banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

নির্বাসিতের জন্য মানসভ্রমণ (পর্ব ২) -মৌখিরা

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Ray mansion in kalikapur photo by Amitabha Gupta

অম্লানের ফোন যখন এলো তখন প্রায় রাত দেড়টা বাজে।

আমি ভাবলাম তুমি হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছো” 

আমি এমনিতেই দেরি করে ঘুমোতে যাই, আর এখন তো চট করে ঘুম আসেনা। যাই হোক, তুই মানসভ্রমনের পরের রাউন্ডের জন্য তৈরি তো?” 

একদম তৈরি। দাঁড়াও, আগের রাউন্ডে যা দেখলাম একটু ঝালিয়ে নিই। আমরা কালিকাপুরে পরমানন্দ রায়ের তৈরি দুর্গাদালান, ভগ্নপ্রায় নাটমন্দির ও জীর্ণ সাতমহলা জমিদার বাড়ি দেখেছি। দালানে ভাল স্টাকোর কাজ আছে। দুর্গাদালানের বাইরে দুটো পীঢ়া দেউল মন্দির আছে যার দেওয়ালে উন্নত মানের টেরাকোটার প্যানেল রয়েছে। পরমানন্দ রায়ের ছেলে কৈলাসপতি বর্ধমান রাজার দেওয়ান ছিলেন। তিনি একটা মন্দির স্থাপনা করেও বিগ্ৰহ স্থাপন করতে পারেননি। তাই সে মন্দির পরিত্যক্ত হয়। আমরা এখন সেটাই দেখতে যাচ্ছি।

একটানা বলে থামল অম্লান। তারপর জিজ্ঞেস করল “ঠিক বললাম তো?”

একদম ঠিককৈলাসপতির মন্দিরটি ছিল রাধাবল্লভ এর জন্য উৎসর্গকৃত। মন্দিরটিতে রাধাবল্লভ এর মূর্তি স্থাপনা করা যায়নি বলে পরিত্যক্ত হয়। কারণ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার আগের রাতে কৈলাসপতি মারা যান। যজ্ঞেশ্বর চৌধুরীর লেখাবর্ধমান জেলার পুরাকীর্তিতে উল্লেখ করা আছে যেবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হওয়ায় ধবনী গ্রামের সাধক কবি নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়কে দান করা হয় এবং নীলকণ্ঠের উত্তরপূর্বীদের গৃহে রাধাবল্লভের সেবাপূজো এখনও চলছে উনি অবশ্য কৈলাসপতি মারা যাওয়ার ঘটনা নিয়ে কিছু লেখেননি, সেটা রায় পরিবার লোকজন বলেছে। চলো টাইম মেশিন রেডি, টেলিপোর্টিং ডিভাইস রেডি। এবার সোজা পরিত্যক্ত রাধাবল্লভ মন্দিরের সামনে পৌঁছব” 

এতক্ষণ বেশ রোদ  ছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই  হঠাৎ আকাশটা মেঘলা হয়ে গেছে। সে যাই হোক , তুই রাধাবল্লভ মন্দিরের বাইরের পাঁচিলটা লক্ষ্য কর। পাঁচিল দেখেই আন্দাজ করতে পারবি মন্দিরটা কত বড় ছিল। এই যে সরু রাস্তা দিয়ে আমরা মন্দিরের সামনে এলাম, এটা কালিকাপুর রাজবাড়ি থেকে মৌখিরার দিকে একটু এগোলেই চোখে পড়বে। 

আরে, আমরা কি এই ভাঙাচোরা সিঁড়ি দিয়ে এর দোতলায় উঠছি? সিঁড়িটা তো খুব নড়বড়ে। এখানে তো সাপ খোপও থাকতে পারে ।ভিডিওটা দেখতে দেখতে একটু অবাক হয়ে বলল অম্লান।

“থাকতে পারে নয়, অবশ্যই আছে। একটু পরেই দেখতে পাবি। ডান দিকে নজর রাখ।” 

একটু বাদে অম্লান একটা আওয়াজ করে বললদেখলাম। ডান দিকে একটা সাপের লেজ চোখে পড়লভাঙা জানালা দিয়ে সুড়ুৎ করে নেমে গেল বাইরে। ইস, এই জায়গাটা কিন্তু বেশ বিপজ্জনক। কিন্তু এখন থেকে মন্দিরের পুরো চত্বরটা পুরো দেখা যাচ্ছেমাঝখানের ফাঁকা দালানটা পুরো জঙ্গল হয়ে আছেদালানের শেষে ওই পাঁচ খিলানের স্থাপত্যটা নিশ্চই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার জায়গা”  

Radhaballabh temple kalikapur
পরিত্যক্ত রাধাবল্লভ মন্দির

একদম তাই। এইবার আয় দালানের ভিতরে যাওয়া যাক। লক্ষ্য করে দেখ, থামগুলো কি সুন্দর ডিজাইন করা আর খিলানের উপরেও একসময় কি সুন্দর নক্সা করা ছিল।

এত খরচ করে, এত পরিশ্রম করে তৈরি করা এমন সুন্দর দালান মন্দির পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল ভাবতেই খারাপ লাগছে। আরে, এই মন্দিরের পিছনে একটা পুকুর রয়েছে দেখছি। বেশ পুরনো একটা বাঁধানো ঘাটও আছে” 

কৈলাসপতি কালিকাপুরে অনেক পুকুর কাটিয়েছিলেন। সেকালের অনেক জমিদারই জলকষ্ট এড়াবার জন্য এটা করতেন। চলো কৈলাসপতির আরেকটি কীর্তি দেখে আমরা মৌখিরার পথে এগিয়ে যাব। গুগল ম্যাপে এটাকে ভুল করে নীলকুঠি হিসেবে চিহ্নিত করা আছে, কিন্তু আসলে এটা একটা বসত বাড়ি। রায় পরিবার ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে নীলচাষের ইজারা নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু সে নীলকুঠি ওইদিকেই জঙ্গলের মধ্যে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছেএই বসত বাড়িটাকে লোকেচাঁদনী বাড়িবলে। শোনা যায় কৈলাসপতি এই বাড়ি মূলতঃ খাজনা আদায় ও অতিথি সেবার জন্য ব্যবহার করতেন।ই বাড়ির পিছনেও  একটা বড় পুকুর আছে। তার বাঁধানো ঘাটের অনেকটাই এখনও টিঁকে আছে” 

অন্য যা স্থাপত্য দেখলাম তার তুলনায় এটা অনেকটাই ছোট। পুকুরঘাট টা কিন্তু আমার বেশ লেগেছেকবি হলে এখানে বসে কবিতা লেখা যেত।” 

তা মন্দ বলিসনি। লোকজন বলে এই ঘাটের সামনেই কখনও সখনও কৈলাসপতি গানের মেহফিল বসাতেন। চল, এবার মৌখিরার দিকে রওয়ানা দেওয়া যাক। এখন থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দুরত্ব।” 

মাত্র এক কিলোমিটার? তা রায়মশায় ওখানেই সাতমহলা বাড়িটা বানালেন না কেন? এদিকে কালিকাপুরে আসার কী দরকার ছিল?”  জানতে চাইল অম্লান।

আসলে অজয় নদ এখান থেকে বেশ কাছে। আর অজয়ের বানে মৌখিরা মাঝে মাঝেই জলমগ্ন হয়ে যেত। তাই সাতমহলা বাড়িটা কালিকাপুরে তৈরি করা হয়েছিল। ওদের মৌখিরার আদি বাড়িটাও অনেকটা একই আদলের কিন্তু আয়তনে ছোট। আমরা মৌখিরা হাই স্কুলের সামনে চলে এসেছি। এবার এখান থেকে ডানদিকে যাব। এক মিনিট গেলেই ছটা মন্দির দেখতে পাব। মন্দিরগুলোর পিছনেই আদি বাড়িএই বলে অম্লানকে একটা ভিডিও পাঠিয়ে দিলাম|

বাহ্, এখানে দেখছি  ছটা  মন্দির-মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এক একটা পংক্তিতে তিনটে করে মন্দির। সবকটাই দেউল মন্দির বলে মনে হচ্ছে” 

সবকটা নয়, পাঁচটা পীঢ়া দেউল। তোর বাঁ দিকের মানে পুবমুখী পংক্তির শেষ মন্দিরটা আটচালা। সবই শিব মন্দির” 

Moukhira temples photo by Amitabha Gupta
মৌখিরার ছটা শিব মন্দির

দাঁড়াও আমি আগের মন্দিরগুলো আগে দেখি। যা দেখছি মোটামুটি প্রবেশপথের দরজার মাথায় অলংকরণগুলোই  টিঁকে আছে। ডানদিকের প্রথম মন্দিরের টেরাকোটার কাজের মধ্যে অনেকগুলো গল্প আছে বলে মনে হোল। পরেরটা  মনে হয় রাম সীতা সিংহাসনে বসে আছেন আর তারপরেরটা আমি খুব নিশ্চিত নই, কিন্তু কারও একটা রাজ্যভিষেক হচ্ছেপ্যানেলগুলো বেশ কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি, টেরাকোটাগুলো অনেকটাই ক্ষয়ে গেছে গো। অন্যদিকের প্রথম দুটো মন্দিরের প্রথমটাতে মনে হচ্ছে কৃষ্ণ বলরাম রাখাল বালকদের নিয়ে গরু চরাচ্ছেন আর পরেরটাতে যদি খুব ভুল না করি গৌর নিতাই  দলবল নিয়ে নাম সংকীর্তন করছেন। আটচালা মন্দিরটাতে তেমন কোনো কাজ নেই, একটা প্ৰতিষ্ঠা লিপি আছে বলে মনে হল, কিন্তু আলোটা উলটো দিক থেকে পড়ছে বলে বুঝতে পারলাম না। ওদিকে তো আরো মন্দির আছে মনে হল…. একটা পঞ্চরত্ন মন্দির তো আছেই।একটানা বলে থামল অম্লানআমি এর মধ্যে ওকে কিছু ছবি আর আরো একটা ভিডিও পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ।

বাঃ, তোর দৃষ্টিশক্তির খুব উন্নতি হয়েছে দেখছি। প্যানেলগুলো অনেকটাই ঠিকঠাক বলেছিস। তিনটে তো একদম ঠিক। রাজ্যাভিষেকটা কৃষ্ণের হচ্ছে, লক্ষ্য করে দেখ বসে থাকা লোকটার মাথায় চূড়া রয়েছে” 

অম্লান একটু লাজুক গলায় বললআরে, যে ভাবে প্রত্যেকটা প্যানেলের ক্লোজ আপ সময় নিয়ে দেখতে পেলাম তাতে এইটুকু তো বলতেই পারব। এগুলো তো তোমার কাছ থেকেই শেখা। প্রথম মন্দিরটাতে একসঙ্গে অনেকগুলো প্যানেল ছিল তাই বুঝতে পারিনি ।

আমি বললামপ্রথম মন্দিরের প্যানেলটা একটু বিশদে বলতে হবে। লক্ষ্য করে দেখবি তোর দিক থেকে তাকালে প্যানেলের বাঁ দিকের উপরের জায়গায় দেখা যাচ্ছে  রাধা সখীদের সঙ্গে একটা টুল জাতীয় আসনে বসে সাজগোজ করছেন। রাধার এই সাজগোজের  নিচেই একটা ইন্টারেস্টিং দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। শ্রীকৃষ্ণ রাধার পা ধরে তার মানভঞ্জন করার চেষ্টা করছেন।”     

terracotta panel of temple at Moukhira photo by Amitabha Gupta
মৌখিরার মন্দিরের টেরাকোটা প্যানেল। বাঁ দিকের প্যানেলে দেখা যাচ্ছে রাধার পা ধরে মানভঞ্জন করছেন শ্রী কৃষ্ণ।

“শ্রীকৃষ্ণ রাধার পা ধরে তার মান ভাঙাবার চেষ্টা করছেন? এ তো জয়দেবের গীতগোবিন্দের সেই বিখ্যাত লাইন- “মম শিরসি মণ্ডনং, দেহি পদপল্লবমুদারম”। যার মানে হলতোমার উদার পদপল্লব আমার মস্তকে ভূষণস্বরূপ অর্পণ কর।আহা, গীতগোবিন্দ আমার বড় প্রিয় গো। এরকম মোটিফ দিয়ে টেরাকোটা প্যানেল হয় এটা জানা ছিল না” 

এটা কি জানিস যেদেহি পদপল্লবমুদারমলাইনটা আসলে জয়দেবের লেখা নয়?” 

সেকি? তবে কার লেখা?” একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল অম্লান।

জয়দেবমণ্ডনংপৰ্য্যন্ত লিখে,“দেহি পদপল্লবমুদারমএই অংশ সাহস করিয়া লিখতে পারছিলেন  না, এই ভেবে যে প্রভুর মস্তকে পদার্পণের কথা তিনি কীভাবে লিখবেন। শেষমেশ উনি যখন স্নান করতে গিয়েছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ জয়দেবের বেশে এসে পদ্মাবতীর হাতের রান্না খেয়ে চুপচাপ ওই দুটি শব্দ লিখে চলে গেলেন। জয়দেব এসে দেখেন লেখা হয়ে গেছে” 

এটা জানতাম নাবলল অম্লান

বাকি প্যানেলের অংশের মধ্যে ডানদিকে উপরে রয়েছে কৃষ্ণকালী আর নিচে রাধাকৃষ্ণকে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছেকৃষ্ণকালীর গল্পটা জানিস কিনা জানিনা, তবু বলে দিচ্ছিরাধা আর কৃষ্ণকে সন্দেহ করে রাধার স্বামী আয়ান ঘোষ তরোয়াল নিয়ে কৃষ্ণকে মারতে আসেন। দরজা খুলে ঘরে ঢুকে দেখেন কোথায় কি? কৃষ্ণের পরিবর্তে সেখানে  বিশাল এক কালীমূর্তিরাধা তাঁর পুজোয় ব্যস্ত। কৃষ্ণ বেগতিক দেখে নিজেকে কালীমূর্তিতে পরিবর্তন করেছিলেন” 

এই মন্দিরগুলোর মধ্যে কোনওটারই তো প্রতিষ্ঠালিপি নেই। ওই আটচালা মন্দিরটা কবেকার? লিপিগুলো দেখতে পেলে বোঝা যেত পরমানন্দ রায়ের বংশ ঠিক কবে থেকে এখানে বসবাস শুরু করেছিলেন।” 

কথাটা অম্লান একদম ঠিক বলেছে১৮৩৯ এ কালিকাপুরের মন্দিরদুটি প্রতিষ্ঠা হলে, এটা দেখা দরকার যে মৌখিরার মন্দিরগুলোর ঠিক কবে নির্মিত হয়েছিল। এই ছটা মন্দিরের মধ্যে পাঁচটাতেই কোনও প্রতিষ্ঠা লিপি নেই। আটচালা মন্দিরের একটা প্রতিষ্ঠালিপি আছে বটে কিন্তু সেটা এতটাই  অস্পষ্ট যে পড়া যায় না।

আমরা এবার বাকি মন্দিরগুলো দেখব এই ছটা মন্দিরের সমষ্টি পেরোলে সামনেই দুটো আটচালা। তার পুবদিকে পঞ্চরত্ন বিষ্ণু মন্দির, আর তার গায়েই রায় পরিবারের পুরনো বাসস্থান। প্ৰথম আটচালা ও পঞ্চরত্ন মন্দিরটির প্রতিষ্ঠালিপি রয়েছে।

আমার পাঠানো ভিডিও আর ছবিগুলো দেখতে দেখতে অম্লান বলল, এইতো, দেখতে পেলাম প্ৰথম আটচালা ১৯১৫ শকাব্দ তে তৈরি হয়েছিল। তার মানে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে। অর্থাৎ কালিকাপুরের মন্দির দুটো তৈরি হওয়ার ৪৬ বছর আগে। তাহলে রায় বংশ মৌখিরাতে অনেক কাল ছিলেন। এই মন্দিরে রাম সীতার মূর্তিতে রামের মুকুটটা বেশ ইন্টারেস্টিং। অনেকটা ইংল্যান্ডের রাজার মত। পাশে যে চামর দোলাচ্ছে তার পোশাকটাও সেই  ড্রেসিং গাউন অথবা জোব্বার মত

বিষ্ণু মন্দিরটা আরও পরে তৈরি। ১৮০১ সালে। এইটাই এখানকার মূল আকর্ষণ। এই পঞ্চরত্ন মন্দিরের টেরাকোটার কাজগুলো দেখার মতন। লক্ষ্য কর মাঝের প্যানেলটায় একটা বড় রাসমন্ডল ছাড়া রাধা কৃষ্ণের জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত এবং সখীদের সঙ্গে রাধাকেও নানা কাজে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমদিকের প্যানেলে কৃষ্ণের বাল্যকাল আর পুবদিকের প্যানেলে কৃষ্ণের  যৌবনকাল দেখানো হয়েছেসেটা বুঝতে পারছিস আশাকরি।” 

হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। পুতনা বধটা পরিষ্কার, কারাগারে  শ্রীকৃষ্ণের জন্মটাও বুঝলাম। আর ওই আট হাতওয়ালা বাচ্চাটা শূন্যে ভেসে একটা লোককে শাসাচ্ছে, ওটা তো মনে হচ্ছে যশোদার কন্যা সন্তান যোগমায়া দেবী কংসকে  সেই  বিখ্যাত সংলাপ শোনাচ্ছেন –তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে  পুবদিকের প্যানেলটা  তো পুরোপুরি কমিক স্ট্রিপের মত। একদম নিচে কৃষ্ণ আর বলরাম কংসের গুন্ডাদুটো – চানুর আর মুষ্টিক কে পেটাচ্ছে। তারপর শ্রীকৃষ্ণ কুবলয়পীড় হাতিটাকে খতম করছে । তারপরেই দেখা যাচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ কংস কে চুলের মুঠি ধরে সিংহাসন থেকে টেনে নামাচ্ছে আর শেষে বসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে  সিংহাসনে বসাচ্ছেন।  ওফ – পুরো শ্রীকৃষ্ণর জীবনবৃত্তান্ত একটা মন্দিরের টেরাকোটা প্যানেলের মধ্যে ধরা আছে। কী দেখলাম গো।একটানা বলে থামল অম্লান। 

বুঝলাম অম্লান আর ইংল্যান্ডে নেই, মনে মনে পশ্চিম বাংলার একটা গ্রামে চলে গেছে  –  চোখের সামনে  ২০০ – ২৫০ বছরের পুরনো মন্দির আর জমিদারবাড়ি দেখতে পাচ্ছে। হয়ত ওখানের জয়ন্তী গাছের পাতার মধ্যে দিয়ে হাওয়া বয়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছে, আর নাম জানা কোনও ফুলের  গন্ধ পাচ্ছে

terracotta panel Amitabha Gupta
মৌখিরার বিষ্ণু মন্দিরের টেরাকোটা প্যানেল

আমরা কি রায়দের পুরোনো বাড়িটায় ঢুকব?” অম্লানের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। 

এমনিতে এটা প্রাইভেট প্রপার্টি, রায় বংশ বা তাঁদের জ্ঞাতির কেউ থাকেন এখানে। তবে তুমি তো মানস ভ্রমণ করতে এসেছ, তোমার তো অবারিত দ্বার। চলে এস ভিতরে।”  বলে বাড়ির ভিতরে ও বাইরের কিছু ছবি পাঠিয়ে দিলাম।

বাড়ির ধাঁচটা একরকম হলেও, অলংকরণের ধরণটা আলাদা। জানালার পাশে ওই খালি খালি গোল ফ্রেমের মত জিনিসগুলোতে একসময় সুন্দর নক্সা ছিল বলে মনে হয়। বাড়িতে ঢোকার গেটটা অনেকটা কালিকাপুরের দুর্গাদালানের গেটের মত।বাড়ির বাইরের ছবি দেখে বলল অম্লানএকটু বাদেই আবার বললকিন্তু ভিতরের ঘরগুলো খুব নন ইম্প্রেসিভ। কি ছোট ছোট ঘর আর নীচু সিলিং।” 

আমি একটু হেসে বললামদেড়শো দুশো বছর আগের জমিদার বাড়িগুলো বেশিরভাগ গুলোই নাকি এই রকম ছিল।তারপরে বললাম  “এটা তো ফেলুদার কথা। ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা।

ঠিক বলেছ তো।বলে অম্লান একটু থেমে বলল “আমার একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে অমিতাভদা। আমার থেকে থেকে ঘুম পাচ্ছে আর মনে হচ্ছে আমি দেশে ফিরে গেছি, মৌখিরাতেই আছি আর কলকাতা এখন থেকে চার ঘন্টার ড্রাইভ।

কোনও অসুবিধে নেই। তুই ঘুমিয়ে পড় অম্লান। আমি তোর মনটাকে এক্ষুনি টেলিপোর্ট করে আবার লন্ডনে নিয়ে যাচ্ছি না। তুই এখন এখানেই থাক। ঘুমিয়ে পড়লেও কোনও অসুবিধে  নেই। ঘুমের মধ্যেই কালিকাপুর আর মৌখিরার গ্রাম্য পথে  নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়াতে পারবি আর পুরনো বাড়ির ভিতর থেকে রায়বংশের পূর্বসূরীরা তোকে তাঁদের এককালের গৌরবান্বিত ঠিকানায় তোকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাবে। তুই ঘুম থেকে না ওঠা পর্যন্ত মনে মনে ওখানেই থাকবি।

তবে তাই হোক অমিতাভদা। আমি ফোন রাখছি।” অম্লান আস্তে করে ফোন রেখে দিল |

ফোন রেখে আমি একটুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। মনে মনে আশা রাখলাম যেন খুব শিগগিরই অম্লানের মানস ভ্রমণ বাস্তবায়িত হয়। ও যেন কালিকাপুর আর মৌখিরার মত অনেক জায়গা সশরীরে ঘুরে আসতে পারে।

যাওয়া আসা

সশরীরে কালিকাপুর আর মৌখিরা যেতে হলে, কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে দূর্গাপুরএক্সপ্রেস হয়ে, সিঙ্গুর, গুড়াপ পেরিয়ে বর্ধমান শহর কে বাইপাস করে গলসি পেরিয়ে, পানাগড়ের দার্জিলিং মোড় থেকে ডানদিক নিয়ে ইলমবাজারের দিকে যেতে হবে সতেরো কিলোমিটার যাওয়ার পর এগারো মাইল বাস স্ট্যান্ডের কাছে শান্তিনিকেতন রেস্তোরাঁর উল্টোদিকের আদুরিয়া ফরেস্টের রাস্তায় ঢুকতে হবে  কিছুক্ষণ যাওয়ার পর বাঁদিকে জঙ্গলের মধ্যে একটা রাস্তা নজরে পড়বে এই রাস্তাই সোজা চলে গেছে কালিকাপুর ও মৌখিরা। অন্যথা কলকাতা থেকে ট্রেনে করে বোলপুর বা মানকর স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। কলকাতা থেকে মৌখিরার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার। মানকর স্টেশন থেকে মৌখিরার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। বোলপুর থেকে মৌখিরার দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার।

খাওয়া দাওয়া 

কালিকাপুর/মৌখিরার চত্বরে  খুব উঁচু মানের রেস্তোরাঁ নেই।  দুপুরের খাওয়ার একমাত্র জায়গা সাদামাটা শান্তিনিকেতন রেস্তোরাঁ। পানাগড়ে দুটো ভালো পাঞ্জাবি ধাবা আছে । সকালের জলখাবারের জন্য সিঙ্গুর থেকে গুড়াপ যাওয়ার রাস্তায় অনেকগুলো ভালো রেস্তোঁরা পড়বে।

ছিলেন নামী কোম্পানির দামী ব্র্যান্ড ম্যানেজার | নিশ্চিত চাকরির নিরাপত্তা ছেড়ে পথের টানেই একদিন বেরিয়ে পড়া | এখন ফুলটাইম ট্র্যাভেল ফোটোগ্রাফার ও ট্র্যাভেল রাইটার আর পার্টটাইম ব্র্য্যান্ড কনসাল্টেন্ট | পেশার সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েছেন নেশাকেও | নিয়মিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয় বেড়ানোর ছবি এবং রাইট আপ |

4 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com