banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

শ্যামল চরিত মানস

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

shyamal Gangopdhyay

শ্যামলেন্দুবিকাশ। পদবী গঙ্গোপাধ্যায়। তার উপরের নামটি অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। নীচের নামটি শিশির কর (পরে যিনি ডক্টরেট হবেন)। ১৯৬৫ সাল। সবে সংবাদপত্রের দফতরে যোগ দিয়েছি। ওই তিনটি নাম পরপর লেখা আছে ডিউটি রোস্টারে। রাতে আসতে হবে আমাকে। ওপরে আরও দু’জনের নাম আছে। বুঝলাম তাঁরা প্রবীণ। বাকি তিনজন? মনে হল বুড়ো নয় নিশ্চয়ই। এর মধ্যে শিশির করের ওপরের নামটি কেন জানি না খুব কাছে টানল। শ্যামলেন্দুবিকাশ। বেশ জম্পেশ বলে মনে হল। অমিয় বা শিশিরের মতো ফিনফিনে নয়।

আমার চিরকেলে স্বভাব, কোনও নাম শুনলে কল্পনায় তার একটা চেহারা তৈরি করে নিই। উচ্চতা, স্বাস্থ্য এমনকী গাত্রবর্ণও বা মেজাজও। তবে বাস্তবে সেগুলো অধিকাংশ সময়েই মেলে না। তবু আমার শিক্ষা হয়নি। শ্যামলেন্দুবিকাশ নাম দেখে মনে হল, ইনি নিশ্চয়ই অন্যরকম হবেন। রোগা নন, মোটাও নন। লম্বা নন, বেঁটেও নন। ফর্সা নন, আবার কালোও নন।  মিলল কি? কী আশ্চর্য, মিলে গেল তিনটেই! তাই খুব কাছের বলে মনে হল। আমার মনে হত, ওই তিনটি নাম আলেকজান্ডার ডুমার থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। দেখেছিলাম ওঁদের খুব মিলমিশ।

ওঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যিনি প্রথম দিন থেকেই আকৃষ্ট করলেন তিনি হলেন শ্যামলেন্দুবিকাশ। পরে যিনি সকলের কাছে সাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় হিসেবে বিখ্যাত হয়ে যাবেন। আমার কাছে অবশ্য শ্যামলদা। একজন ব্যতিক্রমী মানুষ, ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক। ওঁর গল্পগুলোতে গ্রামগঞ্জের চরিত্রগুলো আমায় খুব টানে। গোত্রে বিভূতিভূষণীয়। তবে বিভূতিবাবুর চরিত্রের সোজা গতি শ্যামলদার চরিত্রে নেই।

আর সাংবাদিক শ্যামলদা? সেখানেও ব্যতিক্রমী। বক্রগতি। আনপ্রেডিক্টেবল। ওঁর হাতে একটা কপি অসাধারণ পরিণতি যেমন পেতে পারে, তেমন মাঠেও মারা যেতে পারে। তাঁর মনে হয়েছে, সেই কপির অমন ট্রিটমেন্টই প্রাপ্য। দেখতাম চিফ সাব এডিটররা তাঁকে যেন একটু সমীহ করে চলছেন। কেন? সেটা কি তাঁর মেজাজের জন্য? নাকি, সেই সময় সংবাদপত্রের দফতরের সর্বেসর্বা প্রবাদপ্রতিম সন্তোষকুমার ঘোষের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য, তা বলতে পারব না।

কিছু ঘটনার কথা বলি। একদিন দুপুরের ডিউটিতে অফিসে এসে দেখি, শ্যামলদা একমনে দ্রুত, ঝড়ের গতিতে কপি লিখে চলেছেন। চিফ সাব এডিটর সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য তাঁর চেয়ারে বসে মিটিমিটি হাসছেন। সমরেন্দ্রবাবুকে শ্যামলদা ‘বাবা’ বলে ডাকতেন। আপনি নয়, তুমি নয়, বলতেন তুই।  চিফ সাব জানালেন, শ্যামলবাবু বলেছেন, ডাক এডিশনে যত লেখার কপি আছে তাঁকে দিতে। তিনি একাই সব লিখে দেবেন। প্রতিদানে তাঁকে ডবল ডিমের ওমলেট আর কফি খাওয়াতে হবে। 

বিহার ওড়িশার জন্য যে কাগজ ছাপা হত তাকে তখন বলা হত ডাক এডিশন। শ্যামলদা সেদিন বাজি জিতে নিয়েছিলেন। প্রচুর কপি লিখে পাতা ভরিয়ে দিয়েছিলেন। এবং ক্যান্টিন থেকে এসে পৌঁছেছিল ডবল ডিমের ওমলেট ও কফি। সমরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে শ্যামলবাবুর খুব ভাল সম্পর্ক বলেই মনে হত।

Shyamal Gangopadhyay
শ্যামলদা নাকি একাই ডাক এডিশনের সব কপি লিখে দেবেন

আর একদিন  অফিসে এসে দেখি, সমরেন্দ্রবাবু একা বসে আছেন। সাব এডিটার কেউ নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আর কেউ আসেননি?’ উনি বললেন, ‘একজন এসেছেন।’ আমি জানতে চাইলাম, তিনি কোথায়? চিফসাব বললেন, ‘তিনি আছেন। ভাল করে লক্ষ্য করুন, আমার টেবিলের নীচে বসে আছেন।’ 

চিফ সাবের টেবিল আড়ে বহরে বেশ দশাসই। দুই পাশ ঢাকা। মাঝখানটা ফাঁকা। হেঁট হয়ে দেখি, ভেতরে বসে আছেন শ্যামলদা। তাঁর হাত সমরেন্দ্রবাবুর পায়ে। তিনি সমরেন্দ্রবাবুর পা টিপে দিচ্ছেন। এই করে চিফ সাবকে বশ করে তিনি ছুটি আদায় করেছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কোথায় যাবেন শ্যামলদা?’ তিনি জানালেন, ‘তোর বৌদিকে একটা সিনেমা দেখাব বলে কথা দিয়ে ফেলেছি।’ তারপর হাসতে হাসতে চলে গেলেন। সমরেন্দ্রবাবু বললেন, ‘স্রেফ ঢপ মেরে বেরিয়ে গেলেন। বৌকে নিয়ে সিনেমা দেখার লোক উনি নন।’ 

আবার এই সমরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে তাঁকে প্রায় মারামাররিও করতে দেখেছি।  তখন ‘বুদ্ধিজীবী’ শব্দটি খবরের কাগজে খুব দেখা যেত। তাঁদের সই করা বিবৃতি হামেশাই ছাপা হত কাগজে। শ্যামলদা সেদিন কোনও কপি লিখছেন। তাঁর শিফট শেষ হওয়ার মুখে। এমন সময় পরের শিফটের দায়িত্বভার নেবার জন্য সমরেন্দ্রবাবু ঢুকে শ্যামলদার পাশের ফাঁকা চেয়ারে বসলেন।

সামনে পড়ে থাকা কাগজটি পড়তে পড়তে সমরেন্দ্রবাবু বললেন, ‘কারা বুদ্ধি খাটিয়ে খায় না! এই তো আজ সকালে ফুটপাতে আমার পুরনো জুতোটা এমন সুন্দর সারাই করে পালিশ মেরে দিয়ে একেবারে নতুন করে দিল যে বলবার নয়। কী তার বুদ্ধি! অথচ শ্যামবাজারে ডাকসাইটে জুতো সারাই-রা আমাকে বলেছিল, জুতোটা ফেলে দিতে। আর দেখুন ওই জুতোই আমি আজ পরে এসেছি। মনে হচ্ছে, একেবারে নতুন। আমাদের চারদিকে বুদ্ধিজীবী ছড়িয়ে আছে। বুদ্ধি খাটিয়ে তারা জীবন ধারণ করছে।’

সমরেন্দ্রবাবুর কথা শেষ হয়েছে কী হয়নি, শ্যামলদা লাফিয়ে উঠলেন। মুখ লাল। তাঁর বসার চেয়ার দু’হাতে তুলে ফেললেন মাথার ওপর। লক্ষ্য সমরেন্দ্রবাবু। আশপাশের সবাই ছুটে এলেন। ওঁদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বিপত্তি এড়ানো গেল। কিন্তু কেন যে ওই কথায় শ্যামলদা অমন মারমুখী হয়ে উঠেছিলেন, তা অজানাই থেকে গিয়েছিল। তবে শ্যামলদাকে মাঝেমধ্যেই এমন রেগে উঠতে দেখতাম। দেখতাম মানী মানুষকে অপমান করতে। তবে তেমন তেমন জবাব পেলে শ্যামলদাকেও ঢোঁক গিলতে হত বইকি! তেমন একটা গল্প বলি।

আমাদের সঙ্গে নিউজ় ডেস্কে কাজ করতেন আর এক নামী লেখক নরেন্দ্রনাথ মিত্র। খুব নির্বিবাদী ভালমানুষ। নিচু গলায় কথা বলতেন। একবার শ্যামলদার সঙ্গে দেখা করতে এলেন আকাশবাণীর কবিতা সিংহ। দুজনকে কথা বলতে দেখে নরেনদা পাশে গিয়ে বসলেন। হঠাৎ শ্যামলদা বলে উঠলেন, ‘নরেনদা, তোর লেখা কিচ্ছু হচ্ছে না। এবার লেখা ছেড়ে দে।’ প্রতিবাদ করে উঠলেন কবিতা। বললেন, ‘নরেনদার গল্পের মতো কটা ভালো গল্প আপনি লিখতে পেরেছেন শ্যামল? আবার যদি এইভাবে কথা বলেন আমি আপনাকে জানলা গলিয়ে নীচে ফেলে দেব।’ শ্যামলদা চুপ করে গেলেন।

Naren Mitra
তখন নিউজ়ডেস্কে কাজ করতেন নরেন্দ্রনাথ মিত্রও

আগেই বলেছি, অমিয়দা, শ্যামলদা আর শিশিরদা, তিনজন একেবারে কাছাকাছি সময়ে আনন্দবাজারে যোগ দেন। বয়সও কাছাকাছি। অমিয়দা ছিলেন ঘোর রামকৃষ্ণভক্ত। অকৃতদার। টেবিলে রামকৃষ্ণদেব, সারদা মা আর স্বামী বিবেকানন্দের ফটো রেখে ধূপ জ্বালিয়ে কাজে বসতেন। তাঁকে একদিন শ্যামলদা বললেন, ‘অমিয়, তুই যতই ঠাকুর ঠাকুর করিস, তুই যখন ঠাকুরের কাছে যাবি, তখন দেখবি আমি আগেই পৌঁছে গিয়ে ঠাকুরের কোলে বসে চারমিনার খাচ্ছি। তোর আর ঠাকুরের কোলে বসার জায়গা হবে না। তখন কী করবি?’

স্পোর্টস ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার পুষ্পেন সরকার। তখন ওঁদের ডিপার্টমেন্টটা ছিল একটা খোপের ভেতর। নিউজ় আর রিপোর্টিং ছিল একটা বড় হলঘরে পাশাপাশি। স্পোর্টসের লোকেদের বাইরে বেরতে হলে হলঘরের মধ্যে দিয়েই যেতে হত। পুষ্পেনবাবু কাজ শেষ করে বাড়ি যাবার জন্যে বেরিয়েছেন, শ্যামলদা চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘এই যে পুষ্পেন, ছোটবেলায় তোর বৌয়ের সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে কত যে বর-বৌ বর-বৌ খেলেছি! ওর মনে আছে কিনা জিগ্গেস করিস তো!’ একথা বলার পিছনে একমাত্র কারণ হল, ওঁদের জন্ম একই জেলায়, বাংলাদেশের খুলনায়। আর কিছু নয়।

তখন শ্যামলদা একটা সেকেন্ডহ্যান্ড অ্যাম্বাসাডার কিনেছেন। আমাদের গাড়ি চাপাবেন।  কয়েকজনকে নিয়ে অফিস কাটলেন। দক্ষিণ কলকাতার একটা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ শ্যামলদা বললেন, ‘সমর, সুকুমার, তোদের শ্যামলদাকে একদিন এ পাড়ার লোক এই পথ দিয়ে কান ধরে হাঁটা করিয়েছে। পেছনে কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়েছে।’ কেন? শ্যামলদা বললেন, ‘একটা মেয়েকে বিরক্ত করার ফল।’

অফিসের বাইরেও কি শ্যামলদা একইরকম ছিলেন? হ্যাঁ, একদম একইরকম। একই রকম বর্ণময়। এবং কিয়ৎ পরিমানে জটিল। তিনি মাঝেমাঝেই সকলের সামনে নৃত্য পরিবেশন করতে চাইতেন। এমনকী বুদ্ধদেব বসুকেও ভরতনাট্যম নেচে দেখাতে চেয়েছিলেন। 

আমাদের একবার বলেছিলেন, আমাদের সংবাদপত্রের সম্পাদককেও তাঁর নাচ দেখানোর ইচ্ছে আছে। তবে তাঁর সে ইচ্ছা তখন পূরণ হয়নি। হয়েছিল বাগবাজারে যাওয়ার পর। অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক বিখ্যাত তুষারকান্তি ঘোষ মশাইকে তিনি গিয়ে বললেন, ‘আপনাকে আমি আমার নাচ দেখাতে চাই।’ তুষারবাবু বললেন, ‘আমি তো নাচ দেখার জন্যেই বসে আছি। নাচো বাবা।’

shyamal gangopadhyay
শ্যামলদা সংবাদপত্রের সম্পাদককে নাচ দেখাতে চেয়েছিলেন

শ্যামলদা তাঁর বিখ্যাত নাচ শুরু করলেন। তুষারবাবু খুব আহা আহা করে তারিফ করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ নাচার পর শ্যামলদা থামতে চাইলেন। তুষারবাবু এদিকে রাজি নন। তিনি বললেন, ‘না না আমার খুব ভালো লাগছে, থেমো না বাবা।’ শ্যামলদা এদিকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কিন্তু তুষারবাবু নাচ দেখবেনই। থামতে দিচ্ছেন না। সেবার তুষারবাবুর কাছে খুব নাকাল হয়েছিলেন শ্যামলদা।

তবে তার পরেও শুনেছি, মেয়ের বিয়ের সময় পাত্র আনতে গিয়ে তিনি বেয়াইমশাইদের সর্পনৃত্য দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এবং নাচ শুরুর আগে বলেছিলেন, ‘পায়ের কাজ লক্ষ্যনীয়।’

শ্যামলদার সম্বন্ধে গল্পের কোনও শেষ নেই। একটি কাহিনি তিনি যখন স্কুলমাষ্টার তখনকার। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুল। শ্যামলদার স্কুলে আসতে রোজ দেরি হয়। হেডমাস্টারমশাই সতর্ক করে দেন। তবু কাজ হয় না। একদিন তিনি শ্যামলদাকে ডেকে বললেন, ‘কাল যদি ঠিক সময়ে আসতে না পারেন, তা হলে আর আপনাকে চাকরিতে রাখা যাবে না।’ শ্যামলদা কাঁচুমাচু মুখে চলে গেলেন। পরের দিন স্কুল বসে গেল। মাস্টারমশাইরা সবাই ক্লাসে চলে গেলেন। শ্যামল মাস্টারমশাইয়ের আর দেখা নেই। হেডমাস্টারমশাই গম্ভীরমুখে অফিসঘরে বসে।

কিছুক্ষণ পরে শ্যামলদা সেই ঘরে প্রবেশ করলেন। হেডমাস্টারমশাই গম্ভীরমুখে ওঁর দিকে তাকালেন। কিন্তু তিনি কিছু বলার আগেই শ্যামলদা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। হেডমাস্টারমশাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে ‘আরে, কী হল, কাঁদছেন কেন?’ বলে শ্যামলদাকে সামনের চেয়ারে বসালেন।

Shyamal Gangopadhyay
স্কুলশিক্ষকতার জীবনেও শ্যামলদার কীর্তির শেষ নেই

শ্যামলদা চোখ মুছে বললেন, ‘স্যার, আমার একটাই গেঞ্জি। রোজ স্কুল থেকে ফিরে গেঞ্জি কেচে দিই। পরের দিন শুকনো গেঞ্জি পরে আমি ইস্কুলে আসি। গেঞ্জি শুকোতে দেরি হলে আমার ইস্কুলে আসতে দেরি হয়। আজও গেঞ্জিটা একেবারেই শুকোয়নি। আমি আবার গেঞ্জি ছাড়া জামা পরতে পারি না। তাই দেখুন, আমি ইস্কুলে আসার জন্যে গেঞ্জির বদলে মায়ের একটা সাদা ব্লাউজ ভেতরে পরে এসেছি।’

এই বলে ব্লাউজ দেখানোর জন্যে তিনি শার্টের বোতাম খুলতে লাগলেন। হেডমাস্টারমশাই সভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘আরে, থাক থাক, আর বোতাম খুলতে হবে না। যান, ক্লাস সিক্সের বাঁদরগুলো বড্ড চিৎকার করছে। গিয়ে দু’ এক ঘা করে দিয়ে দিন। যত্ত সব!’ বলে তিনি পকেট থেকে রুমাল বার করে মুখ মোছার ভান করে খুব একচোট হেসে নিয়েছিলেন। এই এপিসোডটাই আবার আমাদের অফিসেই ঘটেছিল বলে একটা রটনা আছে। যদি হয়েও থাকে তাহলেও আমার কর্মজীবনকালে হয়নি।

শ্যামলদার ‘স্বনির্বাচিত গল্প’ সংকলনের ভূমিকায় সন্তোষকুমার ঘোষ লিখেছিলেন, ‘শ্যামল এখানে ছদ্মবেশে আছে। শ্যামল ওর আসল নাম নয়, আসল নাম অন্য। বাড়ি অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে।’ ওঁর লেখা পড়ে সন্তোষবাবুর হয়ত মনে হয়ছিল এ কি আসল শ্যামল? আর অফিসে যিনি কাজ করতেন তিনি কোন শ্যামল!

অনেকে বলেন, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মনে করতেন, তিনি দফতরে তাঁর যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না। তাঁর সমসাময়িক লেখকরা তাঁর চেয়ে বেশি স্বীকৃতি পাচ্ছেন, এই ক্ষোভই হয়তো তাঁকে মাঝে মাঝে নানারকম আচরণে লিপ্ত করত। বা হয়তো সংবাদপত্রের সম্পাদনার কাজ, অনুবাদ, শিরোনাম তৈরি করা তাঁর তেমন ভাল লাগত না। তাই মাঝে মাঝেই উদ্ভট আচরণ করতেন, অদ্ভুত কথাবার্তা বলতেন।  এর ফলে সাংবাদিক হিসাবেও তাঁর মূল্যায়ন হয়নি। আমার কর্মজীবনেই তাঁকে অজস্র ভাল কপি লিখতে দেখেছি। অনেক ভাল শিরোনাম। কিন্তু সেগুলো কে মনে রেখেছে! আমিই কি রেখেছি? স্মৃতি খুঁড়ে আমি শুধু একটা শিরোনাম বের করতে পেরেছি।

ব্রহ্মপুত্র নদ প্রতি বছর দূকূল ভাসিয়ে অসমের মানুষের সর্বনাশ করে দেয়। চারিদিকে হাহাকার। শ্যামলদা হেডিং করলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র আবার ভয়াল।’ তখন নিউজ়রুমে কপি নিয়ে, কপির শিরোনাম নিয়ে খুব আলোচনা হত। তৎকালীন নিউজ় এডিটর অমিতাভ চৌধুরী অফিসে এসে শিরোনাম দেখে বললেন, ‘হেডিংটা দেখে মনে হল, ব্রহ্মপুত্র ময়াল সাপের মতো এগিয়ে আসছে।’

Shyamal Ganguly books
শ্যামলদার প্রত্যেকটি সাহিত্যকীর্তিও তাঁর মতোই অতুলনীয় এবং ব্যতিক্রমী

শ্যামলদা তখন বাজারদর, বাজার এইসব নিয়ে কপি লিখতেন, চাষবাস নিয়েও লিখতেন। তিনি জানতেন কখন আমন, কখন বোরো ধানের চাষ হয়, জানতেন বগল ফাঁক করে লাঙলের বোঁটা ধরতে নেই। তাহলে লাঙলের ফাল মাটির ভেতরে প্রবেশ করবে না। জানতেন দিনে রোদ রাতে বৃষ্টিতে ধানগাছের পুষ্টি। আসলে একসময় তিনি থাকতেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চম্পাহাটিতে। চম্পাহাটির স্পর্শ তাঁকে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হিসাবে পূর্ণ করেছিল।

শ্যামলদা গল্প বলেছিলেন, ‘আমাদের উঠোনে একটা পুরুষ্টু নিমগাছ আছে। সেই উঠোনেই পাতা উনুনে তোদের বৌদি শিঙিমাছের ঝোল চাপিয়েছিল। সেই ঝোল মেখে ভাত খেতে গিয়ে দেখি, স্বাদ তেতো। বিভূতিভূষণের ইছামতীতে নিমঝোলের কথা আছে না? তার স্বাদ পেলাম যেন। রান্না করার সময়ে নিমপাতা এসে পড়েছিল ঝোলে।’

শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্য ও সাংবাদিক সত্তাতেও বোধহয় এই নিমপাতার স্পর্শ লেগেছিল। তাই তার স্বাদ এত অন্যরকম!

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com