banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আপন ভুলে হে নটরাজ

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Birju Maharaj

মুন্সি প্রেমচাঁদের লেখা ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ দুই দাবা খেলোয়াড়ের গল্প বলে। উনিশ শতকের লখনৌ  শহরে দাবার বোর্ডে বুঁদ হয়ে থাকেন দুই অভিজাত পুরুষ, বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। সে সময় ব্রিটিশ সৈন্য এগিয়ে আসছে আওয়াধ রাজ্যের দিকে। শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ রাজ্য হারালেন, নির্বাসিত হলেন কলকাতার মেটিয়াবুরুজে। সত্যজিৎ রায়ের খুব ইচ্ছে এ গল্পটি নিয়ে একটি ছবি করেন। পিরিয়ড পিস। গল্পের চরিত্রগুলি বর্ণময়। ওয়াজিদ আলি শাহ নবাবের একই অঙ্গে কত রূপ! কবিতা লেখেন, গান বাঁধেন, চারুকলা, শিল্পকলার প্রকৃত সমঝদার। খাদ্যরসিকও বটে। নবাবের থেকে যেন শিল্পী হিসেবেই তাঁকে মানায় বেশি। এমন এক ব্যতিক্রমী চরিত্রকে ধরার জন্যে মাসের পর মাস চলল গবেষণা। ছবিটির প্রযোজক সুরেশ জিন্দল নিজের লেখা বইতে যাকে বলেছেন, “পিএইচডি-র রিসার্চ!”

ওয়াজিদ আলি শাহ ভালো গান গাইতেন। ছবিতে নবাবকে গান গাইতে দেখা যাবে। সে গানের চরিত্রটি স্থানকালপাত্র মিলিয়ে একেবারে সঠিক হওয়া চাই। সত্যজিৎ পারফেকশনিস্ট। খুঁজে খুঁজে ঠিক মানুষটির কাছেই পৌঁছে গেলেন। লখনৌ ঘরানার মহারাজ তিনি। সাতপুরুষের সুর-তাল-লয়-নৃত্যের সাধনা। সেই উনিশ শতকে পরিবারের বড়-বাবা দুর্গাপ্রসাদ ঠাকুর ছিলেন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ-এর দরবারে। নবাবের কথক নাচের শিক্ষা তাঁরই কাছে। ওয়াজিদ আলি শাহ গুণীর কদর করতে জানেন। পালকি ভর্তি টাকা দক্ষিণা পাঠান গুরুকে।

গুরু দুর্গাপ্রসাদের উত্তরপুরুষ কালকাপ্রসাদ আর বিন্দাদিন মহারাজ। রাম-লক্ষ্মণের মতো দুই ভাইয়ের জুটি, যাঁরা কালকা-বিন্দাদিন নৃত্য ঘরানার সৃষ্টি করে গেলেন। এটিই আধুনিক কথক। এই পরিবারের গুণীরা শুধুই নৃত্যশিল্পে আবদ্ধ নন, শিল্পকলার অন্যান্য ধারায়ও তাঁদের অবাধ বিচরণ। স্বয়ং বিন্দাদিন মহারাজ প্রায় তিনহাজার ঠুমরি রচনা করেছেন ও তাদের উপযুক্ত অভিনয় বা ‘ভাও’ তৈরি করেছেন।  তাঁদের উত্তরসূরি জন্মাল কালকাপ্রসাদের পুত্র অচ্ছন মহারাজের কোলে। একমাত্র সন্তান ব্রিজমোহন। ছোটো থেকে সবাই ডাকে ‘বিরজু’ বলে। সেই নামই চালু হয়ে গেছে বরাবরের জন্যে। লখনৌ ঘরানার কথকের এক ও অদ্বিতীয় শিল্পী বিরজু মহারাজ। সংগীতেও তাঁর অনায়াস বিচরণ। পারিবারিক ঐতিহ্যে সুর, তাল, লয়  তিনটির ওপরেই সমান দখলদারি। তবে দুনিয়া চেনে কথক নৃত্যের গুরু হিসেবে।  

Forefathers of Maharaj
বাঁদিকে বিন্দাদিন মহারাজ, মধ্যে কালকাপ্রসাদ, ডাইনে অচ্ছন মহারাজ

নবাব ওয়াজিদ আলি শাহকে তাঁর থেকে বেশি অনুভব করতে আর কে পারবে? তাঁর রক্তে আওয়াধের শৈলীর উত্তরাধিকার। দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সত্যজিৎ রায় বিরজু মহারাজের কোরিওগ্রাফিতে তাঁর শিষ্যার অনুষ্ঠান দেখেছিলেন। তখন থেকেই বাসনা, ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’-তে মহারাজজির সঙ্গে কাজ করার। সত্যজিতের অনুরোধে বিরজু মহারাজ সানন্দে রাজি হলেন গান আর নাচের দায়িত্ব নিতে।

হিন্দি ভাষায় তৈরি সত্যজিতের প্রথম ছবি ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’-তে তাঁর আগের সমস্ত ছক ভেঙে বেরিয়ে আসবেন পরিচালক। পোশাক, ছবির সেট, সংলাপ– সবই সেই উনিশ শতকের আওয়াধের উপযুক্ত হতে হবে। সময়সাপেক্ষ ও পরিশ্রমের কাজ। প্রতিটি দৃশ্য বহু গবেষণা আর ফিল্ডওয়ার্কের ফসল। এমনই এক দরবারের দৃশ্যপটে শিল্পকলারসিক নবাব ঠুমরি ধরেছেন। নর্তকীর পায়ে বাঁধা ঘুঙুরে উঠছে কথকের বোল। সেই সময়ের আওয়াধকে পর্দায় অবিকল ধরা হয়েছে বহু পরিশ্রমে, খুঁটিনাটি ডিটেলের মাধ্যমে। সেই অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন মহারাজজির শিষ্যা শাশ্বতী সেন। শতরঞ্জ ছবির নর্তকীর ঘুঙুরটি বাঁধা ছিল তাঁরই পায়ে।

চলচ্চিত্রের জগৎ বিরজু মহারাজের অজানা নয়। অভিনেত্রীদের জন্যে কোরিওগ্রাফি আগেও কিছু কিছু করেছেন। আশা পারেখের স্টেজ প্রোডাকশন ‘আনারকলি’র জন্যে একটি তারানা তৈরি করে দিয়েছেন। আশা পারেখ প্রচুর পরিশ্রমে সেটি আয়ত্ব করেছেন। মহারাজজি খুশি। এতটাই সন্তুষ্ট, যে ওই তারানা তিনি আর কাউকে শেখাননি। শাশ্বতীকেও নয়। 

‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’র শুটিংয়ের সেটে পরিচালক সত্যজিৎ মহারাজজিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। সেই সময়ের আওয়াধ, নবাবের দরবার, সেখানকার লোকজন আর তাদের কথাবার্তা, আদব-কায়দা, গান ও নৃত্যশৈলী নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। মহারাজজির পারিবারিক সম্পদ এক্ষেত্রে খুবই কাজে আসছে। তাঁর পূর্বপুরুষরা আওয়াধের দরবারের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন। তাঁদের পরিবারের মানুষদের হাবভাব, চলনে বলনে ধরা আছে সেই ঐতিহ্য। মহারাজজি নিজেও অনেক গল্প শুনেছেন তাঁর মায়ের কাছে, কাকাদের কাছে। পরিবারের বড়-বাবা দুর্গাপ্রসাদজি নবাবের কত গল্প শুনিয়ে গেছেন। সখিদের নিয়ে কৃষ্ণলীলার নৃত্যাভিনয় নবাবের খুব পছন্দ ছিল। নিজেই বেগমদের নিয়ে কৃষ্ণের নাচের ছেড়-ছাড় দেখাতেন। সেইমতো একটি দৃশ্যের পরিকল্পনা করা হল, যেখানে নবাব কৃষ্ণ সেজে তাঁর সখিদের সঙ্গে গাইছেন, নাচছেন। এ দৃশ্যের জন্যে নবাব ওয়াজিদ আলির নিজের রচনা বাছা হল- ‘হিন্দোলা ঝুলে শ্যাম’। 

অন্য দৃশ্যটি নবাবের দরবারে নর্তকীর একক নৃত্য। এর গানের জন্যে চিন্তা নেই। মহারাজজির পিতামহ বিন্দাদিন মহারাজের লেখা ঠুমরির বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। পরিচালকের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা হল। শেষ পর্যন্ত বেছে নিলেন বিন্দাদিন মহারাজের ভৈরবী ঠুমরি– ‘কানহা ম্যায় তোসে হারি’। বিরজু মহারাজ নিজেই গাইবেন, কোরিওগ্রাফি করবেন। নৃত্যের তালে তালে থাকবেন শিষ্যা শাশ্বতী। 

শতরঞ্জ কে খিলাড়ি ছবিতে নবাবের দরবারে গাওয়া এই ঠুমরিটিতে প্লেব্যাক করেছিলেন স্বয়ং বিরজু মহারাজ। তাঁরই পিতামহ বিন্দাদিন মহারাজের তৈরি করা ঠুমরি। মহারাজের নৃত্যপরিকল্পনায় ক্যামেরার সামনে ছিলেন শিষ্যা শাশ্বতী সেন। 

শুটিংয়ের দিনগুলি ছিল আনন্দে ভরপুর। কাজের ফাঁকে মধ্যাহ্নভোজ বা চায়ের বিরতিতে জমত আড্ডা আর গান। মহারাজজির ঝুলি ভরা পুরনো সব গান, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। একের পর এক গান শোনাতেন। আমজাদ খানও সুকণ্ঠ গায়ক ছিলেন। গানে গানে কাটত সময়। বিপত্তি বাধল বিন্দাদিন মহারাজের তৈরি ঠুমরিটি রেকর্ডিং করার সময়। বিরজু মহারাজ পরের পর রেকর্ডিং করে যাচ্ছেন, কিন্তু কিছুতেই নিজের কাজে নিজে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। গানে সেই চিকন পেলবতা, কাব্যিক আবেদন ফুটছে না যেন। মাখনের মতো মোলায়েম হবে ঠুমরির পরিবেশন। তা তিনি পারছেন কই? অথচ ইউনিটের সবাই তাঁর গানের মাধুর্যে মুগ্ধ।  

Birju Maharaj on the sets of Shatranj Ke Khiladi
শতরঞ্জ কি খিলাড়ির সেটে বিরজু মহারাজ

‘শতরঞ্জ’ কম বাজেটের ছবি। সত্যজিৎ সারাজীবন এমন কমবাজেটের ছবিতেই হাত পাকিয়েছেন, খেয়াল রেখেছেন যাতে কোনও দৃশ্যই এক-দু’বারের বেশি না নিতে হয়। প্রত্যেকটি দৃশ্য আগে থেকে ভাবা থাকত। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিশদে বুঝিয়ে দিতেন চরিত্রটি তিনি কেমনভাবে দেখছেন, কী চাইছেন। ভালো হোমওয়ার্কের গুণে প্রতিটি দৃশ্য খুব কম সংখ্যায় ‘টেক’ করেই পাওয়া যেত। কিন্তু গানের ব্যাপারে সে মডেল তো খাটছে না! প্রায় পঁচিশটি রেকর্ডিংয়ের পর পরিচালক শাশ্বতীকে ফোন করলেন, “ক্রিয়েটিভ মানুষ, কোনওদিন সন্তুষ্ট হবেন না। ওঁকে বলো, গান ভীষণ ভালো হচ্ছে।” সেইমতো একটা বুদ্ধি করা হল। পরের রেকর্ডিংটি শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে সবার উচ্ছ্বসিত ‘encore’, ‘encore’ আওয়াজে স্টুডিও ভরে গেল। শিশুর মতো সরল মানুষটি এবার নিশ্চিন্ত, যাক, গান ভালো হয়েছে তাহলে!  

‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’র শুটিংয়ের সেটে পরিচালক সত্যজিৎ মহারাজজিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। সেই সময়ের আওয়াধ, নবাবের দরবার, সেখানকার লোকজন আর তাদের কথাবার্তা, আদব-কায়দা, গান ও নৃত্যশৈলী নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। মহারাজজির পারিবারিক সম্পদ এক্ষেত্রে খুবই কাজে আসছে। তাঁর পূর্বপুরুষরা আওয়াধের দরবারের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন। তাঁদের পরিবারের মানুষদের হাবভাব, চলনে বলনে ধরা আছে সেই ঐতিহ্য। 

কথকের নটরাজ কবে, কীভাবে আয়ত্ত করলেন এমন সুর? গলার এমন মডুলেশন? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সময়ের সঙ্গে পিছিয়ে যেতে হবে তাঁর পূর্বপুরুষদের কালে। বিন্দাদিন মহারাজ শুধু ঠুমরি রচনাই করেননি, সে ঠুমরির তালিম দিয়েছেন। তাঁর কাছে গান শিখেছেন বহু গায়ক, গায়িকা ও নর্তকী। দিনে বারোঘণ্টার ‘তৎকার’ সাধনার পরও তাঁর গানের রেওয়াজে ফাঁক পড়ত না। কালকাপ্রসাদের তিন ছেলেই সংগীতে পারদর্শী ছিলেন। বড় ছেলে অচ্ছন মহারাজের কোলে এল বিরজু। ছোট্ট বিরজু বাবার কোলে বসে অনর্গল বোল-বাণী আওড়ে যায়। কচি মুখে তিহাই আর টুকড়া শুনে বাবাও অবাক! কাকা শম্ভু মহারাজ ঠুমরিতে রীতিমত তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ রহিমুদ্দিন খাঁর কাছে। কাকার গান শুনে শুনেই বিরজু গলায় তুলে নেয়। দুই কাকা শম্ভু আর লচ্ছু মহারাজের সঙ্গে মহানন্দে গলা মিলিয়ে গান গায়। এমনই সে পারিবারিক আবহাওয়া, সুর-তাল-লয়ের রসে জারিত। 

অচ্ছন মহারাজ যখন পৃথিবী ছাড়লেন, বিরজুর বয়স নয়। কিছুসময় মুম্বইতে কাকা লচ্ছু মহারাজের কাছে থেকে শিক্ষা চলল। এই সময়ই পরিচয় মুম্বইয়ের ফিল্ম জগতের সঙ্গে। বিরজু সবরকম গান শুনতে ভালোবাসত। মুঘল-ই-আজম, পাকিজ়া সিনেমার গান বারবার শোনে, গলায় তুলেও নেয়। নৃত্যের পাশাপাশি সংগীতের ধারাটিও পুষ্ট হয়। বাবা চলে গেছেন কিন্তু লখনৌর বাড়িতে আম্মা আছেন। আম্মার সঙ্গে নাড়ির টান। বিরজু তাই ফিরে ফিরে আসে লখনৌর পৈতৃক বাড়িতে। আম্মার পাশটিতে ঘেঁষে বসে গল্প শোনে। পুরনো দিনের কথা, বাবার কথা, তাঁরও আগের কালকা-বিন্দাদিন জুটির কথা। “তখনকার দিনে মেয়েরা থাকত পর্দার আড়ালে,” আম্মা গল্প শোনান। “বাইরে বেরনো মানা ছিল। নাচ বা গান শেখাও অসম্ভব। তবে কানটা তো খোলা থাকত! পর্দা দিয়ে কি আর কান বন্ধ করা যায় রে বাপ?” বিরজু হাসে।
– লুকিয়ে লুকিয়ে শুনতে? আম্মা?
– দূর, লুকোতে যাব কেন? পাশেই তো তালিমখানা, সেখানকার সব আওয়াজই কানে আসত। শুনে শুনে সে সব গান মুখস্থ হয়ে যেত।
– আম্মা, গান শোনাও না!
বিরজু মাকে জড়িয়ে ধরে। ছেলের আবদারে মা গান ধরেন। মৃদুস্বরে, গুনগুন করে শোনান সে যুগের কত হারিয়ে যাওয়া গান। বিরজু লিখে রাখে। মায়ের চোখ দিয়েই নিজের ছেলেবেলাকে ফিরে দেখে, পারিবারিক ঐতিহ্যকে চেনে। মায়ের কাছে পাওয়া দুষ্প্রাপ্য মণিমুক্তোয় গানের ঝুলিটি ভরে নেয়। ব্যাস, আর কী চাই? খাওয়াদাওয়া, পোশাকআশাকে বিরজুর কোনও চাহিদা নেই। রুটি আর পেঁয়াজ হলেই সে খুশি। 

চোদ্দো বছর বয়স থেকেই বিরজু মহারাজ কথক শেখান দিল্লির সংগীত ভারতীতে

চোদ্দো বছর বয়েস থেকেই বিরজু শিক্ষকতা করে। কথক শেখায় দিল্লির সংগীত ভারতীতে। যে কোনও বিদ্যা সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে গেলে সেই বিদ্যার শিক্ষাদান জরুরি। বিরজু বুঝতে পারে, শিক্ষক হয়ে কাজ করতে করতে প্রতিদিন নতুন করে শিখছে সে নিজেই। উপলব্ধির মহাদিগন্ত খুলে যাচ্ছে। যে বোধের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে প্রবীণ বিরজু মহারাজ ‘আর্ট অফ লিভিং’কে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে বলবেন, “চারুকলাবিদ্যার তিনটি উপাদান। সংগীত, বাদ্য আর নৃত্য। প্রথম দুটিতে সম্যক জ্ঞান থাকলে তৃতীয়টিতে উৎকর্ষে আসে।” এ তাঁর নিজেকে জীবনেরই কথা। নাচের পাশাপাশি তিনি একজন সংবেদনশীল গায়ক। গীতিরস, কাব্যের অনুভূতিকে অনায়াসে তুলে আনেন নিজের মখমলি গলায়। অভিনয় আর মুখমণ্ডলের ভাও-এর ছলাকলা যেন গানেরই অঙ্গ হয়ে ওঠে। সৃষ্টিশীল কবি তিনি, কবিতা লেখেন, লিখে তাতে সুর দেন। তালবাদ্যেও তাঁর অধিকার প্রশ্নাতীত।

গায়ক হিসেবে বিরজু মহারাজের প্রথম পরিচয় পেয়েছিলেন তাঁর শিষ্যরা। নাচের ক্লাসের শেষে গুরু তাঁর শিক্ষার্থীদের গান শোনাতেন। পুরনো সিনেমার গান গাইতে বড় ভালোবাসতেন। ইংরেজি অ্যাকশন সিনেমা প্রিয় ছিল। শিশুর মতো মানুষটির সবেতেই কৌতূহল! তবে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের বাইরে সাধারণ মানুষ প্রথম তাঁর গান শুনল এইচএমভি-র রেকর্ডে। ১৯৮৫-তে বার হল একটি লং প্লেয়িং রেকর্ড। বিরজু মহারাজের গাওয়া দশটি গান তার দু’দিকে ধরা আছে। ভজন, ঝুলা, হোরি, ঠুমরি- কী নেই তাতে! ‘প্রগতে ব্রিজ নন্দলাল’ কৃষ্ণের ভক্তিরসে জারিত, আবার ‘ঝুলতা রাধে নওলকিশোর’ মিশ্র দেশ রাগে রিমঝিম বর্ষার আবহ নিয়ে আসে। গলায় মিছরির দানার মতো মিষ্টি অথচ সূক্ষ্ম কারুকাজ, চোখের সামনে যেন দোলে তমালডালে বাঁধা ঝুলনা। মিশ্র গারায় হোরি- ‘কানহা খেলো কাঁহা অ্যায়সি হোরি গুঁইয়া’ – গানের মধ্যেই এনে ফেলেছেন আবির আর কুঙ্কুমের ছটা। সেই সঙ্গে রাধিকার আকুল আর্তি, কানহা কোথায় গিয়ে হোরি খেলছে কে জানে!

দূরদর্শনের অনুষ্ঠানে মঞ্চে হোলির গান নিয়ে পাশাপাশি দুই দিকপাল বিদূষী গিরিজা দেবী এবং বিরজু মহারাজ। দুজনের যুগলবন্দি আর খুনসুটিতে আসর মাত।

বহু মানুষই এই রেকর্ডে তাঁকে গায়ক হিসেবে প্রথম শুনলেন ও তাঁর কণ্ঠের জাদুতে অবধারিতভাবে মোহমুগ্ধ হলেন। তার মধ্যে এই অধমও একজন। তরুণী মন মহারাজজির সুরের মায়াজালে আচ্ছন্ন। কতবার যে সে রেকর্ড শোনা হল তার ঠিক নেই। ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’র গানের কথা তখন জানা ছিল না। সত্যি বলতে কী, খুব কম মানুষই জানতেন চলচ্চিত্রে ‘কানহা ম্যায় তোসে হরি’ গানটি কে গেয়েছেন! তাঁর বাসস্থান দিল্লির ঘরোয়া আসরে মহারাজজির গান অনেকেই শুনেছেন। শাশ্বতী সেন বা মঞ্জুশ্রী চ্যাটার্জির বাড়িতে তাঁকে শুনে অবাক হয়েছেন বহু বিদগ্ধ মানুষ, সাংবাদিক। তাঁরা লিখেছেন সে অভিজ্ঞতার কথা। চেন্নাইয়ের বিদগ্ধ শ্রোতারাও মহারাজজিকে অনেকবারই শুনেছেন। বাণী মহলের ত্যাগব্রহ্ম গান সভায় তাঁর একক গানের অনুষ্ঠানটি প্রবাদ হয়ে গেছে। তখন তিনি একাত্তরের যুবক। মাতিয়ে দিয়েছিলেন ঠুমরি, দাদরা, ভজন আর হোরি গেয়ে। বেশিরভাগ গানই বিন্দাদিন মহারাজের লেখা।  

Birju Maharaj 1
প্রবাদপ্রতিম মানুষটি ছিলেন শিশুর মতো সরল

এর কিছু বছর পর চেন্নাইয়ের ‘ফাইন আর্টস সোসাইটি’ গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে গুরু বিরজু মহারাজকে সংবর্ধনা দিল। অনুষ্ঠানে মহারাজজি গাইলেন। গান গেয়ে অভিনয় করলেন, নৃত্যের ভাও দেখালেন। অনুষ্ঠানের শেষে সোসাইটির ছাত্রছাত্রীরা মুগ্ধ, ঘিরে ধরল তাঁকে। তিনিই একমাত্র শিল্পী যিনি ঠুমরি গান গলায় গেয়ে পায়ে কথকের বোল তুলতে পারতেন। আর একবার শিষ্যা অনিতা রত্নম তাঁকে নিয়ে এলেন ‘Men In Dance’ কনফারেন্সে। ভারতীয় বিদ্যাভবনে মহারাজজির অনুষ্ঠান সবার শেষে। তাঁর ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হল, কেমনভাবে তিনি আসর মাতাবেন। নাচের বদলে তিনি শোনালেন গান। গজল, ঠুমরিতে শ্রোতাদের হৃদয় রাঙিয়ে দিয়ে শেষে তুলে নিলেন পাখোয়াজটি। অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্র আঙুলে বোল তুললেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রেক্ষাগৃহে সবাই দাঁড়িয়ে উঠেছে – standing ovation.  

কলকাতার সঙ্গে মহারাজজির নিবিড় বন্ধন, প্রাণের টান। প্রায় প্রতি বছরই আসতেন ওয়ার্কশপ করাতে। পাঁচদিনের ওয়ার্কশপ। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অনাবিল আনন্দে কয়েকটা দিন কাটাতেন। গল্পে গল্পে সময় যেত। বেশিরভাগই নিজের অনন্য জীবনের কাহিনি, যা গল্পকেও হার মানায়। শায়েরি শোনাতেন, গজল, ঠুমরি শোনাতেন। তার সঙ্গে অভিনয় শেখাতেন, মুখমণ্ডলকে ব্যবহার করে ভাবের প্রকাশ করতে শেখাতেন। সেবার ব্যারাকপুরের সুকান্ত সদনে ওয়ার্কশপ। প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি। দর্শককে বিস্ময়ের শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়ে মহারাজজির কণ্ঠে উঠে এল বাংলা গান। ‘যদি কাগজে লেখো নাম, কাগজ ছিঁড়ে যাবে…” মান্না দে-র অমর গানটি বড় মধুর হয়ে বাজল। নিখুঁত বাংলা উচ্চারণ। সুরেলা গলার মডুলেশন দিয়ে শ্রোতার অন্তরে ঢুকে পড়ছেন। ভালোবাসায় ভিজছে গান, ‘হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে।’ মহারাজজির দেওয়া সেরা উপহার। এ গানের রেকর্ডিং ডিজিটাল মাধ্যমে ধরা আছে।  

Birju Maharaj Teaching
শিক্ষার্থীদের মধ্যে আপনমনে

বিরজু মহারাজ বিদেশে অসংখ্য অনুষ্ঠান করেছেন। নিউ ইয়র্কের অনুষ্ঠানে ২০১২ সালে তাঁকে চাক্ষুষ দেখি। সে এক শরৎকাল। হেমন্তের সূচনায় গাছের পাতায় পাতায় রং লেগেছে। সে রং মনের মধ্যেও রাঙিয়ে গেল যখন শুনলাম নটরাজ আসছেন নিউ ইয়র্ক শহরে। তিন শিষ্যশিষ্যা থাকবেন সঙ্গে। শাশ্বতী তো আছেনই, তাছাড়াও পুত্র দীপক, শিষ্যা লুনা। নৃত্যে সহায়তা করবেন। মনে আশা, মহারাজজির গলায় সুরের ছেড়ছাড় যদি কিছু শোনা যায়। প্রবীণ বয়সের অনুষ্ঠান, যেগুলি ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়া যায়, তাতে গান গেয়েছেন বেশ কয়েকবার। নিউ ইয়র্ক কি সংগীত সুধারসে বঞ্চিত হবে? দেখাই যাক!

প্রথমার্ধে শুধুই নৃত্যের সম্মোহন। বিদেশে অনুষ্ঠান বলেই বোধহয় কৌশলী, কিছুটা চমকদারী কোরিওগ্রাফি। ঘুঙুরের তোড়া বাঁধা পঁচাত্তরের বর্ষীয়ান পা দুটি কী যে জাদু করল! অভিনয় আর এক্সপ্রেশনের ভার নিয়েছে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ, বিশেষ করে দুটি কথা-বলা চোখ, বাঁকা ধনুক ভ্রূজোড়া। এদের ব্যবহার করে স্টেজে নিয়ে এলেন তারাভরা রাত, হরিণের চকিত চাহনি, সিংহের রাজকীয় দার্ঢ্য, পাখিমায়ের ডানায় লুকোনো মমতা। পায়ের কারুকাজে শোনালেন অবিকল ফোনের ডায়াল করার আওয়াজ, রিংটোন, এন্গেজড সাউন্ড ও সবার শেষে উত্তর, “হ্যালো!” বিদেশি অডিয়েন্স নিস্তব্ধ, চোখ-কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

বিরজু মহারাজের বিখ্যাত টেলিফোন তিহাই যা ‘হ্যালো’-তে এসে শেষ হয়

দ্বিতীয়ার্ধে বসলেন হার্মোনিয়ামটি কোলের কাছে টেনে নিয়ে। রিডের ওপরে দ্রুত একবার আঙ্গুল চালিয়ে পঞ্চম থেকে ধৈবত ছুঁয়ে তারসপ্তকের গান্ধার। সেখান থেকে আলতো স্পর্শ করছেন কোমল ঋষভ। এ যে ভৈরবী! মনে পড়ে যায় নবাব ওয়াজিদ আলি গাইছেন, ‘কানহা ম্যায় তোসে হরি…’

না, ভৈরবীতে কৃষ্ণবন্দনা। কৃষ্ণ তাঁর সঙ্গেই থাকেন। বহুবার বলেছেন সে কথা। যেখানেই যান না কেন, তাঁর সঙ্গী ওই দুরন্ত বালক বংশীধারী। মনে মনে এক হয়ে যান প্রাণের দেবতার সঙ্গে। সে নিবেদন, আকুতি ধরা পড়ল চারমাত্রায় বোনা সুরে। সঙ্গে তবলায় ঢিমে ঠেকা। ধরে দিলেন একটি দাদরা। ছয়মাত্রায় মাঝেমাঝেই মিশিয়ে দিচ্ছেন তবলার বোল। লয়ফেরতা করছেন অবলীলায়, দুগুণ, তিনগুণ।   হাজার হলেও তিনি যে নটরাজ, লয়েই যে তাঁর শৈশবের সিদ্ধি। শোনালেন ঠুমরি। গানের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ আর চোখের ব্যবহারে ভাবটিকে ফুটিয়ে তুলছেন। গানের আখরগুলি যেন আমাদের চোখের সামনে রূপ ধারণ করছে।

Birju Maharaj with Amjad Ali khan
তবলায় বিরজু মহারাজ (একেবারে বাঁয়ে) আর সরোদে আমজাদ আলি খাঁ সাহেব (একেবারে ডাইনে)

 বিন্দাদিন মহারাজের কথা বললেন, তাঁর দাদাগুরু। সলজ্জে শোনালেন নিজের একটু আধটু লেখালেখির কথা। কবিতায় সুর দেওয়ার কথা। বিনয়ী তিনি। কবি বিরজু মহারাজের পরিচয় দুনিয়া জানে। দুহাজারের বেশি কবিতা রয়েছে তাঁর খাতায়। বই হিসেবে আলোয় আসবে অচিরেই। হারমোনিয়ামে আবার ভৈরবীর সুর। শেষের ভৈরবী, সমাপ্তির সুর। রাতের অন্ধকার ফিকে হয়ে আসছে, ঊষার অরুণ রং ছড়িয়ে দিলেন গলার মিড়ে, স্বরের কৌশলী মডুলেশনে। অনুভূতির পাত্রটি পূর্ণ হল কানায় কানায়। চিরস্থায়ী সম্মোহন রেখে গেলেন নিউ ইয়র্কের আকাশছোঁয়া বাড়িগুলোর আনাচে কানাচে, হেঁটে যাওয়া রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে, ব্যস্তসমস্ত জনতার ভিড়ে। তিনঘন্টার আসর শেষ। আলতো করে ঘাম মুছে শিশুর সারল্যে বললেন, ““In the future, I hope there will be more time…”

সত্যিই তাই। অনন্ত কালের চক্রে তিন ঘন্টা যে একটি বিন্দুবৎ, তার বেশি তো নয়! দেওয়ার এখনো কত বাকি! হাজার শ্রোতার মনেও একই অনুরণন। কতটুকুই বা শোনা হল! “চিত্ত পিপাসিত রে, গীতসুধার তরে…” ভাবতে ভাবতে ফেরার পথে। হাডসন নদী পেরিয়ে গেল, রিয়ার ভিউ মিররে নিউ ইয়র্ক শহর পায়ে পায়ে আবছা হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতরে জেগে উঠছে ঊষার আলো, ভৈরবীর সুর আসছে আলতো চরণ ফেলে। সেই ভোরের ভৈরবীতে পাতা আছে এক গন্ধর্বের শাশ্বত আসনখানি। তার বিনাশ নেই।

তথ্যসূত্র: 

Sen, Saswati. (2013). Birju Maharaj: The Master Through My Eyes. Niyogi Books   
Jindal, Suresh. (2018). My Adventures with Satyajit Ray: The Making of Shatranj Ke Khilari. HarperCollins India  
রায়, বিজয়া. (2008). আমাদের কথা. আনন্দ পাবলিশার্স
http://www.birjumaharaj-kalashram.com/

*ছবিসূত্র: Narthaki.com, Frontline, Wikipedia, Kathakensemble
*ভিডিও সৌজন্য: Youtube

সংগ্রামী ইঞ্জিনিয়ার, পেশায় কনসালট্যান্ট। শাস্ত্রীয় সংগীত নিয়ে চর্চা। অল ইন্ডিয়া রেডিওর এ গ্রেড শিল্পী। লেখালেখির অভ্যাসও ছোট্টবেলা থেকে, বাবা-মা'র উৎসাহে। বর্তমানে কর্মসূত্রে নিউ জার্সির পার্সিপেনি শহরে বসবাস। তবে বিদেশে বসেও সাহিত্যচর্চা চলে জোর কদমে। নিউ জার্সি থেকে প্রকাশিত 'অভিব্যক্তি' ও 'অবসর' পত্রিকার সম্পাদক। এছাড়া ‘উদ্ভাস’, ‘প্রবাসবন্ধু’, টেকটাচটক, ‘গুরুচণ্ডা৯’, 'ইত্যাদি ই-ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখিকা।

One Response

  1. আমরা আমাদের অজ্ঞতা, শৈল্পিক বোধ হীনতায় বা কিছুটা‌ অতীত কে ভুলে থাকা… এসব কারনে এইসব মহান শিল্পী দের বিস্মৃতির আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিই । উদাহরণ দেয়া যায় অনেক । বিরজু মহারাজ জী প্রয়াত হবার পর আমরা ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌তাই করবো বোধহয়। কিন্তু, কি অসাধারণ শিল্প শৈলী উনি রেখে গেছেন তার হয়তো মূল্যায়ন হবে বহুদিন পর। বেঁচে থাকুন মহারাজ জী, অন্তত এই অন্ধকার পূতি গন্ধ ময় ভারতে আলো জ্বালিয়ে রাখুন আমাদের জন্য ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com