Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ভেজ বনাম নন ভেজ ফুডের রাজনীতি

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

নভেম্বর ২৬, ২০২৫

Food Choices
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Food Choices)

বিয়ে বাড়ির বুফে খাবারের জায়গায় ননভেজ আইটেমের দিকে লোকে উপচে পড়ছে। আর ভেজ খাবারের দিকে মাছি তাড়ানোর দশা। একজন হয়তো থালা নিয়ে গুটি গুটি পায়ে ওদিকে এগোচ্ছেন, যে-ই শুনলেন ভেজ, তখনই অতি দ্রুত পায়ে সেখান থেকে পলায়ন। (Food Choices)

এসব দেখার পর দিনই ইংরেজি কাগজে একটা খবর দেখে চমকে গেলাম। ২০২৫ সালে পেটা ইন্ডিয়ার মতে, ভারতের সেরা ভেগান ফ্রেন্ডলি সিটির স্বীকৃতি কোন শহর পেল? (Food Choices)

আরও পড়ুন: খেলার ভারতে মহিলা কর্ত্রী কোথায়?

আপনারা আমার মতো চমকে যাবেন না। এই স্বীকৃতি পেল আমাদের কলকাতা। দেশের অধিকাংশ খাদ্যরসিক যাকে মাছ-ভাতের শহর বলে চেনে। যে শহরে ভেজ রেস্তোরাঁ এখনও খুব কমই অন্য শহরের তুলনায়। দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের রেস্তোরাঁতেও এখন এ শহরে দেখতে পাওয়া যায় মাছ এবং চিকেনের নানা পদ। বিরিয়ানির দোকান তো লাইন দিয়ে বাড়ছে। পার্ক সার্কাসের পাশে, বাইপাসেও অলক্ষে নিঃশব্দে তৈরি হয়েছে বিরিয়ানি হাব এবং সেখানে ভেজ বিরিয়ানির চল এখনও খুব একটা নেই। (Food Choices)

মাস কয়েক আগে রাজ্য থেকে সংসদে নির্বাচিত শত্রুঘ্ন সিংহ ভেজ খাবারের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। শুনে তাঁর পার্টি তৃণমূলের নেতারাই ক্ষিপ্ত। শত্রুগ্ন কথা বলছিলেন বিফ খাওয়া নিয়ে। সেখানেই তিনি একধাপ এগিয়ে বলেন, ভারতে সব রকম নন ভেজ খাবার বন্ধ করে দিতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে কলকাতার স্বীকৃতি একটু অন্যরকম। (Food Choices)

Food Choices
ভেজ বনাম নন ভেজ, আমাদের বিশাল দেশে বহুদিন ধরেই ছিল

কলকাতাকে বাছার ব্যাপারে পেটার অবশ্য যুক্তি আছে। তাদের তরফে বলা হয়েছে, বাঙালির খাবারের অনেক জনপ্রিয় পদই ভেগানের মধ্যে পড়ে যায়। আলু পোস্ত, আলুর চপ, ছোলার ডাল, টম্যাটো খেজুর চাটনি এবং ফুচকা। তাছাড়া কলকাতায় এখন কাফের বাড়বাড়ন্ত। অনেক কাফেই সেখানে প্ল্যান্ট মিল্ক বিক্রি করে থাকে। পাওয়া যায় ভেগান মিল্ক এবং ভেগান আইসক্রিম। (Food Choices)

এই খবরটার পাশে আর একটা খবরও ভাবনার রসদ দেয়। কেরলের এক রেস্তোরাঁয় সাইনবোর্ড পড়েছে— কমপ্লিটলি নন ভেজিটেরিয়ান। ছবিটি ইতিমধ্যেই ভাইরাল। দেশের অনেক রেস্তোরাঁর বাইরে দেখা যায়, ভেজ অনলি। কেরলের এই ব্যাপারটা তাই দেশজুড়ে আলোচনায় চলে এসেছে। (Food Choices)

“সবচেয়ে বেশি নন ভেজ খাবার কোথায় খায় লোকে, এই প্রশ্নটাও উঠবে। এখানে বাংলার সঙ্গে নাম উঠবে তেলেঙ্গানা, কেরালা এবং ওড়িশার।”

ভেজ বনাম নন ভেজ, আমাদের বিশাল দেশে বহুদিন ধরেই ছিল। রাজধানী নয়াদিল্লির মতো জায়গায়, যেখানে বাটার চিকেনের জন্ম, সেখানেও আজকাল ভেজ রেস্তোরাঁ প্রচুর। দার্জিলিং বা শিমলা যেখানেই যান, সেখানে ব্রেকফাস্ট টেবিলে দক্ষিণ ভারতীয় ইডলি, ধোসা, সম্বর, উপমা, উত্তপমের উপস্থিতি একেবারে বাধ্যতামূলক। গোটা দেশই জয় করেছে এই দক্ষিণ ভারতীয় ভেজ খাবারগুলো। (Food Choices)

তবে সাম্প্রতিককালে ভেজ আইটেম খাবারের জন্য রাজনৈতিক আস্ফালন বেড়েছে। ভেজ, নন-ভেজ খাবারের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রাজনীতি। বিজেপি সমর্থক মানেই অনেকে ধরে নিচ্ছেন, তিনি ভেজ। এবং তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, কেন নন ভেজ খাওয়া হচ্ছে? এদিকে অবাঙালিদের মধ্যে নতুন প্রজন্ম আবার ঘরে ভেজ খেলেও বাইরে গিয়ে চেটেপুটে খাচ্ছে নন ভেজ আইটেম। শুধু কলকাতা নয়, নয়াদিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরুতে। এ জিনিস অবশ্য নতুন নয়। অনেক বাঙালিরই শৈশবে এসব অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁদের অবাঙালি বন্ধুদের নিয়ে। (Food Choices)

Food Choices
খেয়াল করে দেখুন, মাছভাতের বাঙালির কতরকম বৈচিত্র্যময় ভেজ খাবার রয়েছে। বাকি ভারত জানতেই পারেনি

রাজনীতি খাবারের সঙ্গে মিশে গেলে যা হয়, বাঙালিদের সঙ্গে মাছ-ভাতের সম্পর্ক জুড়ে দেয় অনেকে। আমেরিকা প্রবাসী এক বন্ধুর স্ত্রী সেদিন আক্ষেপ করছিলেন, আমরা মাছ-মাংস খাই শুনে গুজরাটি অনেক প্রতিবেশী ধরে নিয়েছে, আমরা মুসলিম। ভারতের অনেক অংশে এই অন্যায় ও হাস্যকর ধারণাটা অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছে। স্রেফ ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি বেড়ে চলার জন্য। (Food Choices)

খেয়াল করে দেখুন, মাছভাতের বাঙালির কতরকম বৈচিত্র্যময় ভেজ খাবার রয়েছে। বাকি ভারত জানতেই পারেনি। বুঝতে পারেনি, স্বাদের বিচারে এক এক খাবার এক এক রকম। পোস্তবাটা, আলুপোস্ত, ঝিঙে পোস্ত, লাউ ঘণ্ট, ছানার ডালনা, সুক্তো, কুমড়োর ছক্কা, বেগুন ভাজা, পোরের কুমড়ো ভাজা, মোচার ঘণ্ট, পনিরের তরকারি, দই বেগুন, বেগুনের কালিয়া, ফুলকপির তরকারি, বাঁধা কপির ঘণ্ট, মুলোর ঘণ্ট, কাঁচকলার পোস্তা, ধোকার ডালনা, পটলের দোর্মা, পটল সর্ষে, শাকের ঘণ্ট, মেশানো তরকারি, পালংশাকের তরকারি— এ সবই স্বাদে কিন্তু একেবারে আলাদা। একটার সঙ্গে আর একটার মিল নেই। তা ছাড়া টিপিক্যাল বাঙালি খাবার কিন্তু একেবারেই পেঁয়াজ, রসুন বিবর্জিত। বলতে গেলে একেবারে জৈন ফুড। (Food Choices)

আরও পড়ুন: বাঙালির বাতাসিয়া

কেন্দ্রের শাসক দলের বহু রাজনীতিবিদ যখন দেশজুড়ে নেমে পড়েছেন ভেজ ফুডের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর পক্ষে, তখন আমাদের দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি একটু দেখা যাক। কোন কোন শহর একেবারে পুরোপুরি নিরামিশাষী, খোঁজ নিতে গেলে তিনটি শহরের নাম পাওয়া যায়। গুজরাতের পালিতানা, উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার ও হৃষীকেশ। মজা হচ্ছে, হরিদ্বার বা হৃষীকেশের রাজ্যে আবার নন ভেজদেরই বেশি ভিড়। (Food Choices)

সবচেয়ে বেশি ভেজ ফুড খান কোন রাজ্যের লোকেরা, এই তথ্য জানিয়ে দেওয়া খুব জরুরি। লাল মাসের জন্য বিখ্যাত রাজস্থানই এখানে এগিয়ে। ৭১.১৭ থেকে ৭৫ শতাংশ লোক এখানে নিরামিশাষী। তারপরেই থাকবে হরিয়ানা (৬৯.২ থেকে ৮০ শতাংশ), গুজরাত (৬২.৬৪ থেকে ৭১.৯ শতাংশ), পাঞ্জাব (৫৮.৫৮ থেকে ৬৬.৬৫ শতাংশ), মধ্যপ্রদেশ (৪৬.৯৩ থেকে ৫০ শতাংশ)। তবে শতকরা হিসেবের মধ্যে ফাঁকটা এত বড়, এখানে হিসেবটা ধরা কঠিন। (Food Choices)

Food Choices
রাজধানী নয়াদিল্লির মতো জায়গায়, যেখানে বাটার চিকেনের জন্ম, সেখানেও আজকাল ভেজ রেস্তোরাঁ প্রচুর

সবচেয়ে বেশি নন ভেজ খাবার কোথায় খায় লোকে, এই প্রশ্নটাও উঠবে। এখানে বাংলার সঙ্গে নাম উঠবে তেলেঙ্গানা, কেরালা এবং ওড়িশার।

ভেজ খাবার যে সব রাজ্যে জনপ্রিয়, তার ব্যাখ্যাটাও জানা দরকার। রাজস্থানে জৈন ধর্মের লোকেরা আছেন বেশি। সেখানে পেঁয়াজ রসুনও চলে না। গুজরাতেও জৈন ধর্মের প্রভাব বেশি। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় একে ফসল হয় প্রচুর, তারপর জৈন বা শিখ ধর্মাবলম্বীরা আছেন বেশি। আবার পাঞ্জাবের চিকেন পদ অসামান্য। দেশজুড়ে অধিকাংশ সমীক্ষাতেই দেখছি, সেরা ১০ জনপ্রিয় পদের তালিকায় প্রথম দুটি জায়গা দখল করে রেখেছে বিরিয়ানি এবং বাটার চিকেন। পাঞ্জাবের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় সন্ধ্যায় ঢেলে বিক্রি হয় মাছ ভাজা। একেবারে বোনলেস চিকেন ভাজার মতো। এ জিনিস আপনি কলকাতা বা কেরলেও পাবেন না। (Food Choices)

“ভেজ এবং ননভেজ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক অবশ্যই বেড়েছে বিজেপি মসনদে থাকার পর থেকে। খাবারকে পর্যন্ত ধর্মের আতশ কাঁচে দেখা হচ্ছে বারবার।”

রাজনীতিকরা এই খাবারের ইস্যুতে ঢুকে পড়ায় তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, সবজান্তা নেট স্যাভি জনতাও ঢুকে পড়ছে হুমকি দিতে। তাঁদের শিকারের সবচেয়ে বড় উদাহরণ রণবীর কাপুর। তিনি রামায়ণ সিনেমায় রামের ভূমিকায় অভিনয় করবেন বলে কি মাছ মাংস খাওয়া ছেড়ে দেবেন? কিছু মানুষ মনে হয়, তাই চায়। (Food Choices)

অতীতে বিফ খাওয়া নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রণবীর। এবার কদিন আগে তাঁর পিআর টিম ঘোষণা করেছে, রামায়ণে অভিনয়ের জন্য রণবীর নন ভেজ ফুড খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কদিন পরে কাপুরদের নিয়ে এক সিরিজের অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে, রণবীরকে মাছের ঝোল-ভাত এবং জংলি মটন দিচ্ছেন আরমান জৈন। আরমান হলেন রাজ কাপুরের মেয়ে রীমা জৈনের নাতি। এসব দেখে আবার নেটিজেনদের তোপে বিদ্ধ হয়েছেন রণবীর। তারাই এক একজন রাজনৈতিক নেতা। তারা ঠিক করে দেবে, বাকিরা কী খাবে। (Food Choices)

Food Choices
সন্দেহ নেই, হিন্দুত্ববাদী পার্টি নয়াদিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পরে বাংলায় এসব বেড়েছে

ভেজ এবং ননভেজ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক অবশ্যই বেড়েছে বিজেপি মসনদে থাকার পর থেকে। খাবারকে পর্যন্ত ধর্মের আতশ কাঁচে দেখা হচ্ছে বারবার। গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে পর্যন্ত এই বিতর্কে জড়িয়েছেন। মোদি তখন বলেছিলেন, পূণ্য শ্রাবণ মাসে ননভেজ খাওয়াটা অনেক নেতারই মোগল মানসিকতার লক্ষণ। তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন গান্ধী পরিবার এবং লালু যাদবের পরিবারের প্রতি। শ্রাবণ মাসে নাকি তাঁরা আমিষ খান। কে কী খাবে, সেটাও কি প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকে ভাবতে হবে! এর প্রেক্ষাপটে শ্রাবণ মাসে অনেক মুসলিমের নন ভেজ দোকান বন্ধ করা হয়েছিল। (Food Choices)

গত শিবরাত্রির সময় খোদ রাজধানীতে সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে তুমুল ঝামেলা হয় এসএফআই এবং এবিভিপির। ভেজ খাবারের পাশাপাশি খাবার টেবিলে ননভেজ খাবার রেখে দেওয়ার জন্য। অবশ্যই এবিভিপি চেয়েছিল ভেজ খাবার এবং এসএফআই চেয়েছিল নন ভেজ খাবার। একইরকম বিতর্ক হয়েছে মাদ্রাজ আইআইটিতে। ছাত্রদের পুরোপুরি দোষ দিয়ে লাভ নেই, সুপ্রিম কোর্টের ক্যান্টিনে পর্যন্ত ভেজ-নন ভেজ নিয়ে তুলকালাম হয়েছে নবরাত্রির সময়। একদল আইনজীবী বার কাউন্সিল এবং অন্যান্য আইনি সংস্থার দ্বারস্থ হয়, কেন এই সময় নন ভেজ খাবার থাকবে ক্যান্টিনে। (Food Choices)

আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া মানচিত্রে বিস্মিত লালদীঘি!

মোদি মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মানেকা গান্ধী আরও সলতে পাকিয়ে দেন বিতর্কে। তিনি বলেছিলেন, নন-ভেজিটেরিয়ানরা আসলে বিশ্বাসঘাতক।
যত দিন যাবে, মানুষের আধুনিক হওয়ার কথা। বরং উল্টো পথেই হাঁটছেন অনেকে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থেকে আইআইটির পড়ুয়া যদি এসব নিয়ে সময় নষ্ট করেন, তা হলে অশিক্ষিত মানুষ কী করবেন? খাবার নিয়ে এরকম আকচা আকচি পৃথিবীর কোনও দেশে হয় বলে জানা নেই। উপমহাদেশের বাকি দেশেও হয় না, যতই অস্থিরতা থাকুক। মাঝে মাঝেই দেখবেন, একদল লোক প্রশ্ন তুলেছেন, ডিম, দুধ বা পনীর কেন খাওয়া হবে। এ তো আসলে নন ভেজ ফুডেরই অঙ্গ। (Food Choices)

বিতর্ক আবার হয়েই চলে, থামে না। রাজধানীতেই নয়ডার এক মহিলা অর্ডার দিয়েছিলেন ভেজ বিরিয়ানি। রেস্তোরাঁ থেকে তাঁকে পাঠিয়ে দেয় চিকেন বিরিয়ানি। ভদ্রমহিলা নিরামিষাশী। খিদের মুখে খেয়াল করেননি। সেই বিরিয়ানি মুখে দিয়ে বুঝতে পারেন এর মধ্যে চিকেন রয়েছে। তারপরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কান্নাকাটি করে এমন পোস্ট করেন, রেস্তোরাঁর দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। (Food Choices)

Food Choices
আসলে ধর্মীয় গোঁড়ামি মানুষকে অন্ধই করে দেয়। সেটা নিয়মিত বুঝিয়ে চলেছে ভেজ-ননভেজ বিতর্ক

মহারাষ্ট্রে আবার উল্টো জিনিস হয়েছে। এমন ধরনের ঘটনা দেখে মুম্বই কনজিউমার কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, যাদের নন ভেজ খাবার নিয়ে এত অসন্তোষ, তারা এমন রেস্তোরাঁ থেকে খাবার অর্ডার দেয় কেন, যেখানে নন ভেজ খাবারও তৈরি হয়? শুধু ভেজ রেস্তোরাঁতেই তো অর্ডার দেওয়া যায়!
চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী! এ ধরনের ঘটনা হয়েই চলেছে, অনেকে আদালতে গিয়ে সময় নষ্ট করছে। এবং খাবার নিয়ে অযথা বিতর্ক বাড়ছেই। (Food Choices)

বাংলায় এ জিনিস অন্য রাজ্যের থেকে কম। আবার কমই বা বলি কী করে? উত্তরবঙ্গে মালদা থেকে জলপাইগুড়ি, অনেক জায়গায় দেখেছি বহু লোক মঙ্গলবার মাছ-মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেক শহরে মঙ্গলবার বাজারে মাছের বিক্রিই হয় না। (Food Choices)

“এই ডাক্তার তথাকথিত শিক্ষিত। তাঁরই যদি এই অবস্থা হয়, তিনি তা হলে ছাত্রছাত্রীদের কী শিক্ষা দেবেন?”

যাঁরা করছেন, ভাল করছেন। তবে তাঁরা প্রতিবেশীদের তীব্র সমস্যায় ফেলেন অন্য জায়গায়। আমার একদিন সপ্তাহে নিরামিশ খাওয়ার অভ্যাস হতেই পারে। হয়তো কোনও বাড়িতে বিয়ে, বৌভাত বা শ্রাদ্ধের নিয়মভঙ্গ পড়েছে মঙ্গলবার। সেখানে প্রায় গণহারে অনুপস্থিতি থাকবে। অনেকে আবার আত্মীয়দের অস্বস্তিতে ফেলবেন মঙ্গলবারই তাঁদের বাড়ি গিয়ে। গৃহস্বামী রীতিমতো গলদঘর্ম, কী খাওয়াবেন। (Food Choices)

আমি সপ্তাহের একদিন নিরামিষ খেতেই পারি। সে তো সেই সপ্তাহে মঙ্গলবার নিয়ম না মেনে সেই সপ্তাহের অন্যদিন নিরামিষ খেতে পারি! কিন্তু আমার গোঁড়ামিতে অটল থাকব। বরং ক্ষোভ জানাব, কেন মঙ্গলবার অনুষ্ঠান করেছেন। কোথাও শনিবার, কোথাও বৃহস্পতিবার— এ সব লেগেই থাকে। সন্দেহ নেই, হিন্দুত্ববাদী পার্টি নয়াদিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পরে বাংলায় এসব বেড়েছে। আমাদের অনেক কাছের মানুষই সব যাবতীয় যুক্তির বাইরে। (Food Choices)

উত্তর প্রদেশে এক বাঙালি ডাক্তারের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে মর্মান্তিক। ফেসবুকে পড়লাম, তাঁর বাড়িতে একদিন থাকতে এসেছিলেন সিনিয়র আরেক ডাক্তার। তিনি ব্রাহ্মণ। দুজনেই মহিলা। অতিথির জন্য অনেক যত্নে নিরামিষ খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন বাঙালি তরুণী। ইনডাকশনে, যেথানে আমিষ রান্না হয় না, সেখানে খাবার বানান। এখানে ননভেজ খাবার হয় শুনে ওখানকার কোনও বাসনপত্রেই খেতে অস্বীকার করেন উত্তর প্রদেশের সিনিয়র। এই ছোঁয়াতে নাকি তাঁর ব্রাহ্মণত্ব চলে যাবে। জল পর্যন্ত খাবেন না। (Food Choices)

আরও পড়ুন:উত্তর কেন দেশের সব রাজ্যই বঞ্চিত, উত্তর নেই

শেষ পর্যন্ত তার জন্য নিরামিষ খাবার আনতে হয় সুইগি বা জোমাটো থেকে। সেখানে আবার কীভাবে খাবার তৈরি হল, চিকেন বা মাছের পাশে ভেজ আইটেম ছিল কী না, কোন ধর্মের মানুষ খাবার দিয়ে গেল, তা নিয়ে ভদ্রমহিলার কোনও মাথাব্যথা নেই। ওই খাবারই তিনি খেলেন দিব্যি। বুঝতেও চাইলেন না সতীর্থকে কতটা অপমান করেছেন এই প্রেক্ষিতে। গৃহস্বামিনী খাবার সময় নিজের জলটা নিতে ভুলে গিয়েছিলেন। অতিথির কাছে বোতলটা চাইলে তিনি তা দিতে চাননি। (Food Choices)

আসলে ধর্মীয় গোঁড়ামি মানুষকে অন্ধই করে দেয়। সেটা নিয়মিত বুঝিয়ে চলেছে ভেজ-ননভেজ বিতর্ক। এই ডাক্তার তথাকথিত শিক্ষিত। তাঁরই যদি এই অবস্থা হয়, তিনি তা হলে ছাত্রছাত্রীদের কী শিক্ষা দেবেন? উচ্চবর্ণের পড়ুয়াদেরই কি শুধু অকারণ বেশি নম্বর দেবেন না? (Food Choices)

এই বিতর্কের শেষ কোথায়? কেউ জানে না।

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Rupayan Bhattacharjee

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।
Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

হৈমন্তী দত্ত রায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

সংস্কৃতি

আহার

শমিতা হালদার
অমৃতা ভট্টাচার্য
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com