Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

স্মৃতির আকাশ থেকে: নিমাইসাধন বসু  

অরিজিৎ মৈত্র

এপ্রিল ১২, ২০২৫

Nemai Sadhan Bose
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Nemai Sadhan Bose)

এশিয়াটিক সোসাইটির নানান অনুষ্ঠানে তাঁকে দূর থেকে একাধিকবার দেখেছি। রাজীব গান্ধী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং একই সঙ্গে বিশ্বভারতীর আচার্য তখন বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন নিমাইসাধন বসু।  (Nemai Sadhan Bose)

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়(১৯১৯-২০১৬): নদী থেকে সাগরে

খুব সম্ভবত তিনি সেই সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারে আয়োজিত এক বিতর্কসভায় তাঁর কথা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। খুব সহজ ভাষায় গভীর অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারতেন। আরও মুগ্ধ হয়েছিলাম যখন রবীন্দ্রসদনে বিশ্বভারতীর একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় তাঁর সঙ্গে। আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের পূর্ব পরিচিত এবং বিশ্বভারতী গ্রন্থণ বিভাগের প্রাক্তন কর্মী স্বপনকুমার ঘোষ। শান্তিনিকেতন এবং কলকাতার সংস্কৃতি মহলের সবার খুব প্রিয়জন ছিলেন স্বপনদা। পরোপকারী স্বপনদাকে নিমাইদা মানে নিমাইসাধন বসু ডাকতেন ফাদার তেরেজা বলে। ইতিমধ্যে আমার মায়ের সঙ্গে নিমাইদার পরিচয় হয়েছিল কলকাতা দূরদর্শনে এক অনুষ্ঠানের সূত্রে। প্রথম পরিচয়ের বেশ কিছুদিন পরে ওই রবীন্দ্রসদনেই নিমাইদার সঙ্গে আবার দেখা আর সেখানে আমি শান্তিনিকেতনের কলাভবনে আমার এক বন্ধুর ভর্তির বিষয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলি। ভর্তির ফর্মের একটি ফটোকপি আমার হাত থেকে নিয়ে পাঞ্জাবির পকেটে রেখে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্ত আমার মনে খুব একটা ভরসা জাগেনি। মনে হয়েছিল অত ব্যস্ত একজন মানুষ, সারাদিনে তাঁর কাছে এরকম আর্জি নিয়ে আমার মতো অনেক মানুষ যাচ্ছেন। পাঞ্জাবির পকেটে রাখা একটা সামান্য কাগজ হারিয়েই যেতে পারে, উনি আমাকে কতদিনই বা চেনেন!   (Nemai Sadhan Bose)

Nimai Sadhan Basu
নিমাইসাধন বসু

আমার ভয়কে মিথ্যে প্রমাণ করে উপাচার্যর আপিস থেকে ফোন গেল আমার বন্ধুর বাড়িতে, শেষ পর্যন্ত কিছু পারিবারিক সমস্যার জন্য তাঁর আর কলাভবনে যোগ দেওয়া হয়নি কিন্তু নিমাইদার সঙ্গে আমার স্বল্পদিনের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছিল। তার পেছনে আরও একটি কারণ ছিল, সেটা হল আমার রাজীব গান্ধী প্রীতি। কোনও রাজনৈতিক কারণ ছাড়াই আমার ভীষণ ভাল লাগত রাজীব গান্ধীকে। একথা নিমাইদা জানতেন আর সেই কারণে তাঁর সময়ের প্রতিটি সমাবর্তনে আমাকে আমন্ত্রণ জানাতেন যাতে রাজীবজিকে আরও কাছ থেকে দেখতে পারি। মনে আছে রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পরে নিমাইদা কলকাতা দূরদর্শন স্টুডিওতে গিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তখন লিফটে মায়ের সঙ্গে দেখা আর তৎক্ষণাৎ ওঁর প্রশ্ন, ‘সে কেমন আছে’, সে বলতে আমি আর কেমন আছি জানার কারণ রাজীব গান্ধীর প্রয়াণের পরে তাঁর এক অনুরাগীর মানসিক আর শারীরিক অবস্থা যে কিছুটা করুণ হবে, সেটা অনুমান করেই নিমাইদার সেই অনুন্ধান।  (Nemai Sadhan Bose)

আশ্রমের মাঠে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার যখন একরাস ধুলো উড়িয়ে নামত, তখন সেই ধুলোর মধ্যে দিয়ে আচার্যকে স্বাগত জানাতে ধুতি পরিহিত নিমাইদা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতেন। আচার্য রাজীব গান্ধী উপাচার্য নিমাইসাধন বসুকে ভীষণ ভালবাসতেন এবং ভরসাও করতেন।

তখনকার দিনে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন নিয়মিত হত এবং আচার্যও উপস্থিত থাকতেন। সেইদিনগুলোর কথা ভাবলে একটা মজার দৃশ্য আজও চোখের সামনে ভাসে। আশ্রমের মাঠে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার যখন একরাস ধুলো উড়িয়ে নামত, তখন সেই ধুলোর মধ্যে দিয়ে আচার্যকে স্বাগত জানাতে ধুতি পরিহিত নিমাইদা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতেন। আচার্য রাজীব গান্ধী উপাচার্য নিমাইসাধন বসুকে ভীষণ ভালবাসতেন এবং ভরসাও করতেন। অনেকেই জানেন যে নিমাইদার অনুরোধে একদিনের মধ্যে কলকাতা ও শান্তিনিকেতনের  ভেতরে যোগাযোগকে আরও সুদৃঢ় করতে একটি বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন তিনি, সেটিই আজকের শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস। অনেকে আবার মজা করে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসকে নিমাইসাধন এক্সপ্রেস নাম দিয়েছিল। একবার সুযোগ হয়েছিল ওই ট্রেনে করেই নিমাইদার সঙ্গে কলকাতা ফেরার। এসি নয় সাধারণ কামরায় আমি ছাড়া ছিলেন নিমাইদা, বৌদি, স্বপনকুমার ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, গোরাদা অর্থাৎ গোরা সর্বাধিকারী এবং রবীন্দ্রস্নেহধন্যা রাণী চন্দ। এক স্মরণীয় ট্রেণযাত্রার শরিক হতে পেরেছিলাম সেইদিন।  (Nemai Sadhan Bose)

অলোক আলপনায়: অরিজিৎ মৈত্র

একদিন সকালে হঠাৎ নিমাইদার ফোন ল্যান্ডলাইনে, সেই সময় মোবাইল এত সহজলোভ্য ছিল না। ফোনের ওপারে নিমাইদার গলা, ‘একটা বিশেষ প্রয়োজন’, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিমাইদার একটা ছবি আমি তুলেছিলাম রবীন্দ্রসদনে, সেটার একটা কপি চাই কারণ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে বর্তমান পত্রিকা তাঁর কাছে একটা লেখা চেয়েছে। সেই লেখার সঙ্গে নিমাইদার ইচ্ছে আমার তোলা ছবিটি ছাপা হোক। ছবি দিয়েছিলাম, লেখা আর ছবি নির্দিষ্ট দিনে প্রকাশিতও হয়েছিল। লেখালিখির বিষয়ে অনেক সময় হাওড়ার শিবপুরে নিমাইদার ‘সুতারা’ বাড়িতে যেতাম। একদিন আমার সঙ্গে আমার এক পরিচিতজন গিয়েছিলেন, তাঁর পড়াশোনার বিষয়ে কথা হচ্ছিল, তখন নিমাইদা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমার রেজাল্ট কেমন হত’? সে উত্তর দেয়, ‘মোটামুটি’। নিমাইদা হেসে বলেন, ‘মোটামুটি মানে কি, ফেল করতে’? মাঝে মধ্যে এরকম ইয়ার্কি করতেন। হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে নিমাইদাদের পৈতৃক বাড়িতে দুর্গাপুজো হত, এখনও হয়।  (Nemai Sadhan Bose)

একজন উপাচার্য যে এতটা সহজ হতে পারেন, ভাবতেই পারছিলাম না! আমাদের সঙ্গে নিয়ে খেতে বসলেন যাতে লজ্জা না পাই।

একবার নিমাইদাদের বাড়ির পুজোতে আমার পরিবারের সবাইকে নিমন্ত্রণ জানালেন। গেলাম, এবং কিছুক্ষণ কথা বলে ফল প্রসাদ খেয়ে পালিয়ে আসার পথ খুঁজছি কারণ ওঁদের বাড়িতে আমি নিমাইদা আর বৌদিকে ছাড়া আর কাউকে চিনতাম না, সুতরাং লজ্জা করছিল। নিমাইদাকে বাড়ি ফেরার কথা বলাতে ধমক দিলেন এবং দৃঢ়ভাবে বললেন, ‘আমার সঙ্গে বসে ভোগ খাবে, তারপরে সাহিত্য সংসদের অমিতকে বলে রেখেছি, উনি তোমাদের বাড়ির কাছেই থাকেন, ওঁর গাড়িতে যাবে।’  (Nemai Sadhan Bose)

Nimai Sadhan Basu
লেখকের সঙ্গে নিমাইসাধন বসু

একজন উপাচার্য যে এতটা সহজ হতে পারেন, ভাবতেই পারছিলাম না! আমাদের সঙ্গে নিয়ে খেতে বসলেন যাতে লজ্জা না পাই। রাজীব গান্ধীর অনুরোধে আরও পাঁচবছর উপাচার্য হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে রাজি হননি। কারণটা জানতে পারা যাবে তাঁর লেখা, ‘ভগ্ননীড় বিশ্বভারতী’ বইটি পড়লে অবশ্য এখন বইটি সম্ভবত আর ছাপা নেই। আমার এক দাদার চিকিৎসার প্রয়োজনে যতবার দরকার হয়েছে ততবারই ডাক্তার ভোলা চক্রবর্তীকে চিঠি লিখে এবং ফোন করে দিতেন তিনি, যাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে না হয়।   (Nemai Sadhan Bose)

সন্ধ্যাবেলায় লেখা নিতে গিয়ে দেখি সঙ্গে ওঁর লেখা দুটো বইও রেখে দিয়েছেন উপহার হিসেবে। একটি হল ‘উম্বলডনের মার্গারেট’ আর একটি বইয়ের নাম ‘রাজীব গান্ধী-কিছু কথা কিছু স্মৃতি’।

একবার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে একটা লেখা চেয়েছিলাম ওঁর কাছ থেকে, বললেন কষ্ট করে হাওড়াতে যাওয়ার দরকার নেই, উনি ভবানীপুরে ওঁর এক আত্মীয়র দোকানে লেখাটা রেখে দেবেন। সন্ধ্যাবেলায় লেখা নিতে গিয়ে দেখি সঙ্গে ওঁর লেখা দুটো বইও রেখে দিয়েছেন উপহার হিসেবে। একটি হল ‘উম্বলডনের মার্গারেট’ আর একটি বইয়ের নাম ‘রাজীব গান্ধী-কিছু কথা কিছু স্মৃতি’। কতদিন হয়ে গেল নিমাইদা চলে গেছেন কিন্তু নিমাইদাকে ভোলা অত সহজ নয়। কটা মানুষ পারেন ওরকম সহজ হতে! (Nemai Sadhan Bose)

ছবি সৌজন্যে- লেখক

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।

Picture of অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।
Picture of অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com