Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ১৭

অপরাজিতা দাশগুপ্ত

ডিসেম্বর ১৪, ২০২২

Novel Akashpradip part-17
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

প্রবাসের পটভূমিকায় লিখিত বলে উপন্যাসে ইংরিজি সংলাপ ও শব্দের বহুল ব্যবহার রয়েছে। 

আগের পর্ব পড়তে: [] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪] [১৫] [১৬]

অরুণাভ আগেও অনেকবার ভেবেছে, ইদানীং আবারও ভাবছিল, বৃন্দার সঙ্গে দেখা না হলে, তার জীবনের এই ছকটা তৈরিই হত না৷ ভারতে হয়তো অন্য জায়গায় ঘুরে চলে আসত, কিন্তু কলকাতায় যাবার কথা মনে হত না৷ বৃন্দার বার্তাবহ হয়ে ও গেছিল কলকাতায়৷ সীমন্তিনীর সঙ্গে দেখা হবার পিছনেও অলক্ষ্যে বৃন্দারই প্ররোচনা ছিল৷ 

অরুণাভ তার বন্ধুদের সঙ্গে কলেজে থাকাকালীন বেড়াতে গিয়েছিল ইস্তানবুল৷ ইস্তানবুল থেকে বাড়িতে কার্ড পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে বৃন্দাকে দীর্ঘ একটা চিঠি লিখে ফেলেছিল৷ কুড়ি-একুশের অরুণাভ মুখোমুখি যা বলতে পারেনি, চিঠিতে উজাড় করে দিয়েছিল সে সব লুকোনো কামনা বাসনা৷ বৃন্দা কোনও জবাব দেয়নি৷ ইস্তানবুল থেকে ফিরে অরুণাভ আর পারেনি৷ তখন কলেজের ছুটি শেষ হতে আর কয়েকদিন আছে৷ ফিলাডেলফিয়ার বাড়ি থেকে একদিন সোজা ড্রাইভ করে চলে গিয়েছিল বৃন্দার বাড়ি৷ সেদিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে অরুণাভর৷

বৃন্দাদি বাড়িতেই ছিল সেদিন৷ না, অরুণলেখারা বৃন্দাপিসি বলে কোনওদিনই ডাকাতে পারেননি অরুণাভকে৷ অরুণাভ বৃন্দাদি বলে ডেকে এসেছে চিরকাল৷ বৃন্দার আপত্তি ছিল না৷ বারো বছরের তফাৎ ওদের৷ এমনিতে ‘দিদি’ ডাকাটাই স্বাভাবিক৷ তাই জ্যোতির্ময়দের আপত্তি ধোপে টেঁকেনি৷ অরুণাভ অন্য সময় হলে ফোন করে যেত৷ কিন্তু সেদিন ইচ্ছে করেই ও ফোন করেনি৷ ওর মন বলছিল ফোন করে গেলে বৃন্দা কোনও একটা অজুহাত দেবে, ওর সঙ্গে দেখা না করার৷ ওদের বাড়িতে তিনজন অ্যাটেন্ডেন্ট৷ কেউ না কেউ বেরিয়ে এসে বলত- মিসেস গোল্ডস্টাইন ইজ নট ইন৷ সেজন্য চান্স নিয়েছিল অরুণাভ৷ একেবারে চলে গেলে বৃন্দা নিশ্চয়ই ওকে বাইরে থেকে ফিরিয়ে দেবে না!

পৌঁছে সদর দরজার বেল বাজিয়েছিল অরুণাভ৷ নাঃ! কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি৷ দরজা খুলে গিয়েছিল৷ ভিতরে ঢুকে লিভিংরুমে কাউকে দেখতে পায়নি ও৷ ঘরটা যেন একটু ফাঁকা ফাঁকা৷ কয়েকটা আসবাব যেন মিসিং৷ অ্যান, বৃন্দার পরিচারিকা, ওকে অনুসরণ করতে বলেছিল৷ হলঘরের বিশাল সিঁড়ি দিয়ে উঠে লবির শেষ প্রান্তের ঘরটিতে নিয়ে গিয়েছিল ওকে৷ ঘরের বিশাল বে-উইন্ডো দিয়ে বাইরের বাগানটা স্পষ্ট দেখা যায়৷ বে-উইন্ডোর সামনে একটা মেহগনি কাঠের মহার্ঘ্য আরামকেদারা৷ সেই কেদারায় একটা রেড অ্যান্ড ব্ল্যাক কাফতান পরে আধশোয়া হয়ে বৃন্দা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাগানের ফোয়ারার দিকে৷ ফোয়ারাটা কালো পাথরের, যেখানে নারী ও পুরুষ দুটি অবয়ব পরস্পরের সঙ্গে আশ্লিষ্ট হয়ে আছে৷

অরুণাভ বৃন্দাদি বলে ডেকে এসেছে চিরকাল৷ বৃন্দার আপত্তি ছিল না৷ বারো বছরের তফাৎ ওদের৷ এমনিতে ‘দিদি’ ডাকাটাই স্বাভাবিক৷ তাই জ্যোতির্ময়দের আপত্তি ধোপে টেঁকেনি৷ অরুণাভ অন্য সময় হলে ফোন করে যেত৷ কিন্তু সেদিন ইচ্ছে করেই ও ফোন করেনি৷ ওর মন বলছিল ফোন করে গেলে বৃন্দা কোনও একটা অজুহাত দেবে, ওর সঙ্গে দেখা না করার৷

বৃন্দা ঘুরে তাকিয়েছিল ওদের পায়ের শব্দে৷ অ্যানকে নির্দেশ দিয়েছিল চা করে আনতে৷ বৃন্দার টানা টানা চোখগুলো একটু যেন লালচে৷ ‘এসো!’ শেষ শব্দটা অরুণাভর উদ্দেশ্যে৷

অরুণাভ ওর উল্টোদিকের আরেকটা হালকা রকিং চেয়ারে বসেছে৷ ‘আরন’ট ইউ সারপ্রাইজড্‌ টু সি মি?’

Bay Window
ঘরের বিশাল বে-উইন্ডো দিয়ে বাইরের বাগানটা স্পষ্ট দেখা যায়

বৃন্দার কাফতানের ফাঁকে ওর উদ্ধত বুকের আভাস৷ অরুণাভ ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত হয়েই ছিল৷ নিজেকে সম্বরণ করতে ওর অসুবিধা হচ্ছিল৷

অ্যান ইতিমধ্যে চা রেখে গেছে৷ মহার্ঘ্য পোর্সেলিনের টি-পটের পাশে দুটি কাপ, সসার৷ আলাদা ছোট পাত্রে দুধ আর সুগার কিউব৷

‘তুমি নিজে ঢেলে নেবে নাকি আমি দেব?’ অরুণাভ লক্ষ করছিল বৃন্দাও ওর দিকে সরাসরি তাকাচ্ছে না৷ ও বাগানের দিকে তাকিয়েই কথা বলছে অরুণাভর সঙ্গে৷

অরুণাভ চেয়ার ছেড়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে ওর পায়ের কাছে৷ ‘তুমি এখনও আমার কথার উত্তর দাওনি বৃন্দাদি? আমি এরকম তোমাকে না বলে চলে এসেছি, তুমি অবাক হওনি?’

ওর হাত রাখা বৃন্দার হাঁটুর উপর৷ বৃন্দা হাত সরিয়ে দেয়নি, কোনও বাধাও দেয়নি৷ শুধু আস্তে আস্তে বলেছিল ‘আমি জানতাম তুমি আসবে৷’

‘তুমি কী চেয়েছিলে বৃন্দাদি? আমি যাতে না আসি? বল, বল বৃন্দাদি, তুমি উত্তর দাও৷ আমার চিঠি পাওনি তুমি? তুমি কি সত্যিই বুঝতে পার না কিছু? ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট আই লাভ ইউ? তুমি যদি সেটা রেসিপ্রোকেট করতে না পার, তবে আমাকে বলে দাও৷ কিন্তু তোমার উত্তর না নিয়ে আমি এখান থেকে যাব না৷’ অরুণাভ পাগলের মতো ঝাঁকাচ্ছে বৃন্দাকে৷

বৃন্দা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে৷ অরুণাভর দেহের উত্তাপ সঞ্চারিত হচ্ছে ওর মধ্যে৷ ওর চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু৷ ওর কোলে রাখা অরুণাভর মাথা ভিজে যাচ্ছে সেই মুক্তোর মতো অশ্রুবিন্দুতে৷

অরুণাভ নিজেকে আর সংযত করতে পারছে না৷ ওর অবাধ্য মুখ উঠে আসছে বৃন্দার চোখের পাতায়৷ ওর চোখের সমস্ত জল মুখ দিয়ে তৃষ্ণার্তের মতো পান করছে অরুণাভ৷ ওর অবাধ্য হাত খেলা করতে চাইছে বৃন্দার শরীরের বিভিন্ন খাঁজে৷ ওর ঠোঁটে নিষ্পেষিত হচ্ছে বৃন্দার টসটসে দুটি ঠোঁট৷ বৃন্দা সমর্পণের আগের মুহূর্তে সম্বিত ফিরে পেয়েছিল৷ সজোরে সরিয়ে দিয়েছিল অরুণাভকে ওর শরীরের উপর থেকে৷ — ‘প্লিজ প্লিজ অরুণাভ, কন্ট্রোল ইয়োরসেল্ফ৷ এ হতে পারে না৷’ কোনওরকমে স্খলিত স্বরে ও বলেছিল৷

অরুণাভর শরীর থরথর করে কাঁপছিল৷ ‘কেন হতে পারে না বৃন্দাদি? তোমার চেয়ে বয়সে ছোট বলে? তুমি ম্যারেড বলে? কাম অন, আই নো ইয়োর হাজব্যান্ড ইজ অ্যান ওল্ড ম্যান৷ একজন পঁয়ষট্টি বছরের লোকের কাছে কী সুখ পাও তুমি? কান্ট ইউ ডাইভোর্স হিম? নাকি এই লাক্সুরিয়াস্‌ লাইফস্টাইল, এই স্টিঙ্কিং রিচনেস, এই তোমার কাছে সব? তোমার সেক্সুয়াল ফুলফিলমেন্ট, তোমার ইমোশন, কোনও কিছুই ইমপর্ট্যান্ট নয়? মানি ইজ দ্য ওনলি ইম্পর্ট্যান্ট থিং? অরুণাভ হাঁপাচ্ছিল৷ 

ওর চোখের সমস্ত জল মুখ দিয়ে তৃষ্ণার্তের মতো পান করছে অরুণাভ৷ ওর অবাধ্য হাত খেলা করতে চাইছে বৃন্দার শরীরের বিভিন্ন খাঁজে৷ ওর ঠোঁটে নিষ্পেষিত হচ্ছে বৃন্দার টসটসে দুটি ঠোঁট৷ বৃন্দা সমর্পণের আগের মুহূর্তে সম্বিত ফিরে পেয়েছিল৷

বৃন্দা চোখ খুলেছিল৷ অরুণাভর চোখে চোখ রেখে খুব কাটাকাটাভাবে বলেছিল ‘তুমি শুনতে চাও কেন হতে পারে না? শোন তবে৷ তবে পেশেন্টলি শুনতে হবে৷ আমি যা বলব সব৷

ও একটু চুপ করে থেকে আবার বলেছিল, ‘তার আগে আর একটা জিনিস জানা দরকার তোমার৷ আই অ্যাম শিফটিং বেস৷ ফ্রিস্‌কোতে চলে যাচ্ছি মার্টিনের কাছে৷’

অরুণাভ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনি৷ ‘হোয়াট? তুমি এখান থেকে চলে যাবে? কেন? টু অ্যাভয়েড মি?’

বৃন্দার মুখে ঈষৎ হাসির আভাস৷ হাসলে ওর গজদাঁত দুটো ঝিলিক দেয়৷

‘হোয়াই আর ইউ থিঙ্কিং ইউ আর দ্য মোস্ট ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর অফ মাই লাইফ অরুণাভ৷ আমার জীবনটা আলাদা৷ পাঁচ বছর হল আই অ্যাম ম্যারেড টু মার্টিন গোল্ডস্টাইন৷ অ্যান্ড আই অ্যাম নট বাউন্ড টু এক্সপ্লেন মাই রিলেশনশিপ উইথ হিম টু এনিওয়ান, লিস্ট অফ অল য়্যু৷

বৃন্দা কি ইচ্ছে করে ব্যঙ্গ করছে অরুণাভকে? ও ঠিক বুঝতে পারছিল না৷

‘তাহলে তোমার এই ডিসিশনের কারণটা কি জানতে পারি? অরুণাভ জিজ্ঞেস না করে পারেনি৷

বিকজ আই হ্যাভ আ পি.এইচ.ডি ডিগ্রি নাও৷ ইজন’ট ইট ন্যাচারাল ফর মি টু গো অ্যান্ড জয়েন মাই হাজব্যান্ড ইন ফ্রিসকো? বৃন্দা বলেছিল৷ ইউ পেনে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টস হিসেবে অ্যাডমিশন নিয়েছিলাম বলে মার্টিন এই সেট-আপটা করে দিয়েছে আমার জন্য৷ তুমি হয়ত জানো না মার্টিনের আসল বাড়ি সানফ্রান্সিসকোতেই৷ এই বাড়িটাও অবশ্য থাকছে৷ উই হ্যাভ নো প্ল্যান টু সেল ইট অফ ইয়েট৷ মাঝে মাঝে আসব৷ তবে আমার ফিউচার প্ল্যানস্‌ বলা আমার উদ্দেশ্য নয়৷ মাই ফিউচার হ্যাজ নাথিং টু ডু উইথ য়্যু৷ আমি তোমাকে অন্য একটা গল্প বলব৷ আমার অতীতের গল্প৷ ফার্স্ট য়্যু হ্যাভ টু বি কোয়ায়েট, অ্যাট পিস উইথ ইয়োরসেল্ফ৷ চা খাও ঠান্ডা হয়ে যাবার আগে৷’

Love Moment
অরুণাভ নিজেকে আর সংযত করতে পারছে না

অরুণাভর মন খুব অশান্ত৷ ‘তোমার পাস্ট-এর গল্প শুনে আমার কী হবে? ডাজ ইট হ্যাভ এনিথিং টু ডু উইথ মি? ও বলেছিল৷

‘সার্টেনলি ইট হ্যাজ৷ ইন ফ্যাক্ট ইট হ্যাজ এভরিথিং টু ডু উইথ য়্যু৷ সেইজন্যই তো বলছি গল্পটা তোমার শোনা দরকার৷ রহস্যময় ছায়া বৃন্দার চোখেমুখে৷ অরুণাভ চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে শুনছে বৃন্দার গল্প৷

‘কলকাতার খুব নামকরা বনেদি ফ্যামিলির মেয়ে আমি৷ আমার পরিবার কলকাতার আদি বাসিন্দা পাঁচটা পরিবারের মধ্যে একটা৷ সুতরাং বুঝতেই পারছ, ওখানে জমিজমা বিষয়-সম্পত্তি আমাদের কম ছিল না৷ আমার বাবা শশাঙ্ক সিংহ তখনকার দিনের খুব নামকরা অন্টারপ্রেনিওর৷ অনেকরকম ইন্ডাস্ট্রির মালিকানা ছিল তাঁর৷ এইরকম একটা পরিবারে, অসামান্য প্রাচুর্য্য আর বিলাসের মধ্যে মানুষ হই আমরা দু’বোন, দিদি আর আমি৷ অল্পবয়সে মা মারা যাওয়া ছাড়া আমাদের মধ্যে অন্য কোনও অভাববোধ ছিল না৷ কিন্তু মা ছাড়া বড় হয়েছি বলে আমরা জীবনে স্বাধীনতা একটু বেশিই পেয়েছিলাম অন্যদের তুলনায়৷ ফলে আমার আর দিদির সব ডিসিশনই ফাইনাল ছিল৷ বাবা তাতে কখনওই বাধা দিতেন না৷ সিক্সটিজে যখন আমরা বড় হচ্ছিলাম, তখন কলকাতার একটা উত্তাল সময়৷ দিদি আর আমি দু’জনে দু’রকম রাস্তা বেছে নিলাম৷ আমরা দুজনেই স্কুল আর বাড়ির সূত্রে ভীষণ অ্যাংলিসাইজড্‌ ধরণ-ধারণে অভ্যস্ত ছিলাম৷ দিদি খুব বেশি এক্সট্রোভার্ট, ও পার্কস্ট্রিটের ট্রিঙ্কাসে যেতে খুব পছন্দ করত৷ ওখানেই ওর প্রথম স্বামীর সঙ্গে প্রেম আর বিয়ে৷ যাই হোক, দিদির গল্প তোমাকে অন্য কোনও সময় শোনাবো৷ এখন আমার কথাই বলি৷ আমি ছোট থেকেই একটু ইন্ট্রোভার্ট৷ বাবাদের ফ্যামিলির সবাই মোহনানন্দজীর কাছে দীক্ষিত ছিলেন৷ আমি তেরো-চোদ্দ বছর বয়স থেকেই মোহনানন্দজীর সঙ্গে বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে বেড়াতাম৷ ওঁদের গানের দলে গান গাইতাম৷ সেইভাবেই একবার তোমাদের দমদমের বাড়িতেও গিয়েছিলাম৷ তোমার মা-বাবা সেটা মনে রেখেছেন অ্যান্ড আই অ্যাম গ্রেটফুল ফর দ্যাট৷’

অরুণাভর আবার অধৈর্য্য লাগছে। ‘ওয়াই আর য়্যু টেলিং মি অল দিস? আই নো দিস স্টোরি৷ আমি এসব শুনে কী করব?’

‘য়্যু ডোন্ট নো দ্য হোল স্টোরি ইয়েট৷ পরেরটা বলার জন্য এত কথা বলছি- জাস্ট টু গিভ য়্যু আ কনটেক্সট্‌৷’ বৃন্দা বলছে- ‘এভাবেই চলছিল৷ টিল মাই সিনিয়র কেম্ব্রিজ এগজাম৷ তারপর আমি কলেজে গেলাম৷ প্রেসিডেন্সি কলেজ৷ সেখানে তখন প্রচণ্ড ছাত্র আন্দোলন, বিক্ষোভ কর্মসূচী৷ সেখানে সেই টালমাটাল সময়ে আমি একজনকে দেখলাম৷ একটা ছেলেকে৷ তার নাম স্বাধীন৷ স্বাধীন সেন৷ বৃন্দা একটু থামে৷ দম নেয়৷ ভাবে কীভাবে এগোবে গল্পটা৷

সিক্সটিজে যখন আমরা বড় হচ্ছিলাম, তখন কলকাতার একটা উত্তাল সময়৷ দিদি আর আমি দু’জনে দু’রকম রাস্তা বেছে নিলাম৷ আমরা দুজনেই স্কুল আর বাড়ির সূত্রে ভীষণ অ্যাংলিসাইজড্‌ ধরণ-ধারণে অভ্যস্ত ছিলাম৷ দিদি খুব বেশি এক্সট্রোভার্ট, ও পার্কস্ট্রিটের ট্রিঙ্কাসে যেতে খুব পছন্দ করত৷ ওখানেই ওর প্রথম স্বামীর সঙ্গে প্রেম আর বিয়ে৷

অরুণাভ একাগ্রভাবে তাকিয়ে আছে ওর চোখের দিকে৷ বৃন্দার চোখ বাগানের দিকে৷ ভাসা ভাসা ঈষৎ ফোলা ওর চোখে ঘন চোখের পাতা৷ একটা হালকা মায়াময়তা খেলা করছে সেই চোখের মধ্যে৷ দূরে প্রসারিত দৃষ্টি যেন খুঁজতে চায় অন্য কোনও সময়কে৷

‘স্বাধীন আমার থেকে দু’বছরের সিনিয়র ছিল৷ কলেজের ব্রাইটেস্ট স্টুডেন্টদের মধ্যে একজন৷ ও তখনকার স্টুডেন্ট মুভমেন্টের মুখ ছিল৷’ অরুণাভ বুঝতে পারে ছোটকুর কথাই বলছে বৃন্দা৷ ছোটকুরই নাম ছিল স্বাধীন সেন৷ অনেক বছর বাদে ছোটকুর আবছা হয়ে আসা মুখখানা ফিরে আসতে থাকে ওর মনের মধ্যে৷ লম্বা, রোগাটে গড়ন, অল্প অল্প ফুরফুরে দাড়ি ছোটকুর গালে৷ বৃন্দা তাহলে ছোটকুর প্রেমিকা ছিল? বাবা-মা কি জানে বৃন্দার সঙ্গে ছোটকুর সম্পর্কের কথা? সেই প্রশ্নটাই করেছিল ও বৃন্দাকে৷ ডু দে নো দ্যাট ইউ ওয়্যার ছোটকু’স গার্লফ্রেন্ড?

বৃন্দার চোখে একটা অব্যক্ত বেদনা খেলা করছিল৷ ‘হাউ ইজ দিজ ইম্পর্ট্যান্ট? না, তুমি গার্লফ্রেন্ড বলতে যা বোঝো- আমার সঙ্গে ওর সম্পর্কটা ঠিক তেমনটা ছিল না৷ উই হ্যাড আ কাইন্ড অফ ডিপার আন্ডারস্ট্যান্ডিং৷ আমার চেয়ে অল্প বড় হলেও ওকে আমি শ্রদ্ধা করতাম৷ আর ভালোওবাসতাম৷’ বৃন্দা একটু থেমে বলে – ‘এখনও ওকে আমি ভালবাসি৷ ও চলে যাবার পর দশ বছর হয়ে গেল৷ স্বাধীনকে আমি শেষ দেখেছি বারো বছরেরও বেশি আগে৷ তারপর তো এদেশে চলেই এলাম৷ আমার বাবা এই একটি ব্যাপারে আমাকে জোর করেছিলেন৷ আই ওয়াজ ফোর্সড টু লিভ কোলকাতা উইদিন আ মান্থস্‌ নোটিস৷ তখন আই.বি. ডিপার্টমেন্ট আমাদের মতো বেশ কিছু ছেলেমেয়েকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে, নকশাল মুভমেন্টে মদত দিচ্ছি বলে৷ পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেকেই ওয়েন্ট অ্যাব্রড৷ আমিও তাদের মধ্যে ছিলাম৷ আমার বাবার টাকারও অভাব ছিল না, কানেকশনেরও না৷ পেপার্স রেডি করতে বাবার সাত দিনও লাগেনি৷

প্রথম এসেছিলাম আন্ডার গ্র্যাজুয়েট করতে৷ সবসময় মনে হত প্লেনে চেপে ফিরে যাই৷ কিন্তু ফিরলেই পুলিশ আমাকে অ্যারেস্ট করত৷ ওরা ভাবত, আমাকে জেলে ভরলে, স্বাধীন এসে ধরা দেবে৷ তাই ইচ্ছে থাকলেও ফিরতে পারিনি৷ তারপর তো আর ফেরার ইচ্ছেও রইল না৷’ বৃন্দা মুখ নীচু করে৷ ‘খবর পেলাম পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে স্বাধীন…’

হঠাৎ ঘরটা খুব থমথমে লাগে অরুণাভর৷

‘আসলে জানো, ওসব পুলিশ এনকাউন্টার পুরো আই ওয়াশ৷ পিছন থেকে কুকুরের মতো গুলি করে মেরেছিল ওরা৷ ভীষণ ভয় পেত তো স্বাধীনকে৷ জানত, হি ওয়াজ কেপেবেল অফ টার্নিং দ্য টেবল৷’ বৃন্দা কীরকম একটা ঘোরের মধ্যে কথা বলছিল৷

Trincas
দিদি খুব বেশি এক্সট্রোভার্ট,ও পার্কস্ট্রিটের ট্রিঙ্কাসে যেতে খুব পছন্দ করত

‘বৃন্দাদি!’ অরুণাভ ডেকে ওর সম্বিৎ ফেরাতে চায়৷

একটা ঝাঁকুনি লেগে যেন বাস্তবে ফেরে বৃন্দা – ‘হ্যাঁ৷ কী বলছিলাম! জানো, আমার জীবনটা পুরো ওলোটপালট হয়ে গিয়েছিল৷ এক জীবনে কতবার যে নতুন করে জন্মালাম আমি, কতবার ভেঙেচুরে আবার গড়ে নিলাম নিজেকে৷ খুব প্যাম্পার্ড ছিলাম৷ বাবার আদুরে মেয়ে আমি আর দিদি৷ দিদির গল্পটা ভীষণ অন্যরকম৷ ইট উইল টেক অ্যানাদার হোল ডে টু টেল হার স্টোরি৷ আমার গল্পটাই শুধু বলছি আজ৷ একটা প্যাম্পার্ড ব্র্যাট ছিলাম আমি, মোহনানন্দজীর সঙ্গে গান গেয়ে বেড়াতাম৷ ভাবতাম পরে ‘নান’ হয়ে যাব৷ ‘নান’ হওয়া ঠিক এখন পর্যন্ত আর হল না আমার৷ তার বদলে আঠেরো বছর বয়সে প্রেসিডেন্সিতে ইংরেজি পড়তে গিয়ে স্বাধীনের সঙ্গে দেখা হল৷ জীবনটার মধ্যে যেন অন্যরকম একটা মিনিং খুঁজে পেলাম৷ একটা গ্রেটার কনটেক্সট্‌৷ শুধু ভারতবর্ষ নয়, সারা পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা অপ্রেশন, এক্সপ্লয়টেশন এসব সম্পর্কে প্রথম সচেতন হলাম আমি৷ যখন বাবা এদেশে পাঠিয়ে দিলেন, তখন ভেবেছিলাম স্বাধীনের থেকে দূরে থাকা, ইন্ডিয়া থেকে এত দূরে থাকা, ইট্‌স্‌ আ টেম্পোরারি ফেজ৷ একসময় পুলিশের ধরপাকড় কমবে৷ আমি ফিরে যেতে পারব৷ আই থট দিজ ওয়াজ মাই স্যাকরিফাইস ইন অর্ডার টু প্রোটেক্ট হিম৷ তা ওকে প্রোটেক্ট করতে পারলাম কই? ও যখন পুলিশের গুলিতে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মরে যাচ্ছে, তখন ও নিশ্চয়ই খুঁজছিল আমাকে৷ দেখতে চেয়েছিল৷ কী জানি, কী ভেবেছিল ও তখন, সেই শেষ মুহূর্তে?

স্বাধীনের খবরটা আমাকে বন্ধুরা দিয়েছিল কয়েকদিন পর৷ সেদিন আমার একটা পেপারের পরীক্ষা ছিল৷ আমার মনটা খবর শুনে একদম শান্ত একটা পুকুরের মতো হয়ে গেছিল৷ পরীক্ষা দিয়ে এসে আমি চুপ করে নিজের আন্ডারগ্র্যাড রুমে বসে ভাবছিলাম- আজ থেকে আমার তিন নম্বর জন্মটা শুরু হল৷ যেখানে নিজেকেই নিজের পথ চিনে নিতে হবে৷ স্বাধীন যে নেই তা আমি ভাবছিলাম না৷ শুধু ভাবছিলাম – এই বিরাট বিশ্ব আমাকে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে৷ বড় কোনও কাজ করার জন্য৷ আমার খুব ফুরফুরে লাগছিল৷ মুক্ত মনে হচ্ছিল নিজেকে৷ স্বাধীন এই বিরাট বিশ্বের মধ্যে আমাকে মুক্তি দিয়ে গেল৷ আরও জড়িয়ে গেলাম৷ ‘অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময় লভিব মুক্তির স্বাদ’, সেই স্বাদ এখন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি আমি৷

(২৯)

‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা- আমাদের এই বসুন্ধরা-
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা৷
স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৷
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি৷
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি৷’’

-গানটি শুনলে আমার একটা ছোট্ট ঘটনা মনে পড়ে যায়৷ ১৯৬৩ শেষাশেষি বা ৬৪ সালের গোড়ার দিক হবে৷ তখন আমাদের পরিবারটিতে দুর্যোগের করাল ছায়া ঘনিয়ে আসেনি৷ পূর্ববঙ্গ থেকে আগত আর পাঁচটা উদ্বাস্তু পরিবার যেমন দিন আনি দিন খাই জীবনযাপন করত আমাদের পরিবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না৷ অভাব-অনটন ছিল, তবু পরিবারে এক আশ্চর্য শান্তি ছিল৷ দিদি আর আমি যে স্কুলে পড়তাম স্বাধীনতার পর তার প্রতিষ্ঠা হয়৷

মতিঝিলের উল্টোদিকে দেবীনিবাসের দিকে ঢুকতে হলে দমদম রোডের উপর স্কুলবাড়িটি যাতায়াতের পথে নিত্যই চোখে পড়ত৷ সকাল ঠিক সওয়া আটটায় মেয়েরা স্কুলে ঢোকার পর প্রার্থনা হত৷ প্রার্থনা মানে নির্দিষ্ট কিছু গান। উঠ গো ভারতলক্ষ্মী, বল বল বল সবে, শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয়গান, ধন ধান্য পুষ্প ভরা- ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এরকম যেকোনও একটি গান আর তারপর জাতীয় সংগীত- জনগণমন। সেদিনও সেরকমই হচ্ছিল৷ তখন দিদি তো বটেই আমিও ম্যাট্রিক পাশ করে গেছি৷ আমি তার অনেক আগে থেকেই শান্তিনিকেতনে তখন বোধ হয় চারুকলায় এম এ ক্লাসে ভর্তি হয়েছি৷ পুজোর ছুটির পর স্কুল খুলে গেছে৷ আমাদেরও বিশ্বভারতী খুলে যাবে যাবে করছে৷ ছুটির একেবারে শেষের দিকে হঠাৎ মোহনদাদা এসেছিলেন৷

১৯৬৩ শেষাশেষি বা ৬৪ সালের গোড়ার দিক হবে৷ তখন আমাদের পরিবারটিতে দুর্যোগের করাল ছায়া ঘনিয়ে আসেনি৷ পূর্ববঙ্গ থেকে আগত আর পাঁচটা উদ্বাস্তু পরিবার যেমন দিন আনি দিন খাই জীবনযাপন করত আমাদের পরিবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না৷ অভাব-অনটন ছিল, তবু পরিবারে এক আশ্চর্য শান্তি ছিল৷ দিদি আর আমি যে স্কুলে পড়তাম স্বাধীনতার পর তার প্রতিষ্ঠা হয়৷

আমার জীবনে যতজন ব্যতিক্রমী মানুষ দেখেছি মোহনদাদা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য৷ মোহনদাদা আমার আত্মীয় ছিলেন৷ না, আত্মীয় নয়, বরং বলা যায় কুটুম্ব৷ আমার আপন বৌদির দাদা৷ শান্তিনিকেতনে প্রথম দিন থেকেই তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলাপ৷ তখনও বৌদি বৌদি হয়নি৷ সেই সময় থেকে৷ দাদা বৌদির বিয়ে হয় একষট্টি সালের গোড়ার দিকে৷ বাষট্টিতে আমার ভাইপোর জন্ম৷ মোহনদাদা যে দমদমের বাড়িতে খুব বেশি আসতেন, এমনটা নয়৷ বরং তিনি অধিকাংশ সময়েই বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াতেন৷ সেবার হঠাৎই দিন তিনেকের জন্য মোহনদাদা কী খেয়ালে আমাদের ওখানে এসেছিলেন৷

আমার মনে আছে তখন শরতের শেষ৷ হাওয়ায় একটু একটু টান ধরেছে৷ সকালে বাড়ির সামনে ঘাসজমিতে একটু একটু শিশির জমে থাকে৷ বাড়ির পূবকোণে শিউলি গাছ থেকে আর টুপটাপ নিঃশব্দে ঝরে পড়ে না শিউলি৷ মোহনদাদা বরাবরই খুব ভোরে উঠতেন৷ ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে খানিকক্ষণ সূর্যের দিকে মুখ করে চুপ করে চোখ দুটি বুজে বসে থাকতেন৷ সেদিনও আমাদের বাড়ির পূব দিকে বারান্দায় অমনি করে বসেছিলেন৷ গায়ে একটা খদ্দরের ফতুয়া আর পাজামা৷ আমি ঘুম ভেঙে বারান্দায় গিয়ে বললাম- ‘মোহন দাদা, আমার সঙ্গে আজ দেখতে যাবে সেই গাছটা?’

Parijaat flowe
বাড়ির পূবকোণে শিউলি গাছ থেকে আর টুপটাপ নিঃশব্দে ঝরে পড়ে না শিউলি

মোহনদাদা শান্তিনিকেতনে আমাদের গাছ চেনাতেন৷ কোনটাতে বর্ষায় ফুল আসে, শীতকালে কী কী ফুল হয়, কোন গাছের পাতা কীরকম, এসব যেমন বলতেন, তেমনই ডাহুক, শ্যামা, দোয়েল, কোয়েল, আরও অজানা অচেনা পাখিদের স্বভাব চরিত্র অভ্যাস – সব ছিল তাঁর নখদর্পণে৷ শান্তিনিকেতন গিয়ে সোনাঝুরি গাছ প্রথম চিনেছিলাম মোহনদাদার কাছে৷ আমাদের দমদমে স্কুলের মাঠ পেরিয়ে একটা সোনাঝুরি গাছ ছিল৷ শীতের আগমনের সম্ভাবনায় আগুনরঙা ফুল ধরত তাতে৷ শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির অরণ্য দেখিয়ে মোহনদাদা বলেছিলেন- ‘দেখে রাখ, আমাদের শান্তিনিকেতনের ট্রেডমার্ক৷ শান্তিনিকেতনের আদি বাসিন্দা সাঁওতালরা বলে আকাশমণি৷ বিজ্ঞানের পরিভাষায় একটা গালভরা নাম আছে৷ অ্যাকাসিয়া অরিকুলিফর্মিস৷ সোনাঝুরি নামটা কিন্তু গুরুদেবের দেওয়া৷ তখনই বলেছিলাম – ‘ও মোহনদাদা! এ গাছ তো আমাদের ওখানেও আছে৷ আমাদের স্কুলের মাঠের পিছনে৷

 ‘যাঃ! তোদের দমদমে এই গাছ থাকতেই পারে না’ মোহনদাদা খুব খ্যাপাতেন আমাকে৷

সেইজন্যই সে সকালে মোহনদাদাকে বলেছিলাম দমদমের সেই সোনাঝুরি গাছটাকে দেখতে যেতে৷

মোহনদাদা একগাল হেসেছিলেন – ‘বেশ, চল্‌ তাহলে দেখে আসি তোদের গাছটাকে৷’

শান্তিনিকেতন গিয়ে সোনাঝুরি গাছ প্রথম চিনেছিলাম মোহনদাদার কাছে৷ আমাদের দমদমে স্কুলের মাঠ পেরিয়ে একটা সোনাঝুরি গাছ ছিল৷ শীতের আগমনের সম্ভাবনায় আগুনরঙা ফুল ধরত তাতে৷ শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির অরণ্য দেখিয়ে মোহনদাদা বলেছিলেন- ‘দেখে রাখ, আমাদের শান্তিনিকেতনের ট্রেডমার্ক৷ শান্তিনিকেতনের আদি বাসিন্দা সাঁওতালরা বলে আকাশমণি৷ বিজ্ঞানের পরিভাষায় একটা গালভরা নাম আছে৷ অ্যাকাসিয়া অরিকুলিফর্মিস৷ সোনাঝুরি নামটা কিন্তু গুরুদেবের দেওয়া৷

চা বিস্কুট খেয়ে আটটা নাগাদ আমরা বেরিয়েছিলাম৷ স্কুলের পাশ দিয়েই পিছন দিকের মাঠটায় যেতে হয়৷ সামনের গেটে পৌঁছে শুনি প্রেয়ার হচ্ছে৷ পুরো গানগুলোয় কোরাসে অনেক সুরবিচ্যুতি ঘটছিল৷ অনেক কথা বদলে যেত অর্থহীন শব্দে৷ অনেকটাই সত্যজিৎ রায়ের সেই রোবট বিধুশেখরের মত অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করে এই প্রার্থনাসঙ্গীত আমার স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রীদের প্রাত্যহিক অভ্যেসের মধ্যে চারিয়ে গেছিল৷ হঠাৎ দেখি মোহনদাদা স্কুলের বাউন্ডারি ওয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে গানটা শুনছেন৷ ভুরুটা একটু কুঁচকে আছে৷ ‘চল্‌, এদের বলা দরকার’- বলে গানটা পুরো শেষ হবার আগেই মোহনদাদা গেট ঠেলে ঢুকে পড়েছিলেন ভিতরে৷ এলা রং-এ-রং করা দেওয়াল, একটা বাঁধানো চতুষ্কোণ জায়গা, সেখান দিয়ে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে দু-বিনুনি ঝোলানো ছাত্রীরা৷ তাদের সামনে একটু উঁচু ডায়াসের মতো জায়গাটার উপর উঠে পড়েছিলেন মোহনদাদা, ডায়াসে দাঁড়ানো প্রার্থনা পরিচালনা করা হেডমিস্ট্রেস (যাঁকে বড়দি বলা হত) এবং অন্য কয়েকজন শিক্ষিকাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে৷ গান শেষ না হয়েই থেমে গেছিল৷ আমি ছাড়া স্কুলে সবার সম্পূর্ণ অচেনা মোহনদাদা – ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে খুব কাটা-কাটাভাবে কয়েকটি কথা বলেছিলেন

‘আমি যেতে যেতে বাইরে থেকে শুনছিলাম তোমরা ভুল সুরে ভুল কথায় গানটি গাইছ৷ তোমাদের বয়স অল্প৷ কিন্তু অল্প বয়স থেকেই শুদ্ধ সুরে, সঠিক কথায় গান গাইতে অভ্যাস করা দরকার৷ অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করা অপরাধ৷ এই বিচ্যুতিকে সংশোধন করা প্রয়োজন৷ আমি গানটি একবার গাইছি৷ শোন৷’ উন্মুক্ত চত্বরের মাথায় দাঁড়িয়ে খোলা গলায় গান ধরেছিলেন মোহনদাদা৷ 

‘ধন-ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা,
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি,
            সে যে আমার জন্মভূমি।।’

মোহনদাদা তথাকথিত সুমধুরকণ্ঠী ছিলেন না, খুব চাঁচাছোলা খোলা গলায় গান করছিলেন মোহনদাদা৷ চোখ বুজে গানের বাণীকে ভিতর থেকে গভীর মমতায় ছুঁয়ে যাচ্ছিলেন যেন৷ অদ্ভুত আত্মস্থ ভঙ্গি৷ আমি লক্ষ করছিলাম সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো সব ছাত্রীরা তো বটেই ডায়াসে উপস্থিত সব শিক্ষিকারাও স্তব্ধ হয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন সম্পূর্ণ অপরিচিত মোহনদাদার দিকে৷ প্রতিটি স্তবক বা স্ট্যাঞ্জা, যা প্রার্থনা সঙ্গীতের অন্তর্গত নয়, সেই সব স্তবকগুলিকেই গাইলেন মোহনদাদা৷ গান শেষ হল৷ ঘরে পিনড্রপ সাইলেন্স – ‘থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি’র মত ৷ প্রধান শিক্ষিকা থেকে ওখানে উপস্থিত সব শিক্ষিকারা স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে ছিলেন অচেনা এই যুবকটির দিকে৷ মোহনদাদা চোখ খুললেন৷ ভিতরের আবেগেই হয়তো চোখদুটি একটু লাল৷ ‘আচ্ছা চলি৷ যা বললাম মনে রেখ৷’ বললেন মোহনদাদা – ‘আসি৷ নমস্কার আপনাদের৷’ দ্বিতীয় বাক্যটি শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে উচ্চারিত একমাত্র বাক্য৷ তারপর আমাকে বললেন – ‘চল্‌ এবার৷’ যেন কিছুই হয়নি৷

Sonajhuri Plant
সোনাঝুরি নামটা কিন্তু গুরুদেবের দেওয়া

সেই ঘটনার পর সাতান্ন বছর কেটে গেছে৷ নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল৷ আজও ঘটনাটির কথা মনে হলে, মনে হয় এই তো সেদিন৷ মাত্র কয়েকদিন আগে ঘটা যেন সেই আশ্চর্য ঘটনাটি৷ তার মাস দুয়েক পরেই হঠাৎ শুনেছিলাম মোহনদাদাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ আবারও পলাতক তিনি৷ এক মাঘীপূর্ণিমার রাতে কী জানি কী অজানা টানে শান্তিনিকেতনের চেনা চৌহদ্দি ছেড়ে নিরুদ্দেশের পথে পা বাড়ালেন মোহনদাদা৷ তারপর সাতান্নবার মাঘীপূর্ণিমার রাত ফিরে এসেছে আমাদের চেনা পৃথিবীতে৷ মোহনদাদা কিন্তু ফেরেননি৷ তাঁকে কেজো পৃথিবীর ভারে ভারাক্রান্ত হতে দেখিনি কোনওদিন৷ এক ফুরফুরে নির্ভার জীবনের মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকতেন তিনি- যতদিন দেখেছি৷ সেইরকম ভারহীন বন্ধনমুক্ত নতুন কোনও জীবনের আকাঙ্ক্ষায় ‘ঢেউয়ের মতন ভেসে গেছে, চাঁদের আলোর দেশে গেছে’ আমাদের যৌবনের মোহনদাদা৷

জেঠিমাকে দেখতাম৷ অরুণদি অর্থাৎ আমাদের বৌদির বাবাকে জ্যাঠামশায় আর মাকে জেঠিমা বলে ডাকতাম আমরা৷ দিদির সঙ্গে খুব ভাব ছিল অরুণদির৷ সেই সূত্রেই দাদার সঙ্গে আলাপ৷ জেঠিমা আর জ্যাঠামশাই ব্রাহ্ম ধর্মের মানুষ৷ ঠাকুরপুজো দূরস্থান, কঙ্কালীতলার মন্দিরেও জেঠিমাকে যেতে  দেখিনি কোনওদিন৷ শ্রীনিকেতন প্রজেক্টে জ্যাঠামশাইকে এনে শান্তিনিকেতনে স্থিতি দিয়েছিলেন রথী ঠাকুর৷ পরে অবশ্য ঘটনাচক্রে রথী ঠাকুরই আশ্রম থেকে চলে গেলেন৷ জ্যাঠামশাইরা কিন্তু থেকে গেছিলেন৷ অনেক বছর ধরে শান্তিনিকেতনের ‘পূবালী’ বাড়িই ছিল ওঁদের ‘হোম সুইট হোম৷’ মোহনদাদা যেবার চিরদিনের মত উধাও হয়ে গেলেন শান্তিনিকেতনের জীবন থেকে, তার কয়েকবছর পর অরুণদি মানে বৌদি, আর দাদাও পাড়ি জমাল বিদেশে তাদের শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে৷ সেই সময়টায় জেঠিমাকে দেখে বেশ কষ্ট হত আমার৷ আমার দিদিও ওঁদের চিনত খুব কাছ থেকে, কিন্তু সেও বিয়ের পরে চলে গেছিল দিল্লি৷ জেঠিমা আর জ্যাঠামশাই-এর চারিত্রিক ট্রান্সফরমেশনটা শান্তিনিকেতনে থাকার সূত্রে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছিলাম আমি৷

জ্যাঠামশাই আর জেঠিমা তখন ছেলের খোঁজে ঘুরে বেড়াতেন ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে৷ কোনও মন্দিরে, কোনও তীর্থস্থানে চিরুণি তল্লাশি করে মোহনদাদাকে খুঁজে বেড়াতেন ওঁরা৷ সব মন্দিরে পুজো দিতেন৷ হিমালয়ের বিভিন্ন সাধু সন্ন্যাসীর দোরে দোরে – ছেলের ছবি নিয়ে দেখাতেন৷ জিজ্ঞেস করতেন, ছেলেটিকে কেউ দেখেছে কী না৷ ফিরে এসে জেঠিমা গল্প করতেন এই অসম্ভব অন্বেষণের৷ বলতেন, ‘এবার বুঝলি এক সাধুর সঙ্গে দেখা হল কন্‌খলে৷ ছবিটা দেখেই সে বলল, এই ছেলে তো আমার কাছে এসেছিল মাস ছয়েক আগে৷’ এমনভাবে গল্প করতেন যেন সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়া যুবক ছেলেকে খুঁজে বেড়ানো বৃদ্ধ বাবা মার পক্ষে খুব সাধারণ এবং স্বাভাবিক একটা ঘটনা৷ কখনও কখনও লোকে উড়ো খবর আনত৷ বোলপুরের একজন উখিমঠ গিয়ে ফিরে এসে বলল একজন নতুন সাধুকে দেখেছে, যার চেহারা, হাবভাব-ভঙ্গি অনেকটাই মোহনদাদার মত৷ ব্যাস, বলামাত্র স্বামী স্ত্রী তল্পিতল্পা নিয়ে ছুটলেন উখিমঠ৷ স্যুটকেসের মধ্যে নারকেল নাড়ু, বাদাম তক্তি, ওসব সব সময় রাখা থাকত৷ কখন কোথায় ছেলের সঙ্গে দেখা হবে, তখন তার প্রিয় খাবার জিনিসগুলো তার সামনে ধরে না দিলে, তার অভিমান হবে না? ছেলের জন্য ছুটে ছুটে হিমালয় অঞ্চলের অনেক জায়গা ওঁদের দু তিনবার করে ঘোরা হয়ে গেছিল৷ জ্যাঠামশায়, যোশীমঠ থেকে কর্ণপ্রয়াগ কীভাবে যেতে হয়, রূপকুণ্ড থেকে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারসে যেতে কত সময় লাগে- সব নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারতেন৷ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করলে হেসে বলতেন- বুড়ো বয়সে ছেলে আমাদের পরিব্রাজক করে ছেড়েছে৷’ গভীর, গহন দুঃখ সযত্নে বহন করতেন দুজন৷ একবার দু-বার শুধু অন্য ঘটনায় প্রকাশ পেত তা৷

আমার ছোটভাই ছোটকু মারা যাবার পর জেঠিমা এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন মাকে৷ বলেছিলেন- ‘বেয়ান, আপনার সন্তানের জন্য আর ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতে হবে না আপনাদের৷ সব ভয়, সব যন্ত্রণার শেষ হল৷ আমরা দুজন বুড়োবুড়ি এই আট বছর ধরে কীভাবে যে আশা নিরাশার দোলাচলে দুলছি, তা আমরা ছাড়া আর কেউ জানে না৷’

ছেলের জন্য ছুটে ছুটে হিমালয় অঞ্চলের অনেক জায়গা ওঁদের দু তিনবার করে ঘোরা হয়ে গেছিল৷ জ্যাঠামশায়, যোশীমঠ থেকে কর্ণপ্রয়াগ কীভাবে যেতে হয়, রূপকুণ্ড থেকে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারসে যেতে কত সময় লাগে- সব নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারতেন৷ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করলে হেসে বলতেন- বুড়ো বয়সে ছেলে আমাদের পরিব্রাজক করে ছেড়েছে৷’ গভীর, গহন দুঃখ সযত্নে বহন করতেন দুজন৷

দু চোখ বেয়ে ঝরঝর করে জল পড়ছিল জেঠিমার, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় আর যেন বইতে পারি না৷ ছেলে না থাকার খবর পেলেও যেন মনে হয় ভালো ছিল৷ এমন ত্রিশঙ্কুর মতো শূন্যে ঝুলে থাকতে হত না তাহলে৷

‘মোহনদাদা কী করে এমন নিষ্ঠুরতা করছে জেঠিমাদের সঙ্গে’ – দিদি রাগ করত৷ আমি কিন্তু মোহনদাদার উপর কিছুতেই রাগ করতে পারতাম না৷ আমার সব সময় মনে হত রবীন্দ্রনাথ ‘অতিথি’ গল্পে তারাপদর চরিত্রটা সৃষ্টি করেছিলেন মোহনদাদার মত কাউকে দেখে৷ সংসারে বাঁধা পড়ার জন্য যার জন্ম হয়নি৷ জেঠিমা বলতেন দিলীপ রায় একবার শান্তিনিকেতন এসে মোহনদাদাকে দেখে নাকি বলেছিলেন হাসতে হাসতে- ‘এ ছেলেকে তো তোমার আঁচলে বেঁধে রাখতে পারবে না বৌমা৷ বেড়া-ভাঙার, সীমানা পেরনোর সব লক্ষণ এর কপালে লেখা আছে৷ আমি ভেবেছিলাম সাধক মানুষ দিলীপদা বুঝি ঠাট্টা করছেন৷ এখন বুঝছি একজন সাধক অন্য জনের মধ্যে সাধক হবার লক্ষণ দেখে হয়ত সাবধান করেছিলেন আমাকে৷’

মোহনদাদার কপালে বিধাতা কিছু লিখেছিলেন কিনা জানি না, কিন্তু জেঠিমাদের কপালে সুখ লেখা ছিল না৷ অবশেষে দশ বছর পর ওঁরা হারানো ছেলের সত্যিই সন্ধান পেলেন৷ সেই ভাওয়াল রাজার মতো তিলটি অবধি মিলে গেল ছবির সঙ্গে৷ তখন আমাদের বাবা সদ্য চলে গেছেন৷ দাদারা সাত বছর বিদেশবাসের পর দেশে এসেছেন সপুত্র-কন্যা৷ তখন একদিন এক বিষণ্ণ বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ি এসে জেঠিমারা বললেন- এবার সত্যিই খোঁজ মিলেছে মোহনদাদার৷ কারোও বারণ না শুনে দুন এক্সপ্রেসে চড়ে স্বামী স্ত্রী গেছিলেন হারানো ছেলের সঙ্গে পুনর্মিলন উৎসবে শামিল হতে৷ পুনর্মিলন কেমন হল, জেঠিমার করা নাড়ু সত্যি সত্যিই খেয়েছিল কিনা মোহনদাদা, এতদিন বাদে বাবা মার সঙ্গে দেখা হয়ে কি বলল বিবাগি হয়ে যাওয়া পুত্র – এসব কিছুই জানা হয়নি৷ কারণ আসার পথে হড়কা বানে হঠাৎ ভেসে গেছিল বাস৷ পাহাড়ি ঢাল দিয়ে খেলনা বাসের মতো পড়ে চুরমার হয়ে গেছিল পাথরের ধাক্কায়৷ পুত্র সন্দর্শনের মোক্ষলাভের পর সন্তুষ্ট স্বামী-স্ত্রীর দেহদুটি ভেসে গেছিল বর্ষার পাহাড়ি নদীর বিপজ্জনক উথালপাতাল স্রোতে৷ কী জানি কোন সাগরের অতল কালো জলে ঠাঁই হয়েছিল তাঁদের?

Narkeler Naru
জেঠিমার করা নাড়ু সত্যি সত্যিই খেয়েছিল কিনা মোহনদাদা

দমদমের বাড়িতে অরুণদি থেকে থেকে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল৷ তার অল্প দিন আগেই বাবাকে হারিয়েছি আমরা৷ তারপর এই আকস্মিক দুঃসংবাদে বাকরোধ হয়ে গেছিল আমাদের৷ বাড়িতে বসে কেমন দমবন্ধ হয়ে আসছিল আমার৷ একা একা এক সকালে কখন চুপি চুপি বেরিয়ে পড়েছিলাম বাড়ি থেকে৷ স্কুলের এলা রং-এর বাউন্ডারি ওয়াল পার হয়ে মাঠের ওপাশে সেই গাছটাকে দেখতে, যেটা আমি মোহনদাদাকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম৷ শ্রাবণ মাস পেরিয়ে তখন ভাদ্র মাস পড়েছে৷ কোন একটা বাড়ি থেকে বাতাস বয়ে নিয়ে আসছিল ট্রানজিস্টারের আওয়াজ৷

‘বাদল ধারা হল সারা বাজে বিদায় সুর৷
গানের পালা শেষ করে দে রে, যাবি অনেক দূর৷’

কিন্নরকণ্ঠী মোহরদি গাইছিলেন…

সত্যি বৃষ্টি আর পড়ছিল না সেদিন৷ বৃষ্টির পর প্রকৃতি যেমন চকচকে হয়ে ওঠে, সোনালি রোদে তেমন চকমকে হয়ে ছিল চতুর্দিক৷ আকাশ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল শরৎ এসে গেছে৷ আর কী আশ্চর্য, স্কুলের মাঠের শেষ প্রান্তের সেই আকাশমণি নাকি সোনাঝুরি গাছটা এই অসময়ে ফুলে ফুলে ভরে আছে৷

(৩০)

‘আই অ্যাম থিংকিং অফ কুইটিং দ্য জব’ রোহিণী অরুণাভকে ফোনে বলছে৷

‘আর ইউ থিংকিং অব টেকিং অ্যানাদার জব?’ অরুণাভর স্বভাবই হল ও কখনই নিজের কোনও মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চায় না৷ কারুর মতামতকে প্রভাবিত করা ওর স্বভাববিরুদ্ধ৷

‘অন্য আরেকটা প্ল্যান আছে৷ দেখি আরেকটু দেখে নিয়ে বলব’ রোহিণী বলেছিল৷

‘ইউ ক্যান টক টু জিনি রিগার্ডিং দ্যা জব অপরচুনিটিস্‌ ইন ক্যালিফোর্নিয়া, ইফ ইউ লাইক৷’ অরুণাভ সাহায্য করার ভঙ্গিতে বলেছিল৷

 ‘হ্যাঁ৷ দেখি আর একটু গুছিয়ে নিয়ে তারপর পিসিমণির কাছে যাব ভেবেছি৷ ইস্টারের সময়৷ পিসিমণিও আসতে বলছিল ওই সময়৷’ রোহিণী বলেছিল৷ চাকরি বা কেরিয়ার সংক্রান্ত অ্যাডভাইসের জন্য ও সবসময় অরুণাভর শরণাপন্ন হয়৷ পারতপক্ষে সীমন্তিনী বা নিজের বাবা মাকে বলে না৷ ওরা অনেক সাবধানী৷ হয়ত ঠেকে ঠেকেই শিখেছে৷ অমিয় সরাসরি অপোজ করেন না, কিন্তু এদেশে পড়ানর চাকরি ছেড়ে দিলে কি ধরণের অপশন আছে সে সম্পর্কে অমিয়র কোনও ধারণা নেই৷ শিপ্রা বরাবর দিল্লিতে স্কুলে পড়িয়েছেন৷ খুব প্র্যাকটিকাল মহিলা উনি৷ নিজের মতামত খুব স্ট্রং৷ ‘না না রুণি, তুমি ভুল করছ৷ এই বাজারে এখানে কেউ একটা চাকরি পায় না, আর তুমি হাতের লক্ষমী হেলায় হারাচ্ছ?’ ঠিক এইরকম হয়ত কোনও একটা মন্তব্য করবে মা৷ রোহিণীর হঠাৎ মনে পড়ে হাসি পেল দাদা যখন অমরজিতের প্রেমে পড়ল, তখন মা মাসিদের সে কি তুমুল বা প্রতিবাদ! না কি পাঞ্জাবিরা ভীষণ লাউড হয়৷ ওদের কোনও কালচার নেই৷

school class
শিপ্রা বরাবর দিল্লিতে স্কুলে পড়িয়েছেন

তখন রোহিণীর বিয়ে ঠিকঠাক৷ প্রায় এক বছর আগে থেকে কমিউনিটি হল ভাড়া করা হয়ে রয়েছে৷ তখন প্রতিদিন ফোন আর স্কাইপ করে শিপ্রা রোহিণীকে পাগল করে দিয়েছিল৷ হয় রোহিণীর আসন্ন বিয়ের বাজার দেখানো, নয়তো পাঞ্জাবি ফ্যামিলি নিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে অভিযোগ৷

‘এই দ্যাখ তোর জন্য এই সীতাহারটা কিনলাম৷ সঙ্গে ঝোলা দুল৷ ক্ষমা পছন্দ করল৷ ভাল হয়নি? স্কাইপে শিপ্রা একমুখ হাসি নিয়ে প্রশ্ন করতেন৷

‘হ্যাঁ, খুব ভাল হয়েছে৷’ রোহিণীর দায়সারা উত্তর৷

‘তোর তো বিয়ে হয়ে যাবে, কিন্তু এদিকে আমরা যে কী অশান্তিতে আছি ভাবতে পারবি না৷ আর মেয়ে পেল না, তোর দাদা শেষে একটা পাঞ্জাবি মেয়ে পছন্দ করল!’- ফোঁস করে শিপ্রা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন৷

‘হ্যাঁ, তাতে কী হয়েছে৷ আগের দিনও তো বললে মেয়েটি জার্নালিস্ট৷ অসুবিধের কী আছে?’ রোহিণীর একটু চ্যালেঞ্জের ভঙ্গি৷

‘অসুবিধে আর তোর কী? ঘর তো করতে হবে আমাকে৷’ শিপ্রার মুখে একরাশ বিষণ্ণতা খেলা করত৷

পাশ থেকে ভক্তি ফোড়ন কাটতেন- ‘তুই এসব বুঝিস্‌ না রুণি৷ পাঞ্জাবিদের কালচারটা আমাদের থেকে ডিফারেন্ট৷ ভাবতে পারছিস্‌ অভ্রর বিয়ের সময় সবকটা ভাংড়া নাচবে!’ ভক্তির চোখ বিস্ময়ে গোল গোল৷ 

 ‘‘আঃ মাসি! কী যে বল না! সব পাঞ্জাবি কী একরকম? আর নাচেও যদি, আই ক্যান সি নো হার্ম টু দ্যাট৷ একটা ইনোসেন্ট ফান!’

‘সব জিনিসকে এত ট্র্যিভিয়ালি নিস না রুণি৷ ওই মেয়ে এসে আমাদের মতো সংসারে অ্যাডজাস্ট করবে কী করে?’ শিপ্রা প্রায় কাঁদতে বাকি রাখতেন৷

‘উঃ মা! যদি অ্যাডজাস্ট করতে না পারে, তাহলে দাদাকে বলবে আলাদা হয়ে যেতে৷ অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ দ্যাট৷ আমাকে এসব বোল না৷ আই হ্যাভ নো টাইম ফর দিস৷’ বলে রোহিণী ফোন রেখে দিত৷

সেইসব কথাগুলো মনে পড়লে এখন হাসিই পায়৷ কিছুদিনের মধ্যেই অমরজিৎকে দিব্যি মনে ধরল মা মাসিদের৷ ওদের ফ্যামিলির ঠাটবাট দেখেও চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছিল শিপ্রাদের৷

 ‘বুঝলি তো কী বৈভব, কী বৈভব! দে আর স্টিঙ্কিং রিচ৷ বাড়িটা দেখলে মাথা ঘোরে এত দামি দামি জিনিস দিয়ে সাজানো৷ আর ভদ্রমহিলা মানে অমরজিতের মা, এত চালু মহিলা যে আমাকে এক হাটে কিনে, আরেক হাটে বেচে দিতে পারেন৷’ কয়েকমাস পরে স্কাইপে কথোপকথনে শিপ্রা উচ্ছ্বসিতভাবে বলছিলেন৷

‘মা, তোমাকে হাটে কেনাবেচার দরকার পড়বে না ওঁর৷ দিস ইজ ইমমেটিরিয়াল৷’ রোহিণী বিরক্তভাবে বলেছিল৷

‘আহা, ওটা তো কথার কথা৷ ভদ্রমহিলা খুব স্মার্ট৷ নিজে বিজনেস চালান৷ ফিটনেস সেন্টার কাম বিউটি পার্লার৷ আমাদের মত ঘরোয়া টাইপের নয় আর কি৷’ শিপ্রা একটু অপ্রস্তুত হেসেছিলেন৷

‘অমরজিৎকে তো তোমার ভালই লাগছে এখন৷ তাহলেই হবে৷’

 ‘হ্যাঁ, মেয়েটা কিন্তু খুব ভাল৷ বেশ সিম্পল৷ হাসিখুশি৷ প্রচুর কথা বলে৷ আর বেশ মিষ্টি দেখতে৷ তুই এলে তোর সঙ্গে জমে যাবে মনে হয়৷ তোর বিয়েতে ওদের সবাইকে বলতে হবে৷ আফটার অল হবু কুটুম বলে কথা৷’ শিপ্রা এবার বেশ খুশি খুশি৷

রোহিণীর বিয়েতে ওরা সবাই এসেছিল৷ ওঁরা একটা খুব দামি জড়োয়ার সেট গিফ্‌ট্‌ দিয়েছিলেন রোহিণীকে৷ গলার, কানের আর হাতের৷ রোহিণী সেটা মাঝে মাঝেই ব্যবহার করে শাড়ি পরার অকেশন ঘটলে৷ শাড়ি পরা অবশ্য খুব কমই হয়৷

রোহিণীর সেই বারই বেশ ভাল লেগেছে অমরজিৎকে দেখে৷ রোহিণীর বিয়ের আগে পরে বার তিন-চার ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল সেযাত্রা৷ রোহিণী যখনই সুযোগ পায় দেশে আত্মীয়দের জন্য ছোটখাটো গিফ্‌ট্‌ পাঠায়৷ মাম্মা কলকাতায় গেলে মাম্মার হাত দিয়ে৷ ওর মা বাবা দু-তিন মাস আগে যখন এল তখন মা’র স্যুটকেসে ভর্তি করে মাসি পিসি যত রাজ্যের আত্মীয়দের জন্য রকমারি উপহার দিয়ে দিয়েছে ও৷ অমরজিতের জন্য পাঠিয়েছে একটা চমৎকার কার্ডিগান আর একটা পারফিউম৷ রোহিণী যে শপিং করতে খুব একটা ভালবাসে তা নয়৷ তবে দেশে সকলের জন্য নানা রকম জিনিস পাঠাতে ওর ভাল লাগে৷ আর এখন তো বেশিরভাগ জিনিস অনলাইনেই কেনা যায়৷

রোহিণী কয়েকদিন আগে রণোর জন্য দুটো আর দাদার জন্য একটা সোয়েটার কিনেছে৷ ডেলিভারি আসেনি এখনও৷ কে জানে রণোর পছন্দ হলে হয়৷ রণো খুব ফাসি জামাকাপড়ের ব্যাপারে৷

রোহিণী যখনই সুযোগ পায় দেশে আত্মীয়দের জন্য ছোটখাটো গিফ্‌ট্‌ পাঠায়৷ মাম্মা কলকাতায় গেলে মাম্মার হাত দিয়ে৷ ওর মা বাবা দু-তিন মাস আগে যখন এল তখন মা’র স্যুটকেসে ভর্তি করে মাসি পিসি যত রাজ্যের আত্মীয়দের জন্য রকমারি উপহার দিয়ে দিয়েছে ও৷ অমরজিতের জন্য পাঠিয়েছে একটা চমৎকার কার্ডিগান আর একটা পারফিউম৷

রোহিণী এবার কিছুটা জোর করেই ক্যালিফোর্নিয়ায় এসেছে রণোর সঙ্গে কিছুদিন কাটাবে বলে৷ ওর এখানে আসাটা ডেফিনিটলি ওর মা বাবাকে খুব খুশি করেছে৷ অমিয় কম কথার মানুষ৷ বেশি মতামত দেন না দরকার না পড়লে, শুধু প্রসন্ন হাসেন৷ শিপ্রাকে আজকাল খুব বেশি ফোন করা হয় না৷ তবে সপ্তাহে একবার নিয়ম করে কথা বলার চেষ্টা করে৷ কেমন আছ, কী করছ? কী রান্না হল? এসব আটপৌরে জীবনের কথা বেশিক্ষণ চালাতে পারে না রোহিণী৷ বোরড হয়ে যায়৷ ফোন করলে শিপ্রাই বরং ওখানে কী কী নতুন ডেভেলপমেন্ট, কার বিয়ে হবে, কার বাচ্চা হল, সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলতে থাকেন৷ তাতেই সময়টা কেটে যায়৷ এখানে আসার আগে রোহিণী কী ভেবে একবার স্কাইপ করল মাকে৷ ‘মা, আমি রণোর ওখানে যাচ্ছি কিছুদিনের জন্য৷’

‘কিছুদিন মানে কতদিন?’ জিজ্ঞেস করেছিলেন শিপ্রা৷

‘আপাতত মাস দুয়েকের জন্য ভাবছি৷ তারপর দেখা যাক ৷’

‘খুব ভাল কথা৷ আমার তো মনে হয় রণোকে যখন ওয়েস্টকোস্টে থাকতেই হবে, তখন তোরও পার্মানেন্টলি ওখানেই চলে যাওয়া উচিত৷’ শিপ্রা দৃঢ়ভাবে বলছিলেন৷

‘তোমার চাকরির কী হবে?’ অমিয় জিজ্ঞেস করেছিলেন৷

‘আপাতত, ছুটি নিচ্ছি৷ ওসব নিয়ে ভাবিনি কিছু৷’ রোহিণী বলেছিল৷

আশ্চর্য, মা যা বলবে বলে ভাবছিল রোহিণী, মা তার উল্টোটাই বলল৷

 ‘দ্যাখ রুণি, আমার মনে হয় এখন বিয়ে থা করেছিস৷ এখন কিছুদিন মন দিয়ে সংসার কর৷ পরে ওসব স্কুলে কলেজে পড়াবার চাকরি ঠিক জুটে যাবে৷’ শিপ্রা বলেছিলেন৷

এদেশে স্কুলে চাকরির প্রসেস সম্পূর্ণ আলাদা৷ আর কলেজে চাকরি পাওয়া এবং তা বজায় রাখা যে কী প্রাণান্তকর প্রসেস, তা রোহিণী হাড়ে হাড়ে জানে৷ তবু মাকে এসব কিছু বলেনি ও৷ কী দরকার শুধু শুধু ওদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেবার৷

রণোর মাও রোহিণীর এই সিদ্ধান্তে খুব খুশি৷ সীমন্তিনীর ভিতরে ভিতরে ইচ্ছে রণোরা একটা সত্যিকারের সংসার পাতুক৷ ওদের যে বয়স, সেই বয়েসে তো ওর নিজের বছর চারেকের ছেলে ছিল৷ অরুণাভ রোহিণীর যাবার ডিসিশন শুনে কোনও মন্তব্য করেননি৷ খুব ভেবেচিন্তে মন্তব্য করে বাবাই৷ বাবাই-এর এই ধীরে চল ভাবটার জন্য যে কোনও জিনিস, যে কোনও সমস্যা রোহিণী বাবাই-এর সঙ্গে আলোচনা করতে স্বস্তি বোধ করে৷

রণো থাকে সানিভেল একটা জায়গায়৷ মাউন্টেন ভিউতে ওর অফিস থেকে এই জায়গাটা খুব বেশি দূরে নয়৷ গুগলের অনেক এমপ্লয়িই সানিভেলে বাড়ি ভাড়া করে থাকে৷ দুটো বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট ওদের৷ গেস্ট রুমটা খালিই পড়ে থাকে৷ রণো সকালে বেরিয়ে যাবার পর প্রথম কয়েকদিন রোহিণীর সময় কাটানো একটু মুশকিল হয়ে পড়ছিল৷ তারপর ও একটা নতুন রুটিন করে নিয়েছে নিজের জন্য৷ সকালে ব্রেকফাস্টের পর ও একটু অ্যাকাডেমিক লেখাপত্রের কাজ করে৷ নেটফ্লিক্স-এ সিরিজ দেখে কখনও৷ রণোর ফিরতে সন্ধে হয়ে যায়৷ তারপর রণো খুব ক্লান্ত না থাকলে ওরা ডিনার টেবিলে একটু গল্প করে৷ অনেকদিন বাদে রণোর সঙ্গে প্রাণ খুলে গল্প করতে খুব ভাল লাগে রোহিণীর৷ এখনও জায়গাটা খুব ভাল চিনে ওঠেনি ও৷ উইকেন্ডে ও অঞ্চলটা এক্সপ্লোর করে রণোর সঙ্গে৷ তবু একটা চিন্তা কুরেকুরে খায় ওকে৷ এইভাবে কতদিন কাটাবে? তার চেয়ে দেশে গিয়ে কিছুদিনের জন্য প্রাথমিক একটা সার্ভে করে আসাই বোধহয় ভাল৷ ইতিমধ্যে দিল্লিতে দাদার কাছে একটা মেসেজ করে রেখেছে রোহিণী৷ আলো সেনকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা থাকার সম্ভাব্য সময়৷

*পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ২১ ডিসেম্বর ২০২২

ছবি সৌজন্য: Flickr, Wikimedia Commons , Trincas, Pickpik,

Aparajita Dasgupta

অপরাজিতা দাশগুপ্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক। আগে ইতিহাসের অধ্যাপনা করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট মেরিজ কলেজে ইতিহাস ও মানবীচর্চা বিভাগের ফুলব্রাইট ভিজিটিং অধ্যাপকও ছিলেন। প্রেসিডেন্সির ছাত্রী অপরাজিতার গবেষণা ও লেখালিখির বিষয় উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের গোড়ায় বাঙালি হিন্দু ভদ্রলোকের চিন্তাচেতনায় এবং বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারী। অধ্যাপনা, গবেষণা, ও পেশা সামলে অপরাজিতা সোৎসাহে সাহিত্যচর্চাও করেন। তিনটি প্রকাশিত গ্রন্থ - সুরের স্মৃতি, স্মৃতির সুর, ইচ্ছের গাছ ও অন্যান্য, ছায়াপথ। নিয়মিত লেখালিখি করেন আনন্দবাজার-সহ নানা প্রথম সারির পত্রপত্রিকায়।

Picture of অপরাজিতা দাশগুপ্ত

অপরাজিতা দাশগুপ্ত

অপরাজিতা দাশগুপ্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক। আগে ইতিহাসের অধ্যাপনা করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট মেরিজ কলেজে ইতিহাস ও মানবীচর্চা বিভাগের ফুলব্রাইট ভিজিটিং অধ্যাপকও ছিলেন। প্রেসিডেন্সির ছাত্রী অপরাজিতার গবেষণা ও লেখালিখির বিষয় উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের গোড়ায় বাঙালি হিন্দু ভদ্রলোকের চিন্তাচেতনায় এবং বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারী। অধ্যাপনা, গবেষণা, ও পেশা সামলে অপরাজিতা সোৎসাহে সাহিত্যচর্চাও করেন। তিনটি প্রকাশিত গ্রন্থ - সুরের স্মৃতি, স্মৃতির সুর, ইচ্ছের গাছ ও অন্যান্য, ছায়াপথ। নিয়মিত লেখালিখি করেন আনন্দবাজার-সহ নানা প্রথম সারির পত্রপত্রিকায়।
Picture of অপরাজিতা দাশগুপ্ত

অপরাজিতা দাশগুপ্ত

অপরাজিতা দাশগুপ্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক। আগে ইতিহাসের অধ্যাপনা করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট মেরিজ কলেজে ইতিহাস ও মানবীচর্চা বিভাগের ফুলব্রাইট ভিজিটিং অধ্যাপকও ছিলেন। প্রেসিডেন্সির ছাত্রী অপরাজিতার গবেষণা ও লেখালিখির বিষয় উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের গোড়ায় বাঙালি হিন্দু ভদ্রলোকের চিন্তাচেতনায় এবং বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারী। অধ্যাপনা, গবেষণা, ও পেশা সামলে অপরাজিতা সোৎসাহে সাহিত্যচর্চাও করেন। তিনটি প্রকাশিত গ্রন্থ - সুরের স্মৃতি, স্মৃতির সুর, ইচ্ছের গাছ ও অন্যান্য, ছায়াপথ। নিয়মিত লেখালিখি করেন আনন্দবাজার-সহ নানা প্রথম সারির পত্রপত্রিকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com