banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

কালোত্তীর্ণ যে সম্পর্ক… রবি ও নতুন বৌঠান

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

William Rothenstein

গোড়াতেই বলে নেওয়া ভাল, ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তাঁর পুত্রদের যখনই বিয়ে দিয়েছেন, তখন ঠাকুরবাড়ির তুলনায় ধনে এবং সামাজিক মর্যাদায় কন্যাকুল নিম্নবর্গেরই ছিলেন। পুত্রবধূরা প্রায় সকলেই ছিলেন হয় নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের, নতুবা গ্রাম্য-গৃহস্থ, এবং ইংরেজি না-জানা পরিবারের। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর পিতৃকুল। তাঁরা ধনী জমিদার ছিলেন। যদিও এটি ভিন্ন প্রসঙ্গ, তবু গোড়াতে বললাম, আজকের আলোচনাটি বুঝতে সহজ ও সুবিধা হবে ভেবে।

৬নং জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বধূ হয়ে ১৮৬৮ সালের ৫ জুলাই এসেছিলেন যে নববধূ, তখন তাঁর বয়স ছিল ঠিক নয় বছর। এবং মাতঙ্গিনী নামের বৌটি চতুর্দোলায় চড়ে ‘গোধূলি লগ্নের সিঁদুরি রঙে’-রাঙা চেলি পরে যখন ঠাকুরবাড়িতে ঢুকেছিলেন সেদিন খুশির সানাইতে বারোয়াঁ সুর বেজেছিল। নয় বছরের বালিকাবধূর গলায় মোতির মালা আর পায়ে সোনার চরণচক্র। রবীন্দ্রনাথ তখন সাত বছরের বালক।

বাড়ির মেজ ছেলে অর্থাৎ সত্যেন্দ্রনাথের এ বিয়েতে প্রবল আপত্তি থাকলেও তা ধোপে টেঁকেনি শেষ পর্যন্ত। মাতঙ্গিনী গঙ্গোপাধ্যায় বৌ হয়ে এসে নতুন নাম পেলেন ঠাকুরপরিবারের সদস্য হয়ে এবং চিরকালের জন্য জড়িয়ে গেলেন তাঁর থেকে দুই বছরের ছোট দেবরটির সঙ্গে। এ কথা বললে অত্যুক্তি হয় না, যে আজ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, তার প্রায় সত্তর শতাংশেই অগ্রাধিকার পেয়েছে দেওর-বৌঠানের সম্পর্ক। যদিও এই আলোচনায় গবেষণার চেয়ে মুখরোচক কাহিনি পড়তেই পাঠকসমাজ উদগ্রীব বেশি।

মাতঙ্গিনী আজ বিখ্যাত তাঁর নতুন নামের পরিচয়ে। তিনি কাদম্বরী দেবী হলেন ঠাকুর পরিবারে এসে। শুরু হলো পড়াশোনা। বছর চারেক পর ওই বাড়িতে তাঁর দুই দেবর, সোমেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন হল। তেরো বছরের বৌঠানের উপর দায়িত্ব পড়ল দেবরদের হবিষ্যান্ন রেঁধে খাওয়ানোর। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এক গভীর স্নেহ-মায়া-মমতার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন তিনি। ‘ছেলেবেলা’য় জানা গেল সেকথা…

‘মনে পড়ে বৌঠাকরুণ আমাদের দুই ভাইয়ের হবিষ্যান্ন রেঁধে দিতেন, তাতে পড়ত গাওয়া ঘি। ঐ তিন দিন তার স্বাদে, গন্ধে, মুগ্ধ করে রেখেছিল লোভীদের।’ একথাও স্বীকার করেছেন স্বয়ং রচয়িতা – ‘তখন আমাদের বাড়ির যিনি কনিষ্ঠ বধূ ছিলেন তাঁহার কাছ হইতে প্রচুর স্নেহ ও আদর পাইলাম।’

সেই শুরু যেন…

বাড়িতে বৌঠানের আমসত্ত্ব পাহারা দেওয়া থেকে আরও ‘পাঁচ রকম খুচরো কাজের সাথি’ হতে শুরু করেছিলেন কিশোর রবি। যেমন ‘বঙ্গাধিপ পরাজয়’ পড়ে শোনানো, সরু করে সুপুরি কেটে দেওয়া ইত্যাদি। রসিকতা করে রবীন্দ্রনাথ বলেওছেন,

‘আমার অন্য কোনো গুণ যে ছিল, সেকথা কিছুতেই বউঠাকরুণ মানতেন না, এমনকী চেহারারও খুঁত ধরে বিধাতার উপর রাগ ধরিয়ে দিতেন।’

পিঠোপিঠি এই দেবর-বৌদির খুনসুটির কথা ‘জীবনস্মৃতি’তেও পাওয়া যায়,

‘বাড়িতে আমার দর্পহরণ করিবার জন্য যাঁহার প্রবল অধ্যবসায় ছিল– তিনি বিশেষ করিয়া আমাকে এই কথাটি বুঝাইয়া দিয়াছিলেন যে আমার ললাট এবং মুখশ্রী পৃথিবীর অন্য অনেকের সহিত তুলনায় কোনোমতে মধ্যম শ্রেণীর বলিয়া গণ্য হইতে পারে।’

Bhagnahridoy Utsarga
ভগ্নহৃদয় কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গপত্র

এই সময় অর্থাৎ চোদ্দো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ‘ম্যাকবেথ’ নাটক অনুবাদ করে ফেলেছেন। সেখানেই ‘হেকেটি’র সঙ্গে কবির পরিচয়। সেই থেকেই নতুন বৌঠানকে খেলাচ্ছলে খেপানোর উদ্দেশ্যে ‘হেকেটি’ নাম দেওয়া। এবং আরও ছ’বছর পর অর্থাৎ ১৮৮১ সালে ‘ভগ্নহৃদয়’ গ্রন্থটি উৎসর্গ করলেন ‘শ্রীমতী হে– কে’! একবার সজনীকান্ত দাস রবীন্দ্রনাথকে এ বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, যে ‘হে’ আসলে কে? কবি তখন সজনীকান্তকে উল্টে প্রশ্ন করেন ‘তোমার কী মনে হয়?’ সজনীকান্ত বলেছিলেন, ‘ হেমাঙ্গিনী। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অলীকবাবুতে আপনি অলীক এবং কাদম্বরী দেবী হেমাঙ্গিনী সাজিয়াছিলেন। সেই নামের আড়ালের সুযোগ আপনি গ্রহণ করিয়াছিলেন।’ কবি স্বীকার করেন এবং বলেন, ‘ইহাই সত্য অন্য সব অনুমান মিথ্যা।’

এখানে আর একটি প্রসঙ্গ বলা দরকার। রবীন্দ্রনাথের যখন চোদ্দো বছর বয়স, তখন তাঁর মা সারদা দেবীর মৃত্যু হয়। যেদিন রাতে এই ঘটনা ঘটেছিল, পুরনো দাসী বালকদের ঘরে ছুটে এসে চিৎকার করে কেঁদে বলেছিল, ‘ওরে তোদের কী সর্বনাশ হল রে।’  সেদিন কিন্তু ‘বউঠাকুরানী তাড়াতাড়ি তাহাকে ভর্ৎসনা করিয়া ঘর হইতে টানিয়া বাহির করিয়া লইয়া গেলেন- পাছে গভীর রাতে আচমকা আমাদের মনে গুরুতর আঘাত লাগে এই আশঙ্কা তাঁহার মনে ছিল।’  দু’জনের সম্পর্কের ভিত গড়ে ওঠার এই টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো কিন্তু রবীন্দ্রনাথ স্বীকার করেছেন দীপ্তভাবেই।

Kadambari Devi
কাদম্বরীর রোম্যান্টিক সৌন্দর্যবোধ ছিল ষোলোআনা

তবে মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ কিন্তু জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে কাদম্বরী দেবীর বিয়েটা মন থেকে মেনে নেননি,  এবং পাশাপাশি কাদম্বরী সত্যেন্দ্রনাথের আশঙ্কাকে মিথ্যে করে ঠাকুরবাড়িতে যোগ্য বধূ হয়ে উঠেছিলেন। আগের ঘটনাগুলো তার প্রমাণ। তিনতলায় ছাদের উপর বাগান সাজানো, ঘর সাজানো, সবই করেছিলেন ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্যেই। তাঁর এই সৌন্দর্যবোধে কিশোর রবীন্দ্রনাথ অনুপ্রাণিত হতে লাগলেন। নিজগুণে ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক সাহিত্যসভার কেন্দ্রে কাদম্বরী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন অনায়াসেই। কাদম্বরীর জীবনের কথা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁর রোম্যান্টিক সৌন্দর্যবোধ ছিল ষোলোআনা। পাশাপাশি অপরের প্রাণে প্রেরণার প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। ফলে সম-প্রজন্মের প্রতিনিধি রবীন্দ্রনাথের মনোগঠনে কাদম্বরীর অবদান অসামান্য।

মা সারদাদেবীর মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে কাদম্বরী দেবী মাতৃহীন বালকদের ভার গ্রহণ করাটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মনে হয়। এর আগে দীর্ঘ সাত বছর প্রায় পিঠোপিঠি দু’টি বালক-বালিকা বা কিশোর-কিশোরীর খেলার ও বন্ধুত্বের সম্পর্কটা কেমন করে যেন একজনের উপর মাতৃস্থান অধিকার করে বসল। ষোলো বছর বয়েস তখন তাঁর,  ঠাকুর পরিবারে তিনিই ছিলেন নিঃসন্তান। ফলে দু’মাসের ছোট সোমেন্দ্রনাথ ও দু’বছরের ছোট রবীন্দ্রনাথ মায়ের স্থান গ্রহণের মধ্যে তাঁর কোথাও একটা পরম স্নেহের অধিকারবোধ হয়তো জন্মেছিল।

কাদম্বরী নিজে অসাধারণ সাহিত্য-প্রেমিক ছিলেন। তৎকালীন বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। তিনি সাহিত্য শুধু পড়ার জন্য পড়তেন না,  তাই নিয়ে আলোচনা করতে ভালবাসতেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অনেক উপন্যাস পড়ে শোনাতেন। রবির কাছে গল্প শুনতে শুনতে দুপুরবেলায় হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতেন তিনি। সেই সময়ে ‘ভারতী’ পত্রিকা নিয়েও তাঁর ভাবনা ছিল। অথচ তিনি থাকতেন পুরোপুরি অন্তরালে।

১৮৭৭ সালের জুলাই মাসের এমনই একটি দিন। জোড়াসাঁকোর ৬নং বাড়ির তেতলার ছাদের ঘরে ছোটভাই রবি এবং বন্ধু অক্ষয়চন্দ্রকে (চৌধুরী) নিয়ে আলোচনায় বসলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। কথায় কথায় ঠিক হল, সাহিত্য বিষয়ক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতে হবে। সকলের সম্মতিও মিলল। এই সংকল্পের কথা বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথকে জানাতে তিনি শুধু সম্মত হয়েছিলেন তাই নয়, সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকার নামটিও ঠিক করে দিয়েছিলেন– ‘সুপ্রভাত’। এদিকে এই নামটি আবার জ্যোতিরিন্দ্রের পছন্দ নয়। ভাবলেন নামের মধ্যে যেন কোথাও একটা স্পর্ধা রয়েছে, যেন এই পত্রিকার মধ্যে দিয়ে বঙ্গসাহিত্যের আকাশে সুপ্রভাত ঘোষিত হচ্ছে। ভাইয়ের এমন অভিমতকে স্বাগত জানিয়ে দ্বিজেন্দ্রনাথ পরে নামটি বদল করে বললেন, ‘ভারতী’ হলে মন্দ হয় না! বলেওছিলেন সেকথা।

Kadambari Devi
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের তুলিতে কাদম্বরী দেবী

‘আমাকে সম্পাদক হইতে বলিল। আমি আপত্তি করিলাম না। আমি কিন্তু নামটুকু দিয়াই খালাস। কাগজের সমস্ত ভার জ্যোতির উপর পড়িল।’  জ্যোতিরিন্দ্রের এই নামটিই মনে ধরে গেল। পত্রিকা প্রকাশ পেল সেই বছরই শ্রাবণ মাসে। নিঃসন্তান জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এবং তাঁর সহধর্মিণী যেন পত্রিকাটির অলিখিত জনক-জননী হয়ে উঠলেন। পতির উদ্যোগের পিছনে পত্নীর প্রেরণা বিপুলভাবে কাজ করল। এই আড়ালের মানুষটিকে বাংলাদেশ আজ বড়ো হতভাগিনী হিসেবেই চিহ্নিত করে তুলেছে। এই ভুলের দায় আমাদেরই। তাঁকে সঠিকভাবে চিনে উঠতে পারিনি। আমরা তাঁর কল্পিত অলিখিত ‘সুইসাইড নোট’ পড়তে যত না উৎসাহিত হয়েছি, তাঁর সাহিত্যসেবার কথা ততটা উৎসাহ সহকারে জানতে অপারগ থেকেছি। তাই শরৎকুমারী দেবী ‘ভারতী’ প্রসঙ্গে লিখেছিলেন,

‘ফুলের তোড়ার ফুলগুলিই সবাই দেখিতে পায়, যে বাঁধনে তাহা বাঁধা থাকে তাঁহার অস্তিত্বও কেহ জানিতে পারে না। মহর্ষি পরিবারের গৃহলক্ষ্মী শ্রীযুক্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী ছিলেন এই বাঁধন। বাঁধন ছিঁড়িল [১৯ এপ্রিল?, ১৮৮৪]— ভারতীর সেবকরা আর ফুল তোলেন না, মালা গাঁথেন না, ভারতী ধূলায় মলিন।’

সাহিত্যানুরাগী জ্যোতিরিন্দ্রের স্ত্রী, কাদম্বরীর অকালপ্রয়াণের পর পরই পত্রিকার পরিচালকরাও স্থির করলেন পত্রিকা আর প্রকাশিত হবে না। যদিও পরবর্তীতে স্বর্ণকুমারী দেবী ‘ভারতী’র দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

কাদম্বরীর জন্যই ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের দরজা নারী এবং পুরুষের জন্য অবাধ হল। তেতলার ছাদে নিয়ম করে সাহিত্যসভা বসত।‌ সেখানে বাড়ির যেমন, তেমনি বাড়ির বাইরের অনেকেই আসতেন। কাদম্বরী বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতা পড়তে ভালবাসতেন। তাঁকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো বা নিজের হাতে আসন বুনে উপহারও দিয়েছেন। সন্ধেবেলায় পরিপাটি গানের আসর বসত তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায়। মাদুরের উপর তাকিয়া, রুপোর রেকাবে ভিজে রুমালের ওপর বেলফুলের গোড়ের মালা, এক গ্লাস বরফজল, বাটা ভর্তি ছাঁচি পান সাজানো থাকত। কাদম্বরী গা ধুয়ে চুল বেঁধে বসতেন সেখানে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বেহালা বাজাতেন আর রবীন্দ্রনাথ চড়া সুরে গান গাইতেন।

Kadambari and Family
(বাঁ দিক থেকে দাঁড়িয়ে) জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। (বসে) জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। পাশে কাদম্বরী দেবী

কিশোর রবীন্দ্রনাথের মধ্যে রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা জাগানোর এই পরিবেশটি ছিল একেবারেই মনোরম। বুঝতে হবে রবীন্দ্রমানস গঠনে এই অসামান্য নারীর দান অবিস্মরণীয়। কবি হয়ে ওঠার পিছনে রবীন্দ্রনাথের আন্তরিক চেষ্টার মূলে কাদম্বরী অমূল্য হয়ে উঠেছিলেন। উৎসাহিত করার জন্য রসিকতা করে বলতেন, ‘কোনোকালে বিহারী চক্রবর্তীর মতো লিখতে পারবে‌ না।’ রবীন্দ্রনাথও এসব টিপ্পনী শুনে ভাবতেন, ‘কী করে এমন হব যে আর কোনও দোষ তিনি খুঁজে পাবেন না।’ আসলে রবীন্দ্রনাথ ভাবতে পারতেন না কাদম্বরী পরোক্ষে যে তাঁর দোষ ধরতে চাইতেন না। যখন তিনি বুঝতে পারলেন সে কথা, তখন কাদম্বরী দেবী কোথায়!

রবীন্দ্রনাথ খুব দীপ্ত কন্ঠে স্বীকার করেছেন পরে– ‘খুব ভালবাসতুম তাঁকে। তিনিও আমায় খুব ভালবাসতেন। এই ভালবাসায় নতুন বউঠান বাঙালি মেয়েদের সঙ্গে আমার প্রাণের তার বেঁধে দিয়ে গেছেন।’

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী মাঝে মাঝেই হাওয়া বদল করতে চলে যেতেন গঙ্গার ধারে কোনও বাগান বাড়িতে। রবীন্দ্রনাথও সঙ্গী হতেন। গান বাঁধতেন, গান গাইতেন তাঁদের উৎসাহে। রানী চন্দকে বলেছেন, ‘গঙ্গা সাঁতরে তখন এপার ওপার হতাম।‌নতুন বৌঠান দেখে আতঙ্কে শিউরে উঠতেন। কত বেড়িয়েছি নতুন বৌঠান আর আমি বনে জঙ্গলে, কত কুল পেড়ে খেয়েছি।’ গান শোনাতেন নতুন নতুন সুর করে। আসলে রবিপ্রতিভার প্রদীপের তেল-সলতে জোগানোর প্রারম্ভিক এবং প্রাথমিক শুরুর কাজটা কিন্তু কাদম্বরীই করেছিলেন। আমরা অনেকেই ভুলে যাই যে কাদম্বরী নিজেও ছিলেন একজন সুঅভিনেত্রী এবং সুগায়িকা। এরপর ১৮৮৩ সালের ডিসেম্বরে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হল।

বিয়ের দু মাস পরেই অর্থাৎ ১৮৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ছবি ও গান’ প্রকাশিত হল, উৎসর্গপত্রে কারও নাম উল্লেখ না করেও রবীন্দ্রনাথ উৎসর্গ করলেন নতুন বৌঠানকেই। লিখেছিলেন,

‘গত বৎসরকার বসন্তের ফুল লইয়া এ বৎসরকার বসন্তে মালা গাঁথিলাম। যাঁহার নয়নকিরণে প্রতিদিন প্রভাতে এই ফুলগুলি একটি একটি করিয়া ফুটিয়া উঠিত, তাঁহারি চরণে ইহাদিগকে উৎসর্গ করিলাম।’ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ উৎসর্গপত্র।

এর মাস দুয়েক পর কাদম্বরী আত্মহননের পথ বেছে নেন। এর ২৯ বছর পর ‘জীবনস্মৃতি’র পাতায় রবীন্দ্রনাথ এই মৃত্যু সম্পর্কে লিখলেন,

‘আমার চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়। তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে…’

গ্রন্থঋণ:
১) জীবনস্মৃতি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২) ছেলেবেলা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩) জীবনস্মৃতি – জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর – বসন্ত কুমার চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত
৪) রবিজীবনী (১ম-৪র্থ খণ্ড) – প্রশান্তকুমার পাল
৫) রবীন্দ্রজীবনী ১ম-২য় খণ্ড) – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়

প্রাক্তন সাংবাদিক। পড়াশোনা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ষোলো বছর বয়স থেকে কলকাতার নামী পত্রপত্রিকায় লেখালেখির হাতেখড়ি। ছোটোদের জন্য রচিত বেশ কিছু বই আছে। যেমন 'বিশ্বপরিচয় এশিয়া', 'ইয়োরোপ', 'আফ্রিকা' সিরিজ ছাড়া 'দেশবিদেশের পতাকা', 'কলকাতায় মনীষীদের বাড়ি', 'ঐতিহাসিক অভিযান', 'শুভ উৎসব' ইত্যাদি। এছাড়া বর্তমানে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা গবেষণার কাজে নিবেদিত। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। 'রবীন্দ্র-জীবনে শিক্ষাগুরু' এবং 'রবীন্দ্র-গানের স্বরলিপিকার'। বর্তমানে একটি বাংলা প্রকাশনা সংস্থায় সম্পাদক।

One Response

  1. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানস গঠনে তাঁর নতুন বৌঠানের সত্যিই কি অবিস্মরণীয় অবদান, তা আজ লেখকের সুন্দর সহজ লেখনীর মধ্য দিয়ে জানতে পেরে সমৃদ্ধ হলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com