Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

জামায় পকেটের উপকারিতা

অলোকপর্ণা

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫

Short Story
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Short Story)

জপমালা ছবি তোলার সময় একটা সহায় খোঁজে– কখনও ফুল গাছ, কখনও ধাতব রেলিং, কখনও পার্শ্ববর্তিনীর হাত বা সুহাসের কাঁধ– নিদেনপক্ষে বাপ্পা, টুম্পাকে কোলে কাঁখে চাপিয়েও সে বহু ছবি তুলেছে। একা একা দাঁড়িয়ে জপমালা ছবি তুলতে শেখেনি। তার বান্ধবীরাও তেমন, সমবেত ছবিতে তারা একে অপরের সহায় হয়ে ওঠে। তাদের পোশাকে কখনও কোনও পকেট ছিল না, এমন সব অসহায় মুহূর্তে যেখানে তারা তাদের হাত মুখ লোকাতে পারবে– কে না জানে ছবি তোলার সময়, বা সটান দাঁড়ানোর কালে সমস্ত লজ্জা এসে জড়ো হয় দুটো হাতে। বাপ্পা, টুম্পাদের জামায় এখন পকেট থাকে। তারা সেখানে ইচ্ছেমতো খোলামকুচি ভরে। (Short Story)

ছবি তোলার সময় সেই পকেটে দুহাত ভরে তারা এমন সটান দাঁড়ায় যেন একটু উসকে দিলেই আকাশ বেয়ে উপরে উঠতে থাকবে, আর যখন জামায় পকেট থাকে না তারা নিজেদের বুকে হাত রাখে, বা হাত ভাঁজ করে নিজেদের আগলায়, কখনও কখনও ছবিতে আঙুলের নানা মুদ্রা দেখিয়ে যুদ্ধ কিংবা শান্তি অথবা ভালবাসা নতুবা ঘৃণার বার্তা দেয়। (Short Story)

আরও পড়ুন: শূন্য

তারা মনে করে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সব পোশাকে পকেট বাধ্যতামূলক হবে, পকেটবিহীন সমস্ত পোশাক বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাপ্পা, টুম্পারা পৃথিবীর সব পকেট খোলামকুচিতে ভরে তুলবে। তাদের ভিতর ছবি তোলার সেই জড়তা কোনওদিন ছিল না। (Short Story)

শুধু ছবি তোলার সময়ই নয়, দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে, তার পরেও সহায় ছাড়া কখনও কোথাও একা একা জপমালা সটান দাঁড়াতে শেখেনি। ক্যামেরার লেন্স হোক বা মানুষ, কারও চোখে চোখ রাখেনি সে কোনওদিন। চোখে চোখ পড়লেই বাঘ শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে– এমনটাই তাকে জানানো হয়েছিল। জঙ্গলে জপমালা পা টিপে টিপে চলেছে। অথচ জঙ্গলে জপমালা কোনওদিন কোনও বাঘ দেখেনি। হয়তো জঙ্গলে বাঘ কখনও ছিলই না। অথবা হয়তো বাঘ সর্বদা আড়াল হতে জপমালাকে চোখে চোখে রেখেছে, কেবল ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেনি। কে যে কবে জপমালাকে বাঘের এই গল্প শুনিয়েছিল, তার আর মনে নেই। ঠিক যেমন সে জামায় পকেটের উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নয়, তেমনই জপমালা চিরকাল মাথা নিচু করে ঘাসে চোখ রেখে পথ চলেছে। শিকারদের তেমনই করার নিয়ম, এইটুকু তাকে বলা হয়েছিল। (Short Story)

Short Story
বাপ্পা, টুম্পাদের জামায় এখন পকেট থাকে। তারা সেখানে ইচ্ছেমতো খোলামকুচি ভরে

তবে সেও হিংস্র হয়েছে সময় বিশেষে। সেবার বিকাশ যখন তুতানের বিয়েতে বাপ্পাকে কোলে তুলেছিল, ছোঁ মেরে ছেলেকে তার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছিল জপমালা– ছোঁয়াচে রোগটা যাতে বিকাশের কোল থেকে বাপ্পা অবধি না যেতে পারে। সুহাস অনেকবার তাকে বোঝাতে চেয়েছে ছুঁলে কিছু হয় না, তবু জপমালা বাড়ি ফিরে গঙ্গাজল ছিটিয়েছে বাপ্পার গায়ে মাথায়। মনে পড়ে, সুহাসের অফিসের নন্দা সেন অফিসে সুহাসকে না পেলে একেকদিন বাড়িতে ফোন করত এটা ওটা প্রয়োজনে, জপমালা সুহাসকে কোনওদিন সেই সব ফোনের কথা জানায়নি। সুহাসও কখনও কৈফিয়ত চায়নি তার কাছে। কারণ সুহাস জানে একজন বাঘের হিংস্রতার চেয়ে একজন হরিণের হিংস্রতা ঢের বেশি আতঙ্কজনক। কারণ তা অপ্রত্যাশিত। কারণ তা অভূতপূর্ব। (Short Story)

“সেলাই পড়ার সময় জপমালা যে কান্না খানিকটা কেঁদেছিল, সেই কান্না শরীর হতে উদ্ভূত হয় না, মরম থেকে জন্মে মরমেই মরে যায়।”

এইভাবে একদিন নন্দা সেনের ফোন আসা বন্ধ হয়েছে। নন্দা সেনদের ফোন আসা একদিন বন্ধ হয়ে যায়, কেবল ধৈর্যের প্রয়োজন, অপেক্ষার প্রয়োজন– একথা জপমালা কীভাবে জেনেছিল কেউ জানে না। শুধু একদিন অন্য কোনও তুচ্ছ কথায় উত্তেজিত হয়ে সুহাস তেড়ে গিয়েছিল তার দিকে, ১৯৯৬ সালের শ্রাবণ মাসের চতুর্থ দিনে, তারপর নিজেই একদম নিভে গিয়েছিল। সেদিন সারা দুপুর জপমালা একরোখা কাঠঠোকরার মতো দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকে ঠুকে কপাল রক্তাক্ত করেছে। সেই রক্তভরা কপাল সেলাই করাতে সুহাস যখন তাকে দেব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বপন রিক্সাওলাকে ডেকে এনেছিল, জপমালা স্বপন রিক্সাওলার দিকে তাকিয়ে তখন হেসেছিল, তাকে দেখে মনে হয়েছিল সে বীতশোক, বীতক্লেশ। (Short Story)

Short Story
দুজন বাচ্চা খেলছে

সেলাই পড়ার সময় জপমালা যে কান্না খানিকটা কেঁদেছিল, সেই কান্না শরীর হতে উদ্ভূত হয় না, মরম থেকে জন্মে মরমেই মরে যায়। ওতে কোনও শব্দ থাকে না। এমনকি তাকে দাঁতে দাঁত চাপতেও হয়নি। কীভাবে যে তার সহ্য ক্ষমতা এমন তুখোড় হয়ে উঠেছিল, জপমালা তা টের পায়নি আগে কখনও। বাড়ি ফিরে সে বাপ্পা টুম্পাকে শিখিয়েছিল বড়রা “কীভাবে মায়ের মাথা ফেটেছে?” জানতে চাইলে কী বলতে হবে। (Short Story)

“জামায় পকেটের উপকারিতা না জেনেই জপমালারা একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে, এর থেকে বেশি আফসোসের আর কিছু হয় না।”

এমনকি প্রতিমাও বাঁশের উপর ভর করে দাঁড়ায়– এ সত্য জপমালা প্রথমে জেনেছে তার মেয়েবেলায় ও পরে ঠাকুর বরণ করার সময়। প্রথমে বাঁশ, তারপর সেই বাঁশের কাঠামোর উপর জড়ো হয় খড়, মাটি, মাটির পর মাটি, আর মৃৎশিল্পীর আদর, আর মৃৎশিল্পীর যত্ন। (Short Story)

বরণ করার সময় ঠাকুরের পায়ের পাতা খুঁজতে খুঁজতে প্রতিমার পিছনে গিয়ে পড়তে পারলেই এসব রহস্য উজাড় হয়। ওখানে কোনও রাখঢাক নেই। কেউ জানতেও চায় না কেনো নেই। বরং রাখঢাক থাকলেই বুঝি তা অশ্লীল হয়ে পড়ত– যেখানে আজীবন চারপাশের সবকিছু সম্মুখে জাজ্জ্বল্যমান, পশ্চাতে কঙ্কালসার হয়ে আছে। প্রতিমার পিছনে এসে দাঁড়ালে তাই সম্ভ্রম বদলে যায় করুণায়। নিজের প্রতি, দেবতার প্রতি। জপমালা আর কখনও দেওয়ালে মাথা ঠুকতে পারে না। সুহাসও চিরকাল নিভেই থাকে। শুধু বালিশের নিচে টর্চটা রেখে শোয়– অন্ধকারে শিকার নড়ে চড়ে উঠলে যাতে হঠকারী আলোর মুখে ফেলে তাকে চমকে দিতে পারে। এটা জানে বলেই হয়তো ঘুমের ভিতর স্থবির হয়ে থাকে জপমালা আর সুহাস উসখুস করে সারারাত। (Short Story)

Short Story
তারা মনে করে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সব পোশাকে পকেট বাধ্যতামূলক হবে

বালিশের নিচে টর্চ রেখে শুলে তার ঘুম অগভীর হয়। অথচ সঙ্গে টর্চ না রাখলে ঘুম তার একেবারেই আসবে না একথা সুহাস জানে। সুহাসদের কখনও সমর্পন শেখানো হয়নি, তারা কেবল সতর্কতা শিখে উঠেছে। সুহাস আড়াল হতে সর্বদা জপমালাকে চোখে চোখে রেখেছে, ছবি তোলার সময় দাঁড়িয়েছে গা ঘেঁষে। (Short Story)

বাপ্পা টুম্পারা হাসে জপমালাদের ছবি দেখে। কোন ছবিতে কী এবং কাকে ধরে সে দাঁড়িয়েছে সেসব নজর করে তারা আনন্দ পায়। তাদের এইসব মশকরায় জপমালার অভিমান হয় না। অভিমান করার যে কথা ছিল সে কথাও তার মনে জাগেনি। প্রতিটা ছবিতে সে অপ্রস্তুত দাঁড়িয়ে পড়েছে, যেন রাতের বেলা হঠকারী আলো ফেলে চমকে দেওয়া হয়েছে তাকে। (Short Story)

আরও পড়ুন: অর্থ কোনও খুঁজে নাহি পাই রে

ক্যামেরার লেন্সের সামনে সে জড়সড় হয়ে, দুটো হাত সম্পর্কে অত্যধিক সচেতন হয়ে, ছবিতে ছবিতে সে ছুঁয়ে থাকার চেষ্টা করেছে খড়কুটো। না হলে যেন সে তলিয়ে যাবে, না হলে যেন সে টিকে থাকতে পারবে না, তাই জপমালা ছবি তোলার সময় জড়িয়ে ধরেছে তার সুহাস বা তার সন্তানদের, গাছগাছালি, দেওয়াল, রেলিং, আত্মীয় আর তার বান্ধবীদের। তার বান্ধবীরাও ছবি তোলার সময় আঁকড়ে ধরেছে তাকে। জামায় পকেটের উপকারিতা না জেনেই জপমালারা একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে, এর থেকে বেশি আফসোসের আর কিছু হয় না। (Short Story)

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

Author Alokparna

অলোকপর্ণার জন্ম ১৯৯০ সালে, কলকাতায়। উত্তর ২৪ পরগণার নববারাকপুরে স্কুলজীবন ও বেড়ে ওঠা। কলকাতা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে কখনো ব্যাঙ্গালোর কখনো কলকাতায় বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। লেখালেখির সূত্রপাত কৈশোরে হলেও, ২০১০ থেকে তা শখ নয়,- আসক্তিতে পরিণত হয়েছে।

এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত বই- ঝিঁঝিরা (২০১৫), হাওয়াশহরের উপকথা (২০১৮), দাস্তানগো (২০১৯), রণ বিশ্বাস কারো নাম নয় (২০১৯), যাহা বলিব সত্য বলিব (২০২২), সবুজ অন্ধ করেছে (২০২৩)।

Picture of অলোকপর্ণা

অলোকপর্ণা

অলোকপর্ণার জন্ম ১৯৯০ সালে, কলকাতায়। উত্তর ২৪ পরগণার নববারাকপুরে স্কুলজীবন ও বেড়ে ওঠা। কলকাতা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে কখনো ব্যাঙ্গালোর কখনো কলকাতায় বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। লেখালেখির সূত্রপাত কৈশোরে হলেও, ২০১০ থেকে তা শখ নয়,- আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত বই- ঝিঁঝিরা (২০১৫), হাওয়াশহরের উপকথা (২০১৮), দাস্তানগো (২০১৯), রণ বিশ্বাস কারো নাম নয় (২০১৯), যাহা বলিব সত্য বলিব (২০২২), সবুজ অন্ধ করেছে (২০২৩)।
Picture of অলোকপর্ণা

অলোকপর্ণা

অলোকপর্ণার জন্ম ১৯৯০ সালে, কলকাতায়। উত্তর ২৪ পরগণার নববারাকপুরে স্কুলজীবন ও বেড়ে ওঠা। কলকাতা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে কখনো ব্যাঙ্গালোর কখনো কলকাতায় বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। লেখালেখির সূত্রপাত কৈশোরে হলেও, ২০১০ থেকে তা শখ নয়,- আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত বই- ঝিঁঝিরা (২০১৫), হাওয়াশহরের উপকথা (২০১৮), দাস্তানগো (২০১৯), রণ বিশ্বাস কারো নাম নয় (২০১৯), যাহা বলিব সত্য বলিব (২০২২), সবুজ অন্ধ করেছে (২০২৩)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

বিতস্তা ঘোষাল
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

প্রদীপ্ত চক্রবর্তী

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com