banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাংলা আধুনিক গানে লতা

অভীক চট্টোপাধ্যায়

মার্চ ১৫, ২০২২

Bengali songs of Lata
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

ভারতীয় লঘু সংগীতের জগতে লতা মঙ্গেশকর ছাড়া বোধহয় আর কোনও শিল্পী ‘ভারতরত্ন’ সম্মান পাননি। তিনি আসলে কণ্ঠশিল্পীর গণ্ডি ছাড়িয়ে, সুরলোকের দেবীর মর্যাদা অর্জন করেছিলেন মানুষের কাছে। তাই দেশের এই সর্বোচ্চ সম্মান পাবার পর, প্রত‍্যেকেরই তা সঙ্গত মনে হয়েছিল স্বতস্ফূর্তভাবে। এই একটি বিষয় নিয়ে ভাবলেই, পরিষ্কার হয়ে যায় লতা মঙ্গেশকর কেন অনন্যা! ভারতের ফিল্মি ও নন-ফিল্মি দুনিয়ায় বহু মহান শিল্পী এসেছেন যাঁরা প্রত‍্যেকে তাঁদের সাংগীতিক স্বকীয়তার জায়গায় অসামান্যভাবে ক্ষমতাবান। লতা মঙ্গেশকরকে সেইসব শিল্পীমণ্ডলীর পরিসরে রেখে চুলচেরা সাংগীতিক বিশ্লেষণ করলে, কিছু ক্ষেত্রে যেমন তিনি সর্বাধিক বিবেচিত হবেন, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে হয়তো তাঁর কোনও সাংগীতিক ক্ষমতার একটু খামতিও দেখা যাবে। 

তবুও কিছু মহান ব‍্যক্তিত্ব থাকেন, যাঁরা এমন একটি উচ্চতার জায়গা অধিকার করেন মানুষের হৃদয়ে, যা একমেবাদ্বীতিয়ম হয়ে যায়। লতা সেই আসনে আসীন। তাই বোধহয় একমাত্র তাঁকেই দেবী সরস্বতীর বরপুত্রী অ্যাখ্যা দিয়ে থাকেন আপামর গানপ্রেমী। এ বড়ো কম অর্জন নয়! কিছু ভাষা ছাড়া, ভারতের প্রায় সব প্রচলিত ভাষায় তিনি গেয়েছেন অসংখ্য গান। যার মধ্যে হিন্দি ও মারাঠির পরে সবচেয়ে বেশি গান লতা-কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়েছে বাংলা ভাষায়।

যখন তাঁর উত্থান, সেই ১৯৪০-এর দশকে হিন্দি ছবির জগতে চলছে বাঙালির রমরমা। অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক, প্রযোজক, সংগীত পরিচালক, গায়ক গায়িকা সর্বত্র বাঙালির প্রাধান্য ও নেতৃত্ব। স্বাভাবিকভাবেই লতা সেই আবহে প্রভাবিত হলেন। তাছাড়া, মারাঠি ও বাঙালির মধ্যে আচার-আচরণ, জীবনবোধ, শিল্পসংস্কৃতিগত চেতনা ইত্যাদি নানাদিক থেকে একটা সাযুজ্য আছে, এ তো অনেকেই বলেন। এইদিক থেকে জন্মসূত্রে মারাঠি লতা মঙ্গেশকরের বাংলার সুরভাবনার প্রতি আকর্ষণ তৈরি তো হবেই। বঙ্গদেশের রসসিক্ত পরিবেশ থেকে উঠে আসা নরম রোম্যান্টিক মেলোডি-নির্ভর সঙ্গীতকে প্রথম থেকেই আপন করে নিয়েছিলেন মেলোডি-কুইন লতা মঙ্গেশকর।

১৯৪২ সালে মারাঠি গান গেয়ে ফিল্মি দুনিয়ায় পা-রাখা লতার কণ্ঠে প্রথমবার বাংলা গান শোনা গিয়েছিল এর দশবছর পর। তা ছিল একটি ডাবল ভার্সন (মারাঠি ও বাংলা) ছবিতে। যদিও এই লেখার বিষয় তাঁর বেসিক বাংলা গান, তবুও ১৯৫২ সালে মুক্তি পাওয়া ভি.শান্তারামের “অমর ভূপালি”-র কথা শুরুতে উল্লেখ জরুরি। এই মারাঠি ছবিটি বাংলায় ডাব করা হয়েছিল। যেখানে মারাঠির মতোই সমসংখ্যক গান বাংলা ছবিতেও ছিল। লিখেছিলেন, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুরকার বসন্ত দেশাই। এখানে লতা তিনটি একক কণ্ঠে ও দুটি মান্না দের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে গেয়েছিলেন। এছাড়া আশা ভোঁসলেরও গান ছিল। প্রসঙ্গত, শুধু লতা একা নন, বাকি দুই শিল্পীর গলাতেও এই প্রথমবার বাংলা গান শোনা গিয়েছিল।

Lata Mangeshkar 5
ভারতীয় লঘু সংগীতের জগতে লতা মঙ্গেশকর ছাড়া বোধহয় আর কোনও শিল্পী ‘ভারতরত্ন’ সম্মান পাননি

লতাকণ্ঠে বেসিক বাংলা গানের দ্বারোদঘাটন হল ১৯৫৭ সালে। শুরুতেই বাজিমাৎ। পবিত্র মিত্রের কথায় সতীনাথ মুখোপাধ‍্যায়ের সুরে গানের আলপনা আঁকলেন লতা “আকাশপ্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে”, “কত নিশি গেছে নিদহারা…”। প্রথম গানে ছন্দের পালক বুলোনোর আমেজ। শুনলে মনটা যেন কেমন করে ওঠে। আর “কত নিশি…” তো জটিল সুরপথে একরাশ কান্নার প্রকাশ। লতা মঙ্গেশকরকে বাংলা শেখাতেন বাসু ভট্টাচার্য। বরাবর এই ভাষা ও সংস্কৃতিকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছেন, শ্রদ্ধা করেছেন কিংবদন্তি কিন্নরকণ্ঠী। তাই তো শুরু থেকেই বাংলা গানে, উচ্চারণ ও আবেদন-প্রকাশের ক্ষেত্রে অত নিখুঁত ও গভীর অনুভূতিময় তিনি। শুনলে বুঝতে অসুবিধে হয়, যিনি গাইছেন, তিনি অবাঙালি! 

এই বছরই আরও একবার সুপার হিট নির্গত হল লতা মঙ্গেশকরের গলা থেকে। বেসিক রেকর্ডে পুলক বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের কথায় ও ভূপেন হাজারিকার সুরে লতা গাইলেন, “রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে…” এবং “মনে রেখো ওগো চাঁদ…”। প্রথম গানটিতে অহমিয়া লোকসংগীতের পুরোপুরি ছোঁয়া। এ গানের “ও চাঁদ যা শুনে যা/ মায়াজাল যা বুনে যা…” অংশটি যেরকম সুরে মাখামাখি হয়ে লতার কোকিল-কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়েছে, তা যেন চোখের সামনে বিহুর রূপকে মূর্ত করে তোলে। বাকি গানটিতে আছে  স্বপন তরীতে চড়ে সুরপথে মনের কথা বলার অনুভূতিময় ব‍্যঞ্জনা।

পরের বছর (১৯৫৮) হেমন্ত মুখোপাধ‍্যায়ের সুরে, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায়, “প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে…” আর “ও পলাশ ও শিমুল…” গানে আবার আলোড়ন। সহজ মিষ্টি চলনের সুরনির্মাণের নৃপতি হেমন্ত, গানদুটির চলনে এমনকিছু মোচড় রেখেছেন, যা আদর্শ লতাসুলভ হয়ে উঠেছে। তীক্ষ্ণ বাঁশির সুর আর তারসপ্তকে লতা-কণ্ঠের বিচরণ, দুটোকে আলাদা করা খুব কঠিন। সোপ্রানোর রানি যিনি, তাঁর কণ্ঠ যখন ধারণ করে “ও পলাশ ও শিমুল” গানের প্রথম ও দ্বিতীয় অন্তরার অংশগুলো, তা যেন বসন্তের আকুলতা হয়ে ছুটে চলে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। প্রত‍্যেকবার শুনলে যা নতুন নতুন করে একইরকম ধাক্কা লাগায় আমাদের। আর একটি গানে অপূর্ব বিরহের তাড়না। পরে হেমন্ত, তাঁর সুরারোপিত অনেক বাংলা ও হিন্দি ছবিতে বহুবার লতার গলা ব‍্যবহার করেছেন। কিন্তু বেসিক বাংলা গান, এই একবারই। 

১৯৪২ সালে মারাঠি গান গেয়ে ফিল্মি দুনিয়ায় পা-রাখা লতার কণ্ঠে প্রথমবার বাংলা গান শোনা গিয়েছিল এর দশবছর পর। তা ছিল একটি ডাবল ভার্সন (মারাঠি ও বাংলা) ছবিতে। যদিও এই লেখার বিষয় তাঁর বেসিক বাংলা গান, তবুও ১৯৫২ সালে মুক্তি পাওয়া ভি.শান্তারামের “অমর ভূপালি”-র কথা শুরুতে উল্লেখ জরুরি। এই মারাঠি ছবিটি বাংলায় ডাব করা হয়েছিল। যেখানে মারাঠির মতোই সমসংখ্যক গান বাংলা ছবিতেও ছিল।

১৯৫৯-এ প্রথম বাংলা বেসিক গানে ঘটলো লতা-সলিল সংযোগ, যা একটি যুগের সূচনা করল বলা যায়। সলিল চৌধুরীর গাননির্মাণ নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার কোনও প্রয়োজন নেই। তা বহু আলোচিত ও চর্চিত। নিজস্বতার ঝলমলে আলোয় আলোকিত তাঁর সুর এবং অবশ্যই কথা। এ বছর লতা প্রথম যে দুটি সলিল-গীতি গাইলেন, তা মুহূর্তে হয়ে গেল চিরকালের। প্রথম গান, তাঁর অনবদ্য গলার রেঞ্জের আশ্রয়ে শুরু করলেন…”যা রে…” বলে। তারপর “যা রে উড়ে যারে পাখি/ফুরালো প্রাণের মেলা/ শেষ হয়ে এল বেলা/ আর কেন মিছে তোরে বেঁধে রাখি…”। আকুলতা ছেয়ে গেল চরাচরে। দ্বিতীয় গান লাউনি সুরের প্রভাবে, “না যেও না/ রজনী এখনও বাকি…”। বলাই বাহুল‍্য দুটি গানের গীতিকার সঙ্গীতকারই।

Lata Mangeshkar
সলিলীয় ছাপে গানগুলি লতার গলাকে আশ্রয় করে চিরসবুজ হয়ে আছে

একটা কথা মনে হয়, একেবারে সলিলীয় ছাপে যেক’টা গান লতার গলাকে আশ্রয় করে চিরসবুজ হয়ে আছে, তার প্রায় প্রত‍্যেকটির বাণী থেকে প্রকাশ পায় বিচ্ছেদ-বিরহের অনুভূতি। কিন্তু সুরের বৈচিত্র্যে, গান থেকে গানে তাল-লয়-ছন্দ মেতে উঠেছে নানারকম স্ক‍্যানিংয়ে। এ যেন ব‍্যর্থতা নিয়ে উল্লাস! যেমন “ও বাঁশি হায়”, “সাত ভাই চম্পা জাগো রে”, “কেন কিছু কথা বলো না”, ” মন লাগে না”,  “নিশিদিন নিশিদিন বাজে স্মরণের বীণ”, “না মন লাগে না”, “বড় শূন্য শূন্য দিন”, “আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের” (গানটির কথায় মোহিনী চৌধুরীর “পৃথিবী আমারে চায়” গানের প্রভাব), “ও মোর ময়না গো, কার কারণে তুমি একেলা”, “আজ তবে এইটুকু থাক”, “এবার আমি আমার থেকে আমাকে বাদ দিয়ে”, “বড়ো বিষাদভরা রজনী”। 

দেখা যাচ্ছে, গানগুলো মূলত বিষাদের কথা বলছে। কিন্তু সুর ছড়িয়ে পড়ছে মনের আনন্দে এধার থেকে ওধার। এর মধ্যে অবশ্য, ১৯৬৭ সালে “কে যাবি আয়…” গানটি তৈরি হয়েছে তরণী বাওয়া ভাটিয়ালির সুরছন্দে ধীরগতিতে। লতা মঙ্গেশকরও যেরকম গায়কির পরিবর্তন ঘটিয়েছেন গানের বাণী ও সুরচলন অনুযায়ী, তা শুনে মনে হয়, গানগুলো কতটা তাঁর হয়ে উঠেছে। এটাই একজন আদর্শ শিল্পীর পরিচয়। লতা-কণ্ঠে সলিল-সংগীতের বিষয়টি নিয়েই একটি দীর্ঘ নিবন্ধ লেখা যায়। অল্পকথায় বলা যা একটু কষ্টকর।

এবার আসা যাক আরও অন‍্যান‍্য সুরকারের গানে। যেখানেও লতা-মূর্ছনার সংখ্যা কিছু কম নেই। নিজের ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সাংগীতিক প্রতিভার ব‍্যাপারে তাঁর বড়দির ছিল অগাধ আস্থা, যা অত্যন্ত সংগত। ইনি মূলত মেলোডিতে ভরা সুন্দর সুররচনা করেছেন অনেক গানে। অবশ্যই মারাঠি গানের সংখ্যা বেশি। কিন্তু বাংলাতেও তাঁর সুরে বেশকিছু কালজয়ী গান আছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই প্রাণ পেয়েছে লতা মঙ্গেশকরের গলায়। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হবে ১৯৭০ সালে, সলিল চৌধুরীর কথায় লতা-হেমন্ত দ্বৈতকণ্ঠে “দে দোল দোল দোল/তোল পাল তোল…” গানটির কথা। এই গানটি হৃদয়নাথ গড়ে তুলেছিলেন তাঁরই করা একটি মারাঠি গানের অনুকরণে। নৌকা বেয়ে চলার তরঙ্গায়িত ছন্দে তৈরি অনবদ্য কম্পোজিশন। জলকে অবলম্বন করে যাঁদের বেঁচে থাকা, সেই শ্রেণীর দুই নারী ও পুরুষের প্রেমের আর্তি অপূর্ব ভাবে সংগীতপথে প্রকাশিত হয়েছে এই গানে। মারাঠি ও বাংলার লোকজীবন একাকার হয়ে যেখানে মিশে যায়। যেমন বাণী, তেমন সুর। 

Lata Mangeshkar 3
লতাকণ্ঠে বেসিক বাংলা গানের দ্বারোদঘাটন হয় ১৯৫৭ সালে

আর পরিবেশনে হেমন্ত ও লতা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। বিশেষ করে, লতার গলা যেন মেলোডিতে ভরা আর্তির ঝড় তুলেছে গানটিতে। ঐ বছরই সলিল চৌধুরীরই কথায়, হৃদয়নাথের সুরে পুজোর রেকর্ডে একক কণ্ঠে লতা গাইলেন, “বাদল কালো ঘিরলো গো…” ও “ওগো মা গঙ্গা মাগো মা গঙ্গা…”। এ দুটি গানেও সেই জলে নাও ভাসানোর কথা। অবশ্য সুরে সলিল-প্রভাব যথেষ্ট। ১৯৭৫ সালে একই গীতিকারের লেখায় হৃদয়নাথের সুরে লতা-কণ্ঠে শোনা গেল দুটি অসামান্য কম্পোজিশন, “নাও গো মা ফুল নাও…” ও “এ দিন তো যাবে না”। এখানে সুরকারের স্বকীয়তা অনেক বেশি প্রকাশিত।

এর পর ১৯৭৭-এ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় হৃদয়নাথের সুরে যে চারটি গান গাইলেন লতা, তার মধ্যে “দূরে আকাশ সামিয়ানায়…” অতুলনীয়। সুরচলনের সঙ্গে লতার গায়কী, সবমিলিয়ে গানটি যেন স্বপ্নময়তায় ভরা নৈসর্গিক ছবি। বাকি তিনটি গানও আমাদের ভালোলাগায় আছে, “পদ্মপাতায় ভোরের শিশির”, “দুয়ো দুয়ো আড়ি”, “জুঁই সাদা রেশমী জোছনায়”। আবারও ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ সালে হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুরে কয়েকটি বেসিক গান গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর, যার কিছু গান জনপ্রিয় হয়েছে।

Lata Mangeshkar 6
ভূপেন হাজারিকার সুরে চারটি গান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

ভূপেন হাজারিকার সুরে আরও চারটি লতা-সংগীতের কথা বলা দরকার। যা ১৯৮১-র পুজোর বেসিক রেকর্ডে বেরিয়েছিল। প্রত‍্যেকটি থেকেই ভূপেনবাবুর নিজস্ব ঢঙের মেলোডি ফুটে উঠেছে। তার মধ্যে, “ভালো করে তুমি চেয়ে দেখ” (কথা―শিবদাস বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়) ও “অপরূপা অপরূপা” (মূল রচনা― ভূপেন হাজারিকা, বাংলা রূপান্তর― মিন্টু মুখোপাধ‍্যায়) গানদুটির কথা আলাদা করে মনে আসে। আরেকজন লতার খুব স্নেহের ও পছন্দের সুরকার হলেন মানস মুখোপাধ‍্যায়। ১৯৮২ সালে তাঁর সুরে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় যে চারটি গান পুজোর সময় গাইলেন লতা মঙ্গেশকর, তা শুনে বোঝা গেল এর সুরকারকে তাঁর পছন্দ হওয়ার সংগত কারণ আছে। গানগুলির স্ক‍্যানিং স্বকীয়তায় ভরা― “তোমারি আমি আর কারো না”, “তোমার গভীর ভালোবাসায়”, “কৃষ্ণচূড়া শোন শোন শোন”, “যেতে চাই”।

হিন্দি জগতে রাহুল দেববর্মনের সুরে লতার গান একটি আলাদা অধ‍্যায়। কিন্তু বেসিক বাংলা গানে, একবারই সংযোগ ঘটেছিল এই দুই মহান সংগীতব‍্যক্তিত্বের। আবার ঘটনাচক্রে সেই প্রথমবার রাহুল দেববর্মণ সুর করলেন বাংলা গানে। পুলক বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের কথায় ১৯৬৫ সালে  লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া সেই গানদুটি হল, “আমার মালতীলতা” ও “আমি বলি তোমায় দূরে থাকো”। বাংলায় প্রবেশ করেই নিজের জাত চেনালেন আর.ডি। আর তার জন্যে শুরুতেই বেছে নিয়েছিলেন লতা-কণ্ঠ। এটাই তাৎপর্যপূর্ণ। এরপর বাংলা সিনেমায় কয়েকবার রাহুলের সুরে লতা গাইলেও, বেসিক গান এই প্রথম এই শেষ।

১৯৭৪-এর পুজোর গানে ঘটেছিল এক অভিনব ঘটনা। সেই বছর কিশোরকুমারের সুরে মুকুল দত্তের কথায় লতা গাইলেন, “ভালোবাসার আগুন জ্বেলে” ও “প্রিয়তম, কী লিখি তোমায়”। এখানেই শেষ নয়। আসল চমক এর পরে! একই বছরে পুজোর রেকর্ডে কিশোরকুমার মুকুল দত্তেরই কথায় গাইলেন, “তারে আমি চোখে দেখিনি” ও “আমি নেই”। সুরকার― লতা মঙ্গেশকর। দুটি গানের সুরগঠন সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথমটিতে কিশোরকুমারের উচ্ছ্বাসে ভরা গান গাইবার দক্ষতাকে আর দ্বিতীয় গানে শিল্পীর অসাধারণ বেস ভয়েসকে বিষাদের আবহে অসামান‍্যভাবে ব‍্যবহার করেছেন সুরকার লতা। যা শুনলে বোঝা যায়, সুরবিন‍্যাসেও তিনি কতখানি ক্ষমতার ধারক ছিলেন! কয়েকটি মারাঠি ছবির বাইরে এই দুটি মাত্র বাংলা বেসিক গানে আমরা সুরকার লতা মঙ্গেশকরকে পেয়েছি। আফসোস একটাই, কেন আরও কিছু বাংলা গান সেজে উঠলো না এই সুরসম্রাজ্ঞীর সুরস্পর্শে!

 

*ছবি ও ভিডিও সৌজন্য: India.com, Webdunia, Indiatimes, Youtube

জন্ম ১৯৬৫-তে কলকাতায়। বেড়ে ওঠা চন্দননগরে। স্কুল জীবন সেখানেই। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে স্নাতক। ছোটো থেকেই খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ। গান শেখাও খুব ছোটো থেকেই। তালিম নিয়েছেন রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। দীর্ঘদিন মার্কেটিং পেশায় যুক্ত থাকার পর, গত বারো বছর ধরে পুরোপুরি লেখালেখি, সম্পাদনার কাজে যুক্ত। পুরনো বাংলা গান, সিনেমা, খেলা ইত্যাদি বিষয়ে অজস্র প্রবন্ধ লিখেছেন। আনন্দবাজার পত্রিকা, এই সময়-সহ বহু পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তমকুমারের "হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি মোর", হেমন্ত মুখোপাধ‍্যায়ের "আনন্দধারা", রবি ঘোষের "আপনমনে", মতি নন্দীর "খেলা সংগ্রহ"। লিখেছেন "সংগীতময় সুভাষচন্দ্র" বইটি। সাত বছর কাজ করেছেন "মাতৃশক্তি" ও "জাগ্রত বিবেক" পত্রিকায়। বর্তমানে নিজস্ব লেখালিখি ও সম্পাদনা নিয়ে ব্যস্ত।

One Response

  1. আমরা নির্দ্ধিধায় একথা বলতে পারি ( আজ যখন এই গানের সরস্বতী প্রয়াত ) যে এই মহান শিল্পী তাঁর কন্ঠ দিয়ে অন্য অনেক শিল্পী কে পরাজিত করেছেন। তাঁর সময়ে আমরা অনেক মহান গায়িকা কে পেয়েছি । সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সুমন কল্যাণ পুর, গীতা দত্ত এমনকি নিজের ভগ্নী কেও। ওনারা প্রত্যেকেই বিরাট মাপের শিল্পী। কিন্তু, কি অমোঘ অস্ত্র ছিল ওনার কন্ঠস্বর যাতে একটা আলাদা অনুভুতি, আলাদা জগৎ, আলাদা ভালো লাগা। অবশ্যই সেই সময়ে সঙ্গীত পরিচালক যারা ছিলেন তাদের কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি। একটা সলিল চৌধুরী বা একটা মদনমোহন অথবা ভূপেন হাজারিকা বা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় না থাকলে ওটা হয়তো হোতো না। ওনার সময়ে বা পরবর্তী সময়ে অনেকেই লতা মঙ্গেশকর কনঠী হবার প্রয়াস করেছিলেন, হয়নি। লতা অনুকরনীয় নন। অনুসরনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com