banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাঘবন্দি

আলোলিকা মুখোপাধ্যায়

আগস্ট ২১, ২০২৩

pet tiger বাঘবন্দি
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। নিউইয়র্কের হার্লেম অঞ্চলে একটা অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে বেশ কিছু পরিবার থাকে। তাদেরই মধ্যে এক বাড়িতে মা আর ছোট্ট মেয়ের মধ্যে কথা হচ্ছিল। মেয়ে মাকে এক বিচিত্র সংবাদ দিয়েছে। সে নাকি ওদের ওপরতলার একটা অ্যাপার্টমেন্টের দরজার ফাঁক দিয়ে পেল্লায় এক বাঘ দেখতে পেয়েছে।

মার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। এও কি সম্ভব নাকি? শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় হাইরাইজ বিল্ডিং-এর ভেতরে বাঘ আসবে কোথা থেকে? মেয়ে কী দেখতে কী দেখেছে! মেয়ে কিন্তু সমানেই বলে যাচ্ছে—‘হ্যাঁ, মা! একটু আগে নিজের চোখে দেখলাম। গার্লস স্কাউট কুকি বিক্রি করার জন্যে যখন সব অ্যাপার্টমেন্টের দরজায় নক করছিলাম, হঠাৎ দেখলাম একটা লোক চাবি খুলে ওর অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকল। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে বাঘটাকে দেখতে পেলাম। কার্পেটে শুয়েছিল। লোকটা তখনই দরজা বন্ধ করে দিল। ঠিক আমাদের ওপরের ফ্লোরের অ্যাপার্টমেন্টেই দেখলাম মনে হচ্ছে। 

মার মনে খটকা রয়ে গেল। তাহলে কি কেউ বনবেড়াল বা কুগারের বাচ্চাটাচ্চা পুষেছে? এদেশে তো লোকের উদ্ভট শখের অভাব নেই। অ্যাপার্টমেন্টে সাপ পুষছে। বাথটবে কুমিরছানা পুষছে। কত কিছুই তো টিভির খবরে দেখায়। নাঃ, ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে। 

খেয়াল রাখতে গিয়েই ধরা পড়ল, বাড়িতে ইদানিং বিটকেল গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। জানলা খুললেই কেমন বুনো বুনো উগ্র গন্ধ আসছে। এমনিতেই ওপরতলার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মাঝে মাঝে জল চুঁইয়ে পড়ে নিজেদের বাথরুমের সিলিং ভিজে যায়। এখন সেখান থেকে প্রচন্ড ঝাঁঝালো খয়েরি খয়েরি জল পড়ছে। বাঘের হিসি নয়তো। 

Ming of Harlem
হার্লেমের অ্যাপার্টমেন্টে পোযা বাঘ। নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ছবি।

মেয়েটির মা ওদের বিল্ডিং সুপারকে খবর দিলেন। সেও তেমনি কুঁড়ে আর ফাঁকিবাজ। গুণ্ডা মস্তানদের পাড়ায় সস্তার ভাঙাচোরা অ্যাপার্টমেন্টগুলো দেখাশোনা করার জন্যে সুপারই বা কী এমন মাইনে পায়। সেও তাই হিসির উৎস সন্ধানে উৎসাহিত হচ্ছিল না। তাছাড়া বাসিন্দাগুলোর চালচলনও তো জানে। কার অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে, তখন আবার ঝামেলা। আসলে সুপার এটুকু জানত যে পাঁচতলার ওই অ্যাপার্টমেন্টে অ্যান্টয়েন ইয়েটস নামে ঐ লোকটার একটা হিংস্র পিটবুল ডগ আছে। এছাড়া পাঁচ ফুট লম্বা ‘কেইম্যান’ (মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কুমির জাতীয় সরীসৃপ) ও পুষেছে। সুপার আসলে লোকটাকে ঘাঁটাতে চাইছিল না। 

কিন্তু বাঘের গন্ধ বাতাসে ভেসে ভেসে পুলিশের নাকে গিয়ে পৌঁছল। সেদিন অক্টোবরের চার তারিখ। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ড্রু হ্যামিলটন হাউসিং (Drew-Hamilton Houses)— এর বাসিন্দারা দেখল, গোটা পাড়া পুলিশের গাড়িতে ছেয়ে গেছে। তার সঙ্গে দমকলে ট্রাক, নিউইয়র্কের বিখ্যাত চিড়িয়াখানা ‘ব্রংকস জু’র পশু চিকিৎসকের ভ্যান সব সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

পুলিশ বাহিনী দু-তিন দিকে ভাগ হয়ে গেল। প্রথমে একদল গিয়ে পাঁচতলার ওই অ্যাপার্টমেন্টের দরজায় মস্ত একটা ফুটো করল। সেখানে চোখ রাখতেই ব্যঘ্রদর্শন। শুধু দর্শন নয়, তার গর্জন, আস্ফালন সবই শোনা যাচ্ছে। নেহাত ছোটখাটো বাঘ নয়। অন্তত চার-পাঁচশো পাউন্ডের বিশাল রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভেতরে তাণ্ডব লাগিয়েছে। কুমিরটাকে অবশ্য দরজার ফুটো দিয়ে দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে না তাদের মালিককেও। পুলিশ আসলে লোকটার অনুপস্থিতির সুযোগেই হানা দিয়েছে। 

কিন্তু পুলিশে খবর দিল কে? সত্যিই তো আর বাঘের বোঁটকা গন্ধবিধুর সমীরণে মোহিত হয়ে পুলিশ এসে হাজির হয়নি। তাদের কাছে খবর গিয়েছিল। এক ডাক্তার গোপনে থানায় ফোন করে দিয়েছিলেন। ওই যে লোকটা অ্যান্টয়েন ইয়েটস (Antoine Yates)— সে হঠাৎ দুদিন আগে পুলিশে ফোন করে বলেছিল, তার পোষা বুলডগ ভীষণরকম কামড়ে দিয়েছে। হাত-পা কেটে রক্তারক্তি! তাই পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্য চাই। পুলিশ যখন তাকে সাহায্য করতে গেল, সে তখন নীচের লবিতে বসেছিল। হাতে, পায়ে বিভৎস কামড়ের দাগ। রক্ত ঝরছে। পুলিশ কুকুরটাকে দেখবে বলে ওপরে যেতে চাইছিল। অ্যান্টয়েন রাজি হল না। তাকে তখন হার্লেম হসপিটালে ভর্তি করা হলো। তিনদিন পরে ছাড়া পেল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ বাঘ ধরতে চলে গেছে। কারণ হার্লেম হসপিটালের এক ডাক্তার পুলিশে জানিয়েছেন—অ্যান্টয়েন ইয়েটস-এর শরীরের ক্ষত পরীক্ষা করে তিনি সন্দেহ করছেন যে তাকে পিটবুল ডগ নয়, আরও বড় কোনও হিংস্র জন্তু কামড়েছে। 

একে বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। তার উপর পুলিশ ছুঁয়েছে। ডবল হয়ে ছত্রিশ রাগিনীর খেলা! অ্যান্টয়েন বাঘের খপ্পর থেকে পুলিশের খপ্পরে পড়ে গেছে। পুলিশ নাকি আরও দুটো-একটা সূত্রে খবর পেয়েছিল যে, লোকটা বাঘ পুষেছে। ওই বিল্ডিং-এ অনেক পরিবার ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে। তারা ওই হিংস্র পিটবুল-এর জন্যেও ভয় ভয় থাকত। বেআইনিভাবে হিংস্র জন্তু-জানোয়ার পুষছে সন্দেহ করেও লোকটাকে কিছু বলা যেত না। কারণ, ও পাড়ায় নিয়ম ভাঙাটাই দস্তুর। গুণ্ডামার্কা ভাড়াটেদের কেউ ঘাঁটাতে সাহস পায় না। কিন্তু পুলিশ যখন ভেতরে ভেতরে খোঁজ নিয়ে জানাল, তখন ওই ছোট মেয়েটি আর তার মা ভ্যালেরি টমপকিন্স জানাল যে, প্রায় দু-তিন মাস ধরে তারা ওপরের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিশ্রী গন্ধ পাচ্ছে। বাথরুমের সিলিং-এর ছোপধরা দাগ দেখাল। মেয়েটি পুলিশকে বারবার বলল— আমি স্পষ্ট দেখেছি, ওটা বাঘ ছাড়া কিছু হতে পারে না। 

চারতলার আর এক ভাড়াটে পুলিশকে বলল— বাঘ আছে কিনা জানি না। তবে লোকটা সাপ, কুমির, পিটবুল পোষে। জন্তু-জানোয়ার বলতে পাগল। ভয়ডরও নেই। এরপর পুলিশ আর অপেক্ষা করল না। দরজায় ফুটো করে বড়ে মিঞা দর্শন করে একেবারে অ্যাকশনে নেমে পড়ল। বাঘকে গুলি করা চলবে না। গায়ে ঘুমের ওষুধের তীর মেরে আগে ধরাশায়ী করতে হবে। পাঁচতলার ওপরের জানালায় চড়ে বসে ওইভাবে তাক করে বাঘের গায়ে তীর মারা কি সোজা কথা? সে তো বীর বিক্রমে দরজায় তার বিশাল হাঁ মুখ নিয়ে উঁকি দেয়, তো পরমুহূর্তে পাশের ঘরে ল্যাজের আছড়ানি। দরজা ভেঙে ঢোকাও যায় না। কোথা থেকে হালুম করে কোন পুলিশের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়বে, এ ঝুঁকি নেওয়া যায় না। অকুপেশনাল হ্যাজার্ডসের কেস হয়ে যাবে। 

অতএব বন্ধ বাড়িতে বন্দিবীরকে বাতায়ন থেকেই তীর মারতে হবে। বাঘের প্রচণ্ড গর্জন শুনে চারিদিকে লোক জমে গেছে। পুলিশ অফিসারের জান, মান দুই খতরার মুখে। তিনি হচ্ছেন এ ধরনের বিপজ্জনক অভিযানের উপযুক্ত স্নাইপার অফিসার। কিন্তু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে মোকাবিলার ট্রেনিং বা অভিজ্ঞতা কোনওটাই নেই। 

বাঘ ঘুরছে পাঁচতলায়। কিন্তু চারতলা থেকেই তোড়জোড় শুরু হল। নীচের অ্যাপার্টমেন্টের জানলা গলিয়ে লম্বা একটা খুঁটির মাথায় ভিডিও ক্যামেরা ফিট করে সোজা ওপরে পাঁচতলার কাচের জানলার গায়ে রাখা হলো। পাশের স্ক্রিনে বাঘের পায়চারি ছবি উঠছে। কখন, কোথায় ঘুরছে দেখা যাচ্ছে। ওদিকে সাততলায় পৌঁছে গেছে পুলিশের আর একটি দল। তারা কোমরে দড়ি পরে ওপরের জানলা থেকে ঝুলে ঝুলে পাঁচতলার ওই অ্যাপার্টমেন্টের জানলার কাছে পৌঁছবে। তারপর বাঘের গায়ে ঘুমের ওষুধ মাখানো তীর ছোড়া হবে। 

ওই যে স্নাইপার অফিসার তার নাম মার্টিন ডাফি (Martin Duffy)। তিনি এবার সম্মুখ সমরের জন্য তৈরি হলেন। কোমরে আর উরুর খাঁজে মোটা দড়ি বেঁধে নিলেন। দড়ির দোলনায় দুলতে দুলতে পাঁচতলার জানলার কাছে পৌঁছলেন। এক বগলে গুলি ভরা রাইফেল। অন্য বগলে ওষুধ মাখানো ডার্ট গান। 

এবার তীর ছোঁড়া শুরু হল। প্রথমবার ফটাশ করে শব্দ হতেই বাঘ তুমুল গর্জন করে উঠল। হুংকার শুনে নীচে ফুটপাতের লোকেদের কি রোমাঞ্চ। চিড়িয়াখানার বাইরে এরকম জীবন্ত বাঘের গর্জন জীবনে কেউ শুনেছে? বাঘটা কবে এ বাড়িতে ঢুকেছিল, কী করে সকলের চোখের আড়ালে পাঁচতলার অ্যাপার্টমেন্টে সেঁধিয়ে ছিল, লোকেরা ভেবেই পাচ্ছে না। 

স্নাইপার অফিসার বেশ কয়েক বছর ডার্ট গান ছোঁড়ার পর বাঘের তম্বি থেমে গেল। তাও নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। ভিডিও স্ক্রিনে দেখা গেল বাঘটা পেট চিতিয়ে পড়ে আছে। গুলি ভাঁটা চোখ ঘুমে আচ্ছন্ন। 

Memorial plaque of Ming of Harlem
মিং-এর স্মরণে স্মারকফলক।

পুলিশ এবার অ্যাপার্টমেন্টের দরজা খুলে ঘরে ঢুকল। চিৎপাত বাঘবাবাজি ঘুমঘোরে। পিটবুল কুকুরটা ধারে কাছে নেই। হয়তো মালিক হাসপাতালে যাবার আগে সেটাকে কোথাও পাঠিয়ে দিয়েছিল। আর সেই কুমিরটা বাথরুমের জলভর্তি বাথটবে মটকা মেরে পড়ে আছে। বাড়িতে এত কাণ্ডের পরেও তার স্থিত প্রজ্ঞ ভাব! 

ঘটনার অনেকটাই আমরা টিভির বিকেলের খবরে সরাসরি ঘটে যেতে দেখেছিলাম। যখন থেকে পুলিশের দল হার্লেমের ওই বাড়িতে হানা দিয়েছে, টিভির রিপোর্টাররাও পেছন পেছন হাজির। বাঘবন্দি করার ঘটমান বর্তমান ছবি দেখানোর জন্যে তিনটে বড় বড় টিভি চ্যানেল মেলা লোকজন নিয়ে জুটে গিয়েছিল। আমরা টিভিতেই দেখলাম কিভাবে স্নাইপার অফিসার দড়ির দোলনায় চড়ে পাঁচতলার জানলার খাঁজে পা রাখছেন। পটাপট ওষুধের তীর মারছেন। কিন্তু বাঘের গর্জন শুনতে পাইনি। পরে দেখলাম হাতে-মুখে দড়ি পরিয়ে ঘুমন্ত বাঘটাকে নীচের রাস্তায় নামানো হল। ‘ব্রংকস জু’র পশু চিকিৎসক তাকে নাকে মুখে হাত দিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। তিনি বনের পশুর এরকম বন্দিদশা দেখে খুবই ক্ষুব্ধ। প্রথমত, ওইটুকু অ্যাপার্টমেন্টে ভাঙাচোরা ফার্নিচারের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে আটকে রাখা মানে চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা। দ্বিতীয়ত, বাঘটা যদি কোনওরকমে দরজার বাইরে বেরিয়ে আসত, কোথায় কার ঘাড় মটকাতো, কে জানে? 

ওই লোকটার মতো পুলিশরাও সেদিন বাঘ আর কুমিরকে এক ঘাটে জল খাইয়ে ছেড়েছে। দুটোকেই ধরে বেঁধে নিউইয়র্কের একশো দশ স্ট্রিটের সেন্টার ফর অ্যানিম্যাল কেয়ার অ্যান্ড কন্ট্রোলে চালান করে দিয়েছিল। পরে শুনেছিলাম বাঘটাকে রাজ্যছাড়া করা হয়েছে– সে ওহায়ো স্টেটের একটা অ্যানিম্যাল কনসার্ভেশনে চলে যায় এবং সেখানেই ২০১৯ সালে সে মারা যায়।

ওদিকে তার মালিক তো “মিং মিং” করে অস্থির! হ্যাঁ, বাঘটার নাম মিং (Ming of Harlem)। অ্যান্টয়েন ইয়েটস শেষ পর্যন্ত মামলায় ফেঁসে গেছে। তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক শহর কর্তৃপক্ষ “রেকলেস এনডেনজারমেন্টের” মামলা ঠুকে দিয়েছে। কিন্তু অ্যান্টয়েনের এক বায়না— মিংকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ও আমার ভাই, প্রাণের বন্ধু। সত্যি বলতে কি মিং ছাড়া আমার কোনও বন্ধুই নেই। 

pet tiger in the US
আমেরিকায় প্রায় পাঁচ হাজার পোষা বাঘ রয়েছে।

ব্যাঘ্রবন্ধুর আবেদন, নিবেদন গ্রাহ্য হয়নি। হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে একদিন টিভির ‘ইন্টারভিউ’তে এসেছিল। বড় বড় চোখ জলে ভাসিয়ে দিয়ে বলছিল— বিনা দোষে মিংকে কেড়ে নিয়ে গেল। আমাকে তো কামড়ায়নি। খেলা করতে করতে একটু আঁচড়ে, কামড়ে দিয়েছিল…।

বাঘের মামলার ধরার জন্য সে একজন উকিল ধরেছিল। উকিলের বক্তব্য—পুলিশ থেকে অ্যান্টয়েন ইয়েটসকে ওয়ার্নিং দিতে পারত। পোষা বাঘ নিয়ে সে কী করবে, নিজেই সিদ্ধান্ত নিত। এভাবে পোষ্য আর মালিকের মধ্যে বিভেদ ঘটানো অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে। হার্লেমের ওই অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা নিশ্চয়ই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। 

এটা তো একটা ঘটনা। কিন্তু পোষা বাঘের কামড়ে কত দুর্ঘটনা আর মৃত্যু যে ঘটে গেছে, সেসব খবর কয়েক বছর আগেও মাঝে মাঝে শোনা যেত। আমেরিকায় বাঘ সিংহ কুগার ইত্যাদি হিংস্র জন্তু পোষার ক্ষেত্রে এখন অনেক বিধিনিষেধ জারি হওয়ার ফলে দুর্ঘটনার হারও কমে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়া, হাওয়াই, আলাস্কা, ইউটা, ওয়াইওমিং, কলোরাডো, নিউ মেক্সিকো, লেব্রাস্কা, ইলিলয়, টেনেসি, মিসিগান, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ভার্জিনিয়া, ডেলাওয়ার, মেরিল্যান্ড, নিউজার্সি, কানেটিকাট, রোড আয়ল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, ভারমন্ট ও নিউহ্যাম্পশায়ার রাজ্যে ব্যক্তিগত মালিকানায় হিংস্র জন্তু পোষা আইনত নিষিদ্ধ। আমেরিকার বাদবাকি রাজ্যেও ক্রমশ সেই পারমিট বা লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও আমেরিকায় বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন লোকের নিজস্ব জমি বাড়িতে প্রায় হাজার পাঁচেক বাঘ পোষা জানোয়ার হিসেবে রয়েছে। “দ্য এনডেনজার্ড স্পিশিস অ্যাক্ট”, ‘‘কনভেনশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেনজার্ড স্পিশিস” এবং ইউ.এস. সেনেটের বিশেষ আইন জারি হওয়ার পরে বিদেশের আমদানি শুধু নয়, বাঘ-সিংহ নিয়ে অন্তর্দেশীয় ব্যবসা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। সার্কাসেও বাঘ-সিংহের খেলা দেখানো বন্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র চিড়িয়াখানা আর ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি ছাড়া কোথাও বাঘ-সিংহ আমদানি করা চলবে না। পোষা জন্তু হিসাবে এরা শুধু মালিকের ক্ষেত্রে নয়, তার পরিবার আর প্রতিবেশীদের কাছেও বিপদজনক। 

পশু বিশেষজ্ঞদের মতে— বাঘ-সিংহ কখনও পোষ মানে না। লোকে হাজার হাজার বছর ধরে কুকুর, বেড়াল পুষে আসছে। তারা গৃহপালিত জন্তুর বৈশিষ্ট্য নিয়েই জন্মায়। বন্য জানোয়ার মানুষের সঙ্গে থাকার জন্য জন্মায় না। তাকে শাসন করে নিজের কবলে রাখা মানে প্রতিমুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া। সার্কাসে যারা বাঘের খেলা দেখায় তারা ক্রমাগত তাদের উত্যক্ত করে। দাপটের ওপর রাখে। দিনের পর দিন মানুষের দাপট সহ্য করতে করতে বনের হিংস্র জন্তু একদিন ক্ষেপে ওঠে। তারই পরিণাম সার্কাসের বাঘের হাতে ট্রেনারের মৃত্যু। খোঁজ নিলে এরকম বহু দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাবে। আমেরিকায় আইনের এই কড়াকড়ির ফলে, এদেশের ‘টাইগার ব্রিডার্স’ (যারা নিজেদের বাঘ বাগিচায় সুন্দরবনের বাঘ, বাঘিনীদের বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে বাঘের ছানার ব্যবসা করত)-দের ‘অল্টারনেটিভ লাইফ স্টক অকশন’-এ চড়া দামে বাঘের ছানা বিক্রি করাও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বেআইনি কাজ-কারবার একেবারে বন্ধ করা যাচ্ছে কিনা, অনুমান করা কঠিন। 

পোষ্য হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ইগুয়ানা।

শুধু বন্য জানোয়ার নয়, আমেরিকায় পোষ্য হিসেবে সরীসৃপেরও কদর আছে। কুমির, বিষাক্ত সাপ (কোরালস্পেক, কোবরা, ভাইপার. পিট ভাইপার) থেকে ঢোড়া সাপ, মস্ত গিরগিটি ইগুয়ানা, লোকে এদেরও পুষে রাখে। সেন্ট্রাল আমেরিকায় ও সাউথ আমেরিকায় এই গিরগিটির দৈর্ঘ্য ষাট ইঞ্চি থেকে সত্তর ইঞ্চির মতো হয়। সবুজ রঙের গিরগিটিই সবচেয়ে বেশি বড় হয়। যদিও এদের আয়ু নাকি চার থেকে ষাট বছর পর্যন্তও হতে পারে। কিন্তু পোষ্য হিসেবে ঠিকমতো যত্ন না পেলে বছর দুই-একের মধ্যেই মরে যায়। 

গ্রিন ইগুয়ানার খাদ্য বলতে গাছের পাতা, ফুল আর ফল। এরা দিনের বেলা গাছের ডালপালা বেয়ে লম্প-ঝম্প করে। বাগানের মধ্যে সুইমিং পুল থাকলে তো কথাই নেই। গাছের মগডাল থেকে লাফ দিয়ে ঝপাস করে সুইমিংপুলে পড়ে খুব সাঁতার দেয়। কিন্তু কেন যে লোকে কুমির ছানার মতো দেখতে সর্বাঙ্গে কাঁটাওয়ালা গিরগিটি পোষে সেটাই রহস্য। এমনিতে কামড়-টামড় দেয় না বটে। তবে ওই কন্টকময় শরীরে হাত বুলিয়ে আদর করাও তো কঠিন। সবুজ গিরগিটির আবার তৃতীয় নয়ন আছে। মাথার ওপরে থাকা সেই তিন নম্বর চোখ দিয়ে সে আলো-আঁধারের পার্থক্য বুঝতে পারে। অজানা কোনও কিছুর অস্তিত্ব অনুমান করতে পারে। 

বাঘ, সিংহ, কুগার থেকে কুমির, গিরগিটি মানুষের পোষ্য হিসেবে কে যে কাকে কাছে রাখতে চায়, সেই মানসিকতা বা আকর্ষণ বোঝা শক্ত! তবু ইগুয়ানা পোষা বেআইনি নয়। কিন্তু বাঘের ছানা বাড়িতে পোষা নিষিদ্ধ। তবু যারা পুষতে চায় তারা বরং বাঘের মাসিদের ধরে আনুক। বব ক্যাটের বদলে শুধু ক্যাট। মিং-এর বদলে মিউ মিউ করা একজোড়া হুলো আর মেনি।

ছবি সৌজন্য: Pxhere, Flickr

দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প‍র্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড‌ সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com