাশাপাশি বসে একই সংসারের মানুষ একই খাবার খেত, নানা মাপের ও গড়নের থালা-বাটি-গেলাসে। তবে নামে নামে ধরা থাকত। বিশেষত, বাবা, কাকা, দাদাদের থালা-বাটি-ঘটি। থালা হালকা হলে আপত্তি ছিল। ভারীতে নয়। এ তো আর পাখির আহার হাতে ধরে বুফে খাওয়া নয়, একেবারে মাটিতে বসে সাবড়ে খাওয়া। কিন্তু পাতলা থালায় আওয়াজ হত, আর মাজার সময় বা হাত থেকে পড়ে বেঁকে গিয়ে গোলের মাপে টাল খেলেই চিত্তির! সে থালা বাটি তো মাটিতে বসালেই কান্নিক মেরে এক কাতে হেলে থাকবে, বা ঘুরতেই থাকবে ঠং ঠং আওয়াজ করে। এসবে বড় অলক্ষণ দেখতেন গিন্নিরা।
নামবাহারি বাসনবিলাস!
সে সব থালার বাহারি নাম এখনও কিছু কিছু পাওয়া যায়। যে মস্ত থালায় ভাগে ভাগে ভাজা রাখা হতো তাকে বলতো ‘বগি’ বা ‘বেলি’ থালা। কর্তাদের জন্য ‘সাগরী’ – তিন-চার ইঞ্চি চওড়া কানা উঁচু বড় থালা। জামাইদের খাওয়াতে বড় থালার উঁচু কানায় পদ্মকাটা বাহার বা ‘চিলমারি’। এছাড়াও ছিল ছোট কানার, তুলনায় মাঝারি মাপের ভাত খাওয়ার থালা ‘কাঞ্চন’। পান্তা খাওয়ার কাঁসি ‘পালোয়ারি’। পুরনো কালের বিয়ের ফর্দে এবং কিছু প্রাচীন দোকানদারদের স্মৃতিতে এ সব নামের হালকা হদিশ এখনও পাওয়া যায়। ‘বালেশ্বরী’, ‘কাস্তেশ্বরী’, ‘রাজেশ্বরী’, ‘রাজভোগী’, ‘রাঁধাকান্তি’, ‘রত্নবিলাস’, ‘কটকি’, ‘বঙ্গী’, ‘বেতমুড়ি’, ‘মালা’, ‘দরাজ’, ‘ঘুটা’ এবং ‘কলতোলা’ থালার কথা। এই ফর্দেই আশ্চর্য হয়ে পড়ি ‘গুড়িয়া’ ও ‘চায়নিজ’ নামে থালার কথাও। জলখাবার প্লেট হল রেকাবি। তেমনই গড়গড় করে আসে বাটির নাম– ‘পলকাটা’, ‘জাম’, ‘ঘড়ি, ‘ঝাঁই’, ‘ঝিনাই’, ‘বেলা’, ‘মালা’, ‘ফুলতুলি’ নামের সব বাটি ছাড়াও ছিল, ‘সাদা বাটি’, ‘কাংরি বাটি’, ‘বোল বাটি’, ‘গোল বাটি’, ‘রাজভোগী’, ‘রামভোগী’, ‘রাঁধেশ্বরী’, ‘কাজলকাটি’ এবং ‘জলতরঙ্গ’ নামে হরেক রকম। এর মধ্যে আমার মনে ধরেছে ‘রাঁধাকান্তি’ আর ‘রাঁধেশ্বরী’ নাম দু’টি।

আর হাতার নামও বা কম কিসে! আদরের সব কন্যা বিধুমুখী-শশিমুখীর মতোই ‘বোয়ালমুখি’, ‘চন্দ্রমুখি’, ‘চাপিলামুখি’, ‘পঞ্চমুখি’, ‘কবুতরবুটি’ বা ‘ঝিনাইমুখি’। ঢাকনা দেওয়া জল খাওয়ার গেলাসগুলো ছিল পেল্লায়, মাঝারি এবং ছোট। ছোটপিসির কাছেই মনে হয় দেখেছিলাম, পিসেমশাইকে দানে দেওয়া সন্দেশগ্লাস। সেই একসঙ্গে জোড়া, চারটে গ্লাসের একটাতে মাখা সন্দেশ, একটাতে জল, একটাতে ছেঁচা পান আর একটাতে পানের মশলা। আর ছিল নানা মাপের ও নামের জগ – ‘কৃষ্ণচূড়া’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’, ‘ময়ূর’, ‘বকঠোঁট’, ‘আঁধারমালিকা’। এই রকমই ছিল নানা মাপের পেতলের কলস বা ঘড়া। এখন সব জগা খিচুড়ি হয়ে সাবেক বাসনের তালিকায় ঢুকলেও এর মধ্যে মিলে মিশে আছে নানা অঞ্চল আর কারিগরদের হাতযশ, আর তা হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে। কারণ এসব বাসন ব্যবহার করতেন সব সম্প্রদায়ের বাঙালি পরিবার।
বাসনে নাম লেখাবেএএএন!
বিয়ের যৌতুক ছাড়াও বাচ্চার অন্নপ্রাশনে, বিশেষত ছেলেদের ক্ষেত্রে, তার মামার বাড়ি থেকে বাসন আসত তত্ত্বে। সেসবে খোকার নাম লেখা থাকলেও কিছুদিন পরই তা অবশ্য মিশে যেত পাঁচজনের বাসনে। ফলে সেই মেজকাকা যখন পাকা চুল, তখন হয়তো সাত আট বছরের বালিকা আমি, তাঁর অন্নপ্রাশন বা পৈতের ‘খুশু লেখা জামবাটিতে তালের বড়া খাচ্ছি। বামুনবাড়িতে পৈতে হওয়া সদ্য বামুনকে নতুন কাঁসা পেতলের থালায় সিধে দেওয়ার রীতি ছিল। তাই ‘অন্নপ্রাশন’ লেখা থালা-বাটির সঙ্গে পাওয়া যেত, ‘উপনয়ন’ লেখা বাসনও। এছাড়াও বামুন হলেই নানা সময়, নানা দান আসত নতুন ঘটিবাটি-থালায়। সেই সব মিসম্যাচড বাসনও জুটে থাকত গিন্নিদের সংগ্রহে।
আর ছিল সই পাতানোর রেওয়াজ। দুই সই ‘হেনা’, ‘কাজললতা’ বা ‘গঙ্গাজল’ পাতিয়ে, দু’জনে দু’জনকে মিষ্টি দিত নতুন বাটি ভরে। অনেক সময় তাতে খোদাই করা থাকত সই-নাম। যেহেতু নিজের বলে আলাদা কোনও জায়গা ছিল না, তাই সে বাটিও মিলেমিশে থাকত এক তাগাড়ে। অনেক গিন্নি বা কর্তা, যাঁরা বন্ধকী কারবার করতেন, তাঁদের কাছে সোনা ছাড়াও বাসন বন্ধক রেখে টাকা পাওয়া যেত। সমস্যায় পড়ে দরিদ্র বউ মেয়েরা অনেক সময় ঘরের বাসন গোপনে বাঁধা দিয়ে সুদ-সহ টাকা শুধে তা আর ছাড়াতেই পারত না। তাই কোনও কোনও বাড়িতে এও ছিল বাসন আমদানির এক সূত্র।

এই সব বন্ধকি কারবারিদের ঘরে এমন এমন নাম খোদাই করা থালাবাসন চোখে পড়ে যেত, যে নামের কোনও মানুষই ও বাড়িতে নেই। কিন্তু ওই নামেই অন্য কোনও পরিচিত বাড়িতে আছে। বোঝা যেত, এ সব হল না-ছাড়ানো বন্ধকী বাসন। তবে গিন্নিরা একটু সম্পন্ন আর শৌখিন হলে বাসন কেনাও হত। বিশেষত কাশী এবং পুরী গেলে। ‘পুরীর স্মৃতি’ লেখা নৈবেদ্য সাজানোর থালা বা ভোগ রাঁধবার হাঁড়ি নেই, এমন বাঙালি বাড়ি কমই ছিল। যারা যেতে পারত না, অর্থাৎ দরিদ্র প্রতিবেশী বা বামুনদিদি বা আলতাবউ, তাদের জন্য মনে করে এই সবই উপহার আনতেন গিন্নিরা। এছাড়াও যে সব মেয়েদের ভিন প্রবাসে বিয়ে হত, বাপের বাড়ি আসার সময় তারাও সে সব অঞ্চলের বাসন, বিশেষত প্রদীপদান, পানের ডাবর, যাঁতি এসব কিনে আনত মা-মাসি-কাকি-বউদিদের কথা মনে করে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতো কাঁসারিরা। পুরনো, তোবড়া, ফুটো হয়ে যাওয়া বাসন বদলে নতুন দিয়ে যেত। ভরন কাঁসায় খাদ থাকত বলে তার কোনও এক্সচেঞ্জ ভ্যালু ছিল না। খোদাইকারেরা বার-উঠোনে থেবড়ে বসে ছেনি বাটালি চালিয়ে টুকুর টুকুর শব্দ করে নতুন কাঁসার থালা-বাটিতে নকশা এঁকে নাম খোদাই করে দিত সারা দুপুর জুড়ে।

কাঁসা-পেতল তামা-পাথর
পেতলের বাসনে কষ উঠত বলে খাওয়ার বাসন ছিল মূলত কাঁসার। তামার ঘটিতে জল খাওয়ার রেওয়াজ ছিল, তবে সে সব বেশি ব্যবহার হত পুজোর কাজে। আর ছিল লোহার বাসন। রোজকার ব্যবহারের চাটু, কড়াই, খুন্তি, সাঁড়াশি, হামানদিস্তা। মাঝারি ও ছোট মাপের লোহার কড়াই এবং ছোট বালতি ভেঙে বা ফুটো হয়ে গেলে, ফেলে না দিয়ে মাটির তোলা উনুন বানিয়ে ফেলত গিন্নিদের শাগরেদ ওই বামুনদিদি বা ঘুঁটেবুড়ি। ভাত রান্নায় দুধ জ্বালে অবশ্য অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি আর ডেকচি। তুবড়ে তাবড়ে গেলে মেরামতি এবং বদলে নতুন। এসবে নাম লেখার রেওয়াজ ছিল না। তবে মাজা হত রুপোর মতো করেই।

এর সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার হতো পাথরের বাসন। বিশেষত দই বসাতে আর সিন্নি মাখতে। নিরামিষাশী বামুন-বাড়ির বিধবারা পাথরের থালা-বাটি-গ্লাসে জল খেতেন এবং পুজোপার্বণে ব্রাহ্মণ খাওয়াতেন। চাল-ডাল ভেজাতেও পাথরের বাটি। সাদা পাথর, কালো পাথর, দু’য়েরই বাসন হত। কাঠের বেলনার সঙ্গে সাদা পাথরের চাকিও পছন্দ করতেন গিন্নিরা। শিলনোড়ার পাথরের থেকে এইসব পাথর আলাদা হত। এগুলিও বেশ ভারীই হত, সহজে তাই ভাঙত না। একটু আধটু চটে গেলেও অবলীলায় ব্যবহার হত। চিনামাটির বয়েমের মতো, বাটিও পাওয়া যেত, গিন্নিদের প্রিয় হাত-নুটকো, বিশেষত নুন রাখার জন্যে। চুন ভেজানোও হত এতে। এসবের ব্যবহারে ছিল গিন্নিদের নিজস্ব মর্জি, আর হাতের কাছে পাওয়া না-পাওয়া।

সাধারণ সংসারে পাথর বা চিনামাটির বাসন না থাকলেও চলতি ব্যবহারে ছিল কাঠের বাসন। কাঠের চাকি বেলন ছাড়াও দু’একখানা কাঠের বারকোশও প্রায় সব ঘরেই থাকত। ঝুনো নারকেলের মালা ফেলে না দিয়ে যত্ন করে চেঁচে, নুন, কাঁচালঙ্কা এবং বাটা মশলা রাখতে এই সেদিনও দেখেছি, কারণ এই মালায় জল বসে না। তাই সবসময় শুকনো থাকে। এর সঙ্গেই মিশে থাকত মাটির কিছু সরা হাঁড়িও। তুলনায় না- সম্পন্ন মানুষরা রান্নার জন্য অনায়াসে ব্যবহার করতেন পাকা পোড়ানো মাটির হাঁড়ি, কড়া এবং চাটু। এইসব কড়া-চাটুতে অল্প তেল মাখিয়ে কলাপাতার ওপর রেখে এপিঠ-ওপিঠ সেঁকে বানানো পাতুরি তো স্বাদে অসামান্য। আর অল্প পোড়ানো হাঁড়িতে রাখতেন গুড়, চাল-ডাল। কালো বা লাল মাটির ঘড়া-কলসি–কুঁজোয় খাবার জল। আর সব সংসারেই থাকত মুখে মালসা ঢাকা দু’একখানি বড় জালা- এটা সেটা জমিয়ে রাখবার জন্যে, কারণ এসবে চট করে পোকা লাগে না।
বেতের বাসন ভুললে হবে!
এতেও বাসনের গপ্পো পুরো হবে না কুলো, ডালা, ঝুড়ি, কুনকের কথা না টানলে। বাঁশ, বেত, ঘাস, নারকেল কাঠি – যে অঞ্চলে যেমন পাওয়া যায়। কাঁচা সবজি রাখতে, কাটা সবজি, মাছ এসব ধুতে এবং তেল ঝরিয়ে লুচি-নিমকি ভেজে তুলতে ঝুড়ি তো লাগবেই। আঁচল চাপা আদর ছিল, ঢাকাঢুকি দেবার জন্য লোহার ঝাঁজরি চাপা ছাড়াও নানা মাপের খোঁপা-বাঁধা ঝুড়িতে, যার খোঁপাটুকু লাল রঙে রাঙানো। এতে কোনও গরিব বড়লোক নেই। ডালায় শুকোবে ধোয়া লঙ্কা, গোটা হলুদ, আচারের আমলকি, তেঁতুল, কুল এইসব।

কুলো চাই চাল বাছতে আর মশলা ঝাড়তে। আর বেতের কুনকে? সে হল লক্ষ্মীচিহ্ন- হাঁড়ির চাল মাপতে প্রতিদিন। আর বাতাস খেলিয়ে কাটা ফল বা রান্না খাবার ঢাকাঢুকিতে খোঁপাবাঁধা ঝুড়ি। আর এসবও একটা দু’টো থাকতো না, পুরনো কাপড়ে মুড়ে ঘরের চালের মাথায় বা ভাঁড়ার ঘরে গোঁজা থাকত থরে থরে। মেলার সময় ছাড়াও হাট থেকেও কেনা হত। আর লাগত পাটের দড়ির ‘ছিকে’ (শিকে)– নানা কিছু ঝুলিয়ে রাখতে। উনুনের পাশের দেওয়ালের হুকেই টাঙানো থাকত তেলের আর গুড়ের হাঁড়ি। হাতের গিঁট দিয়ে দিয়ে কত রকম যে ছিকে বোনা ছিল! সাধারণ হেঁশেল, যেখানে তাকের বালাই নেই, সেখানে সবই ঝোলানো হত এই শিকে থেকে। প্রবাদই তো ছিল, ‘জ্ঞান বুদ্ধি সব কি শিকেয় তুলে দিলে? ’

বলি ঝি-বেটি আজও কামাই!
এ তো গেল বাসন কোসনের আয়োজন কথা। এর অন্য দিকের গপ্পোটাও একটু বলি!
তাধেই মাধেই শুরু হত বাসন মাজার ‘ঝি’ – অমুকের মা বা তমুকের মা না এলে। দু’বেলা আসত তারা, হয় টেপা কল, না হয় পুকুরে নিয়ে গিয়ে পাঁজা পাঁজা বাসন মাজতে। মাটি, ঘাসবিচালি, ছাই– এইসব দিয়ে মেজে সোনার মতো ঝকঝকে কাঁসা, পেতল আর রুপোর মতো চকচকে সিলভার, অ্যালুমিনিয়াম আর লোহার বাসন। আগুনে বসানোর আগে সব বাসনের পিছন দিকে মাটি লেপে নেওয়া হত বলে পোড়া লাগত না। কালো কড়াই এবং চাটু ব্যবহার করতে করতে সাদা হয়ে আসত। ভালো করে না মাজলেই সব ঝোল তরকারিও কালো ঝুল। রান্না ঘরের মেঝে মুছে উপুড় দেওয়া শুকনো বাসন ব্যবহারের আগে শুঁকে দেখতেন গিন্নিরা। আঁশটানি গন্ধ নাকে লেগেছে কি তুলকালাম! বাসন মাজায় একটু বিলাস মানে নুন মাখানো লেবু বা পোকা ধরা পাকা তেঁতুল। ‘ঝি’ না এলেই মাথায় হাত। কে মাজবে ওই পাঁজার থালা-বাটি-গেলাস! তার ওপর ‘এঁটো কাঁটা একাক্কার।’

তখন কোনওরকমে রান্নার মতো হাঁড়ি–কড়া-ডেকচি মেজে খাওয়ার ব্যবস্থা কলাপাতায়। বাগানে গিয়ে সটাসট কয়েকটা পাতা কেটে, সেগুলোকে সাইজ মতো টুকরো করে ধুয়ে, শুকনো গামছায় মুছে এক পাশে রাখা হত। পিঁড়ি বা আসন টেনে বসো আর কলাপাতা পেতে খেয়ে আঁচাও। কোথাও কোথাও শাল পাতা, পদ্মপাতা এমনকি কচু পাতাতেও তো খেয়েছি বাড়ির আহার। আর খবরের কাগজে ঢালাও মুড়ি তেলেভাজা। কলকাতায় থাকতে এসে দেখলাম, খড়মড়ে শালপাতা এবং ফ্যাকাসে শুকনো কলাপাতাও বিক্রি হয়। সময়ের দাবি মেনে, বড় ঘর ভেঙে ভেঙে দেশলাই বাক্স, মাঠঘাট হাপিশ করে বসতি আর দূরপাল্লার উড়ানে অন্য অন্য মহাদেশে সংসার পাতা। উন্নতির নামে বাঙালি জীবনের এই অধোগতি রোখে কার সাধ্য! আর ঘরে ঘরে কলের লাইন এসে কবে যেন লোহাময় (আয়রন) হয়ে গেল জল। নদীগুলো দম আটকাল পানার স্রোতে। পুকুর, কুয়ো সব বাতিল হয়ে কিছু কিছু না-গভীর নলকূপ বসে গেল এদিক সেদিক। যত ভালো করেই মাজা হোক না কেন, বাসনে আর আয়নার মতো মুখ দেখা যায় না। সব যেন মাটি লেপা।

বাসন বিবর্তনী
অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে কিছুদিন পাল্লা দিল কলাই করা সাদা থালাবাটি। শেষে এসে থামল স্টেনলেস স্টিলের বাসনে। তখন থালা-গেলাস-বাটি তো বটেই, ঘড়া, কড়া, হাঁড়ি, বালতি, ঝুড়িও স্টিলের হয়ে গেল। এই দাপটের মধ্যেই এসে গেল মেলামাইন আর প্লাস্টিক। দামে সস্তা, ব্যবহারে হালকা আর দেখতে ঝলমলে। বিপদ সংকেত এল ক্যান্সার, ক্যান্সার। সাধারণ সংসারে এখন তাই নতুন এক জগা খিচুড়িতে তামার বোতল, কাচের গ্লাস, স্টিলের থালাবাটি। সম্পন্ন সংসারে এখন অবশ্য বাসন কেনা হয় উনুন-ভেদে। মাইক্রোপ্রুফ, ইন্ডাকশানের আলাদা আলাদা বাসন। নানা কোম্পানির ননস্টিক বাসন উইথ লিড, মানে ভেতর দেখা যায় এমন এক একখানি ঢাকা। সঙ্গে নানা মাপের কাঠের হাতা, খুন্তি, চামচ। ইলেকট্রিক কেটলি, ক্যাফে ক্যারাফে এসব এখন জলভাত। ফ্রিজে রাখবার নানা রকম ঢাকা দেওয়া পাত্র। বঁটির বদলে বিভিন্ন মাপের ছুরি– কাটার, পিলার, স্লাইসার। যদি রাইস কুকার ও এয়ার ফ্রায়ার থাকে তো গিন্নিদের দর বাড়ে। আর আগের ক্যাসারল বাতিল করে, সুদৃশ্য কাঠের ক্যাসারল আর তামার তৈজস। এবং চোখে পড়লেই মেলা থেকে কেনা মাটির জগ ও বোতল। তবে সাধারণ সংসারে এখনও সেই লোহার কড়া, খুন্তি, সাঁড়াশি আর সিলভারের হাঁড়ির সঙ্গে বাঁশের ঝুড়ি-কুলো-ডালা। গ্রামের দিকে অনেক বাড়িতেই এখনও মাটির তৈজস, অনায়াস ব্যবহারে। তবে সঙ্গে জুটেছে, উৎপাতস্বরূপ কাগজের বা থারমোকলের থালা বাটি। যে কোনও গণআহারের পর যার নোংরা স্তূপ এক বিভীষিকাই বটে।
যদি চাই পুরনো বাসন?
শপিং মলগুলোতেও তাই সেই সব বাসনেরই সম্ভার যা এখনকার গিন্নিদের পছন্দ। তবু যদি ঢুঁ মারতে ইচ্ছে করে সাবেক বাসনের একটু ‘ই দিক ওদিক’ নমুনা খুঁজতে তো সোজা কালীঘাট। মন্দির চত্বরের পিছনে ধুতি পরা, খালি গা, ভুঁড়িওয়ালা দোকানিদের গদি পাতা দোকান। পেতলের তিন পায়া গামলা, সাবানদানি, গরম কড়া নামিয়ে রাখবার গোল স্ট্যান্ড, মজবুত সাঁড়াশি, সাদা পাথরের ঢাকা দেওয়া গেলাস, তামার ঘটি– মনের মতো সব জিনিস। এখনও বড়বাজার আর চিৎপুর হল কাঁসা পেতল ও তামার বাসনের স্বর্গরাজ্য। আর আমার পছন্দের উত্তর কলকাতার সেই আদি অকৃত্রিম বাসনের দোকান ‘বগলাচরণ কুণ্ডু’। ভবানীপুরে খুঁজে পেতে পেয়েছি, মশলা রাখার তামার পাত্র আর ভেতরে খোপকাটা পানের ডিবে। রুপো নয়, জার্মান সিলভারের। পেঞ্চ বেড়াতে গিয়ে মেয়ে এনে দিয়েছে মাটির কিছু ‘গ্রামুরে’ বাসন। আর বলে রেখেছে, লকডাউন উঠলে বারুইপুর যেতে। গোবিন্দপুরের কুমোরবাড়ি থেকে তার জন্যে যেন মাটির কড়া আর চাটু মনে করে কিনে রাখি।

এ প্রসঙ্গে বলতে ইচ্ছে করছে আমার বাপের বাড়ির বাসন সংগ্রহের কথা। আজ পর্যন্ত পুরনো তামা-কাঁসা-পেতল বলতে যেটুকু যা আছে, সে সবই আমার ঠাকুমা প্রিয়লতা এবং তাঁর শাশুড়ি চারুশীলার আমলের। বাবার বিয়ে হয়েছিল যৌতুকবিহীন, সেই কারণে মায়ের বাপের বাড়ি থেকে আসা কোনও বাসন নেই। আর আমার ঠাকুরদা এবং বাবা যেহেতু এক ছেলে, তাই অন্য বউদের সূত্রে বাসন আসারও প্রশ্ন ওঠে না। একই সঙ্গে আমাদের যেহেতু কোনও ভাই নেই, তাই বউদি সূত্রেও কোনও বাসন নেই। বাবা যেহেতু ‘বামুনে’র দান নিতেন না, তাই সেই হিসেবেও কোনও পাওনা নেই। তবে নাতির সূত্রে আমদানি হয়েছে, তার ‘দিদুনবাড়ির ভাত’ অনুষ্ঠানে। নানারকম উপহারের মধ্যে বড় আপনার লেগেছিল কলেজের দারোয়ান ও পিওনদের তাঁকে উপহারে দেওয়া কাঁসার বাসনের এক অমূল্য সেট। মেয়ে এখনও না নেওয়ায় সেটি আজও আমার হেফাজতেই এবং অব্যবহৃত।

পুরনোতুনের মিলমিশ
এই সব সাবেক বাসনের ব্যবহারেও ভারি মজা লুকিয়ে ছিল। আমার বাবা চিত্রশিল্পী হওয়ায় কাঁসা, পেতল, পাথর, কাঁচকড়া (পোড়ামাটির ওপর পাথরের পালিশ তোলা) মানে বাড়ির বেশিরভাগ বাসনই ছবি আঁকার কাজে লাগিয়ে নিয়েছিলেন। এমনকি কাঠের বারকোশগুলোও। আমার ওই একটু সাহেবি ধাঁচের বাবা-মায়ের বিশেষ পছন্দের ছিল চিনামাটির থালা বাটি, মানে ইংলিশ ডিনার সেট বা কাঠের তৈজস। ঠাকুমা অবশ্য সাবেক কাঁসাপেতল এবং পাথরের থালাই পছন্দ করতেন। মায়ের সংসারে আধিপত্য ছিল নানা ছাঁদের চিনামাটির মাগ আর শৌখিন টিফিনবাক্সের। আমার সংসার আপাতত মেয়ের গড়নেই ইউজার ফ্রেন্ডলি। তবে যে একটা বিষয়ে আমি একবগগা, তা হল গরম খাবারের বাটি টেবিলে রাখতে খান কয়েক ছোট মাপের বারকোশ। এতে মাগ সাজিয়ে চা-ও পরিবেশন করি। ঠাকুমার তামা পেতলের ঘটিগুলো বার করে মাঝে মাঝে ভাবি জল খেলে তো পারি! তখন মনে পড়ে জল খেলেই তো হল না, কারণ আদর করে একে তো ডাকতেও হবে ‘ঘট্ট’ বলে! আর সেই দম কি আমার আছে যে, এক লিটার জল এক নিঃশ্বাসে আলগোছে ঢকঢক করে খেয়ে ঘটি নামিয়ে বলব, ‘হল!’
বাসনের সংগ্রহ তাই চিরকালই মিলিয়ে মিশিয়ে ঘটে যাওয়া। ডিনার সেট ছাড়া সবই তো ওই এটা সেটা– হলেই হল আবার না হলেই নয়। আমার কাছে সবই তাই রান্নাবাটি খেলার স্মৃতিকাতরতা। একেবারে শৈশবে খড়দার রাসের মেলা থেকে ঠাকুমার কিনে দেওয়া ‘হাতে পো-কাঁখে পো’ পুতুলের সঙ্গে মাটির হাঁড়িকুঁড়ি, শিলনোড়া আর তিন ঝিঁকের উনুন। মেয়ের সময় ছড়াছড়ি যেত মায়ের কিনে দেওয়া কখনও স্টিলের কখনও বা প্লাস্টিকের খেলনা বাসন, গ্যাসওভেন ও প্রেসার কুকার। আর নাতির রান্নার সেটে এল মজবুত ব্যাকেলাইটের উইথ লিড প্যান, মাইক্রো, ইন্ডাকশান এবং খানদু’য়েক সারভিং বোল। এই সব বাসনে সে আমায় পিৎজা আর চিকেন-মাশরুম সালাদ ‘মিচিমিচি’ বানিয়ে অনেকবার খাইয়েছে। আমার তাই সত্যিই গুলিয়ে যায় কোনটা সত্যি আর কোনটা মিছিমিছি!
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।
11 Responses
চমৎকার লেখা।
ধন্যবাদ আপনাকে। নমস্কার জানবেন।
খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ আপনাকে, খুব উৎসাহ পেলাম।
অপূর্ব লেখা। সংগ্রহে রাখার মতো। কিন্তু যত দূর জানি বগুড়া তো পূর্ববঙ্গে। তাকে এ পার বাংলার বলে উল্লেখ করা হল কেন?
ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। অনেক ধন্যবাদ
খুব ভাল লাগল
ধন্যবাদ এত সম্মান দেওয়ায়। আর বগুড়া বোধহয় সীমান্ত রক্ষীদের নজরদারি কোনও ভাবে এড়িয়ে, এপারের বগুলার কাছাকাছি চলে এসেছিল। ঘটি হওয়ার দায় এটি , ভ্রম নয়। এজন্য আপনাকে এবং পল্লবী মজুমদারকে আরও একবার ধন্যবাদ।
পড়তে পড়তে আদ্যিকালের বামুন বাড়ির নিরামিষ ঘর,আমিষ ঘর,ভোগের ঘর, ভাঁড়ার ঘর পেরিয়ে এই জমানার কিচেন স্টুডিও তে এসে গেলাম।ভারী মসৃণ রি যাত্রাপথ, আদৌ মিচিমিচি নয়❤
khub valo lekha…dekhe to anekei..kintu takey emon sensitive bhongi te mele dhorte parey k-jon…khub valo
ছোটবেলা মনে এল। এ শুধু বাসনের কথা না, তাকে সঙ্গে করে সামাজিক বিবর্তন