banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

কবিতার সঙ্গে বসবাস – ঝিলম ত্রিবেদীর কবিতা

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Poetries of Barnali Koley

এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে, অর্থাৎ ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যাঁদের লেখা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেতে শুরু করেছে, অথবা একটি দু’টি বই বেরিয়েছে – তাঁদেরই আমরা চিহ্নিত করি প্রথম দশকের কবি হিসেবে। এর ফলে একটা জিনিস বোঝা সম্ভব হয় যে, সেই সব কবিদের বয়স কীরকম ও কাব্য রচনার শুরুটি কোন সময়ে ঘটেছে।

বাংলালাইভ ডট কম থেকে যখন আমার কাছে প্রত্যেক মাসে একটি করে কলাম লেখার প্রস্তাব এল, তখন আমি কৃ্তজ্ঞচিত্তে তা গ্রহণ করলাম এবং ভাবলাম প্রথম দশকের কবিরা তো এখনও তেমন ভাবে প্রতিষ্ঠা পাননি, তাহলে আমি তাঁদের কবিতার সঙ্গে বৃহত্তর পাঠক সমাজের একটু পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি না কেন?

[the_ad id=”266918″]

আমি এই নতুনদের বইপত্র সংগ্রহ করে দেখার চেষ্টা করি, কোথায় কোথায় কবিত্বের উন্মেষ প্রকাশ পাচ্ছে। পৃষ্ঠা উল্টে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যাই তেমন উন্মেষ–আলোক। যেমন এই কয়েকটি লাইন পেলাম একটি কবিতায়–

চারিদিক
ধূধূ
তোমার চোখের মতো
ভেঙে যাওয়া সন্তানের মতো
চারিদিক
শুধু

এই লাইনগুলি একটি কবিতার প্রথম স্তবক। এখানে ‘ভাঙা সন্তানের মতো’ বাক্যটি আমার ভিত পর্যন্ত নাড়িয়ে দিল। এই কবি এক নারী-কবি। নারী-কবির রচনায় “ভাঙা সন্তানের মতো” কথাটি পেয়ে আমার নষ্ট ভ্রূণের ধারণা এল মনে। তা ছাড়া এই উদ্ধৃত  লাইনগুলির মধ্যে পংক্তি-সন্নিবেশ এমন ভাবে করা হয়েছে, যে তার ভেতরে জমাট এক অশ্রুধারা যেন শিলীভূত প্রস্তরখণ্ডের মতো ভার নিয়ে অবস্থান করছে। এই কবির আর একটি কবিতা দেখা যাক এখন। এবার কিন্তু পুরো কবিতাটিই তুলে দিচ্ছি আমি। কবিতাটি এই রকম:

রসায়ন

“কেমিস্ট্রি পড়াব ওকে” –

সন্তানতুল্য এক সন্ধ্যাবেলায়
একথা সে বলে চলে গেল

আমি তার পথের রেখায় চেয়ে দেখি…

সারারাত অঙ্ক কষছে একা পাখি
সোনামুগ ডাল থেকে ভেসে আসছে বাবার দু’চোখ-

“মেয়ে আমার বড় হোক
তুলসী পাতার মতো হোক…

সন্ধ্যায় সাঁঝভরা হাত
হাতের তালুর মতো প্রদীপের রাত
জ্বেলে যাক লালপাড় শাড়ি –
মেয়ে আমার নারী হোক, নারী।“

চোখ আমার ধুয়ে যায়
দেখি –

মেয়ের ছায়ার পাশে বাবার ছায়াটি দুলে ওঠে…

বাবার রসের ধারা মেয়ে আঁকে খাতার পাতায়…

আমি এই নতুনদের বইপত্র সংগ্রহ করে দেখার চেষ্টা করি, কোথায় কোথায় কবিত্বের উন্মেষ প্রকাশ পাচ্ছে। পৃষ্ঠা উল্টে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যাই তেমন উন্মেষ–আলোক।

এই মায়াভরা লেখায় একটি অপ্রকাশিতের আবির্ভাব ঘটেছে কবিতাটির এক অংশে।
“মেয়ে আমার বড় হোক / তুলসিপাতার মতো হোক…”

মেয়ে আমার বড় হোক এই কথাটি খুবই স্বাভাবিক একটি বাক্য। কিন্তু, তুলসিপাতার মতো হোক? এই প্রয়োগ তো অকল্পনীয় ভাবে মর্ম স্পর্শ করে যায়! কবিতার নাম ‘রসায়ন’। নিতান্ত সাধারণ একটি কথা দিয়ে এই কবিতাটির সূচনা হল। কী কথা?না, “কেমিস্ট্রি পড়াব ওকে।” বাবা নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ বিষয়ে এমন কথা বলতেই পারেন। কিন্তু সেই ‘রসায়ন’ নামের কবিতা কোন অনির্বচনীয়ের কাছে পৌঁছল? ‘বাবার রসের ধারা মেয়ে আঁকে খাতার পাতায়…’ অর্থাৎ বাবাকে বিষয় করে মেয়েটি কবিতার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। তাহলে বাবা কি আর ইহজগতে নেই? সেই নারী কি পিতৃহীনা? এমন সংশয়ে দুলে ওঠে কবিতাটি।

jhilam Tribedi
ঝিলম ত্রিবেদীর কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি – লেখকের সৌজন্যে

এই কবির নাম ঝিলম ত্রিবেদী। ঝিলমের আরও একাধিক কবিতায় স্নেহময় পিতার ধারণাটি দেখতে পাওয়া যায়। এই কবির “বৃষ্টি পড়া বাড়ি“ নামক কবিতার বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় চোখ রাখলে। বইটি প্রকাশ করেছেন প্রতিভাস প্রকাশন। একটি কবিতার নাম “এলি…”।  সেই লেখা থেকে কয়েকটি লাইন বলছি এখন:

বাবার মতন বুক তোর
ঘাস জেগে থাকা
নদী জেগে থাকা
দিগন্তে আতুর সেই পাখিটির ক্ষীণ জেগে থাকা

কণ্ঠার হাড়ে যেন দোল খাই
শীত শীত ভোর
সাইকেল নিয়ে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে বাহুডোর…

ছুটে গেলে চকোলেট
ছুটে গেলে কমলা বরফ
তুই ঠিক বাবা-রোদ
বালিকা-বিদ্যালয় ছুটি

কেন আজ এলি না রে,
দিন গেল অপেক্ষা করেই!

[the_ad id=”266919″]

এখানে প্রেমিকের মধ্যে পিতৃসত্ত্বাকে খুঁজে পাচ্ছে নারী–মন। “বাবার মতন বুক তোর, ঘাস জেগে থাকা।“ এই লাইনে কি স্পষ্ট হয় এই ইঙ্গিত, যে এই নারীর বাবার বক্ষদেশ হালকা রোমাবৃত ছিল?এঁর প্রেমিকের বুকেও মসৃণ রোমের উদ্গম অনুমান করা যায়। সাইকেল হাতে নিয়ে যে-প্রেমিক সাধারণত দাঁড়িয়ে থাকে, তার হাতের জায়গায় কী চমৎকার ভাবে প্রয়োগ করা হল ‘বাহুডোর’ শব্দটিকে। বাবার সঙ্গে প্রেমিকের সাদৃশ্য এরপর স্পষ্টই ঘোষণা করে বলে দেওয়া থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করতে আর সক্ষম হয় না মেয়েটি। ফলে কবিতায় লেখা হয় “তুই ঠিক বাবা-রোদ।” অনিন্দ্যসুন্দর একটি শব্দ এই বাবা-রোদ। এমন শব্দ, বাবা-রোদ, রোদের এমন উপমা আমি অন্তত বাংলা কবিতায় আর কোথাও দেখিনি। কবিতাটি সোজাসুজি ভাবে বললে একটি নিটোল প্রেমের কবিতাই। কিন্তু বাবাকে কবিতাটি যে ভাবে ছুঁয়ে আছে, তাতে একথা আমাদের মনে না হয়ে পারে না, বাবার জন্য এই কবির কবিতায় একটি হাহাকার যুক্ত হয়ে রয়েছে। বাবার জন্য গভীর এক অভাববোধ।

মায়ের কথাও এসেছে এই কবির কবিতায়। দু’টি লাইন বলি:

আল্পনা দিচ্ছে মা
একাকিত্বের রং দিয়ে

মা কী দিয়ে আল্পনা দিচ্ছেন? একাকিত্বের রং দিয়ে। এখানে আবারও পিতার না-থাকার অসহায় বেদনা যেন ফুটে উঠল মেয়ের লেখায়।

এই কবির আর একটি কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন আমি পাঠকের জন্য উদ্ধৃত করছি:

…সে একা পাশের ঘরে লেপমুড়ি দিয়ে শুয়েছিল
শুনল
ডাক
সে ডাকল তার নাম ধরে-
ছাদে উঠে গেল নূপুরেরা

ছাদ

সেই দূর দারোয়ান কাকার ভজন

এক ফালি লোডশেডিং

ছায়া ঘিরে আসা শরীরে

সে আর সে

তারা-

কতক্ষণ চুপ করে ঠায়
কাজল মেশানো জল
টলটল করে এ পাড়ায়…

ছাদে উঠে এসেছে একা মেয়ে তার প্রেমিকের ডাক শুনে। ‘মেয়ে’ কথাটি কিন্তু বলা হয়নি কবিতার কোথাও। বলা আছে, “ছাদে উঠে গেল নূপুরেরা।“ অর্থাৎ মেয়েটির পায়ে নূপুর পরা। এখানে “সে আর সে” এই লাইনটির উপরে একটি স্পেস, নিচে একটি স্পেস। এই স্পেসের সংস্থাপন তাদের মিলিত নির্জনতা বোঝতে খুবই সফল হয়েছে। তারপরে  যে লাইনটি একটি মাত্র শব্দ দিয়ে তৈরি হল সেই শব্দটি হচ্ছে ‘তারা’। এই ‘তারা’ শব্দটির উপর-নিচেও একটি করে স্পেস ব্যবহার করা হয়েছে। কবিতায় শুধু শব্দ প্রয়োগ করাই কবির ক্ষমতার পরিচয় বহন করে না, কবিতায় স্পেস প্রয়োগ করাও কবির সামর্থের এক পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় সুন্দর ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন ঝিলম ত্রিবেদী।

[the_ad id=”270084″]

নিস্তব্ধ শীতের সন্ধ্যা আরও নিস্তব্ধ হয়ে আসে “দারোয়ান কাকার ভজন” কথাটির মধ্যে দিয়ে। “দারোয়ান কাকার ভজন” কথাটি একটি নতুনতর পরিবেশ কবিতাটির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। যেন ছাদের নিস্তব্ধ সন্ধ্যা আরও নিস্তব্ধ হয়ে এল দূর থেকে আসা দেশোয়ালি সুর শুনে। তারা দু’জন, ছেলেটি আর মেয়েটি শীতের সন্ধ্যার ছাদে সম্পূর্ণ একা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে কোনও কথা হচ্ছে না। তারা নীরব। এই নীরবতা বড় অপূর্ব ভাবে ফুটেছে কবিতার এই অংশে।

এর পরে যে লাইনটি আছে, তার সৌন্দর্য্য অতুলনীয়। ব্যাখ্যার অতীত। এই লাইনটি হল, “কাজল মেশানো জল টলটল করে এ পাড়ায়…”। ছাদে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে কোনও কথা নেই। দূর থেকে দারোয়ান কাকার ভজন ভেসে আসছে এবং কাজল মেশানো জল টলটল করছে এ পাড়ায়। এই রকম কবিতা পড়লে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে হয় বই বন্ধ করে। মনে হয়ে আমি সেই অবস্থাটা আরও কিছুক্ষণ অনুভব করি।

[the_ad id=”270085″]

আবারও মায়ের প্রসঙ্গে আসি। মায়ের কথা ঝিলম ত্রিবেদীর অন্য কবিতার মধ্যেও প্রবেশ করেছে। একটি সম্পূর্ণ কবিতা দেখা যাক:

বিকেলবেলা

একা চুপ করে থাকতে থাকতে
ঘনিয়ে আসে পাড়া

ওরা এসে কল খুলে দিল খুব জোরে
বিকেলের জল –

জলেরও বিকেল থাকে তবে!

মায়েরা মায়ার মতো হয়ে ওঠে এই একটা সময়
ছাদ থেকে তুলে আনে বলিরেখা
বিষাদের চিহ্ন আঁকে চোখে
কপালে প্রদীপ জ্বেলে রাখে
মায়েরা বিকেল হয়ে যায়

সুর করে কারা যেন নামতা পড়ছে…

দুইয়ের ঘরের পরে দুঃখ এল বুঝি
আমার না-জন্মানো মেয়েটার ঠোঁটের মতন?

এই কবিতাটিতে এই তরুণী নারী-কবি একই সঙ্গে কয়েকটি চমকপ্রদ ও বেদনাময় আশ্চর্যের সহবাস ঘটিয়েছেন। মিউনিসিপ্যালিটি থেকে সারা দিনে কয়েকবার নির্দিষ্ট সময়ে রাস্তার কলের জন্যে জল পাঠানো হয়। সকালে যেমন রাস্তার কলে জল আসে, বিকেলেও তেমনি ধরা-বাঁধা একটি সময়ে জল নেওয়ার জন্য কলের কাছে পাড়ার মহিলারা আসেন। তেমন ভাবেই জলের শব্দ শোনা গেল বাইরে থেকে এক বিকেলে। এখানে একটি আশ্চর্যকে উপহার দিলেন আমাদের কবি: ‘জলেরও বিকেল থাকে তবে!’

[the_ad id=”270086″]

বিকেল বেলা মিউনিসিপ্যালিটির কলে জল আসে, এই দৃশ্য আমাদের সকলেরই চেনা খুব। ‘জলেরও বিকেল থাকে তবে’— এমন কথা কেউ কি আমরা ভেবে দেখেছি কখনও? কবিই এমন করে ভাবতে পারেন। এর পরে আমরা দেখতে পাই, “মায়েরা বিকেল হয়ে যায়” এই অবাক-করা লাইনটি। অর্থাৎ কবিতাটি আরও এক স্তর এগিয়ে এল। এক বিষাদময়ী মা-কে প্রায়-নিরুচ্চারে মাঝে মাঝেই তাঁর কবিতায় নিয়ে এসেছেন কবি ঝিলম ত্রিবেদী। ওদিকে কবিতাটিও বিকেল পার হয়ে সাঁঝবেলার কাছে পৌঁছে যায়। পাশের বাড়ির শিশু পড়তে বসেছে শোনা যাচ্ছে তা-ও। “কারা যেন সুর করে নামতা পড়ছে…” সেই স্বর ভেসে আসছে এ বাড়িতে পড়শি-ঘর থেকে। এর পরই রয়েছে দুটি অমোঘ লাইনের উপস্থিতি:

দুইয়ের ঘরের পরে দুঃখ এল বুঝি
আমার না-জন্মানো মেয়েটার ঠোঁটের মতন?

একের ঘরের নামতা মুখস্থ করার পর যে দুইয়ের ঘরের নামতা মুখস্থ করছে, সে পড়ুয়া নিশ্চিতভাবেই কোনও শিশু হবে। কিন্তু দুইয়ের ঘরের নামতার উল্লেখে “দু” অক্ষরটির অনুষঙ্গে কবি এখানে নিয়ে আসেন “দুঃখ” শব্দটিকে। এ এক আশ্চর্যের উপস্থাপন। কিন্তু কবিতার শেষ লাইনটি আমাদের বেদনা-স্তম্ভিত করে দেয় একেবারে। “আমার না-জন্মানো মেয়েটার ঠোঁটের মতন”—এই লাইন যে আসতে পারে, আমরা সে কথা কল্পনাও করিনি।

বাবার সঙ্গে প্রেমিকের সাদৃশ্য এরপর স্পষ্টই ঘোষণা করে বলে দেওয়া থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করতে আর সক্ষম হয় না মেয়েটি। ফলে কবিতায় লেখা হয় “তুই ঠিক বাবা-রোদ।”

আমি আজকের এই কলামটি লেখার একদম শুরুতে একটি লাইন উদ্ধৃত করেছিলাম, যে লাইনটি বলেছিল “ভাঙা সন্তানের মতো” কথাটি। তখনই কোনও নষ্ট ভ্রূণের অনুষঙ্গ  হানা দিয়েছিল সেই কবিতা-পংক্তি থেকে আমার মনে। এখানে, বইয়ের এই ‘বিকেলবেলা’ কবিতাটিতে পৌঁছে সে-আশংকা পুরোপুরি সত্য এক হৃদয় ছিন্ন করা কবিতার লাইনে এসে পৌঁছে গেল। মনে রাখতে হবে, এই কবিতাটিতে কবির নিজের মায়ের প্রসঙ্গও কিন্তু এসেছে। যে-মা বিষাদের চিহ্ন আঁকেন চোখে, যে-মা বিকেল হয়ে যান। সেই আপন মায়ের প্রসঙ্গ ছুঁয়ে কবিতাটি তার গন্তব্যে  গিয়ে যখন দাঁড়াল, আমরা দেখলাম কবির যন্ত্রণা তাঁর নিজের না-হওয়া সন্তানের জন্যও। অর্থাৎ কবিও এখানে একজন মা, যাঁর সন্তান জন্ম নিতে পারেনি। যদি তাকে নষ্ট করা না হত, তবে এত দিনে সেই সন্তানও নিশ্চয়ই শৈশবে পৌঁছত। সে-ও নিশ্চয়ই একের ঘরের পরে দুইয়ের ঘরের নামতা পড়া শিখত তার কচি ঠোঁট নিয়েই।

[the_ad id=”270088″]

কবিত্বের উন্মেষ-পর্বেই ঝিলম ত্রিবেদী তাঁর কবিতায় আমাদের আশ্চর্য করে দিয়েছেন। যদি তিনি একাগ্র থাকেন, নিজের লেখার মনোনিবেশকে বাইরের জগত দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হতে না-দেন, তাহলে এই কবিত্বের ঊষাকাল থেকে তিনি একদিন কবিতার মধ্যাহ্ন-সময়ে পৌছবেন, এই আস্থা ঝিলমের প্রতি রাখা যায়। আমি একদম শেষে ঝিলম ত্রিবেদীর একটি কবিতা পাঠকদের কাছে তুলে দিয়ে আমার এই লেখা সম্পূণ করব, পাঠক নিশ্চয়ই আমারই মতন মুগ্ধ হবেন এই তথ্য জেনে  যে সাত মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ঝিলমের দক্ষতা কত নিখুঁত। কবিতাটি এই রকম:

অবৈধ

ফুরনো শহরের
পুরনো লোকজন
হারানো চিরুনির মতো
চিঠিতে আর খামে
আতুর রাত নামে
তুমিও জলসম্মত।

মোরে তো চেনো নাই
তবুও ডেকেছিলে
ভাগের বাদামের কাছে
পার্শ্বে কে বা ছিল
লাজুক সধবাটি
তোমারে ছাড়া সে কি বাঁচে?

দেখেছি দূর থেকে
থেকেছি দূরে দূরে
ঠোঁটে এঁকেছি ভর্ৎসনা
হৃদয়ে দৃকপাত
করেছি এত দিন
এখন আর করব না

নদী ও অক্ষর
ধুলে কি মুছে যায়
এস না তীর ধরে হাঁটি

আমার শাড়িটির
লগ্ন ফুলে আজও
তোমারই বাগানের মাটি!

জয় গোস্বামীর জন্ম ১৯৫৪ সালে, কলকাতায়। শৈশব কৈশোর কেটেছে রানাঘাটে। দেশ পত্রিকাতে চাকরি করেছেন বহু বছর। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দু'বার - ১৯৯০ সালে 'ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?' কাব্যগ্রন্থের জন্য। ১৯৯৮ সালে 'যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল' কাব্যোপন্যাসের জন্য। ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি পুরস্কার। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন কবিতার সাহচর্যে। ২০১৫ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি.লিট পেয়েছেন।

15 Responses

  1. অসামান্য আলোচনা! আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে এমন সব পংক্তিমালা আমাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দিলেন বাংলা লাইভ এবং ঝিলম নামের মেয়েটি। আজ খুব আনন্দে সে আমাকে বলেছে, ” মৌসুমীদি জয়দা আমার কবিতার আলোচনা করেছেন!! ”
    রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর পড়লাম। এমন করেও ভাবা যায়! এমন করেও লেখা যায় শ্রাবণের বৃষ্টির মতো হৃদয় ভাসিয়ে।
    ভালবাসা ও শ্রদ্ধা প্রিয় কবি জয় গোস্বামীকে। ভালবাসার ভাগ রইলো ঝিলমের জন্যেও। জয় হোক

  2. ঋদ্ধ ও হৃতবাক হলাম। নবীনার কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে বিরহী নুপূর, মাতৃবিকেলের ধূ-ধূ ছাদ… এক নতুন মন পড়ার অভিজ্ঞতা হল প্রাজ্ঞ কবি জয় গোস্বামীর সৌজন্যে। বাংলালাইভ ডট কমকে ধন্যবাদ। ঝিলম ত্রিবেদীকে শুভেচ্ছা।

  3. ঝিলমের কবিতা আমাকে টানে বরাবর। আটপৌরে শব্দে গ্রন্থিত প্রেম, প্রতিবাদ, স্মৃতি, অভিমান কী সুন্দর প্রকাশিত হয়।
    ‘বাবা রোদ’ মেখে সাবলীল তার চলা, মায়ের আলপনা র পাশে।

  4. ঝিলমের কবিতার সঙ্গে আমার আলাপচারিতা অল্প হলেও গভীর। প্রতিটা ছত্রেই পাই সাহসী শব্দ সম্ভার। অসম্ভব কল্পনা বিস্তার। প্রতিবাদ মুখর ঝিলম যখন বিষন্ন, তখন তার রূপ অন্য মাত্রা পায়। আজকের দিনের এগিয়ে থাকা কবি। কবিকে জানাই স্বতঃস্ফূর্ত অভিনন্দন।
    আলোচক কবিকে যথার্থ বর্ননা করেছেন। অসাধারন আলোচনা। যে পঙক্তি গুলিকে তুলে এনেছেন তা মনিমুক্তায় সাজানো অলঙ্কার।

  5. আলোচনাটি সুন্দর তো অবশ্যই, কিন্তু কিছু না-পড়া অসামান্য কবিতা ও কবিতা-পংক্তির সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য সবটাই আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আলোচককে প্রণাম আর কবিকে অনেক শুভেচ্ছা ও মুগ্ধতা

  6. আলোচনাটি সুন্দর তো অবশ্যই, অধিকন্তু, না-পড়া অসামান্য কিছু কবিতা ও কবিতা-পংক্তির সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য সবটাই আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আলোচককে প্রণাম আর কবিকে অনেক শুভেচ্ছা ও মুগ্ধতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com