banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

প্রণব মুখোপাধ্যায় কি সত্যিই ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ছিলেন?

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Pranab Mukherjee

তখন আমি বর্তমান পত্রিকার ট্রেনি সাংবাদিক। ১৯৮৭ সাল।

অনেকেই হয়তো জানেন বা জানেন না, বর্তমান পত্রিকার জন্ম হওয়ার নেপথ্যে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরাট অবদান ছিল।
বর্তমানের সম্পাদক তথা প্রাণপুরুষ বরুণ সেনগুপ্তের সঙ্গে প্রণববাবুর খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। শুধু প্রণববাবু কেন, তখন দেশের তাবড় রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, আমলার সঙ্গে বরুণ দা’র ব্যক্তিগত স্তরে যোগাযোগ ছিল।

Pranab Mukherjee
তখন ইন্দিরা সরকারের মন্ত্রী। ছবি সৌজন্য – indiatoday.com

সেই সময় প্রণববাবু কংগ্রেস ছেড়ে রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস দল গঠন করেছেন। সঙ্গে জনা চারেক কংগ্রেস এমএলএ মাত্র। ওই বছর রাজ্য বিধানসভার ভোটে প্রণববাবুর দল শ’খানেক কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল। সম্পাদকের নির্দেশে আমাকে প্রণববাবুর প্রচার কভার করতে যেতে হয়েছিল একদিন। সেদিন তিনি উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চল অর্থাৎ নৈহাটি, ভাটপাড়া, জগদ্দল, কাঁকিনাড়া, ব্যারাকপুর প্রভৃতি জায়গায় নির্বাচনী জনসভা করেন। তিনি নিজে একটি হুড খোলা জিপে ছিলেন। আর সাংবাদিকদের জন্য একটি গাড়ি ঠিক করা হয়েছিল।

ওই গরমে প্রণববাবু ঘেমে নিয়ে একাকার। একের পর এক এলাকায় সভায় বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। কোনও সভাতেই তেমন লোক সমাগম হয়নি। কোথাও পাঁচশো, কোথাও মেরে কেটে হাজার, কোথাও চারশো এরকম লোকের ভিড়। একটু গরম লাগলেই প্রণববাবুর সারা গায়ে, বিশেষ করে মুখে লাল চাকা চাকা দাগ হয়ে যেত। এমনিতেই তিনি ছিলেন বেশ ফর্সা। তার উপর সারা মুখে ওই রকম লাল দাগ তাঁকে আরও টুকটুকে করে দিত। যাই হোক, একাধিক জনসভা কভার করে বিকেলে অফিসে ফেরার পর বরুণদা জানতে চাইলেন, ‘দেবাশিস, কেমন দেখলে প্রণববাবুর প্রচার।’ আমি বললাম, ‘খুব খারাপ বরুণদা। লোকজন একেবারেই হয়নি।’ বরুণদা বোধহয় আমার কথা শুনে একটু নিরাশই হলেন।বললেন, ‘ঠিক আছে, লিখে ফেল। লোকজন যে একেবারেই হয়নি, সেটা আর লিখতে যেও না।’ সেবার প্রণববাবুর দলের সব প্রার্থীরই জামানত জব্দ হয়েছিল। তার দু’বছর পর তিনি অবশ্য কংগ্রেসে ফিরে আসেন। পরবর্তীকালে উল্কার বেগে জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর উত্থান।

Pranab Mukherjee
আলাদা দল গড়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় কড়া বার্তা দিতে চেয়েছিলেন রাজীব গান্ধীকে। ছবি  – businessstandard.com

আজকে ভাবলে অবাক হতে হয়, যে প্রণববাবু আলাদা দল করে রাজীব গান্ধীকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন, যে মানুষটি তখন কার্যত ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াতেন, তিনিই কী করে কংগ্রেস সরকারের দু’নম্বর ব্যক্তি হয়ে যান পরে? কী করেই বা সেই মানুষটি রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা হয়ে যান?

তার পর থেকে সাংবাদিকতার সূত্রে গত প্রায় তিন দশক ধরে প্রণববাবুকে দেখে আসছি। তাঁর একেবারে ঘনিষ্ঠ বৃত্তে কখনও ছিলাম না ঠিকই। তবে বিভিন্ন সময়ে তাঁর কাজ দেখেছি, তাঁর রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ভূমিকা দেখেছি। তাঁকে বোঝার চেষ্টা করেছি। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করেছি।

Pranab Mukherjee
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সামনেও ছিল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার হাতছানি। কিন্তু সে প্রলোভনে পা দেননি কখনও। ছবি সৌজন্য – indianexpress.com

কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুর মতো প্রণববাবুর সামনেও দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার হাতছানি ছিল বলে অনেকে মনে করেন।
১৯৮৪ সালের ৩১ অগস্ট দিল্লিতে নিজের বাসভবনে নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পরে অনেক কংগ্রেস নেতা ভেবেছিলেন, ইন্দিরা মন্ত্রিসভার দু’নম্বর ব্যক্তি প্রণববাবুই হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তা হয়নি। ১৯৯১ সালে পেরামপুদুরে রাজীব গান্ধী খুন হওয়ার পরেও অনেকে ভেবেছিলেন, এবার হয়তো বাঙালি প্রধানমন্ত্রী পাবে দেশ। না, সেটাও হয়নি। ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে কংগ্রেস জেতার পরেও প্রণববাবুর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। যিনি একসময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকার সময় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডঃ মনমোহন সিংকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর করেছিলেন, পরবর্তীতে সেই মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় প্রণববাবু অর্থমন্ত্রী হন।

কখনও কি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন? বহু বছর আগে প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “দেবগৌড়া বা গুজরালের মতো তালেগোলে প্রধানমন্ত্রী হলেও হয়তো হতে পারি। কিন্তু নিজেকে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী মেটেরিয়াল বলে মনে করিনা। সেই ক্যারিশমা আমার নেই।…… ক্যারিশমা ছিল নেহরুর। ক্যারিশমা আছে বাজপেয়ির, জ্যোতিবাবুর, মমতার। জননেতা ওঁরা। আমি জননেতা নই। আমার ভাষণ শুনতে পাঁচশো লোকও জড়ো হবে না। মমতার কথা শুনতে মুহূর্তে পাঁচ হাজার লোক জমে যাবে। জীবনে কোনও ভোটে তাই আমি জিততে পারিনি।”

Pranab Mukherjee
ইন্দিরা গান্ধীর একান্ত ঘনিষ্ঠ ও স্নেহধন্য ছিলেন প্রণববাবু। ছবি সৌজন্য – indiatvnews.com

সৌম্যবাবুর এই সাক্ষাৎকার অনেক আগের। তার পরে অবশ্য ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে প্রণববাবু জঙ্গিপুর থেকে লোকসভা ভোটে জিতে আসেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি সৌম্যবাবুকে আরও বলেছিলেন, “তবে হ্যাঁ, আমি ভালো প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট বোধহয় হতে পারব। প্রেসিডেন্ট দেশকে দিশা দেখান। সেটাই তাঁর কাজ। কুড়ি তিরিশ বছর পর দেশ কোনদিকে বাঁক নেবে, সেই রূপরেখা তাঁকেই তৈরি করতে হয়। এ সব করতে আমার বেশ লাগে।”
মনে প্রশ্ন জাগে, তবে কি প্রণববাবু ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ছিলেন?

নাম করা অর্থনীতিবিদ নন, তেমন কোনও বিশিষ্ট ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। বীরভূমের এক অখ্যাত গ্রামের সেই পল্টু কেমন করে জাতীয় রাজনীতির হর্তাকর্তা হয়ে গেলেন, দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন, সেটা গবেষণার বিষয়। তুখোড় ইংরেজিও বলতে পারেন না, বাংলার মতো করেই ইংরেজি বলেন, বলতে পারেন না হিন্দিও। সেই প্রণববাবু কোন মন্ত্রবলে কখনও দেশের অর্থ মন্ত্রক, কখনও বিদেশ মন্ত্রক, কখনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সামলান, বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন, কে জানে!
শুধু কী তাই?

Pranab Mukherjee
পাইপ টানা আর সংবিধান পড়া – এই দুই নেশাতেই বুঁদ থাকতেন। ছবি সৌজন্য – inUth.com

যখনই কংগ্রেস দল অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে পড়েছে, সরকার বেকায়দায় পড়েছে, তখনই তিনি মুশকিল আসান হয়েছেন। সে ইন্দিরার আমল হোক, রাজীবের আমল হোক, পি ভি নরসিমহা রাওয়ের আমল হোক কিংবা মনমোহন সিংয়ের। যে কোনও সঙ্কটে বরাবরই প্রণববাবু ত্রাতার ভূমিকায় থেকে সরকারকে কিংবা দলকে বাঁচিয়েছেন।
এখানেই তাঁর অনুরাগীরা প্রশ্ন তোলেন, দলকে এবং সরকারকে যে তিনি এত দিয়েছেন, কংগ্রেস দল কি তাঁকে তাঁর যোগ্য প্রতিদান দিয়েছে? এ বিষয়ে প্রণববাবু কখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি বা উষ্মা প্রকাশ করেননি। কারণ, তিনি বরাবর দলীয় অনুশাসন মেনে চলতেন। আজ এই মুহূর্তে সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস এক কঠিন সঙ্কটে ভুগছে। দলের ২৩ জন সিনিয়র নেতা সনিয়াকে চিঠি দিয়ে দলকে পুনর্গঠিত করতে বলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, দল এখন দিশাহীন, সঠিক নেতৃত্ব নেই দলে। তাঁদের দাবি, দলে সর্বক্ষণের জন্য কাজ করা নির্বাচিত সভাপতি চাই।

আজ যদি প্রণববাবু সক্রিয় রাজনীতিতে থাকতেন, যদি বেঁচে থাকতেন, ঠিক তিনি হাল ধরতেন। কংগ্রেস সভানেত্রী বুঝতে পারছেন, প্রণববাবুর অনুপস্থিতিতে গোটা দল কতটা অসহায়। কংগ্রেস নেতারা হয়ত এখন ভাবছেন, প্রণববাবুকে রাষ্ট্রপতি হতে দেওয়াটা দলের পক্ষে ভালো হয়নি। এখন তাঁরা হয়তো ভাবছেন, কে ধরিবে হাল, কে তুলিবে পাল, আছে কার হিম্মৎ?

Pranab Mukherjee
তাঁর দূরদর্শিতা এবং কূটনৈতিক বিচক্ষণতা ছিল কল্পনাতীত। ছবি সৌজন্য – indiatoday.com

প্রণববাবুর বিচক্ষণতা ছিল দেখার মতো।
ইউপিএ ১ সরকারকে বামেরা বাইরে থেকে সমর্থন করছিল। আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে বামেরা ক্ষুব্ধ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত ২০০৮ সালের ৮ জুলাই ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন। তার আগে বিদেশমন্ত্রী প্রণববাবু বামেদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলেন। তিনি বহুবার সমর্থন প্রত্যাহারের মতো চরম সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন সিপিএম নেতাদের। শোনা যায়, তিনি নাকি অসুস্থ জ্যোতি বসুকেও ফোন করেছিলেন প্রকাশ কারাতদের নিরস্ত করার ব্যাপারে।
প্রকাশ কলকাতায় এসেছিলেন জ্যোতিবাবুকে দেখতে। অসুস্থ জ্যোতিবাবু দলের সাধারণ সম্পাদককে বলেছিলেন, “সংসদের ভিতরে বাইরে পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা কর। কিন্তু দয়া করে সমর্থন তুলে নেওয়ার মতো প্রাণঘাতী সিদ্ধান্ত নিও না। এতে দলের ক্ষতি হবে।”
কিন্তু কে শোনে কার কথা?
প্রকাশ ঘোষণা করলেন সমর্থন প্রত্যাহারের কথা।
লোকসভায় সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়ল। কংগ্রেসের তখন হাতে ২২৮ জন সাংসদ। দরকার আরও ৪৪ জনের সমর্থন।
প্রণববাবু বামেদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “আপনাদের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। পরে টের পাবেন।”

Pranab Mukherjee
ভারতরত্নের সুযোগ্য দাবিদার। ছবি সৌজন্য – theprint.in

সঙ্কটের আগাম আঁচ পেয়ে প্রণববাবু সমাজবাদী পার্টির নেতা অমর সিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে ওই দলের ৩৯ জনের সমর্থন জোগাড় করে রেখেছিলেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় লোকদল এবং জেডিএস-এর সঙ্গেও তিনি সমর্থনের কথা বলে রেখেছিলেন। ফলে সে যাত্রায় সরকার বেঁচে যায়। তারপরেই সনিয়া এবং প্রণববাবু বামেদের শিক্ষা দিতে তৎপর হয়ে ওঠেন। ঠিক হয়, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে বামেদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে। যে কোনও মূল্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ওদের হারাতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের এক অংশের তীব্র বিরোধিতাকে উপেক্ষা করেই প্রণববাবু ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শর্ত মেনেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন। তার ফলেই তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের জেরে মুখ থুবড়ে পড়ে সিপিএম তথা বামেরা। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটে রাজ্যে।

প্রয়াত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ২০১১ সালে পালা বদলের পরে আমাকে বলেছিলেন, “২০১১ সালে প্রণবদার জেদেই তৃণমূল আর কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। আমি বারবার বলেছিলাম, খাল কেটে কুমির আনবেন না।” সোমেনবাবু যদিও তখন পর্যন্ত তৃণমূল ছাড়েননি।

Pranab Mukherjee
কংগ্রেসের তিন মহারথী। আলোচনার টেবিলে। ছবি সৌজন্য – pinterest.com

গত পাঁচ দশকের ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গণে প্রণববাবুর পরিচয় ছিল চাণক্য হিসেবে। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্থিতধী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, তীক্ষ্ণ বুদ্ধির বিচক্ষণ মানুষ। কূটনৈতিক চালে বরাবর সিদ্ধহস্ত। সেই কারণেই অল্পবয়সেই প্রণববাবু ইন্দিরার অত্যন্ত স্নেহভাজন হয়ে পড়েন। ইন্দিরাও তাঁকে বিশ্বাস করতেন। রাজীব এবং পরবর্তীকালে সনিয়া খুব একটা পছন্দ না করলেও ইন্দিরা তাঁকে খুবই পছন্দ করতেন। জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরার একান্ত অনুগত প্রণববাবুর বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ির আমলে প্রণববাবুর হস্তক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী অনেক সমস্যার হাত থেকে নিস্তার পেয়েছেন, এমন নজিরও আছে। সংসদে তিনি বিরোধীদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রেখে চলতেন। সেই কারণে বিরোধী সদস্যরাও তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দিতেন।

সংবিধান গুলে খেয়েছিলেন প্রণববাবু। তথ্য পরিসংখ্যান ছিল ঠোঁটস্থ। প্রখর স্মৃতিশক্তি। কবে কোথায় কী ঘটেছে, সব তাঁর মনের কম্পিউটারে গাঁথা ছিল। সংস্কৃত শ্লোক বলতে পারতেন না-দেখে। সংসদেও অনেক সময় শ্লোক আওড়াতেন। নিজে রোজ পুজোআর্চা করতেন। বীরভূমের কীর্ণাহারে গ্রামের বাড়িতে প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় তাঁর চণ্ডীপাঠ ছিল বাঁধা। এমনকি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও তাতে বাধা পড়েনি। প্রোটোকল মেনেই পুজোর সময় কীর্ণাহারে চলে আসতেন। তবে পুজো ইত্যাদিতে বিশ্বাস করলেও প্রণববাবু ছিলেন আদ্যন্ত উদার ধর্মনিরপেক্ষ।

Pranab Mukherjee
স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ছবি সৌজন্য – maahyderabad.com

চিরটাকাল যিনি রাজনীতির অলিগলিতে ঢুঁ মারতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন, তিনি কি রাষ্ট্রপতি হয়ে রাইসিনা হিলসে বন্দি জীবন কাটাতেন? একদমই নয়। বরং রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবন জনসাধারণের জন্য খুলে দিয়েছিলেন। লোকজন, আড্ডা পছন্দ করতেন বলে অনেককে ডেকে পাঠাতেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে শুনেছি, এই ধরাবাঁধা প্রোটোকলবদ্ধ জীবন তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। একান্তজনেদের কাছে তাঁর পুরোনো দলের হাল নিয়ে দুঃখ করতেন। আজ এ কথা বলাই চলে, যদি রাষ্ট্রপতি না হয়ে প্রণববাবু কংগ্রেসেই থাকতেন, তা হলে দলের এই দুর্দশা হত না। তিনি ঠিক দলকে সঙ্কট থেকে বার করে নিয়ে আসতেন। কংগ্রেস নেতারা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, প্রণববাবুকে রাইসিনা হিলসে পাঠিয়ে তাঁরা কী ভুল করেছেন।

Pranab Mukherjee
মেয়ে শর্মিষ্ঠার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে। ছবি সৌজন্য – indiatoday.com

রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার পর প্রণববাবু একান্তে স্বীকার করেছেন, কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল গড়াটা তাঁর সব চেয়ে বড় ভুল ছিল। নিজেই যখন বিশ্বাস করতেন, তিনি জননেতা ছিলেন না, তখন এই ঝুঁকি কেন নিয়েছিলেন, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। ভারতীয় রাজনীতিতে এত লম্বা দৌড় আর কেউ দিতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। কখনও খাদের কিনারায় চলে গিয়েছেন। আবার নিজের মতো করেই সেই খাদের কিনারা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছেন, দেখ, আমি ঠিক ভেসে উঠেছি নিজের জোরে। ক’জনই বা সেটা পারে? প্রণববাবু পেরেছিলেন। ভালোমন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে – রবি ঠাকুরের এই বাণীই যেন মূর্ত ছিল তাঁর গোটা জীবনজুড়ে।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com