Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আমেরিকার ‘মেসি এফেক্ট’, সৌদির ‘রোনাল্দো এফেক্ট’

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫

Football
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Football)

লিও মেসি যেদিন ইন্টার মায়ামিতে সরকারিভাবে সই করলেন, তখন ক্লাবের অন্যতম মালিক ও প্রেসিডেন্ট ডেভিড বেকহ্যাম জাপানে। বেকহ্যামের স্ত্রী ভিক্টোরিয়া আমেরিকা থেকে স্বামীকে বলেছিলেন ফোন বন্ধ করে রাখতে। কথাটা শোনেননি বেকহ্যাম। ভোরবেলা ফোন খুলে দেখেন মেসেজে ভরে যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ বক্স। পৃথিবীর কোনও প্রান্ত নেই, যেখান থেকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা আসেনি। এসব দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন বেকহ্যামের মতো চরম পেশাদার লোক। তাঁর স্বগতোক্তি ছিল, ‘এতদিনে আমরা জাতে উঠলাম বিশ্ব ফুটবলের বাজারে’। (Football)

আমেরিকায় একটা ফুটবল টিম চালানো কী যন্ত্রণাদায়ক, তা এক যুগ থাকার সুবাদে জেনে গিয়েছেন বেকহ্যাম।
তাঁদের টিম যখন ক’দিন আগে টমাস মুলারের ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপস টিমকে হারিয়ে এমএলএস কাপ ফাইনালে জিতল, মেসি তখন মাঠ থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে জড়িয়ে ধরলেন বেকহ্যামকে। একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল এতদিনে। (Football)

আরও পড়ুন: রাজেশ খান্না, শশী কাপুরের প্রথম নায়িকা সেই বাঙালিনী

সত্তর দশকে পেলে-বেকেনবাওয়ার যখন নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবে যোগ দিলেন, তখন আমেরিকায় লোকে খুঁজত ‘পেলে এফেক্ট’! ফুটবলের জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়েছিল, কিন্তু এতটা বাড়েনি যে আমেরিকান ফুটবল, বাস্কেটবল, বেসবলকে ছাপিয়ে যাবে আগ্রহে। ৫০ বছরেও ছবিটা পাল্টায়নি। ফুটবল বিশ্বকাপ আমেরিকায় হবে পরের বছর! তবু এখনও আম জনতার কাছে সেদেশে জনপ্রিয়তায় বেশ পিছিয়ে ফুটবল! মেসি আমেরিকান ফুটবলে পা রাখার দু’বছর হয়ে গেল, মধুচন্দ্রিমা পর্ব কাটতে চলেছে ধীরে ধীরে। কিন্তু পুরোটাই নেতিবাচক বলবেন কী ভাবে? (Football)

শুরুর দিকে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ খেলা দেখতে যেতেন মিয়ামির। অনাবাসী বাঙালিরাও। এখন সেই কৌতূহল ঝড় অনেকটা স্তিমিত। বেকহ্যামের ক্ষেত্রে লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে যা হয়েছিল। আমেরিকান ফুটবল, বাস্কেটবল, বেসবলের বন্যা রুখতে পারেননি সেই আমলের সবচেয়ে পণ্যযোগ্য ফুটবলার। (Football)

Football
মেসির আমেরিকা যাওয়া হয়ে গেল আড়াই বছর, রোনাল্ডোর সৌদি যাত্রা ঠিক তিন বছর

পেলে পারেননি, বেকহ্যাম পারেননি, বেলাশেষের মেসিও পারবেন কী করে? এখনও ফুটবলকে চার নম্বরে ঠেলে এই তিনটি ‘বল’ জনপ্রিয়তায় সবার ওপরে। পাঁচে আইস হকি। টেনিস, গল্ফ, ডবলিউ ডবলিউ ই কুস্তি, অ্যাথলেটিক্স এবং ইউএফসি (মিক্সড মার্শাল আর্টস) তারপরে। এই হল প্রথম দশ জনপ্রিয় খেলা। প্রথম তিনটি বলকে সরিয়ে ফুটবলের এক নম্বরে ওঠা এখনই সম্ভব নয়। যতই বিশ্বকাপ হোক। যতই ফুটবল বিশ্বের এক নম্বর খেলা হোক। আমেরিকানদের কাছে ওই তিন খেলার মহিমা অন্য। সেখানে এখনও অনেকটাই বেশি অর্থ ফুটবলের তুলনায়। (Football)

তারপরও থেকে যায় বেশ কিছু কথা। মেসি আমেরিকা আসার পরে টিকিট বিক্রি প্রচুর বেড়ে গিয়েছে মায়ামি এফসি ক্লাবের। সমর্থকদের আকুতি বেড়ে গিয়েছে তাঁর জার্সি পাওয়ার জন্য। মেসির ম্যাচ ছাড়া অন্য শহরের স্টেডিয়াম ভরে না ঠিকই, তবে অনলাইনে খেলা দেখার লোক বেড়েছে। আপাত আবেগহীন আমেরিকানদের অনেকে মেসির বউ আন্তোনেয়াকে পর্যন্ত ধরছেন তাঁর ম্যাচ জার্সি পাওয়ার জন্য। (Football)

“ইউরোপিয়ান ফুটবলের বাইরেও যে এক বিশাল জগত রয়েছে, তা আমেরিকায় দেখিয়ে চলেছেন মেসি। এবং এশিয়ায় ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো।”

এই তো জুলাইয়ে বিশ্ব ক্লাব কাপ হল আমেরিকায়— আমেরিকায় বিশ্বকাপের স্টেজ রিহার্সাল। সেখানে মেসিদের গ্রুপে ছিল ব্রাজিলের পালমেইরাস, পর্তুগালের পোর্তো, মিশরের আল আহলি। গ্রুপে মেসিদের তিনটি ম্যাচে লোক হয়েছিল ৬০ হাজার ৯২৭ (মায়ামি), ৩১ হাজার ৭৮৩ (আটলান্টা) এবং ৬০ হাজার ৯১৪ (মায়ামি)। সেখানে পোর্তোর মতো নামী ক্লাবকে হারিয়েছিলেন মেসিরা। চোট নিয়ে নেমেও গোল করেছিলেন লিও। তাঁদের জয় টুর্নামেন্টের অন্যতম বড় অঘটন। নকআউটে মেসিরা অবশ্য পিএসজির কাছে ০-৪ গোলে হেরে যান ৬৫ হাজার ৫৭৪ দর্শকের সামনে। মেসি-বেকহ্যামের ক্লাবের চারটি ম্যাচের দর্শক সংখ্যাই বলে দেবে, ফুটবলে আগ্রহ কতটা বেড়েছে মায়ামির মতো বিলাসবহুল জায়গায়। (Football)

ইউরোপিয়ান ফুটবলের বাইরেও যে এক বিশাল জগত রয়েছে, তা আমেরিকায় দেখিয়ে চলেছেন মেসি। এবং এশিয়ায় ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। ফুটবলকে বলা হয় ১১ জনের খেলা। কিন্তু কখনও কখনও যে একজনই অনেক উপরে উঠে মেগাস্টার হয়ে যান তার উদাহরণ এই দু’জনেই। আগেকার দিন হলে কবে অবসর নিয়ে এঁরা প্রাক্তন ফুটবলারের দলে নাম লিখিয়ে ফেলতেন। বিজ্ঞানসম্মত ট্রেনিংকে কাজে লাগিয়ে এঁরা চমৎকারভাবে ফিটনেস ধরে রেখেছেন। প্রতি পদে বুঝিয়েছেন, শুধু অর্থ রোজগারের জন্য আসেননি এখানে। ফুটবল ছাড়তে পারবেন না এবং না ছাড়লে আগের মতোই প্রাণ দিয়ে খেলবেন। এটা একটা দ্রষ্টব্য দর্শকদের কাছে। শিক্ষণীয় নতুন প্রজন্মের কাছে। (Football)

আরও পড়ুন: ঘোড়াদের গ্রামে ঘটনার ঘোর ঘনঘটা

মেসির মতো নতুন ক্লাবকে সাফল্য দিতে পারেননি রোনাল্ডো। তবে একাই তুলে দিয়েছেন ক্লাবের মানদন্ড। একটা কথা বলে রাখা জরুরি। রোনাল্ডো যে ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন, সেই ক্লাবের পুরনো ইতিহাস ভাল হলেও সাম্প্রতিক ইতিহাস তেমন কিছু নয়। ছয় বছর আগে শেষবার সৌদি প্রো লিগ জিতেছে। রোনাল্ডোর দাক্ষিণ্যে সেই ক্লাবে এখন সমর্থকদের ভিড়। ওদের দেশে বিশাল ব্যাপার। কাতারে থাকেন বন্ধু সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম। একদা চুটিয়ে ক্রীড়া সাংবাদিকতা করেছেন কলকাতা ময়দানে, নয়াদিল্লিতে। বলছিলেন, ‘রোনাল্দোর ক্লাব এমনিতে এই মুহূর্তে কলকাতার টালিগঞ্জ অগ্রগামীর মতো।’ সেই ক্লাব এখন এত জনপ্রিয়, সুলতানের পরিবার তাঁদের বাজেটের জন্য অনেক বেশি বরাদ্দ করছে। চল্লিশ পেরোনো রোনাল্ডোকে দেখতে এসে প্রতিপক্ষের সমর্থকরা ৩৮ পেরোনো মেসির নাম বলে চেঁচাচ্ছেন। রোনাল্ডোকে ধৈর্য্যচ্যূত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন মাঠে। এসব যেন মেসি এবং রোনাল্ডো, দু’জনেরই জয়। বয়সকে হারিয়ে তাঁরা এখনও চর্চায়। (Football)

মঙ্গলবারই ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হলেন উসমান দেমবেলে। ব্যালন ডিওর জেতার পরে বেস্টও এই ফরাসি তারকা। নিঃসংশয়াতীতভাবে তিনিই এখন বিশ্বসেরা। মাস কয়েক আগে ব্যালন ডিওরে বিশ্বের প্রথম তিনে ছিলেন দেমবেলে, ইয়ামাল, ভিতিনহা। ফিফার বর্ষসেরার লড়াইয়ে দেমবেলে হারালেন ইয়ামাল এবং এমবাপেকে। আর্জেন্তিনার অধিনায়ক হিসেবে মেসিরও ভোট ছিল এই তিনজনকে। তিনি দুইয়ে রেখেছিলেন এমবাপে, তিনে ইয়ামালকে। গতবছর ফিফায় সেরা ছিলেন ভিনিসিয়াস, রদ্রি বা বেলিংহ্যাম।

Football
এঁরা দু’জনেই ভিনদেশে খেলতে গিয়ে সেখানকার খেলার পরিবেশ ও পরিকাঠামোই পাল্টে দিতে পেরেছেন নিজস্ব দাপটে

দেমবেলে বিশ্বসেরা হলে হবে কী? দেমবেলে, ইয়ামাল, এমবাপে, ভিতিনহারা সবাই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন হয়তো। অন্য রাস্তায় মেসি বা রোনাল্দো। লোকে আজও দ্বিতীয় পথেই ছুটবে। আজও এতটা টান মেসি-রোনাল্ডো। একটা সময় দুটো জায়গাতেই ছিল তাঁদের দেখনদারির লড়াই। এখন নেই সেসব। তাতে কী! ওই দুটো পুরস্কারের চেয়েও বড় ব্যাপার মানুষের মনে থেকে যাওয়ার কৃতিত্ব। ওখানে ওই দুজন আজও সম্রাট।

মেসির অসুবিধে হল, তাঁর নতুন দেশে ফুটবল জনপ্রিয়তায় চার নম্বরে। অন্য ক্লাবগুলো মেসির মতো মেগাস্টার নেওয়ার দিকে ঝোঁকেনি। শুধু একটা ক্লাবে বিশ্বজনীন মেগাস্টার থাকলে হবে কী করে! রোনাল্ডো অনেক দুর্বল ক্লাবে খেলেন, কিন্তু তাঁর সুবিধে হল, দেশটা আয়তনে ছোট। এবং সেখানে জনপ্রিয়তায় এক থেকে দশ নম্বর খেলা ফুটবল। ফুটবল ছাড়া ওখানকার মানুষ কিছু বোঝেন না। (Football)

“এই শতাব্দীর খেলা প্রেমিকরা এক দিক দিয়ে ভাগ্যবান, অজস্র খেলায় সর্বকালের সেরাদের দেখতে পেয়েছেন চোখের সামনে। চোখের সামনে তাঁরা ফুল ঝরিয়েছেন, বিকশিত হয়েছেন।”

পশ্চিম এশিয়ায় যে দেশগুলো ফুটবল খেলে, তাদের মধ্যে সেরা দেশ অবশ্যই সৌদি আরব। এশিয়া কাপ জিতেছে ছয়বার, বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে ছয়বার। ২০২৭ সালের এশিয়া কাপ এবং ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ করবে বলে দেশ একেবারে ফুটবলময়। এবং সৌদিতে আল হিলাল, আল ইতিহাদের মতো ক্লাব রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে যারা প্রচুর সাফল্য এনেছে অতীতে। রোনাল্ডোর টিম তাদের সঙ্গে এখন পাল্লা দিচ্ছে যা অতি সম্প্রতি দেখা যায়নি। রোনাল্ডোকে কেন্দ্র করে পর্যটন এবং হোটেল ব্যবসার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে সৌদিতে। রোনাল্ডোর ক্লাবের খেলা দেখতে ভিড় হচ্ছে, লোক বাড়ছে হোটেলে। একজনের জন্য এতটা বদল দেশের কাঠামোয়, এটা অনেকটা অবিশ্বাস্য। (Football)

এই শতাব্দীর খেলা প্রেমিকরা এক দিক দিয়ে ভাগ্যবান, অজস্র খেলায় সর্বকালের সেরাদের দেখতে পেয়েছেন চোখের সামনে। চোখের সামনে তাঁরা ফুল ঝরিয়েছেন, বিকশিত হয়েছেন। এত নাম, একটা লিখতে ভুলে যেতে পারি। মাইকেল জর্ডন, উসেইন বোল্ট, মাইকেল ফেল্পস, মাইকেল শুমাখার, লুইস হ্যামিলটন, লেবরন জেমস, রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল, নোভাক জোকোভিচ, সেরেনা উইলিয়ামস, মারিয়ন জোন্স, সিমোনে বাইলস, রোনাল্ডো, রোনাল্দিনহো, জিনেদিন জিদান, ডেভিড বেকহ্যাম, সচিন তেন্ডুলকর, মার্তা। (Football)

Football
সূর্য-চন্দ্র অস্ত যায় একদিনেই। মেসি এবং রোনাল্ডোর সাম্রাজ্যের সূর্য-চন্দ্র অস্ত যাবে না অত দ্রুত

মেসি-রোনাল্ডো এই তালিকায় থাকবেন আরও ব্যতিক্রমী হয়ে। এঁরা দু’জনেই ভিনদেশে খেলতে গিয়ে সেখানকার খেলার পরিবেশ ও পরিকাঠামোই পাল্টে দিতে পেরেছেন নিজস্ব দাপটে। আরও পরিচিতি বাড়িয়েছেন দেশ দু’টোর। মেসি বা রোনাল্ডোকে দেখে আরও নামী ফুটবলার চলে আসেন সে দেশের লিগে খেলতে। সে দেশের লিগ দেখার কৌতূহল ছড়িয়ে যায় কিরিবাটি থেকে লিচেস্টাইন, ফুটুনা থেকে জিবৌতি। সামুদ্রিক দ্বীপে, মরুভূমিতে, পাহাড়ে বা জঙ্গলে। সেখানকার কোনও হতদরিদ্র কিশোর ফুটবলার খেলে বেড়ান মেসি বা রোনাল্ডোর জার্সি পরে। ঠিক যেমন বছর কুড়ি আগে কিশোরের গায়ে থাকত বড় রোনাল্ডো বা রোনাল্দিনহোর জার্সি। (Football)

মূল স্রোত বলতে যেটা বোঝানো হয় ফুটবলের, সেখানে মেসি বা রোনাল্ডো কেউই নেই। মানে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোতে তাঁরা খেলেন না আর। তবুও একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাননি বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের মন থেকে। বরং কঠোর প্র্যাকটিসে নিজেকে তৈরি করে রাখার মারাত্মক খিদে তাঁদের আরও মাঠে রেখে দিচ্ছে বছরের পর বছর। (Football)

আরও পড়ুন: ভেজ বনাম নন ভেজ ফুডের রাজনীতি

গতবার কাতারে বিশ্বকাপ জেতার পর লোকে ধরে নিয়েছিল, আর দেশের হয়ে খেলবেন না মেসি। ইউরো কাপ এবং দু’বার ইউরো নেশন্স লিগ জেতার পর সবাই ধরে নিয়েছিল রোনাল্ডো আর খেলবেন না দেশের হয়ে। কোথায়? খেলার আকণ্ঠ খিদে এখনও তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে দু’জনকে। পরের বিশ্বকাপেও তাঁদের দেশ অন্যতম ফেভারিট। এই লেখার সময় দেখছিলাম, ১২৩ ম্যাচে সৌদিতে ১১০ গোল করেছেন রোনাল্ডো। মেসি ৮৮ ম্যাচে ৭৭ গোল, ৪২ অ্যাসিস্ট। এই পরিসংখ্যান বর্তমান কোনও ফুটবলারের থাকলে আমরা বলে উঠতাম, বাহ, ওস্তাদ বাহ। (Football)

পেলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭, চার বছর খেলেছিলেন নিউ ইয়র্ক কসমসে। ৬৪ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ৩৭ গোল। মেসি-রোনাল্ডোর গোলের হিসেব অনেক বেশি বর্ণময়। তবে আমেরিকায় পেলের প্রভাব ভুলে যাওয়া কঠিন। কদিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মেসি না রোনাল্ডো, কে সর্বকালের সেরা? ট্রাম্পের উত্তর ছিল, ‘আমার ছেলে রোনাল্ডোর ফ্যান। তবে আমি মনে করি, পেলেই সর্বকালের সেরা। আমার ছোটবেলায় তাঁকে দেখেছিলাম। চোখে লেগে আছে ওর প্রতি লোকের ভালবাসা।’ (Football)

Football
মেসি আমেরিকা যাওয়ার পর ইন্টার মায়ামির বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে

মেসি আমেরিকা যাওয়ার পর ইন্টার মায়ামির বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। জার্সি বিক্রির রেকর্ড ভেঙেছে। অনেক প্রতিপক্ষ ক্লাব বেশি সমর্থক মাঠে আসবেন বলে মেসিদের সঙ্গে খেলাটা নিয়ে যাচ্ছে এনএফএল স্টেডিয়ামে। তাঁর সঙ্গে তাঁর প্রাক্তন বার্সা সতীর্থ খোর্দি আলবা, লুই সুয়ারেজ, সের্খিও বুসকেতসকেও টেনে এনেছে ইন্টার মায়ামি। (Football)

রোনাল্ডো সৌদিতে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক আগ্রহের প্রেক্ষাপটে সেখানকার লিগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ৩০০ শতাংশ। লিগের ব্রডকাস্ট রাইটস বিক্রি হয়েছে কয়েকডজন দেশে। সবাই রোনাল্ডোর খেলা দেখতে চান। সৌদি লিগ দেখতে সামগ্রিকভাবে ভিড় হয় না। তাদের থেকে ইউরোপের অনেক ছোট দেশের লিগে ফুটবল দেখতে ভিড় বেশি হয়। তবে আল নাসরের মাঠে দর্শক বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।

“বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মেসি এফেক্ট’ আসলে আমেরিকায় ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য বেকহ্যামের মতো কারও কারও ব্যক্তিগত চেষ্টা। ‘রোনাল্ডো এফেক্ট’ সেখানে সৌদির পুরো জাতীয় লিগের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য সৌদি রাজতন্ত্রের কৌশল।”

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মেসি এফেক্ট’ আসলে আমেরিকায় ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য বেকহ্যামের মতো কারও কারও ব্যক্তিগত চেষ্টা। ‘রোনাল্ডো এফেক্ট’ সেখানে সৌদির পুরো জাতীয় লিগের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য সৌদি রাজতন্ত্রের কৌশল। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজে যখন সৌদির ক্রাউন প্রিন্স দেখা করতে যান ট্রাম্পের সঙ্গে, তখন তাঁর সঙ্গে থাকেন রোনাল্ডো। ট্রাম্প, যাঁর চোখে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে, যাঁর চোখে লেগে রয়েছে কসমস ক্লাবে খেলা পেলে, তিনিও রোনাল্ডোকে দেখে গদগদ। (Football)

ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে বেশি অনুগামী আজও রোনাল্ডোরই। সৌদি পর্যটন বিভাগ তাঁকে বলে, ‘আলটিমেট ইন্সফ্লুয়েন্সার’। সৌদির জাতীয় দিবসে রোনাল্ডো সৌদিদের তিনটি জাতীয় পোশাক থোবে, বিশত, শেমাঘ পরে ছবি তোলেন। তাঁদের বিখ্যাত তলোয়ার নৃত্য ‘আরদা’য় অংশ নিতে দেখা যায়। তাঁর সঙ্গিনী জর্জিনা রডরিগেজ সৌদির ঐতিহ্যপূর্ণ ‘আবায়া’ পোশাক পরে ঘোরেন। তাঁর মেয়ে আরবি ভাষায় আবৃত্তি করে। সব সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

“মেসির কাছে রোনাল্ডোর মতোই পশ্চিম এশিয়া থেকে খেলার প্রস্তাব ছিল। অর্থও ছিল অনেকটা বেশি। তবে স্ত্রী আন্তোনেয়ার কথাতেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন আমেরিকান জীবন।”

সৌদি সংস্কৃতিতে নিজেকে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছেন সিআর সেভেন। তাঁর এনগেজমেন্টের খবর শুনে এক সাংবাদিক যে কারণে তাঁকে এক উট উপহার দিয়ে ফেলেছিলেন স্থানীয় প্রথা মেনে। তাঁকে দেওয়া হয়েছে ৭ লক্ষ ৬৮ হাজার ৯৮১ হাজার ডলারের এক ঘড়ি। থিম সৌদি। ইসলাম এবং সৌদির জাতীয় পতাকার ভেবে ঘড়ির রং সবুজ। ২৭টি রত্ন রয়েছে ঘড়িতে। প্রথমবার গিয়ে রোনাল্ডো ছিলেন রিয়াধের ফোর সিজনস হোটেলে, সতেরো খানা স্যুট নিয়ে। যার ভাড়া মাসে ৩ লক্ষ ডলার। এখন যে বাড়িতে থাকেন, তার ডিজাইন দেখিয়েছিল ম্যানসনিট্টি নামে এক স্থাপত্য সংস্থা। সাততলা বাড়িটা একেবারে পুরোনো আমলের প্রাসাদের মতো। রিয়াধের ওই এলাকার নাম আল মুহাম্মিদিয়া। সেখানে নৈশজীবন দেখার মতো। (Football)

Football
রোনাল্ডো সৌদিতে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক আগ্রহের প্রেক্ষাপটে সেখানকার লিগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ৩০০ শতাংশ

সৌদিতে বিশ্ব তারকাদের খরা, আমেরিকার মতো নয় যে যেখানে চোখ পড়বে, সেখানেই তারকা। রোনাল্ডো নিজেই সৌদিতে মহাতারকা। এক এবং এক। আমেরিকায় তো তারার খরা নেই। সেখানে মেসির খেলা দেখতে আসেন অনেকেই। লেব্রন জেমস, লিওনার্দো ডি কাপ্রিও, ম্যাজিক জনসন, সেরেনা উইলিয়ামস, গ্লোরিয়া স্তেফান, সেলেনা গোমেস, কিম কারদাসিয়ান, প্রিন্স হ্যারি, মেগান মর্কেল, কার্লোস আলকারাজ— হলিউড এবং খেলা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে মেসির খেলা দেখতে। ডেভিড এবং ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম মেসির ক্লাবের প্রশাসনে থাকায় আরও মাত্রা পায় ব্যাপারটা। (Football)

মেসির কাছে রোনাল্ডোর মতোই পশ্চিম এশিয়া থেকে খেলার প্রস্তাব ছিল। অর্থও ছিল অনেকটা বেশি। তবে স্ত্রী আন্তোনেয়ার কথাতেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন আমেরিকান জীবন। সেখানে এখন ইংরেজি শেখেন। মাঝে মাঝেই পরিবার নিয়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বা ডিজনি ওয়ার্ল্ড ঘুরতে চলে যান। কোনওদিন জাতীয় পার্কে। তাঁর ফাউন্ডেশন সেখানে বাচ্চাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করে। রোনাল্ডো ভবিষ্যতে কোন দেশে থাকবেন কেউ জানেন না, মেসি কিন্তু আমেরিকাতেই থাকতে পারেন খেলা ছাড়ার পর। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। বেকহ্যাম যা করেছেন।

আরও পড়ুন: খেলার ভারতে মহিলা কর্ত্রী কোথায়?

মেসির আমেরিকা যাওয়া হয়ে গেল আড়াই বছর, রোনাল্ডোর সৌদি যাত্রা ঠিক তিন বছর। এখনও তাঁদের তুলনা করে, শুধু তাঁদের নিয়ে অজস্র ওয়েবসাইট রয়েছে নেট পৃথিবীতে। যার বয়স কুড়ি হয়ে গেল। এই দু’জন ফুটবল থেকে অস্ত গেলে, ওই ওয়েবসাইটগুলোর ভবিষ্যত কী দাঁড়াবে, সেটা ভাবি। ওঁরা ফুটবল থেকে সরে গেলেও সেই সাইটগুলো থেকে যাবে। (Football)

সূর্য-চন্দ্র অস্ত যায় একদিনেই। মেসি এবং রোনাল্ডোর সাম্রাজ্যের সূর্য-চন্দ্র অস্ত যাবে না অত দ্রুত।

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Rupayan Bhattacharjee

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।
Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

অর্কপ্রভ ভট্টাচার্য
আইভি চট্টোপাধ্যায়
প্রমথ চৌধুরী

সংস্কৃতি

আহার

শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য
শমিতা হালদার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com