(Katra Masjid)
শীতের বেলা ছোট হয়। কখন যে সে ছুটে পালায় বোঝা দায়! “হাজার দুয়ারী” থেকে ঘেমে নেয়ে, এক পেট খিদে নিয়ে যখন বেরনো গেল তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে তিনটে। বাস, অটো, টোটো, রিক্সার সঙ্গে মুর্শিদাবাদের রাস্তায় চলে ফিরে বেড়ায় রাশি রাশি এক্কাগাড়ি। সহিসের মেজাজ নওয়াবি ধাঁচের। রাস্তার শাসন ভার যেন তারই হাতে। অতএব সেই দ্বিচক্র যান এবং চতুর্পদ ঘোটক বাহিনীর যুগপৎ গতি বাঁচিয়ে নিজের জান হাতে করে কোনও রকমে এসে গাড়িতে সওয়ার হয়ে যে স্বস্তির নিঃশ্বাসটা ফেলা গেল, তা মহামূল্যবান! শুরু হল আমাদের যাত্রা- পরের পোর্ট অফ কল- কাটরা মসজিদ। আমাদের গাইড প্রজ্জ্বল বেশ চটপটে ছেলে। সে তার স্কুটি চেপে খানিক আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। (Katra Masjid)
বেলাশেষের রোদে কাটরা মসজিদের লালচে রঙা ল্যাটেরাইট শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত চমক। প্রথম দর্শনেই বিস্ময়! ‘ওয়েলকাম স্যার’, প্রজ্জ্বলের উদ্দীপ্ত গলার স্বরে আমাদের সম্বিৎ ভাঙে। (Katra Masjid)
আরও পড়ুন: চলচ্ছবির প্রতিবেশীরা
গুটি গুটি পায়ে বাগানের কেয়ারি পেরিয়ে, শান বাঁধানো রাস্তা ধরে এবার মসজিদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত, তিনশ বছর পেরনো এক অপূর্ব সৌধ আমাদের সামনে। ঠিক যেন মসজিদের গড়নে গড়া নয় তার গম্বুজ, মিনার, মিহারাব। এক ঝলকে মনে হয় যেন দাঁড়িয়ে আছি কোনও এক কেল্লা বা রাজপ্রাসাদের সামনে। ১৮৫৮ সালে, The Illustrated London News পত্রিকা নাকি ভুল করে কাটরা মসজিদকে রাজপ্রাসাদ বলে বর্ণনা করে এক ছবি ছেপেছিল। (Katra Masjid)

আসলে কাটরা মসজিদ শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মস্থান হিসেবে তৈরি হয়নি, এর সঙ্গে সংযুক্তিকরণ ঘটেছিল ইসলামী শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসার মতো গুরত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ের। আর এই চিন্তাভাবনার উৎসে রয়েছে যে মানুষটি তিনি হলেন বাংলার প্রথম নবাব করতলব খাঁ, ইতিহাসের পাতায় যাঁর প্রসিদ্ধি মুর্শিদকুলি নামে। সুতরাং তিনশ বছর প্রাচীন মসজিদের ইতিহাসে তাঁকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। (Katra Masjid)

ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যাক।
বেশ ভালই চলছিল মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের শাসন। সময়টা সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিক। আরাকানী মগদের ফিরিঙ্গি (পর্তুগিজ) জলদস্যুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট ছাড়া বাংলায় আর সেরকম বড় অশান্তি কিছু ছিল না। কিন্তু সেই শতাব্দী শেষ না হতেই উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলা। মসনদে বসেই ঔরংজেব জড়িয়ে পড়েছেন দাক্ষিণাত্যে মারাঠা প্রতিরোধে। উত্তরে নজরদারি খানিক কম। সেই সময় বাংলা ও উড়িষ্যার সুবেদার ইব্রাহিম খানের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিদ্রোহ করে বসলেন মেদিনীপুর অঞ্চলে চন্দ্রকোণার জমিদার শুভা সিং আর উড়িষ্যার এক আফগান নেতা রহিম খান। ইব্রাহিম খান খুব একটা গুরুত্ব দেননি এই বিদ্রোহের। ফৌজদারদের উপরে দায় দায়িত্ব দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত। কিন্তু ক্রমশ যখন তা বিপদসীমা ছাড়াল, মাঠে নামল তিন ভিনদেশি সওদাগর। ইংরেজ, ওলন্দাজ আর ফরাসিরা নিজ নিজ বাণিজ্য কুঠির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাহাঙ্গিরনগরে (ঢাকা) গিয়ে সুবাদারের অনুমতি চাইলে তিনি তাঁদের কেল্লা গড়ার অনুমতি দিলেন। কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম, চুঁচুড়ায় ফোর্ট গুস্তাভাস আর চন্দননগরে ফোর্ট অরলিন্স গড়ে উঠল সময়ের সঙ্গে। বিরক্ত সম্রাট বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করলেন তাঁর নাতি, বাহদুর শাহ এর পুত্র, আজিম-উস-শানকে। ইব্রাহিম পুত্র জবরদস্ত খানকে নির্দেশ দিলেন আজিম না পৌঁছনো অবধি অবস্থা সামাল দিতে। (Katra Masjid)
আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া সংলাপের ভাষা
অবশেষে ১৬৯৮-এর নভেম্বর নাগাদ বাংলায় পৌঁছে নতুন সুবেদার বিদ্রোহ দমন করতে সমর্থ হলেন বটে, কিন্তু বছর ঘুরতেই বোঝা গেল বাংলা সুবার অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ নাজুক। রাজস্ব আদায়ের হার ছিল খুব কম। কিন্তু তখন মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। বিচক্ষণ সম্রাটের মাথায় আসে সেই ছেলেটির কথা- দক্ষিণে হায়দ্রাবাদ সংলগ্ন বেরার প্রদেশে, দেওয়ানের অধীনে সে তখন চাকরিরত। ভারী বুদ্ধিমান, চটপটে, রাজস্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞানী সে। হাজি শফি ইস্পাহানি, আরেক বিশ্বস্ত দেওয়ান, দশ বছর বয়সী সূর্যনারায়ণ নামে ছেলেটিকে এক হত দরিদ্র হিন্দু পরিবার থেকে নিয়ে যান তাঁর সঙ্গে প্রায় দু’দশক আগে। কিন্তু ভারী মায়া পড়ে যায়। পুত্রস্নেহে মানুষ করতে শুরু করেন ছেলেটিকে। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে সে ছেলের নাম হয় মোহম্মদ হাদি। অল্প সময়ের মধ্যে মুঘল রাজপরিবারের নজর কাড়তে সক্ষম হয় সে। দাক্ষিণাত্য সফরে গিয়ে বেশ কয়েকবার দেখেছেন হাদিকে। তাঁর বিচক্ষণতা, সততা এবং পরিশ্রমী ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। রাজস্ব বিষয়ক জ্ঞানের জন্য নতুন উপাধি দিয়েছেন ‘করতলব খান’। সেজন্য বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য দেওয়ান হিসেবে করতলবকেই বেছে নিলেন সম্রাট ঔরংজেব। (Katra Masjid)

তাঁর অভিজ্ঞতার স্পর্শে বাংলার রাজস্ব আদায়ের হার রাতারাতি বেড়ে যায়। সম্রাট তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মুর্শিদকুলি খান’ উপাধি প্রদান করেন। নতুন উপাধির সঙ্গে আসে খ্যাতি, যশ এবং ক্ষমতা। ১৭০৩ সালে মুর্শিদকুলির এই উত্থান সুবা বাংলায় সূচনা করেছিল এক নতুন যুগের যা স্থায়িত্ব পেয়েছিল তাঁর জীবনের শেষ দিনটি অবধি। ১৭১৭ সালে শুরু হয় বাংলার স্বাধীন নওয়াবি শাসন আর তিনিই প্রথম নবাব। জাহাঙ্গীরনগর থেকে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়ে আসে ভাগীরথী তীরে মুর্শিদাবাদে। মুর্শিদাবাদকে ঢেলে সাজান, মুর্শিদকুলি। তৈরি হয় প্রাসাদ, মাদ্রাসা, দেওয়ানখানা, বিদেশি পর্যটক এবং বণিকদের জন্য সরাইখানা। ১৭২০ সালে স্থাপিত হয় টাঁকশাল যা দেশের অনান্য টাঁকশালের মাঝে হয়ে উঠেছিল কুলিন, কারণ এখানে সোনা, রূপা এবং তামা এই তিন ধরনের মুদ্রাই তৈরি হত। আর নগরীর পূর্বাংশে ১৭২৪ সালে কাজ শেষ হয় সুদর্শনীয় এই কাটরা মসজিদের। (Katra Masjid)
কিন্তু মসজিদের নাম কাটরা কেন? “কাটরা” শব্দটি এসেছে ফার্সি থেকে যার অর্থ “বাজার”। যেমন কলকাতার বড়বাজারে মনোহর দাশ কাটরা বা স্ট্র্যান্ড রোডের রাজা কাটরা। দোতলা সৌধের নীচের তলায় উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিক জুড়ে মুর্শিদকুলি একটি বাজার বসিয়েছিলেন। দু’দিক খোলা সারিবদ্ধ ঘরে স্থানীয়, দেশি, বিদেশি বণিকেরা সাজিয়ে নিয়ে বসত তাঁদের পণ্য পসরা।
কিন্তু মসজিদের নাম কাটরা কেন? “কাটরা” শব্দটি এসেছে ফার্সি থেকে যার অর্থ “বাজার”। যেমন কলকাতার বড়বাজারে মনোহর দাশ কাটরা বা স্ট্র্যান্ড রোডের রাজা কাটরা। দোতলা সৌধের নীচের তলায় উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিক জুড়ে মুর্শিদকুলি একটি বাজার বসিয়েছিলেন। দু’দিক খোলা সারিবদ্ধ ঘরে স্থানীয়, দেশি, বিদেশি বণিকেরা সাজিয়ে নিয়ে বসত তাঁদের পণ্য পসরা। চলত দরদস্তুর, ক্রয়, বিক্রয়, বিনিময়। ঘরের ভিতরে চরম আবহাওয়াতেও শীতলতার ছোঁয়া। প্রয়োজনে দ্রুত পচনশীল পণ্য সেখানে সংরক্ষণ করা যেত তাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। এর জন্য দায়ী এঁটেল বালি মাটি এবং ল্যাটেরাইট মাটির মিশ্রণে তৈরি ইটের প্রশস্ত দেওয়াল এবং মসজিদের নীচের অংশ জুড়ে সুড়ঙ্গের অন্তর্জাল যার ভিতর দিয়ে বাতাস ও জলের স্রোত বয়ে গিয়ে ঠান্ডা রাখত ঘরের অন্দর। ভরা বাজারের হট্টগোল পৌঁছতে পারত না, মসজিদের প্রার্থনা কক্ষে স্থাপত্যের বিশেষত্যের কারণে। ভিনদেশি বণিকদের আসা যাওয়া লেগেই থাকত। সুদূর পারস্য, আরব, মিশর, ইস্ফাহান, আফ্রিকা থেকে তারা আসত মুঘল শাসিত বাংলা তথা ভারতে তাদের আতর, পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, অলংকার এরকম বিবিধ পণ্য সামগ্রীর বেসাতি করতে। স্থানীয়রা পসরা সাজাত মুর্শিদাবাদি রেশম, মসলিন, সুগন্ধি চাল ইত্যাদির। (Katra Masjid)

এরা সবাই ছিল কাটরা মসজিদে, নবাবের সরকার পরিচালিত বাজারের বিক্রেতা। পুব মুখো মসজিদের চার কোণে ছিল চারটি উঁচু মিনার। এক একটি মিনারের উচ্চতা ৭০ মিটার, এবং ব্যাসরেখা প্রায় ২৫ মিটার। (Katra Masjid)
পুবদিকের দুটি মিনারই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত। বাকি রয়েছে কেবল পশ্চিমের দুটি মিনার। এই মিনারের উপরে উঠে কোনও ঘোষণা করলে তা শোনা যেত চত্বর জুড়ে। সাবধানী দৃষ্টি রাখা যেত লুটেরা অথবা আশেপাশের শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যের কোনও লোলুপ বন্য প্রাণীর গতিমুখের উপরে। যেহেতু বাজারের পাশেই মসজিদ, সেই থেকেই নাম হয়ে যায় কাটরা মসজিদ। (Katra Masjid)

পুবের প্রায় ১৪ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে দোতলার চাতালে উঠে এসেছি আমরা। সামনেই মসজিদের ভিতরে প্রবেশের পথ। উঁচু চাতাল ঘিরে রয়েছে একাধিক ছোট ছোট ঘর। চাতালের পরিসর পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ৫৫ মিটার, এবং উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ৬০ মিটার অর্থাৎ প্রায় বর্গাকার। এক একটি ঘরের মাপ আন্দাজ ২০ বর্গফুট। চারদিক খোলা এই ঘরের ছাদ গম্বুজাকৃতি। দেওয়ালের কুলুঙ্গিতে এবং গম্বুজের কেন্দ্রে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা। দরজার উচ্চতা কম তাই ঘরে প্রবেশ বা নির্গমনের সময় মাথা নিচু করতে হয়। হয়তো বা আল্লাতালহার সামনে এই মাথা হেঁট করার বাধ্যতা খানিক প্রতীকী। কারা থাকত এই ঘরে? ইংরেজ শিল্পী উইলিয়াম হজেস ১৭৮১ সালে মুর্শিদাবাদে এসে কাটরা মসজিদের একটি ছবি আঁকেন, যা পরবর্তীকালে তাঁর বই Select Views of India-তে প্রকাশিত হয়। (Katra Masjid)
হজেস তাঁর বর্ণনায় লেখেন যে সেই সময়ে কাটরা মসজিদ ইসলামী শিক্ষার একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল এবং প্রায় ৭০০ শিক্ষানবিশ চাতালের পাশে ঘরগুলির মধ্যে থাকতেন, এবং কোরান পাঠ করতেন।
হজেস তাঁর বর্ণনায় লেখেন যে সেই সময়ে কাটরা মসজিদ ইসলামী শিক্ষার একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল এবং প্রায় ৭০০ শিক্ষানবিশ চাতালের পাশে ঘরগুলির মধ্যে থাকতেন, এবং কোরান পাঠ করতেন। অনেকের মতে মসজিদে আশ্রয় পেতেন হয়তো কোনও মুসাফির বা পর্যটক। পশ্চিম জুড়ে মসজিদের জুল্লাহ বা প্রার্থনা ঘর, দিনের পড়ন্ত আলোয় তার ছায়া মাখা উপস্থিতি। (Katra Masjid)

পাঁচ গম্বুজের মধ্যে তিনটি ভেঙে পড়েছে ১৭৬৪ আর ১৮৬৫ সালের দুই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে। ভিতরে দাঁড়ালে দৃশ্যমান হয় নীল আকাশ আর উড়ন্ত পায়রার ঝাঁক। দুই প্রান্তের অটুট গম্বুজের চাঁদোয়ার নিচে সন্ধ্যা নামে তখন ক্রমশ। মসজিদের গায়ে সাদা রঙের আস্তরণ এখন জীর্ণ। কিন্তু একসময় ঝিনুক, শাঁখ প্রভৃতির গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি এই প্রাকৃতিক রঙের সজ্জা ছিল দেখার মতো। প্রদীপের আলো হোক বা জ্যোৎস্না- রশ্মির প্রতিফলনে তৈরি হত এক অদ্ভুত মায়াবি চিত্র। (Katra Masjid)
এভাবেই কাটরা মসজিদ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে এক অমূল্য সৌধ হিসেবে যার ইটের পাঁজরে লেখা রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলির দেশপ্রেম এবং প্রজাহিতৈষণা। তিনি পেয়েছিলেন তাঁর জন্নত, এই মুর্শিদাবাদের মাটিতে।
এভাবেই কাটরা মসজিদ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে এক অমূল্য সৌধ হিসেবে যার ইটের পাঁজরে লেখা রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলির দেশপ্রেম এবং প্রজাহিতৈষণা। তিনি পেয়েছিলেন তাঁর জন্নত, এই মুর্শিদাবাদের মাটিতে। বলেছিলেন “এই মাটির জন্যই হয়তো বা আমি তৈরি হয়েছিলাম, আমার শৈশব থেকে আজ অবধি বড় হওয়া এই মাটির জন্যই”। (Katra Masjid)

তাঁর জীবন যে অন্তিম লগ্নে, সেও বুঝেছিলেন। বাসনা ছিল এই মসজিদ চৌহদ্দির মধ্যেই মৃৎশয্যায় শায়িত থাকবে তাঁর নশ্বর দেহ আর তার উপর দিয়ে প্রতিদিন হেঁটে যাবে নামাজিরা। ১৭২৪ (হিজরি ১১৩৭) এ স্থপতি মুরাদ ফরাস খান শেষ করেছিলেন কাটরা মসজিদ নির্মাণের কাজ আর মুর্শিদকুলির জীবনাবসান ১৭২৭ সালে। পুব দিকের যে সিঁড়ি বেয়ে উঠেছিলাম তার নীচেই অতি সাধারণ, নিরাভরণ সমাধির মধ্যে শুয়ে আছেন বাঙলার প্রথম স্বাধীন নবাব।(Katra Masjid)

সুপরিসর মসজিদের উপরে নেমে আসে সন্ধ্যা। দূর থেকে ভেসে আসে মাগরিবের আজান- এক নয় একাধিক মসজিদ থেকে ধ্বনিত হয় সেই করুণ সুর। তিনশ বছরের নবীন সৌধের বাগানে দাঁড়িয়ে কানে বাজে বিংশ শতাব্দীর দুখু মিয়াঁর ইসলামি সঙ্গীতের পঙক্তি:
“পয়জা তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে, আমি ঝর্ণা হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে
সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিয়ে যেতাম কোহ-ই-তুরে, দিবানিশি করতাম তার কদম জিয়ারত”। (Katra Masjid)
ছবি সৌজন্য- লেখক
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।