banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

মে দিবসের বিস্মৃত বিপ্লবী

ড. পাঞ্চজন্য ঘটক

মে ১, ২০২৩

Shapurji Saklatvala
সাপুরজির জন্ম ১৮৭৪ সালের ২৮শে মার্চ।
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

ব্রিটেনের সঙ্গে কমিউনিজমের সম্পর্ক বহু পুরনো। কার্ল মার্ক্সের তখন ৩১ বছর বয়েস। ওই বয়েসেই তাঁর বামপন্থী চিন্তাভাবনা আর লেখার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের চোখের বালি হয়ে ওঠেন। ১৮৪৯ সালে তাঁর জন্মভূমি প্রাশিয়ার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। রাজা চতুর্থ ফ্রেডরিক উইলিয়াম ক্ষমতায় এসে বামপন্থীদের ওপর খড়্গহস্ত হয়ে ওঠেন। ১৬ মে, ১৮৪৯ কার্ল মার্ক্সকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মার্কস দম্পতি তখন তাঁদের চতুর্থ সন্তানের অপেক্ষায়। প্রাশিয়া থেকে মার্ক্স যান প্যারিসে। প্যারিসে তখন বামবিরোধী শাসক। মার্ক্সকে বলা হয় প্যারিস ছেড়ে চলে যেতে। মার্ক্স চেষ্টা করেন জার্মানি বা বেলজিয়ামে যাওয়ার। বিফল হন। ১৮৪৯-এর জুনে মার্ক্স লন্ডনে আসেন। লন্ডন শহরেই আমৃত্যু বাস করেন মার্ক্স, রাষ্ট্রহীন অবস্থায়। নিজের কোনও রাষ্ট্র না থাকায় হয়তো ওঁর আন্তর্জাতিক চিন্তাভাবনা করতে অসুবিধে হয়নি কোনওদিন। ব্রিটিশ সরকার মার্ক্সের ওপর অত্যাচার করেন– এরকম শোনা যায়নি। অবশেষে ১৪ মার্চ ১৮৮৩, ৬৪ বছর বয়েসে ওঁর মৃত্য হয়।  লন্ডনের হাইগেট সেমেট্রিতে ১৭ মার্চ  ১৮৮৩ নাস্তিকদের জন্য নির্ধারিত একটি এলাকায় ওঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ফ্রেডরিক এঙ্গেলস আর মার্ক্সের ছোট মেয়ে ইলিনোর মার্ক্স ছাড়া আর মাত্র ১১ জন উপস্থিত ছিলেন মার্ক্সের অন্তিম যাত্রায়। বছর ২২ আগে বন্ধু অর্জুন দাশগুপ্তের সঙ্গে দেখতে যাই মার্ক্সের সমাধি। গেটে গিয়ে গার্ডকে কোনদিকে যাব জিজ্ঞেস করার প্রথমেই বললেন — ওদিক দিয়ে চলে যান, মার্ক্সের সমাধি পেয়ে যাবেন। আমরা একটু অবাক হয়ে ওঁর মুখের দিকে তাকাতে ভদ্রলোক বললেন — হাইগেট সিমেট্রিতে প্রায় সবাই মার্ক্সের সমাধি দেখতেই আসেন|

১৯৫৪ সালের নভেম্বরে ওই সমাধিক্ষেত্রের অন্য একটি জায়গায় মার্ক্সের সমাধি স্থানান্তরিত করে হয়। ১৯৫৬ সালের ১৪ মার্চ নতুন সমাধির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সমাধির ওপরে লেখা– Workers of All Lands Unite, কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর শেষ লাইন। কোল্ড ওয়ার তখন তুঙ্গে। ঠান্ডা যুদ্ধের শৈত্যপ্রবাহ মার্ক্সের সমাধিকে ছুঁতে পারেনি| আজ পয়লা মে — কার্ল মার্ক্সের প্রতি আরেকবার শ্রদ্ধা জানাই।

Grave of Karl Marx Highgate Cemetery
হাইগেট সেমেট্রিতে কার্ল মার্ক্সের সমাধি

জ্যোতি বসু, স্নেহাংশু আচার্য, ভুপেশ গুপ্ত, তার পরবর্তীকালে প্রকাশ কারাতের মতো অনেক ভারতীয় কমিউনিস্টদের বামপন্থী রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় ব্রিটেনে। এসব কথা আমরা সবাই জানি। জ্যোতি বসু প্রায় প্রত্যেক বছর ব্রিটেনে আসতেন, সে কথাও অজানা নয় কারও। তবে আজ যে মানুষটির কথা বলতে যাচ্ছি, তাঁর কথা অনেকেরই বোধহয় আর মনে নেই। সব কমিউনিস্ট হয়তো বিপ্লবী। বিপ্লব তাঁর জীবদ্দশায় করে উঠতে না পারলেও, ইচ্ছেটা হয়তো থাকে। তাই এই লেখার নাম বিস্মৃত বিপ্লবী| 

এখন যেমন আদানি-আম্বানির নাম খুব শোনা যায়, আগে শোনা যেত টাটা-বিড়লার কথা। কোনও সংগ্রামী বক্তব্যে একসঙ্গে বলা হত এই শিল্পগোষ্ঠীর নাম। ছোটবেলায় আমি ভাবতাম এঁরা বুঝি দুই ভাই। আর দেশের সমস্ত ধন-সম্পদ এঁদের হাতেই। হয়তো এই ধারণা খুব ভুলও ছিল না। টাটা গোষ্ঠীর আদিপুরুষ জামশেদজি নাসেরবানজি টাটার বোন জারবাই। উনি বিয়ে করেন দোরাবজি সাকলাতওয়ালাকে। এঁদের সন্তান সাপুরজির জন্ম হয় ১৮৭৪ সালের ২৮শে মার্চ, বম্বেতে। বম্বের সেন্ট সেভিয়ার্স কলেজ ও স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে উনি মামার শিল্প সাম্রাজ্যে কাজ শুরু করেন। দায়িত্ব পান অধুনা ঝাড়খণ্ড আর উড়িষ্যার কয়লা আর আকরিক লোহা আহরণের। ভালোই চলছিল কাজ, বাদ সাধল শরীর। ম্যালেরিয়াতে ভুগতে ভুগতে শরীর ভেঙে পড়ে। ডাক্তারের নির্দেশে মামা জামশেদজি টাটা ১৯০৫ সালে সাপুরজিকে পাঠিয়ে দেন ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারে। টাটার ম্যানচেস্টার অফিসের প্রধান হিসেবে। শুধু শরীর হয়তো নয়, দেশে থাকতে সাপুরজি হোম রুল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। হয়তো ইংল্যান্ডে পাঠানোর পেছনে এটাও একটা কারণ ছিল।   

Shapurji Saklatvala
আন্দোলনরত শ্রমিকদের সমাবেশে সাকলাতওয়ালা।

১৯০৫ থেকে ১৯০৭ সালে উনি উত্তর ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ার কাউন্টির ম্যাটলকে শরীর সারাতে যান। উষ্ণ প্রস্রবন আর পাহাড়ে ঘেরা এই শহরের নাম ছিল স্বাস্থ্যকর জায়গা হিসেবে। এখানে ওঁর সঙ্গে আলাপ হয় স্যালি বা সেরা মার্শের। স্যালি ছিলেন সাপুরজির হোটেলের ওয়েট্রেস। আলাপ থেকে ভালবাসা। বিয়ে করেন সেরাকে। ১৯০৭ সালে সাপুরজি সপরিবারে লন্ডনে চলে আসেন। সমাজতান্ত্রিক আদর্শে প্রভাবিত হয়ে ততদিনে উনি Social Democratic Foundation-এর সদস্য। ১৯০৯ সালে উনি Independent Labour Party (ILP) তে যোগ দেন। বেশ কিছু বছর উনি সমর্থকের বেশি কিছু ছিলেন না এই পার্টির। ১৯১৭-র সোভিয়েত বিপ্লব ওঁর মনে নতুন জোয়ার আনে। উনি ILP র ভেতর এক গ্রুপ সংগঠন করেন যাতে ILP Third International-এ যোগ দিতে পারে। ১৯২১ সালের মার্চ মাসে ILP এর সম্মেলনে সাপুরজির প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়। সাপুরজি দেখেন ILP তে থেকে তাঁর স্বপ্ন সফল হবে না। উনি কমিউনিস্ট পার্টি অফ গ্রেট ব্রিটেনে (CPGB) যোগ দেন।

আরও পড়ুন: বহুমুখী অনুভার দীপ্তি

যাঁরা পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান শুনেছেন তাঁরা এই ব্যান্ডের ব্যতিক্রমী অ্যালবাম কাভারের সঙ্গে পরিচিত। Animals অ্যালবামের ওপরে Battersea Power Station-এর একটা মন-কেমন-করা ছবি আছে, মেঘের ঘনঘটার ব্যাকগ্রাউন্ডে। যাঁরা ইদানীংকালে শাহরুখ খানের ‘রা-ওয়ান’ ছবি দেখেছেন, এই পাওয়ার স্টেশন তাঁদের চোখে পড়েছে। ছবির শেষ দৃশ্যের শুটিং এখানেই হয়। এই North Battersea পার্লামেন্টারি কেন্দ্র থেকে সাপুরজি লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন। ১৯২২ সালের নভেম্বর মাসে উনি এই সিটে জয়ী হন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তৃতীয় ভারতীয় সদস্য। ১৯২৩ সালে উনি পরাজিত হন। ১৯২৪ সালে লেবার পার্টি সমস্ত কমিউনিস্টদের পার্টি থেকে বের করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে উনি এই সিট থেকে জয়লাভ করেন। CPGB থেকে খুব অল্প কয়েকজন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছেন — সাপুরজি তাঁর ভেতর একজন |

Shapurji was arrested in 1926 general strike
১৯২৬ সালে ব্রিটেনের সাধারণ ধর্মঘটে সাপুরজি গ্রেফতার হন |

পার্লামেন্টে ঢুকেই বেশিরভাগ সদস্য একটু বুঝে নিতে সময় নেন। ধীরে ধীরে মাপা শব্দে প্রশ্ন রাখা শুরু করেন। জোরালো বক্তব্য রাখার আগে বেশ খানিকটা সময় নেন। সাপুরজি এসবের ধার ধারেননি। ১৯২২ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে প্রথম বক্তব্যেই ব্রিটিশ সরকারকে ধারালো ভাষায় আক্রমণ করেন। তুলোধোনা করেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সামাজিক বৈষম্যকে। রাজাকেও ছেড়ে কথা বলেননি। সবাই নড়েচড়ে বসেন তাঁর প্রথম বক্তৃতা শুনে। উনি ১৯২৯ সাল পর্যন্ত এই সিট থেকে জয়ী হন। পার্লামেন্টে ধারাবাহিকভাবে জোরালো বক্তব্য রাখতেন। এই বক্তৃতা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ইতিহাসে The Saklatvala Opinion বলে পরিচিত।

সাপুরজি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ক্রমাগত ভারতের স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে গেছেন। তৎকালীন ভারতের জুটমিলে শ্রমিকদের দৈন্যদশার কথা তুলে ধরেছেন। ১৯২৬ সালে ব্রিটেনের সাধারণ ধর্মঘটে সাপুরজি গ্রেফতার হন। দু’মাস পরে মুক্তি পাওয়ার পর সারা দেশের জনসভায় বক্তব্য রাখেন এই অসাধারণ বাগ্মী। CPGB-র অত্যন্ত জনপ্রিয় বক্তা ছিলেন উনি। কাছের লোকেরা ওঁকে Sak বলে ডাকতেন। ১৯২৭ সালে MP থাকা অবস্থায় উনি ভারতে যান। গান্ধীজির সঙ্গে দেখা করেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে মতের মিল হলেও স্বাধীনতার পথ নিয়ে মতের অমিল হয় তাঁদের ভেতর। সাপুরজি সেই সময়ে অনেক ভারতীয় কমিউনিস্টদের সঙ্গে দেখা করেন। মিরাটে তুলোর মিলের শ্রমিকদের ধর্মঘটের ভিত তৈরি করেন। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে শুধু লেবার পার্টি করলে হয়তো ওঁকে ব্রিটিশ সরকার উপনিবেশের প্রশাসনের উঁচু পদে বসাতেন।

১৯২২ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে প্রথম বক্তব্যেই ব্রিটিশ সরকারকে ধারালো ভাষায় আক্রমণ করেন | তুলোধুনো করেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সামাজিক বৈষম্যের প্রতি | রাজাকেও ছেড়ে কথা বলেন নি | সবাই নড়ে চড়ে বসেন তাঁর প্রথম বক্তৃতা শুনে | উনি ১৯২৯ সাল পর্যন্ত এই সিট থেকে জয়ী হন |

শুধু ভারতের বিষয়ে নয়, ব্রিটেনের কয়লা শ্রমিকদের দাবি নিয়ে তীব্র বক্তব্য রাখেন সাপুরজি। এই বক্তব্যের জন্যই তাঁকে জেলে যেতে হয়। তাঁর বক্তব্যের একটি লাইন খুঁজে পেয়েছি–
‘Coal produces all the light and comforts, but you don’t find them in the colliery villages.’

পার্লামেন্টে আওয়াজ তোলেন লিভারপুলের ডক শ্রমিকদের মাইনের বর্ণ বৈষম্যের ব্যাপারে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনলাইন আর্কাইভে ওঁর বেশিরভাগ বক্তব্য সযত্নে রাখা আছে। তার কিছু পড়ার সুযোগ হয়েছে।  

১৯২৯ সালের নির্বাচনে উনি জয়ী হতে পারেননি। বলা হয় স্থানীয় মানুষের থেকে উনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, বৃহত্তর রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়। ১৯৩৪ সালে উনি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন, কিন্তু সেরে ওঠেন। ১৯৩৬ সালের ১৬ জানুয়ারি উনি আবার হৃদরোগে আক্ৰান্ত হন। আর সেরে উঠতে পারেননি | Woking-এর ব্রুকউড সেমেট্রিতে ওঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

১৯৩৭ সালে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের এক ব্রিগেডের নাম রাখা হয় তাঁর নামে। ১৯২১ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আর্কাইভে ওঁকে নিয়ে একটি বিরাট আর্টিকেল লেখা হয়। লেখাটির নাম– Bombay to Battersea: Shapurji Saklatvala – A Politician like no other’.  ওঁর ৬০ বছরের মৃত্যুবার্ষিকীতে দ্য মার্ক্সিস্ট পত্রিকায় হারকিষেন সিং সুরজিৎ একটি লেখার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। লেখাটির একটি লাইন এখানে তুলে ধরছি — “The purpose of this introduction is not to write in detail the contribution Saklatvala made in developing the Communist movement in India and Great Britain, while this is also necessary, here the intention is to highlight the fact that though Marxism is the ideology of the working class and it is class struggle which is the motive force of history, but once these ideas grip the mind even a person coming from the Tata family becomes a staunch revolutionary and dedicates his whole life to the cause of putting an end to exploitation of man by man and nation by nation.’’

A 1922 campaign ad for Shapurji Saklatvala
১৯২২ সালের ভোটের প্রচারপত্র।

ব্রিটেন এখন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার স্টেট। মানুষের অনেক দায়িত্ব সরকার বহন করে। বিনামূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে সবার জন্য। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য আছে নানা রকমের সুবিধে। ওয়ার্কিং ক্লাস মানুষ এক বিরাট শক্তি, কোনও রাজনৈতিক দলের ধামাধরা না হয়েই। এই অবস্থায় মানুষ একদিনে পৌঁছয়নি। ১৯৪৮-এ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মডেল চালু হওয়ার পরেও নানাভাবে মানুষের ওপর নেমে এসেছে সরকারি হাতুড়ি। খুব বেশিদিনের কথা নয়। ১৯৮৪-৮৫ সালের কয়লাখনির শ্রমিকদের ধর্মঘটের ওপর নেমে এসেছিল সরকারি দমন-পীড়ন।

আজ ২৭ বছর উত্তর ইংল্যান্ডে আছি। আমার অনেক বন্ধুর কাছে শুনেছি সেই কঠিন সময়ের গল্প। ব্রিটিশদের আপাতদৃষ্টিতে রাজনীতিবিমুখ মনে হতে পারে। কিন্তু প্রায় সবার নিজস্ব রাজনৈতিক ধারণা আছে। সেই ধারণার ভিত্তিতে তাঁরা ভোট দেন, ভোটের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে NHS — এখানকার সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা আর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার। বন্ধুদের কাছে শুনেছি ১৯৮৪-৮৫ সালের দিনগুলো ব্রিটেনের কাছে একদিক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকেও শক্ত ছিল। যুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে পুরো দেশ এক হয়ে লড়াই করেছিল। কিন্তু এই ধর্মঘটে একই শহরে, একই গ্রামে নানা বিভেদ ঢুকে পড়েছিল। কেউ পুলিশ — তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ধর্মঘট ভাঙার, কেউ ধর্মঘটের সমর্থক, কেউ নন। কে কার দিকে বোঝা মুশকিল হয়ে পড়েছিল।

১৯২৯ সালের নির্বাচনে উনি জয়ী হতে পারেননি | বলা হয় স্থানীয় মানুষের থেকে উনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, বৃহত্তর রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় | ১৯৩৪ সালে উনি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন, কিন্তু সেরে ওঠেন | ১৯৩৬ সালের ১৬ জানুয়ারি উনি আবার হৃদরোগে আক্ৰান্ত হন। আর সেরে উঠতে পারেননি। Woking এর ব্রুকউড সেমেট্রিতে ওঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

গত একবছর ধরে ব্রিটেনে নানারকম দাবিদাওয়া নিয়ে সমাজের বিভিন্ন কর্মীরা ধর্মঘট করছেন। সরকারের তরফে এই ধর্মঘট ভাঙার কোনও চেষ্টা চোখে পড়েনি। ট্রেড ইউনিয়ন তাঁদের কর্মীদের কথা মাথায় রেখে ধর্মঘট করে যাচ্ছেন। কোনও রাজনৈতিক দলের স্বার্থরক্ষার জন্য নয়। সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। দর কষাকষি চলছে। ধর্মঘটের জন্য মানুষের অসুবিধে হচ্ছে — কিন্তু জনসাধারণ ধর্মঘটীদের প্রতি সহানুভূতিশীল| ধর্মঘটরত কর্মীরা মানুষকে বোঝাচ্ছেন কেন তাঁরা ধর্মঘট করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থা একদিনে হয়নি। দীর্ঘ আন্দোলনের ভেতর দিয়ে এই অবস্থা এসেছে। গর্ব বোধ হয় এই ভেবে সাপুরজির মতো একজন ভারতীয় এই আন্দোলনে এক বিরাট সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন আজ থেকে একশো বছর আগে| তাঁকে ব্রিটেনের ন্যাশনাল আর্কাইভ 1920s-এর ২০ জন প্রভাবশালী মানুষ হিসেবে মনে রেখেছে। মে দিবসে এই সংগ্রামী মানুষটির কথা আমরা ভারতীয় হিসেবে কি একটু স্মরণ করতে পারি না?  

দিব্যি তো থাকতে পারতেন মানুষটা, ভারতের সব চেয়ে ধনী পরিবারের অংশ হয়ে| টাটা শিল্পগোষ্ঠীর বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের একজন হয়ে আয়েশে কাটাতে পারতেন জীবন। ভাগ্যিস কিছু লোক ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়| তাই পৃথিবী বদলায়| এই বদলের নামই বিপ্লব | আসুন মে দিবসে এরকম বিস্মৃত বিপ্লবীদের একটা দিনের জন্য হলেও একটু মনে করি…

ছবি সৌজন্য: Wikimedia

দু দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনে প্রবাসী পাঞ্চজন্য পেশায় সাইকিয়াট্রিস্ট। অবসর সময়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসেন।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com