banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আইঢাই: কর্তাদের হেঁশেলিয়ানা

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Debasis Deb

হেঁসেল ‘ঠেলতেন’ গিন্নিরা। তবে তার আসল লাগামটি থাকত কিন্তু কর্তার হাতে এবং সেটা মেয়েদের উপার্জন শুরু হবার পরেও। বিশেষত যৌথ পরিবারে, যেখানে একজনের উপায়ে অন্তত জনা পনেরোর খাবার যোগান দিতে হত, এবেলা ওবেলা। ফলে পরিবার পরিজন থাকত ভিটে বাড়িতে আর বাবুটি থাকতেন কর্মস্থলে। মানি অর্ডারে টাকা আসত। এখনকার মতো ই. এম. আই দিয়ে গাড়ি বাড়ি বা অন্যান্য যাবতীয় যা কেনার চল, বা ছেলেমেয়েকে বিদেশে পড়তে পাঠানোর এই রৈ রৈ ব্যাপারটা তো একেবারেই ছিল না। উল্টে, জমিজমা এবং ঘরের সোনা ও ঘটিবাটি বন্ধক দিয়ে বা বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে, বা অন্যান্য ধার কর্জ মেটাতে হত। হেঁশেল ঠেলতে গিন্নিদের তাই, সত্যি সত্যি হাত পেতেই চলতে হত কর্তাটির কাছে একজাতের গিন্নি ছিলেন ‘এলো ঢেলো’ খরচে, আর অন্য জাতেররা ছিলেন ‘আঁট সাঁট’, মানে আয় বুঝে ব্যয়। তাঁরা সবসময়ে ‘ঘর বলে’ একটু সঞ্চয় করতেন। এ দু’য়ের মেলানো মেশানো ছিলেন গড়পড়তা বেশির ভাগ গিন্নি।

গিন্নিদের মতো, কর্তাদেরও রকমফের ছিল। একদল যেমন ছিলেন ফোতো নবাব, অপরদল ছিলেন বিচক্ষণ। সহজ ছিল তেজারতি আর বন্ধকি ব্যবসা। তবে তাতে সম্মানহানি হত, লোক ঠকাবার অপবাদে। পরিশ্রমী ও সুস্থ বুদ্ধির কর্তারা তাই পৈত্রিক জমিজমার দেখভাল করতেন। দূরের জমি চাষ করাতেন চাষি দিয়ে, ঘর সংলগ্ন জমিতে একটু ফলের গাছ রাখতেন, গরু, ছাগল, হাঁস পুষতেন বাড়িতে, পুকুরের দেখভাল করে মাছের যত্ন করতেন। জীবনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগে ছিল চাষ, পশু পালন ও মাছের দেখভাল। নুন আর কেরোসিন ছাড়া আর কিই বা কিনে খেতে হত! দারিদ্র্যও ছিল তাদেরই, যারা ভিটেহারা এবং ভূমিহীন। তারা খুবই বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল ছিল সম্পন্ন পরিবারগুলির বদান্যতার ওপর; হয় কাজ পেতে না হয় তো দানের ঔদার্যে এই বিপুল সংখ্যক উদ্বৃত্ত, অসহায় এবং অসংগঠিত মানুষদের জন্য একসময় ভূ-দান আন্দোলনও হয়েছিল। আমাদের এই কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিজীবী মানুষই তো ছিল প্রায় তিন ভাগ।

Maw Phanlur
মেঘালয়ের কাছে মও ফানলুর গ্রামে প্রকৃতি আর মানুষের সহাবস্থান। ছবি সৌজন্য – Youtube.com

বছর কয়েক আগে, শিলং হয়ে মেঘালয় বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছলাম মও ফানলুর (Maw Phanlur) গ্রামে মেঘালয়ের পশ্চিম খাসি অঞ্চল। হোম স্টের মালিক ট্রান্সিস (Transis Syiemlieh) নামে একটি লোক মায়াময় প্রকৃতি আর তার দিন রাতের মোহময় বিস্তার ছাড়াও, আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম এদের ঘরকন্না  দেখে। রান্নাঘর সংলগ্ন সবজি খেত। নানা রকমের স্থানীয় শাক, ফুলকপি, গাজর, কুঁদরি, লঙ্কা আর আপনা আপনি গজানো ছত্রাক – কী যত্নেই না বুনেছে! আর একটু দূরে ছোট ছোট খেতে স্থানীয় ধান। সেই সঙ্গে মুরগি, শুয়োর এবং ভেড়া পালন – মাংসের জন্য। তারই সঙ্গে যোগ হয়েছে ঝকঝকে হ্রদের জলের পাহাড়ি মাছ। সাধারণ   খাবার, সত্যি অর্থে ডাল, ভাত (স্টিকি রাইস) আর সবজি ফেলা মাংসের স্যুপ বা স্যাঁকা মাছ, কিন্তু টাটকা অনুপানে বানানো বলেই অত সুস্বাদু। মালিকানা মেয়েদের। যাবতীয় কাজও মেয়েরাই করে, আর সবাই হাসি মুখ। কোনও দেখনদারি নেই। দু’একটা জিনিস কিনতে বাজার যেতে হয়, বাকি সব আশে পাশেই হয় আর অনায়াসে। বহু যুগ পর, প্রকৃতি আর মানুষের ভালবাসার সহাবস্থানে এমন আশ্চর্য গৃহসুখ আয়েস করে উপভোগ করেছিলাম, হোক তা দু’চারদিন ! 

Malati Ashram
মালতী আশ্রম। ছবি সৌজন্য – indianjourno.blogspot.com

এরকমই আর একটা দ্বীপ এখনও অটুট অঙ্গুলের ‘বাজি রাউত’ ছাত্রাবাসে, যাকে এখনকার মানুষ চেনে, ‘মালতী চৌধুরী আশ্রম’ বা ‘মালতী আশ্রম’ বলে। অনাথ ছেলেমেয়েদের এই আবাসটিতে একটি ইশকুলও চলে। গাছপালা  দিয়ে ঘেরা সত্যিই এক আশ্রম। ছাত্ররা ছাড়াও বিভিন্ন কোয়ার্টারে, মাস্টার মশাই ও দিদিমণিদের পরিবার। সকলে মিলে গাছপালার যত্ন করেন, চাষ করেন, পড়ান, যোগ দেন নানা অনুষ্ঠানেরোজকার ডাল ভাতের তাই অভাব নেই। প্রায় পঁচাত্তর বছর আগে, এই আবাসটি গড়ে তোলা হয়, কিশোর শহিদ বাজি রাউতের নামে।

Malati chowdhury
মালতী চৌধুরী, যাঁর নামে আশ্রম। ছবি সৌজন্য – wikipedia.org

উড়িষ্যার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী নবকৃষ্ণ চৌধুরী এবং তাঁর অতি উচ্চ শিক্ষিত বাঙালি স্ত্রী মালতী চৌধুরী (নুমা) — এই দুই আজীবন  সংগ্রামীর উদ্যোগে। অসামান্য এই মানুষ দু’টি পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন। ১৯৪৪ সালে কটক জেলে বন্দি অবস্থাতেই মালতী জানতে পারেন , ঢেঙ্কানাল প্রজা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত জেলবন্দি মানুষগুলির কথা, যাঁদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে, পরিবারের মানুষগুলির ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছেন ঢেঙ্কানালের রাজা, কারণ ঢেঙ্কানাল তখনও প্রিন্সলি স্টেটসন্ত্রস্ত সেই পরিবারগুলির এবং তাঁদের নিজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে গড়ে তোলা এই আশ্রমটি  হয়ে ওঠে অভিভাবকহীন ছেলেমেয়েদের ঘরবাড়ি। কটকের বিশাল বাড়ি ছেড়ে এখানের মাটির কুটিরেই জীবন কাটান তাঁরাতাঁদের ছোট মেয়ে কৃষ্ণা মোহান্তি, তখন যাঁর বয়স ছিল সাত, আজও সেই পরম্পরা মেনে চলছেন। তাঁর দেশিকোত্তম উপাধি পাওয়া, শান্তিনিকেতনের আশ্রমকন্যা মা এবং মানবতাবাদী ত্যাগব্রতী বাবার মূল্যবোধ মেনে। অঙ্গুলের আশ পাশ ছেয়ে গিয়েছে মস্ত মস্ত কারখানায়। এরই মধ্যে ছাত্রাবাসটি যেন এক দ্বীপ। ঘরবসতে তাই সবুজের আয়োজন আর নিজেদের শ্রমে চাষ। এমনকি এই সব অঞ্চলের নানা রকমের ধান ও শস্য আবার খুঁজে এনে, ফলনের চেষ্টা করছে তারা তার সঙ্গে সোলার কুকারের নিয়মিত ব্যবহার। বার বার এখানে গিয়ে থেকে, খেয়ে এবং একেবারে কাছ থেকে দেখে বুঝেছি যে, এ ভাঁড়ারে টান পড়া তাই শক্ত। 

এই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রসঙ্গেই মনে পড়ল, বাবার ইশকুল বন্ধু বালেশ্বরের রবি জেঠুর কথা। রবীন্দ্রমোহন দাশ এবং তাঁর স্ত্রী গোদাবরী দাশ ইংরেজ আমলে দু’জনেই জেলে। বাড়িতে বাবা, মা, দুই কিশোরী মেয়ে ছাড়াও নানা পরিজন। জেল থেকে বেরিয়েও যে কাজ পাবেন, এমন নয়। তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবন নিরাপদ করতে জেঠুরই এক বন্ধু, চাঁদিপুরে একটি নির্জন পোড়ো দ্বীপ দান করেন। সেই দ্বীপে চাষি প্রফুল্ল কাকাকে সপরিবার বসত করিয়ে, ওই বনভূমিকে গড়ে তোলেন এক শস্য শ্যামলা আবাদেগাছের ফল, পুকুরের মাছ, আর নানা জিনিসের চাষ সসম্মানে বাঁচিয়ে দিল তাঁদের সংসার যাপন। এই লক ডাউনের বাজারে এখনও সেখান থেকে তেল ছাড়া প্রায় আর সব কিছুই গোপালগাঁওয়ের বাড়িতে এসেছে বলে, ওই বাড়িতে থাকা আশ্রিত এবং স্বল্প আয় পরিবারগুলির সংসারে আকাল দেখা দেয়নি।

অথচ জেঠু-জেঠিমা তো কবেই চলে গিয়েছেন। আর তাঁরা বেঁচে থাকতেও তাঁদের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে দেখছি, গোপালগাঁও এর ভিটে বসতেও কাকিমা অড়হরডাল, হলুদ, কলা ও অন্যান্য সবজি নিজে হাতে দেখভাল করছেন। ঝুড়ি ভরে কুড়িয়ে রাখা – বাড়ির গাছের আম, জামরুল, নারকেল ও  সুপারি। আর সে সময় জেঠু কিন্তু একজন নাম করা এম. এল. এ এবং বাড়ি ভর্তি আশ্রিত পরিজন! হাঁড়ি হাঁড়ি ভাত নামছে ঠিকই, সঙ্গে শুধু ‘ডালমা’ আর একটু আলু পোড়া। রাতে সুজির হালুয়া দিয়ে রুটি। সকলের এক খাবার। আর বাইরে থেকে কেনার ওপর কোনও নির্ভরতাই নেই। কিন্তু মজা এই যে, জেঠুর পরিবারের মানুষরা ভীষণ রকম শহুরে আর চাকরি বা অন্যান্য ব্যবসা নির্ভর হয়ে গেলেও , প্রফুল্ল চাষির ছেলে ভানুদা ও ভানু বউ কিন্তু সেই একই রকম, নিকনো মাটির দাওয়া-ঘরে সেই ১৯৭৬ সালে ওখানে গিয়ে প্রথম যা দেখেছিলাম,  এই ২০১৬-তে গিয়েও তাই। বদলের মধ্যে, আগে দ্বীপটাতে যেতে হতো নৌকায়, সেখানে এখন সাঁকো। ফলে ভানুদার ঘরে এখন একটি মোটর সাইকেল। অথচ এখন তাদের ছেলেরা ট্রলার নিয়ে কেউ যায় সমুদ্রে, কেউ বা আর্মিতে কাজ পেয়েছে দারুণ সম্পন্নও তারা। কিন্তু এই সেদিনও যখন গেছি, পুকুরে জাল ফেলে, মাছ ধরে, সাত পদ রান্না করে খাওয়াল ভানু বউ। সঙ্গে আশেপাশেই গজানো পাঁচ মিশালি শাক ও ডালের বড়া আর বুনো কুলের টক। দাওয়া পৌঁছতেই হাঁসের ডিম ভাজা আর তক্ষুনি পাড়া ডাবের জল। পড়ন্ত রোদ মেখে বিকেলে ফেরবার সময় আঁচলে বেঁধে দিল ঢেঁকি ছাঁটা চাল, সুগন্ধি হলুদ, কেয়া খয়ের, শুখা মাছ, আর গাছ পাকা তেঁতুলের গোলাঅথচ ওই পুরো এলাকাটা এখন চাঁদিপুর হোটেল ব্যবসায় ঝমঝম করছে। কিন্তু ওরা ওদের অরগ্যানিক জীবন থেকে নড়েনি। যেমন আমৃত্যু নড়েননি জেঠু ও জেঠিমা।   

এই বছর কয়েক আগেও যখন গিয়েছি, মাটির দাওয়ায় পাহাড় পাহাড় ধান ঝাড়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বেরি নদী ছেঁচে পাথুরে মৌরলা, বাগানের কুমড়ো, ধুন্দুল, শাকপাতা, পাকা কলা, আতা, হরিতকি, আমলকি, ঘরে পালা গেঁড়ের (হাঁসের) মাংস আর মহিষের (কাঁড়া) দুধ। শুনেছি যে, আত্মীয়স্বজনদের কাছে এই বন বসতের নাম ছিল ‘আলসে খানা’।

এ রকমেরই আর এক বনবসতের আবিষ্কার, গিরিডির কাছে, তারাটাঁড়ে নেমে বেরি (বরাকরের শাখা) নদীমুখো ‘ফুলিয়া টাঁড়’ আমার ঠাকুরদার মেজোমাসি নিরুপমার বাড়ি, যিনি নিজেও ছিলেন শিক্ষিত এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট গিরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সেজ মেয়ে সে এক বিশাল খোঁজ করতে করতে, তবে হদিশ পেয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তার পর তো কয়েকবারই গেছি। আমার দাদুর মেসো, ফুলিয়া– মালিপোঁতার শরৎ মুখুজ্জে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এ জায়গাটা পরিদর্শনে আসেন হাতিতে চেপেএখানকার আদিবাসীদের শায়েস্তা করতে ইংরেজ সাহেব তাঁকে পাঠায়। তিনি নিজেই পাঁচশো বিঘে জমি কিনে নেন। অবসর নিয়ে এই আদিবাসীদেরই ভালবেসে, এখানেই গড়ে তোলেন এক আসামান্য বন-বসত। দুই ছেলেকে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়িয়েও এখানেই থিতু করেন তাঁদের, যাতে ইংরেজের গোলামি করে খেতে না হয়। নিজের গ্রাম ফুলিয়ার নাম অনুযায়ী নাম দেন, ‘ফুলিয়া টাঁড়’ তাঁর ছোট ছেলে পাহাড়ি দাদু আর শান্তি দিদার সংসার হল, বিরাট এক আমবাগান দেওয়া, পুকুর সমেত ফুলিয়ার বসতবাটিতে। আর বড় ছেলে পাথু দাদু আর গীতা দিদুর সংসার হল ফুলিয়া টাঁড়ে।

ফুলিয়ার এই শান্তি দিদা কিন্তু বরিশাল থেকে বি. এ পাশ। তাঁর জীবন সায়াহ্নেও তাঁকে দেখেছি ‘God of Small Things’ পড়তে। ইনিই আমাকে দিয়েছিলেন, নিরুপমার হিসাবের খাতা, আর শরৎ মুখুজ্জের চাষবাস বিষয়ে অসামান্য সব নোটবুক। শুধু নিরুপমাই নয়, তাঁর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে, দুই পুত্রবধূও দারুণ শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন কৃষিভিত্তিক এই যাপনতাই আজও অটুট আছে দু’টি বসতই। এখনও মালিকানা বদল হয়ে উড়ে পুড়ে যায়নি। তবে, ফুলিয়া টাঁড়ের সুজিত কাকু ছাড়া বাকি সবাই আজ চূড়ান্ত নগরমুখি বদল বলতে   সম্প্রতি ইলেক্ট্রিক এসেছে, মোষের গাড়ি উঠে গিয়ে মোটর বাইক, আর চাষের কাজে ট্র্যাক্ট্রর। এই বছর কয়েক আগেও যখন গিয়েছি, মাটির দাওয়ায় পাহাড় পাহাড় ধান ঝাড়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বেরি নদী ছেঁচে পাথুরে মৌরলা, বাগানের কুমড়ো, ধুন্দুল, শাকপাতা, পাকা কলা, আতা, হরিতকি, আমলকি, ঘরে পালা গেঁড়ের (হাঁসের) মাংস আর মহিষের (কাঁড়া) দুধ। শুনেছি যে, আত্মীয়স্বজনদের কাছে এই বন বসতের নাম ছিল ‘আলসে খানা’। এখন এ বাড়িরই ছেলেমেয়েরা শহরে বসে, মল থেকে ‘অরগ্যানিক ফারমিং প্রোডাক্ট’ দ্বিগুণ দামে কিনে খায়, অথচ এখানে ছুটি কাটাতেও আসে না। ওদের অন্ধকার আর বোরিং লাগে। তাই হয়, কারণ এ যে পাঁচ পুরুষের পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা সম্পদ- ক্যাপিটেশন ফি দিয়ে কিনতে হয়নি, যে দেনা শোধের গর্ব হবে!         

পারিবারিক সূত্রে আমি একটি বই পাই ‘পিতৃতর্পণ’লেখক আমার এক দাদু, রাসবিহারী মুখোপাধ্যায়, যিনি পেশায় ছিলেন উকিল । তাঁর বাবা বিপিনবিহারী মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে ‘আপ্তজনের’ জন্যে লেখা। এই বইটি সমাজ ইতিহাসের এক অপূর্ব দলিল। ব্যক্তিগত পরিসরে দেখা, তবু বোঝা যায় ইংরেজ আমল এবং স্বাধীনতার প্রাক্কাল জুড়ে, একটু একটু করে জীবন কেমন শহরমুখি হয়ে গেল! পরিবারগুলি হয়ে গেল মাইনে নির্ভর ছোট ছোট দ্বীপ। শহুরে জীবনে বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়াল গ্রামের বসত, ভিটে এবং চাষ বাস। ফলে সে সব বিক্রি করে, ওই টাকা শেয়ারে খাটিয়ে বা ব্যাঙ্কে রেখে, একেবারে ঝাড়া হাত পা। তবু এই ব্যতিক্রমেই শেষ যা দেখেছি আমার দাদামশাই উমেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ইংরেজ আমলে পদস্থ আমলার চাকরি পেয়ে দিল্লি চলে যান। শিমলে দিল্লি জুড়ে থেকে, পাকা সাহেবি চেহারা নিয়ে এবং ইংরেজ-কেতায় জীবন বিছিয়ে, বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে থেকেছেন। কিন্তু খড়দার ভিটে বাড়িটিকে অবহেলা করেননি। অবসর নিয়ে, নতুন বা পুরনো দিল্লিতে বাড়ি কিনে থেকে যাওয়াটাই সুখের বলে বিবেচ্য হত। তা না করে, পাট গুটিয়ে খড়দাতেই ফিরে এলেন তিনি কারণ সংসারে তখন নিজের দশটি ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী ছাড়াও, তাঁর ওপর নির্ভরশীল আরও অসংখ্য পরিজন। কালাজ্বরে অকালমৃত, দাদুর বড় দুই দাদার একটি করে সন্তান-সমেত দুই বিধবা বউদি, একজন বাল্যবিধবা বড়দিদি, ছয়টি সন্তান-সমেত তাঁর কাছেই এসে ওঠা বিবাহিত ছোটবোন এবং সন্তানসম নিজেরই মাসতুতো তিন ভাই। এদের কাউকেই ফেলেননি। কিন্তু সবাইকে যে টানতে পেরেছেন, তার কারণ খড়দার বসত বাড়ির দু’টি পুকুর আর বাগান। ধান জমি ছিল না, তাই চাল ডাল তেল মশলা কিনতে হত। কিন্তু আনাজপাতি, ঘরোয়া ফল আর মাছের জোগান বাড়িতেই ছিল।

খড়দার বাড়িতে থাকা মায়ের ঠাকুমা, জেঠিমা, পিসিমারা এমন করে সংসার  টানতেন, যাতে দিল্লি থেকে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি কোন টাকাও দাদুকে আর পাঠাতে না হয়। সে সব যত্নের রেশ আমিও পেয়েছি। আম, জামরুল, জাম, কাঁঠাল, তাল, নারকেল, সুপারি ছাড়াও চালতা, কামিনী লেবু, কাঁকরোল, মেটে আলু, আম আদা, দিশি আনারস, বিলিতি আমড়া, মিষ্টি কুল,‌ করমচা আর নানা রকম শাক  হতপ্রতিটি গাছের হিসেব থাকত, থাকত আদরের নজরদারিযখন তখন সে সব গাছে হাত দেওয়া যেত না। পুকুরে রুই, কাতলা, কালবোস পালা হত আসন্ন ভোজের কথা মাথায় রেখে। যেমন তেমন করে, যে কোনও মাছও তাই ধরা হত না। তার ওপর, বাঁধানো বড় পুকুরে স্নান-কাচা বা বাসন মাজায় ছাড় থাকলেও পানার সর পড়া ছোট পুকুরে নামা বারণ, কারণ তা ছিল মাছের আঁতুড় ঘর। দাদু অবসর নিয়ে খড়দায় ফিরে, বসত বাড়ির থেকে একটু দূরে, একটি পুকুর সমেত নিজেদেরই কিছু পতিত জমি উদ্ধার করে, ক্রমে এক সবজি খেত বানালেন, যাকে বলে ফার্ম হাউস। হাজারিবাগ থেকে আনিয়ে, একটি ওঁরাও দম্পতিকে বসত করালেন চাষ করবার জন্য। পাঁচিল ঘিরে ছোট্ট একটা বাড়িও করলেন। দরকারে নিজে থেকে দেখভাল করবার জন্যে। আর নিয়ম করে প্রতিদিন ভোরে উঠে, মশারির মধ্যেই আলো জ্বেলে বসে, রেডিওতে শুনতেন ‘কৃষি কথা’র আসর। নিজের একটা রিক্সা ছিল, চালক সমেত। আলো ফুটি ফুটি অন্ধকারেই, তাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেন বাগানে।

বার দু’য়েক হবে, বালিকা বয়সে, সেই অসামান্য দৃশ্য দেখবার সুযোগ হয়েছিল আমার। চারিদিক থেকে ফড়েরা এসেছে বাজারের জন্য সবজি কিনতে, দাদুর দুই ম্যান ফ্রাইডে – গুইন্দা দাদা আর মুংলি দিদি পাল্লা মাপছে, আর একটা লম্বা ইজি চেয়ারে বসে দাদু সে সবের হিসেব কষছেন। খড়দা বাজারে তাঁর ব্র্যান্ড ছিল, ‘স্নো বল’ ফুলকপি আর লালচে বেগুনি রঙের বেগুন। ন’টা নাগাদ সব শেষ হলে, মুংলি দিদির বানানো চিনির পানা খেয়ে বাড়ি ফিরতেন। তখন রিক্সায় উঠত এক ঝুড়ি আনাজ, বাড়ির জন্যে সেদিনের বরাদ্দ। আর থাকত ওখানকার পুকুরের কালো কাঁকড়া, চুনো মাছ। কখনও আবার মুংলি দিদিদের ঘরে পালা হাঁস মুরগির ডিম। বাড়ির পুকুরের মাছ ধরতে একটি লোক প্রায় রোজই আসত, ছোট জাল নিয়ে। ওজন করে মাছ রেখে, বাকি মাছ ছেড়ে দেওয়া হত। এখানেও নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করতেন বিকেল তিনটে বাজলেই ভেতর উঠোনে বসে, পরিচারককে বলতেন বাড়ির বাগানের ফল বার করতে। তাঁর খাটের তলা জুড়ে বিছানো থাকত সব। দেখে বেছে বার করে দিলে, তবে সেগুলো কেটে কুটে পাতে পড়ত।

আম, জামরুল, জাম, কাঁঠাল, তাল, নারকেল, সুপারি ছাড়াও চালতা, কামিনী লেবু, কাঁকরোল, মেটে আলু, আম আদা, দিশি আনারস, বিলিতি আমড়া, মিষ্টি কুল,‌ করমচা আর নানা রকম শাক  হতপ্রতিটি গাছের হিসেব থাকত, থাকত আদরের নজরদারিযখন তখন সে সব গাছে হাত দেওয়া যেত না। পুকুরে রুই, কাতলা, কালবোস পালা হত আসন্ন ভোজের কথা মাথায় রেখে। যেমন তেমন করে, যে কোনও মাছও তাই ধরা হত না।

আর সেই অপূর্ব সুন্দর সাহেবি আঙুলে, রুপোর বাঁট লাগানো ছুরিতে নারকেল পাতা চিরে, নারকেল কাঠি বার করে, প্রতিটি কাঠি নিপুণ করে চাঁচতেন। ওটা ছিল তাঁর পরের কাজগুলিতে হাত লাগাবার আগে, মনোনিবেশ। বিকেল পাঁচটা থেকে সাতটা অবধি দেখা করতে আসা বাইরের বিশিষ্ট লোকজনের সঙ্গে যখন আলাপচারিতায় বসতেন, তখন কিন্তু একেবারে পাকা সাহেব। দেশ বিদেশের খবরের নিখুঁত আপডেট নিয়ে তখন তাঁর মুখে সকালের সেই গালি ‘পাঁঠা’, সূর্য ডুবতেই হয়ে যেত ‘stupid’আমি যখন তাঁকে দেখেছি, তখন মামার বাড়ি বলতে শুধু আমার নিজের মামা, মামি, মাসি আর দিদু। সেই বিরাট পরিবারে তাঁর আশ্রয়ের প্রায় প্রতিটি মানুষ ইতিমধ্যে হয় খড়দাতেই না হয় দিল্লিতে থিতু। ফলে আগেকার ‘আঁট সাঁট’ না মেনে দিদিমা আর মামিদের সংসারে তখন ‘এলো–ঢেলো’। সবচেয়ে মজার যে, অত সঞ্চয়ী এবং দুরন্ত হিসেবি দাদামশাই তেল, ডাল , চাল, ময়দা কেনায় – মাসের হিসেব তিরিশ দিন থেকে কমিয়ে কুড়ি দিন করে দিতেন। ফলে, কুড়ি তারিখ হলেই নতুন সওদা এসে যেত। হেঁশেল গিন্নিদের যাতে কোনও সঙ্কটে পড়তে না হয়। আর একটা ব্যাপারে খুব মজা পেতেন, বিলেত ফেরত মেজমামা তার ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়েকে, বাগানে  নিয়ে না গিয়ে, যখন মাটির ভাঁড়ে ছোলা পুঁতে, গাছ বের হলে শেখাতেন, ‘ see, this is germination!’ 

এই বছর দু’য়েক হল চলে গেছেন, আমার বেয়ানের দাদা, কল্যাণ। রাজপুরে তাঁদের বসত ভিটেটিকে যে কী যত্নে আগলে রাখতেন! পুকুরের মাছ, বাগানের ফল আর ফুলের বাতাস। অভিমান করতেন, আম জাম আর কাঁঠালের সময় সবাই মিলে না গেলে। বয়সের ভার বা লোকাভাব সব তুচ্ছ, তাঁর বসত বাগানের রক্ষণাবেক্ষণেএখন অবশ্য শহরের বুকে বাগানবাড়ি জাগিয়ে রাখা এক মস্ত হ্যাপা দাদামশাইয়ের সূত্রে, আমাদের এই গুচ্ছ গুচ্ছ ভাই বোনেদের সংসারে, একমাত্র যে  বাগান এবং বাড়ি দু’টোই আদরে ধরে রেখেছে, সে হল কাকলি, বড় মামার ছেলের বউ। নিজেরই তাগিদে, বড় মামার কাছেই সে শিখেছে, কী ভাবে সব যত্ন করে রাখতে হয়। লোক আছে, ব্যবস্থা আছে, আছে সম্পন্নতাও। কিন্তু সব চেয়ে বড় কথা যে, সব কটা গাছের নাম, আমের রকমফের, গাছের যত্ন, এ সব- কাকলি নিজেও জানে। দু’দুটো পুকুর সমেত, অত বড় বাগান দেওয়া মামার বাড়ি টুকরো টুকরো হয়ে, এখন অপরিচিত লোকেদের ঘন বসতি। একটুকরো শুধু ধরা আছে, বড় মামা–মামির ওই বাড়িটি ঘিরে। মামা-মামি দু’জনেই চলে গেছেন, কাকলি তবু নেমন্তন্ন পাঠায়- আম, কাঁঠাল, তালশাঁসের 

এ রকমই আর এক ম্যাজিক শান্তিনিকেতনের রঞ্জনা সরকার, আমাদের মিঠুদির আস্তানা ‘বালিপাড়া’য় জমি কিনে, নয়নাভিরাম একটি বাড়ি বানিয়ে, এবার গাছ লাগানো শুরু করল। কত হবে… বছর কুড়ি! তার মধ্যে যেমন শিরীষ, বকুল, মাধবী, মালতী, চাঁপা, তেমনই বাতাবিলেবু, গন্ধরাজ লেবু, সবেদা, কামরাঙা, নারকেল। আর রান্নাঘরের পিছনে সবজি বাগানে কী নেই! আধুনিকতার সব আরাম, অথচ বন-বসত আর শুধু নিজের বাড়িটিই নয়, মাইল আধেক এগিয়ে, তার বাবার শূন্য বাড়িটিকেও সে সবুজ করে রাখে, নিবিড় আদরে। সামান্য রসদই বাইরে থেকে কেনা, বাকি সবটাই ঘরে দোরে। এই শান্তিনিকেতনে আর এক ম্যাজিক দেখিয়েছে রাহুল আর তার ব্রিটিশ বউ  কার্সটি। প্রথমে তারা সংসার পাতল, ‘ফুলডাঙা’য় , তার বাবার বাড়ির ছাদে একখানি ঘর করে নিয়ে। উপার্জনের জন্য রতনপল্লিতে আর একজনের ছাদ সমেত ঘর ভাড়া নিয়ে খুলল ‘পশ্চিমী রেস্তোরাঁ’ ছাদের আলসেতে গজিয়ে ফেলল বেসিল, লেমন গ্রাস, ধনে, পুদিনা, জোয়ান, মৌরি চোখের সামনে দারুণ সব রান্না করছে, ওই সব কুচিয়ে ছড়িয়ে। আর ‘ফুলডাঙা’র আস্তানার এককোণে মাটির চাক এবং একটা ছোট ফার্নেস বসিয়ে, কার্সটি নিজেই পটাপট বানিয়ে ফেলল, সেরামিকের বাসনপত্র। ক্যানাল পাড়ে প্রতি শনিবার ‘বনের হাট’ শুরু হলে, ওরা বাড়িতে বানানো চিজ বিক্রি করত। এবার বছরখানেকের মধ্যেই ‘বাঁধলডাঙা’র কাছে খঞ্জনপুরে জমি কিনে তৈরি করে ফেলল একেবারে অন্যরকম এক বসত। সীমানা আছে পাঁচিল নেই । উঁচু ঢালের বাড়িটা গড়াতে গড়াতে নেমে গেছে কাঁদরের দিকে, বর্ষায় যেখানে হুড়মুড় করে স্রোত আসে। আকাশ, ঈশানী আর ঋষি– তাদের  এই তিন ছানাপোনা ছাড়াও আদিবাসী গ্রামের আরও অসংখ্য ছেলেপুলেদের নিয়ে ফেঁদে বসেছে অবাক করা সব কর্মকাণ্ড‘গ্লোবাল’ এবং ‘লোকালের’ আদর্শ নজির। বনের রাজা রাহুল, তামাম দুনিয়া ঘুরে এসে, আজ এই বন-বসতে পুরো হজম 

Atulya Ghosh
অতুল্য ঘোষ। ছবি সৌজন্য – bellevision.com

এই রকম আর একটি মানুষ ছিলেন দুঁদে রাজনীতিক অতুল্য ঘোষ। চরম ক্ষমতাশালী এবং ব্যস্ত এম. পি হওয়া সত্ত্বেও, বাঁকুড়াতে একটি বন-বসত গড়ে তোলেন। একবার সেখানে গিয়ে ঢুকলে খাবার কিনতে আর বাইরে যেতে হত না। মাসখানেক যে থাকতেন, আগে পরে করে দফায় দফায় সেখানে গিয়ে পৌঁছত, তাঁর অন্তত শ’তিনেক আত্মজন। কংগ্রেস ছেড়ে আর রাজনীতি করেননি। জীবনের এই শেষ পর্বে এসে বি. সি. রায় মেমোরিয়াল কমিটির বহুমুখী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে গড়ে তুললেন বিধান শিশু উদ্যান শৌখিন বাগানে তো চোখ জুড়লই, কিন্তু একই সঙ্গে পিছনের দিকের জমিতে লকলকে সবুজ আনাজ চাষ। ওখানে বোনা আলু দিয়েই, ওই অত বিভাগের অতজন মাস্টারমশাইদের বিকেলের টিফিন আলু-মরিচ বা আলুরদম হত। আর মেছুড়েদের কাছে লেকের মাছ জমা দিয়ে যে টাকা আসত, তাতে অন্যান্য মোটা খরচ। সরকারের কাছে হাত পাততে হয়নি অনুদানের জন্য। তাঁর এই গেরস্তপনা আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। সকালবেলা উদ্যানে এসে একদিকে গৌরকিশোর ঘোষকে ডিক্টেশন দিচ্ছেন, দেশ পত্রিকায়  তাঁর ধারাবাহিক ‘কষ্টকল্পিত’র জন্য, আর অন্যদিকে, বিকেলের আগে মিটিং সারছেন মালিদের সঙ্গে, আলোচনা করছেন গাছ বিশেষজ্ঞ সুবুদ্ধিদার সঙ্গে। চোখের সামনে দেখলাম, একটা ধোপার মাঠ কেমন সবুজে সবুজ হয়ে বাচ্চা, বড় সকলের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠল।

অমরকণ্টকের গোপাল মহারাজজি একজন সত্যিকারের সন্ন্যাসী হলেও আসলে ছিলেন একজন জবরদস্ত চাষি এবং বনপাগল মানুষ। নর্মদা মন্দিরের কাছে তাঁর মূল মন্দির ছেড়ে বেশির ভাগ সময়তেই থাকতেন তাঁর আর এক  আস্তানা – ‘ক্ষেতি’তে। ‘বারাতি’ নদীর জল রেখায় সে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল, যেখানে এক আকাশে সূর্যাস্ত এবং চন্দ্রোদয় একই সময়ে দেখা যায়। আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখাতেন, আলসি আর তিসির ক্ষেত। চেনাতেন বহেড়া, মহুয়া, শাল আর কেন্দু। সংগ্রহ করতেন নানা ওষধি। শেখাতেন, ঘরের দাওয়া থেকে জোয়ান পাতা তুলে ‘আজোয়াইন পরাঠা’ আর দইয়ের মাঠা তুলে ঘোল। নিজে হাতে গাভীর প্রসব করিয়ে, তাকে খাওয়াতেন মহুয়া আর গুড়। জন্মসূত্রে পঞ্জাবি বলেই বোধ হয় চাষ এবং প্রকৃতির কোলে বাস তাঁর এত প্রিয় আর অনায়াস ছিল।  

এখন অনেক অরগ্যানিক ফারমিং এবং শৌখিন ‘ভিলেজ’ হয়েছে, যেখানে গিয়ে ‘গ্রামুরে’ ভানে কিছুদিন কাটিয়ে আসা যায়, বা যেখানকার জিনিসপত্র চড়া দামে কিনে হেঁশেলও ভরানো যায়একে কিন্তু  বন-বসত বা ‘বনের  ধারে ঘর’ বলে না শিক্ষিত শহুরে হয়েও চাষ এবং বন-বসত হল এক দুরন্ত মস্তানি। আধুনিকতার নিগড়ে না জড়িয়ে,  প্রকৃতিকে একটু নিজের মতো, নিজের শর্তে বাঁচতে দেওয়া। সে হেঁশেলে ‘আঁট সাঁট’ যেমন  থাকবে, তেমনই থাকবে ‘ এলো ঢেলো’ লকডাউনের বাজার বড় নির্মম ভাবে বুঝিয়ে দিল, কৃষিভিত্তিক সংসার জীবনের নিরাপত্তা। আবার সবাই মিলে মহড়া দিয়ে হয়তো ওই গানটাই গাইতে হবে, ‘ চল কোদাল চালাই….।’ 

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

3 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com