banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

‘রুদ্ধদ্বারে একা ভাবি তাঁদের যদি ফেরানো যায়’… আলাপে শ্রীকানাইলাল

নভেম্বর ১৯, ২০২০

Sri Kanailal
নিজের সংগ্রহশালায় শ্রীকানাইলাল সুরভূমি। ছবি - শ্রীকানাইলালের সংগ্রহ।
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

গানপাগল মানুষটির সঙ্গে যোগাযোগ ফেসবুকে। সোনারপুরের বাসিন্দা শ্রীকানাইলাল সুরভূমি তাঁর ব্যক্তিগত বাংলা গানের সংগ্রহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন ইউটিউব, ফেসবুক ব্লগের মাধ্যমে। অসংখ্য দুর্লভ রেকর্ডের সংগ্রহ দেখতে দেখতে, বলা ভাল শুনতে শুনতে, কৌতূহল বাড়ল। যোগাযোগও। এই অসামান্য সংগ্রহ আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। সরাসরি অনুরোধ করতে সাগ্রহেই রাজি হয়ে গেলেন সাক্ষাৎকার দিতে। 

পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কানাইলাল, নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনিগান শোনান গানওলা জানান, “প্রায় সমস্ত শিল্পীর প্রথম রেকর্ড আমার সংগ্রহে আছে। যেমন, ১৯০২-০ সালের লালচাঁদ বড়ালের প্রথম বাংলা গানের রেকর্ড। 7″ one sided। কানন দেবীর প্রথম রেকর্ড, পঙ্কজ মল্লিকের প্রথম রেকর্ড…” 

বেশ কিছু দুর্লভ ছবি তুলে দিলেন বাংলালাইভের পাঠকদের জন্য। বললেন, “এই ছবিগুলো প্রথম মনে হয় আপনাকে দিলাম। ছবিগুলোও দুর্লভ, অনেকে চোখেই দেখেননি।আরও বললেন, “আপনার সৌভাগ্য আপনি মনে হয় প্রথম, যিনি পঙ্কজ মল্লিকের প্রথম রেকর্ডের গান শুনছেন।কথায় কথায় জানলাম শুধু রেকর্ড, গ্রামোফোন নয়, গানওলার সংগ্রহে আছে তিন হাজার গ্রামোফোন পিন্। আর আছে এনামেল HMV লোগো, যা ভারতবর্ষে একেবারে দুর্লভআশি বছরের পুরনো ডগ্ অ্যন্ড ট্রাম্পেট।

তো গেল কেবল মোড়ক। ভেতরের ছন্দগানগল্পের জাদুপ্যাঁটরা খুলতে খুলতে আড্ডা দিলাম মন খুলে।



প্রশ্ন:
আপনাকে যদি পাঁচটা শব্দে নিজের পরিচয় দিতে বলা হয়, কী বলবেন

উত্তর: এক উদ্ভট উদ্ভ্রান্ত গ্রামোফোন রেকর্ডধারী। 

প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি পরিচিতি ‘শ্রীকানাইলাল সুরভূমিবলে। আপনার আসল নাম কি এটাই?

উত্তর: (হাহা হাসি)… নাম তোশ্রীকানাইলাল।’ ‘সুরভূমিআমার সঙ্গীতভুবনের নাম। আমি সেখানে বাস করি। স্বর্গ বলতে পারেন! আসলেসুরভূমি বেশির ভাগ শিল্পীরা এখন স্বর্গে থাকেন। রুদ্ধদ্বারে একাকী ভাবি, তাঁদের যদি ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্ত সেই ফেরার পথ বন্ধ। সে পথ পেরিয়ে যাবার ক্ষমতাও আমার নেই। তাই নিজভূমিসুরভূমিতে তাঁদের আরাধনা করি। তাঁদেরই গানে তাঁদেরই নামে। 

প্রশ্ন: কবে থেকে এই সংগ্রাহক হওয়ার ইচ্ছা? শুরুর সময়টা কী রকম ছিল?

উত্তর: সংগ্রাহক হব, এটা তো কোনও  দিন ভাবিনি। ঈশ্বর আমাকে মানুষের আকার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই পরিচয় নিয়ে মানুষ হতে চেয়েছিলাম। কী জানি, সেই ঈশ্বরই হয়তো আমার জন্মলগ্নে রক্তে মিশিয়ে দিয়েছিলেন সঙ্গীতপ্রেমের অনন্ত অমৃতধারা যা আজও বয়ে চলেছে শিরায় শিরায়। গায়ক নই, শিল্পী নই তবু গান শুনিয়ে যাই, এটা ভেবে নিজে নিজে অবাক হই। 

[the_ad id=”266918″]

খুব শিশুকালে ঘুরতে ফিরতে নিজের খেয়ালে গান গাইতুম। সে সব রেডিও আর পূজামণ্ডপের মাইকে শুনে শুনে এছাড়া পাড়ায় পাড়ায় পালাগান আর যাত্রাগানের সুর মনের আকাশে ভেসে বেড়াত। সেসব গান গুনগুন করে নয়, জোরে জোরে গাইতুম প্রাণ খুলে। মা, দিদিরা বলতকানু কী সুন্দর গায়, ওকে গান শেখালে ভাল।বাবা গানের ক্লাসে পর্যন্ত ভর্তি করিয়েছিলেন। এজন্য বাবা একটা পুরনো খাড়াপাতা হারমোনিয়ামও কিনে দিয়েছিলেন, আমি আর দিদি গান শিখব বলে। এখনও মনে আছে। মনে হয় লালবাজারেরমণ্ডল এণ্ড কোম্পানি ছিল সেটা। নিজে মাথায় করে এনেছিলুম। তখন আমি দশ- বারো বছরের। দিদি শিখত, সঙ্গে আমিও। 

কিন্তু বাবা আসলে চেয়েছিলেন ছেলে বড় হয়ে বিদ্বান হোক, পড়াশোনা করুক। আমাদের ক’ভাইবোন আমাদের পাড়ার সব স্কুলে সবাই প্রথম হতুম। তাই গান শেখা আর হল না।পড়াশোনাটাই গুরুত্ব পেত সবসময়। তবু শিরায় শিরায় বয়ে যেত আকুল করা গানের সুর। তাকে মনে হয় রোধ করতে পারেনি কেউ পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে আর পড়তে পড়তে রেডিওতে গান শুনতুম। ক্লাস সেভেনএইটে পড়ি স্কুল থেকে ফিরে খোলা মাঠে চলে যেতুম রেডিও নিয়ে। ফাঁকা মাঠে বসে গোধূলিবেলায় গান শুনতুম বন্ধুরা মিলে।বিবিধ ভারতীমনের মতো গানঅনুষ্ঠান থেকে ভেসে আসত লতা মঙ্গেশকরের গানের সুরআজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব’, হীরালাল সরখেলেরবৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর আধঘণ্টার অনুষ্ঠানে মেরেকেটে হয়তো সাতটা গান। আবার অপেক্ষা পরদিন সকালবেলারবর্ণালীঅনুষ্ঠানের জন্য। না হলে মাঝরাতে অস্পষ্ট সিগন্যালেরেডিও পেকিংথেকে ভেসে আসা দুএকটা বাংলা গান ঘুম ফেলে ঘুমঘুম চোখে শোনা। 

Record Library
শ্রীকানাইলালের রেকর্ডের সংগ্রহ। তাঁর সুবিশাল রেকর্ড লাইব্রেরি। ছবি – সংগ্রহাকের সৌজন্যে

একসময় রেডিওর গান যেন পাগল করে দিত। সে সব শুনে মন বিভোর হয়ে থাকত সারাক্ষণ। গানের কলিগুলো টুকে টুকে রাখতাম লেখাপড়ার খাতার পাতায় পাতায়। হলুদ পোস্টকার্ডে গান লিখে অনুরোধ পাঠাতাম একটা গান শোনার জন্য আকাশবাণী ভবনে। অনুরোধের আসরে। অনুরোধের আসরে যখন বেজে উঠত সেই অনুরোধের গান, মনটা আনন্দে বিহ্বল হত। সে আনন্দ এখন আর কই! রেডিও ছিল আসল অনুপ্রেরণা। গানের প্রতি ভালবাসা এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি করে জন্মেছিল।

[the_ad id=”266919″]

 তবে বাড়িতে যে আগে গানের চর্চা একেবারে ছিল না, এমন নয়। শুনেছি এককালে আমার জেঠু বাড়িতে গানের আসর বসিয়ে অনেক অর্থব্যয় করেছেন। সংসারে মন ছিল না বেশি। প্রায়ই বাড়িতে গানের আসর বসাতেন। পাড়ার যারা একটু আধটু গান জানত তাদের নিয়েই বসত সেই আসর। আমি ছোটবেলায় দেখেছি একটু আধটু সেসব গানবাজনা। মনে পড়ে। আর গ্রামোফোন রেকর্ডের সঙ্গে পরিচয়টা ছিল সেই ছোট থেকেই। বাড়িতে রেকর্ড প্লেয়ার ছিল আর জ্যেঠতুতো দাদাদের মাইকের ব্যবসা। তাই, রেকর্ডে পিন বসিয়ে গান শোনার অভ্যেসটা ছিলই তখন থেকে। যখন আরও অনেক বড়, গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় এলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে, মন যেন আরও চঞ্চল হয়ে উঠল এক নতুন পাওয়ার আনন্দে। বলা যায় নতুন নতুন গানের ছন্দে আর আনন্দে মন মাতাল হল। এখানে চারপাশে কত শত গানের সম্ভার থরে থরে সাজানো দোকানে দোকানে! দেখে মন নেচে ওঠার মতো। তখন ক্যাসেটের যুগ। মনে হল রেডিওতে তো কত গান বাজে! কিন্তু সব গান তো ক্যাসেটে নেই ! নির্মলা মিশ্ররএমন একটি ঝিনুক খঁজে পেলাম নাআছে তো উলটোপিঠেরএই মনের আগুন দ্বিগুণ জ্বলেটা নেই!এসব কি রেকর্ড কোম্পানির ধান্দাবাজি, কারসাজি! ক্যাসেটে দেয় না কেন ওরা!

Kanailal Record
সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম রেকর্ড। ছবি – সংগ্রাহকের সৌজন্যে

 সেই শুরু। ভাবলাম রেকর্ড কিনলে তো উলটোপিঠের গানটা পাওয়া যাবে। যখন খুশি শোনাও যাবে। শুরু হল রেকর্ড কেনার যাত্রা।ফ্রি অ্যাডসদেখে দুশো টাকায় একটাএইচ.এম.ভি. ফিয়েস্তাকিনলাম সিঁথির মোড়ের এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের বাড়ি থেকে। ভালবেসে পনেরো কুড়িটা রেকর্ডও এমনিতেই দিয়ে দিলেন ভদ্রলোক। তার মধ্যে ছিলশাপমোচন’, ‘চিত্রাঙ্গদাগীতিনাট্য, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধায়্যায়, সাগর সেন, সুচিত্রা মিত্রর রেকর্ড। সবই রবীন্দ্রসঙ্গীত। তখন বেকার জীবন। মেসের খাওয়ার খরচ বাঁচিয়ে, টিউশনের পয়সায় রেকর্ড কিনতাম। সেসব এখন ইতিহাস। 

একটা একটা করে কিনতে কিনতে আজ বাড়িতে ঠাঁই নেই রেকর্ড রাখার। এজন্য কোথায় কোথায় ঘুরেছি ভাবলে নিজেই বিস্মিত হই। মেলায় মেলায়, লোকের বাড়িতে বাড়িতে, কলকাতার অলিতে গলিতে ফেরিওলার মতো ঘুরেছি।গানের ফেরিওলাকথাটার অর্থ এখন বুঝি। বউ রেগে গিয়ে মাঝে মাঝে এই বলে অপমানও করে আমায়। বলে আমি নাকিফেরিওলাএকটা। আমি ভাবি সত্যি মনে হয় সেটাই বনে গেছি নিজের অজান্তে। 

[the_ad id=”270084″]

প্রশ্ন: আপনার এই নেশার পেছনে পরিবারের ভূমিকা কতটা?

উত্তর: আমার যা কিছু সংগ্রহ সব আমার নিজের একটা একটা করে জমিয়ে তোলা প্রায় কুড়ি বছর ধরে। কোনও কিছুই উত্তরাধিকার সূত্রে নয় বা কারও সংগ্রহজাত রেকর্ড এনেজড়ো করেরাতারাতি সংগ্রাহক হয়ে যাওয়া নয়। প্রত্যেকটা রেকর্ড আমার ভালবাসার ছোঁয়ায় ধন্য। আমি সৌভাগ্যবান,  আমার এই ভালবাসার দাম আমার পরিবার সবসময় দিয়েছে। এর জন্য আমি নিজে আর্থিকভাবে হয়তো দুর্বল হয়েছি, পরিবারকে দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ান থেকে বঞ্চিত করেছি, আমোদপ্রমোদ কমিয়েছি, তবু তাঁরা কোনও দিন নিরুৎসাহ করেননি। তবে এটা খাঁটি সত্যি যে, এমন উৎকট ভালবাসার নেশায় চারশো টাকার রেকর্ড কিনে এনেএকশো টাকায় কিনেছিবলে বউয়ে কাছে মিথ্যেবাদী সেজেছি হাজার বার সেজন্য ঈশ্বর আমায় যদি কোনও সাজা দেন আমি তা মাথা পেতে নিতে রাজি। 

Kanailal Collection
শ্রীকানাইলালের সংগ্রহশালা। ছবি – সংগ্রাহকের নিজস্ব।

প্রশ্ন: আজকের দিনে পেশা নেশা এত সুন্দর করে আলাদা রাখার উপায় কী

উত্তর: এটা খুব কঠিন। আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচদফতরের ইঞ্জিনিয়ার। মাঠে ঘাটে নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়াই। বাঁধ ভাঙলে মেরামত করি। চাষের মাঠে জল সেচ করি। কখন কোথায় থাকি তারও ঠিক নেই। তাই আমার এমন পেশার সঙ্গে সত্যি সত্যি গান আর গ্রামোফোন রেকর্ড সমান্তরালভাবে চলার কথা না। তবু কীভাবে করছি সেই ভেবে আমার শুভাকাঙ্খীরা অবাক হয়। অফিস করি কোনও ফাঁকি না দিয়ে, আবার গান শুনি, রেকর্ড সংগ্রহ করি, আবার সেই সব রেকর্ড বাজিয়ে শোনাই আপনাদের। এক আজব ব্যাপার। আমার মনে হয় যেকোনও জিনিসের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থাকলে সবই সম্ভব। সেই অসম্ভবের পিছনে চলাই তো জীবনের আনন্দ! কী বলুন?

প্রশ্ন: অন্যান্য সংগ্রাহকদের সংগ্রহের থেকে কতটা স্বতন্ত্র আপনার কাজ?

উত্তর: এটা খুব ভাল প্রশ্ন করলেন। আমার সংগ্রহ একদমই আলাদা। কেউ কেউ সংগ্রহ করেন শুধুমাত্র সংগ্রহের জন্য। কেউ কেউ হয়তো রেকর্ডে গান শোনার থেকে রেকর্ডটাকে দেখতেই বেশি ভালবাসেন। কেউ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন রেকর্ড মাটির নীচে পুঁতে রেখে দিয়ে (বাংলাদেশে এমন ঘটনা সত্যি সত্যি ঘটেছে, গল্প নয়!) কেউ সংগ্রহ করেন হয়তো একটা পরিকল্পনা মাফিক কোনও একজন নির্দিষ্ট শিল্পী, সুরকার বা গীতিকারের রেকর্ড নিয়ে। কেউ বা সংগ্রহ করেন আধুনিক, ছায়াছবি বা রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতির রেকর্ড ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমি কিন্তু এমন সবনির্দিষ্টজায়গায় আবদ্ধ থাকতে পারিনি কোনও  দিন। হয়তো যেহেতু গানের প্রতি ভালবাসা থেকে আমার এই সংগ্রহ, সেই কারণে আমার মনে হয়েছে সব ভাল গানের রেকর্ড সংগ্রহযোগ্য। তাই যখন যা কিছু ভাল পেয়েছি তাই সংগ্রহ করে গেছি। সেই ১৯০২ সালের আদি রেকর্ড থেকে বলতে পারেন আশির দশকের মাইক্রোগ্রুভ লেভেল পর্যন্ত বেশির ভাগ শিল্পী, সুরকা্র, গীতিকার, সবারই অমূল্য রেকর্ড সাধ্যমতো সংগ্রহ করেছি। এমনকী সমস্ত রকমের গানও! সে আধুনিক, ছায়াছাবি, নজরুলগীতি, লোকসঙ্গীত, কীর্তন বা বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার গান, সবই। 

[the_ad id=”270085″]

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান শুনলে যেমন হৃদয় শান্তি পায় তেমনি উত্তরা দেবী, রাধারাণী দেবী, মণি চক্রবর্তীর কীর্তন শুনে মন আরও পবিত্র হয়। সেখানে অন্যরকম প্রশান্তি। আমার সংগ্রহ তাই একটা আকাশের মতো। নিজে তার সীমানা খুঁজে পাই না, আর নিজের মনেরও কোনও ঠিকানা নেই প্রাণের শিল্পীরাও ভালবাসার টানে আমার কাছে ধরা দিতে এসেছেন বারবার স্বপ্নের মতো করে, যা দেখলে যে কোনও সংগ্রাহক ঈর্ষান্বিত হতে পারেন। অন্যান্য রেকর্ডের পাশাপাশি বেশির ভাগ শিল্পীর দুষ্প্রাপ্যপ্রথম রেকর্ডগুলোও আজ আমার সংগ্রহে। গওহরজান, প্রতিভা বসু, কানন দেবী, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, গায়ত্রী বসু, ইলা বসুর প্রথম রেকর্ড থেকে শুরু করে, রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, লালচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, পান্নালাল ভট্টাচার্য, অখিলবন্ধু ঘোষ, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকের প্রথম রেকর্ডগুলো পেয়েছি স্বপ্নে বিভোর হয়ে। তাঁরা এসে ধরা দিয়েছেন আমার কাছে। আমাকে ভালবেসে। এছাড়া সংগ্রহ করেছি প্রচুর অনামী শিল্পীর রেকর্ড, যাঁরা বঞ্চিত অবহেলিতের মতো আছেন এই বাংলার সঙ্গীতভুবনে। তবে সবথেকে বড় কথা সবই শুধুমাত্র সংগ্রহ করার জন্য নয়। সবাইকে শোনানোর জন্য।

Gramophone
পনেরো-ষোলোটার মতো গ্রামোফোন যন্ত্র আছে ওঁর সংগ্রহে। ছবি – সংগ্রাহকের সৌজন্যে।

 আর কেন জানি না গ্রামোফোন রেকর্ডের পাশাপাশি এইচ.এম.ভি. গ্রামোফোনের প্রতি দুর্বলতা ছিল প্রথম থেকেই। পনেরো- ষোলোটার মতো গ্রামোফোন আছে সংগ্রহে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের এই ভারতবর্ষে এমন ফুলের মতো সুন্দর জিনিসটার প্রতি অনেকের ভালবাসা থাকলেও তা নিয়ে কোনও চর্চা নেই। গ্রামোফোন নিয়ে এখানে আছে শুধুই ভুলভাল ধারণা , প্রতারণা, লোক ঠকানো ব্যবসা। বিদেশে (মূলত আমেরিকা, লন্ডন এই সমস্ত জায়গায়) গ্রামোফোন নিয়ে ভাল মতো স্টাডি আছে। সত্যি বলতে কি, সেখান থেকে আমি অনেক সততা আর সাহায্য পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে চেষ্টা করি গ্রামোফোন সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সঠিক ধারণা দিতে, যাতে কেউ কোনও নকল গ্রামোফোনকে আসল ভেবে ভুল না করে। না ঠকে। নিয়ে ফেসবুকে মাঝেমধ্যে লিখি। সবকিছু যাতে মানুষের ভাল হয় সেই চিন্তায়। ভগবান মানুষ করে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তেমন একজন মানুষ হতে পারি যেন, যার একটা ভাল মন থাকবে, যার মানুষের প্রতি ভালবাসা থাকবে। মানুষের কাজে আসবে। তবেই তো জীবনের সার্থকতা।  

Kanailal Record
কৃষ্ণচন্দ্র দে-র প্রথম রেকর্ড। হিজ় মাস্টার্স ভয়েস-এর পুরনো লোগো-সহ। ছবি – শ্রীকানাইলালের সৌজন্যে।

প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি মানুষের কাছে পৌঁছে দেন আপনারসামান্য সব দুর্লভ গান। আর কোনওভাবে কি এই সংগ্রহ মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়

উত্তর: দেওয়া যায়। আমার নিজের একার পক্ষে তা কঠিন। যদি কেউ এগিয়ে আসে অন্যভাবে ছড়িয়ে দিতে, আমি সবসময় হাত বাড়িয়েই আছি। যদি কোনও কোনও প্রেক্ষাগৃহে বা নির্দিষ্ট জায়গায় মাঝে মধ্যে এইসব গানের ‘Live Listening Session’ করা যায় তাহলে বর্তমান প্রজন্ম আমাদের হারিয়ে যাওয়া বাংলা গানের অমূল্য সম্পদকে চিনতে পারবে আর ভালবাসতে পারবে নতুন করে। আমার কষ্ট হয় এখনকার প্রজন্ম প্রায় পুরোপুরি বঞ্চিত এই অমৃতের স্বাদ থেকে। দেখি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে-কেও ২৫ বছরের কলেজ পড়ুয়ারা চেনে না।হেমন্ত কথা বললে ভাবে ‘ autumn’ , ‘সন্ধ্যাবললে ভাবে ‘evening’ (হাসি)। 

পঙ্কজকুমার মল্লিকের প্রথম গানের রেকর্ড বেরিয়েছিল ভিয়েলোফোন থেকে। সেটাও রয়েছে কানাইবাবুর সংগ্রহে। ছবি – সংগ্রাহকের সৌজন্যে।

প্রশ্ন: দুর্লভ সংগ্রহ তো নিশ্চয়ই অনেকই। তার মধ্যে একটা বেছে নিতে হলে কোনটা বাছবেন? কেন? যদি সকলকে তার কয়েক লাইন শোনান।

উত্তর: দুর্লভ বাছাটাও কঠিন। কাকে ছেড়ে কাকে বলি। তবে একটা রেকর্ড আপনাকে শোনাতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার একটা কারণও আছে। কিংবদন্তী শিল্পী পঙ্কজকুমার মল্লিক তাঁরআমার যুগ আমার গানবইতে লিখে গেছেন তাঁর জীবনের প্রথম গান বেরিয়েছিল ভিয়েলোফোননামে এক রেকর্ড কোম্পানি থেকে। বাণীকুমারের কথায় একপিঠে ছিলনেমেছে আজ নবীন বাদল উল্টোপিঠের গানটা তাঁর সেই সময় মনে ছিল না। সেটা ১৯৩১ সালের রেকর্ড। আমি বছরের পর বছর দেখেছি এই কিংবদন্তী শিল্পীকে নিয়ে বহু লেখক গবেষণা করছেন, লিখছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আর বইতে। উলটোপিঠের গানের হদিস আজও কেউ বলেন না বা লেখেন না ! তাহলে আমাদের এই সংগ্রহের কী দাম রইল? এখন সেই উলটোপিঠের গান আপনাদের জন্য। 

প্রশ্ন: সংগ্রহ করবার ক্ষেত্রে বাধা কখনও কোনও দিন কি এসেছে ? কীভাবে?

উত্তর: বাধা মানে আর্থিক বাধা এসেছে। সত্যি বলতে কি, রেকর্ড আর গ্রামোফোনই প্রাধান্য পেয়েছে সব সময়। জীবনে অন্যান্য অনেক কিছু কমেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় ভুল করে যাচ্ছি। কিন্তু থামতে পারিনি। মনে হয় থামা উচিত। এসবের মূল্য কেন জানি না দিন দিন বেশি বেশি কমেছে, বাড়েনি খুব একটা। তাই থামা উচিত বললাম। জানি না পারব কিনা।

প্রশ্ন: নতুন শিল্পীদের গান সংগ্রহ করার পরিকল্পনা নেই ?

উত্তর: না তেমন কোনও ইচ্ছে নেই। ভালবাসা তো জোর করে তৈরি করা যায় না। যারা পরিকল্পনা করে সংগ্রহ করেন তারা হয়তো পারবেন। আমার সেই ভালবাসা তৈরি হয়নি। আর হবেও না মনে হয়। 

[the_ad id=”270085″]

প্রশ্ন: আপনার সংগ্রহ থেকে গবেষণারত ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে উপকৃত হয় বা হতে পারে

উত্তর: কিছুটা উপকৃত হচ্ছে। অনেকেই ফোন করে যোগাযোগ করেন তাঁদের পড়াশোনার জন্য। সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করি। আর শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, কিছুদিন আগে বাংলাদেশেরনজরুল ইন্সটিটিউটথেকে যোগাযোগ করেছিলেন নজরুলের অপ্রচলিত গানের জন্য।  কাজি নজরুল ইসলামের প্রায় ২০২২টি অতি দুষ্প্রাপ্য গান ইনস্টিটিউটকে দিয়েছি শুদ্ধ নজরুলগীতি স্বরলিপি প্রস্তুত করার জন্য। নজরুল ইনস্টিটিউট- কে কৃতজ্ঞতা। তাঁরা আমাকে বিনিময়েশুভেচ্ছা স্মারকদিয়ে সম্মানিত করেছেন।

যদি কোনও কোনও প্রেক্ষাগৃহে বা নির্দিষ্ট জায়গায় মাঝে মধ্যে এইসব গানের ‘Live Listening Session’ করা যায় তাহলে বর্তমান প্রজন্ম আমাদের হারিয়ে যাওয়া বাংলা গানের অমূল্য সম্পদকে চিনতে পারবে আর ভালবাসতে পারবে নতুন করে। আমার কষ্ট হয় এখনকার প্রজন্ম প্রায় পুরোপুরি বঞ্চিত এই অমৃতের স্বাদ থেকে।

প্রশ্ন: আপনার ব্লগ এবং ইউটিউব চ্যানেলের কথা যদি পাঠকদের একটু বলেন।

উত্তর: ব্লগ বা চ্যানেল এগুলোও পরিকল্পনামাফিক করা নয়। ইচ্ছে হলে লিখি। ইচ্ছে হলে আপলোড করি। তবে কেউ গান চাইলে নিরাশ করি না।হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানিকে প্রায় শতাধিক গান দিয়েছি সিডি প্রকাশের জন্য। অনেক সিডি প্রকাশ পেয়েছে। আরও অনেক প্রকাশের অপেক্ষায়।

প্রশ্ন: কোনও আর্কাইভ বা ওয়েবসাইট করবার ইচ্ছে আছে

উত্তর: আছে। তবে আমি একা একা পারব না, কেউ সঙ্গী হলে তবেই সম্ভব।

[the_ad id=”270086″]

প্রশ্ন: আপনার সংগ্রহ নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? 

উত্তর: এই সোনারপুরে একটা রেকর্ড লাইব্রেরি করার ইচ্ছা, যাতে সবাই এসে শুধু দেখতে পারে এমন নয়, যেন শুনতেও পারে গানগুলি। তবে সেটাও পারব কিনা জানি না।

প্রশ্ন: মানুষ কীভাবে আপনাকে মনে রাখুক ,আপনি চাইবেন ?

উত্তর: কে মনে রাখল, না রাখল এই ভেবে তো রেকর্ড সংগ্রহ করিনি বা সোশ্যাল মিডিয়াতে গান শোনাই না। আমি গান শুনিয়ে আনন্দ পাই কেউ যদি সেই আনন্দের ভাগীদার হয়, তাতেই আমি খুশি।

8 Responses

  1. প্রিয়মুখ শ্রীকানাইলালদা তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য নজরুল-সংগীত আমাকে দিয়েছেন। শুদ্ধ বাণী ও সুরে নজরুল-সংগীত চর্চা, প্রচার ও প্রসারে এ গানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ মহানুভবতার জন্য তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আশা করি অতীতের মত ভবিষ্যতেও আমরা তাঁর মাধ্যমে সমৃদ্ধ হবো। কানাইলালদা’র জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।

  2. অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী সাক্ষাতকার। একই সাথে খুবই প্রয়োজনীয় ও বটে। আমরা আমাদের ঐতিহ্যের খোঁজে আকাশ পাতাল এক করে ফেলছি , কখনও মাটির গভীরে চলে যাচ্ছি তো কখনো আকাশ ফুঁড়ে অন্য জগতে। সারা পৃথিবী এক করে ফেলতেও পিছিয়ে নেই আমরা। অথচ হাতের কাছে বাংলা সংষ্কৃতির তথা বাংলা গানের যে স্বর্ণলী ঐতিহ্য সেটা কারো চোখেই পরেনা, কোন আগ্রহই নেই। একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে কারো একার পক্ষে এই ঐতিহ্য ধরে রাখা বা সংরক্ষন করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। একমাত্র, সরকার এর সার্বিক দায়িত্ব গ্রহনের মাধ্যমেই এই ঐতিহ্য সংরক্ষন করা সম্ভব। কত বড় দুঃখের কথা, মাত্র শত বছরেই এমন এক গৌরবজ্জল অতীত হারিয়ে যেতে চলেছে।
    শ্রীকানাইলাল বাবুকে অজস্র ধন্যবাদ , শত বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে এই ঐতিহ্য কে যে ধারণ ও লালন করে রাখার অবিরাম চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু কতদিন !!! ???

  3. খোলামেলা সুস্পষ্ট মনোকথন। ফেসবুকে শ্রীকানাইলালের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর নানাভাবে সমৃদ্ধ হয়েছি ওঁর সংগ্ৰহ শুধু নয়, বাংলা গানের জগত সম্পর্কে ওঁর জ্ঞান বিস্মিত করে।
    প্রতিবেদনটি পড়ে খুব আনন্দ পেলাম।

  4. আমার অত্যন্ত প্রিয় এই গানপাগল মানুষটির নিজের কথা জানতে পেরে খুব আনন্দ পেয়েছি। এই ধরনের রেকর্ড সংগ্ৰাহক সত্যিই দুর্লভ, তাঁর সংগৃহীত রেকর্ডগুলির মতোই। শ্রীমন্তী গুপ্ত দক্ষতার সঙ্গে এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভেতরের কথাগুলি তুলে আনতে পেরেছেন। এই ধরনের নিঃস্বার্থপর সমাজসেবীকে সাধারণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলা লাইভকে অজস্র অভিনন্দন।

  5. আমি গর্বিত …..কি অসাধারণ সাক্ষাৎকার, কখনো স্মৃতি পিছনে নিয়ে গেল, কখনো চোখে জল এনে দিল…..তোমাকে সেলাম জানাই দাদা…..এটা কোনো পত্রিকায় প্রকাশ পেলে পাঠক আরো ঋদ্ধ হবে…..! তোমার সংগ্ৰহ আরো মূল্যবান হোক, এই কামনা করি।

  6. Sadhu, Sadhu, Sadhu,
    Ami Sri Kanai da r jonye Iswar Iswareswar Parameswar Parampita r kache eei prarthana kori je tar aaro uttorottor sri bridhi hok, aaro sakti diye se yeh Ganer, sangit sagarer atal thekhe je amulya ratan, amulya manimukta tule aanchen ebong aananada sahakare ta aamader kache poribeshan korchen,, tar jonye tini aamader monikothai chiro abinashar hoye thakben
    Ek asamanya Kandari jini aa mrityu tar jibodoshai je Mahajagatik kaj ti korchen, tar jonyo aamra tahar kache sarajibon daibodhya o Chirokritagya hoye thakbo
    Iswar Iswareswar Parameswar Parampita Onar O onar paribarer Santi o Mongol korun
    Banglar tatha Bharatbarsher ek Mahat pran
    Sri Kanailal Surobhumi sir er aaro, aaro bara hon eei kamana kori
    O tar Eeiyi prayash er pashe thekhe tar eeyi mahat kaje jodi ek bindu o jodi dite pari,, tahole nijeke dhonyo mone korbo
    Amar SHRDYARGHA ,, O NAMASKER

  7. এক নিষ্ঠাবান গানের ফেরিওয়ালার কথা জানতে পারলাম। কানাইলাল বাবুর কথা এখানে তুলে ধরার জন্য লেখিকাকে অভিনন্দন জানাতেই হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com