banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

করালী দখলদারের ইতিবৃত্তান্ত (গল্প)

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

illustration by laboni barman

নিউ জার্সির ‘সাগরিকা’ ক্লাবের সেক্রেটারি মরালী মজুমদারকে ফোন করে নতুন মেম্বার করালী দখলদার যখন আত্মপরিচয় দিয়েছিল, মরালী ভারী আশ্চর্য হয়েছিল। অদ্ভুত নাম তো! পদবিটা কি আগ্রাসী। অথচ নাম, পদবি মিলিয়ে মরালীর সঙ্গে যেন ছন্দবন্ধনে বাঁধা। ক্লাবে ঢুকেই লোকটা কি কি করতে চায় তার ফিরিস্তি শুনতে শুনতে মরালী ভাবছিল করালী ক্ষমতা দখল করতেই ঢুকেছে নাকি? এই ছোট্ট বাঙালি সমাজে এর মধ্যেই তার কান্ডকারখানার খবর পাওয়া যাচ্ছে। 

করালী দখলদার নিজের জীবনকে ক্রমশ ইস্যুময় করে তুলছে। তার এক একটি বায়নাক্কা সামলাতে কিছু লোক অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। গত বছর সাহিত্যিক হবে বলে ‘আন্তরিক’ পত্রিকার সম্পাদক সুজন দাশগুপ্তের সঙ্গে কী রাগারাগি! আদিরসের ময়ান টয়ান দিয়ে করালী এমন সব খাস্তা গল্প লিখে পাঠাচ্ছিল যে গভীররাতে পাঠ করে সুজনকে কানে, মাথায় জলের ঝাপটা দিতে হয়েছে। নিজের নামমাহাত্ম্য বজায় রাখতে সুজন কাহাকেও কুবাক্য বলে না। কিন্তু করালীর রচনা বেগ রুখতে তাকেও স্পষ্ট কথা বলতে হয়েছিল। কি সব রগরগে নাম! “জঙ্ঘায় জঙ্ঘায় সংঘাত”, “অতলান্তিকে উলঙ্গ ঊর্বশী”, দুটো গল্প পড়েই সুজন করালীকে ফেরৎ পাঠিয়েছিল। করালী কদিন মারমূর্তি ধরেছিল। ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। 

‘সাগরিকা’ ক্লাবে প্রথম বছর দুয়েক করালী খুব খাটাখাটনি করল। দুর্গাপুজোর সময় হেঁইও বলে ঠাকুরের একচালা ভারী মূর্তি কাঁধে তুলতে যাচ্ছে। রান্নাঘরে বিশাল বিশাল ডেকচির মধ্যে ত্রিশূলের কায়দায় কাঠের খুন্তি ধরে খিচুড়ি নাড়ছে। পিকনিক এ গিয়ে গাদা গাদা বাসন মাজছে। করালীর বউ তো বরের কর্মকান্ড দেখে অবাক!

আসলে করলী তখন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হওয়ার বাসনায় বাসন মেজে, রান্না করে সবাইকে ইমপ্রেস করছিল। ক্রমশ সকলের সঙ্গে তার কি মধুর ব্যবহার। একবছর ধরে বাইশজন মহিলাকে আলাদা করে উইক ডে তে ঘরে বাইরে লাঞ্চ খাওয়াল। মরালীর মতো বেকার গৃহবধূদের বাড়িতে ‘সাগরিকা’ ক্লাবের ভূত ভবিষ্যৎ নিয়ে তার কত গভীর আলোচনা। আর চাকুরেদের অফিস থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ‘ম্যাড্রাস গার্ডেনে’ দোসা, ইডলি খাইয়ে কত শলাপরামর্শ। সাগরিকার আসন্ন ভরাডুবি ঠেকাতে করালী তার ক্যাপ্টেন হতে চায়। মরালীরা গাধাবোটের ছদ্মবেশ পরা দিশারী। করালীর চোখে তাদের তখন নবমূল্যায়ন হচ্ছে। বাইশজন মহিলাই ভাবছে – আমি নইলে মিথ্যে হবে করালীর ভোট জেতা। 

এর কারণ করালী প্রত্যেককে আড়ালে বুঝিয়েছে ক্লাব চালাতে গেলে এমন অসাধারণ কর্মী মহিলার সাহায্য না পেলে নবযুগ আনা যাবে না।

মরালীরা সবাই তখন কমরেড। শকুন্তলাকে করালী টোপ দিয়েছিল – তোমাকে হিরোইন না করলে, এবার গৌতম দাসের হাত থেকে পুজোর থিয়েটার কেড়ে নেব। শকুন্তলা পরে বনানী ও সুমনার কাছে খবর পেল ওদেরও করালী এক টোপ দিয়েছে। তিনজনে কি হাসাহাসি। ওদিকে করালী সব ফিল্ডে কাজ গোছাচ্ছিল। দুর্গাপুজোর মিটিং এ তমালিকে একটা চোখ ছোট করে মিটমিটিয়ে হেসে বলেছিল – “দুধগরদে তোমায় যা মানায় না! তুমি কিন্তু পুজোর কাজে লিড নেবে প্লিজ!  ‘সাগরিকার’ রাঙাবউদি আর ছন্দাদির হাত থেকে সন্দেশের মালা আর ফল কাটার ছুরিগুলো কেড়ে নেবে তো? ওনাদের মাতব্বরী বন্ধ করতে হবে।”

তমালি কি আর মাল চেনে না? তবু দুধগরদের শাড়ির গ্যাস খেয়ে সামান্য গোলাপি হয়ে বলেছিল -” যাঃ, ওঁরা কতদিনের ভেটারেন। নৈবেদ্যতে এক্সপার্ট! দুঃখ পাবেন না?”

করালীর মৃদু হাসি -“পুরনোদের তাড়াতেই তো এসেছি। মার মার করে সবকটা ফাউন্ডার মেম্বারদের তাড়াব। মৌরসী পাট্টা? এ বলে আমার বাড়ির বেসমেন্টে ক্লাবের ‘আরকাইভ’ হবে। ও বলে আমরা বর বউ মিলেমিশে লাগাতর ট্রাস্টি বোর্ড আর কমিটির মেম্বার হয়ে বসে থাকব। সে বলে আমার জামাইবাবুকে ‘সাগরিকার’ কলকাতা ব্রাঞ্চের লাইফ এজেন্ট করে দিতে হবে। তার মানে ওখান থেকে আর্টিস্ট পাঠিয়ে কমিশনের ডলার হাতাবে‌। পুরনোদের জবরদখল ভাঙব এবার।”

তমালি ভয় পেয়ে রাঙাবউদিকে ইনফর্মেশান দিতেই ক’টা উইকেট পড়ে গেল। কিন্তু করালী সাংঘাতিক ক্যাম্পেন চালাচ্ছিল। ইলেকশনের দিন অর্ধেক লোককে মরালীরা চিনতেই পারছিল না। বড় বড় ভ্যান এসে ক্লাবের পার্কিং লটে থামছিল। নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, পেনসিলভনিয়ার নাম্বার প্লেট দুলছে আর ভ্যানের পেট খালি করে নেমে আসছে অচেনা বাঙালি দঙ্গল। এরা সময় থাকতে চাঁদা দিয়ে ক্লাবের মেম্বার হয়েছে। অনেকের চাঁদা নাকি করালী নিজের পকেট থেকে দিয়েছিল।

মরালীরা করালীর প্রতিপক্ষে রাঙাবউদিকে দাঁড় করিয়ে নিশ্চিন্তে ছিল। ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে উনি ক্লাবের জন্য কম খাটেননি। উনি আর ওঁর স্বামী ক্লাবের রাঙাদা (গগন মিত্র) দুজনেরই ঠান্ডা মাথার মানুষ হিসেবে সুনাম আছে। লোকের বিপদে আপদে ছুটে যান। সেখানে ভোটের ক্যান্ডিডেট ধুরন্ধর করালী দখলদারকে কি মেম্বাররা সাপোর্ট করবে?

শকুন্তলাকে করালী টোপ দিয়েছিল – তোমাকে হিরোইন না করলে, এবার গৌতম দাসের হাত থেকে পুজোর থিয়েটার কেড়ে নেব। শকুন্তলা পরে বনানী ও সুমনার কাছে খবর পেল ওদেরও করালী এক টোপ দিয়েছে। তিনজনে কি হাসাহাসি। ওদিকে করালী সব ফিল্ডে কাজ গোছাচ্ছিল।

এর মধ্যে করালী কয়েকজনের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা করেছিল। একদিন খুব দরকারি কথা আছে বলে মরালীকে ফোন করেছিল। বলেছিল -“মরালী আপনাকে সবাই এত হিংসে করে! সত্যি! হাতে পাওয়ার আসুক। ওদের হিংসে আরও বাড়িয়ে দেব।”

সে কথা শুনে মরালীর যে মন খারাপ হয়নি তা নয়। নিজেকে বাইশজনের জিঘাংসার ভিকটিম বলে ভাবা যায়? করালী তখন ফোনেই নাকি নাকি সুরে গাইছিল, “হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী…”

গানের শেষ কথাটা ভুল। তাছাড়া করালীর সব কথা মরালী বিশ্বাস করতে চায়নি। ছোটবেলায় সুচিত্রা মিত্রের ছাত্রী ছিল বলে ক্লাবের সব ফাংশানে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া ছাড়া ওর আর কী এমন দোষ যে, লোকের রাগ হতে পারে? আর, বাইশজন মহিলার একসঙ্গে এত হিংসুটে হওয়া সম্ভব নয়। সুখে দুঃখে বিপদে আপদে এদের দেখছে না মরালী? করালী নির্ঘাৎ দু’চারজনের রাগঝালের খবর বার করে এনে ওকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছিল।

অবশেষে ক্লাবে ভোটের দিন এল। সারাদিন ধরে রাঙাবউদির বুড়ো বয়সে প্রায় গর্ভযন্ত্রণা চলছিল। অথচ করালীর মুখে অনাবিল হাসি। নিজের বউকে আনেনি ভোটের উত্তেজনা সইতে পারবে না বলে। আর মরালী, তমালিদের মতো গাধাবোটদের কি টানাপোড়েন! চারদিকে যা কোর্ট কাছারি মামলা মকদ্দমা চলছে। নিউইয়র্কে এক ক্লাবের দুর্গাঠাকুর নিয়ে দু’দলের হাতাহাতি। যারা প্রতিমা দখল করে রেখেছে, তারা অন্য দলকে ঘট পুজোর উপদেশ দিয়েছে। ক্লাবের ক্ষমতা দখল নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে বন্ধুবিচ্ছদও হচ্ছে। কিন্তু তারই মধ্যে ছোট খাটো মতান্তর নিয়েও ‘সাগরিকা’ তো দিব্যি ভেসে চলেছে। কে জানে এবার কে হাল ধরতে আসবে। গত এক বছর ধরে মাঝে মাঝে গোপন বৈঠকের খবরও শোনা গেছে। রাঙাবউদি আর করালীর বাড়িতে নেমন্তন্ন খেয়ে খেয়ে কিছু উপদেষ্টার অগ্নিমান্দ্য হওয়াতে তারা অ্যান্টাসিড সাপ্লাই দিয়েছে।

করালী আর রাঙাবউদির মধ্যে জব্বর প্রতিযোগিতা হল। সারাদিন রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ। মরালীরা কেউ ঝেড়ে কাশেনি। করালীর সাপোর্টারদের হাতে বড় বড় পোস্টার। তাতে লেখা -” ভোট ফর করালী”। অন্যদিকে রাঙাবউদির মাদ্রাজি ছেলের বউ মীনাকশী হাতে হাতে কাগজ বিলোচ্ছে। তাতে লেখা- “পুরনো চাল ভাতে বাড়ে”। নিশ্চয়ই প্রবাদের মানেটা জেনে নিয়েছে। সেকেন্ড জেনারেশন ‘কনভিন্সড’ না হয়ে কাজ করবে না।

ভোটের আগে দুই ক্যান্ডিডেটকে হারমোনিয়ম বাজিয়ে আলাদা আলাদা গান গাইতে হল। কালচারাল ক্যাম্পেন। রাঙাবউদি ধরা গলায় কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে গাইলেন, “পুরানো জানিয়া চেও না আমারে আধেক আঁখির কোণে…”। রাঙাদা রঙ্গিন টিস্যু দিয়ে নাক ঝাড়লেন। মরালীরা দ্রবীভূত! “আপনারে ঝর্না দেয় ত্যাগরসে উদ্বলি…”। আরও বেশি বেশি নাক ঝাড়ার আওয়াজ শোনা গেল।

স্টেজে করালী এল একেবারে মিলিটারি কায়দায়। ঝমর ঝমর করে টেবিলে রাখা হারমোনিয়ম বাজিয়ে প্রথমে জুতো দিয়ে তাল ঠুকল তিরিশ সেকেন্ড। তারপর তবলচী পঙ্কজের দিকে চোখ টিপে ঈশারা দিতেই – ধাঁই ধাঁই ধরতাই বোল। করালী নাটকীয় চিৎকারে গান ধরল -” কারার ওই লৌহকপাট ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট…”।

করালীর সাপোর্টাররা যখন “হা হা পায় যে হাসি” বলে দোহার দিতে গেছে, তমালি, মরালীরা সমঃস্বরে বলল- “কোরাস গাওয়া চলবেনা, চলবেনা।” করালীর সরু গলার গান, যুদ্ধযাত্রার মতো ভাবভঙ্গী, দলের লোকেদের হা হা হা ছাপিয়ে রাঙাবউদির দল তাল দিয়ে গাইতে লাগল -“পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। রাঙাবউদি জিন্দাবাদ।” সভা লন্ডভন্ড। শেষ পর্যন্ত ইলেকশন কমিটির দুই চেয়ারম্যান চেয়ার ছেড়ে উঠে হাত তুলে সবাইকে থামালেন। ভোট দেওয়ার জন্যে লম্বা লাইন পড়ে গেল।

যে পথ দিয়ে রাঙাদারা এসেছিলেন, সে পথ দিয়ে ফিরলেন না তাঁরা। করালী পঁচিশটা বেশি ভোট লুটে নিয়েছে। তার সাঙ্গপাঙ্গোরা আনন্দে আত্মহারা। “সত্যের জয়, সত্যের জয়” বলতে বলতে হাত উঁচু করে বেরিয়ে পড়ল। করালীর ক্যাম্পেনের প্রধান উপদেষ্টা অবনীদার বাড়িতে শ্যাম্পেন টোস্ট করে ভিকট্রি পার্টি হবে। ওদের মুখে “সত্যের জয়, সত্যের জয়” শুনে রাঙাবউদি দুঃখে, অপমানে মর্মাহত। এদের কত সন্দেশ, চমচম খাইয়েছেন এতকাল।

এরপর ক্যাপ্টেন করালীর নেতৃত্বে ‘সাগরিকা’-র যাত্রা শুরু হল। প্রথম প্রথম রাঙাবউদির দল মুষড়ে পড়েছিল। তারপর যা হয়। প্রত্যেক নেড়ানেড়ি আবার বেলতলায় ফিরে এল। কারণ ‘সাগরিকা’-র প্রতি তারা তো কিছুটা দায়বদ্ধ। এত কষ্ট করে গড়া ক্লাব। বেহাত হতে দিলেই হল?

করালীর তখন পোয়াবারো। ক্লাব চালানো তো সোজা নয়। এদের দিয়ে কাজ উদ্ধার হলেই হল। করালী চটপট অভিমানী নেড়ানেড়িদের কাজে লাগিয়ে দিল। শুধু তারপর দু’বছর ধরে তার চেলারা বিদ্বেষ বিষ ছড়িয়ে দিয়ে কয়েকটা ফ্যামিলির সাময়িক শান্তিভঙ্গ করল।

দু’বছর পরে নিজের টার্ম শেষ হওয়ার সময় ক্লাবের বার্ষিক মিটিং এ করালী বক্তৃতায় বলল -“আজ আমার দায়িত্ব শেষ। ‘সাগরিকা’-র নাম শুনে এসেছিলাম। দেখলাম সাগর কোথায়? কুয়োর মধ্যে ডিঙ্গি চালাতে আসা। ব্যাঙে ব্যাঙে ছয়লাপ। কোলা, সোনা কিছু বাদ নেই। আবার ব্যাঙাচিদেরও ভবিষ্যৎ দেখতে হবে। এদিকে ডিঙ্গি চালাতে গেলেই ব্যাঙেদের মাথায় বাড়ি পড়ে। কোমর ভাঙে। এত স্পর্শকাতর ব্যাঙের দলকে কিছু বোঝানো যাবে না। যত বলি কুয়ো ছেড়ে সব বাইরে চলো। সাগরে নিয়ে যাব তোমাদের। তা না, কনস্টিট্যুশন আঁকড়ে কুয়োর মধ্যে বসে থাকবে। কোনও ঢেউ তুলতে দেবে না…”

ভোটের আগে দুই ক্যান্ডিডেটকে হারমোনিয়ম বাজিয়ে আলাদা আলাদা গান গাইতে হল। কালচারাল ক্যাম্পেন। রাঙাবউদি ধরা গলায় কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে গাইলেন, “পুরানো জানিয়া চেও না আমারে আধেক আঁখির কোণে…”। রাঙাদা রঙ্গিন টিস্যু দিয়ে নাক ঝাড়লেন। মরালীরা দ্রবীভূত! “আপনারে ঝর্না দেয় ত্যাগরসে উদ্বলি…”। আরও বেশি বেশি নাক ঝাড়ার আওয়াজ শোনা গেল।

এইসব আগড়ম বাগড়ম বকে করালী বক্তৃতা থামিয়েছিল। বাঙালিদের কূপমন্ডুক বলার জন্যে তার বিদায়বেলার দিনে অনেকেই দু’কথা শুনিয়েছিল। সেই যে করালী ‘সাগরিকা’ থেকে সরে গেল আর তার টিকি দেখা যেত না।

মরালীর সঙ্গে হঠাৎ সে মুখোমুখি হল বছর তিনেক বাদে। ফ্লোরিডার বঙ্গ সম্মেলনে মরালী দেখল করালী রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে এক ভদ্রলোককে জেরা করছে। ভদ্রলোক ঘাবড়ে গিয়ে হাতে ধরা চৌকো শীল্ড দেখিয়ে কী সব বলতে চেষ্টা করছেন। বেশ ক’জন লোক জড়ো হয়ে গেছে। ভদ্রলোক করালীকে বলছেন -“আমাকে জিজ্ঞেস করছেন‌ কেন? আমি কি অ্যাওয়ার্ড চেয়েছি? বঙ্গসম্মেলন কমিটিকে গিয়ে বলুন না…”

করালী দাবড়ে দিল -” আরে রাখুন মশাই সম্মেলন কমিটি। যতো সব মুখ চেনাচেনির কারবার। বছর বছর বঙ্গসম্মেলনে ডিসটিঙ্গুইশড সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে। অথচ যোগ্য লোকেদের রেকগনাইজ করা হচ্ছে না।”

-“কী আশ্চর্য! আমি পেয়েছি বলে এত রাগ নাকি? কিন্তু আমি তো কমিটির একজনকেও চিনি না। অ্যারিজোনায় থাকি। এঁরা অ্যাওয়ার্ড নিতে ডাকলেন বলে আসতে হল। মহাবিপদ!”

-“সত্যি কাউকে চেনেন না? বসন্ত সেন, সুবীর ঘোষ, মঙ্গল ভটচাজ, এঁদের কাউকে চেনেন না?”

– “সত্যি বলছি মশাই। আজ প্রথম দেখলাম ওঁদের। অ্যারিজোনায় থেকে ইস্ট কোস্টের এত লোককে চিনব কী করে?”

ততক্ষণে করালীর শোরগোলে আরও কয়েকজন চলে এসেছে। হঠাৎ বঙ্গসম্মেলন কমিটির ব্যাজ পরা এক মহিলা ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলেন -“আচ্ছা আপনি এরকম রাগারাগি করছেন কেন বলুন তো? দীপ্তেনবাবু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ওঁর কালচারাল কন্ট্রিবিউশনের জন্য। স্টেট কলেজে টেগোর লিটারেচর পড়ান। সেকেন্ড জেনারেশনের জন্যে রবীন্দ্রনাথের বই ট্রান্সলেট করেছেন…”

ভদ্রলোক লজ্জিত হয়ে পড়লেন। মহিলাকে বললেন -“না না এত কিছু বলার মতো নয়।” করালী কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র নয়। মাথা নেড়ে বলল -“ঠিক আছে উনি নাহয় পেলেন। কিন্তু আরও তো গুণী বাঙালি আছে। তারা কি ভাবে আপনাদের রিচ করবে। মানে প্রসেসটা কী?”

ভদ্রমহিলা সামান্য হাসলেন- “রিচ করার কোনও প্রসেস নেই। কেউ যদি কোনও সোশ্যাল কাজ করে থাকেন বা তাঁর বিশেষ ট্যালেন্ট থাকে, বঙ্গসম্মেলন কমিটিই তাঁকে সিলেক্ট করে। প্রত্যেক বছর এভাবেই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে।”

লোকেরা করালীকে নিয়ে মজা পাচ্ছিল। করালী বেগতিক বুঝে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। মরালীর মনে পড়ছিল কয়েকবছর আগের ঘটনা। সে বছর ‘সাগরিকা’-র এক মেম্বার যখন ইমিগ্র্যান্ট বাঙালিদের জীবন নিয়ে নাটক লেখা ও পরিচালনার জন্যে বঙ্গসম্মেলনে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল, করালী কিছুতেই তার নামটা ক্লাবের পুজোর সময় স্টেজে বলতে দেয়নি। পাছে আরও প্রচার হয়ে যায়। এমন হিংসুটে, কূটিল লোকের বন্ধুবান্ধবও হয় না। করালীর বউ মানুষটা খারাপ নয়। কিন্তু করালীকে টলারেট করা একদমই অসম্ভব হয়ে উঠছিল।

ফ্লোরিডা বঙ্গসম্মেলনের পরে করালীর সঙ্গে মরালীর আর দেখা হয়নি। মরালীরা ক্যালিফোর্নিয়া চলে গিয়েছিল। সেখানে নতুন বাঙালি সমাজ। প্রবাসী ক্লাবে মেম্বার হয়ে আবার রবীন্দ্রজয়ন্তী, পিকনিক, দুর্গাপুজো, নিউ ইয়র্ক ইভ পার্টি। আমেরিকার পূর্ব উপকূলে করালী দখলদার, পশ্চিম উপকূলে মরালী মজুমদার, ‘সাগরিকা’-র এপারে, ওপারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

তিনবছর পরে এবার নিউ ইয়র্কে ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনে বঙ্গসম্মেলন হবে। যথারীতি আবার করালী দখলদার! নিউ জার্সির ‘সাগরিকা’ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়ে ভরাডুবির পর দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরেছিল। স্টেজে কোরাস গাওয়া বন্ধ। নাটকে সাইড রোলে রাজি হয় না। দুর্গাপুজোয় বিসর্জনের বাজনার সঙ্গে দুলকি চালে নাচে না। ম্যাগাজিনে রগরগে প্রেমের গল্প লেখাও ছেড়ে দিয়েছে। করালীর এইসব অনীহার কারণ জানতে চাইলে বিরস বদনে উত্তর দেয় -“কালচারে আলসার”।

হঠাৎ কি যে হল, বঙ্গসম্মেলনের নামে করালী যেন শীতের ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠলো। অনেক বছর পর সম্মেলন কমিটির মিটিং এ হাজির হল। হাল, চাল বুঝে নেওয়ার চেষ্টায় চা, সামোসা খেতে খেতে উৎসবের নানা সাব-কমিটির ভবিষ্যৎ কর্মসূচীর খবর নিতে থাকলো। করালীর মনে হল উচ্চপদ নিয়ে ব্লাড প্রেশার বাড়ানোর চেয়ে সাব-কমিটিতে ঢোকাই বুদ্ধিমানের কাজ। উইক এন্ডে বিনেপয়সায় ঘুগনি, স্যান্ডউইচ খেতে খেতে দুটো বড় বড় কমিটির শাখা, প্রশাখার দলে নাম লেখালো। “ওভারসীজ পারফর্মিং আর্টস” আর “ভেন্ডার্স এন্ড স্টলস”।

ওভারসীজ পারফর্মিং আর্টস ব্যাপারটা বেশ ব্যাপক। কমিটিতে থেকে তুমি সংস্কৃতি সদস্যও হতে পারো। আবার শ্রমিকও হতে পারো। মানে সিলেকশন কমিটিতে থেকে বঙ্গসম্মেলনে পেনডেন্ট মুখার্জি আসবে না ঋতুঝর্ণা আসবে, সে সিদ্ধান্ত যেমন নিতে পারো। সেরকম শ্রমিক কমিটিতে ঢুকলে আর্টিস্টদের ভারী ভারী বাজনাবাদ্যি নিয়ে প্রচুর মাল টানাটানির গুরুভারে নিয়োজিত থাকতে পারো।

কিন্তু করালী বুঝতে পারছিল কালচারে তার যথেষ্ট আগ্রহ আর অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বঙ্গউৎসবের সাংস্কৃতিক কমিটি তাকে দলে নিচ্ছে না। অগত্যা শ্রমিক দলে নাম লেখালো। শ্রমের মর্যাদা কিভাবে পেতে হয় তার একটা ফর্মুলা ভেবে রাখলো। তার মগজে এখন নানা পরিকল্পনা। উৎসবের আগে কলকাতায় গিয়ে পকেটের পয়সা খরচ করেই একবার পেনডেন্ট মুখার্জির সাক্ষাৎকার নেবে। নিউ ইয়র্কের এয়ারপোর্টে নায়িকার কটা সুটকেস টানতে হবে জেনে নেবে। সে “সন্তোষী মা” ব্রত পালন করে জানলে বঙ্গ উৎসবে শুক্রবারে তাকে টক ছাড়া রান্না খাওয়াবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী করালীর বউ মুখঝামটা দিলেও এ কাজে সাহায্য করবে। কোলকাতার টেলিভিশনের কোনও লোকজনকে করালী তেমন চেনে না। “নক্ষত্র বাংলা” চ্যানেলে নিউইয়র্ক/হিউস্টনের কত কর্মকর্ত্তাদের সহাস্য সাক্ষাৎকার দেখা গেল। করালীকে আর কে ডাকবে? তার চেয়ে ‘বর্তমান’ কাগজের নীহারিকাদিকে ধরলে হয়তো পেনডেন্ট মুখার্জির সঙ্গে করালী দখলদারের প্রাক্ বঙ্গ উৎসবের সাক্ষাৎকারটা বেরিয়ে যেতে পারে। নীহারিকাদির দৌলতে এ পত্রিকায় আমেরিকার কতো বাঙালির ছবি ছাপা হয়েছে। করালীর ‘ব্যাপিকা বিদায়’ নাটকের ছবিটা একেবারে কান ঘেঁসে বেরিয়ে গিয়েছিল। দলের ঠেলাঠেলিতে এভাবে উইংসের পাশে দাঁড়ানোর ফল। যাক্! এবারের ছবিতে থাকবে শুধু ও আর পেনডেন্ট!

একদিকে ওভারসীজ আর্টিস্ট অন্যদিকে ভেন্ডারদের লিস্ট বগলে করালী শীতকালে প্লেনে চেপে বসলো। ননস্টপ ফ্লাইটে ননস্টপ পরিকল্পনা।

নিউ জার্সির ‘সাগরিকা’ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়ে ভরাডুবির পর দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরেছিল। স্টেজে কোরাস গাওয়া বন্ধ। নাটকে সাইড রোলে রাজি হয় না। দুর্গাপুজোয় বিসর্জনের বাজনার সঙ্গে দুলকি চালে নাচে না। ম্যাগাজিনে রগরগে প্রেমের গল্প লেখাও ছেড়ে দিয়েছে। করালীর এইসব অনীহার কারণ জানতে চাইলে বিরস বদনে উত্তর দেয় -“কালচারে আলসার”।

কলকাতায় পৌঁছে করালী বাহারি চুড়িদার কুর্তা কিনল। বঙ্গ উৎসবের জন্য বেঙ্গল ক্লাবে ‘কিক অফ নাইট’। কালচারের ফুটবলে প্রথম লাথিমারা উপলক্ষ্যে উৎসবের কর্তাব্যক্তিদের নেমন্তন্ন পেয়ে সেলিব্রিটি, উপমন্ত্রী, অপমন্ত্রী থেকে শুরু করে লেখক, সাংবাদিক, বিজনেস ম্যাগনেট কে না আসবে। যথারীতি করালীও যাবে। কারণ এ ব্যাপারে উৎসব কমিটি খুব উদার। একবার তো আহুত,রবাহুত মিলে এমন লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল যে, গঙ্গার ওপর ভাসমান রেস্তোঁরা থেকে এক প্রেস ফটোগ্রাফার জলে পড়ে গিয়েছিল।

করালী রবাহুত নয়। দুটো কমিটির শ্রমিক। চুড়িদার কুর্তার সঙ্গে কাঁধে শাল চাপিয়ে কিক অফ নাইটে এলো। সঙ্গে তসরসিল্কের ওপর অ্যাপ্লিকের শাড়ি পরা বউ। লোক গিজগিজে ব্যাঙ্কোয়েট হলে আমেরিকার চেনামুখ বেশ কয়েকজন। কিন্তু করালীর চোখ যাকে খুঁজছে, তার দেখা নাই রে তার দেখা নাই। একটু খোঁজ নিতে জানা গেল পেনডেন্ট ব্যাংককে ছবির শ্যুটিং এ চলে গেছে। কিন্তু মেঘ না চাইতেই জল। ‘তিসরী কসম’ ছবিতে রাজকপূর যেমন প্রথমবার ওয়াহিদা রহমানকে দেখে ফিসফিসিয়ে বলেছিলেন -“আরে ইয়ে তো পরী হ্যায়!” করালীরও চোখের সামনে ঋতুঝর্নাকে দেখে সেরকম রিঅ্যাকশন হল। অথচ নায়িকার ধারে কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। বঙ্গ উৎসবের দুই চেয়ারম্যান দুই পাশে তাদের বউ আর মাঝে ঋতুঝর্নাকে নিয়ে পার্মানেন্ট প্রেস। টিভি আর প্রেস লাগাতর ছবি তুলে যাচ্ছে। করালী কয়েকবার ভীড় ঠেলে “এক্সকিউজ মী” বলতে বলতে ঋতুঝর্নার কাছাকাছি পৌঁছেছিল বটে, কিন্তু কথা বলার চান্স নিলোনা। নিজের পরিচয় দেওয়ার আগে হঠাৎ বদখত নামটা ভেবেই সরে পড়ল। এক ধরনের আইডেনটিটি ক্রাইসিস।

এই বিকট নামের বোঝা বহন করার জন্য দায়ী হলেন তার ঠাকুর্দা। তুমি কালীভক্ত ছিলে, ফাইন। কিন্তু কালীপুজোর দিন নাতি জন্মালো বলে তার নাম করালীপ্রসাদ রাখার কি রাইট ছিলো তোমার? মা, বাবাও তেমনি। ওই হুকুম মেনে নিয়েছিল। এখন কেউ শুনবে? করালীর মেয়ে পিংকীর নাম যদি কেউ ‘বগলা’ রাখতে চাইতো, ওরা রাজী হতো? শেক্সপীয়র যাই লিখে থাকুন। বদখত নামে খুব ক্ষতি হয়। করালীর নাম শুনে দুটো মেয়ে ফোনেও প্রেমালাপ করতে চায়নি। নেহাত সম্বন্ধ করে বিয়ে আর ওর চেহারাটা কালীঠাকুরের স্বামীর মতো হ্যান্ডসাম বলে বউ মুগ্ধ হয়েছিল।

এখন তো আর চেহারার সেই জৌলুস নেই। ঋতুঝর্না ফিরেও তাকালো না। সাক্ষাৎকারের ভাবনা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে করালী ভেন্ডারদের সঙ্গে আলাপ টালাপ করল। দু’তিনজন নাট্যকারের কাছে আত্মপরিচয় দিয়ে তাদের নাটকের খবর নিল। তারপর খাবারের লাইনে দাঁড়াল। কোথায় বিরিয়ানী, কোথায় রেজালা? স্যান্ডউইচ ও নিরামিষ। সঙ্গে পালং এর বড়া ও পেঁয়াজি।

এটা নাকি ডিনার পার্টি নয়। ছাতামাথা দিয়ে ককটেল পার্টি। ঠিক আছে। বিনেপয়সার ভোজ। কিন্তু করালীর ইচ্ছে হল পার্টির কোলকাতার স্পনসরদের ডেকে বলে -“একবার আমেরিকায় এসে দেখে যান মশাই, ওখানে ককটেল আওয়ারে কতো রকমের স্ন্যাকস সার্ভ করে। করালী লোভী নয়। কিন্তু বঙ্গ উৎসবের প্রথম লাথিমারা পার্টিতে ঘুরে ঘুরে শাকের বড়া আর ক্ষুদিরাম সাইজের তেকোণা স্যান্ডউইচ? বলরামের সন্দেশও তো রাখতে পারত। বাড়ি ফেরার পথে করালী চাইনিজ টেক আউট নিয়ে যেতে চাইছিল। বউ রাজী হল না। পার্টিতে টুকরো টুকরো কেক, পেস্ট্রি খেয়ে তার পেট ভরে গেছে। রাগের মাথায় করালী একবাক্স হাক্কা চাউমিন কিনে বাড়ি ফিরে খেতে বসে গেল। মাথায় তখন অন্য ফন্দীগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।

শ্রমিকের প্রথম কর্তব্য কিছু নাটক দেখা। শোনা যাচ্ছে, বিখ্যাত যে দুটো দল নাটক নিয়ে বঙ্গ উৎসবে যাবে, তাদের নাকি বিরাট কাস্টিং। অত লোকের প্লেনভাড়া দেওয়া যাবে না। তাই আমেরিকার কজন লোকাল ট্যালেন্টদের নিতে হবে। সে রকমই চেষ্টা চলছে। নিজের অভিনয় ক্ষমতার ওপর করালীর বিরাট কনফিডেন্স। সেই প্রস্তাব নিয়ে আর ফোকটে দু’তিনটে নাটক দেখার জন্য ও নাট্যপরিচালকদের ফোন করল। আমেরিকার বঙ্গ উৎসবের অন্যতম কর্মকর্ত্তা পরিচয় দিয়ে হলের সামনের সারিতে বসে তিনদিন নাটক দেখলো। তারপর অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়ে নিজের সেলফোন নম্বর, ইমেল অ্যাড্রেস রেখে এলো। পরিচালকদের বুঝিয়ে এলো – “ওখানে স্টেজ ম্যানেজমেন্টে আমাকে তো থাকতেই হবে। দরকার হলে কন্ট্যাক্ট করে আগে স্ক্রীপ্ট পাঠিয়ে দেবেন। ছোট খাটো রোল ম্যানেজ করে দেওয়া উড বী নো প্রবলেম।”

করালীর পরবর্তী অভিযান ছিলো ভেন্ডার অ্যান্ড স্টল ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে দোকানে দোকানে ঘোরা। শাড়ি, গয়নার দোকানে, নানা ধরনের বুটিক স্টোরে বেশ খাতির পাওয়া গেল। গয়না গাটি কেনার ব্যাপারে করালী বরাবরই আপত্তি জানায়। বঙ্গ উৎসব প্রতিনিধিকেও এই সব নামী দামী হীরে জহরতের দোকানগুলো কি আর ডিসকাউন্ট দেবে? আমেরিকায় যাওয়ার কন্ট্রাক্ট তো এরা পেয়েও গেছে। তাই বিমুগ্ধ নয়নে শো-কেসের দিকে চেয়ে থাকা বউকে তাড়া দিয়ে, দামী কাপে দামী চা খেয়ে করালী দোকানের মালিকদের নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে এলো। একটা পানের দোকানে তখন -” না মাঙ্গু সোনা চাঁদি, না মাঙ্গু হীরা মোতি” গানটা বাজছিলো।

একটা বুটিক স্টোর বরং দুটো শাড়িতে একটু ডিসকাউন্ট দিলো। তসর সিল্ক আর কপালে মস্ত টিপ পরা এক মিষ্টি মুখের মহিলা অনুরোধ করলেন – ” অনেক টাকা স্টল ভাড়ার জন্য দিচ্ছি দাদা। তার ওপর প্লেন ফেয়ার। ওখানে ভালো বিক্রি হবে তো?”

করালী খুব বেশী ভরসা দিলো না। এক আধবার বঙ্গ উৎসবের শেষে ভেন্ডারদের হাহুতাশ, রাগারাগি ও স্বচক্ষে দেখেছে। একগাদা ডলার খরচা করে এসে যদি বিক্রি তেমন না হয়, রাগ হবে না? তবু এই মহিলাকে উৎসাহ দিয়ে করালীর বউ বলে এলো -“দেখবেন প্রচুর বিক্রী হবে। আপনার ডিজাইনগুলো তো ইউনিক। আমাদের চেনাশোনা সবাইকে এখন থেকে বলে দেবো আপনার স্টলে যেতে।”

বুটিক মহিলা হাসিমুখে -“অনেক ধন্যবাদ” বলে হাসিমুখে আরও কিছু “বিজনেস কার্ড” ধরিয়ে দিলেন। কিন্তু চা, কফি দেয়নি বলে করালী সামান্য হতাশ হল।

নেক্সট ট্রিপ “ক্ষুদিরাম মোদক মিষ্টান্ন ভান্ডার”। কিক অফ মিটিং এ করালী শুনেছিলো এই প্রথম আমেরিকার বঙ্গ উৎসবে বাঙালির মিষ্টির দোকান থাকবে। সন্দেশ, ক্ষীর কদম্বের পাশাপাশি উৎকৃষ্ট রাবড়ি ও বিক্রী হবে কিনা জানার ছুতো করে ভেন্ডার কমিটির শ্রমিক করালী ক্ষুদিরামের দোকানে ঢুকলো। আমেরিকার উৎসবের প্রতিনিধি শুনে একজন লোক খাতির করে টিনের চেয়ারে বসালো। “কি মিষ্টি খাবেন বলুন” জিজ্ঞেস করতে করালী হাত নেড়ে বলল -“না না এখন অবেলায় মিষ্টি টিষ্টি নয়। তবে রাবড়ি আছে কি? নন বেঙ্গলীর মিষ্টির দোকানের ক্ষীর ক্ষীর রাবড়ি তো মুখে দেওয়া যায় না। আপনাদের রাবড়িতে নিশ্চয়ই ব্লটিং পেপারের মতো মোটা মোটা দুধের সর থাকবে। এখন সেটা বরং একটু টেস্ট করতে পারি। বঙ্গ উৎসবে মিষ্টি টিষ্টি রেফ্রিজারেশনের ব্যাপারটাও আমাকেই দেখতে হবে।”

লোকটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল -“বেলা বারোটার পরে তো দোকানে রাবড়ি আর থাকেনা স্যার। তাড়াতাড়ি বিক্রী হয়ে যায়। লাল দই দেবো? সঙ্গে নতুন গুড়ের রাজহাঁস সন্দেশ? হাঁসের পেটে নলেন পায়রা গুড়?”

করালী পরীক্ষকের মতো মনোযোগে দুটোই সাবাড় করল। তারপর চক্ষুলজ্জ্বায় (ক্ষুদিরাম কোম্পানী এবং নিজের বউয়ের কাছেও)  এক ভাঁড় লাল দই কিনে বাড়ি ফিরল। বউকে পরীক্ষকের ভূমিকাটা ভাঙল না। সে ইদানীং করালীকে সব সুযোগ নিতে বারণ করছে। একদিন “দুটি পাতা একটি কুঁড়ি” নামে একটা চা-ব্যবসায়ীর শো-রুমে গিয়ে ওরা কয়েক কাপ সুগন্ধী চা খেয়েছিলো। ঐ কোম্পানী বঙ্গ উৎসবে চায়ের স্টল দেবে। মালিক করালীকে এক বাক্স “দুটি পাতা একটি কুঁড়ি” উপহার দেওয়ার সময় বলেছিল -“দেখবেন মশাই, ওখানে যেন বড় বড় ইলেক্ট্রিক টি-পট থাকে।” করালীর মনে হল এ নিশ্চয়ই কোনও চা বাগানের মালিকের আত্মীয়। করলীকে মিষ্টির দোকানের লোকটার মতো ‘স্যার’ না বলে ‘মশাই’ বলল। ঠিক আছে। ইলেক্ট্রিক টি পট জ্বলবে কিনা ওসব ফালতু তদারকির কাজ করালী দখলদারের জন্য নয়। “দুটি পাতা একটি কুঁড়ি”-র বাক্স বুকে নিয়ে রাস্তায় নেমে করালীর বউ ধমকেছিল -“আর এভাবে দোকানে দোকানে ঘুরবে না।”

করালীও আর ঝুঁকি নেবে না। ক্ষুদিরামের মিষ্টান্ন ভান্ডারে ওরা ওর দই সন্দেশ খাওয়ার ছবি তুলতে চাইছিল। আমেরিকার মিষ্টির স্টলে বিজ্ঞাপনের মতো রাখবে। করালী গালভর্তি সন্দেশ নিয়ে সেই ছবি তোলা আটকেছে। পাগল! আসল কর্মকর্তারা যদি প্রমাণ পায় করালী তাদের ছদ্মপরিচয় নিয়ে ক্ষুদিরামের পয়োধি ও রাজহাঁস খেয়েছে, লজ্জার শেষ থাকবে না। ক্ষমতার অপব্যবহারের অপরাধে কমিটি ওর বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনও নিতে পারে। কাঁকড়ার জাত বাঙালিকে বিশ্বাস নেই। ‘সাগরিকা’ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়ে কত কুচুটে বাঙালির সঙ্গে যে লড়তে হয়েছিল। যাক, সে সব অপ্রিয় স্মৃতি করালী মনে রাখতে চায় না। সামনে বঙ্গ উৎসব। তিনটে দিন আনন্দে কাটাবে। করালীরা সময়মতো নিউ জার্সি ফিরে এল।

তারপর আনন্দ পাওয়ার মতো খবরও এল। কোলকাতার ‘দর্পণ’ নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালক বঙ্গ উৎসবে ‘বন্দী বীর’ নাটকে একটা ছোট্ট ভূমিকায় ওকে অভিনয় করতে বলেছেন। করালী প্রথমে ভেবেছিল রবি ঠাকুরের ‘বন্দী বীর’। ওকে নিশ্চয়ই বেণী পাকাইয়া শিরে সর্দারজী সাজতে হবে। পরে জানল তা নয়। জেলের কয়েদীদের নিয়ে নাটক। করালী কয়েদী সাজবে। এক টুকরো ডায়লগ আর একটা গ্রুপ ড্যান্স। কয়েদীদের নাচ করালী ‘মুক্তধারা’ সিনেমায় দেখেছে। ঐ নাটকের নাচের গানটাও রবীন্দ্রসঙ্গীত। গারদের আড়ালে সমবেত নৃত্য “হা রে রে রে রে রে, আমায় ছেড়ে দে রে দে রে”। পরিচালক দৃশ্যটার ভিডিও পাঠিয়ে দিয়েছেন।

করালী রাজি হয়ে গেল। সারা বছর উইক এন্ডের পার্টিতে কত ভাংড়া নেচেছে। বঙ্গ উৎসবে অভিনয়ের মধ্যে একটা নাচ আর কী এমন ব্যাপার! করালী ভিডিও দেখে দেখে দিব্যি রিহার্সাল দিচ্ছে।

বঙ্গ উৎসব শুরু হওয়ার আগের দিন ওভারসীজ পারফর্মিং আর্টসের শ্রমিক হিসেবে করালীরা কয়েকজন মিলে কেনেডি এয়ারপোর্টে আর্টিস্টদের আনতে গেল। সিনেমা, থিয়েটারের দল, নাচ গানের আর্টিস্ট, তাদের মিউজিক হ্যান্ডস, লেখক, ভেন্ডারদের নিয়ে বিশাল বাহিনী পিলপিল করে বেরিয়ে আসছে। তিনটে বাস ভর্তি করে হোটেলে নিয়ে যেতে হবে। করালী অবশ্য নিজের গাড়ি নিয়ে গেছে। হয়তো ঋতুঝর্না বাস এ উঠতে রাজি হবে না। তখন করালী ওকে গাড়িতে নিয়ে ফিরতে পারবে।

কিন্তু হঠাৎ কী যে ঘটলো। একটি কমবয়সী ছেলে লাউঞ্জে বসে পড়ে বমি করতে শুরু করল। পেটের যন্ত্রণায় মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আবার বমি। ওর সঙ্গীরা অসহায় মুখে ওকে ঘিরে ধরেছে। একজন করালীদের বলল – “প্লেন থেকেই পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। আপনারা প্লিজ একটু হেল্প করুন। এখানে ডাক্তার ডাকা যাবে না?”

জানা গেল ছেলেটির নাম গোরা। মিউজিক হ্যান্ডস হিসেবে ড্রাম বাজাতে এসেছে। করালীর হঠাৎ মনে হল এয়ারপোর্ট অথরিটিকে খবর দেওয়ার আগে ফোনে নাইন ওয়ান ওয়ান কল করা দরকার। ছেলেটা যন্ত্রণায় প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। এয়ারপোর্ট সিকিউরিটির লোকজন এসে পড়েছে। তারাও নাইন ওয়ান ওয়ান কল করছে। অ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশ আসতে দেরি হল না। স্ট্রেচারে প্যারামেডিকরা যখন গোরাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছে, কলকাতা থেকে আসা পুরো দল তখন রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। কয়েকজন ভয়ার্ত মুখে জানতে চাইছিল, ওরা কি গোরার সঙ্গে যেতে পারে? করালী ওই দলের সমীর নামে একজনকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের পেছন পেছন রওনা দিল। বাকী সবাইকে বাসে তুলে নিয়ে অন্য কয়েকজন হোটেলের দিকে রওনা দিল। শো মাস্ট গো অন।

কুইন্সের জ্যামাইকা হসপিটালের এমার্জেন্সি রুমে পৌঁছে করালী দেখল গোরাকে নার্সরা দেখাশোনা করছে। একটু পরে ডাক্তার এসে করালীর সঙ্গে কথা বলার পর গোরাকে যন্ত্রণা আর বমি বন্ধ করার ওষুধ দিয়ে পেটের আলট্রা-সাউন্ড করতে পাঠালেন। করালীর পক্ষে এখন হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বঙ্গ উৎসব কমিটির চেয়ারপার্সনদের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করে একটু নিশ্চিন্ত হল যে কমিটি থেকে আর্টিস্টদের জন্যে একমাসের হেলথ ইনসিওরেন্স করানো হয়েছে। হাসপাতালে থাকার খরচ পাওয়া যাবে। করালী বউকে ফোনে সব পরিস্থিতি জানিয়ে বলল -“আজ কখন ফিরতে পারব জানি না। কাল থেকে ম্যারিয়ট রিজার্ভেশন করা আছে। তুমি অন্তত পৌষালীদের সঙ্গে সময়মতো পৌঁছে গিয়ে চেক-ইন করে নিও। ওপেনিং সেরিমনিতে আমি থাকতে পারব কিনা জানি না।”

বউ বলল -“সেকি? কাল আবার তুমি হসপিটাল যাবে?”

করালী বলল -“এখন কিছু বলতে পারছি না। ছেলেটার কী হয়েছে আগে জানা যাক। এই অবস্থায় ওকে একা ফেলে যাব কি করে?”

আলট্রা-সাউন্ডে গোরার গলব্লাডারে স্টোন আর রক্ত পরীক্ষায় ইনফেকশন ধরা পড়ল। পরের দিন সকালে সার্জারি হবে। করালী অনেক রাতে বাড়ি ফিরে ভোরবেলা সার্জারীর সময় মতো হাসপাতালে চলে গেল। বঙ্গ উৎসবের চেয়ারপার্সনরা জানালেন গোরার জন্য আর্টিস্টরা খুব উৎকন্ঠায় রয়েছে। কিন্তু সন্ধেবেলায় ওপেনিং সেরিমনি। তাদের কাউকে তো হাসপাতালে পাঠানোর সময় থাকবে না। করালী যেন গোরাকে বুঝিয়ে বলে।

করালী অপারেশন রুমের কাছাকাছি ওয়েটিং রুমে বসে ভাবছিল গোরার যেন কোনও কমপ্লিকেশন না হয়। বিদেশ বিভূঁইয়ে একটা ছেলে অসহায়ের মতো হাসপাতালে পড়ে আছে। সার্জারিটা ভালয় ভালয় হয়ে গেলে গোরাকে রিকভারি রুমে দেওয়ার পর ওর আর্টিস্ট বন্ধুদের জানাতে হবে। ওর বন্ধু সমীরকে কালই নিউ ইয়র্কের পোর্ট অথরিটির বাসে তুলে দিয়েছে। সে গিটার বাজায়। তাকে তো মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে বাজাতেই হবে।

গোরার অপারেশন হয়ে যাওয়ার পর সার্জেনের সঙ্গে করালী কথা বলল। রুটিন সার্জারী। যদি না কোনও কমপ্লিকেশন দেখা দেয়, গোরাকে তিনদিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

জ্ঞান ফেরার পর গোরাকে একটা সেমি প্রাইভেট রুমে শুইয়ে রেখেছে। তখনও ঘুম ঘুম ভাব রয়েছে। চোখ খুলে কাউকে খোঁজার চেষ্টা করল। করালী ঝুঁকে পড়ে ওর কপালে হাত ছুঁইয়ে সামান্য হাসল -“তুমি ভাল হয়ে গেছো। পেট থেকে থলিশুদ্ধু সবকটা স্টোন বার করে দিয়েছে। বোধহয় পরশুদিন ছেড়ে দেবে।”

গোরা যেন ঘোরের মধ্যেই বলতে চেষ্টা করল -“কোথায় যাব?” করালী আশ্বাস দিল -“আমাদের বাড়িতে। ফাংশনে তো আর ড্রাম বাজানো হবে না। এখন তোমার কয়েকদিন রেস্ট দরকার। তারপর কলকাতায় ফিরে যাবে।”

গোরা চোখ বন্ধ করে হয়তো কিছু ভাবছে। করালী বলল-“ব্যথা শুরু হলে নার্সদের বলবে। ওরা ইনজেকশন দেবে। আমি বিকেল পর্যন্ত আছি। তুমি কেমন থাক জেনে বাড়ি যাবো।”

বঙ্গ উৎসবের ওপেনিং সেরিমনিতে করালীর যাওয়া হল না। পরের দিনও নয়। কারণ গোরার জ্বর হয়েছিল। এ অবস্থায় ওকে ফেলে চলে যেতে ভরসা হল না। এদিকে ‘বন্দীবীর’ নাটকে করালীর কয়েদী সেজে “হা রে রে রে রে রে” নাচের জন্যে পরিচালক নাকি ওকে খুঁজছেন। করালী ফোনে ওর বউকে জানিয়ে দিল -“আমি আপাতত হসপিট্যালে বন্দী। রুগীকে ছেড়ে যেতে পারছি না।”

এক বছর পর ক্যালিফোর্নিয়ায় বঙ্গসম্মেলন। সেখানে মরালীর দল বিরাট মাতব্বরী পেয়েছে। সম্মেলনের আগে কমিটির মিটিং এ জানা গেল নিউ ইয়র্কের কমিটি মেম্বাররা ভোট দিয়ে ডিসটিঙ্গুইজড সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার জন্য একজনের নাম সিলেক্ট করেছেন। কালচারাল কন্ট্রিবিউশনের জন্যে নয়। মানবিকতার জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। নাম –করালী দখলদার, নিউ জার্সি।

মরালীর চোখ কপালে ওঠার উপক্রম! তারই মধ্যে কানে আসছে বিদেশে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া একটা ছেলের জন্য করালীর কর্তব্যবোধ আর মায়ামমতার কথা। রবীন্দ্রভক্তির আতিশয্যে গদগদ মরালী অনুভব করল– এ যেন বাল্মীকি প্রতিভা। একজীবনে করালী এমন বদলে গেল? অ্যাওয়ার্ড সেরিমনিতে মরালীই প্রথম করালীকে অভিনন্দন জানাবে।

দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প‍র্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড‌ সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com