banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি, পাখির ডাকে জেগে

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Lata Mangeshkar

আমার শোনা প্রথম দু’টি বাংলা গান, ‘এক বার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি,’ আর ‘নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থ পাখিরা।’ সেই কারণেই তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভাবতাম লতা মঙ্গেশকর কোনও বাঙালি গায়িকার নাম। অনেক পরে, ময়দানের বইমেলায় কত বার শুনেছি ‘ও পলাশ, ও শিমুল।’ আবার ১৯৮৯ সালে বাবা যখন নিয়ে এলেন সদ্য প্রকাশিত ‘সিক্সটি ইয়ার্স, সিক্সটি সংস’এর ফোর-ক্যাসেট প্যাক, পড়াশোনা মাথায় উঠল। 

আমার কথা থাক। সাতের দশকের মাঝামাঝি। ছোট পিসিকে দেখতে এসেছে পাত্রপক্ষ। তাঁরা গান গাইতে বলায় তিনি ধরলেন, ‘বইয়াঁ না ধরো, বলমা।’ কয়েক বছর এগিয়ে আসি। একটি রিয়ালিটি শোতে সঞ্চালক প্রতিযোগীকে বললেন, ‘পিয়া তু অব তো আজা’ ছেড়ে অন্য কোনও ক্যাবারে সং গাইতে। শিল্পী গাইলেন, ‘আ জানে জাঁ।’ আবার অন্য একটি রিয়্যালিটি শোয়ের ভক্তিমূলক বিভাগে এক প্রতিযোগী শোনালেন ভজন, ‘ও পালনহারে, নির্গুণ অওর নেয়ারে।’

সদ্য শেষ হওয়া প্রজাতন্ত্র দিবসের ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’ কুচকাওয়াজে দেখলাম গান্ধীজির প্রিয় ‘অ্যাবাইড উইথ মি’র জায়গায় দেশাত্মবোধক ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো’ বাজতে। আসলে লতা মঙ্গেশকরের ন’দশকের জীবনের আট দশক জুড়ে রয়েছে শুধুই গান। তাই গায়িকা শুভমিতা বললেন, ‘লতাজি ছাড়া ভারতকে তো ভাবাই যায় না। আমার অনুভবে তিনি এতটাই রয়েছেন যে নিজের অবচেতনে কখন তাঁর প্রভাব এসে গিয়েছে, বুঝতেই পারিনি। বলতে পারেন, তাঁর গান আমি গিলি।’

এ বার চলুন প্রবাদপ্রতিম শিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফেরা যাক ১৯৫৭ সালের বোম্বে (এখন মুম্বই) শহরে। সেখানে মেট্রো মারফি কনটেস্ট জেতার পর কিশোরী আরতি মান্না দে’র কাছে আবদার করলেন, ‘লতাজির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিন। আমার কাছে তো বোম্বে মানেই লতা মঙ্গেশকর।’ সেই সুযোগ এল শীঘ্রই, মেহবুব স্টুডিয়োতে। মান্না দে বললেন, ‘লতা এই নাও, এই মেয়ে পাগল তোমার জন্য যে।’ ঠিক এক বছরের মধ্যে, ‘সাহারা’ ছবিতে ভরত ব্যাসের কথায় আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে লতা ও আরতি দ্বৈতকণ্ঠে গাইলেন ‘বিল্লি বজায়ে বাজা।’

Lata Mangeshkar Sibling
ভাইবোনেদের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর

লতা মঙ্গেশকরের জন্ম বর্তমান মধ্যপ্রদেশের ইন্দৌরে, ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। অথচ তাঁর জীবনের প্রথম কুড়ি বছর কাজী নজরুলের গান, ‘সকালবেলার আমির রে ভাই, ফকির সন্ধ্যাবেলা’র প্রতিচ্ছবি। লতার বাবা মাস্টার দীননাথ মঙ্গেশকর, মা শিবন্তী মঙ্গেশকর। দীননাথ ছিলেন সে যুগের মারাঠি রঙ্গমঞ্চের বিখ্যাত গায়ক-অভিনেতা। তাঁদের দোতলা বাড়িতে ছিল মোট ১৩টি ঘর। মেয়েবেলায় লতা কখনও রাগ করে চিনেমাটির কাপ-ডিশ ভাঙলে, দীননাথ স্ত্রীকে বলতেন, ‘আহা, থাক না। বোকো না ওকে।’ 

১৯৪২ সালে দীননাথের অকালমৃত্যু এক সময়ের সচ্ছল পরিবারকে ঘোর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। মা এবং চার ভাইবোন, হৃদয়নাথ, মীনা, আশা এবং ঊষার দায়িত্ব এসে পড়ে কিশোরী লতার উপর। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি মাস্টার বিনায়কের (অভিনেত্রী নন্দার বাবা) প্রফুল্ল পিকচার্স-এ মারাঠি ছবির অভিনেত্রী হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৪৫ সালে মাস্টার বিনায়ক মুম্বইয়ে এলে, লতাও সপরিবার সেখানে চলে আসেন। এখানেই তিনি মার্গসঙ্গীতের তালিম নেন, প্রথমে আমন আলি খান ভেন্ডিবাজারওয়ালে এবং পরে আমানত খানের কাছে। ১৯৪৭ সালে মাস্টার বিনায়কের মৃত্যুর পর নতুন করে জীবিকার সন্ধানে বেরোতে হয় লতাকে। এই পর্বে তাঁকে সাহায্য করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক গোলাম হায়দর।

Lata Mangeshkar
মুম্বই এসে মার্গসঙ্গীতের তালিম নেন লতাজি

তখন ফিল্মিস্তানের ব্যানারে তৈরি হচ্ছিল হিন্দি ছবি ‘শহিদ।’ হায়দরের পরামর্শে সেখানে অডিশন দেন লতা। কিন্তু সংস্থার কর্ণধার শশধর মুখোপাধ্যায় সরাসরি বলে দেন, ‘বড্ড পাতলা গলা। চলবে না।’ উত্তরে হায়দর বলেন, ‘মুখার্জি সাহাব, দেখে নেবেন একদিন এই মেয়ের দুয়ারে প্রযোজকদের লাইন পড়বে।’ হাল ছাড়েননি গোলাম হায়দর। ১৯৪৮ সালে তাঁরই সুরে ‘মজবুর’ ছবিতে ‘দিল মেরা তোড়া’র মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করলেন লতা। ঠিক পরের বছর, খেমচন্দ প্রকাশের সুরে ‘মহল’ ছবিতে ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ শুনে লতা-আবেগে ভেসে গেল গোটা দেশ।

১৯৫২ সালে ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা। ফিল্মিস্তানের প্রযোজনায় তখন নির্মিত হচ্ছে ‘আনন্দমঠ।’ সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় জেদ ধরলেন, ‘বন্দেমাতরম’ গানটি লতাকে দিয়েই গাওয়াবেন। শশধর মুখোপাধ্যায় জোরের সঙ্গে বললেন, ‘ও এখানে আসবে না।’ কিন্তু শুধু হেমন্তর অনুরোধে, ফিল্মিস্তানে এসে গীতা বালির লিপে লতা গাইলেন সেই কালজয়ী গান। একই বছর লতা প্রবেশ করলেন বাংলা গানের জগতেও। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘বৌ-ঠাকুরানির হাট’ ছবিতে তিনি গাইলেন দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত, ‘শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা’ এবং ‘হৃদয় আমার নাচে রে।’ এর পরই হেমন্তর সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে মুক্তি পায় ‘মধুগন্ধে ভরা’ এবং ‘তোমার হল শুরু।’ ১৯৫৬ সালে পবিত্র মিত্রের কথা ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘আকাশপ্রদীপ’এর সন্ধান পেল বাঙালি। 

অমর জুটি – লতা মঙ্গেশকর, নচিকেতা ঘোষ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

বেসিক ও ছায়াছবির গানে হেমন্তর পাশাপাশি আর এক বঙ্গসন্তানের সঙ্গেও জুটি বাঁধলেন লতা। তিনি সলিল চৌধুরী। অসংখ্য বেসিক গানের পাশাপাশি, লতা-সলিল জুটি চূড়ান্ত সফল ‘মুসাফির, মধুমতী, মর্জিনা আবদাল্লা’ ও ‘কবিতা’র মতো ছবিতেও। এই প্রসঙ্গে সলিল কন্যা অন্তরা চৌধুরী বললেন, ‘লতাজি আমার কাছে ধ্রুবতারা।  আমার বাবার মতো তিনিও তাঁর কাজের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন। এঁদের যুগলবন্দিতে প্রতিটি গানই হিট, ঠিক মুক্তোর মতো। বাবা বলতেন, ‘হেমন্তবাবু সঙ্গীতের ঈশ্বর হলে, লতাজি সাক্ষাৎ সরস্বতী।’ ২০১৩ সালে ‘সলিল রচনাসংগ্রহ’র মুখবন্ধ লেখার অনুরোধ নিয়ে যখন লতাজির কাছে যাই, তখন তিনি কিছুটা মজা করে বলেছিলেন, ‘আমার মতো করে কেউ তোমার বাবার গান গায়নি, বলো?’  

অন্তরা জানালেন, তাঁর বাবা আর লতাজির জুটির চমৎকার উদাহরণ ১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মায়া’ ছবিতে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘অ্যায় দিল কহাঁ তেরি মঞ্জিল’ গানটি। সেখানে আগাগোড়া হামিং করেছিলেন লতাজি এবং সেটি গানে একটা অন্য মাত্রা এনে দেয়।’ আর একটি ঘটনাও মনে পড়ে অন্তরার। সেটা মধ্য-সত্তর। মুম্বইয়ের ওয়েস্টার্ন আউটডোর স্টুডিয়োতে রেকর্ডিং চলছে ‘আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের’ গানটির। স্কুল ছুটির পর অন্তরাও সেখানে হাজির। বাকিটা তাঁর বয়ানেই শোনা যাক। ‘রিহার্সালের সময় দেখলাম, লতাজি মাইকের সামনে এত আস্তে গাইছেন যে প্রায় কিছুই শোনা যাচ্ছে না। অথচ ফাইনাল রেকর্ডিংয়ের সময় ওয়ান-টেক ওকে হয়ে গেল। এর থেকে শিখলাম, মহড়ার সময় নিজের সবটা দিতে নেই। সেটা রাখতে হয় শেষকালে।’ 

পাঁচ ও ছ’য়ের দশকের হিন্দি ছবিতে, যখন লতা খ্যাতির শীর্ষে, তখন বেশিরভাগ গীতিকারই ছিলেন উর্দুভাষী। এঁদের মধ্যে ছিলেন শাহির লুধিয়ানভি, হসরত জয়পুরি, শাকিল বদায়ুনি, কইফি আজমি এবং মজরুহ সুলতানপুরি। এর ফলে, গানের উচ্চারণ ঠিক করতে লতাকে প্রচুর মেহনত করতে হয়। এর প্রেক্ষাপট জানালেন মুম্বইনিবাসী বিশিষ্ট সঞ্চালক এবং লতার সঙ্গে ১৪২ বার মঞ্চ ভাগাভাগি করে নেওয়া হরিশ ভিমানি। এক ফোনালাপে তিনি বললেন, ‘বিখ্যাত সুরকার অনিল বিশ্বাস যখন লতার সঙ্গে দিলীপকুমারের আলাপ করিয়ে দেন তখন ট্র্যাজেডি কিং মন্তব্য করেন, ‘আপনার গানের উর্দু উচ্চারণে ডাল-ভাতের গন্ধ চলে আসে।’ লতাজি এই সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবেই নেন এবং সেই থেকে প্রত্যেক গীতিকারের সঙ্গে আলাদা করে বসে উর্দু বলার অনুশীলন করেন।’ 

Lata and Salil Chowdhury
ম্যাজিকের আর এক নাম লতা-সলিল জুটি

এক সময়, লতার প্রবল ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীতজগতের দুই কিংবদন্তীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতির কারণ হয়েছিল। এর ফলে, একজনের সুরে গান গাওয়া এবং আর একজনের সঙ্গে ডুয়েট গাওয়া বন্ধ ছিল প্রায় পাঁচ বছর। সেই দু’জন, শচীন দেব বর্মণ এবং মহম্মদ রফির সঙ্গে পুনর্মিলনের সফল উদ্যোগ নেন দুই সঙ্গীত পরিচালক রাহুল দেব বর্মণ এবং জয়কিষণ। তাহলে কীভাবে প্রায় আট দশক ধরে বেঁচে রইল লতা নামের জাদু? বিশিষ্ট সঙ্গীত ইতিহাসবিদ বালাজি ভিট্টল উত্তরে বললেন, ‘তিরিশ বছরকে যদি একটা প্রজন্ম ধরি, তা হলে তিনি তিন প্রজন্মের কণ্ঠস্বর। গলা তো নয়, যেন কোনও সুরেলা বাদ্যযন্ত্র! যে ভাবে তিনি তাঁর পেশাদার জীবন সামলেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। এটা নিয়ে অনায়াসে কেস স্টাডি হতে পারে। কোনটা জনতা নেবে আর কোনটা নেবে না, এ বিষয়ে তাঁর ধারণা ছিল স্বচ্ছ।’

দুটি উদাহরণ দেওয়া যাক। কয়েক দশকের ব্যবধানে লতা প্লেব্যাক করেছেন মা ও মেয়ের জন্য। এই তালিকায় রয়েছেন তনুজা-কাজল, ডিম্পল-টুইঙ্কল, ববিতা-করিশ্মা ও করিনা কপুর। অন্যদিকে তাঁর গানে সুর দিয়েছেন বাবা ও ছেলে। এই তালিকায় রয়েছেন শচীন দেব বর্মণ-রাহুল দেব বর্মণ, অপরেশ লাহিড়ী-বাপি লাহিড়ী, রোশন-রাজেশ রোশন, চিত্রগুপ্ত ও আনন্দ-মিলিন্দ। হিন্দি প্লেব্যাক গান নিয়ে ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় একটি বই ‘গাতা রহে মেরা দিল।’ লেখক বালাজি ভিট্টল এবং অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য। সেই বইয়ের ৫০টি বাছাই করা গানের মধ্যে ১৩টি শুধু লতারই, হয় একক অথবা দ্বৈতকণ্ঠে। তাঁরা দু’জনেই লতা-ভক্ত স্বীকার করে নিয়ে, অনিরুদ্ধ জানালেন, তাঁদের ব্যক্তিগত পছন্দের পাশাপাশি এটাও ঠিক লতার গানে সুর না দিলে কোনও সঙ্গীত পরিচালকেরই সুপার ডিভিশনে ঠাঁই হত না।

দেশের স্বার্থে সব সময় এগিয়ে আসতেন লতা মঙ্গেশকর। যেমন ভারত-চিন যুদ্ধের কিছু পরে, ১৯৬৩ সালে দিল্লির রামলীলা ময়দানে কবি প্রদীপের কথা এবং সি রামচন্দ্রের সুরে লতার কণ্ঠে ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ’ শুনে মুগ্ধ হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ১৯৮৩ সালে ভারতীয় দল একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করার পর ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের অনুরোধে লতা দিল্লিতে বিনা পারিশ্রমিকে একটি অনুষ্ঠান করেন। সেখান থেকে পাওয়া ২০ লক্ষ টাকা খেলোয়াড়দের এবং টিম ম্যানেজারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।

Lata Mangeshkar
উচ্চারণ ভালো করার জন্য লতাকে আলাদা করে উর্দু শিখতে হয়েছিল

সাত দশকের সক্রিয় পেশাদার জীবনে লতা অসংখ্য সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন । এর মধ্যে রয়েছে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে চারটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। প্রথম বার, ১৯৫৯ সালে সলিল চৌধুরীর সুরে ‘মধুমতী’ ছবিতে ‘আজা রে পরদেশী’র জন্য।  এর পর আরও তিনবার, ‘কহিঁ দীপ জ্বলে কহিঁ দিল’ (বিস সাল বাদ, ১৯৬৩),  ‘তুম হি মেরে মন্দির’ (খানদান, ১৯৬৬), আপ মুঝে অচ্ছে লগনে লগে (জিনে কি রাহ, ১৯৭০) এর জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। ১৯৭০-এ, মুম্বইয়ের সম্মুখানন্দ হলে চতুর্থ বার ফিল্মফেয়ার সম্মান লাভ করার পর তিনি জানিয়ে দেন নবীন প্রতিভাকে উৎসাহ দিতে তিনি এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এবং তাঁর নাম যেন এই বিভাগে আর কখনও বিবেচিত না হয়। ১৯৯৩ সালে তিনি ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান। 

১৯৬৪ থেকে ১৯৮৫-এর মধ্যে মোট ১২ বার তিনি বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন-এর (বিএফজেএ) কাছ থেকে সেরা প্লেব্যাক গায়িকার সম্মান লাভ করেছেন। তিন বার সেরা গায়িকা হিসাবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার, পরিচয় (১৯৭২), কোরা কাগজ (১৯৭৫) এবং লেকিন (১৯৯০)। রাষ্ট্রীয় সম্মানের মধ্যে রয়েছে পদ্মভূষণ (১৯৬৯),পদ্মবিভূষণ (১৯৯৯) এবং ভারতরত্ন (২০০১)। রয়েছে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারও (১৯৮৯)। ২০০৬ সালে ফরাসি সরকার তাঁকে লেজিয়ঁ দ’নর সম্মান প্রদান করে।

রেকর্ডে সব থেকে বেশি গান গাওয়ার জন্য ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এর স্বীকৃতি মেলে ১৯৭৪ সালে। একই সালে দেশের বাইরে তাঁর প্রথম কনসার্ট হয় লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে। এরপর তিনি অনুষ্ঠান করেছেন আমেরিকা, কানাডা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আমেরিকা, দুবাই, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও বহু দেশে। ১৯৮৪ সালে লতার নামে পুরস্কার চালু করে মধ্যপ্রদেশ সরকার। উল্লেখযোগ্য প্রাপকদের মধ্যে রয়েছেন নৌশাদ, কিশোরকুমার, আশা ভোঁসলে, মান্না দে, রাহুল দেব বর্মণ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ভূপেন হাজারিকা প্রমুখ।

Lata Mangeshkar old
গিনেস বুকেও নাম তুলেছিলেন

১৯৯১ সালে ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনে প্রদর্শিত হয় লতার জীবন অবলম্বনে নাসরিন মুন্নি কবিরের ছ-পর্বের তথ্যচিত্র। ১৯৯২ ও ১৯৯৪ সালে, বিগতদিনের শিল্পীদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রকাশিত হয় লতার রিমেক অ্যালবাম ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি ১’ ও  ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি ২।’ এর পাশাপাশি, জগজিৎ সিংয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি প্রকাশ করেন গজল অ্যালবাম ‘সজদা।’ ভীমসেন যোশির সঙ্গে তাঁর ভজন অ্যালবাম ‘রাম শ্যাম গুণ গান’-ও সমান জনপ্রিয় হয়। ২০০১ সালে মঙ্গেশকর পরিবারের উদ্যোগ পুণেতে চালু হয় দীননাথ মঙ্গেশকর হাসপাতাল। ২০১৩ সালে এটি যখন সুপার স্পেশালিটি স্তরে উন্নীত হয়, তখন তার উদ্বোধন করেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।  

জানুয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী। ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে তিনি তাঁর ভক্তকুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। উৎসবের দিনে বা সহশিল্পীদের কোনও বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা জানাতে কখনও ভুলতেন না। তাঁরাও কখনও ভুলবেন না লতাজিকে, যিনি এক দশক আগের এক অনুষ্ঠানে চিত্রপরিচালক গুলজারের হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে বলেছিলেন, ‘মেরি আওয়াজ হি পেহচান হ্যায়।’

 

গ্রন্থ ঋণ: 
১। ইন সার্চ অফ লতা মঙ্গেশকর –  হরিশ ভিমানি
২। গাতা রহে মেরা দিল – অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য ও বালাজি ভিট্টল
ছবি ঋণ: Twitter, India Today, Indiatvnews, News18
ভিডিও ঋণ: Youtube

দু’দশক ইংরেজি সংবাদপত্রের কর্তার টেবিলে কাটিয়ে কলমচির শখ হল বাংলায় লেখালেখি করার। তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন কয়েকজন ডাকসাইটে সাংবাদিক। লেখার বাইরে সময় কাটে বই পড়ে, গান শুনে, সিনেমা দেখে। রবীন্দ্রসঙ্গীতটাও নেহাত মন্দ গান না।

2 Responses

  1. আমাদের বাংলার আরতি মুখোপাধ্যায়ের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৩ সালে। তাহলে কি মাত্র ১৫ বছর বয়েসে ১৯৫৮ সালের ‘সাহারা’ ছবিতে গান গেয়েছিলেন তিনি? আমার ধারণা যে এই ‘সাহারা’ ছবির গায়িকা আমাদের আরতি মুখোপাধ্যায় নন। আরেকজন আরতি মুখোপাধ্যায় ছিলেন বোম্বের রেডিও স্টেশনের, যিনি শঙ্কর জয়কিষণের সুরে ‘বয় ফ্রেন্ড’ (আইগা আইগা) বা হেমন্ত বাবুর সুরে ‘দো দিল’ (সারা মোরা কজরা) গেয়েছিলেন। আমাদের আরতি মুখোপাধ্যায় বোধহয় বোম্বে জান সত্তরের দশকে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চাই।

  2. আমাদের বাংলার আরতি মুখোপাধ্যায়ের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৩ সালে। তাহলে কি মাত্র ১৫ বছর বয়েসে ১৯৫৮ সালের ‘সাহারা’ ছবিতে গান গেয়েছিলেন তিনি? আমার ধারণা যে এই ‘সাহারা’ ছবির গায়িকা আমাদের আরতি মুখোপাধ্যায় নন। আরেকজন আরতি মুখোপাধ্যায় ছিলেন বোম্বের রেডিও স্টেশনের, যিনি শঙ্কর জয়কিষণের সুরে ‘বয় ফ্রেন্ড’ (আইগা আইগা) বা হেমন্ত বাবুর সুরে ‘দো দিল’ (সারা মোরা কজরা) গেয়েছিলেন। আমাদের আরতি মুখোপাধ্যায় বোধহয় বোম্বে যান সত্তরের দশকে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com