banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

নির্বাসিতের জন্য মানসভ্রমণ (পর্ব ১) – কালিকাপুর

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Kalikapur Durga dalan Amitabha Gupta

কয়েকদিন হল রাত বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে লন্ডন শহরের একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আমার একটা ফোন আসে। সেখানে থাকে আমার অনুজ প্রতিম অম্লান চক্রবর্তী। কলকাতার একটি বহুজাতিক সংস্থার হয়ে কাজ করতে গিয়ে আরও অনেকের মত একটি অণুজীবের দাপটে বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে ফিরতে পারছে না। 

আজ মনে হয় অম্লানের মনটা বেশ খারাপ। ফোনটা ধরে প্রথমেই বলল, 

কিচ্ছু ভালো লাগছে না অমিতাভদা। আমার অ্যাপার্টমেন্টের একটাই বড় জানালা।  সেটা দিয়েই আমি মাঝে মাঝে বাইরের জগৎটা দেখি। সামনে সুন্দর একটা পার্ক আছে। আজ ওই পার্কের সামনে দিয়ে তিনটে হার্স চলে গেল। তারপর থেকেই ডিপ্রেসেড হয়ে আছি।

হার্স মানে একটি বাহন যা কফিন/কাসকেটে মৃত ব্যক্তিকে বহন করতে ব্যবহৃত হয়। গোটা যুক্তরাজ্যে রোজ তিন থেকে চারশো লোক মারা যাচ্ছে অম্লান যে একটার পর একটা হার্স দেখবে তাতে আর আশ্চর্য্যের কী আছে?

আমি একটু থেমে বললামআশা করি  খুব শীঘ্রই  আমরা এই মারণরোগের প্রভাব থেকে নিস্তার পাব।

অম্লান যেন একটু সম্বিৎ ফিরে পেয়ে বললএতদিনে তো আমার ফিরে গিয়ে তোমার সঙ্গে একটা রাজবাড়ি দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। মাঝে মাঝে বেরিয়ে সামনের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে খাবার কিনে আনি। আর রিল্যাক্স করা মানে হল সামনের পার্কে সন্ধ্যে বেলায় গিয়ে একলা হেঁটে আসা। অফিসের প্রোজেক্ট এখনও চলছে তাই সারাদিন কাজে সময় কেটে যায়।

আমি অম্লানের অবস্থা বুঝতে পারছিলাম। তাই ওকে বললামমানুষের সব পরিস্থিতিতে সইয়ে নেওয়ার  ক্ষমতা  থাকে। যে লোকটার বাড়ি নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে তাকে তো সকাল বিকেলেবল হরি, হরি বোলশুনতেই হয়প্রথম প্রথম তার অসম্ভব বিরক্তিকর লাগত, কিন্তু আস্তে আস্তে সে সইয়ে নিয়েছে। তোকেও এটা আস্তে আস্তে সইয়ে নিতে হবে। জানি কাজটা কঠিন, কিন্তু এটাই সবচেয়ে সহজ উপায়।

একটু থেমে বললাম “আমার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলছিলি না? সেটা কিন্তু এখনও করতে পারিস। শুধু আমায় তোকে একটু সাহায্য করতে হবে?”

বেড়াতে যাওয়াএই অবস্থায়? তোমার কি মাথা খারাপ হল?”  অম্লান যেন আকাশ থেকে পড়ল।

কিচ্ছু মাথা খারাপ হয়নি। বেড়াতে তুই যেতেই পারবি, শুধু বেড়ানোর স্টাইলটা পাল্টাতে হবে। এই পরিস্থিতিতে তোকে মানস ভ্রমণ করতে হবে। এইবার স্টার ট্রেকের গল্পের মত টেলিপোর্ট করে তোর মনটাকে বেড়ানোর জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। স্টার ট্রেকে শারীরিক ভাবে টেলিপোর্ট করা হত, আমি শুধু মানসিক ভাবে করার চেষ্টা করছি। আমি একটা টাইম মেশিনও জোগাড় করে ফেলেছি। সেই জন্যে তোকে এই জায়গাটায় আমি এক বছর আগে ২০১৯ সালে নিয়ে যাচ্ছি তখন রাজবাড়িটাকে দেখতে আরও প্রাচীন লাগত, ইদানিং একটা দিক দৃষ্টিকটু ভাবে সাদা আর লাল রং করেছে।”  

অম্লান একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল  “ঠিক কী করতে চাইছ?”

সামান্য জিনিস। আমি বলব, তুই শুনবি। আর মাঝে মাঝে তোকে হোয়াটস্যাপে ছবি আর ভিডিও পাঠাব। তোর কল্পনাশক্তি ভালই। সব মিলিয়ে মানসভ্রমণ হয়ে যাবে। এবার রেডি হয়ে যা, শুরু করছি।বলে আমি ফোনে একটা বড় ভিডিও ক্লিপ পাঠালাম।

“তা আমরা মানসভ্রমণ করতে ঠিক কোথায় যাচ্ছি?”  

আপাতত পানাগড় আর ইলমবাজারের কানেক্টিং স্টেট হাইওয়ের মাঝামাঝি একটা জায়গায়। গাড়িতে করে গেলে বর্ধমান হয়ে মানকর পেরিয়ে পানাগড়ের দার্জিলিং মোড় থেকে ডানদিক যেতে হত। কিন্তু টেলিপোর্ট করে যাচ্ছি বলে আমরা সোজা স্টেট হাইওয়ের উপর অবস্থিত শান্তিনিকেতন রেস্তোরাঁর সামনে নেমে পড়লাম। এর ঠিক উল্টোদিকে একটা রাস্তা আছে। আমরা সোজা ওই রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। এই রাস্তার দু ধারে জঙ্গল। তোকে যে ভিডিওটা পাঠিয়েছি ওটা একবার দেখে নে”  

একটু বিরতির পর অম্লানের গলা শোনা গেল।রাস্তাটা বেশ সুন্দর। আচ্ছা ওই রাস্তার দু ধারে মাঝে মাঝে ছোট ছোট ব্রাউন রংয়ের ঢিপি দেখতে পাচ্ছি, ওগুলো কী?”

গুড অবসার্ভেশন। ওগুলো পিঁপড়ের বাসাএই জায়গাটা হল আদুরিয়া জঙ্গল চল, ওই পিঁপড়ের বাসা গুলো কাছ থেকে দেখা যাক।এই বলে অম্লানকে পিঁপড়ের বাসার একটা কাছ থেকে তোলা ছবি পাঠিয়ে দিলাম।

পিঁপড়ের বাসাটা তো বিশাল। চলো আবার যাত্রা শুরু করা যাক।” 

একটু পরেই পাকা রাস্তা ছেড়ে আমরা বাঁ দিকে একটা জঙ্গুলে কাঁচা রাস্তা ধরব। তারপরেই আমরা একটা বিশাল জমিদারবাড়ি সামনে এসে পড়ব। বাড়িটার প্রাচীন ইতিহাস ও তার সাতমহল  চৌহদ্দি ছাড়াও আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে । এই বাড়িতে প্রচুর সিনেমার শুটিং হয়েছে চল, আমরা কাঁচা রাস্তায় ঢুকে গেছি লাল মাটির রাস্তা।”  

ছবি দেখে অম্লান বলল “বাঃ, এটা খোয়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।” 

Aduria forest
আদুরিয়ার জঙ্গল

আমরা প্রায় এসে গেছিগ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়েছি| একটা আদ্যিকালের পুকুর পেরলাম। বাঁধানো ঘাট ভগ্নপ্রায় দুটো বসার জায়গা আছে যার গায়ে এখনো কিছু স্টাকোর অলংকরণ টিঁকে আছে। পুকুর পেরিয়েই জমিদারবাড়ির গেট। এই গেটটা আসলে দুর্গাদালানের গেট। আর দালানের বাইরে এক জোড়া দেউল মন্দির রয়েছে যার দেওয়ালে অসামান্য টেরাকোটার কাজ এখনও টিঁকে আছে।” একটানা বলে আমি থামলাম। তারপর জমিদারবাড়ির একটা ছবি ওকে পাঠিয়ে দিলাম। 

উফফ…. আমি পুরো ব্যাপারটা ভিসুয়ালাইজ করে নিলাম।” বলল অম্লান তারপর ছবিটা দেখে বললগেটের সামনে ওই গেরুয়া ধুতি আর চাদর জড়ানো ভদ্রলোক কে ?”

আরে, উনিই তো এই বাড়ির পুরোহিত | উনি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তুই আসবি বলে ফোন করে দিয়েছিলাম, যাতে দালানের গেট খুলে রাখেন। এই জায়গাটার নাম কালিকাপুর, আর এইটা রায় বংশের দুর্গাদালান। গেটটা  দেখেছিস? তিন খিলান দেওয়া অৰ্ধচন্দ্রাকৃতি আকার। উপরে জানালাগুলো দেখ, প্রত্যেকটার মাথায় ত্রিভুজাকৃতি ডিজাইন রয়েছে। এই রকম অলঙ্করণ বীরভূম আর বর্ধমানের জমিদার বাড়িতে আকছার দেখা যায়। চল এবার দালানে ঢোকা যাক। 

কালিকাপুর কোন জেলার মধ্যে পড়ছে? আর আমরা মন্দিরদুটো দেখব না?”  

কালিকাপুর পূর্ব বর্ধমান জেলার মধ্যে পড়ছে। দালানটা দেখে আসি, তারপর মন্দির দুটো দেখব।এই বলে অম্লানকে আবার একটা ছোট  ভিডিও  আর কিছু ছবি পাঠিয়ে দিলাম। 

এইবার তুই দুর্গাদালানের চত্বরের  ভিতরে ঢুকছিস।বাঁ দিকে একটু এগোলেই  দুর্গাদালান।  এই দালানে এখনো দুর্গাপূজা হয়। চত্বরের মাঝখানে  বিশাল; উঠোন , যার উপর একসময় ছিল সুবৃহৎ নাটমন্দির। তুই তো শান্তিনিকেতনে সুরুলের রাজবাড়ী গিয়েছিস। সেখানে দুর্গাদালানের সামনে নাটমন্দির দেখেছিস। এখানেও নাটমন্দির ছিল. কিন্তু এখন শুধু থাম গুলো পড়ে আছে , ছাদটা বহুকাল আগে ভেঙে গেছে। থামগুলো প্রায় ২৬ ফুট। দুর্গাদালানটাও ওইরকম উচ্চতার হবে। দালানে উঠলে দেখবি ওর দেওয়ালেও ভালো স্টাকোর কাজ রয়েছে। নাটমন্দির ঘিরে চার দিকে সারি সারি বারান্দা। অনেক জানালা রয়েছে সে বারান্দায়। জানালা উপর একই ছাঁচের স্টাকোর নক্সা। অনেক গুলোর মেঝে ধসে গেছে। এখানে দাঁড়িয়ে মেয়ে বৌরা একসময় সার বেঁধে পুজো দেখত। বলাবাহুল্য সে জৌলুস আর নেই।একটানা বলে  থেমে অম্লানকে প্রশ্ন করলাম  “যা যা বললাম, সব চোখে পড়ল ?”

kalikapur zamindar temple
কালিকাপুর দুর্গাদালান

তুমি বলাতে অনেকগুলো জিনিস খেয়াল করলাম যা হয়ত এমনি খেয়াল করতাম না। এইবার একটা বেশ বেড়ানোর অনুভূতি হচ্ছে। তুমি বললে এখানকার দুর্গাপুজো প্রায় ৩৫০ বছর পুরনো, কিন্তু দালান তো অত পুরনো বলে মনে হচ্ছে না অমিতাভদা।”

সেটা খুব অস্বাভাবিক নয়। বাইরের এই দুই দেউল মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে  ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে। মন্দিরদুটির নাম পরমেশ্বর ও হংসেশ্বর। প্রতিষ্ঠালিপিতে সন তারিখের তলায় ঈশ্বরের দাস হিসাবে পরমানন্দের নাম রয়েছে আমি যদি ধরে নিই যে  পরমানন্দ রায় মৌখিরা তে খুব অল্প বয়সে এসেছিলেন এবং তাঁর সত্তর- আশি  বছর বয়সে এই মন্দির বানিয়েছিলেন, তাহলেও  হিসাব মিলছে না। এক যদি উনি মৌখিরাতে আসার আগে থেকেই ওঁদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে থাকত, তাহলেই এই দূর্গা পুজোর বয়স ৩৫০ হতে পারে। এই দুর্গাদালান সমেত সাত মহলা জমিদারবাড়ি যদি পরমানন্দ রায় বানিয়ে থাকেন তাহলে বড়জোর এর বয়স দুশো বছরের কিছু বেশি হবে।এই বলতে বলতে আমি অম্লানকে ছাদ  থেকে তোলা দালানের দু তিনটে  ছবি পাঠিয়ে দিলাম।

পরমানন্দ রায় গুসকরায়  অবস্থিত দরিয়াপুর থেকে এখানে এসে জমিদারির পত্তন করেন। এখানে তাঁর আদি বাড়ি ছিল মৌখিরা গ্রামে যা এখান থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত। তাঁর সাত ছেলে ছিল। পরবর্তী কালে কালিকাপুরে সাত ছেলের নামে সাত মহলা জমিদারবাড়ি তৈরি করেন, সেইসঙ্গে এই দূর্গা দালান। বাইরের মন্দির দুটিও তাঁরই তৈরি। পরমানন্দর বড় ছেলে কৈলাসপতি বর্ধমান মহারাজের দেওয়ান ছিলেন। তিনিও রাধা বল্লভের একটি বিশাল মন্দির বানিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় সেটা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে এই সাতমহলের একটিমাত্র মহলে এই বংশের অষ্টম পুরুষের এক বংশধর বাস করেন। তাঁর নাম লাজপৎ রায়বাকি অধিকাংশ মহল বাসযোগ্য নয়। 

আরিব্বাস, আমরা ছাদে উঠে গেছি । এখন থেকে দৃশ্যটা তো জব্বর।”   অম্লান ছবি দেখে বেশ ছেলেমানুষের মত বলে ফেলল। তারপর একনাগাড়ে বলে গেল  “এইবার আমি দালানটা অনেকগুলো সিনেমাতে দেখেছি বলে মনে পড়ছে – খন্ডহর, মেঘনাদবধ  রহস্য, এলার চার অধ্যায়  আর.. আরসন্দীপ রায় পরিচালিত সত্যজিৎ রায়ের ছোট গল্প – চিলেকোঠা।”  

আরও অনেক সিনেমায় এই দুর্গাদালান দেখানো হয়েছে, তবে তুই যে কটা বললি সবকটাতেই দালানটার ভালো টপ শট ছিল। তোর স্মৃতিশক্তি  বেশ ভালো দেখছি । চলো এবার বেরিয়ে যাওয়া যাক। ঠাকুরমশাই কে দাঁড় করিয়ে রাখাটা ঠিক নয়। ওনার পুজো অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। ঐ দেখো ওঁকে খুঁজতে ওঁর ছেলে চলে এসেছে – ওই যে  মেরুন পাঞ্জাবি পরা লোকটা। আগে মন্দিরদুটো দেখব, তারপর বাকি রাজবাড়ি।এই বলে মন্দিরদুটির বেশ কিছু ছবি অম্লান কে হোয়াটস্যাপ করে পাঠিয়ে দিলাম।

জোড়া শিবের পীড়া দেউল

এ দুটো দেখছি উড়িষ্যা মন্দির রীতির ধাঁচে তৈরী পীঢ়া দেউল। এদের গর্ভগৃহের চূড়ার দিকটা খাঁজ কাটা। পিরামিডের মত ধাপে ধাপে উপরের দিকে উঠে গেছে।বলল অম্লান

একদম কারেক্ট।”  তারিফ করে বললাম আমি

প্রতিষ্ঠালিপি দেখে বুঝলাম আমার বাঁ দিকের মন্দিরটি পরমেশ্বর ও ডানদিকেরটি হংসেশ্বর। গুপ্তধনের সন্ধানে সিনেমায় এই দুটি মন্দিরই দেখেছিলাম। এবার টেরাকোটা প্যানেলগুলো একটু ব্যাখা করে দাও।জানতে চাইল অম্লান।

হংসেশ্বর শিবের দরজার উপরের বড় প্যানেলে রামের রাজ্যাভিষেক দেখানো হয়েছেপরমেশ্বর শিব মন্দিরের মূল প্যানেলটা কিন্তু দুটো ভাগে বিভক্ত। উপরের প্যানেলে শিব সেতার বাজিয়ে গান গাইছেন।পাশে ব্রহ্মা, নারদ ও বিষ্ণু ও শিবের কিছু গণ বা অনুচরবৃন্দনিচের প্যানেলে সপারিষদ পার্বতী সিংহাসনে বসে আছেন।” ব্যাখ্যা করে বললাম আমি

শিব নিয়ে সন্দেহ নেই, দাড়ি গোঁফ না থাকলেও হাতে তানপুরা, গলায় সাপ, মাথায় জটা দেখে বোঝা যাচ্ছে। না। ব্রহ্মার তিনটে মুণ্ড দেখা যাচ্ছে, চার নম্বর মুণ্ড তো পিছনে থাকবে, নারদের হাতে বীনা, বিষ্ণুর চারটে হাত। আচ্ছা নিচেরটা পার্বতী ধরা হচ্ছে  কেন?” জানতে চাইল অম্লান 

সাধারনত টেরাকোটা মন্দিরে আমার দেখেছি, যেখানে শিবকে কোনো বাদ্যযন্ত্র হাতে দেখা গেছে তাঁর পাশে পার্বতী রয়েছে, যেমন দশঘরার গোপীনাথ মন্দির অথবা সুরুলের পশ্চিম পাড়ার মন্দির। অনেকে অবশ্য বলেন নিচের নারীমূর্তিটি রানী ভবানীর আমার সেটা নিয়ে সন্দেহ আছেরানী ভবানী ১৮০২ সালে মারা গেছেন, আর পশ্চিমবঙ্গে তাঁর তৈরি অধিকাংশ মন্দির মুর্শিদাবাদ জেলার বড়োনগরে নির্মিত হয়েছিল। সেখানেই যখন এরকম কোনA টেরাকোটা প্যানেল নেই, এখানে তাঁর মৃত্যুর প্রায় চল্লিশ বছর বাদে নির্মিত মন্দিরে থাকবে কেন?”  বললাম আমি  

তোমার যুক্তিতে লজিক আছে। একটা জিনিস বলো, এই জামাকাপড় গুলো- বিশেষতঃ এদের ভাঁজগুলো দেখে মনে হয় বিদেশী ধাঁচের। বিষ্ণু যেটা পরে আছেন, সেটা তো কতকটা ড্রেসিং গাউন বা বাথরোবের মত। এটা কি বিদেশী প্রভাবের দারুন?” জিজ্ঞেস করলো অম্লান 

একদম ঠিক বলছিস। এটা আঠারো  বা উনিশ শতকের মন্দিরে ভীষণ ভাবে দেখা যায়। শুধু পোশাক কেন, একদম নিচের দিকের প্যানেলে দেখ, বিদেশী দম্পতি দেখতে পাবিতাদের পোশাকের আদল এইরকম। বন্দুক হাতে বিদেশী যোদ্ধা, কোট প্যান্ট পরা বিদেশিও আছে এই বলে আমি অম্লানকে বললাম চল বাকি বাড়িটা দেখা যাক।

আমার পাঠানো একটা ভিডিও দেখতে দেখতে  অম্লান বললবাড়ির একটা মহলই  তো টিঁকে আছে দেখছি। এই আরেকটা মহলের অধিকাংশের তো স্রেফ দেওয়াল দাঁড়িয়ে আছে। এই জায়গাটির তো বেশ একটা গা ছমছমে ব্যাপার রয়েছে। ওহ…. এটার পিছন দিকে একটা পুকুর আছে। এবার আমরা এখন থেকে বেরিয়ে আসছি।”  এই  বলতে বলতে অম্লান যেন একটু চমকে বললমনে হল দোতলায় কাকে যেন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আরেকবার দেখি তো।

পরমেশ্বর শিব মন্দিরের টেরাকোটা প্যানেল

ঠিকই দেখেছিস। তবে মানুষ দেখিস নি । স্টাকো নির্মিত একটা নারীমূর্তি দেখেছিস। মাঝখানের জানালায় রয়েছে। একে বলে হয় বাতায়নবর্তিনী। রমণী তার প্রিয়তমের জন্য প্রতীক্ষা করছে। এবার ভালো করে দেখ।বলে অম্লানকে সেই নারীমূর্তির একটা ক্লোজ আপ শট পাঠালাম 

এটা তো আসল জানালা নয়। তার মাঝখানে থেকে মুখটা এমনভাবে বেরিয়ে আছে যে হঠাৎ করে জ্যান্ত মানুষ মনে হয়। মুখটা তো একদম ক্ষয়ে গেছে। ইনি আদতে কেমন দেখতে ছিলেন কে জানে।বলল অম্লান 

দেখতে চাও? তবে তো টাইম মেশিনটা কে কাজে লাগাতে হয়। চলো, এই জায়গায় তোকে ২০১২ সালে ফেরৎ নিয়ে আসি।এই বলে ২০১২ সালে আমার তোলা এই বাতায়নবর্তিনীর একটা ছবি অম্লানকে পাঠালাম।

এইঅমিতাভদা, ইনি তো যৌবন কালে বেশ সুন্দরী ছিলেন। ২০১২ তে মুখটা অনেকটা পরিষ্কার ছিল। মাথায় ঘোমটা নেই। এলো চুল। চোখ বেশ টানা টানা ছিল, হাতের আঙ্গুল গুলো বেশ  সুন্দর। একটা অন্তহীন প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন যেনযে প্রতীক্ষার একদিন শেষ হবে, যখন এই মুখটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবেএকদিন জানলাটাও ভেঙে যাবে … .  একদিন গোটা দেওয়ালটা….. একদিন পুরো মহলটা …!”  একটানা বলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে অম্লান থামল 

তারপর বলল  “মানসভ্রমণটা বেশ ভালই হচ্ছেমনটা বেশ ভাল লাগছে।” 

এখনও কিন্তু মানসভ্রমণ শেষ হতে দেরি আছে। এরপর আমরা ২০১২ সাল থেকে ফিরে এসে কৈলাসপতি রায়ের বানানো রাধাবল্লভ মন্দির দেখব, রায়দের একটা পরিত্যক্ত মহল দেখবো, তারপর যাবো পরমানন্দ রায়ের আদি বাসস্থান মৌখিরাতে । সেখানেও  একটা জমিদারবাড়ি আছে, আর আছে প্রচুর মন্দির।

উরেব্বাস, এটা তো লম্বা মানসভ্রমণ হতে চলেছে।বেশ উচ্ছ্বসিত গলায় বলল অম্লান  

তা তো হবেই। তবে এবার একটু চা বিরতি দরকার। চল একটু চা বসানো যাক। আপাতত তোর মনটাকে টেলিপোর্ট করে লন্ডনে ফেরৎ নিয়ে যাচ্ছি। তুইও একটু চা খেয়ে নে। চা খেয়ে আমরা আবার মানসভ্রমন করব।বললাম আমি 

ঠিক আছে, তাই হোকআধ ঘন্টা বাদে আমি তোমায় আবার ফোন করছি|” বলে অম্লান ফোন কেটে দিলো। আমি চা বসিয়ে দিয়ে অন্য ছবি আর ভিডিও রেকর্ডিং গুলো সাজাতে বসলাম। 

পরের পর্বে  আপনাদের শোনাব অম্লানের বাকি মানসভ্রমণ কেমন হল। 

ছিলেন নামী কোম্পানির দামী ব্র্যান্ড ম্যানেজার | নিশ্চিত চাকরির নিরাপত্তা ছেড়ে পথের টানেই একদিন বেরিয়ে পড়া | এখন ফুলটাইম ট্র্যাভেল ফোটোগ্রাফার ও ট্র্যাভেল রাইটার আর পার্টটাইম ব্র্য্যান্ড কনসাল্টেন্ট | পেশার সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েছেন নেশাকেও | নিয়মিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয় বেড়ানোর ছবি এবং রাইট আপ |

11 Responses

  1. অম্লানবাবুর সঙ্গে সঙ্গে আমারও মানসভ্রমন ( সত্যিকারের ভ্রমনও বলা যায়) হয়ে যাচ্ছে…পরের অংশের জন্য প্রতিক্ষায় থাকলাম৷

  2. বাহ্। আপনার লেখা কাঁচের মতো এত স্বচ্ছ যে মনে হচ্ছে আপনার লেখার মধ্যে দিয়ে আমিও মানস ভ্রমণ করছি। বাকি অধ্যেয়র জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com