banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

একটা চড়ুই স্মৃতির ভিতর ‘এক্কা দোক্কা খেলছে’

মৌসুমী দত্ত রায়

মার্চ ২০, ২০২৪

Feature on Sparrow Day
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

একটা ছোট্ট মিষ্টি হাসি, আর কিছু নয়। সবকিছু যে একদম ঠিকঠাক হয়ে যাবে, তা নয়। আসলে হয় তো কিছুই হবে না, কিছুই হল না, তবুও এক টুকরো হাসি। একটা ছোট পাখি। গাছের পাতার ফাঁকের ভেতর থেকে কিচিমিচি ডাক আর কিছুটা ছটফটানি, হয়তো ঘরে ফেরার। একটা ছোট বাদামি পাখি। ফুড়ুৎ করে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে গেল, আর কিছুটা মন খারাপও উড়ে গেল তার সঙ্গে৷ শেষ বিকেলের আলোটুকু গায়ে মেখে এ শহরের এ ঘরে ফেরা, আর ঠিক তখুনি ভোরের আলো আট হাজার মাইল দূরের অন্য শহরের অন্য ঘরে ঘুম ভাঙায়, আর সেই ছোট বাদামি চড়ুই আর তার কিছু বন্ধু কিচির মিচির করে সন্ধের চিঠি সকালে পৌঁছে দেয় প্রিয়জনকে৷ 
Sparrow 1
কলকাতার চড়ুইরা আর নিউ ইয়র্কের চড়ুইরা আপন মনে চলতি জীবনের গল্প বলেই চলে। কান পাতলেই শুনতে পাই। সময় থামে না, আমিও থামার অবকাশ পাই না!  
ঘরে ফিরে সেই গাছের ফাঁকে কিচিমিচিটা শুনতে পাই মনে মনে৷ ইউটিউবে সুমন (আমাদের পুরনো সুমন), গিটার টেনে গেয়ে ওঠে আজও
“সকাল বেলার রোদ্দুর যেই মাটিতে পা ফেলেছে
একটা চড়াই অমনি দেখি এক্কা দোক্কা খেলছে”
একচিলতে বারান্দায়, পশ্চিমের সূর্য আর বারান্দার রেলিং তখনও আঁকিবুকি কাটছে, আর আমার কলকাতা শহরও সঙ্গী তখনই, সঙ্গে ‘আছে ঘুম ভাঙা সব ঘাসের সোঁদা গন্ধ’…
Sparrow 2
একটা ছোট্ট চড়াই আর কতদূর উড়তে পারে? কিন্তু নিউইয়র্ক থেকে কলকাতা উড়িয়ে নিয়ে যায় কত অনায়াসে৷
সালেম আলীর সেই আত্মজীবনী, ‘The Fall of a Sparrow’ বসার ঘরের বুকসেল্ফের তৃতীয় তাকে, রাজস্থান থেকে আনা দস্তার উটটার পেছনেই, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’র গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। কতবছর ধরে দাঁড়িয়ে, কড় গুনছি। ওই বইয়ের কাছেই, সেই তো প্রথম ওদের আলাদা করে চিনতে শেখা। অর্নিথোলজির প্রথম পাঠ। Googol তখনও google হয়ে ওঠার যে সম্ভাবনা, সেই সম্ভাবনারও জন্ম হয়নি, সে হয়ত তখনও অন্য গ্রহের বাসিন্দা। সেসময় বইমেলা হত ময়দানে। বইয়ের স্টল আর প্যাভিলিয়ন তখনও পুজোর মণ্ডপের মতন৷
 
সব চড়ুই চড়ুই, তবে সব চড়ুই এক নয়। 
তেতাল্লিশ ধরনের চড়ুই পাখি আছে পৃথিবীতে, কিন্তু আমাদের কলকাতার ঘরের চড়ুইটি, আমাদের মতনই ‘গৃহস্থ’, কাছের… আমাদের House Sparrow’।
House sparrow
চৌরঙ্গীর হ্যারিস মিউজিক শপ থেকে কিনে আনা Simon ৪ Garfunkel এর Wednesday 3 AM ক্যাসেট চলছে ‘ফিলিপস’-এর প্লেয়ারে। সাইড ওয়ানের ব্লিকার স্ট্রিটের পরেই স্প্যারো…”
Who will love a little Sparrow?
Will no one write her eulogy?
“I will”, said the Earth
“For all I’ve created returns unto me
From dust were ye made and dust ye shall be”
 
কত বছর বাদে সেই ওয়েস্ট ভিলেজের ব্লিকার স্ট্রিট ধরে হাঁটতে হাঁটতে কলকাতার সেই চড়ুইয়ের সঙ্গে আবার দেখা ওয়াশিংটন পার্কে। এখানে এক্কা দোক্কা ছেড়ে স্যাক্সোফোনের সঙ্গে বিটস মিলিয়ে সে নাচতে শিখেছে দিব্যি।
sparrow3
চড়ুই মানেই যেন ছেলেবেলার স্মৃতিদের কিচির মিচির হয়ে ফিরে আসা। চড়ুই পাখি মানেই, আমাদের বাড়ির চেনা ঘুলঘুলি, কার্নিশ, বারান্দার কোণ। স্মৃতির চারপাশে, মনের বাগানে, রাস্তার উল্টোদিকের ডুমুর আর অশ্বত্থের গাছে গাছে ফুরফুরে মেজাজে উড়ে বেড়ানো। সেই ‘বালক’ রবিঠাকুরের 
_”চড়ুই পাখির আনাগোনা মুখর কলভাষা
ঘরের মধ্যে কড়ির কোণে ছিল তাদের বাসা।”_
sparrow 4
পুরনো কলকাতার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে বা কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে চড়ুইদের সংখ্যাও হু হু করে কমেছে। সারা পৃথিবীতে ওদের জনসংখ্যা এতটাই কমে গেছে যে ওদের সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করার জন্য, বিলুপ্ত হওয়ার মুখ থেকে বাঁচানোর জন্য ২০১০ সালের ২০ মার্চ প্রথম আন্তর্জাতিক ‘World Sparrow Day’ পালন করা হয়৷ Nature Forever Society of India and the Eco-Sys Action Foundation (France) সঙ্গে আরও অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগে আমাদের ছোট্ট চড়ুই ক্যালেন্ডারের একটা দিন খুশিমনে দখল করে নিয়েছে। জামাইষষ্ঠী, Mothers Day, Father’s Day, Earth Day-র পাশাপাশি আমাদের ‘চড়ুই পাখি দিবস’৷ 
 
sparrow 5
ইতিহাস বারে বারে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে, তবে ১৯৫৮ সালে একজন মানুষের এক ভুল সিদ্ধান্ত যে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল, তা এককথায় নজিরবিহীন৷ সেই বছরই গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের প্রতিষ্ঠাতা মাও জে ডং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তাঁর দেশে চড়ুই এক উৎপাত। চড়ুই ধান খেয়ে খামারের ক্ষতি করে, সুতরাং মেরে ফেলা হোক সব চড়ুই৷ শুরু হল The Great Sparrow campaign। অন্যান্য অনেক নীতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের সেই অমানবিক সিদ্ধান্ত ধ্বংসের এক ডমিনো প্রভাব সৃষ্টি করেছিল। প্রতিশোধ নিয়েছিল প্রকৃতিও। তিন বছর পরে, প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মানুষ মারা পড়েছিল সে দেশে।
The Great Sparrow campaign
গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড
এটা কীভাবে হল? চিনের কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসার পর পরই শুরু হয় এই নিধনযজ্ঞ। সেই বছর মাও জে ডং এক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন যাকে তিনি গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড নামে অভিহিত করেন। এ এক বিশাল সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রচারাভিযান যা অন্যান্য অনেক কিছুর মতো কৃষিকেও একটি সম্মিলিত, রাষ্ট্র-স্পন্সরকৃত কার্যকলাপে পরিণত করেছিল। কমিউনিস্ট শাসনাধীন চিনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ হিসাবে ব্যক্তিগত চাষ নিষিদ্ধ করা হয়।
 
 
কৃষিকে একত্রিত করার পরে জেডং-এর প্রথম পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম একটি ছিল খামারগুলিকে রক্ষা করা। মানুষকে বোঝানো হয়েছিল চড়ুই পাখি প্রচুর শস্যের বীজ খেয়ে ফেলে, তাই ক্ষতিকর। দেশের সমস্ত চড়ুইকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন জেডং। বলা হয়, এই গ্রেট স্প্যারো ক্যাম্পেইনের সময় লক্ষ লক্ষ চড়ুই মারা গিয়েছিল। মানুষের ক্রমাগত তাড়া খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে আকাশ থেকে ঝরে পড়েছিল অসহায় পাখির দল। (‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড’ নামে গালভরা সেই আন্দোলনের শিকার হয়েছিল চারটে প্রাণী— ইঁদুর, মশা, মাছি আর চড়ুইপাখি। আর এ সবই নাকি করা হয়েছিল মানুষের স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করার লক্ষ্যে।)
 
sparrow 7
সভ্যতা সত্যিই আমাদের দিয়েছে বেগ, আর কেড়ে নিয়েছে আবেগ! প্রতিনিয়ত কেড়ে নিয়েছে ও নিচ্ছে আমাদের সুস্থ থাকার পরিবেশ। মাল্টিস্টোরিড, মাল্টি কমপ্লেক্স তৈরি করতে বড় বড় গাছ কেটে ফেলছি নির্দ্বিধায়। জলাভূমি বুজিয়ে এখন পুকুর চুরি নয় এক্কেবারে চোখের উপর দিয়ে ভয়ঙ্কর সব ডাকাতি চলছে। বাড়ির মাথায় বসছে মোবাইলের টাওয়ার। তার ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের দৌলতে চড়ুইয়ের সাথে দল বেঁধে অন্য পাখিরাও পালাচ্ছে৷
উন্নতিতে বাধা দিয়ে নয়, কিন্তু কিছুটা সুচেতনা, কিছুটা আগাম চিন্তাভাবনা, urban planning-এ পরিবেশ বিশারদদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করতে পারলে, নিজেদের পরিবার-বন্ধু-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সামিল হয়ে জোট বেঁধে কাজ করলে আমাদের পরিবেশকে, আমাদের কলকাতা ও সারা বিশ্বে চড়ুই পাখিদের ভালভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। সম্ভব আমাদেরও সুস্থভাবে বেঁচে থাকা৷ 
 
sparrow8
মানুষ মারা যাবার পর তাদের আত্মা নাকি বয়ে নিয়ে যায় চড়ুই পাখিরা। ওডোবন সোসাইটির এই সংস্কারটির সত্যতা যাচাই করার উপায় নেই এক্কেবারে, আমার মতন জন্ম নাস্তিকের তো নয়ই। তাও আজ আমার রাঙাদাদার মৃত্যুদিন, আজ সকালে আমার এই বহুতল বারান্দায় একটা চড়ুইকে রেলিং-এর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত লাফিয়ে বেড়াতে দেখে, আমারও কেমন যেন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল কথাগুলো। Lee Harper লিখেছিলেন, “it s sin to kill a Mocking Bird”, আমি বলি, চড়ুই পাখি হত্যা পাপ। 
প্রাচীন মিশরের নাবিক চড়ুই পাখির উল্কি আঁকত হাতে, বিশ্বাস করত মাঝসমুদ্রে হারিয়ে গেলে চড়ুই পাখি তার আত্মাকে ঘরের মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনবে।  
sparrow 6
দিনের শেষে নিউইয়র্কে বসে কলকাতার চড়ুইকে খুঁজতে গিয়ে স্মৃতির অলিগলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আরও একবার মনে হল, চোখের কোণে এই থমকে থাকা এক ফোঁটা জলই আসলে আমার বেঁচে থাকার রসদ। না হলে মৌসুমী আবার কাল সকালে কোন আনন্দে মেঘ খুঁজতে বেরোবে!
 
 
 
*ছবি সৌজন্য: লেখক

মৌসুমীর জন্ম কলকাতায় হলেও গত তিন দশক ধরে নিউ ইয়র্কই তাঁর বাসস্থান এবং কর্মস্থান। এক্কেবারে বিশুদ্ধ ক্যালইয়র্কার। শুঁটকি মাছ থেকে চন্ডীপাঠ, Grateful Deads থেকে সুপ্রীতি ঘোষ আর এই diasporic dichotomy-র জাগলিংয়ে হাত পাকাতে পাকাতেই দিন কাবার। ভালোবাসেন বই পড়তে, ছবি আঁকতে, রান্না করতে, আড্ডা মারতে আর ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে। তবে সবচেয়ে ভালোবাসেন সক্কলকে নিয়ে জমিয়ে বাঁচতে!

3 Responses

  1. খুব সুন্দর লিখেছো. | এটা সত্যি খুবই দুঃখ্যের বিষয় |
    আমার ছোট বেলা থেকে চড়াই প্রীতি আছে | সেটা শুরু হয়েছিল রথের মেলা থেকে | আমি ছোট ছোট নানা রঙের পাখি কিনে এনে ছিলাম রথের মেলা থেকে | কিছুদিন পর সেগুলোর সব রং উঠে গিয়ে তারা চড়াই এ রূপান্তরিত হলো | তখন চড়াইদেরই আদরের সাথে কিছুদিন লালন পালন করেছিলাম |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com