Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ইওসেফ ফ্রাউনহোফের এক অজানা গল্প: তৃতীয় পর্ব

শেখর গুহ

জুন ১৮, ২০২৫

Joseph Fraunhofer
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Joseph Fraunhofer)

[], []

গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্বন্ধে মানুষের ধারণা আবার পালটে দিয়েছিল ফ্রাউনহোফেরের গভীর অনুসন্ধানে আবিষ্কৃত এই রেখাগুলি। তাঁর মৃত্যুর ৩৪, ৩৫ বছর পরে, ১৮৬১-৬২ সাল নাগাদ জার্মানির দুই বিজ্ঞানী, গুস্টাফ কির্শহোফ (Gustav Kirchhoff, ১৮২৪-১৮৮৭) ও রোবের্ট বুন্সেন (Robert Bunsen, ১৮১১-১৮৯৯) বুঝিয়েছিলেন যে একটি উৎস থেকে আসা আলোর বর্ণালিতে দেখা কালো দাগগুলি বোঝায় সেই উৎসটি কী দিয়ে গড়া। সৌর বর্ণালিতে দেখা ফ্রাউনহোফেরের D রেখাটি বোঝায় যে সূর্যে রয়েছে সোডিয়াম। তেমনই, অন্য কালো দাগগুলিকে অন্য উৎস থেকে আসা আলোর সঙ্গে মিলিয়ে বোঝা গেল যে সূর্য এবং আরও দূরের সব তারা কী দিয়ে গড়া, এবং মানুষ জানল যে যত দূরের জ্যোতিষ্কই হোক না কেন, পৃথিবীর সব কিছু যে বিরানব্বইটি মৌল পদার্থের পরমাণু দিয়ে গড়া, সেগুলোও তাই। (Joseph Fraunhofer)

আরও পড়ুন: প্রাক-ফ্রাউনহোফের সময়ের দূরবীন

মার্কিন বিজ্ঞানী ভেস্টো স্লাইফার (Vesto Slipher, ১৮৭৫-১৯৬৯) দেখালেন যে একটা জ্যোতিষ্ক, যেমন গ্যালাক্সি, থেকে আসা আলোয় কালো দাগগুলি সৌর-বর্ণালির দাগগুলির তুলনায় লালের দিকে, না নীল-বেগুনির দিকে কতটা সরছে, তার মাপ থেকে জানা যায় সে গ্যালাক্সিটা আমাদের দিকে কোন গতিবেগে এগোচ্ছে বা পিছোচ্ছে। ১৯২৯ সালে আর এক মার্কিন বিজ্ঞানী, এডউইন হাব্‌ল (Edwin Powell Hubble, ১৮৮৯-১৯৫৩) অতিদূর গ্যালাক্সিগুলোর আলোতে কালো দাগগুলির বিচ্যুতি থেকে দেখালেন যে গ্যালাক্সিগুলো যত দূরে, তারা ততই বেশি গতিবেগে আমাদের থেকে সরে যাচ্ছে। (Joseph Fraunhofer)

Joseph Fraunhofer
একটা বেলুন যেমন ফুলে ওঠে, আমাদের গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডটাও তেমনই ফুলেফেঁপে উঠছে

একটা বেলুন যেমন ফুলে ওঠে, আমাদের গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডটাও তেমনই ফুলেফেঁপে উঠছে, কোনও এক অজানা শক্তির ধাক্কায়। কাছাকাছি থাকা গ্যালাক্সিগুলো অবশ্য মাধ্যাকর্ষণের টানে একে অন্যটার দিকে এগোতেও পারে– যেমন অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি আমাদের মিল্কি-ওয়ের দিকে এগিয়ে আসছে– প্রতি সেকেন্ডে ৮০০ কিলোমিটার গতিবেগে। ফ্রাউনহোফের রেখাগুলির বিচ্যুতি থেকে স্লাইফার তা দেখিয়েছিলেন। (Joseph Fraunhofer)

বহির্বিশ্বের এত খবরাখবরই শুধু নয়, যে পরমাণুগুলি দিয়ে সমস্তকিছুই গড়া, তার ভিতরের গঠনটা কীরকম তা জানতেও সাহায্য করেছিল ফ্রাউনহোফেরের দেখা সৌর-রেখাগুলি। সোডিয়ামের থেকে আসা আলো যেমন ফ্রাউনহোফেরের D রেখাটির সঙ্গে মিলে গেছিল, তেমনই A ও B রেখাগুলি মিলেছিল অক্সিজেনের আলোর সঙ্গে, আর C, F, G, h রেখাগুলি হাইড্রোজেনের থেকে বেরোনো আলোর সঙ্গে। A ও B রেখাগুলি অবশ্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেন থেকে আসে, সূর্যে অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই কম। (Joseph Fraunhofer)

এইসব রেখাগুলি বর্ণালিতে ঠিক কোথায় কোথায় পড়ে, তা অতি নিখুঁতভাবে মাপার উপায়ও ফ্রাউনহোফের বের করেছিলেন।

এইসব রেখাগুলি বর্ণালিতে ঠিক কোথায় কোথায় পড়ে, তা অতি নিখুঁতভাবে মাপার উপায়ও ফ্রাউনহোফের বের করেছিলেন। হাইড্রোজেনের আলোয় দেখা এই C, F, G, h রেখাগুলির মাপ যে এলোপাথারি নয়, তাদের মধ্যে একটা গাণিতিক সম্পর্ক আছে, তা ১৮৮৫ সালে বের করেছিলেন সুইৎজারল্যান্ডের এক গণিতবিদ, ইয়োহান ইয়াকোব বাল্মের (Johann Jakob Balmer, ১৮২৫–১৮৯৮), যিনি আজীবন একটি মেয়েদের স্কুলে শিক্ষক ছিলেন। (Joseph Fraunhofer)

সেই বছরেই ডেনমার্কে জন্মেছিলেন নিল্‌স্‌ বোর (Niels Henrik David Bohr, ১৮৮৫–১৯৯৬২) যিনি আঠাশ বছর পরে ১৯১৩ সালে সেই গাণিতিক সম্পর্কটার ব্যাখ্যা দিলেন, পরমাণুর ভিতরে থাকা ইলেকট্রন কণাদের শক্তি কেবল ধাপে ধাপেই থাকতে পারে, সেই কোয়ান্টাম তত্ত্ব পেশ করে। আরও বছর পনেরো ধরে সেই কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত নানা বিজ্ঞানীর কাজে পাকা হল। যাবতীয় পদার্থের ধর্ম যা বাস্তবে আমরা যেমন দেখি, সেরকম কেনো হয়, তা ব্যাখ্যা করা গেল ওই তত্ত্ব দিয়ে। যেমন, ধাতুরা কেন কঠিন আর চকচকে হয়, কাচ বা জল কেন স্বচ্ছ, আর সোনার রঙ কেনই বা ঠিক ওইরকম সোনালী, কোয়ান্টাম তত্ত্ব তা বোঝাল। আরও বছর পঞ্চাশ পরে সেই কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তিতে ও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রূপ পেল সেমিকন্ডাকটর বিপ্লব ও সিলিকন দিয়ে তৈরি ট্রাঞ্জিস্টর– যার ক্রমশ উন্নতির ফলে আজ আমাদের ঘরে ঘরে আলো দেয় এল-ই-ডি বাতি, আর হাতের মুঠোয় বা কব্জিতে থাকে ছোট্ট টেলিফোন। (Joseph Fraunhofer)

Joseph Fraunhofer
তবে এত কিছু জানা যা থেকে শুরু, সূর্যের আলোয় সেই কালো দাগগুলি প্রথম দেখার কৃতিত্ব, ফ্রাউনহোফেরের নয়

তবে এত কিছু জানা যা থেকে শুরু, সূর্যের আলোয় সেই কালো দাগগুলি প্রথম দেখার কৃতিত্ব, ফ্রাউনহোফেরের নয়। ১৮০২ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী উইলিয়াম ওয়লাস্টন (William Hyde Wollaston, ১৭৬৬–১৮২৮) স্পেকট্রোমিটার আবিস্কার ও প্রথম ব্যবহার করে সৌর বর্ণালিতে গোটা সাতেক কালো দাগ প্রথম দেখেছিলেন। ১৮০৯ সালে জার্মান ভাষায় তা প্রকাশিতও হয়েছিল, কিন্তু ফ্রাউনহোফের সেটা জানতেন না। যখন জানলেন, তখন আগে না জানার জন্য তিনি লজ্জিত হয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি নিয়মিত তখনকার অন্য বিজ্ঞানীদের, বিশেষ করে টমাস ইয়াং (Thomas Young, ১৭৭৩–১৮২৯) এবং জঁ ফ্রেনেলের (Augustin-Jean Fresnel, ১৭৮৮–১৮২৭) কাজের খোঁজ রাখতে শুরু করলেন। বিশেষ করে তার সমবয়সী ফ্রেনেলের কাজ তাড়াতাড়ি জানার জন্য ১৮১৭ সালে নিজে নিজেই তিনি ফরাসী ভাষাটা রপ্ত করে নিয়েছিলেন। (Joseph Fraunhofer)

আলো যে একটা ঢেউয়ের মতো চলে, তা টমাস ইয়াং প্রমাণ করেছিলেন একটা ছোট ছিদ্রের উপর একদিক থেকে আলো ফেলে অন্যদিকে রাখা একটা পর্দায় তার আলো-আঁধারী নকশা থেকে। একটির জায়গায় পাশাপাশি দুটি লম্বাটে ছিদ্র থাকলে নকশাটিতে দেখা যায় পরপর সাজানো উজ্জ্বল ও কালো দাগের সারি। সারির এই দাগগুলির মধ্যের দূরত্ব আর ছিদ্রগুলো থেকে পর্দাটা কত দূরে তা মেপে ইয়াং আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সর্বপ্রথম বের করেছিলেন ১৮০১ সালে। (Joseph Fraunhofer)

রিটেনহাউস এবং ইয়াঙের কাজটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেলেন ফ্রাউনহোফের। তিনি শুধু যে স্বাধীনভাবে গ্রেটিং আবিষ্কার করেছিলেন তাই না, কীভাবে সেটা আলোর বিভিন্ন রংগুলিকে ছড়ায়, ও তা থেকে কেমন করে অঙ্ক কষে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতি সূক্ষ্মভাবে মাপা যায়, তার তত্ত্বও তিনি বের করলেন।

তারও আগে, ১৭৮৬ সালে, মার্কিন জ্যোতির্বিদ ডেভিড রিটেনহাউস (David Rittenhouse, ১৭৩২–১৭৯৬) তৈরি করেছিলেন প্রথম গ্রেটিং বা জালিকা। সেটা ছিল খুব ঘেঁষাঘেঁষি আর সমান্তরাল করে রাখা চুল – এক ইঞ্চিতে, বা আড়াই সেন্টিমিটারে, একশোটা চুল। তিনি দেখেছিলেন যে তার মধ্যে দিয়ে সাদা আলো গেলে বেগুনি থেকে লাল অবধি বর্ণালির বিভিন্ন রঙগুলি বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে- নিউটন তাঁর প্রিজম দিয়ে যেমন দেখিয়েছিলেন। (Joseph Fraunhofer)

রিটেনহাউস এবং ইয়াঙের কাজটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেলেন ফ্রাউনহোফের। তিনি শুধু যে স্বাধীনভাবে গ্রেটিং আবিষ্কার করেছিলেন তাই না, কীভাবে সেটা আলোর বিভিন্ন রংগুলিকে ছড়ায়, ও তা থেকে কেমন করে অঙ্ক কষে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতি সূক্ষ্মভাবে মাপা যায়, তার তত্ত্বও তিনি বের করলেন। রিটেনহাউসের একশোটা চুলের গ্রেটিঙের বদলে এক ইঞ্চিতে তিন হাজারেরও বেশি সরু তার দিয়ে বানানো তার গ্রেটিং দিয়ে তিনি সোডিয়াম D রেখাটির এবং সৌর-বর্ণালির অন্য কালো রেখাগুলির তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাপলেন। ১৮২১ ও ১৮২৩ সালে এইসব গবেষণার ফল তিনি প্রকাশ করেছিলেন। (Joseph Fraunhofer)

Joseph Fraunhofer
একটা ছোট ফাঁকের মধ্যে দিয়ে আলো গেলে দূরে সেটা কীভাবে ছড়িয়ে পরে তার বর্ণনা ও খানিকটা ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন ফ্রাউনহোফের

শান্ত পুকুরের জলে একটা ঢিল ছুঁড়লে গোল হয়ে ঢেউ ছড়িয়ে পরে। পরিভাষায় এই ছড়িয়ে পরাটাকে বলে বিবর্তন (ইংরিজিতে diffraction)। একটা ছোট ফাঁকের মধ্যে দিয়ে আলো গেলে দূরে সেটা কীভাবে ছড়িয়ে পরে তার বর্ণনা ও খানিকটা ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন ফ্রাউনহোফের, তাই একে ফ্রাউনহোফের-বিবর্তন বলা হয়। দূরের কোনও বাতির দিকে তাকালে অনেক সময় দেখা যায় উপরে নীচে, ডাইনে বাঁয়ে রশ্মির মতো আলোক রেখা। সেই রশ্মিগুলির নকশাটা ব্যাখ্যা করা যায় ফ্রাউনহোফের-বিবর্তন তত্ত্ব দিয়ে। আমরাও যেকোনও আলোর দিকে তাকিয়ে চোখটা আধবোজা করলেই সেরকম উপরে ওঠা আলোকরেখা দেখতে পারি, সেই ফ্রাউনহোফের- বিবর্তনের জন্যই। (Joseph Fraunhofer)

১৮১৯ সালে মিউনিখ শহরে ফিরে এসেছিলেন ফ্রাউনহোফের, দূরবীন বানানোর গোটা কারখানাটি নিয়ে। বেনেডিক্টবয়ের্নে রয়ে গেছিল শুধু চশমার জন্য ছোট লেন্স বানানোর চুল্লি ও যন্ত্রপাতি। ১৮১৭ সালে তিনি রয়াল বাভারিয়ান আকাডেমির সংযোগী-সদস্য হয়েছিলেন, কিন্তু ১৮১৯এ পুরোপুরি সদস্য হওয়ার জন্য তাঁর আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল, কেন না তাঁর কোনও স্কুল-কলেজের ডিগ্রি ছিল না। মনে করা হয়েছিল যে তিনি কাচ বানানোর দক্ষ কারিগর মাত্র, সে আকাডেমির উচ্চমানের কাজকর্ম তিনি বুঝবেন না। ১৮২১ সালে তাঁকে সহযোগী সদস্য করা হল, এবং তাঁর বৈজ্ঞানিক অবদানের গুরুত্ব অন্তত খানিকটা বোঝার পর তিনি সম্পূর্ণ সদস্য হলেন ১৮২৩ সালে। (Joseph Fraunhofer)

উনি নিযুক্ত হলেন ওই আকাডেমির পদার্থবিদ্যার মিউজিয়ামের ডিরেক্টর পদে, এবং সান্মানিক অধ্যাপক হয়ে মিউনিখে শুরু করলেন নিয়মিত পদার্থবিদ্যার বক্তৃতার অনুষ্ঠান।

উনি নিযুক্ত হলেন ওই আকাডেমির পদার্থবিদ্যার মিউজিয়ামের ডিরেক্টর পদে, এবং সান্মানিক অধ্যাপক হয়ে মিউনিখে শুরু করলেন নিয়মিত পদার্থবিদ্যার বক্তৃতার অনুষ্ঠান। কিন্তু এগুলো ছিল তাঁর রবিবার ও ছুটির দিনের বাড়তি কাজ–  কারণ ওই সময়ে তিনি ৩০ সেন্টিমিটার ব্যাসের এক অভূতপূর্ব দূরবীন বানানোর কাজে অতি ব্যস্ত ছিলেন। (Joseph Fraunhofer)

বেনেডিক্টবয়ের্নে নিয়মিত গিয়ে সেখনকার তত্ত্বাবধান করতে হত, আর তাঁর বন্ধু, জ্যোতির্বিদ ইয়োহান সল্ডনেরের (Johann Georg von Soldner, ১৭৭৬ – ১৮৩৩) সঙ্গে তিনি নক্ষত্রগুলির বর্ণালি বিশ্লেষণের কাজও করছিলেন সেই সময়ে। গ্রেটিঙে ছড়ানো আলোর বিশ্লেষণ করার নানা পরিকল্পনা তাঁর ছিল, কিন্তু তা করার সময় হয়ে উঠছিল না। এত কাজের চাপে তাঁর শরীর ভেঙে এসেছিল। (Joseph Fraunhofer)

Joseph Fraunhofer
তাঁর বানানো লেন্স ও দূরবীনের প্রচুর চাহিদা সত্ত্বেও সেগুলি বিক্রি করে তাঁর সংস্থার খুব একটা লাভ তখন থাকত না

শেষ জীবনে খ্যাতি ও সম্মানের অভাব হয়নি ফ্রাউনহোফেরের। বাভারিয়া, ইংলন্ড, ডেনমার্ক তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়েছিল। ১৮২২ সালে মিউনিখের কাছেই নুরেনবের্গ শহরে এরলাঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দিয়েছিল। রাজা ম্যাক্সিমিলিয়ান, যিনি তাঁকে একদিন ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করে তাঁর জীবনের গতিপথ পাল্টে দিয়েছিলেন, তিনিই আবার তাঁকে ১৮২৩ সালে নাইটহুডে অভিষিক্ত করলেন। কিন্তু তাঁর জীবন ছিল সাদামাটা। আজীবন অবিবাহিত ছিলেন তিনি। তাঁর বানানো লেন্স ও দূরবীনের প্রচুর চাহিদা সত্ত্বেও সেগুলি বিক্রি করে তাঁর সংস্থার খুব একটা লাভ তখন থাকত না, কারণ ওগুলি তৈরি করার খরচ ছিল খুবই বেশি। লাভ শুরু হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরে – এবং বেশ কয়েক দশক ধরে সে প্রতিপত্তি বজায় ছিল। তাই উচ্চপদ থাকা সত্ত্বেও তাঁর রোজগার খুব বেশি ছিল না, নিজের ও তাঁর বোন ভিক্টোরিয়ার সংসার তাতে চলে যেত। শখ বলতে ছিল কাছাকাছি এলাকায় হেঁটে বেড়ানো। গোটা বিশ্বব্রহ্মান্ডকে মানুষের কাছে নিয়ে আসার কাজে যিনি জীবন কাটিয়েছেন, তিনি বাভারিয়া অঞ্চল ছেড়ে কোথাওই যাননি -একবারই অস্ট্রিয়াতে মোৎসার্টের জন্মস্থান সালৎসবুর্গে যাওয়া ছাড়া। (Joseph Fraunhofer)

১৮২৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মিউনিখ শহরের কাছেই হাইকিং করতে গিয়ে তার ঠান্ডা লেগে অসুখ করে, যা ক্রমশ জটিল হয়ে যক্ষ্মায় পরিণত হয়। ঘরবন্দী হয়ে থেকে ১৮২৬ সালের জুন মাসে উনচল্লিশ বছর বয়সে তাঁর অকালমৃত্যু হয়।

১৮২৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মিউনিখ শহরের কাছেই হাইকিং করতে গিয়ে তার ঠান্ডা লেগে অসুখ করে, যা ক্রমশ জটিল হয়ে যক্ষ্মায় পরিণত হয়। ঘরবন্দী হয়ে থেকে ১৮২৬ সালের জুন মাসে উনচল্লিশ বছর বয়সে তাঁর অকালমৃত্যু হয়। তাঁর পৃষ্ঠপোষক ম্যাক্সিমিলিয়ান মারা গেছিলেন তার কিছুদিন আগেই, ১৮২৫ সালের অক্টোবর মাসে। বাভারিয়ার পরবর্তী রাজা প্রথম লুডভিগ তাঁকে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সম্মান দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে লুডভিগের নাম দিয়ে অতি সাধারণভাবে বলা হয়েছে-  ফ্রাউনহোফেরের মৃত্যুতে ইওরোপের একটা বড় ক্ষতি হল। বিজ্ঞানের জগতে ফ্রাউনহোফেরের অবিস্মরণীয় অবদানের সমসাময়িক পরিমাপ করাটা অসম্ভব ছিল। (Joseph Fraunhofer)

১৯৪৯ সালে পশ্চিম জার্মানিতে সরকার তাঁর নামে প্রতিষ্ঠা করে ফলিত বিজ্ঞানে গোটা ইয়োরোপে সবচেয়ে বড় গবেষণাগার ‘ফ্রাউনহোফের সোসায়েটি’– যার এখন পৃথিবী জুড়ে ছিয়াত্তরটি শাখা আছে, এবং যেখানে তিরিশ হাজারেরও বেশি লোকে কাজ করেন। তাঁদের বেশির ভাগই বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার। (Joseph Fraunhofer)

ফ্রাউনহোফের সংক্রান্ত তথ্যসূত্র –
১। Josef Fraunhofer (1787 – 1826), Ian Howard-Duff, British Astronomical Association Journal, Vol 97, Issue 6, 1987
২। The life and work of Joseph Fraunhofer (1787−1826), Alfred Leitner, American  Journal of Physics, Vol 43, 59–68 (1975)
পরিভাষা –
পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষা, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৮১
তথ্যসূত্র– পাঠ্যবই এবং ইন্টারনেট

ছবি সৌজন্য- ক্যানভা ডট কমের কপিরাইট ফ্রি ছবি

Author Shekhar Guha

শেখর গুহ পেশায় আলোকবিজ্ঞানী। তাঁর শখ কলকাতা ও বাংলার ইতিহাস ঘাঁটা।

Picture of শেখর গুহ

শেখর গুহ

শেখর গুহ পেশায় আলোকবিজ্ঞানী। তাঁর শখ কলকাতা ও বাংলার ইতিহাস ঘাঁটা।
Picture of শেখর গুহ

শেখর গুহ

শেখর গুহ পেশায় আলোকবিজ্ঞানী। তাঁর শখ কলকাতা ও বাংলার ইতিহাস ঘাঁটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

আইভি চট্টোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

সংস্কৃতি

আহার

শমিতা হালদার
অমৃতা ভট্টাচার্য
শমিতা হালদার

বিহার

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

নির্মাল্য চ্যাটার্জি
শক্তিপদ ভট্টাচার্য
নির্মাল্য চ্যাটার্জি

উপন্যাস

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com