banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ১০

অপরাজিতা দাশগুপ্ত

অক্টোবর ২৬, ২০২২

Stories of NRI Life
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

প্রবাসের পটভূমিকায় লিখিত বলে উপন্যাসে ইংরিজি সংলাপ ও শব্দের বহুল ব্যবহার রয়েছে। 

আগের পর্ব পড়তে: [] [] [] [] [] [] [] [] []

রোহিণী প্রিন্সটনে পড়ার সময় রাইটিং স্ট্র্যাটেজি সংক্রান্ত দু’একটা ক্লাস নিয়েছিল৷ তখনই ও জেনেছিল কোনও কাহিনি লেখার আগে তার পুরো ছকটা করে নেওয়া ভীষণ জরুরি৷ অর্থাৎ একটা গোটা কাহিনিতে এইসব নির্দিষ্ট জিনিস হবে এবং টাইমলাইনটা খেয়াল রাখতে হবে৷ এবার সেই টাইমলাইন ধরে গল্পটা সুশৃঙ্খলভাবে আস্তে আস্তে এগোবে৷ ছোট গল্প না হলেও উপন্যাসের ক্ষেত্রে পুরো ছকে ফেলা প্লটটা মাথায় রাখা জরুরি৷ রোহিণী একদম অবসেসড হয়ে গেছে জ্যোতির্ময়ের খাতায়৷ একজন লোকের জার্নি, দেশভাগ, উদ্বাস্তু হয়ে কলকাতায় আসা, অভাবের সংসারকে একটু একটু করে দাঁড় করানো, শান্তিনিকেতনে গিয়ে একটি মেয়েকে ভালোলাগা, বিয়ে, আর্কিটেক্ট হয়ে পরিবার নিয়ে প্রথমে ইংল্যান্ডে তারপর আমেরিকায় আসা, এবং দীর্ঘ চল্লিশ বছর এখানেই থাকা, জ্যোতির্ময়ের ট্র্যাজেক্টরি খাতার সূত্রে মোটামুটি জানা হয়ে যাচ্ছে রোহিণীর৷ এবার এই নতুন জীবনটাকে তার ফুটিয়ে তুলতে হবে পাঠকের জন্য যেভাবেই হোক৷ 

এইটুকু বুঝতে পেরেছে রোহিণী– ছোটকু ছিল বাবাই আর পিসিমণির ছোটকাকা৷ ছোটকু নিশ্চয়ই নকশাল হয়ে গেছিল৷ ওই সময়কার আরও অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণীর মতো৷ একটা আদর্শের জন্য লড়াই৷ সেই সমাজে তাও একটা আদর্শে স্টিক করে থাকা, আদর্শের জন্য লড়াই করা এসব চলত৷ তারা যে সময়ে জন্মেছে তখন আইডিওলজি পাল্টে গেছে৷ চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর বাঙালি জীবন, বাঙালি সমাজে শুধুই স্বপ্নভঙ্গের হতাশা, আর তা থেকে ঘুরে দাঁড়াবার জন্য বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির চর্চার শুরু৷ যখন ও দেশভাগের পরবর্তী ট্রমা এবং বাস্তুহারাদের রি-সেটলমেন্ট নিয়ে কাজ করতে শুরু করল, তখন কিছু কিছু ইন্টারভিউ করে ও বুঝতে পেরেছে, স্বাধীনতা-উত্তর উপনিবেশিক সমাজ রাজনৈতিকভাবে যেমন পাল্টে গেছে, তেমনই গত সত্তর বছর ধরে মানসিকতারও খোলনলচে বদলে গেছে৷ এই দিনবদলের একটা খণ্ডচিত্র একটা পরিবারের তিনটে প্রজন্মকে ঘিরে যদি একটা পরিবারের গল্প লেখা যেত তাহলে একটা নিঃশব্দে পাল্টে যাওয়া সমাজের মনকে কিছুটা হলেও ছোঁওয়া সম্ভব হত৷ জ্যোতির্ময়ের ডায়েরির ফর্মে লেখা আত্মজীবনী রোহিণীর মধ্যে সেই ইচ্ছেটাকে উস্কে দিয়েছে৷ লেখাটা একটা গল্পকে একজনের বয়ানে আস্তে আস্তে উন্মোচিত করছে নিশ্চিতভাবে৷ কিন্তু পঞ্চাশ-ষাট বছর ধরে একটা পরিবারের গল্পকে ঠিকমতো ফোটাতে গেলেও একটা বিশ্বাসযোগ্যতা চাই৷ ফর্মটাই ইমপর্ট্যান্ট, রোহিণী আজকাল বুঝতে পারছে৷ 

Crossing the border
দেশভাগের ট্রমা এবং বাস্তুহারাদের রি-সেটলমেন্ট নিয়ে কাজ করছে রোহিণী।

দাদাইয়ের ডায়রি, দিদানের টুকরো টুকরো কথা, এই সমস্ত কিছু তাকে একটা গল্পের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ ছোট ছোট জীবনের অনেক আলাদা আলাদা গল্প৷ কিংবা একটাই গল্পের স্রোত চলেছে সময়ের নদী দিয়ে৷ নিজের বেঁচে থাকার গল্পটাকে ঠিকভাবে বোঝার জন্য অনেক বছর উজানে গিয়ে পুরনো স্রোতটাকে ধরা জরুরি৷ সেই স্রোত ঠেলতে ঠেলতে পিছিয়ে গিয়ে গল্প শুরুর উৎসমুখটা ধরা একটা কষ্টকর প্রসেস৷ কিন্তু উজান বেয়ে নদীর উৎসকে খুঁজে বার করার মধ্যেও একটা মজা আছে৷ একটা স্যাটিসফ্যাকশন৷ পিছনে যেতে যেতে একটা গল্পকে খুঁজে পাওয়া, যে গল্পটা থেমে গেছে৷ এবার শুধু গল্পটা ধরা নয়, কীভাবে সেই গল্পটা বলা হবে, সেটাও ভাবার বিষয়৷ সে ইতিহাসের ছাত্রী৷ অ্যাকাডেমিক ইতিহাসের বই আজকাল অনেক লেখা হচ্ছে পার্টিশনের পার্সোনাল ন্যারেটিভে৷ দেশভাগের পরে যে লোকগুলো পারাপার করেছিল– নতুন জায়গায় থিতু হয়েছিল রেফ্যুউজি  হয়ে, তাদের স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গ, বসতি স্থাপনের গল্পকে ইতিহাসের ফর্মে ধরছেন অনেকে৷ প্রফুল্ল চক্রবর্তী যেমন লিখেছেন প্রান্তিক মানুষদের কথা৷ দ্য মার্জিনাল মেন– যারা ঘরেও নয় পারেও নয়, সীমানা পেরনোর কষ্টকর পর্বে, যারা নিরালম্ব, ত্রিশঙ্কুর মতো ঝুলে থাকে, আটকে পড়ে মার্জিনে৷ বর্ডার পেরনো মানুষের ছোট ছোট সুঃখদুঃখের বৃত্তান্ত যেমন ধরেছেন উর্বশী বুটালিয়া– দ্য আদার সাইড অফ সাইলেন্স৷ নৈশব্দ্যের ওপারে রচিত হয় এযাবৎ না ধরা যে হাসি-কান্না, ব্যর্থতা; হতাশা, না-পাওয়ার ইতিহাস৷ কীভাবে রোহিণী ধরবে তার গল্পটাকে? 

তাছাড়া আরও সমস্যা আছে৷ সে বলতে চাইছে বর্ডার ক্রসিংয়ের গল্প৷ সীমানা পেরনোর আখ্যান৷ জীবনে নানা সময়ে নানাভাবে সীমানা পেরোয় মানুষ৷ বর্ডার কি শুধু দেশের ফিজিকাল জিওগ্রাফি দিয়ে তৈরি হয়? চারিদিকে কতরকম কাঁটাতার, কতরকম বিধিনিষেধ, পদে পদে ডিঙোতে হয় মানুষকে৷ কতরকম বেঁচে থাকার লড়াই৷ শুধু দেশভাগ নয়, তার এখনকার বেঁচে থাকার পরিসরেও কতরকম লড়াই ঢুকে পড়ছে৷ ‘ব্ল্যাক লাইভ্‌স্‌ ম্যাটার’ কালো মানুষের নিজস্ব লড়াইয়ের প্রতীক৷ ‘মি টু’ আন্দোলনে ভাষা পেয়েছে মেয়েদের জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ৷ কাস্টিজ়ম্‌, রেসিজ়ম, সেক্সিস্ট পুরুষতন্ত্র, কতরকম অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়ছে মানুষ৷ সে সব সংগ্রামের থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখে কী করে লেখা সম্ভব পার্টিশনের গল্প? সে গল্প তো তবে একমাত্রিক হয়ে যাবে রক্তশূন্য প্রেত অবয়বের মতো!

Arunlekha
কথা ঠিক সংলগ্নভাবে বলতে পারেন না অরুণলেখা।

কী যে করে রোহিণী? কার সঙ্গে যে কথা বলে? অরুণলেখার অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে৷ এখন বেশিরভাগ সময়ই আধো ঘুম আধো জাগরণের একটা মাঝামাঝি জায়গায় থাকেন তিনি৷ একমাত্র সীমন্তিনী সাধ্যসাধনা করে একটু খাওয়াতে পারে শাশুড়িকে৷ ভাগ্যিস আগে বেশ একদিন ডিটেলে কথা বলে নিয়েছিল রোহিণী৷ এখন যা অবস্থা, তাতে কোনও কথাই ঠিক সংলগ্নভাবে বলতে পারেন না অরুণলেখা৷ কাছে গেলে চিনতে পারেন কিনা বোঝা যায় না৷ এখানে থাকলে প্রতিদিন সকালে গিয়ে রোহিণী বলে– ‘কেমন আছ দিদান?’ অরুণলেখা আধবোজা চোখ দুটোতে হাসির আভাস খেলা করে যায়৷ ঘাড়টা সামান্য নেড়ে অরুণলেখা বলেন– ‘ভালো৷’ অদ্ভুত পরিতৃপ্ত দেখায় দিদানকে৷ যে অরুণলেখা চিরকাল স্বাধীনভাবে জীবন কাটিয়েছেন, রোহিণী গল্প শুনেছে– কয়েকবছর আগেও গাড়ি চালিয়ে ফিলাডেলফিয়া থেকে চলে আসতেন অরুণাভদের বাড়ি লেক্সিংটনে, ইদানীং তিনি যেন সম্পূর্ণভাবে এ বাড়ির লোকেদের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছেন৷ বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে এখন অনায়াস বিচরণ তাঁর৷ রোহিণী এর মধ্যে আরও একদিন চেষ্টা করেছে অরুণলেখার সঙ্গে কথা বলার৷ সেদিন রোহিণীর ভাগ্যক্রমে বেশ স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিলেন অরুণলেখা৷
– দিদান, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
– কী কথা?
বেশ হেসেই বলেছিলেন অরুণলেখা৷ সাহস পেয়ে রোহিণী বলেছিল,
– ১৯৭৫ সালটা তোমাদের মানে তোমার আর দাদাইয়ের জীবনে খুব খারাপ সময়, তাই না? মানে দাদাইয়ের বাবা মারা গেলেন, তারপরই তোমার মা-বাবা৷ 
অরুণলেখা অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলেন৷ যেন নিজের মধ্যে কথাগুলো সাজিয়ে নিচ্ছেন৷ তারপর বলেছিলেন, 
– তা বলতে পারো৷ তবে মা বাবা তো কারুর চিরদিন থাকে না৷ একসময় ছেড়ে যেতেই হত৷ আমি তো তখন এদেশেও থাকতে পারতাম৷ তা তো হয়নি৷ শ্বশুরমশাইয়ের শেষ সময়ে আমরা কলকাতায় গিয়েছিলাম৷ ভাগ্যিস, তাই তো আমার মা-বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল শেষবারের মতো৷ 
– যখন খবরটা পেলে, তখন কি মনে হয়েছিল দিদান?
– ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না৷ বাবা-মা এত আশা করে গেলেন দাদার সঙ্গে দেখা করতে, আর ফিরলেন না৷
– তোমার দাদার সঙ্গে কি কথা হয়েছিল ওঁদের? 

অরুণলেখা আবার চুপ৷ তারপর বলছেন,
– সেটা এই এত বছরেও জানতে পারিনি৷ দাদাকে দেখে কী বলেছিলেন ওঁরা, দাদাই-ই বা কী বলেছিল সে সব অলকানন্দার স্রোতের সঙ্গে মিশে হারিয়ে গেছে৷
– তবু মা-বাবা তো শেষ সময়ে সন্তানদের দেখে গেছিলেন। দাদাকে দশবছর পর, আমাকেও সাতবছর পর৷ সেই বা কম কী! দশ বছর ধরে সন্তানদের দেখতে পাননি ওঁরা৷ আমার সঙ্গেই বা কতটুকু দেখা হত? চিঠিতেই খোঁজখবর চলত৷ দশবছর অনেকটা সময়৷ নিজেদের অনেক পালটে নিয়েছিলেন ওঁরা৷ যে মানুষ দুটো তার আগে চল্লিশ বছর শান্তিনিকেতনের চৌহদ্দির বাইরে পা বাড়াননি, তাঁরা জীবনের শেষ দশবছর, বছরে তিন-চার মাস হিমালয়ের প্রতিটি কন্দরে ঘুরে বেড়িয়েছেন৷ ছেলেকে খোঁজাকে উপলক্ষ করে ভ্রমণের নেশা ধরে গেছিল ওঁদের৷ জীবনে যাঁরা কোনও মন্দিরে প্রণাম করেননি, শেষ কটা বছর তাঁরা ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি মন্দিরে গিয়ে ছেলেকে খুঁজেছেন, সাধু সন্ন্যাসীদের আখড়ায় হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেছেন৷ জীবন ওঁদের ঘাড়ে ধরে শিক্ষা দিয়েছিল, কোনও সত্যই শেষ কথা নয়৷ অ্যাবসুলিউট ট্রুথ বলে কিছু হয় না৷ সবকিছুই বদলায়, বিশ্বাস বদলে যায়৷ জীবনের চেয়ে বড় শিক্ষক আর কে আছে?
অরুণলেখা খুব ক্লান্তভাবে শ্বাস ফেলেন৷
– আর তোমার দাদা? তিনি কী করলেন?
– দাদা! সে আর কী করবে? সে তো তখন মোহন মহারাজ৷ জাগতিক ছোটখাট দুঃখ সুখ তাকে স্পর্শ করবে কেন? দুর্ঘটনার খবর সেই দিয়েছিল তোমার দাদাইকে৷ সেখানেই তার কর্তব্য শেষ হয়েছিল৷
– তোমার সঙ্গে শেষ কবে দেখা হয়েছিল?
– চৌষট্টি সালেই ধরতে পার৷ যখন থেকে সে চিরদিনের মতো বাড়ি ছাড়ল৷ একবার শুধু দেখা হয়েছিল মাঝখানে– সেই দশ মিনিটের দেখাকে যদি দেখা বল৷
– কবে দেখা হল দিদান? উনি এসেছিলেন তোমার কাছে?
অরুণলেখা একটু হাসলেন। বললেন,
– নাঃ সে আসেনি৷ আমি গেছিলাম৷ শান্তিনিকেতনের পূবালী বাড়ি বিশ্বভারতীকে দান করেছিলাম৷ শান্তিনিকেতন আমাদের অনেক দিয়েছে৷ বাবা মায়ের পঞ্চাশ বছরের বাস ছিল ওখানে৷ তাই ওটুকু করা আমার কর্তব্য ছিল৷ দাদা সম্মতিপত্র পাঠিয়েছিল৷ লেটার অফ কনসেন্ট৷ আটাত্তরে বাড়ি হাতবদল করার পর ফিরে আসার আগে একবার দাদাকে দেখতে ইচ্ছে হয়েছিল খুব৷ বাবা মা আর দাদা ছাড়া তো কেউ ছিল না৷ তাই একবার সাহসে ভর করে চলে গেলাম৷ ঠিকানা তো ছিলই আমার কাছে৷
– তারপর? দেখা হল?
– হিমালয়ের কোলে একটা আশ্রম৷ সেখানে কাছেই একটা ধর্মশালায় উঠে দেখা করতে গেলাম আমি৷ তিনঘণ্টা অপেক্ষার পর সেবায়েতরা আমাকে নিয়ে গেল মোহন মহারাজের কাছে৷ সেই অদ্ভুত পার্বত্য প্রকৃতির জন্যই কিনা জানি না আমার চোখে জল আসছিল বারবার৷ ঠান্ডায় খুব চোখ থেকে জল পড়ে, জান তো?
– তুমি আগে কথা বললে? না উনি?
– আমিই বললাম৷ বললাম ‘দাদা, আমি এসেছি৷ আমাকে চিনতে পারছ?’ দাদার শিষ্যেরা বললেন, আজ ওঁর মৌন ব্রত৷ একটা ছোট্ট চিরকুটে দাদা লিখল, ‘সন্ন্যাসীর পূর্বাশ্রমের কথা মনে করতে নেই৷’ সবকিছু বদলে যায়৷ ওই যে গুরুদেব বলেছিলেন না জন্মদিনের ধারা বহন করে চলেছে মৃত্যুদিনের দিকে আর তার মধ্যে বসে গাঁথা হয়ে চলেছে– ‘নানা রবীন্দ্রনাথের একখানি মালা৷’ আমাদের সবারই তো তাই৷ প্রতিটি দিনই একটু একটু করে বদলে যাচ্ছি আমরা– আর অলক্ষে নানা-আমির বিনিসুতোয় মালা গাঁথা হয়ে চলেছে৷ 

অরুণলেখা চুপ করে তাকিয়ে আছেন লেকের রাজহাঁসদুটোর দিকে৷ রোহিণী খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল,
– দিদান, তোমার বলতে খুব কষ্ট হল না? খুব ভালবাসতে তুমি দাদাকে? 
অরুণলেখা দৃষ্টি ফেরালেন৷
– ভালোবাসা! হ্যাঁ, একসময় খুব ভালোবাসতাম আমার সেই দাদাকে৷ একসঙ্গে একই বাবা মায়ের স্নেহচ্ছায়ায় বেড়ে উঠেছিলাম তো! তবে অনেক বছর হল তো ৷ সেটা আটাত্তর সাল৷ আর এটা…
মনে মনে হিসেব করছেন অরুণলেখা।
– চল্লিশ বছর অনেকটা লম্বা সময়৷ ওই যে বলে না, চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়৷ ফিরে এসে তোমার দাদাইকে বলেছিলাম এই ব্রিফ এনকাউন্টারের কথা৷ উনি খুব রাগ করেছিলেন৷ বলেছিলেন, আমি তোমার সঙ্গে কলকাতায় গেলে কখনই তোমাকে যেতে দিতাম না মোহনের সঙ্গে দেখা করতে৷ তুমি কি নির্বোধ? বুঝতে পার না, যে লোক তার বাবা মাকে তার হোয়্যার অ্যাবাউটস্‌ না জানিয়ে জীবন্মৃত করে রাখে, সে যে বোনের প্রতি নিষ্ঠুর হওয়া ছাড়া অন্য কিছুই করতে পারবে না? তোমারই অন্যায়৷ উনি নিজেও তার আগের বছরই খুশির সঙ্গে তুচ্ছ এক কারণে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন৷

himalayas
ওঁরা বছরে তিন-চার মাস হিমালয়ের প্রতিটি কন্দরে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

দাদাইয়ের সম্পর্ক ছিল না ছোটবোনের সঙ্গে? জ্যোতির্ময়ের আত্মজীবনী যতটা পড়া হয়েছে, তার মধ্যে তো এই ঘটনার কোনও উল্লেখ নেই? সেই বোন কোথায় থাকে এখন? কী এমন কারণ যার জন্য বাকি জীবন আর সম্পর্কই রইল না দু’জনের? সেই প্রশ্নটাই বেরোয় রোহিণীর মুখ থেকে৷
– কেন? কেন সম্পর্ক ছিল না?
– সে অনেক কথা৷ উনি বোনকে এখানে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন৷ খুশি রাজি হয়নি৷ তাছাড়া.. 
আরও কী একটা বলতে গিয়েও থেমে যান৷ রোহিণী বলে,
– তুমি প্রতিবাদ করনি কেন দিদান?
অরুণলেখা একটু ভেবে বললেন,
– আসলে মানুষের মন বড় বিচিত্র দিদিভাই৷ আমিও তো মানুষ! দোষেগুণে একজন রক্তমাংসের মেয়ে৷ আমার মনে হয়েছিল, আমার দাদা যদি কোনও কারণ ছাড়াই চৌষট্টি সাল থেকে আমার সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করতে পারে, বাবা মায়ের মৃত্যুর পর একবারও ছোটবোনটার কথা মনে না করে থাকতে পারে, তবে আমারই বা কি দায় আছে বুঝিয়ে সুজিয়ে ওঁর শুভবুদ্ধি উদয় করার? একধরনের প্রতিহিংসা চরিতার্থতা বলতে পারো৷ খুব কমন হিউম্যান সাইকোলজি৷
– তবে আরও একটা কথা ছিল৷
এবার দিদান গিলে ফেলা কথাটুকু আবার বলছে৷ 
– তোমার দাদাই তো অন্য কোনও মত মেনে নিতেন না চট করে৷ নিজের মতামতই অভ্রান্ত এবং ধ্রুব বলে মনে করতেন৷ ওঁর ছোটভাই, যাঁকে উনি সন্তানসম স্নেহ করতেন, তার স্বাধীন ভাবে রাজনীতি করা উনি মানতে পারেননি৷ ওঁর ছোটবোন খুশি যখন নিজের মনোমতো একজন সঙ্গী খুঁজে পেল, উনি মানলেন না৷ ওঁর নিজের মেয়ের বিয়ে নিয়েও ওঁর প্রবল আপত্তি ছিল৷ আমাকে উনি সেই কোন ছোট বয়স থেকে গড়ে পিটে নিয়েছিলেন৷ জীবনে কখনও ওঁর বিরুদ্ধাচরণ করতে শিখিনি তো! তার ফলে উনি জানতেন আমার মধ্যে নরম জমি৷ এই জমি উনি নিড়োতে পারবেন ইচ্ছেমতো৷ তাই হয়েছে সারাজীবন৷ ওই যে রাজহাঁস দেখছ, ওর পিছনে মেয়ে হাঁসের দল যেমন সারি দিয়ে ভেসে যায়, সেরকম আমিও প্রশ্নহীন ভাবে সারাজীবন ওঁর মতই অনুসরণ করে গেছি ছায়াসঙ্গিণীর মতো৷
অরুণলেখার চোখ বুজে এসেছে৷ রোহিণী নিঃশব্দে বেরিয়ে এসেছিল দিদানের ঘর থেকে৷

***

অন্য আর একদিন রোহিণী আর একটা খুব টাচিং দৃশ্য দেখে ফেলেছিল ৷ হঠাৎ সেদিন অরুণাভ খানিকক্ষণ গিয়ে বসেছিল মায়ের খাটের পাশে৷ রোহিণী কী একটা করতে গিয়ে ঘরে ঢুকতে গিয়েও পিছু হঠে এসেছিল নিঃশব্দে৷ বাবাইকে ও দিদানের ঘরে ঢুকতে দেখে না সচরাচর৷ বাবাই দূর থেকে মায়ের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখে, ওষুধপত্র থেকে নার্স রাখা অবধি সব দায়িত্ব নীরবে পালন করে৷ কিন্তু মায়ের সঙ্গে বসে গল্প করতে প্রায় কখনই ও দেখেনি বাবাইকে৷ ছুটির দিনে বাড়িতে অরুণাভ ধোপদুরস্ত পাঞ্জাবি-পাজামা পরে ইদানিং দেশের মতো৷ সাঁতার কাটা, গল্ফ খেলার প্রতি ঝোঁক আস্তে আস্তে একটু যেন কমে আসছে৷ ইদানীং জিম করতে গেলে একটু যেন হাঁফ ধরে৷ হয়তো মনের ভুল৷ তবু অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করাই ভালো মনে হয় অরুণাভর৷ আজকাল ঘরে বসে টেলিভিশন দেখা, কি গান শোনাই বেশি পছন্দ করে৷ গান অবশ্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে, সবসময়ই শোনে৷ লেক্সিংটন থেকে গাড়ি নিয়ে ম্যাসজেনে অফিসে যেতে যেতে গাড়িতে সবসময়ই বাজতে থাকে হ্যারি বেলা ফন্টে, লিওনার্ড কোহেন, জন ডেনভার৷ সেদিন ‘কান্ট্রি রোড’ গানটা শুনতে শুনতে তাঁর বিদ্যুৎচমকের মতো মনে পড়ে গেল, এই গানটা তিনি প্রথম শুনেছিলেন মা-বাবার সঙ্গে গাড়িতে যেতে যেতে৷ পিছনে তারা দুই ভাই-বোন৷ জিনি তখন খুব ছোট৷ তাঁর নিজেরও এগারো-বারো বোধহয়৷ 

অরুণাভর স্পষ্ট মনে পড়ল, আমেরিকায় আসার পর সেই প্রথম তাঁরা কোথাও একসঙ্গে যাচ্ছিলেন বেড়াতে৷ নতুন কেনা আমেরিকান গাড়িতে৷ ভার্জিনিয়ায় শেনানডুয়া কেভসের কাছে একটা হোটেল বুক করা হয়েছিল ৷ ফিলাডেলফিয়াতে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওদের পরিবার থাকত তখন৷ ইউ পেন ক্যাম্পাসের কাছে৷ সেবার তিন দিনের ছুটিতে একটা লং উইকএন্ডে ফিলি থেকে ভার্জিনিয়া হয়ে অ্যাপালেশিয়ান মাউন্টেন রেঞ্জের মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে ড্রাইভ করছিলেন বাবা৷ সেইসময় থেকেই বেড়াতে যাবার সময় পছন্দসই কী কী গান শোনা যায় সব ক্যাসেট করে নিয়ে যেতেন বাবা, যাতে পথটা উপভোগ্য হয়৷ পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে বাবার কথামতো মা-ই ক্যাসেটের খোপে পুরে জন ডেনভারের গানগুলো চালিয়েছিল৷ বাবা বলেছিল– ‘হিয়ার দিস বাবাই৷ এও আরেকরকম সং অফ দ্যা রোড ৷ পথের কবি জন ডেনভার৷’ কান্ট্রি রোড, টেক মি হোম, সেবারই প্রথম শোনা৷

John Denver
এও আরেকরকম সং অফ দ্যা রোড ৷ পথের কবি জন ডেনভার৷

এই এরিয়াটাই ব্লু রিজ মাউন্টেন৷ ইট ইজ পার্ট অফ দ্যা অ্যাপালেশিয়ান রেঞ্জ ৷ জ্যোতির্ময় বলছিলেন অরুণাভর উদ্দেশ্যে৷ অরুণলেখা চুপ করে প্রকৃতিকে দু’চোখ ভরে দেখছিলেন, আর গান উপভোগ করছিলেন৷ জিনি গাড়ির ভিতরে বেবি সিটে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল৷ বহু বছর আগে সেই স্মৃতিটা হঠাৎ বড় স্পষ্ট হয়ে মনের মধ্যে খেলা করছিল বলেই সেদিন হস্‌পিটাল থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে অরুণাভ ওর মায়ের বিছানার পাশটিতে বসেছিল৷ এমনিতে ওর মায়ের কাছে বসে গল্প করতে ইচ্ছে করে না৷ এই রোগশয্যায় শায়িত মায়ের মধ্যে সে পুরনো মাকে খুঁজে পায় না৷ জ্যোতির্ময় স্ট্রোক হয়ে আংশিক প্যারালাইজড্‌ হয়ে যাবার পরও ঠিক এমনই দমবন্ধ লাগত অরুণাভর৷ বাবার রোগশয্যার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে অস্থিরবোধ হত৷ কিন্তু সেদিন অরুণাভ বেশ কিছুক্ষণ মায়ের পাশে বসে মায়ের গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে গল্প করছিল৷
– মামণি!, ডু ইউ রিমেমবার আওয়ার শেনানডুয়া ট্রিপ? মনে আছে তোমার?
মা-বাবার সঙ্গে বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলাতেই অভ্যস্ত অরুণাভ৷ অরুণলেখা সেদিন অনেকটাই স্ববশে ছিলেন৷ ঘাড় হেলালেন৷ মনে আছে তাঁর৷
– অ্যান্ড দ্যা সং– কান্ট্রি রোড? দ্যাট ওয়াজ দ্যা ফার্স্ট টাইম আই হার্ড জন ডেনভার৷  আশ্চর্যের বিষয় পথে গাড়িতে বাজা সেই গানও স্পষ্ট মনে আছে অরুণলেখার৷
– ব্লু রিজ মাউন্টেনস, শেনানডুয়া রিভার৷ টু দ্য প্লেস আই বিলং, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, মাউন্টেন মামা, টেক মি হোম…
অরুণলেখা বিড়বিড় করছিলেন৷ অরুণাভ মায়ের কথার সঙ্গে গুনগুন করছিল গানের কলিগুলো৷ আড়াল থেকে চোরের মতো রোহিণী দেখছিল সেই অপরূপ দৃশ্য৷
– হসপিটাল থেকে এলি? ডক্টর স্কিনার ভালো আছেন? খুব খাটতে হয় তোকে, না?
অরুণলেখা ছেলের হাতটা নিয়ে হাত বুলোচ্ছিলেন৷ ডক্টর স্কিনার কত বছর হল মারা গেছেন৷ অরুণলেখা জানতেন সে কথা৷ ডক্টর স্কিনারকে শ্যাডো করত অরুণাভ শিক্ষানবিশ থাকার সময়৷ তারপর পেরিয়ে গেছে তিরিশ বছর৷ কিন্তু সেকথা এখন অরুণলেখাকে বুঝিয়ে লাভ নেই৷ তিনি এখন টাইম ট্রাভেল করেন ইচ্ছেমতো৷ একলাফে ডিঙিয়ে যান চল্লিশ-পঞ্চাশ-ষাট বছরের সীমানা৷ এ রোগের এটাই নিয়ম৷ অরুণাভ কথা ঘোরাতে চাইল৷ বলল,
– মামণি, উড ইউ লাইক টু গো এনিহোয়্যার? কোথাও যেতে ইচ্ছে করে? জিনির কাছে বা শান্তিনিকেতনে যেতে চাও?
– শান্তিনিকেতন গেলাম তো কিছুদিন আগে৷ ওই যে সবাই মিলে গেলাম৷ দাদা, খুশি, বৃন্দা সকলে ছিল৷ খুব আনন্দ হল৷ খুব আনন্দ৷  
এতখানি কথা একসঙ্গে বলে হঠাৎ যেন ক্লান্ত হয়ে পড়লেন অরুণলেখা৷ একটু চুপ করে রইলেন, তারপর আবার টেনে টেনে বললেন,
– সেনহাটি যেতে ইচ্ছে করে৷ এখন পাসপোর্ট লাগে ওখানে যেতে৷ তোর বাবার দেশ৷ কত গল্প শুনেছি ওঁর মুখে৷

চোখ বুজে নিমেষের মধ্যে ঘুমে ঢুলে পড়লেন অরুণলেখা৷ অরুণাভ হাত বাড়িয়ে ডিমারের সুইচটা ঘোরাল৷ ঘরে এখন মৃদু আলো৷ মায়ের ঘরের ডাবল গ্লেজ়ড্‌ কাচের মধ্যে দিয়ে লেকের জলে আলো থিরথির করে কাঁপছে৷ শেষ কবে শান্তিনিকেতন গিয়েছেন অরুণলেখা মনে করার চেষ্টা করল অরুণাভ৷ মনে পড়ল না৷ ছোটপিসি শান্তিনিকেতনে থাকত৷ বাবা-মার মৃত্যুর পর ছোটপিসির সঙ্গে কেন যে সম্পর্ক রাখল না বাবা! সবটাই বেশ স্ট্রেঞ্জ৷ বৃন্দা নামটা কতদিন বাদে বললেন অরুণলেখা৷ বৃন্দার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে আজ কত বছর! সীমন্তিনী অতীতের সমস্ত চিহ্ন সযত্নে মুছে ফেলতে চেয়েছিল৷ বৃন্দার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব ছিল না৷ অরুণলেখা বৃন্দার সঙ্গে শান্তিনিকেতন কেন, কোথাও যাননি কোনওদিন৷ অরুণাভর হঠাৎ প্রবল ইচ্ছে হল একটা বিশাল লাক্সুরিয়াস ক্যারাভ্যান কেনার৷ সেই ক্যারাভানে সবাইকে নিয়ে মজা করে বেড়িয়ে বেড়াবে ও৷ সীমন্তিনী, রণোরা, মামণি, সবাই ইচ্ছেমতো বিশ্রাম নেবে ক্যারাভ্যানে৷ এই বিশাল দেশের কতটুকুই বা দেখেছে অরুণাভ৷ এটা অরুণাভর ছোটবেলার ইচ্ছে ছিল৷ একটা ক্যারাভ্যান কিনে সারা দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত অবধি চষে বেড়াবে অরুণাভ, মা, বাবা আর জিনির সঙ্গে৷ তার ছোটবেলার সুখী পরিবার৷ সেই ইচ্ছেটাই নতুনভাবে আবার উস্‌কে দিল ওই গানটা৷ খাবার পর শোবার ঘরের জানলার পাশে আরামদায়ক রকিংচেয়ারে পা তুলে বসে অল্প অল্প ঢুলছে অরুণাভ৷ সীমন্তিনী ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষণ৷ মাথার ওপরে টিক্‌টিক্‌ করে দেওয়াল ঘড়ির শব্দ ছাড়া অন্য কোনও শব্দ নেই চরাচরে৷ শুধু ওই টিক্‌ টিক্‌ শব্দই জানা দিচ্ছে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তিল তিল করে৷ সময় ফুরিয়ে আসছে৷ টুপটাপ করে ঝরে পড়া মুহূর্তরা ভবিষ্যতের থেকে দ্রুত চলেছে অতীতের দিকে৷ বয়স বাড়ছে অরুণাভর৷ রকিং চেয়ারে বসে অরুণাভ প্রায় অনুচ্চারে গুনগুন করছে,
– ব্লু রিজ মাউন্টেনস, শেনানডুয়া রিভার৷ কান্ট্রি রোড, টেক মি হোম…
রকিং চেয়ারের দুলকি চালে চোখ বুজে আসছে অরুণাভর… একটা প্রকাণ্ড ক্যারাভ্যানে আধশোয়া হয়ে বাড়ি ফেরার পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে ও৷   (চলবে)

*পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ২ নভেম্বর ২০২২
*ছবি সৌজন্য: Pinterest, Artzolo, Saatchi Art

অপরাজিতা দাশগুপ্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক। আগে ইতিহাসের অধ্যাপনা করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট মেরিজ কলেজে ইতিহাস ও মানবীচর্চা বিভাগের ফুলব্রাইট ভিজিটিং অধ্যাপকও ছিলেন। প্রেসিডেন্সির ছাত্রী অপরাজিতার গবেষণা ও লেখালিখির বিষয় উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের গোড়ায় বাঙালি হিন্দু ভদ্রলোকের চিন্তাচেতনায় এবং বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারী। অধ্যাপনা, গবেষণা, ও পেশা সামলে অপরাজিতা সোৎসাহে সাহিত্যচর্চাও করেন। তিনটি প্রকাশিত গ্রন্থ - সুরের স্মৃতি, স্মৃতির সুর, ইচ্ছের গাছ ও অন্যান্য, ছায়াপথ। নিয়মিত লেখালিখি করেন আনন্দবাজার-সহ নানা প্রথম সারির পত্রপত্রিকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com