banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

জীবন থেকে জীবনে: পর্ব ১

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Kolkata Nostalgia

আগুন, বই আর গোলাপ

পরের পর্বের লিংক []

প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এমএ করব, সেটাই ঠিক ছিল। ইংলিশ অনার্সের বিএ পরীক্ষার রেজাল্টে প্রথম বারোজনের এই সুযোগ থাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের পাশাপাশি প্রেসিডেন্সির এই ক্লাসগুলো করার মহার্ঘ্য সুযোগ জীবনস্মৃতিতে লেখার মতোই স্মৃতিকণা। 

প্রেসিডেন্সির ভর্তির পাট মিটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা বিল্ডিংয়ে দেখতে গেছিলাম, কোথায় কী নাম উঠল। এবং বলা বাহুল্য, ইউনিভার্সিটির মতোই লম্বাচওড়া, মস্ত বেঢপ নোটিসবোর্ডে কোথায় যে কী লেখা, বোঝে কার সাধ্যি। আর সেই বোর্ডের নীচে ফুটবল মাঠের ভিড়। আমি ভিড়ের পিছনে দাঁড়িয়ে শুধু বোর্ডই দেখছি; আসলে দেখছি না কিছুই। বোঝা দূরে থাক। হঠাৎ একটি যুবক অযাচিতভাবেই কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “ভর্তির কাগজ আছে?” বললাম, “হ্যাঁ।” সে বলল, “দেখি।” দেখালাম। সে তাতে চোখ বুলিয়ে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝল। তারপর কাগজ ফিরিয়ে আমায় বলল, “এই দারভাঙ্গা বিল্ডিংয়ের দোতলায় ইংলিশের সেকশন বি-তে তুমি আছ।” বলেই যেমন এসেছিল তেমনই হারিয়ে গেল ভিড়ের ওপারে। কোনও ধন্যবাদের অপেক্ষায় না থেকে।

আমি কিন্তু ঠায় দাঁড়িয়ে ভিড় পাতলা হওয়ার জন্য। যখন হল, বোর্ডের কাছে দাঁড়িয়ে যুবকের দেওয়া তথ্য মেলাতে লাগলাম নোটিসের সঙ্গে। দেখলাম যা বলেছে দিব্যি তাই। একটু লজ্জা যে হল না, তা নয়। কিন্তু কী আর করা? অগত্যা প্রেসিডেন্সির দিকেই হাঁটা মারলাম, দুটো সুপ্ত বাসনা নিয়ে। পকেটে দশটা টাকা, তা দিয়ে পুরনো একটা বই যদি তোলা যায়, আর কফি হাউজে দু’ কাপ কফি। চার আনা, চার আনা আট আনায়।

সে দুপুরটা ভোলার নয়। কফি নিয়ে একা একাই বসে। বন্ধু তো কেউ নেই। আসার পথে পুরনো বইয়ের দোকানে ছ’টাকায় জোগাড় হয়েছে খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে লেখা পেত্রোনিয়াস-এর তুমুল বিতর্কিত বহুপঠিত, রসময় উপন্যাসিকা ‘সাতিরিকন’। বলা যায় ‘উপন্যাস’ নামক শৈলীটির জন্মেরও আগের উপন্যাস। রোমান জীবনের অধঃপতনের এক অপরূপ কথাচিত্র। পড়ার ইচ্ছে থাকলেও বইটা কখনও হাতে আসেনি। আজকের আগে। পুরনো পেঙ্গুইন পেপারব্যাক ঠিকই, তাও ছ’টাকায়! কফির চুমুকের সঙ্গে একটু একটু পাতা ওল্টাচ্ছি। নেশায় ও সম্ভোগে মাতাল চরিত্রদের কাণ্ডকারখানায় সবে ঢুকব-ঢুকব করছি যখন, কফি হাউজের তেতলা থেকে নীচে চোখ পড়ে চমকে উঠলাম। দোতলার প্রকাণ্ড হলটার বলতে গেলে মাঝখানটাতেই টেবিলের চারপাশে বন্ধুদের সঙ্গে কফি ও তর্কে মাতোয়ারা ইউনিভার্সিটির নোটিস বোর্ডের সামনে দেখা সেই যুবক!

St Xavier's College
এমএ-র বারোজনের মধ্যে একা আমিই সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে

একবার ভাবলাম নেমে গিয়ে ধন্যবাদটা জানিয়ে আসি। তারপরেই ভাবলাম, ও ধন্যবাদ নেবে না বলেই দ্রুত সরে গিয়েছিল। তাই আর নামলাম না। এর কিছুদিন বাদে প্রেসিডেন্সির এক বান্ধবীকে নিয়ে কফি হাউজের তেতলার এইখানটায় বসেই ফের চোখে পড়ল কফির ধোঁয়ার মধ্যে তর্করত সেই যুবক। আমি মন দিয়ে ওকে দেখছি দেখে বান্ধবী বলল, “তুমি চেনো ওকে?” বলতেই হল, “কী করে চিনব? এই তো কিছুদিন হল প্রেসিডেন্সিতে এলাম। একদিন শুধু দেখেছিলাম ইউনিভার্সিটিতে। তুমি চেনো?” বান্ধবী তো অবাক। “ও মা, কে না চেনে ওকে! ও তো কাকা। নকশাল নেতা, আমাদের কলেজেরই স্টুডেন্ট। ব্রিলিয়ান্ট। তবে ওই…” বান্ধবী কথা শেষ করল না। তবে আমার যা বোঝার বুঝে গেছি। ফের ঠোঁটে কাপ ধরে কাকাকে দেখছি। কিছুদিন যাবৎ নামটা শুনছি। বেশিটাই ওর ভাল নামে। অসীম চট্টোপাধ্যায়।

প্রেসিডেন্সি থেকে এমএ করার বারোজনের মধ্যে একা আমিই সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে, বাকি আর একজন সম্ভবত স্কটিশের। সে এতই চুপচাপ যে ওর নাম জানতেই চলে গেছিল কতকাল, আর তা ভুলেও গেছি কতদিন হল। কিন্তু স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে সত্যব্রত পাল; এমএ-র সঙ্গে সঙ্গে আইএফএস করে বিদেশে দারুণ দারুণ সব পোস্টিংয়ে ছিল। কেরিয়ার শেষ করল পাকিস্তানে ভারতের রাষ্ট্রদূত হয়ে। ইংরেজিতে অসম্ভব ভাল দখল ছিল, মগ্ন থাকত ইয়েটস ও এলিয়টের কবিতায়।

বারোজনের আটজনই মেয়ে। বন্দনা, সুদেষ্ণা, কল্যাণী, কুমকুম, শুক্তি, শ্রীদেবী, রুবি আর রিঙ্কি। বাকি যে ছেলেটিকে জুড়ে আমাদের বারোর দল সে শুভরঞ্জন, কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তর খুড়তুতো ভাই। ও, বন্দনা, সুদেষ্ণাকে নিয়ে আমাদের একটা ছোট্ট দলও তৈরি হয়ে গেছিল। কারণ সিম্পল: ইংরেজির পাশাপাশি আমাদের বাংলায় পড়াশুনোরও জোরালো চল ছিল। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ তো বটেই, তারও পরেকার শঙ্খ, অলোকরঞ্জন, শক্তি, সুনীলও আমাদের আড্ডায় চলে আসতেন। শুভ তখন বাংলা কবিতা লেখায় হাত লাগিয়েছে, বন্দনা আমাকে অবাক করত ওর রবীন্দ্রসংগীত বোঝদারিতে। গাইত না, তবে যে-কোনও গানের লাইন বলতে পারত যেখান-সেখান থেকে। সুদেষ্ণাকে (চক্রবর্তী) তখন পেয়ে বসেছিল জার্মান সাহিত্য। ও ধরেছিল টমাস মান পড়া।

আমার তখন চলছিল ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি সাহিত্য পড়া। সন্ধেবেলা প্রেসিডেন্সির লাইব্রেরি সংলগ্ন কিউবিকলে প্রফেসর তারকনাথ সেন তাঁর অবিস্মরণীয় ‘কিং লিয়ার’-এর ক্লাসগুলো নেন বলে ওই সময় পার্ক স্ট্রিটের আলেয়াঁস ফ্র‍্যাঁস্যাজে ফিফথ ডিগ্রির ফ্রেঞ্চ ক্লাসগুলো করতে যেতে পারছিলাম না। কামু, আঁতোয়ান দ্য স্যান্তেক্সুপেরির গদ্য আর র‍্যাঁবো ও ভেলেনের কবিতা। আর ওই সময়েই একদিন ওয়েলিংটন স্কোয়্যারের পুরনো বইয়ের দোকানে হাতে এল জ্যঁ জাক রুসো’র ‘কনফেশনস’। জীবনের দোষ-ভুলের স্বীকারোক্তি যে কীভাবে উপন্যাসের মতো জীবনের ছবি হয়, তা দেখে অবাক হয়ে পড়ি। নতুন করে পড়া ধরি কামু’র ‘আউটসাইডার’ বা ‘অচেনা’। 

খেয়ালখুশি, গদ্যপদ্য নিয়ে আমাদের আলোচনাটা কিছুটা থমকাল সুদেষ্ণা হঠাৎ করে কেমব্রিজে পড়তে চলে যাওয়ায়। তখন শুভর বান্ধবী হল কুমকুম, কিন্তু আমাদের আগের সেই মিক্সড ডাবলস জুটি আর হল না। ক্লাস খতম হলে আমার আর বন্দনার বসার জায়গা হল কফি হাউজের ওই সরু এক ফালি বারান্দার শেষ টেবিল। যেখানে ইতিহাসের বিশ্রুত অধ্যাপক অ_____  দাশগুপ্ত ও ওঁর অধ্যাপিকা স্ত্রী মানসীকে প্রায় নিয়মিতই বসতে দেখা যেত। ওখানে বসা শুরু করার গোড়ার দিকেই একদিন কফিতে প্রথম চুমুক দিতে না দিতেই জোর কলরব দোতলার হলে। 

Coffee House
জোর কলরব কফি হাউসের দোতলার হলে

আমরা সবে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করে এসেছি অধ্যাপক জ্যোতি ভট্টাচার্যের। উনিও পড়াচ্ছিলেন ‘কিং লিয়র’। আর হায় হায়, কী পড়ানো স্যারের! যেন বিলেতের স্টেজের অভিনয় দেখছি। যেমন কেতাদুরস্ত উচ্চারণ, তেমনই অভিনয়ের সুরে ডেলিভারি। নোট নেব কী, হাঁ করে কথাগুলো গিলছি। তার পরেই দুটো পিরিয়ড অফ। তাই এসে উঠেছি কফি হাউজে। আর ওই লিয়ার লেকচারের কথাই হচ্ছিল যখন শোর উঠল ‘পুলিশ! পুলিশ!’ নীচের হলের একটা টেবিল থেকে উঠে দু’জন দেখলাম কোণের টয়লেটের দিকে ছুটল; ওটার জানলার পাশের জলের পাইপ ধরেই নিয়মিত চম্পট দিতে হত পুলিশের তাড়ায়। পুলিশ এসে কাউকে খুঁজে না পেয়ে ফিরতে একটা প্রায় হাসির রোল বইল কফি হাউজে। আমরা বুঝি বা না-বুঝি শহরে নকশাল আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। 

তখনও আমরা জ্যোতিবাবুর পাঠ আর ব্যাখ্যার মধ্যে চুর হয়ে আছি। চোখের সামনে ভাসছে সাদা ধুতি–পাঞ্জাবি আর কালো রেডিও ফ্রেমের চশমায় অসম্ভব নজরকাড়া জ্যোতিবাবু বিলেতের নটদের স্টাইলে কী দেমাক আর আক্রোশের সঙ্গে আর্ল অফ গ্লস্টারের জারজ পুত্র এডমন্ডের মনোলগ বলে যাচ্ছেন, 

“Fine word – legitimate!
Well, my legitimate, if this letter speed,
And my invention thrive, Edmund the base
Shall top the legitimate. –
I grow; I prosper. –
Now, gods, stand up for bastards!”

তারপর ন্যায্য সন্তান ও জারজের ব্যাখ্যা করছিলেন স্যার এবং অপূর্ব ব্যঙ্গ ও তাচ্ছিল্যের ইঙ্গিতে বলে গেলেন এডমন্ডের মর্মান্তিক উচ্চারণটা (যা আজও তিপ্পান্ন বছর পরেও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে): “This is the excellent foppery of the world.”

আমরা কফি হাউজ থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ফিরতে পারিনি। নকশাল আর পুলিশের হানাহানির ছাপ চতুর্দিকে, বাতাসে বারুদের গন্ধ। ট্রাম, বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে মনে হল। কিছুক্ষণ ট্রামের অপেক্ষায় থেকে আমরা হাঁটা ধরলাম শিয়ালদার দিকে। দক্ষিণ কলকাতার মেয়ে বন্দনার ফেরার উপায় এখন ট্রেন ধরা। ট্রামরাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে কেবলই মনে হচ্ছে শুধু কলেজ স্ট্রিট নয়, গোটা কলকাতারই এক নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে। ট্রেনে ওঠার আগে বন্দনা পিছনে তাকিয়ে আমাকে বলল, “বাড়ি চলে যাও। অন্য কোথাও যেও না।” বলল তো বটে, কিন্তু বাড়ি ফিরি কী করে? 

শিয়ালদা স্টেশন থেকে মৌলালির দিকে হাঁটলে ক্যাম্বেল হাসপাতাল পেরোতে হয়। কতগুলো বছর গেল, তবু আমাদের ঠোঁটে-জিভে নীলরতন সরকার মেডিকেল হাসপাতাল ক্যাম্বেলই থেকে গেল। আর এই ক্যাম্বেল অবধি এলে উল্টো ফুটের শাঁখারিতলা স্ট্রিটের একটা বাড়ি নিশির ডাকের মতন ডাকে। বাড়িটা আসলে একটা মন্দির। রামসীতার মন্দির। পেল্লায় ইমারত বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। এক একটা থাম যেন মোগলদের প্রাসাদ কেটে তুলে আনা। ট্রামরাস্তা ডিঙিয়ে ক্রিক লেনের খানিকটা পেরিয়ে প্রথম ডান হাত মুড়লেই রামসীতার মন্দির। তবে ওই ডান হাতে মোড়ার একটু আগেই ১৪ নং ক্রিক লেনে পল’দাদের বাড়িটা পেরোতে হবে। পল গোমস। লোরেটো মিশন ছেড়ে বেরিয়ে এসে প্রথম যেখানে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির অফিস করেছিলেন মাদার টেরিজা। 

Mother Teresa
বড় হয়ে জেনেছি মহিলা মাদার টেরিজা। চলন্ত দেবী

মাত্র এক বছর আগেও এই ক্রিক লেনের পাশের পাড়া ক্রিক রো-র বাসিন্দা ছিলাম। ছেলেবয়সে নীলপাড় সাদা শাড়ির এক মেমসাহেবকে দেখতাম রাস্তার গরিব কাচ্চাবাচ্চাদের ধরে হিড়হিড় করে নিয়ে অ আ ক খ, এ বি সি ডি করাচ্ছেন স্লেটপেন্সিলে। যোগ বিয়োগ গুণ ভাগও ধরাচ্ছেন। ঘন্টাখানেক এভাবে চললে ঝোলা থেকে বার করে সিঙ্গাড়া বোঁদে খাওয়াচ্ছেন। আমরা ছেলে ছোকরারা এসবের মানে করতে না পেরে ধরে নিয়েছি এ হল মেমের খামখেয়ালিপনা। তারপর আরেকটু বড় হয়ে জেনেছি মহিলা মাদার টেরিজা। চলন্ত দেবী, বিশ্বজোড়া নাম।

ডানদিকে মুড়ে পেলাম রামসীতার মন্দির। এর একতলার প্রকান্ড বারান্দা জুড়ে আমাদের আড্ডা। শ্যামল, চন্দন, খোকন আর আমি। শ্যামল আর চন্দন এই মন্দিরবাড়িরই ছেলে, খোকন কয়েকটা বাড়ি পরে শাঁখারিতলার বিখ্যাত জজবাড়ির ছেলে, সদ্য ব্যাঙ্কে ঢোকার পরীক্ষা দিয়েছে। শ্যামল আর চন্দন পড়াশুনো ছেড়ে চাকরির চেষ্টায়। দেখতে দেখতে শ্যামল রিৎজ হোটেলে জয়েন করল। আর চন্দন তখনও বেহালা ফ্লাইং ক্লাবে প্লেন ওড়াউড়ি করে যাচ্ছে। আর আমি বইপত্তর নিয়ে ক্লাস করতে যাচ্ছি কলেজ, ইউনিভার্সিটি। ওরা ফাজলামো করে বলে, “বয়েস হয়েছে মেয়েদের বুকে হাত বুলোনোর, তা না ভারী ভারী book নিয়ে ঘুরছে।”

রামসীতার মন্দিরের ওই ঢালা বারান্দা আর পাশের একটা ঘর ছিল আমার সেকেন্ড কফি হাউজ। শুধু কফির বদলে ছিল ওপর থেকে মাসিমার পাঠানো অপূর্ব চা আর ভোগের লুচি। আর সন্ধে গাঢ় হলে প্রত্যেকে দু’চার টাকা করে কন্ট্রিবিউট করে তুলনাহীন বাংলা মদ। কালে কালে দেশ-দুনিয়ার কত মহার্ঘ্য মদই তো খেলাম, কিন্তু বন্ধুসংসর্গে প্রথম যৌবনের ওই বাংলা মদ থেকে গেল জীবনের সেরার সেরা নেশার ঝোঁক, দুলুনি, ফিদা ভাব। পরে একবার কমলকুমার মজুমদারের সঙ্গে ওয়েলিংটন স্কোয়্যারের খালাসিটোলায় ওঁর প্রিয় কোণটায় দাঁড়িয়ে ফ্লোব্যের-এর ‘মাদাম বোভারি’ উপন্যাস নিয়ে কথা হচ্ছে, আমার প্রিয় লেখক (উনি বাংলা ছাড়া কোনও মদ ছুঁতেন না) জিজ্ঞেস করলেন, “বাংলা প্রথম taste করেছেন কবে?” যখন বললাম, “এমএ পড়তে পড়তে পাড়ার বন্ধুর সঙ্গে”, উনি হেসে বলেছিলেন, “ওটাই ঠিক বয়েস। বাংলার রস বুঝতে একটু ম্যাচিওরিটি লাগে।”

আমরা বসেছি চারজন গেলাস সাজিয়ে। চন্দন ঠাট্টা করল, “পেটো কাটিয়ে বেরোতে পারলি তাহলে? নে, একটু খেয়ে আরাম কর। আর মেয়েছেলেদের গপ্পো শোনা। লিটারেচার ফিটারেচার মারাবি না।” এই বলতে না বলতে পাড়ার দুরন্ত মস্তান যুবক, বাঙালি খ্রিস্টান রনি দৌড়ে এসে বসল বারান্দার বেঞ্চে। ওর হাতে খোলা রিভলভার। বলল, “তোরা কী খাচ্ছিস? টাকা দিচ্ছি, একটা বিলিতি পাঁইট আনা।” বলে টাকা ছুড়ল বেঞ্চে। চন্দন বলল, “এই দিচ্ছি আরও। একটা বোতলই আনা যাক।”    (চলবে)

শংকরলাল ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট, কলকাতায়। ইংরেজি সাহিত্যে স্বর্ণপদক পাওয়া ছাত্র শংকরলাল সাংবাদিকতার পাঠ নিতে যান প্যারিসে। তৎপরে কালি-কলমের জীবনে প্রবেশ। সাংবাদিকতা করেছেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীতে। লিখেছেন একশো ত্রিশের ওপর বই। গল্প উপন্যাস ছাড়াও রবিশংকরের আত্মজীবনী 'রাগ অনুরাগ', বিলায়েৎ খানের স্মৃতিকথা 'কোমল গান্ধার', হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিমালা 'আমার গানের স্বরলিপি'-র সহলেখক। অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য পর্যন্ত।

8 Responses

  1. কেন আমরা ঋত্বিক ঘটক কে গাল দিই বাঙলা , ধেনো এসব খাবার জন্য ( যেন ঋত্বিক বাবুর ঐ অভ্যাস টাই তাঁর জীবনের সব , সৃষ্টি শীল ঋত্বিক কিসসু না )! বাঙলা মদ খাওয়া বিখ্যাত লোকের কথা শুনে এটা মনে হলো। ভালো লাগলো। চালিয়ে যান।

  2. প্রেসিডেন্সি কলেজে এম.এ-র ক্লাস আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক জ্যোতিভূষণ ভট্টাচার্যের ‘কিং লিয়ার’ পড়ানোর স্মৃতিচারণ অনেক পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিল। লেখকের থেকে বয়সে অনেকটা ছোট হলেও আমিও যে আশির দশকের মাঝামাঝি ওই অভিজ্ঞতার শরিক হয়েছিলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com